তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-১০

0
3

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_১০ ( ইনায়ার ফাঁসি?)

অরণ্যর কথার মানে ইনায়া বুঝতে পারে না এই মানুষটার মাথায় কখন যে কি চলে সেটা কেউ যানে না। আদালতে জর্জ এসে পড়ে অরণ্য চোখ দিয়ে ইশারা দেয় ইনায়া মনোযোগ দিতে। ইনায়া নিজের চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এরপর সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আদালতে জর্জ তার কাজ শুরু করে দেয় ওনি উঁকিলকে তার বক্তব্য আদালতের সকলের সামনে বলতে বলে। যেহেতু ইনায়া পক্ষে কোনো উঁকিল ঠিক করা হয় নাই তাই একজন উঁকিল বলবে। ইনায়া মনে ভয় করছে কারণ তার কোনো উঁকিল নাই আর উঁকিল ছাড়া তার পক্ষে কথা কে বলবে। আর সব প্রমাণ ইনায়ার বিরুদ্ধে ওর হার নিশ্চিত। ইনায়ার শরীর কাঁপতে থাকে মনের মধ্যে হাজারো ভয় বাসা বাধেঁ।

কিন্তু অরণ্য শান্ত হয়ে আছে তার মুখে হাসি স্পষ্ট ফুটে উঠে। অরণ্যকে দেখে মনে হচ্ছে সে কোনো আদালতে না বরং কোথাও বেড়াতে এসেছে। ইনায়া অরণ্যর এমন ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে যায় তাহলে কি অরণ্য চাই ইনায়ার শাস্তি হোক। খাবারে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলার যে মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে তার পিছনে অরণ্যর কোনো ভূমিকা আছে। অরণ্য ইনায়াকে শএু মনে করে তার জন্য কি অরণ্য ইনায়ার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।

ইনায়া অরণ্যর চেহারার দিকে তাকিয়ে কথা সব ভেবে যাচ্ছে হঠাৎ করে অরণ্যর চোখ যায় ইনায়ার দিকে। ইনায়াকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরণ্য হাসি মুখে বলে –

“- ইনায়া আমি জানি আমি অনেক সুর্দশন। আর আপনি আমার বিবাহিত বউ তাই বলে কি এইরকম করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন। নিজের বরকে এমন করে নজর দিতে হয় না ইনায়া পরে শরীর খারাপ করতে পারে “।

অরণ্যর এমন কথা শুনে ইনায়া নিজের চোখ অরণ্যর থেকে সরিয়ে ফেলে। ইনায়া যানে না এই ঘটনার পিছনে আসল অপরাধী কে? আর ইনায়া সাথে কে এমন করেছে? কিন্তু অরণ্য তার সাথে এমন করতে পারে তা ইনায়ার বিশ্বাস হয় না। অরণ্য তার শএু কিন্তু অরণ্য এতো খারাপ মানুষ ও না যে ইনায়ার সাথে এমন কিছু করবে। উঁকিল ইনায়ার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে যার জন্য ইনায়া উঁকিলের কথায় মনোযোগ দেয়।

উঁকিল টেবিল থেকে কিছু কাগজ নিজের হাতে তুলে নেয় এরপর উঠে দাঁড়িয়ে জর্জের সামনে আসে। উঁকিল বলে –

“- মাননীয় আদালত মিসেসে ইনায়া একজন খুনি। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোম্পানি এমডি হলেন মিসেস ইনায়া চৌধুরী। এসএস কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে বিক্রি করে। খাবারের মান উন্নত করার জন্য তারা খাবারে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত আর রাসায়নিক পর্দাথ মিক্সি করে।

উঁকিলের কথা শুনে ইনায়ার ভয় করছে।অরণ্য বুঝতে পারে ইনায়ার মনের অবস্থা ইনায়ার মনে ভরসা জাগাতে অরণ্য ওর হাত শক্ত করে ধরে। নিজের হাতে কোনো পুরুষের টার্চ পেয়ে ইনায়া চমকে যায় হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে অরণ্য ওর হাত ধরে আছে। অরণ্য শান্ত স্বরে বলে –

“- ইনায়া শান্ত হয়ে যান। জীবনের যে-কোনো পরিস্থিতিতে শান্ত হয়ে মনে সাহস নিয়ে সমাধান করা উচিত। আপনার দ্বারা যদি কোনো অন্যায় না হয় তাহলে তার শাস্তি আপনার কখনো হবে না “।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার মনে সাহস আসে সে শান্ত হয়ে উঁকিলের কথা শুনতে থাকে। উঁকিল নিজের কথা আবার শুরু করে দেয় –

“- এসএস কোম্পানি নিজের লোভের কারণে খাবারে এমন বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে। যার ফলে এই খাবার খেয়ে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এডমিট হয়েছে। আর এর মধ্যে প্রায় তিশ জন মানুষ মারা গেছে। যার জন্য দায়ী মিসেস ইনায়া চৌধুরী এবং তার কোম্পানির খাবার “।

উঁকিল নিজের হাতে রাখা কাগজ জর্জের কাছে দেয় এরপর ইনায়ার বিরুদ্ধে আরো অনেক কথা বলে। জর্জ কাগজের দিকে ভালো করে দেখে এরপর সে সামনে বসা অরণ্যর দিকে তাকায়। অরণ্য নিজের চোখ দিয়ে জর্জকে ইশারা দেয় সেই ইশারা অনুসরণ করে জর্জ মাথা নাড়ায়। অরণ্য আর জর্জের একে অপরের ইশারার বিষয়টা ইনায়া খেয়াল করে। ইনায়া বলে –

“- আপনি জর্জকে ইশারা দিয়ে কি বলছেন? সত্যি করে বলেন অরণ্য আপনার মনে কি চলছে?

“- শুনুন ইনায়া এতো বেশি অরণ্যর মনের কথা জানার আগ্রহ প্রকাশ করবেন না। দেখা যাবে এই অরণ্যর মনের ঠিকানা জেনে আপনি ও প্রেমে পড়ে যাবেন “।

“- এই ইনায়া আপনার প্রেমে পড়বে অসম্ভব। আর আপনার মনের ঠিকানা জানার কোনো আগ্রহ আমার নাই জঘন্য পুরুষ মানুষ একটা “।

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য শব্দ করে হাসে এরপর জর্জের দিকে তাকায়। জর্জ বলে –

“- মিসেস ইনায়া এসএস কোম্পানির মালিক যার স্পষ্ট প্রমাণ এই কাগজ। কিন্তু এই কাগজে মালিক হিসাবে ইনায়ার নাম থাকলে ও কোম্পানির কাগজে ওনার কোনো সাইন বা নাম নাই৷ আর ব্যাংক একাউন্ট ভালো করে দেখলে বোঝা যায় মিসেস ইনায়া একাউন্টে নতুন করে টাকা যায় নাই। আপনি এই বিষয়ে কি বলতে চান?

জর্জের কথা শুনে উঁকিল বুঝতে পারে না সে কি বলবে। অরণ্যর আদালতে বসে থাকতে বেশ মজা লাগছে উঁকিল বলে –

“- কিন্তু স্যার মিসেস ইনায়ার কোম্পানি ওইটা?

“- কিন্তু কাগজে ইনায়ার কোনো সাইন নাই। তাহলে এই খাবারে যে ইনায়া বিষ মিশিয়ে তার কোনো প্রমাণ নাই.

জর্জের কথা শুনে ইনায়ার মন একটু শান্ত হয় জর্জ আবার বলে –

“- মিসেস ইনায়া এসএস কোম্পানির মালিক কি না তা সঠিক যানা যায় নাই। তবে এসএস কোম্পানির খাবার খেয়ে অনেক মানুষ মারা গেছে যার জন্য ওনাকে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। ইনায়া চৌধুরীকে তিনমাসের সময় দেওয়া হলো যদি ওনি এই তিনমাসের মধ্যে নিজের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেন।তাহলে ওনার বিরুদ্ধে সকল শাস্তি মাফ করা হবে কিন্তু যদি ওনি না পারেন তাহলে ওনাকে জেলখানায় বন্ধি করা হবে। এবং ফাঁসির আর্দেশ ও দেওয়া হবে “।

জর্জের কথা শুনে ইনায়ার মনে শান্তি পায় কিন্তু ফাঁসির কথা শুনে আবার তার ভয় করে। ইনায়া যানে না এসএস কোম্পানির আসল মালিক কে আর তার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র কে করেছে তাহলে সে কি করে নিজেকো প্রমাণ করবে। যদি তিনমাসের মধ্যে আসল অপরাধী কে ধরতে না পারে তাহলে কি তার ফাঁসি হয়ে যাবে।

জর্জ নিজের সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে চেয়ার ছেড়ে চলে উঠে চলে যান। কিন্তু ইনায়া এখনো বসে আছে স্থির হয়ে অরণ্য পাশ থেকে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে চলে যায়। অরণ্য উঠে দাঁড়িয়ে জর্জের কেবিনের দিকে চলে যায় জর্জ সেখানে অপেক্ষা কর ছিলো তার জন্য। অরণ্য বলে –

“- জর্জ সাহেব দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনি? কিন্তু তিনমাস পর যদি ইনায়া সব প্রমাণ করতে না পারে তাহলে কি তার ফাঁসি হয়ে যাবে?

“- দেখেন মিস্টার অরণ্য আমি কাছে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। ইনায়া নিদোর্ষ সেটা আমি জানি কিন্তু সকল প্রমাণ এখন ওর বিরুদ্ধে। যদি ওকে কোনো শাস্তি না দেওয়ার কথা বলা হতো তাহলে সেটা নিয়ে সকলের মনে সন্দেহ জাগতো। সাংবাদিক সহ প্রায় সকলে ইনায়াকে ট্রল করতো।

“- হুম কথাটা ঠিক বলেছেন জর্জ সাহেব এখন দেখা যাক তিনমাস পর কি হয়। এসএস কোম্পানির আসল মালিক কে? তার পরিচয় অবশ্যই জানতে হবে আমাকে?

অরণ্য আর জর্জ অনেক সময় কথা বলে এরপর অরণ্য আবার ফিরে আসে ইনায়ার কাছে। অরণ্য ইনায়ার কাঁধে হাত রাখে আর বলে –

“- ইনায়া আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে হবে চলেন “।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া নিজের জগৎ থেকে বের হয়ে আসে এরপর উঠে দাঁড়িয়ে অরণ্যর দিকে তাকায়। অরণ্য তাকে চোখের ইশারা দিয়ে বাহিরে যেতে বলে ইনায়া ও তাই করে। আদালতের বাহিরে সাংবাদিকের ভিড় জমে গেছে সেখানে সকলে ইনায়াকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে। ইনায়ার ভালো লাগছে না এইসব বিনা দোষে তাকে অপরাধী হতে হয়েছে। অরণ্য ইনায়াকে গাড়িতে নিয়ে উঠিয়ে বসায় এরপর তারা আদালত থেকে বাড়িতে চলে আসে।

ইনায়া রুমে আসে কিন্তু তার মনে কোনো আনন্দ নাই শুধু ভয় আছে। অরণ্য হয়তো বুঝতে পারে ইনায়ার মনের অবস্থা অরণ্য বলে –

“- ইনায়া যান ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি “।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া ওয়াশরুমে চলে যায় এরপর অরণ্য নিচে এসে ইনায়ার জন্য খাবার নিয়ে যায়।ইনায়া ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায় তার শরীরে অনেক ক্ষত আছে। জেলে যাওয়া পর তাকে কোনো জামা দেওয়া হয় নাই সেইদিনের বউভাতের জামা সে পড়ে আছে। ভারী গয়না কারণে তার শরীরে অনেক জায়গায় লাল হয়ে গেছে।

#চলবে