তোমার আসক্তিতে আসক্ত পর্ব-১৭

0
345

#তোমার_আসক্তিতে_আসক্ত
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব-১৭

“আমি বুঝি খুব পর হয়ে গেছি মি.আজমল চৌধুরী?”

আর্শিকার কথা শুনে ক্ষান্ত হোন আজমল চৌধুরী। তারপর উচ্চবেগে কথা বলে উঠে,

“তোমার সাহস কি করে হয় আমার বাড়ির সামনে পা রাখার?তোমার মতো চরিত্রহীনা মেয়ের কোন অধিকার নেই আমার বাড়ির ত্রিসীমানায় আসার।”

আর্শিকা আজমল চৌধুরীর কথায় প্রচুর অবাক হয়।সবথেকে বেশি অবাক হয় বাবার মুখে চরিত্রহীনা নাম শুনে।আর্শিকা অবাক কন্ঠে বলে,

“মানে?”

“মানে তুমি তোমার মামার বাসায় কি কান্ড ঘটিয়েছো তা কি আমার অজানা ভাবছো?”

“তুমি আমায় বিশ্বাস না করে মামীকে বিশ্বাস করে আমার জীবনে চরিত্রহীনা উপাধি লাগিয়ে দিতে পারলে?”

“বিশ্বাস আমি করি নি কিন্তু তোমার সেইদিন বাড়ি না ফিরায় বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম।আর যাই হোক আমি কোনো চরিত্রহীনা মেয়ের বাবা হতে পারি না।”

আর্শিকা যেনো কথা বলতে গিয়েও পারছে না। সব জেনো থমকে গিয়েছে এক পলকে।কাঁদতে গিয়েও গলা আটকে আসছে।কোন মতে নিজেকে ধাতস্ত করে তুচ্ছ গলায় রেগে বলে,

“আরে আপনি কি আমাকে তেজ্য করবেন?আমার বাবার পরিচয় অস্বীকার করবেন।আমিই আপনাকে অস্বীকার করছি।আর যাই হোক কোনো দায়িত্ব জ্ঞানহীন পুরুষ আমার বাবা হতে পারে না।”

বলেই আর্শিকা ফোনটা কট করে কেটে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।তারপর বাড়িটার দিকে তাকিয়ে উল্টো ফিরে হাটতে গেলেই দারোয়ান কাকা আর্শিকাকে ডাক দেয়।

“কি গো মামনি, বাড়ির ভিতর যাইবা নাহ?”

“যার খুটিই নড়বড়ে কাকা তার কি ভিঁটে সাজে?এই বাড়ি আমার জন্য নয় তাই চলে যাচ্ছে।”

“কই যাইবা মামনি?”

“যেখানে এই দুঃখিনীর ঠাই মেলে।”

আর্শিকা হাটছে আর এই কয়দিনে তার উপর বয়ে যাওয়া ঝড়ের কথা ভাবছে।এইটুকু বয়সে সবাই তার দেহের উপর লোভ প্রকাশ করেছে।আর্শিকা শারীরিক আর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে।ক্রমশ দেহটা অচল হয়ে পড়েছে।দুনিয়ার সবকিছু তার কাছে বিষাক্ত লাগছে।আর্শিকা ধপ করে মাটিতে বসে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বলেছে,

“হায়রে পুরুষ জাতি,যে নারীর তোমাদের প্রধান অবলম্বন তারেই তোমরা করো ধর্ষন।”

আর্শিকা মানসিক ভাবে মারাত্মক ভেঙে পড়ে।ঠিক করে নিজের মায়ের কাছে চলে যাওয়ার যেখানে নেই কোনো চরিত্রের উপাধি,নেই কোন দেহ লোভ।আর্শিকা কিছু না ভেবে বাসার সামনের বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে যায়।এখন অবশ্য বেশ রাত হওয়ায় রাস্তায় লোক কম গাড়িও কম আছে।

আর্শিকা নিস্তেজ হয়ে হাটছে।হাটতে হাটতে যে কতদূর এসেছে তা বোঝা মুশকিল।চারদিন ধরে না খাওয়ার ফলে হাটার শক্তিও হারিয়েছে। আর্শিকার রাস্টার মধ্যে বরাবর হাটঁছে ঠিক এমন সময় একটা ট্রাক আর্শিকার দিকে এগিয়ে আসছে। ট্রাকের হর্নের আওয়াজ আর্শিকার কান অব্দি পৌছাচ্ছে না বরং আর্শিকা নিস্তেজ হয়ে ট্রাকের সামনে এগিয়ে যাবে।ট্রাকটা যখন আর্শিকার খুব কাছে একেবারে আর্শিকাকে মেরে ফেলতেই যাবে তখন কেউ ফেরেশতার মতো আর্শিকাকে টেনে ট্রাকের সামনে থেকে বাঁচায়।

একজন ভদ্র মহিলা আর্শিকা ট্রাকের সামনে থেকে টেনে এনে ঝাঝাঁলো গলায় বলে,

“এই মেয়ে পাগল তুমি?ট্রাক আসছিলো দেখছিলো না?”

আর্শিকা এখনো নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে।মহিলাটি পুনরায় দ্বিগুন রাগে বলে,

“ম/রার যদি এতোই শখ থাকে তাহলে শুধু শুধু ট্রাকের সামনে আসছিলে কেনো?শুধু শুধু ট্রাক ড্রাইভারদের জেলের ভাত খাওয়ানোর ধা/ন্দা?আর তোমার মা কোথায় এইটুকু একটা মেয়ে এতো রাতে বাহিরে কেনো?”

মায়ের নাম শুনে আর্শিকা আর কঠিন থাকতে পারলো না।রাস্তার মাঝে বসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।আর্শিকার এই আর্তনাদ দেখে মহিলাটি চমকে যায়। পরক্ষণেই আর্শিকা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায়।

বর্তমানে,

জয়ার চোখে এখনো পানি আর্শিকার ভয়ংকর অতীত বলতে গিয়ে জেনে জয়া প্রতি নিয়ত কেঁপে উঠছে।রাদাফ নিথর হয়ে বসে আছে আর্শিকার অতীত শুনে।জয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“জানেন স্যার আর্শিকাকে যে বাঁচিয়েছিলো সে ওই এতিমখানার প্রধান লোক। আর্শিকাকে রাস্তা থেকে তুলে এতিমখানায় নিয়ে গিয়েছিলো।যার মা শত শত সন্তানের মাথা গোঁজার ঠাইঁ দিয়েছে তার সন্তান হয়ে আর্শিকা রাস্তায় রাস্তায় ছিলো।আর্শিকা এসব থেকে বের হতে খুব সময় লেগেছিলো।প্রথম প্রথম আর্শিকা কারোর সাথে কথাই বলতো না।আর কথা বললেও শুধু রাগ এখন তাও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।আর্শিকা ধনীর ঘরে জন্মেও ওর সুখ নামক বস্তু ছিলো না স্যার।”

বলেই হু হু করে কেঁদে দেয় জয়া।রাদাফ শান্ত গলায় প্রশ্ন করে,

“তুমি এসব জানলে কি করে?”

“স্যার আমার বাবার সাথে ওই এতিমখানা প্রধান লোকের খুব ভালো সম্পর্ক তার সূত্রেই সব জানা।যদিও আর্শিকা জানে না আমি সব জানি।তাহলে ভাববে আমি ওর উপর দয়া দেখাচ্ছি।”

রাদাফ কিছু বলে না। জয়া কিচ্ছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে চলে যেতে নিলেই পিহুর ফোন আসে।জয়া ফোনটা ধরতেই অবাক কন্ঠে বলে,

“তুই এসব জানলি কি করে?”

…….

“আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি এখুনি আসছি।আর্শিকার জানো কোন ক্ষতি না হয়?”

আর্শিকার কথা শুনেই রাদাফ ঝটপট দাঁড়িয়ে বলে,

“জয়া কি হয়েছে আর্শিকার?”

“স্যার আর্শিকার বাড়ির সামনে খোলা মাঠে রাস্তায় কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে আর্শিকাকে শায়েস্তা করার জন্য। আর্শিকার সাথে নয়নাকে নিয়ে ওদের মধ্যে ঝামেলা ছিলো তাই দাঁড়িয়ে আছে।”

“আমিও যাবো তোমার সাথে।”

“ঠিক আছে স্যার।”

✨✨

আর্শিকা মায়ের কবর জিয়ারত করে আসছে। অত্যাধিক মাত্রা রাগান্বিত হওয়ার ফলে সে কিচ্ছুক্ষণের জন্য এই দুনিয়ার বাঁধন ছেড়ে মায়ের কাছে চলে গেছিলো।এখন আর্শিকার ভালো লাগছে।আর্শিকা ফোনটা ওপেন করতেই দেখে পিহু নয়না আর জয়া একসাথে ফোন করেছে সাথে রয়েছে এক আননোন নাম্বার।

আর্শিকা মুহুর্তেই মুখে এক চিলতি হাসি ফুটে এলো।জয়া ফোন করতে গেলেই ফোনে চার্জ না থাকার দরুন ফোনটা বন্ধ হয়ে যায়।আর্শিকা ভাবে বাসায় গিয়ে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে তারপর নিশ্চিন্তে ফোন দিবে।তাই আর ফোন ধরে নি।আর্শিকা হাটছে হটাৎ করেই আর্শিকার চোখ পড়ে বাইকে থাকা কয়েকটা ছেলের উপর। ইভেন কয়েকটা ছেলের হাতে হকি স্টিক।

আর্শিকা ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখে এদের মেইন লিডার রতন নয়নাকে প্রপোজ করেছিলো আর যার দরুন তারা চার বান্ধুবী এই ছেলেটাকে ভালোই ঘোল খাইয়েছে।রতন ডেভিল হাসি দিয়ে বলে,

“আজ কোথায় পালাবে মামনি?আজ তো আর তোমাকে বাঁচাতে তোমার কোন বান্ধুবীও নেই।”

বলেই রতন হাসতে লাগলো। কিন্তু আর্শিকা এখনো একই ভঙ্গিতে সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।রতনের ইশারায় একটা ছেলে বাইক নিয়ে আর্শিকার দিকে তেড়ে যেতেই একটা কালো গাড়ি সজোরে বাইকটাকে ধাক্কা মারে।ধাক্কাটা এতই বড় ছিলো যে ছেলেটা বাইক থেকে ছিটকে পড়ে।রতনের দলবল সব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

ইতিমধ্যে রাদাফ,জয়া আর পিহু হাজির। ওরাও সবাই সেই কালো গাড়িটাকে আর্শিকাকে বাঁচাতে দেখেছে।গাড়িটা দেখেই আর্শিকার মুখে রহস্যজনক হাসি ফুঁটে উঠে।রতন আর্শিকার হাসির অর্থ বুঝতে পারে না।

গাড়ি থেকে কালো শার্ট আর কালো প্যান্ট পরিহিত একজন সুদর্শন যুবক বের হয়, চোখে তার সানগ্লাস,চুলগুলো সেট করা।
গাড়ি থেকে নেমেই কোর্টটা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,

“আজকাল দেশে খুব আবর্জনা হয়েছে সেগুলো দেখছি এখন আমাকেই দূর করতে হবে।”

রতন আগমনকারী ছেলেটার কথায় কিছুই বুঝতে পারে না।একে একে রতনের সব ছেলেরা ছেলেটাকে মা/রতে উদ্যত হলে ছেলেটাও নিজের মা/রপিটের মারাত্মক দক্ষতা দিয়ে ছেলেগুলোকে মারতে থাকে।পাশে থাকা একটা লাঠি কুড়িয়ে ছেলেগুলোকে বেধারম মারছে আর বলছে,

“আরে কথা তো শেষ করতে দিবি তা নাহ তোদের মা/র খাওয়ার খুব ইচ্ছা ওকে ফাইন আমিও আবার শুভ কাজে দেরি করি না।”

এক এক জনকে এমন ভাবে মা/রছে যে মনে হচ্ছে অনেক শত্রুতা।রতন আগুন্তকে মারতে গেলে একটা লাঠি দিয়ে আগুন্তক সোজা রতনের মাথায় বাড়ি মেরে বলে,

“চিল বেবি তোমার কাছে পরে আসছি।”

রতন রেগে বলে,”আব্বে এই মেয়েটার জন্য তুই আমাদের মা/রছিস কেনো?এই মেয়েটা কি তোর বউ লাগে?”

রতনের কথায় সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে আগুন্তকের দিকে তাকিয়ে থাকে। কথাটা শোনা মাত্রই আগুন্তক রতনের মাথায় আরেকটা বারি মেরে বলে,

“বউ না আমার বোন আমার কলিজার টুকরা ও।ওর দিকে যে হাত বাড়াবে তার হাত আমি ভেঙে দিবো।”

আগুন্তকের কথা বলতে দেরি কিন্তু সবার মাঝে উৎসুকের বোম ফাঁটে।জয়া আর পিহু একসাথে চিৎকার করে বলে,

“বোননননন?”

#চলবে