তোমার আসক্তিতে আসক্ত পর্ব-১৮

0
313

#তোমার_আসক্তিতে_আসক্ত
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব -১৮

হাসপাতালের বেডে বসে আছে আহিল চৌধুরী। পাশে রক্তচক্ষু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর্শিকা আর উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাদাফ, পিহু আর জয়া।পিহু আর জয়া এতোটাই অবাক হয়েছে যে কথাগুলো মুখ দিয়ে বেরই হচ্ছে না।নিরবতা ভেঙে রাদাফই বলে,

“তুই দেশে এলি অথচ আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজনবোধও করিস নি?”

“আরে ইয়ার হুট করেই দেশে এসেছি।এতো সময় পাই নি।”

“তাই তো এখন সব ভুলেই যাবি।”

“ইয়ার রাগ করিস কেন?”

“রাগ করবো না।এতো বছর পর এলি অথচ খোঁজও নিলি না?”

“আপনাদের বন্ধুপ্রীত শেষ হলে আমি কি কিছু বলতে পারি?”

আর্শিকার কথায় রাদাফ আর আহিলের মধ্যে কথা থামে।আর্শিকা রুক্ষ গলায় বলে,

“তুই দেশে এসেছিস ভালো কথা কিন্তু তুই আমার কাছেই বাহ কেনো এলি?”

“নিজের কলিজার টুকরার বোনটাকে একটু দেখবো না?”

আর্শিকা তুচ্ছ হেসে বলে,”যেখানে সম্পর্কই নেই সেখানে ভাই বোনের প্রশ্ন আসে কোথা থেকে?তুই এখুনি আমার সামনে থেকে যাবি আর জীবনেও আমার কাছে আসবি না।”

“এহহহ বললেও হলো? ছোট বেলায় তোকে যেমন জ্বালাতাম যেমন এখনো জ্বালাতেই এসেছি।”

“ছোটবেলাটা কি তোরা আমার নষ্ট করিস নি?”

আহিল নির্জীব হয়ে বলে,”আংকেলকে কি কোন মতে ক্ষমা করা যায় নাহ?আংকেল তো জাস্ট একটা….”

“আমি আংকেলের হয়ে কোনো সাফাই শুনতে চাই না।আর এতোই যদি আংকেল প্রেম থাকে তো আংকেলের কাছেই যা।”

“এভাবে রেগে যাচ্ছিস কেনো?তুই আগে এতো রাগতি নাহ বড্ড শান্ত ছিলিস।”

“আগের আর্শিকার সাথে এখনকার আর্শিকার মিল খুঁজতে চাস তাহলে বলতে হবে এই আর্শিকার জন্য তোরাই দায়ী।এখন আসতে পারিস।”

আহিল মনে একটু কষ্ট পেয়েই চলে যায়।আহিলের পিছু পিছু রাদাফও যায়।আর্শিকা বেডে বসে ভাইয়ের সাথে খারাপ আচরণের জন্য কান্না করে দেয়।আজ কত বছর পরে তার ভাইয়ের সাথে দেখা অথচ সে কি নাহ এমন ব্যবহার করলো?জয়া আর্শিকার মনের ভাব বুঝতে পেরে পিহুকে ঘরের বাহিরে বের করে আর্শিকার পাশে এসে বলে,

“তোর যে ভাই ছিলো তা আমাকে বলিস নি কেনো?”

“আমি না বলতেই তো আমার সমস্ত অতীত তুই জেনেছিস তাহলে বলে লাভটা কি হতো?”

জয়া চমকে গিয়ে বলে,”তুই কি করে জানলি আমি তোর অতীত জানি?”

“আমি তো তখন থেকেই বুঝেছি যখন প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে কিছু বলার জন্য আলাদা ঘরে ডাকলে তুই আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতি।আমি রেগে গেলে পিহু নয়না বিরক্ত হলেও তুই চুপ থাকতি।আর সবথেকে বড় কথা তুই যখন প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে আমাকে নিয়ে কথা বলতি,বিশেষ করে আমার অতীত।”

জয়া চুপ থাকে। আর্শিকা যদি এখন জয়াকে ভুল বুঝে তাহলে জয়া সেটা সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু জয়াকে ভুল প্রমানিত করে আর্শিকাই বলে,

“সুমনা চৌধুরী আমার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড। মায়ের গর্ভবতী অবস্থায় সুমনা চৌধুরী প্রায় মা’কে দেখতে আসতেন তখন তার সাথে আহিলও আসতো। আহিল বড় হলেও আমিও কখনোই ওকে আপনি করে ডাকি নি বরং তুই করেই ডেকেছি।সুমনা চৌধুরী ভাইয়ের ছেলে আহিল চৌধুরী।ভাগ্যক্রমে সুমনা চৌধুরীরা চৌধুরী বংশের তাই আহিলের নামের শেষেও চৌধুরী উপাধিটা বসে।”

জয়া উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে,”আহিলের মা বাবা কোথায়?”

“আহিলের ছোট কালের এক এক্সিডেন্টে আহিলের মা বাবা মারা যায়।তারপর থেকে সুমনা চৌধুরীই আহিলকে দত্তক নেয়।জানিস আহিল ভাইয়ার সাথে আমার যেদিন প্রথম দেখা সেদিন আমি খুব খুশি ছিলাম কারণ আমি একটা ভাই পেয়েছি আর আহিল ভাইয়াও খুব খুশি বোন পেয়েছে বলে।আমাকে কত আদর করতো চকলেট দিতো।আমি যা যা ভালোবাসতাম সব করতো।কখনো আমার এইটুকু আঘাত লাগলে উনি দৌড়ে আসতো। আর আজ দেখ ভাইয়া আমার জন্য মা/র খেতে গিয়ে হাত ফাটিয়ে ফেলেছে আর আমি কি’না তাকে অপমান করে বের করে দিয়েছি।”

বলেই আর্শিকা আবার কেঁদে দিলো। আর্শিকাকে শান্ত করতে জয়া প্রশ্ন করে,

“কেনো এমন করলি?”

“আহিল চৌধুরীর একটাই দোষ উনি আজমল চৌধুরীর সাথে থাকেন।আর আজমল চৌধুরী সাথে সম্পর্কিত এমন কারোর সাথে আমি সম্পর্ক রাখবো না।”

আর্শিকা চোখে মুখে তেজ দেখে জয়া কিছু বলল না।জয়া আর্শিকাকে কিছুটা শান্ত করে হাসপাতাল থেকে বের হতেই পরিচিত মুখের নজরে পড়ে।

✨✨

আহিল আর রাদাফ একটা বেঞ্চিতে বসে আছে।আহিলের চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ প্রতীয়মান। আহিল রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে সোজা সামনের বেঞ্চিটায় এক লা/থি মারে।রাদাফ আহিলকে ধরে বলে,

“আরে ইয়ার এতো রাগছিস কেনো?শান্ত হ।”

“তোর কাছে এটা সিলি ইসু রাদাফ?আর্শি এতো বছর একা দেশে ছিলো।ওর পাশে কেউ ছিলো না। যে মেয়েটা রাগ কি জানতো না সে মেয়েটা এখন রাগের মহারাণী।তার চেয়েও বড় কথা সবাই ভেবেছে ওর কেউ নেই তাই বলে ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।দেখলি না কিভাবে ওকে মারতে এসেছিলো ওই ছেলেগুলো।আমি যদি সঠিক সময়ে না আসতাম ওর কি হতো জানিস?”

“আরে কুল ইয়ার।তুই আর্শিকাকে যতটা দূর্বল ভাবছিস ও কিন্তু ততোটা দূর্বল না।”

“ও আমার চেয়ে ভালো তো দেখছি তুই চিনে গেছিস।”

“তুই যদি জানতি তোর বোন আসলে কতজনকে ঘোল খাওয়াতে পারে তাহলে আর এসব বলতি না।” (মনে মনে)

কথাগুলো রাদাফ মনে মনে বলে মুচকি হাসঁতে থাকে।আহিল শান্ত হয়ে বলে,

“আগে ও কত শান্ত ছিলো অথচ এখন আমাকে সহ্যই করতে পারে না।মানছি আমরা রক্তের ভাই বোন নাহ?কিন্তু ও আমার আত্নার বোনরে।এই কয় বছর ওকে ছেড়ে কিভাবে ছিলাম তা তো আমার অজানা নয়।আমাকে জোর করে কানাডায় নিয়ে গেছিলো নাহলে আমি ওর কাছেই থাকতাম।এখন মনে হচ্ছে সব আমার জন্যই হয়েছে।আমার জন্য আমার জন্য জাস্ট আমার জন্য।”

শেষের কথাগুলো পাগলের মতো বলে আহিল আবার বেঞ্চিটায় লা/থি মা/রে। তারপর মাথার চুলগুলো টেনে রাগ সংযত করতে বলে,

“ওই ৩ দিন আর্শিকা কোথায় ছিলো?সব আমায় জানতে হবে?ওই ৩ দিনের জন্যই আর্শিকা আমার কাছ থেকে এতো দূরে।আই সোয়ার যে এর জন্য দায়ী তাকে আমি মে/রেই ফেলবো।”

“আর সে যদি তার বিষ দিয়ে তোর বোনের মনে প্রণয় বিষক্রিয়া ঘটায় তখন?”

আহিল আর্শ্চয হয়ে বলে,”মানে?”

“কিছু না বাদ দে।”

“তুই তো দেখছি আর্শিকে নিয়ে খুব সিরিয়াস অথচ কানাডায় একটা মেয়ের দিকে তাকাতি না। কিছু বললে বলতি আনার ক্রেজি কুইন আছে।তো সেই ক্রেজি কুইন বাদ রেখে আমার বোনটার পিছনে পড়লি কেনো তুই?”

“বললাম তো বাদ দে নইলে কিন্তু এবার আমি রেগে যাবো।”

“ওকে ওকে ফাইন বাদ দিলাম।”

“আচ্ছা ইয়ার কখনো যদি জানিস তোর খুব কাছের কেউ তোর বোনকে তোর জীবন থেকে আলাদা করেছে তাকে কি ক্ষমা করতে পারবি?”

“আমার বোনই আমার কাছের। আমার আর আর্শির মধ্যে কেউ ভাঙন গড়ালে তাকেই আমি ভেঙে দিবো।”

আহিলের কথায় রাদাফ বেশ ভয় পেয়ে যায়।এক মন বলে বিষাক্ত অতীত জানিয়ে দিতে তো আরেক মন বলে থাক না কিছু অজানা।তবে হে একটা জিনিস রাদাফ ঠিক করেছে। এখন যে করেই হোক এই অগ্নিমনে ঝর্ণার প্রবাহ ঘটাতেই হবে।

✨✨

পিহু আনমনে রাস্তা দিয়ে হাটছে আর আর্শিকা এবং তার ভাইয়ের কথা ভাবছে।মনে মনে বড্ড আফসোস হচ্ছে কেনো সে জয়ার কথা শুনে আর্শিকা রেখে চলে এলো।জয়ার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করা পিহুর শেষ তবুও যেনো মনে শান্তি মেলছে না।পিহু হাটার মাঝেই একটা বাইক খুব দ্রুত পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় পিহুর গায়ে হালকা কাঁদা ছিটিয়ে যায়।পিহু রাগান্বিত হয়ে বলে,

“ওই ছেলে চোখে কি দেখেন নাহ?কানা নাকি?দিলেন তো আমার জামা নষ্ট করে।”

বাইকটা কিছুদূর গিয়ে আবার পিহুর দিকে ব্যাক করলো। পিহু বাইকটাকে ব্যাক করতে দেখে রেগে বাইকের ছেলেটাকে বলে,

“পাগল আপনি? রাস্তা কি আপনার?পাগলের মতো বাইক কেনো চালান?এমনিতেই রাস্তায় কাঁদার অভাব থাকে না আরও আপনি কাঁদা ছিটান?”

ছেলেটা বাইক থেকে হেলমেটটা সরালেই পিহু ব্যক্তিটাকে দেখে দ্বিতীয়বারের মতো ক্রাস খায়।কারণ ব্যক্তিটা ছিলো কায়ান।কায়ান হেলমেট খুলে পিহুর দিকে তাকিয়ে বলে,

“আমি দুঃখিত। আমি আসলে খেয়াল করি নি।”

“না না ঠিক আছে। আমার ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত।”

“বাইকে উঠো।”

“জ্বি?”

“বাংলা বুঝো নাহ।বাইকে উঠতে বলেছি।”

পিহু ভণিতা না করে বাইকে উঠে পড়ে।ক্রাস বাইকে উঠতে বলেছে এর চেয়ে বড় কথা আর কিই বাহ হতে পারে।কায়ান পিহুকে নিয়ে একটা বড় শপিং মলে প্রবেশ করে।পিহু কিছু না বুঝেই বলতে থাকে।

“স্যার আমরা এখানে কেনো এলাম?”

“আমার বিয়ের শপিং করতে।”

পিহু দাঁড়িয়ে জোরে বলে,”হোয়াট?”

“এনি প্রবলেম?”

“নো স্যার বাট আপনি আমাকে নিয়ে শপিং এ কেনো এসেছেন আপনার বউকে নিয়ে আসলেই পারতেন।”

“সে ব্যস্ত তাই তোমায় নিয়েই এসেছি।”

পিহু মন খারাপ করে উদাস হয়ে বলে,”কেনো আমায় এমন জ্বালাছেন?কেনো আমার প্রণয়ে আপনি আসক্ত হচ্ছেন না?কেনো আমার হৃদয়ের কাব্য আপনি বুঝতে পারেন না?আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না।”

নিরবে দু’ফোটা পানি ফেলে পিহু কায়ানের সাথে শপিং এ যোগ দেয়।

#চলবে