তোমার জন্য পর্ব-১১+১২

0
51

# তোমার_জন্য
Writer: জুঁই
পর্ব: এগারো
.
.
শুদ্ধ বাংলা ভাষায় বলছি…
….আমি তোমাকে ভালোবাসি…. বিয়ে করবে আমায়…? [ ইচ্ছের সামনে হাটু গেড়ে বসে ]

ইচ্ছে ব্রেঞ্চে বসা থেকে দাড়িয়ে যায়…যে ভয় টা পেয়েছিল সেটাই সত্যি…কিন্তু ইচ্ছের তো কিছু করার নেই..আশিসের ডাকে যে সে সারা দিতে পারবেনা…

ইচ্ছে: এএসব আআপনি কি বলছেন….?

আশিস: তুমি যা শুনছো তাই বলছি…

ইচ্ছে: না এটা হতে পারেনা…এটা আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা নয় ভালোলাগা…আপনি ভুলে কেনো যাচ্ছেন আমাদের সম্পর্কটা…আপনি অফিসের মালিক আর আমি বেতনভুক্ত কর্মচারী…আর আমাদের মধ্যে এমন কোনো সম্পর্ক না থাকতে পারে আর না হতে পারে !!

আশিস: হাসালে আমায় ইচ্ছে…আমার মনে তোমার জন্য ভালোবাসা আর সেটাকে তুমি ভালোলাগা বলছো… হ্যাঁ প্রথমে ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসা তৈরি হয়েছে….
আর কেনো কোনো সম্পর্ক হতে পারেনা…এমন তো কোনো নিয়ম নেই মালিক আর কর্মচারী ভালোবাসা বা বিয়ে হতে পারে না…!

ইচ্ছে: এতো তর্কবিতর্কে আমি যেতে চাই না…আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক হতে পারেনা ব্যাসসস….!!

আশিস: কেনো হতে পারেনা…??

ইচ্ছে: কারন আমি engaged…!!
পারিবারিক ভাবে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে গত এক বছর ধরে…আর আমার হবু স্বামীর নাম দিহান…শুনে নিয়েছেন কেনো আমার আর আপনার কোনো সম্পর্ক হতে পারেনা….এবার আপনি যান..আর হ্যাঁ এসব পাগলামি বন্ধ করেন…আদরিত রহমান আশিসের জন্য হাজার হাজার মেয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে..?!

ইচ্ছের কথা শুনে আশিসের মাথায় বাজ ভেঙে পরলো…তবুও হার মানার পাত্র না…কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে…নিজেকে সামলে নিয়ে….

আশিস: piont to be noted..কি বললে পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে..? তাহলে এটা কোনো সমস্যা না..তুমি তো আর ভালোবাসো না..তাহলে আর কি চাই…

ইচ্ছে: excuse-me..কি সব বলছেন..বিয়ে ঠিক হওয়া মানে বুঝেন…??

আশিস: হুমম বুঝিই তো না বুঝার কি আছে…
আর শুনো কোনো চাপ নেয়ার দরকার নাই..তোমার পরিক্ষার পরেই শশুর মশাইয়ের কাছে আমার আর তোমার বিষয়ে কথা বলতে…

ইচ্ছে ভেবে পাচ্ছে না এই ছেলে কি তার সাথে মজা করছে নাকি সত্যি সত্যিই বলছে..কি করে সবকিছু এতো সহজ ভাবে নিচ্ছে ব্যাপারটা…

ইচ্ছে: দেখুন মজা করবেন না…আর লক্ষি ছেলের মতো বাড়িতে যান…এসব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেন….!!

আশিস: সে তো আমি কখন ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি..যখন তুমি বললে পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তখন থেকে আমার মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে…আমার রাস্তা ক্লিয়ার….আমাদের গাড়িটা দৌড়াবে…!! [ বিন্দাস মুডেই কথা গুল বললো আশিস ]

ইচ্ছে: পাগল টাগল হলো নাকি…আমার বিয়ের কথা শুনে…[ মনে মনে ]
.
.

,,
.
.
পরেরদিন সেইম টাইমে আশিস ইচ্ছের ভার্সিটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে…!!

ইচ্ছে আশিস কে দেখে রেগে গেলো…এই ছেলেটা তো আস্ত একটা পাগল..বলে দিলাম আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে…তাতে তার কোনো হেলদোল নাই..আরো যেনো আঠার মতো লেগে আছে….

ইচ্ছেকে দেখে আশিস একটু ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে…
ইচ্ছে এগিয়ে এসে…
ইচ্ছে: হ্যালো মিস্টার…আপনাকে বলছি শুনছেন…?

আশিস: শুনছি আর দেখছিও…এই নাও এটা তোমার জন্য….!!

ইচ্ছে: কি এটা…?

আশিস ইচ্ছের জন্য হাওয়ায় মিঠাই নিয়ে আসছে..

আশিস: এই জনপ্রিয় খাবার টাকে ভুলে গেলে…? it’s not done…!

ইচ্ছে: আপনি এসব ন্যাকামি করার জন্য আসছেন…? [ বিরক্ত নিয়ে ]

আশিস: জ্বী না ম্যাম…আমি আপনাকে দেখতে আসছি….!

ইচ্ছে: শুনুন এক কথা বারবার বলতে আমার ভালো লাগে না…বললাম তো আমি অন্য কারো বাগদত্তা..!!

আশিস: হ্যাঁ আমারো এক কথা শুনতে ভালো লাগছে না…কাল থেকে একি ঘ্যানঘ্যান করছো…কিন্তু তার মধ্যে একবারো বলনি যে তুমি আমাকে ভালোবাস না…কিংবা কি যেনো নাম দিহান নাকি বিহান ওকে ভালোবাসো…তাহলে কি বুঝতে পারছো নিশ্চয়….??

ইচ্ছে: দেখুন…..
ইচ্ছেকে থামিয়ে দিয়ে…

আশিস: দেখতেই তো চাই..[ চোখ টিপ দিয়ে ]

ইচ্ছে: ফাজলামি করছেন…? এসবের মুড নাই আমার..

.
.
.
,,
.
.
.
আশিস নাছোর বান্দা ইচ্ছের পিছু ছাড়েনি.. পরিক্ষার প্রতিটা দিন ইচ্ছের ভার্সিটির সামনে বেহায়ার মতো দাড়িয়ে থাকছে…!
ইচ্ছে কিছুতেই কিছু বুঝাতে পারছেনা আশিসকে…শেষমেষ ইচ্ছে চাকরিটা ছেরে দিবে আশিস কে জানিয়েছে…আশিসের তাকে জানিয়েছে রানিং মাসে চাকরি ছারতে পারবেনা.. it’s rules..এমাসের বাকি দিন গুলো অফিসে নিয়মিত আসতে হবে…!!
.
.

আশিস অনেক ভেবে চিন্তে একটা সিধান্তে উপনীত হয়েছে যে সে কাল ইচ্ছের বাড়িতে যাবে..কারন কাল অফ ডে..ইচ্ছের বাবার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবে…!

যেই ভাবা সেই কাজ..পরেরদিন ইচ্ছের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো…আর শান্ত হচ্ছে আশিসের সুখ দুঃখের সাথি…তাই শান্তকে সঙ্গে নিয়েই এলো..

শান্ত সেই লেভেলের নার্ভাস…একটু ভিতু টাইপের ছেলে…আজ পযর্ন্ত শালীনির কথা তার মাকে জানাতে পারেনি..আর ওদিকে তার মা মেয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছে…

শান্ত আশিসের ঘাড়ে দায়িত্ব দিয়েছে তার মাকে সব বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করানোর জন্য ..
আশিস ও সেটা যথাযথ ভাবে পালন করবে তার জন্য শান্ত আর শালীনীকে কিছু শর্ত দিয়েছে…শর্ত হচ্ছে ইচ্ছেকে পাওয়ার জন্য যে কোনো কিছু করতে রাজি আশিস..আর সাহায্য করবে ওরা দুজন…ইচ্ছের বাবা রাজি না হলে..অন্য ভাবে ইচ্ছেকে নিজের করবে…সেটা ক্ষমতা হোক বা চিটিং…ভালোবাসা আর যুদ্ধের জন্য নাকি সব করা যায়..!!

চলবে…..!!

# তোমার_জন্য
Writer: জুঁই
পর্ব: বারো
.
.
অবশেষে ইচ্ছের বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আশিস…
বুকে সাহস সঞ্চয় করে দরজায় নক করলো…!
ভিতুর ডিম শান্ত তো আশিসের পিছনে লুকিয়ে আছে…

ইচ্ছের মা দরজা খুলতেই…
আশিস: আসসালামু আলাইকুম আন্টি..!

ইচ্ছের মা: ওয়া আলাইকুম আসসালাম…. আপনাকে তো ঠিক চিনলাম….

পিছন থেকে শান্ত বলে উঠলো ও আমার বন্ধু আন্টি…!

শান্ত যেহেতু পর্ব পরিচিত তাই আর কথা না বারিয়ে….
ইচ্ছের মা: বাহিরে দাঁড়িয়ে কেনো ভিতরে এসো…!

আশিস আর শান্ত গিয়ে সোফায় বসলো…এক তলা বিশিষ্ট বাড়িটা খুব বড় না হলেও বেশ গুছানো..!
আশিসের চোখ এদিক ওদিক দৌড়াতে ব্যাস্ত ইচ্ছেকে খুজতে…

শান্ত: আন্টি ও হচ্ছে আদরিত রহমান আশিস…ইচ্ছে ওর অফিসেই চাকরি করে…!

ইচ্ছের মা: তাহলে আমি ইচ্ছেকে ডেকে দেই..ও তো পাশের .. [ ইচ্ছের মা ভাবছে হয়তো কোনো দরকারে ইচ্ছের কাছে এসেছে ]

আশিস: আন্টি ইচ্ছেকে ডাকার দরকার নেই…আপনি আঙ্কেল কে ডেকে দিন…উনার সাথে ইনফ্যাক্ট আপনাদের দুজনের সাথে কিছু কথা আছে…!

এতক্ষনে ইচ্ছের বাবা চলে আসছে…ভিতর থেকে কথার আওয়াজ পেয়ে…!

ইচ্ছের মা: ওই তো ইচ্ছের বাবা চলে আসছে….
ইচ্ছের বাবার সাথে কুশল বিনিময় করে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে বসে আছে আশিস..

শেষমেষ বলেই দিল ডিরেক্টলি….
আশিস: আঙ্কেল আমি ইচ্ছেকে ভালোবাসি…আপনারা রাজি থাকলে আমি ইচ্ছেকে বিয়ে করতে চাই…!

ইচ্ছের বাবা+ মা দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে…ইচ্ছের বাবা+ মা আশিসের থেকে এমন কোনো কথা আশা করেনি…!

কিছুক্ষন চুপ থেকে
ইচ্ছের বাবা: তুমি হয়তো জানো না ইচ্ছের বিয়ে ঠিক আছে…? আর ইচ্ছে এই কথাটা জানে তুমি যে ওকে ভালোবাস…?

আশিস: আপনার দুটো প্রশ্নের উত্তরই হ্যাঁ….!

ইচ্ছের বাবা: তাহলে তুমি কিভাবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছো…যেখানে ইতিমধ্যে একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক আছে সেখানে…আর আমার মেয়ের উপর আমার ভরসা আছে…ও নিশ্চয় তোমার এমন কু প্রস্তাবে রাজি হয়নি…

আশিস: এটাকে কুপ্রস্তাব কি করে বলছেন আঙ্কেল…? আমি ইচ্ছেকে ভালোবাসি আর ওকে বিয়ে করতে চাই সেটা সৎ সাহস নিয়ে বলতে এসেছি…

ইচ্ছের বাবা: এজন্যই কু প্রস্তাব বলেছি…তুমি তো জানো ইচ্ছের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে..আর ইচ্ছে নিজেও এই বিয়েতে রাজি..ওর মতামত নিয়েই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ….

আশিস: হ্যাঁ সেটা আপনাদের ইচ্ছেতেই ও রাজি হয়েছিল..
.
.

আশিস চুপচাপ ড্রাইভ করছে..আশিসকে চুপচাপ
দেখে..
শান্ত: কিরে এমন শান্ত হয়ে আছিস কি করে…তাহলে কি হবে ইচ্ছের বাবা তো রাজি হলো না..আর না হওয়ারই কথা…

আশিস: হুমম আমি জানতাম এটা…আর এটাই স্বাভাবিক নই কি…?
উনাদের জানানো টা আমার দায়িত্ব ছিল…!

শান্ত: হ্যাঁ দোস্ত এটা ঠিক..যে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আর হঠাৎ করে কেউ একজন গিয়ে যদি বলে আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি…আর ওমনিই তো তার হাতে তুলে দেয়া যায় না…ইচ্ছের বিষয় বাদ দিয়ে দে..!.

আশিস: আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি…

শান্ত: ভেবে চিন্তে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিস নিশ্চয়…?আর ইচ্ছের বিষয় টা বাদ দিয়ে দে…!

আশিস: সঠিক সিধান্ত কিনা জানি না…আর ইচ্ছের বিষয় বাদ দিবো কেমনে..কিছুদিন পর তো ইচ্ছের সব বিষয় আমার সাথে জড়িয়ে যাবে….

আশিসের এমন হেয়ালিপনা কথায় শান্ত কনফিউজড…
শান্ত: এএএ্যাাা

আশিস: জ্বী হ্যাঁ…

শান্ত: কিন্তু কি করে…?

আশিস:……..? এই ভাবি বুঝলি…?

শান্ত: চিটিং করে…? আর ইচ্ছে কি মানবে…?

আশিস: মানতে বাধ্য…!

.
.

আশিস যখন ইচ্ছের বাড়িতে আসছিল..তখন ইচ্ছে বাড়িতে ছিল না..পাশের বাড়িতে ছোট একটা বাচ্চার আছে…আর সময় পেলেই বাচ্চাটার কাছে যায়..

ইচ্ছে বাড়িতে এসে সব শুনে অবাক…কারন আশিস যে সত্যি এরকম কিছু করবে ভাবতে পারেনি…ইচ্ছের তো রাগ হওয়ার কথা আশিসের এমন কাজে…কিন্তু না মনের অজান্তেই বেরিয়ে এলো ছেলের কনফিডেন্স আছে বলতে হয়…একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ! যেনেও তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে….ভাবা যায়..!

..

পরেরদিন ইচ্ছে অফিসে এসেই নিজের ডেস্কে না গিয়ে আশিসের কেবিনে গেলো…without permission…

ইচ্ছেকে নিজের কেবিনে দেখে…
আশিস: আরেববাস এতো মিস করছিলে আমায় সোজা আমার কেবিনে…[ চোখ টিপ দিয়ে ]

ইচ্ছে: আচ্ছা আপনার সমস্যা কি বলেন তো…?

আশিস: নো সমস্যা…!

ইচ্ছে: কেনো এরকমটা করছেন…? এটা কি শুধু শুধু পাগলামি নয়….??

আশিস: পাগলামিই যদি বলো তাহলে সেটা ভালোবাসার জন্য পাগলামি… whatever তোমার হাতে কি ওটা লাভ লেটার…?

ইচ্ছে: হ্যাঁ খুলে দেখেন…!

আশিস ইচ্ছের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে মোটেও অবাক হয়নি…ও তো এটাই চেয়েছিল…!

হ্যাঁ ওটা resignation লেটার…! যদিও ইচ্ছে চারকিটা ছেড়ে দেয়ার কথা আগেও বলেছিল…সেটা নিতান্তই তার একার কথা ছিলো…

…..কিন্তু গতকাল রাতে…

ইচ্ছের বাবা ইচ্ছেকে উদ্দেশ্যে করে : তোমাকে ছোট বেলা থেকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছি…তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করেছি আমাদের সামর্থের মধ্য…তোমার সব সিদ্ধান্তে আমরা তোমার পাশে থেকেছি…আমাদের আর্থিক অবস্থা হাই কোয়ালিটির না হলেও..তোমার চাকরি করার প্রয়োজন ছিল না…তুমি চাকরিটা করতে চেয়েছিলে আমরা তোমায় বারন করিনি…তোমার প্রতি আমাদের ভরসা আছে..আশা করছি সেই ভরসার মূল্য তুমি দিবে…যখন তোমার বিয়ে ঠিক করা হলো তুমি অনার্স কমপ্লিট করতে চেয়েছিলে..তাই শুধু বিয়েটা ঠিক করে রেখেছি…আর হ্যাঁ চাকরিটা তুমি আর করবে না…!

,,,

আশিস: তোমার যখন মন চাইবে তখন চাকরি ছেড়ে দিবে সেটা কি করে হয়…সব কিছুর তো এখটা নিয়ম আছে..রানিং মাসের আরো চারদিন বাকি সো এই চারদিন তুমি অফিস কনটিনিউ করবে…ওকে…!

ইচ্ছে: কিন্তু স্যার….?

আশিস: কোনো কিন্তু নয়…!
.
.

ইচ্ছে ডেস্কে বসে আছে কাজ করতে মন চাইছে না..ইচ্ছেকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে
সোহা: তোমার কি মন খারাপ…?

ইচ্ছে: হুমমম [ আনমনে ]

সোহা: কি হয়েছে..?

ইচ্ছে: কই কিছু না এমনিতেই…কেমন আছো তুমি?

সোহা: ভালো আছি…তুমি…?

ইচ্ছে মাথা নেড়ে হ্যাঁ করলো মানে ও ভালো আছে…

ইচ্ছে সোহার সাথে আরো অনেক কথা বললো….হঠাৎ কথা বলার মাঝে
সোহা: আচ্ছা ইচ্ছে তুমি কি খেয়াল করছো…অফিসের পেইনটিং আর আগের মতো নেই…

এতোক্ষনে ইচ্ছে চারপাশ তাকিয়ে অবাক সত্যিই পেইনটিং চেন্জ…আগের মতো নেই…বিশেষ করে আশিসের কেবিন…
ইচ্ছে: আমি তো খেয়ালই করি নাই.. স্যার এর তো আগের পেইনটিং পছন্দের ছিল.. স্যার নিজের কেবিনটা এতো চেন্জ করেছে কেনো…? বলতে বলতে সামনের দিকে একটা লেখা চোখে পরলো…
# তোমার জন্য…!

সোহা: স্যার বলেছে তার প্রিয় মানুষটার নাকি পছন্দের পেইনটিং এটা… !

ইচ্ছের তখন মনে পরল…

ইচ্ছে: স্যার আসবো…? আপনি কি ভিতরে আছেন…?

আশিস: হ্যাঁ এসো…!

ইচ্ছে ভয়ে ভয়ে ভিতরে ডুকে বুকে ফু দিয়ে নিল..

আশিস: ভিতুর ডিম.. ভয় পাবার কি আছে…?

ইচ্ছে: স্যার এসব ইজিবিজি কি সব পেইনটিং করে রেখেছেন…দেখে মনে হয় ভূতের বাড়ি এটা..এই যে দেখেন কি সুন্দর সুন্দর পেইনটিং এগুলো তে বেশী ভালো লাগতো রুমটা [ নিজের ফোনে কিছু পেইনটিং বের করে আশিসের দিকে এগিয়ে দিয়ে ].. অন্তত ভূতের বাড়ি লাগতো না…

আশিস: তোমার কাছে আমি সাজেশন চেয়েছি…?

ইচ্ছে: তা চান নি..কিন্তু আমি ফ্রি তেই সার্ভিস দিলাম..!

শান্তর ডাকে ইচ্ছের ঘোর কাটলো…
ইচ্ছে এই পেপারে তোমার একটা সাইন লাগবে…..!

ইচ্ছে: কিসের সাইন…?

শান্ত: না মানে আসলে তুমি তো resignation লেটার দিয়েছো…

ইচ্ছে: সেটার সাথে আমার সাইনের কি সম্পর্ক…?

আশিস: আলবাদ সম্পর্ক আছে … তুমি যে চাকরিটা ছেড়ে দিচ্ছো তার প্রমান তোমার এই সাইন…

শান্ত ইচ্ছের দিকে পেপারটা এগিয়ে দিল…ইচ্ছের সাইন শেষে…
আশিস: আলহামদুলিল্লাহ ….!

ইচ্ছে: আলহামদুলিল্লাহ বললেন কেনো…?

আশিস: ভালো কাজের শেষে তো আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়..তুমি জানো না…?
যাই হোক যে দুদিন আছো মন দিয়ে কাজ করো কেমন…!

.
.
পাচঁ দিন পর…

আশিস: হ্যাঁ শালীনি আজ থেকে আর ইচ্ছে অফিসে আসবে না…!

শালীনি: ভাইয়া আমি বলছিলাম কি এটা কি অন্যায় হচ্ছে না…?

আশিস: তুমি কি শান্ত কে আদৌ ভালোবাসো….?

শালীনি: ঠিক আছে ভাইয়া কাজ হয়ে যাবে…কিন্তু এসবের দায় আমি নিতে পারবো না..

আশিস: এই তো লাইনে আইছে..[ মনে মনে ]
ঠিক আছে তোমাকে যে কাজটা দেয়া হয়েছে সেটা মন দিয়ে করো.. আপাতত অন্য কিছু ভাবতে হবেনা….!
.
.

পরেরদিন সকালবেলা শালীনি ইচ্ছের বাড়িতে চলে গেলো…

শালীনি: আঙ্কেল আন্টি তোমাদের কাছে আমার একটা আবদার আছে রাখবে তো…?

ইচ্ছের মা : হ্যাঁ বলো না..কি আবদার আমাদের সাদ্ধের মধ্যে হলো অবশ্যই রাখবো…!

ইচ্ছে মনে মনে: এর আবার কি হলো…!

শালীনি: আজ আমি ইচ্ছেকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো…আমি তো দুদিন পর পর আসি..আর ইচ্ছে সেই কবে আমার বার্থডের মধ্যে গিয়েছিল…তাই মা ইচ্ছেকে নিয়ে যেতে বলছে…আমি কিন্তু তোমাদের কোনো বারন শুনবো না…[ একদমে কথা গুলো বলে স্বস্তির নিশ্বাস নিল]

ইচ্ছে: কি বলছিস এসব হঠাৎ…?

শালীনি: ঠিকি বলছি…আর এজন্যই তোকে না বলে আঙ্কেল আন্টির থেকে পারমিশন নিচ্ছি… আঙ্কেল বলো না..ইচ্ছে আমার সাথে যাবে তো…?

ইচ্ছের বাবা: ও যদি যাই তাহলে নিয়ে যাও..!

শালীনি: আঙ্কেল এভাবে বললে ইচ্ছে কে কোনো দিনও নিয়ে যেতে পারবো না..আর ও যাবেও না…! প্লিজ আন্টি আঙ্কেল কে বলোনা…বিকেলেই আমি ইচ্ছেকে বাসায় পৌছে দিয়ে যাবো…!

অবশেষে ইচ্ছের বাবা পারমিশন দিলেন…!

শালীনি: ইচ্ছে তুই কিন্তু শাড়ী পড়ে যাবি আমার সাথে…দেখ আমিও শাড়ী পড়ে এসেছি…!
শালীনির অনুরোধে ইচ্ছে একটা মেরুন কালারের শাড়ী আর হালকা সাজে বেরিয়ে এলো…

ইচ্ছে: আরে দাড়া দাড়া স্কুটি টা তো নিতে দিবি নাকি…?

শালীনি: না না স্কুটি নিতে হবে না…আমরা অন্য কোনো গাড়ি নিয়ে যাবো চল তো…!

কিছুক্ষণ পর…
ইচ্ছে: এই সত্যি করে বল তো কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমায়…? এটা তো তোর বাড়ির রাস্তা না..!

শালীনি: হুমম এটা বাড়ির রাস্তা না…কোথায় যাচ্ছি সেটা গেলেই দেখতে পাবি…

.
.

ইচ্ছে: তুই কি মজা করছিস আমার সাথে…তোর বাড়িতে নিয়ে যাবি বলে আমায় নিয়ে আসলি..আর এখন এই ক্যাফে নিয়ে এলি…? তাও এতো দূরে..?

শালীনি: চল আগে ভিতরে গিয়ে বসি তারপর বাকি কথা বলি…?

ইচ্ছে: না আমি ভিতরে যাবো না..আর না তোর কোনো কথা শুনবো.. নিশ্চিত কিছু তো গন্ডোগোল আছে..!

শালীনি: প্লিজ চল না…!

ক্যাফের ভিতর গিয়ে বসে আছে প্রায় পাচঁ মিনিট…
ইচ্ছে: দেখ এবার ধৈর্যের বাদ ভেঙে যাচ্ছে আমার…!

শালীনি: তুই খাবার অর্ডার কর..আমি ওয়াস রুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসছি..[ ইচ্ছের দিকে মেনু কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে ]

ইচ্ছে মেনু কার্ডটা দেখছে কি অর্ডার করা যায় ভাবছে…

এটা # তোমার জন্য…[ ইচ্ছের দিকে হাওয়া মিঠাই এগিয়ে দিয়ে ]
সামনে তাকিয়ে আশিসকে দেখে যতটা অবাক হওয়ার কথা ছিল ঠিক ততটা অবাক হয়নি ইচ্ছে…হয়তো আশিস কেই এসপেক্ট করেছিল…

ইচ্ছে: আপনি…?

আশিস: কাকে আশা করছিলে…?

ইচ্ছে: কাউকেই আশা করিনি..আশা করার মতো কেউ নেই বুঝলেন…!

আশিস:ভেবে বলছো তো…?

ইচ্ছে: ভাবার কি আছে…?

আশিস: কেনো দিহান নাকি বিহান ওকেও তো আশা করতে পারতে…?

ইচ্ছে: সব সময় দিহানকে কেনো টেনে আনেন..আর ও কে হয় আমার..যে আমি ওকে আশা করবো…

আশিস: হ্যাঁ ঠিক বলেছো…কেউ হয়না…আমি তোমার অনেক কিছু হই…এখন থেকে সব জায়গায় আমাকেই শুধু আশা করবে..ঠিক আছে…!

ইচ্ছে: মানে…?

আশিস ইচ্ছের হাত ধরে চল আমার সাথে…

ইচ্ছে: এটা একটু বেশিই হয়ে গেল না…? কোন সাহসে আমার হাত ধরেছেন..?

আশিস: কোনো সাহসে না অধিকারে হাত ধরেছি তোমার…!

ইচ্ছে: আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন আমাদের সম্পর্কটা কি…?

আশিস: যে সম্পর্ক ছিল সেটার কথা ভুলে যাও… এখন নতুন সম্পর্কের কথা ভাবো…!

আশিস এসব ওল্টা পাল্টা কি বলছে ইচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না..

ইচ্ছে: কি সব বলছেন..? কিসের সম্পর্কের কথা বলছেন..?

আশিস: কিছুক্ষণ পর ঠিকি বুঝতে পারবে..
বলেই ইচ্ছেকে গাড়িতে বসিয়ে দিল…

১৫ মিনিট পর একটা বাংলোর সামনে গাড়ি থামল..

ইচ্ছে: কোথায় নিয়ে আসলেন আমাকে…?

আশিস: ভয় পেয়ো না…এটা আমার বাংলো…আর এখানে আজ সারাদিন আমার সাথে থাকবে তুমি..আর কিসের সম্পর্ক সেটাও যানতে পাবে…বিকেলের আগেই বাড়ি পৌছে যাবে…!

.
.
আশিস এগিয়ে গিয়ে ইচ্ছের হাত ধরে..
আশিস: I Love You.. সত্যিই আমি তোমাকে ভালোবাসি..বাবা মা বোনকে হারিয়ে এই প্রথম কাউকে আকড়ে ধরতে চাইছি…আর সেটা হচ্ছো তুমি…!

ইচ্ছে: আপনি কেনো বুজতে চাইছেন না..আমি অন্য কারো হবু স্ত্রী..তাছাড়াও আপনি তো বিষয় টা আমার বাড়িতে জানিয়েছেন..তারা তো না করে দিয়েছে…আমার আর কিছুই করার নেই..! ক্ষমা করে দিন আমায়..!

আশিস: তুমি অন্য কারো হবু স্ত্রি ছিলে পাচঁ দিন আগ পযর্ন্ত..আর বিগত পাচঁদিন ধরে অন্য কারো স্ত্রী…

ইচ্ছে: কিসব বলছেন আপনি…[ কাপাকাপা কন্ঠে ]

আশিস: তুমি কেনো মানতে চাইছো না তুমিও আমায় ভালোবাসো..এই কয়দিনে একবারো তুমি বলোনি যে তুমি দিহান কে ভালোবাসো..কিংবা আমায় ভালোবাস না…শুধু একটা কথায় বলছো তোমার বিয়ে ঠিক আছে..আর আমি জানি তুমি এটা তোমার পরিবারের জন্য করছো…আমায় ভালোবেসেও সেটা তুমি স্বীকার করছো না…[ ইচ্ছের দুবাহুতে হাত দিয়ে ]

ইচ্ছে কাদ থেকে আশিসের হাত সরিয়ে দিয়ে: না আমি আপনাকে ভালোবাসি না.. ভালোবাসি না..শুনতে পেয়েছেন..? আমি আমার বাবা মাকে ভালোবাসি আর তাদের কথা মতোই আমি বিয়ে করবো..![ রেগে ]

আশিস: তোমার বিয়ে হয়ে গেছে ইচ্ছে…আর সেটা আমার সাথে..এই তার প্রমান…[ ইচ্ছের দিকে একটা পেপার এগিয়ে দিয়ে ]

পেপারটা হাতে নিতেই ইচ্ছের পায়ের নিচের মাটি সরে গেল…কারন এটা রেজিস্ট্রি পেপার..যেখানে ইচ্ছে এবং আশিস দুজনের সাইন.. আইনত ইচ্ছে আর আশিস স্বামী স্ত্রী… ইচ্ছের বুঝতে বাকি নেই এটা সেদিনের করা সাইন..
হ্যাঁ resignation এর দিন আশিস মিথ্যে বাহানা দিয়ে ইচ্ছেকে রেজিস্ট্র পেপারে সাইন করিয়ে ছিল..!

ইচ্ছে হাত থেকে পেপার ফেলে দিয়ে
মানি না আমি এ বিয়ে..আপনি এটা ঠিক করেন নি..এটা অন্যায়..

আশিস: তুমি মানো আর না মানো তুমি আমার স্ত্রী..যে ভাবে হোক আমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে…[ ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে]

ইচ্ছে: এই বিয়ের কোনো মূল্য নেই আমার কাছে..মানি না এই বিয়ে…আমি আমার বাবার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবো..আর সেটা কালকেই..

আশিস: কিসের এতো অহংকার তোমার…? কেনো আমায় ভালোবাসবে না.. আর নিজের স্বামীর সামনে অন্য ছেলেকে বিয়ে করার কথা বলতে লজ্জা করেনা তোমার…?

ইচ্ছে: লজ্জা তো আপনার করার কথা… আপনি চিটিং করে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়ে নিলেন! আর স্বামী হয়ে গেলেন..? বিয়েটা কি খেলা নাকি একটা পেপারে সাইন করলাম আর বিয়ে হয়ে গেলো..

আশিস: হ্যাঁ পেপারে সাইন করেছো মানে আইনত আমার স্ত্রী হয়ে গেছো.. আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে…!

ইচ্ছে: না হয়নি.. হয়নি… দুটো পরিবারের মতামত যেখানে নেই..যেখানে আমার বাবা মায়ের ইচ্ছে নেই..সেই বিয়েটার কোনো মূল্য নেই আমার কাছে… আমি দিহান কেই বিয়ে করবো…আর সেটা কালকেই…!

আশিস: বারবার তোর কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসছি বলে ! এটা ভাবা ভুল যে আমি আমার ভালোবাসা আদায় করে নিতে জানি না…

নিজের বউ এর মুখ থেকে বারবার অন্য ছেলেকে বিয়ে করার কথা শুনে আশিস রেগে গিয়ে..
খুব অহংকার না আজ এই অহংকারই থাকবে না…

ইচ্ছের ঘাড় থেকে শাড়ির আচলটা ফেলে দিতেই পিঠের কিছুটা অংশ বেড়িয়ে আসে..
আশিস তাতে নিজের নাক ঘসা দিতে থাকে..আর ইচ্ছের শরীরে গন্ধ নিতে থাকে…!

In present….

গাড়িটা ব্রেক করতেই ইচ্ছে নড়েচড়ে বসলো…

আশিস: এসে গিয়েছি..সামনে শালীনি আছে..ও তোমায় বাড়ি পৌছে দিবে..[ বলেই গাড়ির দরজাটা খুলে দিল আশিস]

ইচ্ছে গাড়ি থেকে নামবে হাতে কিছুর টান অনুভব করলো..আশিস হাত ধরে আছে আর চোখগুলো ছলছল করছে…যে কোনো সময় চোখের পানি গুলো বৃষ্টি হয়ে নামবে……!

চলবে…..

[ ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন ]