তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-১৪+১৫

0
4

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_১৪ (শাফায়াতের মৃত্যু)

রাত প্রায় নয়টা ইনায়া নিজের রুমে বসে আছে তার হাতে এসএস কোম্পানির কাগজ। দুপুরে আসিফ তাকে যে এসএস কোম্পানির ইনফরমেশন দিয়েছে তার কাগজ বেশ মনোযোগ সহকারে দেখে যাচ্ছে ইনায়া। শাফায়াত নামটা যখন থেকে শুনেছে ইনায়া তখন থেকে তার মনে হচ্ছে যে এই নামটা তার বড্ড বেশি পরিচিত। কিন্তু ইনায়া সৃতিচারণ করতে পারছে না এই মানুষটা আসলে কে?

ইনায়ার হঠাৎ করে কি যেনো মনে হয় সে হাতে থাকা কাগজ রেখে পাশে থাকা টেবিল থেকে ফোন হাতে নেয়। ফোনের কল লিষ্টে গিয়ে অরুণা বেগমের নাম্বারে কল দেয় সে। অরুণা বেগম ফোন রিসিভ করে ইনায়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে –

“- মামণি তোমার কি শাফায়াত নামে কোনো পরিচিত লোক আছে? আচ্ছা আমার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কি শাফায়াত নামের কোনো লোক আছে?

ইনায়ার কণ্ঠে হঠাৎ করে শাফায়াতের নাম শুনে চমকে যায় অরুণা বেগম। আজ প্রায় পনেরো বছর পর শাফায়াতের নাম আবার শুনেছে অরুণা বেগম। অরুণা বেগম বলে –

“- ইনায়া তুমি হঠাৎ করে শাফায়াতের বিষয়ে কেনো জিজ্ঞেস করছো? আর শাফায়াত প্রায় অনেক বছর আগে মারা গেছে এখন তো তোমাকে বিরক্ত করার কথা না শাফায়াতের “।

শাফায়াত মারা গেছে কথাটা শুনে ইনায়া সম্পূর্ণ শকড হয়ে যায়। কিন্তু ইনায়া বুঝতে পারে অরুণা বেগমের সাথে শাফায়াতের পরিচয় ছিলো তার মানে ইনায়ার সন্দেহ সঠিক। ইনায়া বলে –

“- মামণি এই শাফায়াত আসলে কে? কি সম্পর্ক ওনার সাথে আমার? আর শাফায়াত কি করে মারা গেছে?

“- ইনায়া তুমি যানো না শাফায়াত তোমার মামা হয়। তোমার মায়ের মৃত্যুর পর তোমার মায়ের সম্পত্তির জন্য ও তোমাকে নিজের কাছে জোর করে রাখতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু আমি তাকে বারণ করে দেয়। এরপর কয়েক বছর পর জানতে পারি শাফায়াত একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে “।

অরুণা বেগমের কথা ইনায়ার মাথার উপর দিয়ে চলে যায় শাফায়াত যদি মারা যায়। তাহলে এতোদিন এসএস কোম্পানির এমডি হিসাবে দায়িত্ব কি করে পালন করে গেছে। আর শাফায়াত তার মামা ছিলো মানে ইনায়ার নামে যে এসএসে কোম্পানি তার নানা লিখে দিয়ে গেছে শাফায়াত সেটা যানতো। যার জন্য ইনায়ার মায়ের মৃত্যুর পর তাকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে ছিলো।

ইনায়া তার ভাবনার জগৎ হারিয়ে যায় অন্যদিকে অরুণা বেগম ফোনের অপর পাশ থেকে ইনায়ার কোনো জবাব না পেয়ে। অরুণা বেগম বলে –

“- ইনায়া কি হয়েছে তোমার? কথা বলছো না কোনো ইনায়া?

অরুণা বেগমের কণ্ঠ শুনে ইনায়ার হুঁশ ফিরে আসে সে বলে

“- না কিছু হয় নাই মামণি। শাফায়াত যে আমার মামা হয় সেটা আমার জানা ছিলো না। আচ্ছা এখন ফোন রাখি আমার জরুরি কাজ আছে “।

ইনায়া ফোন রেখে দেয় সে এখন গভীর চিন্তায় মগ্ন। যদি শাফায়াত অনেক বছর আগে মারা যায় তাহলে ম্যানেজারের কথা অনুসারে এতোদিন কোম্পানির সকল মিটিং কে করেছে। আর এসএস কোম্পানির সকল টাকা কার ব্যংক একাউন্টে বা জমা হয়েছে। ইনায়ার মাথার যেনো এখন হাজার রহস্য ঘুরঘুর করছে কিন্তু কোনো সমাধান নাই এই রহস্যর। ইনায়ার ভাবনার মাঝে রুমে প্রবেশ করে অরণ্য।

অরণ্যর উপস্থিত ইনায়া বুঝতে পারে সে না নিজের ভাবনার জগৎ হারিয়ে গেছে। অরণ্য রুমে এসে দেখে ইনায়া খুব মনোযোগ দিয়ে কি যেনো ভেবে যাচ্ছে। অরণ্য বলে –

“- কি হয়েছে আপনার ইনায়া? এমন মনোযোগ সহকারে কোন ভাবনার জগতে হারিয়ে গেলেন আপনি?

ইনায়ার ভাবনার মাঝে অরণ্যর কণ্ঠ শুনে তার হুঁশ ফিরে আসে পিছনে ফিরে অরণ্যকে দেখে ইনায়া এসএস কোম্পানির কাগজ লুকিয়ে ফেলে। ইনায়ার এমন কাণ্ডে অরণ্য ভ্রু কুচঁকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অরণ্য বলে –

“- কি এমন করে লুকিয়ে রাখলেন আপনি? উঁকিল দিয়ে কি ডিভোর্স পেপার রেডি করেছেন আপনি? দেখেন ইনায়া আমি কিন্তু আপনাকে ডিভোর্স দিবো না। বউ ছাড়া থাকা আমার দ্বারা সম্ভব না “।

অরণ্যর এমন কথা শুনে ইনায়া রহস্যর কথা ভুলে যায় এই লোকটা সবসময় যেকোনো সিরিয়াস পরিস্থিতি ফান করে। ইনায়া রাগী লুকে অরণ্যর দিকে তাকিয়ে বলে –

“- অরণ্য আপনাকে ডিভোর্স দিতে চাই না বরং খুন করতে চাই আমি। এখন আমাকে বিরক্ত না করে চলে যান এখান থেকে।

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য হাসে এরপর নিজের পকেট থেকেএকটা ট্রেনের টিকিট বের করে। অরণ্য টিকেট ইনায়ার হাতে ধরিয়ে দেয় আর বলে –

“- কালকে সকাল সকাল রেডি হয়ে থাকবেন। ট্রেন কিন্তু খুব ভোরে ছেড়ে দেয় আর রূপনগরে যেতে হলে একমাএ ট্রেন দিয়ে যাওয়া লাগবে। সো ব্যাগ পএ গুছিয়ে রাখেন এখন থেকে “।

অরণ্যর কোনো কথা ইনায়া বুঝতে পারে না সে তার হাতে থাকা কাগজ খুলে দেখে সেখানে ট্রেনের টিকিট রয়েছে। আর অরণ্য এই ট্রেন দিয়ে রূপনগর যাওয়ার কথা কেনো বলছে এই রূপনগর কোথায়? ইনায়া বলে –

“- আপনি আমাকে ট্রেনের টিকেট কেনো দিলেন? আর সকাল সকাল রেডি হয়ে কোথায়া যাবো আমরা? আর রূপনগর আর বাড়ি?

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য বলে –

“- ইনায়ার আপনার নানার বাড়ি রুপনগর। কালকে সকালে সেখানে যাবো আমরা ট্রেনে করে। যার জন্য টিকেট কিনে নিয়ে এসেছি “।

“- আমার নানার বাড়ি রূপনগর সেটা আপনি কি করে যানলেন? আর আমার নানার বাড়িতে আপনি কেনো যাবেন?

“- শাফায়াতের বিষয়ে ইনফরমেশন যানতে হলে রূপনগর যাওয়া দরকার আমাদের। আর এসএস কোম্পানির আসল মালিক মানে আপনার নানার মৃত্যু বা অন্য সব ঘটনার বিষয়ে জানতে হলে রূপনগর যেতে হবে। তিনমাস পর আদালতের রাই দিবে তখন যদি নিজেকে নিদোষ প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে কিন্তু ফাঁসি হয়ে যাবে আপনার “।

চৌধুরী বাড়িতে সকলে ডিনার করার জন্য টেবিলে উপস্থিত হয় অরুণা বেগম রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে সাজিয়ে রাখে। মিলন সাহেব খাবার খাওয়া শুরু করে দেয় ইভান সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে এরপর টেবিলে বসে যায়। ইভান খাবার খাওয়া শুরু করে দেয় মিলন সাহেব বলে –

“- ইভান বিদেশ থেকে ফিরে তোমার পরিকল্পনা কি? ইনায়ার বিয়ে হয়ে গেছে তোমার জীবন থেকে সকল সমস্যা দূর হয়ে গেছে। এখন তোমার এই দেশে বা এই বাড়িতে থাকতে কোনো সমস্যা নাই নিশ্চয়ই “।

মিলন সাহেবের কথা শুনে ইভান খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ইনায়ার বিয়ের কথা মনে পড়ে যায় ইভানের যা সে এতোদিন ভুলার চেষ্টা কর ছিলো। ইনায়াকে সেইদিন অরণ্যর সাথে দেখার পর থেকে তার ভিতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে। ইনায়ার সৃতি তার সপ্ন জুড়ে বিচরণ করছে শতো চেষ্টা করার পর ইনায়াকে ভুলে যাওয়া ইভানের দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। ইভান শান্ত গলায় বলে –

“- হুম আব্বু ইনায়া এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে এখন এই দেশে বা এই বাড়িতে থাকতে আমার কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু হঠাৎ করে এই কথা জিজ্ঞেস করার কারণ কি জানতে পারি?

মিলন সাহেব একবার অরুণা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখে অরুণা বেগম চোখ দিয়ে তাকে ইশারা করে। মিলন সাহেব গম্ভীর গলায় বলে –

“- চৌধুরী বাড়ির সকল ব্যবসার দায়িত্ব এতোদিন ইনায়ার ছিলো কিন্তু এখন ইনায়ার নিজের বিজনেস আছে। অতঃপর আমার ছেলে হিসাবে এই কোম্পানির সকল দায়িত্ব তোমার হবে। তুমি কি কোম্পানির এমডি হিসাবে কোম্পানি জয়েন করতে চাও?

মিলন সাহেবের মুখে কোম্পানি জয়েন করার কথা শুনে ইভান অবাক হয়। তার বাবা ইনায়াকে কোম্পানির সকল দায়িত্ব না দিয়ে তাকে এমডি হিসাবে জয়েন হতে বলছে। ইভানের কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না ইভান অরুণা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখে। অরুণা বেগম নরমাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর নাতাশা যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে তার খাবার খেয়ে যাচ্ছে। ইভান সকলের মনোভাব ভালো করে বুঝে বলে –

“- আব্বু কোম্পানির মালিক যেহেতু তুমি তাই তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে। আর ইনায়া যদি এই কোম্পানির দায়িত্ব পালন করে তাহলে আমার কোনো সমস্যা নাই। ও না হয় আমার কোম্পানির একজন কর্মচারী হিসাবে কাজ করে যাবে যার জন্য মাস শেষে ভালো সাল্যারি দেওয়া হবে ওকে।

ইভানের কথা শুনে অরুণা বেগম কথা না চুপ করে থাকতে পারল না। ইভানের অহংকার কোনো দিন শেষ হবে না যা অরুণা বেগম খুব ভালো করে যানে। অরুণা বেগম বলে –

“- ইভান তুমি কি বললে ইনায়া তোমার কোম্পানিতে একজন কর্মচারী হয়ে কাজ করবে। তুমি হয়তো ভুলে গেছে ইনায়া কে? ও অরণ্য রাজ চৌধুরীর বউ যে এই শহরের সবচেয়ে বড়ো ব্যবসায়ী। আর ইনায়া বর্তমানে এসএস কোম্পানির মালিক তাই তোমার কোম্পানির চাকরির দরকার ইনায়ার নাই “।

অরুণা বেগম বেশ গর্বের সহকারে ইভানের সামনে ইনায়ার প্রশংসা করে। ইভানের রাগ হয় তার মায়ের কথা শুনে সে রাগী চোখে অরুণা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে –

“- আম্মু তোমার মুখে কি ইনায়ার সুনাম ছাড়া কোনো কথা আসে না। আর ও অরণ্যর বউ হয়ে গেছে বলে কি ওকে এখন মাথায় নিয়ে নাচতে হবে আমার। অরণ্য আমাদের শএু ওর সাথে তুমি ইনায়ার বিয়ে দিয়ে তুমি ভুল করেছো?

“- অরণ্য আমাদের শএু না ও এই বাড়ির ছেলে। এই চৌধুরী বাড়ির উপর তোমার যতটুকু অধিকার আছে অরণ্যর ও ঠিক সমান অধিকার আছে। আর অরণ্য যথেষ্ট ভালো আর ভদ্র ছেলে ওর সাথে ইনায়া সুখে থাকবে।

“- আম্মু তোমার কাছে নিজের ছেলেকে না অন্য সবাইকে ভালো লাগে। মাঝে মধ্যে মনে হয় তুমি আমার না বরং শএু.

আমি অনো অসুস্থ বিছানা থেকো উঠতে পারছি না। যার জন্য গল্প এলেমেলো হয়ে গেছে। তবে কালকে থেকে সুন্দর হবে।

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_১৫ ( রোমান্টিক পর্ব)

ইনায়া অবাক চোখে অরণ্যর দিকে তাকিয়ে থাকে শাফায়াতের কথা অরণ্য কি করে যানে। ইনায়া এই বিষয়ে অরণ্যর সাথে কোনো কথা বলে নাই বা আলোচনা করে নাই। তাহলে কি অরণ্য ইনায়ার উপর গুপ্তচর লাগিয়ে নজর রাখছে আর ইনায়ার নানার ঠিকানা অরণ্য কোথা থেকে জানলো। এই সব ঘটনার পিছনে কোথাও অরণ্য আসল অপরাধী না তো। ইনায়া মনে সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে –

“- অরণ্য আপনি কি করে শাফায়াতের বিষয়ে যানতে পারলেন? আপনি কি আমার উপর লুকিয়ে নজর রাখছেন? আমি আপনার শএু তাই এইসব ঘটনার পিছনে আপনার কোনো ষড়যন্ত্র নাই তো “।

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য ওর দিকে থেকে দূরে সরে যায় এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে দেখতে থাকে। অন্যদিকে ইনায়া অরণ্যর উত্তরের অপেক্ষা করছে কিন্তু সেই বিষয়ে অরণ্যর কোনো ধ্যান নাই। ইনায়া এইবার ভ্রু কুঁচকে অরণ্যকে জিজ্ঞেস করে –

“- অরণ্য আপনি আমার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো? আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা কি দেখ যাচ্ছেন?

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য পিছনে ফিরে তাকিয়ে বলে –

“- অবশ্যই আমার এই সুদর্শন চেহারা দেখছি সত্যি আমি এতো সুন্দর কোনো? কোথাও আমার উপর সুন্দরী মেয়দের নজর না লেগে যায় “।

অরণ্যর কথায় ইনায়া যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছে সে কি জিজ্ঞেস করছে আর অরণ্য কি উত্তর দিচ্ছে। ইনায়া এগিয়ে গিয়ে আয়ানার সামনে থেকে অরণ্যর হাত ধরে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। অরণ্য শান্ত হয়ে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু ইনায়া রাগী কণ্ঠে বলে –

“- অরণ্য আমার কথার উত্তর দেন আপনি কি সত্যি আমার বিরুদ্ধে এইসব ষড়যন্ত্র করেছেন? আর শাফায়াত মামার বিষয়ে আপনি কি যানেন? নানু বাড়ির ঠিকানা কে দিয়েছে আপনাকে?

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য ওর দিকে এগিয়ে যায় এরপর ইনায়ার কাছে গিয়ে শান্ত গলায় বলে –

“- ইনায়া আপনার সাথে আমার কোনো শএুতা নাই তাই আপনাকে শাস্তি ও আমি দিতে চাই না। আর শাফায়াতের বিষয়ে সব তথ্য আমার কাছে আগে থেকেই আছে। কারণ আপনার বিষয়ে সকল ইনফরমেশন বিয়ের আগে আমি জেনে নিয়েছি। রূপনগর আপনার নানা বাড়ি সেখানে গেলে অনেক তথ্যর বিষয়ে যানতে পারবেন।

“- অরণ্য রুপনগর গেলে কি তথ্য পাওয়া যাবে? শাফায়াত মামা গেছে এক্সিডেন্ট আর পাঁচ বছর আগে বাধ্যর্ক কারণে নানা ও মারা গেছে। এখন সেখানে গেছে কার কাছ থেকে কি তথ্য পাওয়া যাবে?

“- ইনায়া আপনার মামার মৃত্যু স্বাভাবিক না কারণ ওনার মৃত্যুর পর ও কেউ অফিসের এমডির দায়িত্ব পালন করেছে। হয় আপনার মামার মৃত্যুর ঘটনা সাজানো না হয় আপনার আড়ালে অন্য কোনো শএু আছে যে এখনো আগন্তুক “।

অরণ্যর কথায় সম্মতি জানায় ইনায়া অরণ্যর বলা প্রতিটা কথায় যুক্তি আছে। সত্যি তার মামার মৃত্যুর বিষয়ে সঠিক তথ্য তাকে জানতে হবে। শাফায়াতের মৃত্যুর পর নিশ্চয়ই তার কবর দেওয়া হয়েছে রূপনগরে সেখানে গেলে আসল সত্যি জানা যাবে। আর গ্রামের মানুষ তার নানা আর মামার বিষয়ে তাকে নতুন তথ্য দিতে পারে। আর সব থেকে জরুরি বিষয় ইনায়া কখনো তার নানার বাড়ি যায় নাই তাই সেখানে বেরিয়ে আসা ও হবে।

ইনায়া কথাটা ভাবে এরপর সে বিছানায় বসে এসএসে কোম্পানির কাগজ আরো ভালো করে দেখতে থাকে। রাত প্রায় বারোটা অরণ্য সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু ইনাযার চোখে ঘুম নাই। সারাদিন এই শাফায়াত নাম নিয়ে এতো চিন্তা করেছে যে তার এখন ম্যাথা ব্যাথা করছে। যদি এখন এক কাপ কফি না খায় তাহলে সে শান্তি পাবে না। ইনায়া বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় এরপর ধীরে ধীরে দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

ইনায়া সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাওয়ার সময় অনুভব করে তার পিছনে একজন মানুষের ছায়া আসছে৷ ইনায়া ভয় পেয়ে শুকনো ঢুক গিলে সে অতি সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায়। ইনায়া দেখে সেই মানুষ সিঁড়ি দিয়ে তার সাথে নিাে নেমে আসছে। ইনায়া একটু দাঁড়িয়ে নিজেকে শান্ত করে এরপর পিছনে ফিরতে গেলে সে কারো বুকের সাথে ধাক্কা খায়। ইনায়া চোখ খুলে দেখে তার সামনে অরণ্য দাঁড়িয়ে আছে। অরণ্য –

“- ইনায়া কি করছেন আপনি এতো রাতে এখানে?

“- অরণ্য আপনি? তাহলে কি এতোখন আপনি আমার পিছনে আস ছিলেন?

“- হুম আমি। আসলে আমার ঘুম আসছিলো না তাই চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। তখন আপনাকে রুমের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখলাম। যার জন্য আপনার পিছনে এসেছি.

“- ওহ আমি আরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম “।

ইনায়া কথাটা বলে সামনের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু তার ভয় করছে একা যেতে। ইনায়া আবার ফিরে আসে অরণ্যর কাছে ওর হাত ধরে বলে –

“- অরণ্য চলুন না কফি খেয়ে। আমার অনেক মাথা ব্যাথা করছে প্লিজ চলুন “।

ইনায়ার কথা অরণ্যর কান অবধি পৌঁছায় নাই কারণ অরণ্য এখন তার হাতে থাকা ইনায়ার হাতকে দেখে যাচ্ছে। ইনায়া খুব শক্ত করে অরণ্যর হাত ধরে আছে যেনো অরণ্যর হাত ছেড়ে দিলে সে পালিয়ে যাবে। ইনায়ার চেহারার কি অদ্ভুত মায়া আছে যা সবসময় অরণ্যকে মুগ্ধ করে। ইনায়ার প্রতি নেশা কাজ করে অরণ্যর। অরণ্যর ভাবনার মাঝে ইনায়া তার হাত শক্ত করে ধরে রান্না ঘরে নিয়ে যায়।

ইনায়া রান্না ঘরের চুলায় চায়ের কাপ বসিয়ে দেয় অরণ্য ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ ইনায়া মাথার চুল সুন্দর করে বেঁধে নেয় এরপর কফি তৈরি করতে থাকে। ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আপনি কফি খাবেন? আমি কি আপনার জন্য এক কাপ কফি তৈরি করব “।

“- ইনায়া আপনি দিলে আমি বিষ ও খেতে নিতে পারি “।

“- যদি কি সত্যি সত্যি কফির মধ্যে বিষ মিশিয়ে দেয়?

“- হুম আমি ও সত্যি সত্যি আমার হাতে বিষ খেয়ে নিবো “।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া মুখে লজ্জা মিশ্রিত হাসি ফুটে উঠে এরপর সে কফি তৈরির দিকে আবার মনোযোগ দেয়।প্রায় দশ মিনিট পর কফি তৈরি হয় ইনায়া কফির কাপ অরণ্যর হাতে দেয়। এরপর নিজের এক হাতে কফি নিয়ে খেতে থাকে। ইনায়া বলে –

“- অরণ্য কফি কেমন হয়েছে?

“- হুম অনেক ভালো “।

“- দেখতে হবে না কে তৈরি করেছে?

“- আমার বউ তৈরি করছে “।

অরণ্য আর ইনায়ার খুনসুটির মধ্যে তারা কফি খাওয়া শেষ করে এরপর রুমে ফিরে আসে সেখানে এসে ইনায়া বেডে শুয়ে পড়ে। অরণ্য গিয়ে তার সোফায় শুয়ে পড়ে অরণ্য আর ইনায়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে তাদের এক জোড়া চোখের মিলন হয়। ইনায়া চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে অরণ্য অল্প সময় ইনায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সত্যি কি নিষ্পাপ মুখ যেনো অজস্র মায়া তৈরি কোনো হূর পরী।

সকাল হয়ে যায় অরণ্য আর ইনায়া ঘুম থেকে উঠে পড়ে ইনায়া কার্ভার থেকে কাপড় নিয়ে নিজের ব্যাগে গুছিয়ে রাখতে থাকে। অরণ্য গোসল করতে ওয়াশরুমে যায় এর প্রায় দশ মিনিট পর অরণ্য দেখে সে কাপড় নিয়ে আসতে ভুলে গেছে। অরণ্য বাহিরে থাকা ইনায়াকে ডাক দেয় –

“- ইনায়া আমার কার্ভার থেকে কাপড় এনে দেন একটু? আমি জামা কাপড় নিয়ে আসতে ভুলে গেছি “।

অরণ্যর ডাক শুনে ইনায়া কাপড়ি নিয়ে আসে এরপর অরণ্যর ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে তাকে ডাক দেয়। অরণ্য হাত বাড়িতে দেয় ইনায়া তার হাতে কাপড় দেয় কিন্তু অরণ্য ভুল করে ইনায়ার হাত ধরে ওকে সহ ওয়াশরুমের ভিতরে নিয়ে আসে। ইনায়া অবাক হয়ে বলে –

“- অরণ্য কি করছেন আপনি?

অরণ্য যখন বুঝতে পারে সে ভুল করে ইনায়ার হাত ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে এসেছে। তখন অরণ্য বলে –

“- সরি সরি ইনায়া আসলে আমি খেয়াল করি নাই “।

ওয়াশরুমের ঝর্ণা থেকে পানি পড়তে থাকে যার কারণে অরণ্য আর ইনায়ার কথার মধ্যে ওরা দুইজন ভিজে যায়। ইনায়ার রাগী দৃষ্টিতে অরণ্যর দিকে তাকিয়ে থাকে ঠিক তখন অরণ্যর চোখ যায় ইনায়ার ভিজে যাওয়া শরীরের দিকে। ইনায়া ভিজে যাওয়ার কারণে তার শরীরে শাড়ি শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে। ইনায়াকে দেখতে অনেক আর্কষণীয় লাগছে যা দেখে অরণ্য শুকনো ঢুক গিলে ।

অরণ্য জীবনের প্রথম কোনো নারীকে এমন করে দেখছে। অরণ্য নিজের সরিয়ে নেয় ইনায়ার উপর থেকে তবে তার চোখ যায় ইনায়ার ভিজে যাওয়া ঠোঁটের দিকে। ইনায়ার ভিজে যাওয়া ঠোঁট অরণ্যকে বড্ড বেশি আকৃষ্ট করছে অরণ্য হাত দিয়ে ইনায়ার গাল টার্চ করে। ইনায়া কিছুটা কেঁপে উঠে। অরণ্য ইনায়ার কপালে ভিজা চুল কানের পিছনে গুঁজে দেয়। অরণ্য যখন ইনায়ার ঠোঁটের কাছে এগিয়ে যাবে তখন ইনায়া কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে –

“- অরণ্য কি করছেন আপনি?

ইনায়ার কণ্ঠ শুনে অরণ্যর হুঁশ ফিরে আসে সে দূরে সরে যায় ইনায়ার থেকে। ইনায়া তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে যায়। অরণ্যর নিজের উপর রাগ হচ্ছে সে কি করে ছিলো একটু আগে। নিজের স্ত্রীকে এতো কাছে দেখে হয়তো কোনো পুরুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অরণ্যর সাথে হয় তো তাই হয়েছে।

#চলবে 😔