তোমার জন্য পর্ব-৫+৬

0
85

#তোমার_জন্য
Writer: জুঁই
পর্ব: পাচঁ
.
.
আশিস ও এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ইচ্ছেকে….!!
,
,
,
গাড়িতে বসে আছে ইচ্ছে আর আশিস… দুজনেই চুপচাপ…

আশিসের বুকে তীব্র থেকে তীব্রতর ব্যাথা অনুভব হচ্ছে… চোখ দুটো ছলছল করছে…যে কোনো সময় বৃষ্টি হয়ে নামতে পারে…

ইচ্ছে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে….আকাশটা মেঘলাময়..মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে…!
এই বৃষ্টির দিনেই অশিসের সাথে ইচ্ছের প্রথম দেখা…

,
,
……..Flashback…….

৫ মাস আগে…
.
.
.
ইচ্ছে: ইশশশ পুরো ভিজে গেলাম…এখন কি হবে…[ স্কুটি পার্কিং করতে করতে ]
ধুরর ভাল্লাগেনা আজ অফিসে প্রথম দিন ভাবছি নিজেকে পরিপাটি ভাবে প্রেজেন্ট করবো…!

হ্যালো মিস হোয়াইট পরি এখানে বকবক না করে অফিসের ভিতরে যান না হলে পুরোই ভাজে যাবেন…

ইচ্ছে পিছনে তাকিয়ে দেখে কালো গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়ানো একটা ছেলে তার ড্রেস আপ সব কালো…এভেন ছাতা টাও কালো…

ইচ্ছে: এ কোন নাইজেরিয়া রে..কালোর গোডাউন[ মনে মনে ]
ধন্যবাদ আপনাকে…তবে আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে আপনার..আপনি আপনার কাজে যান..আর আমি কোনো হোয়াইট পরি না আমার নাম ইচ্ছে…!

ছেলেটি: কি মেয়েরে বাবা…ভালো কথা বললাম তাও কি attitude….? [ মনে মনে ]
ইচ্ছের যদি ইচ্ছে হয় তাহলে সে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে পারে….
বলেই ছেলেটি চলে গেলো…

ইচ্ছে: ওই কালোর গোডাউন আমায় কি পাগলে ধরছে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজবো হুমম…[ বিড়বিড় করে ]

দৌড়ে অফিসের ভিতরে চলে গেলো ইচ্ছে…!

কেবিনে গিয়ে বসতেই শান্ত এসে [ ম্যানেজার ] ইচ্ছে তুমি তো ভিজে গেছো…টিস্যু দিয়ে আপাতত মুছে নাও…

ইচ্ছে: ঠিক আছে ভাইয়া.. sorry sir….!

শান্ত: It’s ok.. তুমি যেটাতে কমফরটেবল ফিল করো সেটাই বলো…

ইচ্ছে: ঠিক আছে…

শান্ত: তোমাকে স্যার ডাকছে..দেখা করে আসো…
সোজা গিয়ে ডান দিকে….!

ইচ্ছে: Thanks ভাইয়া…

শান্ত: It is not fair… আমাকে না ভাইয়া ডাকো ভাইয়াকে কেউ thanks বলে…

ইচ্ছে মিষ্টি হেসে স্যারের কেবিনের দিকে হাটা দিলো…
.
.
[ ইচ্ছের ব্রেস্ট ফ্রেন্ড শালীনির লাভার শান্ত.. সেই সুবাদে শান্তকে ভাইয়া বলে ডাকে ইচ্ছে..আর শান্তর রেফারেন্সে ইচ্ছের চাকরিটা…]
.
.
ইচ্ছে: May i come in sir….!

স্যার : yeah come…!

ইচ্ছে: এটা তো সেই ছেলেটা..ইনিই তাহলে আদরিত রহমান আশিস মানে এ অফিসের বস…[ মনে মনে ]

আশিস: You are absolutely right miss white pori..opppss icche ..!!

ইচ্ছে: Sorry sir..

আশিস: But why ???

ইচ্ছে: আসলে স্যার তখন..[ তখন তো তেমন কিছুই বলিনি…মনে মনে ]

আশিস: It’s okk…!
আচ্ছা তোমার নাম কি?

ইচ্ছে: দেখ নাইজেরিয়ার ঢং..আমার নাম জানে না ইচ্ছে বলে ডাকলো তাহলে কোন উগান্ডার ভুতে…!

আশিস: পুরো নাম তো জানি না..? পুরো নাম জিঙ্গেস করছি….!

ইচ্ছে: এ নাইজেরিয়ায় নিশ্চিত উগান্ডার মনোবিজ্ঞানী ছিল আগের জন্মে….
অধরা জান্নাত ইচ্ছে…!!

আশিস: নামটা তোমার মতোই…

ইচ্ছে: প্রশংসা করলো নাকি অপ্রশংসা বুঝলাম না [ মাথা চুলকিয়ে ]

আশিস: দুটোই করেছি…
ইচ্ছে কথাটা বিড়বিড় করে বললেও একটু জোরেই বলে ফেলেছে…যার কারনে আশিস শুনে ফেলেছে…!

.
.
.
নিজের কেবিনে বসে একা একাই বকবক করছে ইচ্ছে…

চলবে……..!!

# তোমার_জন্য
Writer: জুঁই
পর্ব: ছয়
.
.
নিজের কেবিনে এসে বকবক করতে লাগলো ইচ্ছে…
.
.
বকবক না করে কাজে মন দাও…
কথাটি শুনে ইচ্ছে সাথে সাথে সামনে তাকিয়ে আশিস কে দেখে চোখ ছানাবড়া….
মনে মনে….
এই উগান্ডার মনোবিজ্ঞানীর জন্য একটু শান্তি ও নাই…

.
.
অফিস শেষে বাড়ি ফিরে ইচ্ছে…
মা খুব ক্ষিদে পেয়েছে খেতে দাও…!

ইচ্ছের মা ( আফিয়া বেগম ) অফিসে প্রথম দিন কেমন কাটলো ইচ্ছেকে খাবার দিতে দিতে….!

ইচ্ছে: হুম ভালো.. শান্ত ভাইয়া ছিলো বলে কোনো সমস্যা হয় নি…

ইচ্ছের মা: শান্ত না থাকলে তোর আবার চাকরি..কে দিতো চাকরি এখনো অনার্স ই কমপ্লিট করস নাই…
দেখ ইচ্ছে তোর চাকরিটা না করলেও চলতো..যদিও তুই চাকরিটা করবি বলে ঠিক করেছিস…পড়া লেখার যেনো কোনো ক্ষতি না হয় সে দিকে লক্ষ রাখবি…

ইচ্ছে: হ্যাঁ মা…এতো চিন্তা করো না তো…!

.
,
.
পরের দিন সকালে ইচ্ছে বেরিয়ে পরলো অফিসের উদ্দেশ্যে তার স্কুটি নিয়ে….
অফিসে আসার পর সবার নজর ইচ্ছের দিকে..!

আশিস অফিসে আসতেই খেয়াল করলো সবার নজর এক দিকেই স্থির হয়ে আছে..বিশেষ করে ছেলেদের..

সবার নজর অনুকরণ করে আশিস ও সে দিকেই তাকালো…তাকিয়েই ৪৭০ ভোল্টের শক খেলো…

হালকা আকাশি কালারের চুরিদার পরেছে ইচ্ছে…চোখে গাঢ় কাজল..হালকা লিপস্টিক…আর চুল গুলো বেনী করে সামনে আনা…ব্যাসস এতো টুকুই..সিমপল সাজের মধ্যে গর্জিয়াস লাগছে ইচ্ছে কে…সব থেকে আকর্ষণীয় ইচ্ছের বাম গালের কালো তিল টা..ফর্সা গালে কালো তিলটা সুন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে দ্বিগুণ…

ইচ্ছে নিজেকে দেখতে ব্যস্ত সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা..মানে জামা কাপড় উরনা ঠিক আছে কিনা…
না সব তো ঠিকি আছে..জায়গার জিনিস গুলো তো জায়গা মতোই আছে তাহলে….[ মনে মনে ]

.
.
আশিস: কি হচ্ছে কি এখানে…? একটু রেগেই বললো কথা টা.. তবে তার দৃষ্টি ইচ্ছের দিকেই স্থির রেখে….!!

ইচ্ছে: কি হলো স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললো কেনো কথা টা..[ মনে মনে ]

সবাই : Sorry sir….!!

আশিস: যে যার ডেস্কে যান…Right now…

সবাই: Ok sir…
.
.
সবাই চলে যাওয়ার পর আশিস…
মন দিয়ে কাজ করো কেমন..! বলেই নিজের কেবিনের দিকে হাটা দিলো আশিস…
.

ইচ্ছে: মন দিয়েই তো কাজ করবো…. কিন্তু এখানে আমার একদম একা একা লাগে…!!

কোনো ভাবে কি ম্যাডাম আমায় মিস করছিলেন….??

পিছনে ঘুরে শালীনি কে দেখে খুশি হয়ে গেল ইচ্ছে…

ইচ্ছে: কতো দিন হলো তোকে দেখি না…মিস ইউ..!!

শালীনি: আমিও তো…

ইচ্ছে: এক মিনিট এক মিনিট…তুই আমার জন্য এসেছিস নাকি তোর শানের জন্য হুমম?? [ শান্ত কে শর্ট করে শান ]

শালীনি: ইয়ে মানে..না মানে…তোদের দুজনের জন্যই ট্রাস্ট মি…

ইচ্ছে: আচ্ছা ঠিক আছে…

শালীনি আর ইচ্ছে কিছুক্ষণ কথা বলার পর..শালীনি শান কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো…

আর ইচ্ছে নিজের কাজে মন দিলো…
.
,

৩০ মিনিট পর…!

ইচ্ছে স্যার তোমাকে ডাকছে… [ সোহা ইচ্ছের কলিগ ]

ইচ্ছে: আমায় ডাকছে..?এখন?

সোহা: হুমম যাও গিয়ে দেখা করে আসো….
.
,
.
ইচ্ছে আশিসের কেবিনের দিকে যাচ্ছে আর বুকের ভিতর ধুকবুক করছে..

ইচ্ছে: ধুররর ভাল্লাগেনা..এমন কেনো লাগছে…আমি কি ভয় পাচ্ছি…??
ভয় কে জয় করে ইচ্ছে….
আসবো স্যার…?

আশিস: হুমম এসো….

ইচ্ছে: স্যার আমায় ডেকেছেন…? কি দরকার বলুন….!

আশিস: Excuse me..তোমায় কি দরকার ছাড়া ডাকতে পারিনা…?

ইচ্ছে: হুমম পারেন…[ মাথা নিচু করে ]

আশিস: You are looking so beautiful …!

ইচ্ছে কেবলই একটু ভাব নিবে তার আগেই আশিস
এই কথাটা কেউ তোমাকে বলেছে??

ইচ্ছে: মানে….?

আশিস: কেউ না বললেও আমি বলতে চাই… you looking beautiful…..!

ইচ্ছে: স্যার কাজ না থাকলে আমি কি যেতে পারি?

আশিস: এই মেয়ে এতো সুন্দর complement করলাম.. তার জন্য যে ধন্যবাদ দিতে হয় এই টুকুও জানো না…?

ইচ্ছে: কি ফকির রে বাবা চেয়ে চেয়ে ধন্যবাদ নিবে[ মনে মনে ]
অনেককক অনেককক ধন্যবাদদদ আপনাকে স্যার…!!
আর আমি জানি আমি দেখতে সুন্দর..[.একটু ভাব নিয়ে ]

আশিস: হইছে আর ভাব নিতে হবেনা…আর শুনো নেক্সট টাইম থেকে এতো সেজে গুজে আসবে না..অফিসে আসো কাজ করতে..কোনো সুন্দর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নয়… So be careful….!!

.
,,
.
ইচ্ছে কেবিনে বসে ভাবছে…
আচ্ছা আমি কি খুব বেশি সেজে এসেছি…? কই না তো..একটুই তো..!!
.
.
,,
.
.
এভাবেই কেটে গেল সাত দিন….

ইচ্ছে: স্যার ফাইল গুলো চেক করা শেষ…[ ফাইল গুলো আশিসের দিকে এগিয়ে দিয়ে ]

আশিস: ফাইল গুলো হাতে নিয়ে দেখতে থাকে আর ফাকে ফাকে ইচ্ছের দিকে তাকায়…
ইচ্ছের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ইচ্ছে বেশ বিরক্ত হচ্ছে….

ইচ্ছেকে আরেকটু বিরক্ত করার জন্য…!

আশিস: আমার জন্য কফি নিয়ে এসো…

ইচ্ছে: মানে?? [ অবাক হয়ে ]

অশিস : এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই…কফিই খেতে চেয়েছি অন্য কিছু না….
আর তুমি আমার Employer… boss এর জন্য কফি করে আনতেই পারো…..!

ইচ্ছে: হ্যাঁ পারি তো…[ দাতে দাত চেপে ]
.
.
বসের জন্য শুধু কফি কেনো…ধনে পাতার জুস…করলার জুস…চিরতার জুস…এসব ও করতে পারি…[ বকতে বকতে কেবিনে ঢুকার সময় দরজার সাথে লেগে মাথায় ব্যাথা পেলো ইচ্ছে…]

ইচ্ছে: আসতে পারি স্যার??

আশিস: হুমম আসেন…

কপালে হাত বুলাতে বুলাতে ভিতরে গেল ইচ্ছে…!

ইচ্ছে: এই নিন আপনার কফি….!

আশিস কফি হাতে নিয়ে তো Speechless হয়ে গেছে…
কারন black coffee…!

[ আশিস সব সময় Black coffee খায় না…যখন কাজের চাপ বেশি থাকে বা কোনো কিছু নিয়ে ডিস্টার্ব থাকে তখন ]

ইচ্ছে: আপনার favorite কফি স্যার…!

আশিস: তুমি জানলে কি করে..? [ অবাক হয়ে ]

ইচ্ছে: হুমম জানি জানি..( একটু ভাব নিয়ে )
আর তাছাড়াও আপনাকে দেখলেই বুঝা যায়….

আশিস: মানে…?? কি ভাবে…?

ইচ্ছে: মানে হচ্ছে…সেই প্রথম দিন থেকে দেখছি আপনার ড্রেসআপ থেকে গাড়ি পযর্ন্ত black …
তাহলে নিঃসন্দেহে আপনার black coffee favorite….

আশিস: You are absolutely wrong…কারন আমার black coffee favorite নয়….হুমম খাই..তবে যখন আমি ডিস্টার্ব থাকি তখন….
কিন্তু এই black coffee এখন আমার দরকার…

ইচ্ছে: স্যার আপনি কি কোনো কারনে ডিস্টার্ব ফিল করছেন….?

আশিস: জ্বী না ম্যাম…আপনি এখন আপনার ডেস্কে যান…
,
.
,

অফিস ছুটির পর ইচ্ছে হেটে হেটে বাসায় ফিরছে…
হঠাৎ একটা গাড়ি ব্রেক করলো ইচ্ছের সামনে…..!!
.
,
.
চলবে………!!