তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-১১

0
4

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_১১

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইনায়া নিজের শরীরে ভালো করে দেখতে থাকে তার শরীর ক্ষত হয়ে গেছে। লাল দাগ হয়ে গেছে সম্পূর্ণ শরীরে। অরণ্য খাবার নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে রুমে এসে দেখে ইনায়া আয়নার সামনে আছে। অরণ্যর রুমে এসে নিজের উপস্থিত বুঝাতে নক করে দরজার মধ্যে। ইনায়া পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে অরণ্য এসেছে ইনায়া বলে –

“- রুমের ভিতরে আসেন অরণ্য “।

ইনায়ার সম্মতি পেয়ে অরণ্য রুমের ভিতরে চলে আসে এরপর নিজের হাতা রাখা খাবার টেবিলে রাখে। ইনায়া এসে বসে টেবিলের কাছে এরপর খাবার খাওয়া শুরু করে। প্রায় সারাদিন সে না খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছে যার জন্য তার প্রচুর খিদা লেগেছে। ইনায়ার খাওয়ার মাঝে অরণ্যর চোখ যায় ওর শরীরে ক্ষত হয়ে যাওয়া লাল দাগের দিকে। অরণ্য বলে

“- ইনায়া আপনার শরীরে এতো লাল দাগ কি করে হয়েছে?

ইনায়া খাবার খাওয়ার মধ্যে অরণ্যর কথা শুনে জবাব দেয়

“- আসলে আমাকে বউ ভাতের অনুষ্ঠান থেকে এরেস্ট করা হয়েছে যার জন্য বিয়ের গয়না শরীরে পড়া ছিলো। আর জেলখানায় আমি পোশাক পরিবর্তন করি নাই। অনেক ধরে ভারী গয়না আর শাড়ি পড়ে থাকার কারণে এমন লাল দাগ হয়ে গেছে “।

ইনায়ার কথা অরণ্য বুঝতে পারে সে গিয়ে মেডিসিনের বাক্স নিয়ে আসে। এরপর ইনায়ার সামনে টেবিলে রাখে আর ইনায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে –

“- ইনায়া খাবার খাওয়া শেষ করে আপনি ঔষধ লাগিয়ে নেন সারা শরীরে। এরপর ঘুমিয়ে যান সারাদিনে অনেক টার্য়াড হয়ে গেছেন নিশ্চয়ই আপনি “।

অরণ্যর কথায় ইনায়া বাধ্য মেয়ের মতো শুনে খাওয়া দাওয়া শেষ করে এরপর পাশে থাকা মেডিসিনের বাক্স থেকে ঔষধ লাগাতে থাকে শরীরে। ইনায়া সারা শরীরে ব্যাথা পেয়েছে যার জন্য তাকে ঔষধ লাগাতে হবে। কিন্তু অরণ্য পাশে বসে আছে এখন সে কি করে শাড়ির আঁচল সরিয়ে ঔষধ লাগাবে শরীরে। অরণ্য ইনায়া অবস্থা বুঝতে পারে যার জন্য সে বেড থেকে উঠে পড়ে আর বলে –

“- ইনায়া আমার জরুরি ফোন এসেছে আমাকে যার জন্য বাহিরে যেতে হবে। আপনি ঔষধ লাগিয়ে বেডে শুয়ে রেস্ট নেন “।

অরণ্য কথাটা বলে চলে যায় ইনায়া নিজের শরীরে ঔষধ লাগাতে থাকে তবে তার হাত পিঠ অবধি পৌঁছাতে পারে না। ইনায়া দ্বারা যতটুকু সম্ভব হয়েছে সে ঔষধ লাগিয়ে দেয়। জেলখানায় থাকতে ভালো করে ঘুম হয় নাই তার যান জন্য সে বিছানায় শুয়ে পড়ে। অরণ্য প্রায় দুই ঘণ্টা পর নিজের রুমে ফিরে আসে দরজা খুলে রুমে এসে দেখে ইনায়া ঘুমিয়ে পড়েছে। অরণ্য নিজে ও কালকে সারারাত ঘুমাতে পারে নাই তার জন্য সে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।

বিকাল প্রায় চারটা ইনায়া ফোনে রিং হচ্ছে কিন্তু ইনায়া ঘুমে মগ্ন থাকার কারণে সে শুনতে পায় না। প্রায় অনেক সময় ধরে ফোনে শব্দ করার কারণে ইনায়ার ঘুম ভেঙে যায়। ইনায়া ঘুম থেকে পিটপিট করে চোখে খুলে পাশে থাকা টেবিল থেকে নিজের ফোন হাতে নেয়। ফোনের স্কিনে অরুণা বেগমের নাম্বার দেখে ইনায়া ফোন রিসিভ করে। ইনায়া ঘুমন্ত কণ্ঠে বলে –

“- মামণি কি হয়েছে? এতো বার ফোন কেনো করেছ “।

– ইনায়া তোমাকে কি জেলখানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে? আজকে তোমার ভালো বাবা অসুস্থ হয়ে গেছে যার জন্য আমরা আদালতে যেতে পারি নাই “।

“- মামণি কেনো সমস্যা নাই আমি একদম ঠিক আছি। আর জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছে আমাকে তোমাদের টেনশন করতে হবে না। ভালো বাবার শরীরে যত্ন নিতে বলো “।

ইনায়া আর অরুণা বেগম প্রায় বিশ মিনিট সময় ব্যয় করে কথার মধ্যে। এরপর ইনায়া ফোন রেখে ওয়াশরুমে চলে যায় সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে ফিরে আসে। ইনায়া এতোখন সোফায় তাকিয়ে দেখে অরণ্য সেখানে শুয়ে আছে। ইনায়া এগিয়ে যায় ঘুমন্ত অরণ্যর কাছে সোফার কাছে গিয়ে সে ভালো করে দেখে অরণ্যেকে। ইনায়া বলে –

“- মিস্টার অরণ্য রাজ চৌধুরী আমার জীবনের সবচেয়ে অপছন্দের মানুষ। কিন্তু অরণ্য আপনার সাথে আমার শএুতা কখনো শেষ হবে না তবে আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন অরণ্য। মানুষ হিসাবে আপনি সত্যি একজন উত্তম ব্যক্তি “।

অরণ্যর ঘুমন্ত অবস্থায় কোনো নারীর কণ্ঠ শুনে চোখ খুলে তাকায়। অরণ্য ঘুম থেকে উঠে গেছে দেখে ইনায়া সেখান থেকে চলে যেতে চাই তার আগেই অরণ্য তাকে থামিয়ে দেয়। অরণ্য ইনায়ার হাত ধরে আবার সোফার কাছে নিয়ে আসে অরণ্যর বিশ্বাস হচ্ছে না ইনায়া তার কাছে এসেছে। অরণ্য ডেভিল হাসি দিয়ে বলে –

“- কি ব্যাপার মিসেস ইনায়া চৌধুরী ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের স্বামী সবর্নাশ করার জন্য কি তার কাছে এসেছেন। বাসর রাতে যদি আপনি সম্মতি দিতেন তাহলে এতো দিনে তিন চারটা বাচ্চা ও হয়ে যেতো আমাদের। আর আপনাকে এমন লুকিয়ে লুকিয়ে স্বামীর কাছে আসতে হতো না “।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার কান গরম হয়ে যায় এই লোকের মধ্যে কি লজ্জা সরম বলতে কিছু নাই। তাদের দুইজনের বিয়ে হয়েছে মাএ দুইদিন আগে এর মধ্যে চারটা বাচ্চা কোথা থেকে আসবে৷ ইনায়া রাগী স্বরে বলে –

“- অরণ্য আপনার সাথে কথা বলা আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল। জঘন্য পুরুষ মানুষ “.

“- ওহ রিয়েলি মিসেস ইনায়া চৌধুরী তাহলে এই জঘন্য পুরুষের কাছে আপনি কেনো এসেছেন? ঘুমের মধ্যে তার সবর্নাশ কোনো করতে চাই ছিলেন?

“- শুনুন আপনার সবর্নাশ করার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। আপনি ঘুমন্ত অবস্থায় শীতে কাঁপতে কাঁপতে কাঁথা জন্য চিৎকার করছিলেন। যার জন্য আমি আলমারি থেকে আপনার জন্য কাঁথা নিয়ে আসতে গিয়ে ছিলাম “।

ইনায়ার মুখে মিথ্যা কথা শুনে অরণ্য হাসে এরপর বাহিরে রোদের দিকে ইশারা দিয়ে বলে –

“- ইনায়া বাহিরে যা রোদ পড়ছে মানুষ গরমে এসি ছাড়া থাকতে পারছে না। আর আপনি বলছেন আমি শীতে কাপঁ ছিলাম কথাটা কি বিশ্বাস যোগ্য। সুন্দর করে সাজিয়ে মিথ্যা কথা ও আপনি বলতে পারেন না ইনায়া “।

ইনায়া বুঝতে পারে অরণ্য তার মিথ্যা কথা ধরে ফেলছে কিন্তু এখন সে সত্যি বলতে পারবে না। এই লোকের উপর ইনায়ার কোনো বিশ্বাস নাই ইনায়া কথা ঘুরিয়ে বলে –

“- আপনি একটা জঘন্য মানুষ আপনার সাথে কথা আমি বলতে চাই না। এখন ফ্রেশ হতে যান ওয়াশরুমে আমি নিচে গিয়ে দেখি রান্না হয়েছে কি না “।

ইনায়া কথাটা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায় অরণ্য মুখে একটা হাসি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ইনায়া রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে যায় এরপর সে সম্পূর্ণ বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখে। অরণ্য বাড়ি অনেক সুন্দর শহরের সবচেয়ে বড়ো বিজনেস ম্যানের বাড়ি বলে কথা। ইনায়া প্রতিটা রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে হঠাৎ করে একটা রুমের সামনে যায় সে। ইনায়া শুনতে পায় সেই রুম থেকে কোনো মহিলার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।

ইনায়া এই বাড়ির প্রতিটা মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছে কিন্তু এই মহিলা কে এই রুমে। ইনায়া কৌতূহল নিয়ে রুমের দরজায় নক করে দরজা খোলা থাকার কারণে ইনায়া রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। ইনায়া দেখে একজন মহিলা নামাজের তজবি হাতে নিয়ে বসে জিকির করছে। মহিলা পিছন দিক ঘুরো বসে থাকার কারণে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। জিকিরের মধ্যে হঠাৎ করে পিছন থেকে কোনো মানুষের পায়ের শব্দ শুনো পিছনে ফিরো তাকায় রেহানা বেগম।

রেহানা বেগম পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে তার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রেহানা বেগম সামনের দিকে ফিরে আসার কারণে তার চেহারা ইনায়া দেখতে পায়। ইনায়ার মনে ওনি সেই মহিলা যে তাকে বিয়ের সময় বউ হিসাবে তাকে বরণ করে নেয়। রেহানা বেগম গম্ভীর গলায় বলে –

“- তুমি ইনায়া তাই না? এই বাড়ির নতুন বউ? দ্যা গ্রেট বিজনেস ম্যান অরণ্য রাজ চৌধুরীর বউ?

রেহানা বেগমের কথা শুনে ইনায়া উত্তর দেয় –

“- জি আমি ইনায়া। অরণ্য বউ? কিন্তু আপনি কে?

“- আমি রেহানা পারভীন। সায়মার মা “।

রেহানা বেগমের মুখে সায়মার মা শুনে ইনায়া অবাক হয়ে যায়। তাহলে কি ওনি অরণ্যর মা মানে ওর শাশুড়ী। ইনায়া আর দেরি করে না সে আর আঁচল তুলে মাথায় দেয় এরপর রেহানা বেগমের কাছে এসে তার পায়ে সালাম করে। রেহানা বেগম তা দেখে খুশি হয় ওনি ইনায়াকে উঠিয়ে ওর মুখ দেখে। ইনায়া যথেষ্ট সুন্দরী আর ওর চোহারা মধ্যে অদ্ভুত এক মায়া আছে যা প্রতিটা মানুষকে তার প্রতি মুগ্ধ করে। রেহানা বেগম বলে –

“- মাশাআল্লাহ কি সুন্দর বউ হয়েছে চৌধুরী বাড়ির। দোয়া করি মা তুমি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে সংসার করবে। আর এই চৌধুরী বাড়ির মান সম্মান সব ভালো করে বজায় রাখবে “।

“- ধন্যবাদ মা “।

রেহানা বেগমের সাথে ইনায়া অনেক সময় কথা বলে ওনি বেশ ভালো আর মার্জিত রুচিসম্মত মানুষ। রেহানা বেগম বেড থেকে উঠে গিয়ে আলমারি থেকে দুই সেট গয়না আর হাতের চুরি নিয়ে আসে। রেহানা বেগম গয়নার সেট ইনায়ার হাতে দেয় আর চুরি পড়িয়ে দেয় ইনায়ার হাতে। ইনায়া বলে –

“- মা কি করছেন আপনি? আর এই গয়না আর চুরি আমাকে দিচ্ছেন কোনো?

“- এই গয়না এই বাড়ির ঐতিহ্য চৌধুরী বাড়িতে যারা বউ হয়ে আসে প্রতৈকে এই গয়না পড়ে। আর এই চুরি যত্ন করে রেখে দিয়ে ছিলাম আমার ছেলের বউয়ের জন্য। এতোদিন পর অরণ্য বিয়ে করে এই বাড়িতে বউ নিয়ে এসেছে তাই এই চুরি তোমাকে দিলাম “।

“- কিন্তু মা আমি এতো গয়না দিয়ে কি করব?

“- পড়বে ইনায়া। বাড়ির বউ সবসময় গয়না পড়ে সুন্দর করে সেজে থাকে। তোমাকে এই গয়না পড়লে অনেক সুন্দর লাগবে “।

রেহানা বেগমের কথা শুনে ইনায়া গয়নার বাক্স খুলে দেখে। সেখানে থাকা গয়না অনেক সুন্দর তার পছন্দ হয়েছে। রেহানা বেগম আর ইনায়া অল্প সময় কথা বলে এরপর ইনায়া আবার অন্য সব রুমে ঘুরতে থাকে। হঠাৎ করে ইনায়ার ফোনে একটা কল আসে ইনায়া রিসিভ করে। ইনায়া বলে –

“- আসিফ কি যানতে পারছ?

“- ম্যাম এসএস কোম্পানির ম্যানেজারকে আমি খুঁজে পেয়েছি সে আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আর ম্যাম আপনার নামে এই কোম্পানির দলিল আছে?

“- কিন্তু আমার নামে এতো বড়ো কোম্পানি কে লিখে দিবে?

“- ওনি আর কেউ না আপনার (কালকে জানতে পারবেন?

গল্প সুন্দর হবে কালকের থেকে নতুন রহস্য, নতুন প্রেমের কাহিনী, নতুন মোড়।

#চলবে