তোমার জন্য পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
55

#তোমার_জন্য
Writer: জুঁই
পর্ব: ষোলো এবং অন্তিম পর্ব
.
.
দিহানের কথায় ইচ্ছের ভরসা করতে ইচ্ছে করছে..নিজের ভালোবাসার প্রতি আস্থা রাখতে ইচ্ছে করছে…!
.
.
__
.
.

এভাবেই তিনদিন কেটে গেলো…

…. বিয়ের দিন সকালে…

শালীনি: ইচ্ছে এটা তুই কি করছিস…? তোর তো বিয়ে হয়ে গেছে..তোরা একে অপরকে ভালোবাসিস তাহলে কেনো এ বিয়েটা করছিস…? একবার তো নিজের বাবাকে বলে দেখ…!

ইচ্ছে: হা হা গাদি তোর কি মনে হয় আমি দিহানকে বিয়ে করবো.?…বয়েই গেছে…আমি তো আশিসকে বিয়ে করবো… ইসলামিক ভাবে..বিয়েটা তো হয়েছিল আইনত এবার হবে ইসলামিক ভাবে..আর সাহায্য করবে দিহান…!

শালীনি: এ্যাআআ…

ইচ্ছে: জ্বী হ্যাঁ…

শালীনি: কিন্তু কিভাবে…?

ইচ্ছে: সেটা তো দেখতেই পাবি…!

.
.
আশিসদের বাড়িতে ছোট খাটো ভাবে আয়োজন হচ্ছে বিয়ের…যাস্ট বধুবরন এর জন্য… ভালোই ভালোই বিয়েটা হলে পরে রিসেপশনের অনুষ্ঠান হবে…আশিস এবং ইচ্ছে দুজনেই টেনশনে আছে..সব ঠিকঠাক হবে তো…? দিহান সব ম্যানেজ করতে পারবে তো…?
দিহান ছেলেটার উপর ভরসা করায় যায়… সুন্দর একটা মনের অধিকারী সে.. না হলে এতো সহজে অন্যের মনের কথা বুঝতে পারতো না… দুটো মনের ভালোবাসাকে এক করে দিতে গিয়ে হয়তো নিজের ভালোবাসাকেই বিসর্জন দিচ্ছে সে….!!

.
.
__
.
.
আশিস: কিরে পেত্নি তুই তো খুব ফাকি বাজ..কাজ করতে হবে বলেই পগার পার হচ্ছিস…আমার বাসর ঘর কে সাজাবে তাহলে…?[ ইশাকে উদ্দেশ্য করে ]

ইশা: চিন্তা করোনা সে দায়িত্ব আমারই…আর তোমার বাসর ঘর সাজিয়ে দেয়াই হবে আমার পক্ষ থেকে #তোমার_জন্য..উপহার…!

.
.

শালীনি: এমন ছটফট করছিস কেনো…? একটু শান্ত হয়ে বসবি তো নাকি…?

ইচ্ছে: তুই কি করে বুঝবি আমার অবস্থা…আমার খুব নার্ভাস ফিল হচ্ছে..অনেক ভয় করছে রে..সব ঠিকঠাক হবে তো…?

শালীনি: চিন্তা করিস না সব ভালো হবে…!
.
.
__
.
.
বিয়ের আসরে বসে আছে ইচ্ছে… বুকের ভিতর ধুকবুক ধুকবুক করছে… শেষমেশ না জানি কি হয়…!

কাজি বিয়ে পরানোর ঠিক আগ মূহুর্তে.. দিহান বলে উঠলো…
এ বিয়ে হতে পারেনা…!

বিয়ের আসরে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেছে.. এমন একটা কথা শুনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না…!

দিহানের বাবা এগিয়ে এসে: কি বলছিস কি দিহান.. তোর মাথা ঠিক আছে..? বিয়ের আসরে বসে বলছিস এ বিয়ে তুই করবি না…!

দিহান: হ্যাঁ বাবা আমি এ বিয়ে কিছুতেই করতে পারবো না…!

ইচ্ছের বাবা বেশ চিন্তিত হয়ে : এসব তুমি কি বলছো দিহান..?

দিহান: ঠিকি বলছি আঙ্কেল..এ বিয়ে করে আমি তিনটে জীবন নষ্ট করতে পারবো না…

ইচ্ছের বাবা: তিনটি জীবন..?

দিহান: হ্যাঁ তিনটি জীবন..আমার ইচ্ছের আর আশিসের…!

ইচ্ছের বাবা মাথা টা নিচু করে: এসব কথার কোনো মানেই হয়না দিহান…!

দিহান: হয় আঙ্কেল হয়.. আপনি শুধু আপনার আদর্শের কথায় ভাবছেন..আপনার প্রতিশ্রুতির কথা ভাবছেন .. ভাবছেন না এই বিয়েটাতে তিনটে জীবন নষ্ট হবে… আপনি একটা জায়গায় বাদা সেটা হলো আপনি আমার বাবার সাথে ওয়াদা বদ্ধ এই বিয়েতে…আপনি আপনার জায়গায় ঠিক…কিন্তু আমি যদি বলি আপনি ইচ্ছের বিয়েটা আশিসের সাথে দেন…

দিহানের বাবা এগিয়ে এসে : কি বলছিস কি মাথা ঠিক আছে তো…? এখানে বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছে তোর আর ইচ্ছে…আর বিয়ে হবে ইচ্ছে আর আশিসের…!

দিহান: মাথা ঠিক আছে বলেই তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবা… কেনো তোমরা বুঝতে চাইছো না… বিয়েটা করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে…? না হবে না আরো সমস্যা বাড়বে… !

এসব কথা বলার মাঝে ইচ্ছে নিরব দর্শকদের মতো সব দেখছে আর শুনছে… সেখানে শালীনি এবং শান্ত ও উপস্থিত…!

শালীনি+ শান্ত: আঙ্কেল ইচ্ছে নিজের মুখে না বললেও কিন্তু ও আশিসকে ভালোবাসে… আপনারা তো সেটাই করবেন যেটাতে ইচ্ছে ভালো থাকবে… এই বিয়েতে কি ইচ্ছে আদৌ ভালো থাকবে…?

সবার কথা শুনে ইচ্ছের মা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছের বাবাকে উদ্দেশ্য করে: তুমি মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো..সব বুঝতে পারবে.. ও যদি আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এ বিয়েতে রাজি হতে পারে..তাহলে আমরা কেনো পারবো ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ওর ভালোবাসার মানুষের হাতে তুলে দিতে…যেখানে দিহান নিজেও চাইছে..ইচ্ছে আর আশিসের বিয়ে হোক…!!

ইচ্ছের বাবা ইচ্ছের কাছে গিয়ে: আমি তোমার থেকে জানতে চাই তুমি কি আশিসকে বিয়ে করতে চাও….?

ইচ্ছে কি জবাব দিবে.?..বাবার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার সাহস নেই… মাথা নিচু করে শুধু চোখের পানি ফেলছে…!

ইচ্ছের বাবা মেয়ের চোখের পানি আর নিরবতায় নিজের উত্তর খুজে পেয়েছে….!!

ইচ্ছে আর আশিসের ভালোবাসার জোরে এবং দিহানের প্রচেষ্টায় বিয়েটা হয়ে গেলো অবশেষে…..!!
.
.

সব নিয়মকানুন মেনেই বিয়েটা হয়েছে..আশিসের সাথে শুধু ওর নানুমনি উপস্থিত ছিল…!!

গাড়িতে পাশাপাশি বসে আছে ইচ্ছে আর আশিস…ইচ্ছে আশিসের হাত নিজের মুঠোয় বন্দি করে রেখেছে…!

পাশে রাখা আছে ছোট্ট একটা বক্স… সেটা দিহান দিয়েছে ইচ্ছেকে..দিহান যখন বক্সটা ইচ্ছের হাতে তুলে দিল তখন শুধু একটা কথায় বলেছিল…এটার ভিতর যে জিনিসটা আছে সেটা অনেক যত্ন করে রাখা ছিল #তোমার_জন্য…!!

নিরবতা কাটিয়ে…
আশিস: বক্সের ভিতর কি এমন আছে যে যত্ন করে রেখেছিল…?

ইচ্ছে: কি এমন আছে জানতে হলে বক্সটা খুলে দেখতে হবে….
বলেই বক্সটা খুলে একটা পায়েল পেলো…!

ইচ্ছে: এটা তো সেই পায়েল টা..যেটা হারিয়ে গিয়েছিল…বলতে বলতে বক্সের ভিতর একটা চিরকুটের দিকে নজর গেলো…

তাতে লেখা আছে….

হ্যাঁ ঠিকি ভাবছো এটা সেই পায়েলটা… যেদিন আমি আর তুমি সাদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মিনিট পাচেঁকের মতো কথা বলছিলাম… তোমার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিলাম…তখন খেয়াল করলাম তোমার পা থেকে পায়েল টা খুলে পরে গিয়েছে… তুমি সাদ থেকে চলে আসার জন্য এতোটাই ব্যস্ত ছিলে যে…বুঝতেই পারোনি পায়েলটা তোমার পা থেকে খুলে পরে গিয়েছে…তখন পায়েলটা তোলে নেই…এতোটা দিন খুব যত্ন করে আগলে রেখেছিলাম #তোমার_জন্য… ভেবেছিলাম কোনো এক স্পেশাল দিনে এটা তোমায় দিবো….. আর আজকে সেই স্পেশাল দিন… এর থেকে স্পেশাল দিন হতে পারেনা #তোমার_জন্য…!
যে মানুষটাই আমার থাকলো না তার জিনিস কি করে রাখি নিজের কাছে….!
ভালো থেকো তোমরা… !!

.
.
__
_______
___
.
.
আশিসদের বাড়িতে…..

আশিস: নানুমনি আমি খুব খুব খুশি… আমি আমার ইচ্ছেকে পেয়েছি নানুমনি [ জড়িয়ে ধরে ]

নানুমনিও একহাতে আশিসকে জড়িয়ে ধরলো..আরেক হাতে চোখের পানি মুছে নিল… নানুমনির এক পাশে আনন্দ আরেক পাশে দুঃখ…!!

.
.
আশিস আর ইচ্ছেক রুমে এসে তো সারপ্রাইজড…কারন রুমটা ভিষণ ভিষণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে… চারিদিকে ফুলের সুবাস আর মোমবাতির আলো…!!

তখনি কারো কন্ঠ ভেসে আসলো…..

কি পছন্দ হয়েছে তো রুমটা সাজানো…? অবশ্য এটা আমার পছন্দের ছিল… আমার আর তোমার পছন্দ তো কোনো দিন মিলেনি..তুমি ছিলে উত্তর মেরুর আর আমি দক্ষিণ… সে যাই হোক.. এটাই হচ্ছে আমার পক্ষ থেকে #তোমার_জন্য…সেরা উপহার….! সত্যি আমি অনেক খুশি তোমার স্বপ্ন পূরন হয়েছে..তুমি তোমার ইচ্ছেকে পেয়েছো…. সত্যিই মন থেকে কিছু চাইলে সেটা পাওয়া যায়..তার প্রমান তোমরা… আমি তো বুঝতে শিখেছি তারপর থেকেই একটা জিনিসই শুধু চাইতাম… কিন্তু পেলাম না..হয়তো তোমাদের মতো করে মন থেকে চাইতে পারিনি তাই..তবে একটা স্বপ্ন আছে যেটা এখনো পূরন করার সময় আছে..আমার স্টাডি যেটা কানাডা থেকে কমপ্লিট করার ইচ্ছে ছিল..যখন তোমরা আমার কথা গুলো শুনবে তখন হয়তো আমি প্লেনে… হ্যাঁ আমি কানাডা যাচ্ছি…. দুঃখিত তোমাদের বিরক্ত করার জন্য.. ভালো থেকো আশিস এবং ইচ্ছে… তোমাদের ভালোবাসার বন্ধন অটুট থাকুক সারা জীবন….!!

এতোক্ষন এই কথা গুলো ছিল ইশার বলা… অডিও রেকর্ডিং করা ছিল…!!

আশিসের ইশার কথা গুলোর মানে বুঝতে দেরি হলেও ইচ্ছের হয়নি… কারন একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়েকে বুঝতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়না…!

ইচ্ছে: আপনি কি কিছুই বুঝেন নাই…

আশিস: কি বুঝার কথা বলছো…?

ইচ্ছে: ইশা যে আপনাকে ভালোবাসতো…

আশিস: বুঝতে পারেনি #তোমার_জন্য…কারন আমার মনের মাঝে তোমার মতো কাউকে একে রেখেছিলাম অনেক আগে…আর ইশা তো কখনো সিরিয়াস ভাবে কিছু বলেনি..ও সব কিছু ইজিলি নিতো.. তাই ওর সব কথাও আমি ইজিলিই নিতাম..ওই ভাবে কখনো ভাবিনি….

আচ্ছা এসব বাদ দাও তো… আজকে আমাদের স্পেশাল রাত… সো স্পেশাল ভাবেই….

আশিসের কথা শেষ হওয়ার আগেই…

ইচ্ছে: এক মিনিট..এক মিনিট… কিসের স্পেশাল টিস্পেল.. স্পেশাল রাতকে আপনি কবেই তো আন স্পেশাল করে দিয়েছেন…!!

আশিস: এই দেখো কানে ধরে উঠবস করছি…ক্ষমা করে দাও…!

আশিসের এমন বাচ্চামো কান্ডে ইচ্ছে হেসে দিল…আর আশিস অপলকে দেখতে লাগলো….!

ইচ্ছে: এই যে মিস্টার আদরিত রহমান আশিস আপনাকেই বলছি ওমন হা করে দেখার কি আছে…!

আশিস: অনেক কিছু বাকি আছে দেখার… আমার বউ কে আমি যেভাবে খুশি সেভাবে দেখবো…! এক মিনিট দাড়াও একটা জিনিষ আছে…

আশিস হাতে কিছু একটা এনে ইচ্ছের সামনে ধরতেই..

ইচ্ছে: এত্তো গুলা ধন্যবাদ আপনাকে [ আশিসকে জড়িয়ে ধরে ]

আশিস ইচ্ছের সামনে হাওয়ায় মিঠাই ধরাতেই ইচ্ছের এমন কান্ড…
পরক্ষনেই আশিসকে ছেড়ে হাওয়ায় মিঠাই খেতে শুরু করলো…!!
আশিস বসে বসে গালে হাত দিয়ে ইচ্ছের খাওয়া দেখছে..!

আশিস: শুধু ধন্যবাদে কাজ হবেনা মিসেস আদরিত রহমান আশিস….!!

ইচ্ছে: তো কি চাই মিস্টার আদরিত রহমান আশিসের…?

আশিস চোখে মুখে দুষ্টুমির আভা ফুটিয়ে ইচ্ছের ঠোঁটের দিকে ইশারা করলো…
ইচ্ছে লজ্জায় আশিসের বুকে মাথা লুকালো….!

আশিস: ওরেব্বাস আমার বউটা এখনো লজ্জা পাই..?.
বলেই ইচ্ছে ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো…

দুজন হারিয়ে গেলো ভালোবাসার সাগরে… যেখানে কোনো ভয় নেই.. নেই কোনো পিছু টান..নেই কোনো বাধা… দুজন শুধু দুজনের জন্য…!!

________সমাপ্ত______