তোমার আসক্তিতে আসক্ত পর্ব-১৯

0
368

#তোমার_আসক্তিতে_আসক্ত
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব-১৯

হাসপাতালে মাথা নিচু করে বসে আছে আর্শিকা।তার সামনেই বসে আছে মধ্যবয়স্ক একটা লোক। পড়নে তার সাদা এপ্রোণ, মুখে বয়সের ছাপ পড়েছে তারপরেও যথেষ্ট শক্ত সে। লোকটা শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে,

“কি মেয়ে কেমন আছো?কতদিন পরই না তোমার সাথে দেখা হলো?”

“জ্বি ডাক্তার আংকেল ভালো। আপনি যে আমার পরিচয় বলায় আমাকে চিনবেন তা ভাবতেও পারি নি।”

“আরে তোমার মতো সুইট মেয়েকে কি ভুলা যায়?”

“আংকেল এই বয়সে আপনি আমার সাথে মজা করছেন?”

ভদ্রলোকটা মুচকি হেসে বলে,”তুমি আমার মেয়ের বয়সী যদি একটু মজাই না করি তাহলে হবে কি করে?তা তোমার খবর কি?আর এখানে কেনো তুমি?”

“আংকেল আপনার কি মনে আছে?আজকের দিনে আমি মাতৃহারা হয়েছিলাম শত চেষ্টার পরেও আপনি আমার নবজাতক ভাই আর আমার মা’কে বাঁচাতে পারেন নি।”

ডাক্তার আংকেল মাথা নিচু করে বসে আছে।চোখের চশমা খুলে ভাবুক হয়ে ভাবছে সেই দিনের কথা।হে এই সেই ডাক্তার আংকেল যে বিনা পয়সায় আর্শিকার মা’য়ের চিকিৎসা করেছে,আর্শিকার বাবার ক্ষোভ থেকে আর্শিকা বাঁচিয়েছে।এই ডাক্তারের প্রতি আর্শিকা চির কৃতজ্ঞ।আর্শিকা নিরবতা ভেঙে বলে,

“এতে আপনার দোষ নেই।আমার মা’য়ের আয়ুস্কাল ছিলো না তাই বাঁচতে পারে নি।আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ এই ছোট্ট অসহায় মেয়েকে সাহায্য করার জন্য।”

“এই কৃতজ্ঞতা আমি পছন্দ করি না মেয়ে।সময় হলে আমি ঠিক আমার প্রাপ্য আমি নিয়ে নিবো।”

“সময় কি এখনো হয় নি আংকেল?৬ বছর পরে আজ প্রথম দেখা আর কবে দেখা হবে তারও ঠিক নেই আমি কীভাবে আপনার প্রাপ্য দিবো?”

“সময় আর প্রকৃতি ঠিকই আমার প্রাপ্য আমায় ফিরিয়ে দিবে। তা মেয়ে এতো বছরেও তো তোমার নামটা জানা হলো নাহ।নাম কি মেয়ে?”

“আংকেল মেহেরজান মেহের আর্শিকা।”

নামটা শুনা মাত্রই ডাক্তার আংকেল কিছু অবাক হয়ে রহস্যময়ী হাসলেন।তারপর বললো,

“তা মেয়ে তোমার সাথে আমি কি আবার দেখা করতে পারি?”

“জ্বি আংকেল নিশ্চয়ই।কবে দেখা করবো যদি বলতেন?”

“৪ দিন পর আমার ছেলের জন্মদিন। সেদিনই দেখা করো আমার সাথে।”

“ওকে আংকেল আমি তাহলে উঠি।”

আর্শিকা ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য চলে যায়।

✨✨

পিহু একটা মেরুন রঙের গাউন পরে আয়নায় নিজেকে বার বার দেখছে আর মুচকি হাসছে।গাউনটা আজ শপিং এ কায়ান তাকে গিফট করেছে।যদিও কায়ান তার উডবির জন্য অনেক শপিং করেছে কিন্তু পাশাপাশি পিহুকেও এই গাউনটা উপহার দিয়েছে।এই সামান্য উপহারেই পিহু যেনো পরম সুখ ফিরে পেয়েছে।পিহু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনেই বলে,

“আমি জানি না আপনি আমাকে ভালোবাসেন কি নাহ?তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি আপনাকেই ভালো বেসে যাবো।কখনো কি এই হৃদয়ের সাক্ষী হবেন?”

✨✨

জয়া বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ছে কিন্তু পড়া তো তার আর হচ্ছেই না।বারবার আর্শিকা আর আহিলের কথা মনে পড়ছে।বিশেষ করে আহিল।জয়ার মাথায়ই ঢুকছে না এতো বছর পর আহিল কোন উদ্দেশ্য আর্শিকার কাছে এসেছে?জয়া কিছু ভাবতে পারছে না। মাথাও বেশ ধরেছে।এক কাপ কফি বানিয়ে আর্শিকাকে ফোন দিয়ে ঝাঝালো গলায় বলে,

“আর্শি তোর ডা/কাইত্তা ভাইয়ের নাম্বার দে তো?”

আর্শিকা জয়ার কথায় হকচকিয়ে যায়। তারপর অবাক কন্ঠে বলে,”কেনো আমার ভাই তোর আবার কোন পাকা ধানে মই দিলো শুনি?”

“সোজা সাপ্টা নাম্বার দে ”

“আরে নাম্বার আমার কাছে নেই। কেনো রে ক্রাস খেলি বুঝি?”

“বাজে বলা বন্ধ কর।”

“হুম বুঝি বুঝি এখন তো পর….. হ্যালো?”

আর্শিকা কথা পুরোটা না শুনেই জয়া ফোনটা,কেটে দেয়।জয়া এমন রাগ হওয়ার কারণ আর্শিকা কিছুই বুঝে উঠতে পারি না।আর্শিকা ফোনটা রেখে ভাবতে থাকে আসলে হয়েছেটা কি?

✨✨

জয়া রাগান্বিত হয়ে বসে আছে। পাশেই আর্শিকা আর নয়না নিজেদের মধ্যে বাক্যবিনিময় করছে আর পিহু তার চিন্তাভাবনায় বিভোর।জয়া চারিদিকে তার বান্ধুবীদের কার্যক্রম দেখে রাগান্বিত স্বরে বলে,

“তোরা কি অন্ধ?এখানে যে একজন রেগে বসে আছে তা কি তোদের চোখে পড়ছে না?”

জয়া হুংকারে আর্শিকা আর নয়না জয়ার দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে নয়না বলে,

“হে রে জয়া কে রেগে আছে রে?আমরা ছাড়া আশেপাশে তো কাউকেই দেখলাম নাহ?”

নয়নার কথা জয়া দ্বিগুণ রেগে গেলো।আর্শিকা জয়ার ভাব বুঝতে পেরে নয়নার মাথায় চা/পর মে/রে বলে,

“আরে গাধীরাম ও নিজের কথা বলছে।তা তুই কাল রাত থেকে এমন রেগে আছিস কেনো?”

নয়না অবাক হয়ে বলে,”হোয়াট সিরিয়াসলি?জয়া রেগে আছে? ওকে এই জীবনে রাগতেই দেখলাম নাহ?আর ও কি না কাল রাত থেকে রেগে আছে?তা জয়া তোমার রাগের উৎসটা কে শুনি?”

“আমার বোধহয় সেই ব্যক্তিটা আমি?”

অপরিচিত কন্ঠে সবাই পিছনে ঘুরে তাকায়।তাকাতেই আহিলকে একটা ফুলের তোরা হাতে নিয়ে আবিষ্কার করে সবাই।আহিলকে দেখা মাত্রই আর্শিকা যেমন অবাক হয় তার চেয়ে বেশি জয়া রাগ হয়।জয়া তেজ নিয়ে আহিলের সামনে গিয়ে বলে,

“এই মশাই আপনি কোথায় ছিলেন?জানেন আপনাকে আমি কাল রাত থেকে খুঁজছি।আপনার সাথে আমার আলাদা করে কিছু কথা আছে।”

জয়ার কথায় সবাই অবাক চোখে জয়ার দিকে তাকায়।এদিকে জয়া রাগের মাথা কাদের সামনে কি বলে ফেলেছে তা বুঝতেই পারে নি।জয়া যখন বুঝে তখন সামনে তাকাতেই দেখে আহিল অবাক চোখে জয়াকে দেখছে।জয়া জিভ কেটে পিছনে ফিরে তাকাতেই আর্শিকা, পিহু আর নয়নার অবাক রুপ দেখতে পায়।এখুনি যেনো সবার কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসবে।জয়া আমতা আমতা করে তার বান্ধুবীদের বলে,

“না মানে আমার কিছু জরুরি কথা ছিলো তাই আর’কি ডোন্ট বি নেগেটিভ ইয়ার।”

নয়না জয়ার প্রতিউত্তরে বলে,”আমরা নেগেটিভ বাহ পজিটিভ কিছুই ভাবতে পারি না আর তুই আমাদের ভাবতে বাঁধা দিচ্ছিস?”

পিহু অবাক হয়ে বলে,”আশু বেবি আমাদের সামনে জয়াই দাঁড়িয়ে আছে তো নাকি ওর মতো দেখতে কোনো পেত্নি?”

আর্শিকা বলে,”আরে না’রে আমাদের ফ্রেন্ডটা বদলে গেছে।আমাদের ভুলে গেছে তাই তো ফ্রেন্ডদের সাথে কি ব্যবহার আর ছেলেদের সাথে আমি আপনাকে খুঁজছি।”

বলেই তিনজন তিনজনকে ধরে গোল হয়ে ন্যাকা কান্না শুরু করলো আর বলতে লাগলো আমাদের বান্ধুবী বদলে গেছে।আকস্মিক তিনজনের ন্যাকা কান্নার শিকার হয়ে জয়ারও যেনো বোধ বুদ্ধি লোপ পেয়েছে।আর আহিল তার অবস্থা না বলাই বাহুল্য।

জয়া সবাইকে থামাতে এক ধমক দিয়ে বলে,”চুপ কি শুরু করেছিস তোরা?”

এবার তিনজনে গান ধরলো।

“তুমি তলে তলে টেম্পু চালাও
আমি বললে হরতাল,
আমি বললে হরতাল মামা আমি বললে হরতাল”(আপনাদের লেখিকাও এমন করে)

জয়া তিনজনের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে বিরক্ত হয়েই চলে যায়।জয়া যাওয়ার সাথে সাথে আর্শিকা, পিহু আর নয়না একে অপরের সাথে হাই ফাই করে।নয়না বলে,

” আশু আজ জয়া কিন্ত সেই ক্ষেপেছে। আজ কিছুতেই ওর রাগ ভাঙবে না।”

পিহুও নয়নার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,”হে রে আশু বেবি,আজ জয়া সেই ক্ষেপেছে।”

“আরে ক্ষেপতে দে। ফ্রেন্ডরে একটু না জ্বালাইলে মজা নেই।তা তুই এখানে কেনো তোকে না আমার সামনে আসতেও নিষেধ করেছি?”

শেষের কথাটা আহিলকে উদ্দেশ্য করে বলে আর্শিকা।আহিল এতোক্ষন কাজ কর্মে এতোটাই অবাক হয়েছিলো যে ভয়ে আর্শিকা কাছে বলে,

“এক গ্লাস পানি হবে?”

আহিলের উত্তরে তিন রমনী অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।তারপর আর্শিকা আহিলকে পানির সাথে আরও কিছু খাবার খাওয়ায়।তারপর শান্ত হয়ে আর্শিকা বলে,

“তোর এখানে কি?”

“আমার বোনকে দেখতে এসেছি।”

“এটা দেখতে এসেছিস বুঝি যে বেঁচে আছে না মরে গেছে।আর বেঁচে থাকলে কিভাবে আছে?”

“আর্শিকা?”

“প্লিজ তোর এই আলগা পিরিত আমাকে দেখাস না।আমার কাজ আছে আমি গেলাম।”

আর্শিকা রেগে বেরোতে গেলেই আহিল পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,”আমার কি অপমান তোর বাবার সাথে কানাডায় চলে যাওয়া?”

“না তোর অপরাধ আমাকে বিশ্বাস না করা।”

আর্শিকা আরেকটু আগাতেই একটা শক্ত হাতের দখলে পড়ে।আর্শিকা রেগে সামনে গরম কফি ব্যক্তিটার দিকে তাকাতেই সব থেকে পরিমাণ অবাক হয়।হাত পা হিমশীতল হতে গিয়ে থেমে আসছে। কারণ ব্যক্তিটা ছিলো কায়ান।আর্শিকা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে রাদাফ তার হাত ধরে রেখেছে।আর্শিকা ভয়ে ঢোক গিলে বলে,

“ডাকলো একজন,হাত ধরলো একজন আর কফি ছুড়লাম আরেকজনের উপর।আজ তো আমি শেষ।”

#চলবে