তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-১২

0
4

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_১২ ( নতুন রহস্য)

“- ম্যাম আপনার নামে এসএস কোম্পানি লিখে দিয়েছেন আপনার নানা। যিনি দশ বছর আগে মারা গেছেন “।

আসিফের মুখে নানার নাম শুনে ইনায়া চমকে যায় তার নানা দশ বছর আগে তার নামে সম্পত্তি লিখে দিয়েছে। ইনায়া কথাটা বিশ্বাস হয় না সে আবার আসিফকে জিজ্ঞেস করে। ইনায়া বলে –

“- আসিফ আমার মনে হয় তোমার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আমার নানা কি করে এসএস কোম্পানির মালিক হতে পারে? ছোটবেলা থেকে আমার নানার বিষয় আম্মু কোনো কথা বলে নাই আমাকে। মৃত্যুর আগে ও আম্মু নানা নানুর বিষয়ে আমাকে জানায় নাই। আমার মনে হয় এই সবকিছুর পিছনে অন্য কারো হাত আছে “।

“- ইনায়া ম্যাম আমি এসএস কোম্পানির সকল তথ্য চেক করে দেখেছি। এসএস কোম্পানির ম্যানেজারকে কিডন্যপ করে তার থেকে যানতে পারি এই কোম্পানির আসল মালিক আপনার নানা। ওনি মারা যাওয়ার আগে এই কোম্পানি আপনার নামে লিখে দিয়ে গেছে “।

“- আসিফ তুমি কি সিউর?

“- ইয়েস ম্যাম আমি সিউর। আপনি হলেন এসএস কোম্পানির বর্তমান মালিক। শুধু তাই না আপনার নানার সকল সম্পত্তির একমাত্র বংশধর আপনি।

“- তুমি ওই ম্যানেজারকে আমার গেস্ট হাউজে নিয়ে যাও আপনি আসছি। আমার মনে হয় ওই ম্যানেজার অনেক গোপন তথ্য যানে।

“- ওকে ম্যাম “।

ইনায়া ফোন রেখে দেয় তার আসিফের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না মানে এইটা কি করে সম্ভব। ইনায়া খুব ছোট থাকতে তার মা মারা যায় তাই তার মায়ের বাবার বাড়ির বিষয়ে সে কিছু যানতো না। আর এতো বছরে তার নানার বাড়ি থেকে কেউ কখনো তার সাথে দেখা করতে আসে নাই। তাহলে আজ হঠাৎ করে এসএস কোম্পানির মালিক যে কি করে হয়ে যেতে পারে। প্রতিটা ঘটনা ইনায়ার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তাহলে কি তার জীবনের অনেক ঘটনা তার এখনো অজানা।

অরণ্য নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ কর ছিলো প্রায় দুইদিন ধরে তার অফিসে যাওয়া হয় না। অফিসের সকল কাজ তাকে রুমে বসো কমপ্লিট করতে হবে না হলে বিজনেসে অনেক লস হয়ে যাবে। অরণ্যর কাজের মধ্যে দরজা দিয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে ইনায়া। অরণ্য আড়চোখে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে। ইনায়া মুখে চিন্তা আর হতাশার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠে। অরণ্য বলে –

“- কি হয়েছে আপনার ইনায়া। এতো মনোযোগ সহকারে কি ভেবে যাচ্ছেন আপনি? আবার কি নতুন বিপদে এসেছে আপনার জীবনে “।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া তার ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে। ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত হয়ে বলে –

“- অরণ্য আমার জীবনে ঘূর্ণিঝড়, সিডর, টনোর্ড যায় হয়ে যাক সেই বিষয়ে আপনার জানতে হবে না। নিজের কাজে মনোযোগ দেন আর আমাকে দয়া করে বিরক্ত করা বন্ধ করেন “।

“- ইনায়া আপনি কি আমার কোনো কথার সুন্দর করে জবাব দিতে পারেন না। আর আপনার জীবনের কি চলছে সেই বিষয়ে যানার আমার বিন্দু মাএ আগ্রহ নাই।

অরণ্য ইনায়ার সাথে আর কোনো কথা বলে নাই সে নিজের কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেয়।অন্যদিকে ইনায়া ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হতে থাকে। ইনায়ার গায়ে হাতে ভারী গয়না ছিলো যা রেহানা বেগম তাকে দিয়েছে। ইনায়া গয়না খুলতে চাই কিন্তু তার হাত দিয়ে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ইনায়া প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে গয়না খুলার ট্রাই করছে কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না।

অরণ্য নিজের কাজ শেষ করে ল্যপটপ রেখে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গলা থেকে গয়না খুলার চেষ্টা করছে। অরণ্য ল্যাপটপ রেখে এগিয়ে যায় ইনায়ার কাছে এরপর বলে –

“- ইনায়া আমি কি আপনাকে সাহায্য করব?

“- না দরকার নাই আমি একা করতে পারব। আপনি গয়না ভেঙে ফেলবেন “।

অরণ্য যানে ইনায়া কতো জেদি যদি কোনো কাজ না পারে তবুও কারো কাছ থেকে সাহায্য নিবে না। কিন্তু ইনায়ার প্রবলেম হচ্ছে দেখে অরণ্য নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না। সে এগিয়ে দিয়ে ইনায়ার কাছে এরপর ওর কাঁধে হাত রাখে সেখানে থাকা চুল সরিয়ে দেয়। অরণ্য খুব ধীরে ধীরে ইনায়ার শরীরে থাকা সকল গয়না খুলে ফেলে। অরণ্য ছোঁয়া পেয়ে ইনায়া নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে তার শরীরের মধ্যে শান্ত বাতাস বয়ে যায়। ইনায়ার শরীর থেকে সকল গয়না খুলে ফেলার পর অরণ্য বলে –

“- হুম হয়ে গেছে। আর শুনুন মিসেস ইনায়া এই অরণ্য কোনো জিনিস ভেঙে ফেলে না। বরং তা যত্ন করে আগলে রাখতে যানে।

“- ধন্যবাদ অরণ্য “।

অরণ্য সকল গয়না ইনায়ার হাতে দিয়ে যখন চলে যাবে তখন হঠাৎ করে তার চোখ যায় গয়নার দিকে। অরণ্য এতো সময় ভালো করে খেয়াল করে নাই গয়নার দিকে। অরণ্য ইনায়ার হাত থেকে গয়না কেঁড়ে নেয় এরপর বলে –

“- এই গয়না আপনাকে কে দিয়েছে ইনায়া? এই গয়না শুধু আম্মুর কাছে আছে? আমাদের পারিবারিক গয়না এইটা?

“- হুম আমি যানি। আপনার আম্মু আমাকে গয়না দিয়েছে “।

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে অরণ্য শান্ত গলায় বলে –

“- আমার মা আপনাকে সত্যি গয়না দিয়েছে ইনায়া। মানে ওনার সাথে আপনার কথা হয়েছে? আচ্ছা আমার বিষয়ে কি আম্মু কিছু বলেছে?

অরণ্যর মুখে এমন কথা শুনে ইনায়া অবাক হয়। এই প্রথম অরণ্যর কণ্ঠ শুনে ইনায়ার মনে হচ্ছে সে কান্না করে দিতে পারে। ইনায়া বলে –

“- হুম আপনার মা দিয়েছে। নতুন বউকে মুখ দেখে শাশুড়ী উপহার দিতে পারে এতো অবাক হওয়ার কি আছে। আর আপনার বিষয়ে আম্মু কি বলবে আমাকে। কোনো আপনার সাথে কি আম্মুর কথা হয় না “।

ইনায়ার মুখে অরণ্য কথাটা শুনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এরপর শান্ত গলায় বলে –

“- না কথা বলে না আমার আম্মু আমার সাথে। আসলে কি যানেন আমি মানুষটা খুব খারাপ যার জন্য কেউ আমাকে ভালোবাসতে চাই না। আচ্ছা বাই দ্যা ওয়ে আম্মু আপনাকে গয়না যেহেতু দিয়েছে তার মানে ওনার আপনাকে পছন্দ হয়েছে।

অরণ্য কথাটা বলে মাথা নিচুঁ করে চলে যায় ইনায়া শুধু অরণ্যর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাহলে কি অরণ্যর সাথে তার মা কথা বলে না কিন্তু কেনো? ইনায়ার জীবনে এখন কি হচ্ছে তা সে বুঝতে পারছে না। তবে ইনায়া তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গাড়ি করে বেরিয়ে যায়। ইনায়া গাড়ি ড্রাইভ করতে পারে যার জন্য তার কোনো সমস্যা হয় না।

প্রায় বিশ মিনিট পর ইনায়ার গাড়ি এসে পৌঁছায় তার গোপন গো ডাউনে। ইনায়া গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় এরপর সে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। আসিফ এতোখন অপেক্ষা করছিলো ইনায়ার জন্য তার পাশের চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে এসএস কোম্পানির ম্যানেজারকে। ইনায়া রুমের ভিতরে আসে আর বলে –

“- আসিফ আমি এসে পড়েছি “।

ইনায়া রুমের ভিতরে আসে এখানে অনেক অন্ধকার তার সাথে অনেক লোক আছে যাদের হাতে বন্ধুক আছে। ইনায়ার লোক সবাই ইনায়াকে সালাম দেয়৷ আসিফ বলে –

“- ম্যাম আপনার কথা অনুসারে ম্যানেজরকে কিডন্যাপ করেছি।

ইনায়া এগিয়ে যায় ম্যানেজারের কাছে তার মাথা থেকে কালো মুখোশ খুলে ফেলে। ম্যানেজার বলে –

‘- বিশ্বাস করেন ম্যাম আমি কিছু জানি না। এইসব কে করছে আমি সত্যি জানি না। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দেন।

ম্যানেজারের কথা শুনে ইনায়া হাসে আর বলে –

“- আরে ম্যানেজার সাহেব আপনাকে খুন করার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। শুধু আমি আপনাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করব তার যদি সত্যি সত্যি উত্তর দেন আপনি। তাহলে ছেড়ে দিবো আপনাকে “।

“- কি জানতে চান আপনি “।

ইনায়া চেয়ারে বসে যায় এরপর আসিফকে ইশারা দেয় সে একটা বন্ধুক নিয়ে আসে। ইনায়া সেটা নিজের হাতে রেখে ম্যানেজারে মাথার মধ্যে তাক করে বলে –

“- এসএস কোম্পানি যদি আমার নানার হয়ে থাকে তাহলে ওনি মারা যাওয়ার পর এই কোম্পানি কার হাতে ছিলো। আন খাবারে বিষ মিশিয়ে মানুষকে হত্যা কে করেছে?

“- ম্যাম আমি জানি না এই বিষয়ে।

“- দেখুন ম্যানেজার সাহেব আমার রাগ উঠাবেন না একদম। সত্যি করে বলুন এই সবকিছুর পিছনে আসল অপরাধী কে? এতো বছর আমার নাম করে এই কোম্পানির দায়িত্ব কার হাতে ছিলো?

“- আমি বেশি কিছু যানি না শুধু যানি এসএস কোম্পানির যদি কোনো বড়ো ডিল বা সমস্যা হতো। তাহলে শাফায়াত সাহেব এসে সবার সাথে সবার সাথে কথা বলতো। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওনি আর আসেন না কিন্তু ওনি সকলকে ভিডিও কলে শেয়ার হলর্ডারের সাথে কথা বলতো “।

ইনায়া ম্যানেজারের মুখে শাফয়াত নাম শুনে অবাক হয়ে যায় এই শাফায়াত আবার কে? কিন্তু এই নামটা তার পরিচিত মনে হচ্ছে? ইনায়া বলে –

“- এই শাফায়তকে দেখতে কেমন? তুমি কি এর চেহারা কখনো দেখেছ?

“- জি ম্যাম পাঁচ বছর আগর দেখেছিন।কিন্তু এর থেকে ওনার চেহারা আর দেখি নাই কারণ ওনি সবসময় ভিডিও কলে নিজের চোহারা লুকিয়ে কথা বলতেন। শুধু ভয়েস শুনা যেতো আর কোম্পানির সকল টাকা ওনার ব্যাংক একাউন্টে যেতো “।

#চলবে