তোমার জন্য পর্ব-৩+৪

0
85

#তোমার_জন্য
Writer: জুঁই
পর্ব: তিন
.
.
.
একটু পিছনে আসতেই ইচ্ছেকে বেলকোনিতে দেখতে পেলো আশিস…
কিছু একটা করছে আর একা একাই কথা বলছে ইচ্ছে…!

দেয়ালে হেলান দিয়ে ইচ্ছের কর্মকাণ্ড দেখতে থাকে আশিস…

আশিস: কি বুদ্ধি আমার বউটার বাবা যায়য়য়…[ মনে মনে ]
কারন ইচ্ছে বিছানার চাদর আশিসের শার্ট সব একসাথে গিট দিচ্ছে..বেলকোনির রেলিং এর সাথে বেধে নিচে নামার ধান্দা পাকাচ্ছে…

আশিস: কি করছে আমার বউটা..[ ধীরে ধীরে বললো আশিস ]

ইচ্ছে: পালাচ্ছি [ ফিসফিসিয়ে ]

_আশিস : কার থেকে পালাচ্ছো [ ইচ্ছের মতো ফিসফিসিয়ে ]

ইচ্ছে: কার থেকে আবার ওই চিটিংবাজ বরের কাছ থেকে…[ বলতে বলতেই পিছনে ঘুরে আশিস কে দেখে ভয় পেয়ে গেলো ইচ্ছে ]

আশিস ইচ্ছের দিকে এগিয়ে গিয়ে…
কি বললে চিটিংবাজ বর…?? যাক তাও মানলে তো আমি তোমার বর…!

ইচ্ছে: যান দূরে যান…একদম কাছে আসবেন ১৮ ইঞ্চি দূরত্ব রেখে কথা বলবেন…

আশিস: ইশশশ আমার জানটা কি রোমান্টিক মুডে আছে গো… আমিও আমার জানের জান হয়ে গেছি ভাবতেই কি রকম একটা ফিলিং হচ্ছে…[ বলেই চোখ টিপ মারলো আশিস ]

ইচ্ছে: এহহহ শখ কতো….! জান বলিনি যান বলছি…

আশিস: ওই একি হলো….!
আর এসব কি করছো…কাবাডে মনে হয় একটা কাপড় ও রাখো নাই..সব এখানে নিয়ে এসেছো..

ইচ্ছে: শাড়ি থাকলে কি আর কষ্ট করে এতো সব কাপড় আনতে হতো দুটা শাড়িতেই হয়ে যেতো..এতোক্ষনে আমি চলেও যেতে পারতাম[ ইনোসেন্ট মার্কা ফেস করে ]

আশিস: এসব স্টুপিড মার্কা বুদ্ধি কেমনে আসে তোমার মাথায়….
কি বুদ্ধি মাথায় সব কাপড় একসাথে বেধে…বেলকোনির রেলিং এ বেধে পালাবে….!!
বলেই কোলে তুলে নিলো ইচ্ছেকে…

ইচ্ছে: এই কি করছেন কি নামান আমাকে…[ হাত পা ছুটাছুটি করতে করতে ]

আশিস:এই হাওয়ায় মিঠাই নড়াচড়া কোনো লাভ হবেনা…শুধু শুধু তোমার এনার্জি নষ্ট হবে..!
আচ্ছা সব সময় তো বাবা বাবা করো….বাবা আমাকে এত্তো আদর করে এটা ওটা…কি এমন খাওয়ায়…? ওয়েট এমন হাওয়ায় মিঠাই এর মতো কেনো..??আর হবেই না বা কেনো সারাদিন তো হাওয়ায় মিঠাই এর পিছনেই দৌড়াও…

ইচ্ছে: রাখেন আপনার ফালতু কথা…! আমার বাবা আমাকে খাওয়ায় কি না খাওয়ায় সেটা আপনাকে বলতে হবেনা…..
আর হাওয়ায় মিঠাই নিয়ে বাজে কথা বলবেন না..আই লাভ হাওয়ায় মিঠাই….

আশিস: ইশশশ আমি কেনো হাওয়ায় মিঠাই হলাম না…[ বলতে বলতে বেডের উপর বসিয়ে দিলো ইচ্ছেকে ]
.
.
.
আশিস : খেয়ে নাও…[ হাতে ঔষধ নিয়ে ইচ্ছের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে…?

ইচ্ছে: খাবো না আমি…আপনি যা বলবেন তাই শুনতে আমি বাধ্য নই…

আশিস: ঔষধ টা খেতে বলছি তোমার ভালোর জন্যই তো…

ইচ্ছে: এতোই যখন আমার ভালো ভাবেন তাহলে আর…….!!

আশিস: প্লিজ ইচ্ছে ঔষধ টা খেয়ে নাও…তারপর যা খুশি বলো আমাকে….

ইচ্ছে: খাবো না খাবো না…কি করবেন…?

ইচ্ছের মুখের সামনে ঔষধ নিতেই ইচ্ছে দাতে দাত আটকে মুখ বন্ধ করে রাখে…

আশিস: মুখ খুলো বলছি ইচ্ছে…
দু গালে চাপ দিয়ে ইচ্ছে কে জোর করিয়ে ঔষধ খাইয়ে দেই আশিস….!

ইচ্ছে: কি মনে হয় আপনার আমি মানুষ না..?…আমার কষ্ট হয় না..? আপনার যখন যা মন চাইবে তাই করবেন আমার সাথে…..
আপনি কষ্ট দিলেন আবার আপনিই সেই কষ্ট দূর করার জন্য ঔষধ খাইয়ে দিলেন….
আপনি নাকি আমায় ভালোবাসেন এই আপনার ভালোবাসার নমুনা…? এ কেমন ভালোবাসা ???

আশিস:
কেনো প্রেমে পড়লাম, কেনো ভালোবাসলাম এর কারন

যদি তুমি খুজতে যাও, তুমি দেখবে

কিছুই তুমি খুজে পাচ্ছো না, অন্ধকার ঘরে তুমি কালো

বিড়ালকে খুচ্ছো কিন্তু বিড়ালটি সেই ঘরে নেই..

ভালোবাসাটি এমন

—— হুমায়ুন ফরিদী

রুম থেকে চলে গেলো আশিস…
কারন ইচ্ছের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস নেই তার…. সত্যিই সে অপরাধী…ভালোবাসার মানুকে হারানোর ভয়ে তাকে নিজের করে পেতে তার সাথেই অন্যায় করে ফেলেছে…তাকেই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে…!!

এর কি কোনো ক্ষমা আছে ?? ইচ্ছে কি ক্ষমা করবে কখনো…??
.
.
.
আশিসের পরিচয়…👇👇👇

[ আদরিত রহমান আশিস…! বাবা মা রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে…ছোট বোন ছিলো আরশি.. হারিয়ে গেছে…আদৌ সে বেচে আছে কিনা জানে না.. study complete করে নিজের বিজনেস সামলায়…Adrit group of industry’r একমাত্র মালিক ]
.
.

.
কিছুক্ষন পর আশিস খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে এসে দেখলো বাম পাশ ফিরে শুয়ে আছে ইচ্ছে…

আশিস: ইচ্ছে উঠো খেয়ে নাও…!

ইচ্ছে:……..!

ইচ্ছের সারা না পেয়ে…ইচ্ছেকে টেনে তুললো আশিস….

ইচ্ছেকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এতোক্ষণ যাবৎ কেদেছে…চোখ মুখ ফুলে গিয়েছে…!

ইচ্ছেকে দেখে আশিসের বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হলো…

/ ভালোবেসেছি যাকে মন প্রান দিয়ে
তার কষ্ট এসে লাগে এই বুকে \

.
.
ইচ্ছে: প্লিজ আমাকে বাড়ি যেতে দিন…আমি বাড়ি যাবো…বাবা মা চিন্তা করছে…[ কেদে কেদে ]

ইচ্ছের চোখের পানি আশিসের বুকে যেনো তীরের মতো বিধলো..

আশিস ইচ্ছের দুচোখের পানি মুছিয়ে দিলো….ইচ্ছের মাথাটা নিজের বুকে আগলে ধরলো….!!

আশিস: তুমি একটু সুস্থ হয়ে নাও…যতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে ততো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারবে…আর সুস্থ হওয়ার জন্য খাবার গুলো খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিতে হবে….[ ইচ্ছের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ]

ইচ্ছে এবার হেচকি তুলে কাদছে আর বলছে…
আমি বাড়ি যাবো..আমাকে যেতে দিন..!

আশিস: হুমম কালকেই যাবে বাড়িতে…লক্ষিটি আমার আগে খেয়ে নাও…!

অনেক কষ্টে ইচ্ছেকে খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে আশিস….
.
.
.
……..ইচ্ছের পরিচয় 👇👇👇…….

[ অধরা জান্নাত ইচ্ছে ! অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে…বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে….বাবা কোম্পানির জব করে.. মধ্যবিত্ত পরিবার…]

চলবে………!!

#তোমার_জন্য
Writer: জুঁই
পর্ব: চার
.
.
আশিসের বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছে ইচ্ছে..!

ইচ্ছেকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করতে লাগলো আশিস…

অফিসের কাজ গুলো জমে আছে…!

আশিস: শান্তর সাথে কথা বলি অফিসের সব ঠিকঠাক আছে কিনা..? [ আশিসের ব্রেস্ট ফ্রেন্ড শান্ত ]

যেই ভাবা সেই কাজ…
ফোন দিতেই শান্তর ফোন ওয়েটিং দেখালো…!

আশিস: শালা সারাদিন খালি প্রেম করা…জানটু মানটু বেবির সাথে কথা বলা.. তার যে একটা বন্ধু আছে সে খেয়ালই নাই…!

ক্রিং…ক্রিং….ক্রিং….!
ফোনের স্কিনে শান্তর নাম্বার দেখে…
বেবি তাহলে ছাড়ছে শান্ত বেবিকে….!

আশিস: হ্যালো…আমার বেবিটা কি করছে…?

শান্ত: আশিসসস…আবার শুরু করলি তুই…

আশিস: সারাদিন বেবির খবর নেয়া..? আমি বেচে আছি কিনা তার খবর তো নিলি না….

শান্ত: আরে ইয়ার কুল…আমি তো ফোন দেইনি তোর রোমান্সে ডিস্টার্ব হবে বলে…আমি কাবাব মে হাড্ডি হতে চাইনি…আফটার অল তুই আমার একমাত্র ব্রেস্ট ফ্রেন্ড…!!

আশিস: আরর রোমান্স….
আরো অনেক কথা বলে রেখে দিলো ফোন….!

.
.
হঠাৎ ইচ্ছের দিকে চোখ গেলো আশিসের…

গালে হাত দিয়ে ডান দিক ফিরে শুয়ে আছে ইচ্ছে…কপালে কিছু চুল পড়ে আছে…!

সোফা থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে বসলো ইচ্ছের পাশে…কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে আলতো করে চুমু একে দিলো ইচ্ছের কপালে…

হাত দিয়ে গালে স্লাইড করতেই ইচ্ছে নড়েচড়ে উঠে…
আশিসের ইচ্ছে করছে ইচ্ছের ঠোঠে আলতো করে ঠোঠ ছুইয়ে দিতে…
ইচ্ছের ঠোঠে ঠোঠ ছুইয়ে দিলো….

ইচ্ছে ফুল আর আশিস ভোমর একে অপরের প্রতি আকর্ষণ হবেই হবে…..!!
.
.
.
পরের দিন সকালে ইচ্ছে আগে জাগনা পেলো ঘুম থেকে…আশিস এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে নড়তে পারছেনা…

আশিসের চুল গুলো কপাল লেপ্টে আছে…দেখতে মায়াবি লাগছে…কিউটের কনটেইনার যেনো….!

আশিসের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসি দিয়ে আশিসের কপালে থাকা চুল গুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিলো ইচ্ছে…!

আশিসকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ফ্রেস হতে ওয়াস রুমে চলে গেলো ইচ্ছে….!

ফ্রেস হয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখছে ইচ্ছে…
গলায় চোখ পরতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো ইচ্ছের…কারন গলায় বাইটের দাগ কালচে হয়ে আছে….!!

হঠাৎ পিছন থেকে কারো হাতের স্পর্শ পেলো ইচ্ছে…
বুঝতে বাকি রইলো না এটা আশিস…!

ইচ্ছেকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাড় করালো আশিস…
ইচ্ছের থুতনিতে ধরে ইচ্ছের মুখটা উপরে তুললো আশিস…
ইচ্ছের ঘাড়ে বাইটের জায়গায় ডিপলি কিস করলো…

সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে আশিসের টি-শার্ট খামচে ধরে ইচ্ছে….!

আশিস: ইশশ আমার লজ্জাবতি তো লজ্জায় স্টোবেরি হয়ে গেছে….
এখন যদি কিছু হয়ে যায় আমায় কিন্তু দোষ দিতে পারবে না……!!

ইচ্ছে নিজেকে আশিসের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে…
যান ফ্রেস হয়ে অাসেন তাড়াতাড়ি …

আশিস: কেনো গো সোনা…? কোনো প্ন্যান আছে নাকি…??

ইচ্ছে: হুমম আছে তো…আজ আমরা বাড়ি ফিরব সেই প্ন্যান…

ইচ্ছের মুখে বাড়ি ফিরার কথা শুনেই আশিসের মন খারাপ হয়ে গেলো…

ইচ্ছে: কি হলো যান ফ্রেস হয়ে আসেন…!!

আশিস ফ্রেস হয়ে এসে সোজা নিচে চলে গেলো…
.
.
নিচে নামতেই রহিমা বেগম [ সার্ভেন্ট ] স্যার একা এলেন যে মেডাম আসবেনা? [ অশিসকে উদ্দেশ্য করে ]
মেডাম এখন কেমন আছে?

আশিস: আমাদের খাবারটা উপরে নিয়ে যাবো…
হ্যাঁ তোমার মেডাম এখন আগের থেকে ভালো আছে…!!

রহিমা বেগম খাবার প্লেটে সার্ভ করতেই খাবার নিয়ে উপরে চলে এলো আশিস….

রুমে এসে ইচ্ছেকে দেখতে পেলো না আশিস…খাবারের প্লেট রেখে বেলকোনিতে গেলো….

বেলকোনির রেলিং ধরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে ইচ্ছে…
হয়তো প্রকৃতির মাঝে কিছু খুজে বেরাচ্ছে…

আশিস চুপচাপ ইচ্ছের পাশে গিয়ে দাড়ালো…আর মনে মনে ভাবতে লাগলো…..
যে ভাবে তুমি প্রকৃতির দিকে গহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো…যে ভাবনায় বিভর আছো…সেই ভাবনা নিয়ে গহীন দৃষ্টিতে যদি একবার আমার চোখের দিকে তাকাতে ঠিক আমার ভালোবাসার অতলে তলিয়ে যেতে…ঠিক আমার ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারতে….!!

ইচ্ছের কথায় নিজের ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো আশিস…..

ইচ্ছে: একি আপনি কখন আসলেন আমি বুঝতেই পারিনি…

আশিস: হুমম যদি বুঝতেই তাহলে আর…….[ বলেই দীর্ঘ শ্বাষ ফেললো আশিস ]
খাবে এসো..[ বলেই রুমে চলে গেলো আশিস ]

আশিসের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো ইচ্ছে…

ইচ্ছে রুমে যেতেই সোফায় বসিয়ে দিলো ইচ্ছেকে…ইচ্ছের মুখের সামনে খাবার ধরতেই…

ইচ্ছে: আমি হাত দিয়ে খায়?

আশিস: প্লিজ আমি খাইয়ে দেই…!

ইচ্ছে মাথা নেড়ে হ্যাঁ করলো…
আশিস এমন ভাবে বললো যে না করার উপায় নেই…

ইচ্ছেকে দুবার খাইয়ে দিবার পর আবার যখন খাবার মুখে তুলে দিবে তখন আশিসের হাত ধরে ফেলে…..
আশিসের হাতটা ঘুরিয়ে আশিসের মুখে খাবার তুলে দেই ইচ্ছে….

খুশিতে আশিসের চোখ ছলছল করছে…
চোখের দু পাতা এক করলেই টুপ করে পানি গড়িয়ে পরবে….!

হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই ইচ্ছে ঝাপিয়ে পড়ে আশিসের বুকে……..

চলবে……!