তোমার আসক্তিতে আসক্ত পর্ব-২৩

0
337

#তোমার_আসক্তিতে_আসক্ত
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব-২৩

আর্শিকার এমন রিয়েক্সন দেখে পিহু সহ সবাই সামনের দিকে তাকাতেই হতবম্ভ হয়ে যায়।কায়ান সবার সামনে হাসিমুখে এসে বলে,

“মিট মাই ফিয়োন্সি কেয়া।”

কায়ানের কথা শুনে উপস্থিত সবার মধ্যে বোম ফাটে।উৎসুক দৃষ্টিতে সবাই কায়ানের আর তার সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে আছে।কেয়াকে কায়ানের কাছে দেখে ইতিমধ্যেই পিহুর চোখ ছল ছল করে উঠেছে,বুকের মধ্যে চিন চিন ব্যাথা শুরু হয়েছে।ছলছল দৃষ্টিতে বারবার কায়ানের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কায়ান সেই চাহুনি উপেক্ষা করে বলে,

“কি হলো সবাই এভাবে অদ্ভুত ভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছো কেনো এতোদিন তো খুব বলতে আমার ফিয়ুন্সির সাথে মিট করাই না কেনো? আমার কি কোনো ফিয়ুন্সি নেই তাই? তা পিহু কই আমার ফিয়ুন্সির সাথে মিট করবে না,কথা বলবে না?”

কায়ানের কথা শুনে কেয়া পিহুকে দেখিয়ে বলে,

“এই পিহু কায়ান”

“ইয়েস কেয়া।”

কথাটা শোনার সাথে সাথে কেয়া পিহুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

“হাই পিহু তোমার কথা কায়ান অনেক বলে।তুমি অনেক মিষ্টি আর কিউট একটা মেয়ে।আর সবসময় হাসি খুশি থাকো তা আজ পিহুরাণীর মুখে হাসি কই নাকি আমাকে দেখে সব হাসি উবে গেলো?”

বলেই কেয়া হাসতে শুরু করল।কেয়া কি করে জানবে তার সামনে থাকা রমনীর তার আর কায়ানের মিলন দৃশ্য দেখে ধুকে ধুকে মরছে।পিহু নিজেকে সামলে নিয়ে মুখে হাসি টেনে বলে,

“আর কি কি বলেছে?”

” আরও অনেক কিছু বলেছে যে তুমি অনেক মিশুক।তুমি খুব বুদ্ধিমতি।”

“এটা বলে নি আমি অনেক স্বার্থপর আর হিংসুটে?”

পিহুর কথায় কেয়ার হাসিটা মিলিয়ে গেলো৷ পিহু কায়ানের সামনে গিয়ে বলে,

“আপনি তো আমার বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন তো এটাও জেনে নিন আমি না ব…বড্ড বোকা।”

কথাগুলো বলতে পিহুর গলা আটকিয়ে আসছিলো, না চাইতেই অবাধ্য চোখের জল পড়ছিলো। কায়ান এক দৃষ্টিতে পিহুর দিকে তাকিয়ে আছে।পিহু নিজেকে সামলিয়ে আবার বলতে থাকে।

“কোন সহজ কথা আমার মাথার ভিতরে ঢুকতেই চায় না।তাই তো #তোমাকে আসক্তিতে আসক্ত হয়েও আজ আমি নিঃস্ব কারণ আমার সেই তুমিটা কখনো আমার ছিলোই না।”

“পিহু আমার কথাটা….”

“অনেক তো আপনার কথা শুনেছি এবার না’হয় আপনি আমার কথাটা শুনুন। আমার ভিতরে কোনো কিছুরই কমতি ছিলো না, হ্যা আমি একটু পাগলামো করি ঠিকই কিন্তু তার জন্য এতো বড় শাস্তি না দিলেও পারতেন।”

পিহু নিজের চোখের পানি মুছে মুখে হাসি টেনে কায়ানকে বলে,

“দোয়া করি আপনাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক।”

বলেই চোখের পানি লুকানোর জন্য দৌড়ে ছুটে পালায়।আর্শিকা, জয়া, নয়নার ডাকেও পিহু ঘুরে পিছনে তাকায় নি।পিহু যাওয়ার পরই পরই কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কায়ানও অগত্য রওনা হয়।

✨✨

ডান হাত দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। একজোড়া চোখ সেই রক্ত গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য শান্ত চোখে দেখছে। কিচ্ছুক্ষণ আবার রাগ সামলাতে না পেরে দেওয়ালে আবার ঘু/ষি দেয়। কায়ান রাগে দু’হাত দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরেছে।চোখের সামনে শুধু পিহুর কান্নারত দৃশ্যটা দেখতে পারছে।না চাইতেও আজ তার প্রিয় মানুষকে জীবনের শ্রেষ্ঠ কষ্ট তাকে দিতে হয়েছে।

“আ’ম সর‍্যি মাই পিহুরাণী। আমি যে নিরুপায়।তোমাকে নিজের জীবনের সাথে জড়ালে তুমি যে পরবর্তী জীবনে এর চেয়েও বেশি কষ্ট পেতে।”

“কেনো এমন করলেন ভাইয়া?”

আর্শিকার কন্ঠস্বর শুনে কায়ান আর্শিকার দিকে তাকায়। আর্শিকা কায়ানকে দেখে থমকে যায়।হাত দিয়ে গল গল রক্ত বেরিয়ে,মাত্রাতিরিক্ত কান্নার ফলে চোখ দু’টো লাল হয়ে গিয়েছে। আর্শিকা ভীত কন্ঠে বলে,

“কি হয়েছে ভাইয়া আপনার?”

“কিছু না আর্শিকা?তুমি এখানে কেনো?আমাকে একা থাকতে দেও।”

“পিহুর সাথে এমন কেনো করলেন?”

“এটা নিয়ে পরে কথা বলছি।”

“না আমি এখুনি জানতে চাই, বলুন ভাইয়া।”

“আর্শিকা বিরক্ত করো না তো।”

“পিহু কি দেখতে খুব খারাপ যে আপনার পিছনে এতো ঘুরার পরও আপনি ওকে সময় দিলেন না,ওর ভালোবাসা এক্সেপ্ট করলেন না।”

“না পিহু খারাপ দেখতে না বরং ওর জন্য আমি পার্ফেক্ট না।”

“লাইফে কেউ পার্ফেক্ট হয় না ভাইয়া,পার্ফেক্ট করে নিতে হয়। আপনিও পিহুকে পার্ফেক্ট করে নিবেন।”

“এটা পসিবল না।”

“কেনো পসিবল না।”

এবার কায়ান রেগে আর্শিকাকে বলে,”জানতে চাও কেনো পসিবল না ওকে ফাইন এই দেখো।”

এই বলেই কায়ান ফোন থেকে একটা ছবি আর্শিকাকে দেখায়।আর্শিকা ফোনটা হাতে নিয়ে বলে,

“এটা কি?”

“ভালো করে দেখো।”

আর্শিকা ভালো করে দেখে কিছুটা বুঝতে পারে কিছুটা না।কায়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

“আমার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।আমি সর্বোচ্চ আর এক বছর বাঁচবো।এমন অবস্থায় আমি কি করে নিজের অনিশ্চিত জীবনের সাথে একটা মেয়ের জীবন জড়াতে পারি তুমিই বলো?আর পিহু যে নাছোড়বান্দা এতো খারাপ ব্যবহারের পরও আমাকে ছাড়ে নি তাই তো এই পন্থা অবলম্বন করলাম।এছাড়া আমার করারই বাহ কি ছিলো?”

আর্শিকা নিস্তব্ধ হয়ে যায়।আর্শিকা ভাবতেও পারে নি এমন কিছু একটা হবে। আর্শিকা চুপচাপ কায়ানের কথা শুনছে।কায়ান চোখ মুছে বলে,

“আমি যে কি করে আমার পিহুরাণী কষ্ট দিয়েছি তা আমিই জানি।আমার পিহুরাণী আমাকে যেদিন থেকে ভালোবেসেছে তার চেয়েও আগে থেকে আমি তাকে পছন্দ করি কিন্তু নিজের মনের কথা জানানোর আগেই আমার রিপোর্ট আমাকে আটকে দেয়।আমি যে নিরুপায়, বড্ড নিরুপায়।”

“কিন্তু আমার কাছে উপায় আছে?”

কায়ান কষ্টে কান্না করা বন্ধ করে রমনীর দিকে তাকায়।আর্শিকাও সেইদিকে তাকাতেই পিহুকে দেখতে পায়।পিহুর সাথে কেয়াও উপস্থিত।কায়ানের মতো পিহুর চোখেও পানি। পিহু কাঁদতে কাঁদতে কায়ানের হাত ধরে বলে,

“আমায় বিয়ে করবেন?”

পিহুর তিন বাক্যের শব্দ জেনো সবার শরীরে বিদ্যুতের ন্যায় শক লাগে।কায়ান এক ছিটকায় পিহুর হাত ছড়িয়ে দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,

“পাগল হয়েছো পিহু তুমি?সব কিছু জেনেও তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো?আমি কি করে তোমায় বিয়ে করতে পারি?তাহলে যে তোমার জীবনটা নরক হয়ে যাবে।আমি তা পারবো না।”

“আমি যে ক’দিন এই পৃথিবীতে আছেন সে ক’দিনের জন্য হলেও আমি আপনাকে চাই।দয়া করে না করবেন না,আমি যে আপনাকে বড্ড ভালোবাসি।”

“পিহু পাগলামো করো না।এই কেয়া ওকে এখান থেকে নিয়ে যা।”

পিহু কেয়ার কথা না শুনে কায়ানের পা জড়িয়ে বলে,”এভাবে আমায় ফিরিয়ে দিবেন না।আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না।”

কায়ানের পিহুর কান্না আকুতি দেখে কায়ান যেনো গলছে না। কিছুতেই পিহুকে সায় দিতে পারছে না।কারণ পিহুকে সায় দিলে ওর পরবর্তী ভবিষ্যত যে নিমিষেই নষ্ট হয়ে যাবে।এরই মধ্যে রাদাফও এসে উপস্থিত হয়।রাদাফ এসে কায়ান এবং পিহুকে কাঁদতে দেখে সাথে পিহু কায়ানের পা ধরে কাঁদতে দেখে অবাক হয়ে যায়।

কায়ান পিহুকে প্রশয় না দিয়ে পা সরিয়ে নেয়।পিহু কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি,খুব।আমি আপনাকে ছাড়া…..”

কিছু বলার আগেই পিহু জ্ঞান হারায়।পিহু মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগেই কায়ান পিহুকে ধরে নেয়।

✨✨

হসপিটালের করিডোরে আর্শিকা, রাদাফ আর কায়ান দাঁড়িয়ে আছে। কায়ান আর আর্শিকা নিরবে চোখের পানি ফেলছে।আর্শিকা পিহুর অবস্থা দেখে কাঁদছে যে মেয়েটা সবাইকে হাঁসাতো,সবাইকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতো আজ সেই মেয়েটা আরেকজনের কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চাচ্ছে। রাদাফ সমস্ত ঘটনা শুনে প্রচন্ড রেগে গেছে।রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে রাদাফ বলে,

” কায়ান তুই কি করে পারলি এইটুকু পিচ্চি মেয়েকে এত্তো কষ্ট দিতে?আজ তোর জন্য দেখেছিস মেয়েটা শয্যসায়ী।আমি এটা তোর কাছে এক্সপেক্ট করি নি।”

“আমি যে নিরুপায় রে।”

“কিসের নিরুপায়?ক্যান্সার হলে কি মানুষ সুস্থ হয় না।তোকে সুস্থ করার জন্য হাজারটা ডাক্তার দেখাবো তুই সুস্থ হয়ে যাবি। তাই এ মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারলি এখন যদি পিহুর কিছু হয়ে যায়?”

” ক্যান্সারেএ রুগী খুব কম স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।আর আমার পিহুরাণীর কিছু হবে না।”

“কিছু হবে না না ওলরেডি হয়ে গেছে।শয্যসায়ী ও দেখছিস নাহ?”

“আমার পিহুরাণী ঠিক হয়ে যাবে। ও যা বলবে আমি তাই করবো।”

“তোকে কিছু করতে হবে না।ও সুস্থ হলে আমি ওকে নিয়ে যাবো।”

“তাই যা আমি তো ওকে কষ্ট দেই।”

“থামবেন আপনারা?”

আর্শিকার একটা ধমকে দুজনে চুপ হয়ে যায়।আপাতত বান্ধুবীর চিন্তায় আর্শিকার কাছে এই ঝগড়া ভালো লাগছেনা।আর্শিকা আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ে।তখনই ডাক্তার এলে সবাই তাকে জড়ো করে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।ডাক্তার বলে,

“পেসেন্টের….”

#চলবে