#তোমার_আসক্তিতে_আসক্ত
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব-২০
জয়া আর আহিল সামনা সামনি বসে আছে।বসে আছে ভুল হবে একজন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর একজন রাগান্বিত চোখে দীর্ঘ ১০ মিনিট যাবৎ শুধু চাওয়া চাওয়িই করছে কিন্তু কথা সেটা আর বলতে পারছে না। নিরবতা ভেঙে জয়া কথা বলা শুরু করে,
“এই আপনার… ”
“তুমি কেনো….”
” দেখুন আগে আমাকে কথা বলতে দিন। এভাবে কতবার কথা আটকালেন। যখনই কথা বলতে যাই তখনই যেনো আপনার মুখে খই ফুটে।”
“তুমি কি মিষ্টি করে কথা বলতে পারো না?এতো তেঁতো কেনো তুমি?”
“কি আমি তেঁতো?কোন দিক দিয়ে আমাকে আপনার তেঁতো মনে হয়?”
“তোমাকে দেখে তো তেঁতো না নিমপাতার ঝাড় মনে হচ্ছে।”
“ওহ হ্যালো নিমপাতাও উপকারী আপনার মতো অপকারী না।”
“কি আমি অপকারী?কি অপকার করছি শুনি আপনার?”
এবার জয়া শান্ত হয়ে বলে,”দেখুন ঝগড়া বাদ দিন।এতো দিন পর আমার বেস্টির জীবনে আশার উদ্দেশ্য কি আপনার?”
“ম্যাডাম আমি আপনার বেস্টির ভাই।তার জীবনে বহু আগে থেকেই ছিলাম আপনি হয়তো তা জানেন না তাই এসব বলছেন।”
“আমি সব জানি। আর জানি দেখেই জিজ্ঞেস করছি।এতোদিন তো ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেন নি।তাহলে এখন বোনপ্রীত উপড়ে পড়ছে কেনো?”
“আপনি কতটুকু জানেন আমার বিষয়ে?আমার বিষয়ে না জেনে মন্তব্য করা আপনার উচিত না।”
জয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে রেগে আঙুল নাঁচিয়ে বলে,”শুনুন, একবার তো আপনারা সবাই আর্শিকার জীবনটা ধ্বংস করে ওকে নিঃস্ব করে দিয়েছিলেন,দিয়েছিলেন তো পাথর বানিয়ে।অনেক কষ্টে ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছি।বাই এনি চান্স,ওকে যদি আবার গুড়িয়ে দিতে আসেন তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।তখন এই বোনপ্রীতও দেখাতে আসবেন না।আরে ভাই হয়ে কোন দায়িত্ব পালন করেছেন?”
“শুনো আমি আমার বোনের প্রতি সব দায়িত্ব পালন করেছি।ওকে প্রত্যেক মাসে হাত খরচা পাঠাতাম।আমাকে জোর করে নিয়ে গেছে নইলে আমি এখানে থেকে ওর দেখা শুনা করতাম।”
জয়া হাত তালি দিয়ে বলে,”বাহ আপনিও দেখছি আপনার আংকেলের ধারায়ই গিয়েছেন।তিনি যেমন টাকা দিয়ে সব উদ্ধার করতে চাইতো আপনিও দেখছি তাই।এই টাকার জন্যই না আর আর্শিকার সব থেকে এতিম আর আপনি কি না টাকার বড়াই করছেন।অবশ্য বড়লোক তো আপনাদের দ্বারা এটাই আশা করা যায়।”
বলেই রেগে জয়া চলে যায়।আর এদিকে আহিল জয়ার কথা গুলো খুব গুরুত্ব সহকারে শুনে ভাবতে থাকে।সত্যিই তো তার আর আজমল চৌধুরীর মধ্যে পার্থক্যই বাহ কোথায়?
✨✨
আজ দু’দিন পরে পিহু আর্শিকার সামনে বসে আছে।পিহু মুখটা পেঁচার মতো করে রেখে শুধু বসেই আছে,কোনো কথা বলছে না।আর্শিকা পিহুর অবস্থা দেখে বলে বিরক্ত হয়ে বলে,
“পিহু তোর কি হয়েছে বল তো?আমার সাথে ঠিক মতো কথাই বলছিস না সাথে আমাকে দেখলেই এড়িয়ে চলিস।কি হইছে তোর?”
পিহু কিছু বলছে গোমরা মুখো হয়ে বসে আছে যা আর্শিকার বিরক্ত আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।আর্শিকা বিরক্ত হয়ে বলে,
“পিহু তুই যদি এভাবে এড়িয়ে চলিস তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।”
“তুই আমার ক্রাসের খরগোশ চেহারাটা লাল টমেটো কেনো করে দিয়েছিস কেনো?”
আর্শিকা অবাক হয়ে বলে,”মানে?”
“মানে সেদিন তুই আমার ক্রাসের মুখে গরম কফি ছুড়ে দিয়েছিস।বেচারার চেহারাটা লাল টমেটো হয়ে গেছে।তুই দেখেছিস সেটা?”
আর্শিকা এত্তোক্ষণে পিহুর চুপ থাকার কারণটা বুঝতে পারে। আর্শিকা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“হায় আল্লাহ, ক্রাস প্রপোজাল এক্সেপ্ট করতে পারলো না আর উনি আমার উপর তার ক্রাসের উপর কফি ছুড়ায় রাগ দেখায়।ওরে নিব্বি প্রেম।”
“একদম বাজে বকবি না।”
“আমি যদি বাজে বকি তাহলে তুই কি?ক্রাসের জন্য ফ্রেন্ড পর,এই দুনিয়ায় সবাই পর, স্বার্থপর।চিনা হয়ে গেছে তোদের।থাক তুই তোর ক্রাসের সেবা যত্ন কর আর যদি আশু বেবি করছিস তাইলে খবর আছে বলে দিলাম।”
এই বলে আর্শিকা যেতে নিলেই পিহু আটকে ধরে।
“ওকে ওকে সর্যি আর কখনো এমন করবো না।রাগ করিস না প্লিজ।”
আর্শিকা মিথ্যে রাগ দেখিয়েছিলো তাই কিছু বলে না তবে মনে মনে একটা কথাই ভাবছে।
“যেই মেয়েটা হাজারটা ছেলের উপর ক্রাস খেতো সে আজ একজনকে সিরিয়াসলি ভালোবেসেছে।যার একটু আঘাতে পিহু ঘায়েল কিন্তু একে যদি পিহু না পায় তবে?তবে কি পিহু বেঁচে থাকতে পারবে?”
“কি রে কি ভাবছিস?”
পিহুর কথায় আর্শিকার ধ্যান ভাঙলে আনমনেই প্রশ্ন করে,”যার উপর একটু আঘাত পাওয়ায় তুই সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে প্রস্তুত সে যদি কোনদিন তোকেই ছিন্ন করে? পারবি সহ্য করতে?”
আর্শিকার প্রশ্নে পিহুর মুখটা আপনা আপনি কালো হয়ে গেলো। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আর্শিকার প্রশ্নের উত্তর দেয়।
“হয়তো বেঁচে থাকবো নিথর দেহ হিসেবে।”
আর্শিকা কিছুই বলে না।তখনই আগমন ঘটে পিহুর ক্রাস কায়ানের।
“দুই রমনী এমন শীতল রুপ নিয়ে বসে আছে কেনো শুনি?আমি তো জানতাম রমনীরা একসাথে হলে চাঁদের হাট বসে তবে এতো নিস্তব্ধ কেনো সব?”
কায়ানের আওয়াজ শুনেই পিহুর মুখে আপনা আপনি হাসি ফুঁটে উঠে।পিহু চটজলদি উত্তর দেয়।
“কেনো নারীদের বুঝি নিস্তব্ধতায় মানায় নাহ?”
“উহু নিস্তব্ধতাই সুন্দর কিন্তু এখন নিস্তব্ধতার কারণ?”
আর্শিকা পিহুকে জ্বালাতে বলে,”আরে আপনার বিয়ের কথাই তো চলছিলো।শুনলাম আপনি নাকি আপনার উডবি’র জন্য শপিং করেছেন?”
আর্শিকার কথায় পিহু আর্শিকার দিকে গরম চাহুনি নিক্ষেপ করে। কিন্তু আর্শিকা সেই চাহুনিতে কোনো পাত্তাই দেয় না।কায়ান মুচকি হেসে বলে,
“কেনো তোমাদের বুঝি আমার উডবি দেখার খুব শখ?”
“জ্বি স্যার।”
“তো বলে রাখি আমি উডবি বলছি কার উডবি তা বলি নি।আর এটা আমার কাজিনের উডবির জন্য শপিং যা পিহুকে নিয়ে করতে গেছিলাম।”
পিহু অত্যাধিক মাত্রায় খুশি হয়ে বলে,”তার মানে আপনার কোনো লাভার নেই?”
“অবশ্যই না।”
“তাহলে আমার ভালোবাসা স্বীকার করতে আপনার আপত্তি কোথায়?”
পিহু সোজাসাপ্টা প্রশ্নে কায়ান একটু ভড়কেই যায়।তারপর নিজেকে দ্রুত স্বাভাবিক করে বলে,”পিহু তোমার নিজের সীমার ভিতরে থাকা দরকার।”
“দেখুন আমি সীমার মধ্যেই আছি।আর ভালোবাসা কি অন্যায়।হ্যা মানছি আমি আপনাকে একপাক্ষিক ভালোবাসি কিন্তু আপনি তো কাউকে ভালোবাসেন বাহ পছন্দ করেন না তাহলে আমাকে ভালোবাসতে অসুবিধা কোথায়?”
“পিহু ষ্টুপিডের মতো কথা বলো না তো বিরক্ত লাগে।”
বলেই কায়ান যেতে নিলে পিহু কায়ানকে বুঝাতে কায়ানের হাত ধরে।কায়ান নিজের রাগ সামলাতে না পেরে পিহুর গালে সজোরে একটা চড় মেরে বলে,
“তোমাদের মতো কিছু মেয়েদের জন্যই মেয়ে জাতিকে সবাই এতো নিচু ভাবে।লজ্জা করে না এভাবে গায়ে এসে পড়তে।তোমার কাছ থেকে এসব আশা করাটা বেমানান।নেক্সট টাইম আমার হাত ধরার আগে শত বার ভাববে।”
বলেই রেগে চলে যায়।আর এদিকে পিহু আর আর্শিকা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।পিহু গালে হাত দিয়ে নিচু মাথায় দাঁড়িয়ে আছে।কিচ্ছুক্ষণ পর নিজের ব্যাগটা নিয়ে দৌড়ে কোথাও চলে যায়।আর্শিকাও আর দাঁড়ালো না।কাল এসব নিয়ে কায়ান স্যারের সাথে কথা বলবে আপাতত আজ তার একটা বিশেষ জায়গায় যেতে হবে।
✨✨
“হ্যালো প্রিন্সেস। সর্যি আ’ম লেট।”
“ইটস ওকে আংকেল। আপনি এই বয়সে এসেও এতো এনারজেটিক কথা বলছেন ভাবাই অকল্পনীয়।”
“কাউকে বিনোদন দিতে কি আর বয়স লাগে?এমনিই কথার মাধ্যমে মানুষকে খুশি করা যায়।”
“একদম ঠিক আংকেল।আংকেল আপনি কিন্তু এখনো খুব ইয়াং।”
“ওহ মাই প্রিন্সেস ফ্ল্যাট করার বয়সটা চলে গেছে।”
ডাক্তারের কথায় আর্শিকা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।একটা রেস্টুরেন্টে ডাক্তার আংকেল তাকে আসতে বলেছিলো আর এসে আংকেলের সাথে আর্শিকার ভাব হয়ে গেছে।আর্শিকা আংকেলকে বসতে দিয়ে বলে,
“আংকেল আমাকে আসতে বললেন যে?”
“আমার ছেলের আজ জন্মদিন তাই ভাবলাম তোমাকে নিয়ে ওর বার্থডে সেলিব্রেট করি।”
“ওহ আচ্ছা কোথায় তিনি?”
“এই তো কাছেই এসে পড়েছে।আর ৫ মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বে।”
আর্শিকা আর ডাক্তার আংকেলের কথার মাঝেই একটা সুদর্শন ছেলে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে ডাক্তার আংকেলকে ডাক দেয়।
“বাবা?”
ডাক্তার আংকেল গিয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে।আর্শিকা এখনো ছেলেটার মুখ দেখতে পায় নি।ডাক্তার আংকেল সরে গেলেই আর্শিকা ছেলেটার মুখ দেখতে পায়।মুহুর্তে আর্শিকার হাস্যেজ্জ্বল মুখ আধাঁরে নির্মিত হয়।কারণ ছেলেটা আর কেউ নয় কির্শফ ইসলাম রাদাফ।রাদাফকে দেখে আর্শিকার মুখ দিয়ে একটা কথাই বের হয়।
“যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই কি সন্ধ্যে হতে হয়?”
#চলবে