তোমার আসক্তিতে আসক্ত পর্ব-২২

0
308

#তোমার_আসক্তিতে_আসক্ত
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব-২২

আর্শিকা ডাক্তার আংকেলের হসপিটালে বসে আছে।আজ আবারও ডাক্তার আংকেল তাকে ডেকেছে যদিও বিষয়টা অজানা আর্শিকার কাছে। আর্শিকা ইতস্তত হয়ে প্রশ্ন করে,

“আংকেল কোনো কি দরকার ছিলো?”

“হুম আগে বলো কি খাবে?”

“জ্বি না আংকেল কিছু লাগবে না।”

ডাক্তার আংকেল কোন কথা না শুনেই দু’কাপ কফি অর্ডার করে। আর্শিকা আংকেলের কার্যক্রম চুপচাপ লক্ষ্য করে। তারপর আংকেল বলতে শুরু করে,

“সত্যি করে বলো তো তুমি রাদাফকে ঠিক কবে থেকে চিনো?”

“মানে আংকেল?”

“আমার ছেলেকে আমি খুব ভালো করে চিনি।কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা তো দূর তাকাও না আর সেখানে কাল তোমাকে খাইয়ে দিলো সাথে কত ভালো ব্যবহারও করলো।কবে থেকে পরিচিত তোমরা?”

“না মানে ভার্সিটিতে… ”

“মিথ্যা বলো না আমাকে আর্শিকা।কাল রাতে ছাদে বলা সমস্ত কথাই আমি শুনেছি।কে তুমি সেটা বলো?”

“আপনি তো তাহলে ৬ বছর আগে করা আপনার ছেলের অপকর্মের কথাও জানেন আশা করি?”

“তাহলে তুমিই সেই মেয়ে?”

“জ্বি।”

“আর্শিকা শুনো তোমায় কিছু কথা বলি। তুমি তো রাদাফকে ঠিক করে চিনোই না তার আগে ওর সম্পর্কে যত খারাপ ধারণা নিনের মধ্যে ধারণ করেছো।রাদাফ কেনো এমনটা করেছে তা কি জানো?”

“জ্বি নাহ।”

“তাহলে আমি বলি শুনো,রাদাফ যেই বন্ধুর কথা বলছে ওর নাম আরিশ।আরিশ আর রাদাফ ছোট বেলা থেকেই ফ্রেন্ড বরং বন্ধু কম দুজনে যেনো ভাই। ওদের একসাথে দেখলে যে কেউ বলবে যে ওরা ভাই।রাদাফের মতো আরিশও সুদর্শন ছিলো।আরিশের সব থেকে আকর্ষণীয় ছিলো ওর কন্ঠ,খুব সুন্দর গান করতো।আরিশ যখন কলেজে উঠে তখনই এক মেয়ের সাথে অনলাইনে ওর পরিচয় হয়।আরিশ সেই মেয়ের কথায় এতোই মুগ্ধ হয় যে সেই মেয়েকে ও ভালোবেসে ফেলে।আস্তে আস্তে সময় যেতে থাকে আর আরিশের ভালোবাসা গভীর হয়।৩ বছর কেটে যায় মেয়েটার সাথে দেখা না করেই আরিশ তাকে ভালোবাসে।ভালোবেসে বড্ড বোকা হয়ে গিয়েছিলো সে।একদিন আরিশ মেয়েটাকে না জানিয়েই তার সাথে দেখা করতে যায় কিন্তু ওটাই ছিলো আরিশের সবথেকে ভুল।”

“কি হয়েছিলো আংকেল সেদিন?”

ডাক্তার আংকেল চোখের চশমা খুলে তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বলে,”আরিশ সেদিন গিয়ে দেখে মেয়েটা খোলা রাস্তায় অন্য একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছে।ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারোর সাথে এতোটা ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখে আরিশ সহ্য করতে পারে নি।ছুটে গিয়ে ছেলেটাকে ঘুষি মারে।মেয়েটাকে টেনে নিয়ে এসে প্রশ্ন করে ছেলেটা কে?কিন্তু মেয়েটা উলটো আরিশকে অপমান করে চিনে না বলে, মাঝ রাস্তায় আরিশকে বখাটে ছেলে পর্যন্ত বলে।যেহেতু মাঝ রাস্তায় একটা মেয়ের সাথে আরিশ খারাপ বিহেভ করেছিলো তাই জনগন আরিশের উপর ক্ষেপে গিয়ে ওকে গণধোলাই দেয়।”

“তারপর?”

“আরিশ না বড্ড বোকা ছিলো।গণধোলাই খেয়েও ওর হুস ফেরে নি।পাগলের মতো মেয়েটাকে ফোন করে মেসেজ করে এক পর্যায়ে মেয়েটা ওকে ব্লক করে দেয়।আরিশ প্রচন্ড ডিপ্রেশনে পড়ে যায়।আরিশের সব থেকে বড় গুন কি জানো ও যে কারোর সামনে ফেক হাসতে পারতো তাই তো রাদাফও বুঝতে পারে নি।আরিশ তারপর মেয়েটার সাথে দেখা করতে যায় কিন্তু মেয়েটা পুনরায় তাকে অপমান করে।নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসার প্রতিদান মেয়েটা এভাবে দিবে তা আরিশ ভাবতেও পারে নি।অতিরিক্ত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আরিশ সুইসাইড করে।”

“মানে একটা মেয়ের জন্য সুইসাইড করে?”

“উহুউউ নিজের উপর অভিমান করে সুইসাইড করে।নিজের চয়েজের উপর ভিত্তি করে যার জন্য তিন বছর সময় নষ্ট করলো,বাবা মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করলো সেই জন্য নিজের জীবনটাই শেষ করে দেয়।সাথে নিজের ভালোবাসার আঘাতটাও ওকে শেষ করে দেয়।”

আর্শিকা এত্তোক্ষণ নিরবে সব শুনতে থাকে। ডাক্তার আংকেল আবারক বলে,”যখন রাদাফ তার প্রিয় মৃত্যুর সংবাদ শুনে ও প্রায় পাগল হয়ে যায়।অনেক কষ্টে ওকে স্বাভাবিক জীবনে আনতে পেরেছি।কিন্তু পরে এই মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করে ও জানতে পারে একটা মেয়ের জন্য ওর প্রাণ প্রিয় বন্ধু সুইসাইড করে রাদাফের তখন মাথা ঠিক থাকে না, প্রতিশোধের নেশা ওর মাথায় ঘুরে। তাই তো প্রি-প্ল্যান অনুযায়ী কিডন্যাপ করে। কিন্তু সমস্যা হয় এক জায়গায় যার জন্য এতো ব্যবস্থা করা হয় সে আসেই না বরং তার জায়গায় তুমি এসে হাজির হও।রাদাফ মেয়েটাকে দেখে নি তাই তোমাকে কিডন্যাপ করে তোমার সাথে রুঢ় ব্যবহার করে।রাদাফ যখন জানতে পারে মেয়েটা তুমি নও তখন ও সাথে সাথে তোমাকে রেস্কিউ করতে যায় বাট গিয়ে দেখে তুমি আগেই ওখান থেকে মুক্ত হয়েছো।আমি এসব কিছুই জানতাম না যদি জানতাম তাহলে কিছুতেই রাদাফকে এই অত্যাচারের খেলায় মাততে দিতাম না।রাদাফ পরে তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছে।আমাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতো আর বলতো বাবা আমি একটা মেয়ের প্রতি অন্যায় করেছি আমার ক্রেজি কুইনের প্রতি অন্যায় করেছি।ছেলের এই অসহায়ত্ব সাথে বন্ধু হারানোর যন্ত্রণা আমি মেনে নিতে পারি নি। পাড়ি দিলাম সুদূর কানাডায় আর সেখানেই ওর আরেক ফ্রেন্ড হয় নাম আহিল চৌধুরী।”

আর্শিকা ধৈর্য সহকারে সব শুনলো। এখন ঠিক তার কি করা বাহ বলা উচিত তা আর্শিকা বুঝছে না। ডাক্তার আংকেল আর্শিকা অনুরোধ করে বলে,

“দেখো আর্শিকা আমি জানি রাদাফ তোমায় প্রচন্ড ভালোবাসে, সেটা এখন থেকে না বরং ৬ বছর আগের থেকে। তাই আমার একটা অনুরোধ রাদাফকে তুমি ভালোবাসো আর নাই বাহ বাসো ওকে প্লিজ ভুল বুঝো না যা হয়েছে তা মূলত পরিস্থিতির স্বীকার। তুমি বলেছিলে না আমি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তোমার কাছে কি চাই?আমার একটাই চাওয়া আমার ছেলেকে ভুল না বুঝে ওকে একটু বুঝো অনেক তো মস্তিস্কের কথা শুনলে এবার একটু মনের কথা শুনো।”

“ওকে আংকেল এবার আমি উঠি।”

আর্শিকা আর কোনো কথা না বলেই উঠে চলে যায়।আপাতত সমস্ত ঘটনা শুনে তার মস্তিস্ক অচল হয়ে গিয়েছে। আর্শিকা বেশ কিচ্ছুক্ষণ আনমনে হেটেই চলেছে কিন্তু কোথায় যাচ্ছে তার হুস নেই৷ এভাবে হাটতে হাটতেই হটাৎ আর্শিকা হাতের টান অনুভব করলো। আর্শিকা পাশে তাকিয়ে দেখে রাদাফ তার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

“কোন দিকে চোখ তুলে হাটছিলে?ম/রার কি খুব শখ জেগেছে?

আর্শিকা অবাক হয়ে বলে,” মানে?”

“মানে আমি যদি সঠিক সময়ে না আসতাম তাহলে তো তুমি গাড়ি চাঁপা পড়ে ম/রতে।কোন দিকে ধ্যান ছিলো তোমার?যে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটছিলে?”

আর্শিকা ভালো করে দেখলো আনমনে হাটতে হাটতে আর্শিকা ঠিকই রাস্তার মাঝে চলে এসেছে।আর্শিকা ভীত চোখে রাদাফের দিকে তাকিয়ে বলে,

“সর‍্যি খেয়াল করি নি।”

“তা খেয়াল করবে কেনো হারালে তো আমার হারাতো লস তো আমার হতো।”

“মানে?”

“এতো মানে মানে করো না তো। চলো তোমায় বাড়ি ছেড়ে দেই নইলে দেখা যাবে আবার কোন গাড়ির সামনে পড়বে কে জানে?”

আর্শিকা কিছু বলে না শুধু চুপ করে থাকে। রাদাফ আর্শিকার নিস্তব্ধতা দেখে ওর হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে যায়।আর্শিকা শুধু একবার রাদাফের দিকে আরেকবার হাতের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।

✨✨

আর্শিকা, জয়া আর নয়না বসে আছে।মূল কথা হচ্ছে আহিলকে নিয়ে।কাল জয়া আর আহিলের আলাপ আর্শিকা জানতে পেরেছে।আর জয়ার মনে আহিলকে নিয়ে সমস্ত ভুল ধারণাও আর্শিকা ক্লিয়ার করেছে।বর্তমানে জয়া অনুতপ্ত আহিলকে এতো সব কথা বলার জন্য। কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই পিহু আছে।পিহুর গালটা এখনো বেশ কিছুটা ফোলা।তারপরেও তার মুখে হাসির রেখা আর্শিকা বর্তমানে পিহুকে দেখলে খুব অবাক লাগে।যেই মেয়েটা সামান্য কষ্ট পর্যন্ত সহ্য করতে পারতো না সে কি করে কায়ানের দেওয়া এতো আঘাত বিনা অভিযোগে মেনে নিচ্ছে।

পিহু আসলে আসর যখন জমজমাট হবে তখনই আর্শিকার চোখজোড়া সামনের দিকে আটকে যায়।আর্শিকার এমন রিয়েক্সন দেখে পিহু সহ সবাই সামনের দিকে তাকাতেই হতবম্ভ হয়ে যায়।কায়ান সবার সামনে হাসিমুখে এসে বলে,

“মিট মাই ফিয়োন্সি কেয়া।”

#চলবে