তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-১৮+১৯

0
7

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_১৮

অরণ্য ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে সে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরণ্যর মুখে হাসি ফুটে উঠে সে হাত বাড়িয়ে ইনায়ার মাথায় টার্চ করে এরপর জোরে একটা টোকা দেয়। ইনায়া ব্যাথায় আত্মনাথ করে উঠে কপালে হাত দিয়ে অরণ্যর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখে। অরণ্য বলে –

“- মিসেস ইনায়া এমন করে যদি বরের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাহলে বরের উপর আপনার নজর লেগে যাবে। যানি আমি অনেক সুর্দশন তাই বলে কি এভাবে তাকিয়ে থাকবেন আমার বুঝি লজ্জা করে না “.

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া নিজের চোখ সরিয়ে ফেলে ইনায়া এতাখন অরণ্যর বিষয়ে কি চিন্তা ভাবনা কর ছিলো সেটা ভেবে। ইনায়ার নিজের উপর রাগ হয় তারপর আবার অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আপনি সুদর্শন না আর আমি আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম না। মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করেন “।

“- মিথ্যা কি আমি বলছি না আপনি বলছেন ইনায়া। নিজের দোষ অন্যর উপর দিয়ে কি আপনি শান্তি পান “।

ইনায়া আর অরণ্যর ঝগড়ার মধ্যে রুমের দরজায় কেউ নক করে তারা দুইজনে সেই দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে একজন বৃদ্ধ মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। বৃদ্ধ মহিলা তাদের খাবার খাওয়ার জন্য নিচে যেতে বলে এরপর ওনি চলে যান। ইনায়া আর অরণ্য অনেক সময় ধরে জার্নি করেছে যার জন্য তারা অনেক খুদার্ত আর টার্য়াড ছিলো। যার জন্য তারা নিচে যায় খাবার খেতে।

খাবার খাওয়ার জন্য নিচে গিয়ে তারা অবাক হয়ে যায় সেখানে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে খাবারের। ইনায়া বলে –

“- নানু আপনারা এতো খাবারের আয়োজন কেনো করছেন? আর এতো সময়ের মধ্যে এতো খাবার কি করে রান্না করলেন? আমরা দুইজন মিলে এতো খাবার কি শেষ করতে পারব?

ইনায়ার কণ্ঠ শুনে ইভান চুপ হয়ে যায় তার মুখ ফুটে কেনো কথা আসছে না। ইনায়াকে ফোন করেছে কিন্তু এখন সে কি বলবে ওপর পাশ থেকে ইনায়া কোনো উত্তর না পেয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে। অপরিচিত বক্তি এখনো ফোন কাটে নাই তা দেখে ইনায়া আবার জিজ্ঞেস করে –

“- কি হয়েছে কথা বলেন না কেনো? ফোন করেছেন কি চুপ থাকার জন্য “।

ইনায়ার কথা শুনে ইভান নিজের মনকে শক্ত করে বলে –

“- ইনায়া কেমন আছেন? সংসার জীবন কেমন কাটছে?

ইভানের কণ্ঠ শুনে ইনায়া অবাক হয়ে যায় ইভানের কণ্ঠ তার পরিচিত। ইনায়ার চোখের সামনে ভেসে উঠে ইভানের সাথে তার সমস্ত সৃতি আর বিয়ের দিনের ঘটনা। ইনায়ার সঙ্গে সঙ্গে রাগ উঠে যায় আজ শুধু ইভানের জন্য তার নিজের মামণি ভালো বাবার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। ইনায়া বলে –

“- আমার ধারণা যদি ভুল না হয় তাহলে আপনি ইভান ভাই রাইট? কিন্তু হঠাৎ করো ইভান চৌধুরীর তার জীবনের সবচেয়ে ঘৃণিত নারীর কথা কি করে মনে পড়লো?

“- ইনায়া আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন? অবশ্য আপনার সাথে যা করেছি তা আমি অন্যায় করছি যার জন্য সরি “।

“- ইভান ভাই রাগ জেদ সব মানুষের কাছে করা হয় কিন্তু অপরিচিত মানুষের প্রতি রাগ জমিয়ে লাভ কি। আর আপনি আমার সাথে যা করছেন তা অন্যায় না কারণ অরণ্যর সাথে বিয়ে দিয়ে অনেক ভালো করেছেন।

“- তাহলে কি ইনায়া আপনি অরণ্যর সাথে সুখী?

“- হুম অনেক সুখী ইভান ভাই। স্বামী সংসার নিয়ে আমার জীবন অনেক সুখে শান্তিতে কেটে যাচ্ছে “।

“- খুব ভালো ইনায়া আপনার ভালো করতে চেয়েছি আমি। ভালো থাকবেন আপনি “।

ইভানের কথা শুনে ইনায়া বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বলে –

“- কি অদ্ভুত বিষয় তাই না ইভান আপনি আমার ভালো চাইলেন কিন্তু আমাকে না। সারাজীবন শুধু ঘৃণা করলেন ভালোবাসলেন না। কি এমন অপরাধ হতো যদি ঘৃণা না করে ভালোবাসা দিতেন?

“- আরে কেনো পারবে না ইনায়া। আর এই প্রথম তালুকদার বাড়ির জামাই এই বাড়িতে এসেছে যদি এইটুকু আয়োজন না করা হয় তাহলে কি হয়। এখন খাওয়া দাওয়া শুরু করো এতো বেলা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই তোমাদের অনেক খিদা লেগেছে “।

ইনায়া আর অরণ্য চেয়ারে বসে যায় বৃদ্ধ মহিলা তাদের খাবার বেড়ে দেয়। অরণ্য খাওয়া শুরু করে দেয় খাবার অনেক মজা হয়েছে। ইনায়া আর অরণ্য খাওয়া দাওয়া শেষ করে চলে যায় উপরে বিশ্রাম নিতে। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে ইনায়া তবে অরণ্য আশেপাশে তাকিয়ে কি যেনো খুঁজতে থাকে। অরণ্যর দিকে তাকিয়ে ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলে

“- কি হলো অরণ্য আপনি কি খুঁজে যাচ্ছেন। এতো সময় জার্নি করে কি আপনার শরীর টার্য়াড হয়ে যায় নাই। ঘুমাবেন না আপনি?

“- ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না আমার। আপনি ঘুমিয়ে যান আমব বরং অফিসের কাজ শেষ করি এখন “।

“- ওকে “।

ইনায়া ছোট করে জবাব দেয় এরপর সে বিছানায় আরাম করে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে অরণ্য পাশে থাকা চেয়ারে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকে। অরণ্যর চোখ মুখ দেখ বুঝা যাচ্ছে তার শরীর এখন অনেক টার্য়াড ঘুম দরকার। কিন্তু এই রুমে কোনো সোফ নাই আর ইনায়ার সাথে এক বেডে সে ঘুমাতে পারবে না যার জন্য অরণ্য চেয়ারে বসে যায়। ইনায়া যখন ঘুম থেকে উঠবে তখন সে ঘুমাবে।

প্রায় রাত ছয়টা বেজে গেছে ইনায়া ঘুম থেকে উঠে দেখে বাহিরে মাগরিবের আযান দিচ্ছে অন্ধকার নেমে এসেছে। ইনায়া চোখ যায় অরণ্যর দিকে যে এখন চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অরণ্যর হাত থাকা ল্যাপটপ পাশে টেবিলে রাখা আর অরণ্য এক হাত মাথার পিছনে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইনায়া ভাবে হযতো অরণ্য কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে যার জন্য সে আর কিছু বলে না। ইনায়া ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায় সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেই।

অন্যদিকে ইভান নিজের রুম থেকে বের হয়ে নাতাশার রুমের কাছে যায়। নাতাশার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সেখানে নক করে আর বলে –

“- নাতাশা তুমি কি রুমে আছো? নাতাশা?

নাতাশা টেবিলে বসে পড়াশোনা কর ছিলো তবে হঠাৎ করে ইভানের ডাক শুনে সে রুম থেকে বের হয়ে আসে। নাতাশা বলে –

“- ইভান ভাইয়া তুমি হঠাৎ আমার রুমে? কোনো দরকার?

“- হুম নাতাশা তোর কাছে কি ইনায়ার ফোন নাম্বার আছে?অফিসের ফাইলের বিষয়ে ইনায়ার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে।

ইনায়ার নাম্বার চাওয়ার কারণে নাতাশা প্রথমে একটু অবাক হয় কিন্তু পরে অফিসের কাজের কথা শুনে ইনায়ার নাম্বার দিয়ে দেয়। ইভান ইনায়ার নাম্বার নিজের ফোনর সেভ করে এরপর চলে যায় ঠিক তখন পিছন থেকে নাতাশা ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলে –

“- ভাইয়া একটা কথা মনে রেখো ইনায়ার কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে। আর বিয়ে কিন্তু তুমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিয়েছো “.

নাতাশার কথা ইভান শুনে নাতাশা কথাটা কেনো বলেছে তা ইভান যানে। ইভান বলে –

“- এই ইভানের সৃতি শক্তি এতো খারাপ না যে সাতদিন আগের ঘটনা ভুলে যাবে। এখন এইসব বিষয় চিন্তা করা বাদ দে ভালো করে পড়াশোনা কর “।

ইভান কথাটা বলে চলে যায় নিজের রুমে অন্যদিকে নাতাশা ইভানের কথা শুনে হাসে। কারণ নাতাশা যা সন্দেহ করেছে তা মিথ্যা না পুরুষ মানুষ তখন নিজের ভালোবাসা বুঝতে পারে যখন তার শখের নারী অন্য কারো হয়ে যায়। নাতাশা নিজের রুমের ভিতরে চলে যায় দরজা বন্ধ করে টেবিলে বসে আবার পড়াশোনার দিকে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে ইভান রুমে ফিরে আসে তার হাতে থাকা ফোন থেকে ইনায়ার সেভ করা নাম্বার খুঁজে বের করে। ইভান প্রথমে অস্বস্তি বোধ কর ছিলো ইনায়াকে ফোন করতে কিন্তু পরে সাহস করে ফোন করে।

ইনায়া নামাজ শেষ করে বাহিরে বেলকনিতে আসে সেখান থেকে রাতের আকাশ দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। গ্রামের রাতের বাতাস সুন্দর প্রকৃতি সবকিছু ইনায়াকে মুগ্ধ করে। ইনায়ার ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে ওর ফোন বেজে উঠে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে অপরিচিত লোক কল করেছে।ইনায়ক প্রথমে অবাক হলে ও পরে কেনো গুরুত্বপূর্ণ কল হবে ভেবে রিসিভ করে। ইনায়া বলে –

“- হ্যালো কে বলছেন?

“- কেমন আছেন ইনায়া? স্বামী সংসার নিয়ে নিশ্চয়ই সুখে দিন কাটছে আপনার “।

ইনায়া যখন বুঝতে পারে ওপাশ থেকে আর কেউ না ইভান কথা বলছে তখন হাত থেকে ফোন পড়ে যেতে চাই। কিন্তু ইনায়া ফোন শক্ত করে ধরে আজ প্রায় সাতদিন পর ইভানের কণ্ঠ শুনে। তার মনে পড়ে যায় বিয়ের দিনের ঘটনা ইনায়া বলে –

“- ইভান ভাই আপনি? এতো দিন পর হঠাৎ কল করলেন কেনো?

সোমবার থেকে আমার পরীক্ষা যার জন্য আমি অনেক বিজি। তবে আজকে থেকে নিয়মিত গল্প আসবে

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয় Nowrin Muntaha Hiya – নওরিন মুনতাহা হিয়া #
#পর্ব_১৯ ( ইনায়ার উভয় সংকট)

ইনায়া যখন উপলব্ধি করতে পারে ফোনের ওপর পাশে থাকা মানুষ যে নিশব্দে দাঁড়িয়ে আছে সে আর কেউ না ইভান। তখন তার সারা শরীর পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে তার চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে এক বিন্দু জল। প্রায় সাতদিন পর ইনায়া আজ প্রথম ইভানের কণ্ঠ শুনছে তার মনের ভিতরে হাজারো সৃতি ঘুরঘুর করছে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তার মনে পড়ে যায় বিয়ের দিনের ঘটনা। ইনায়া নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে –

“- ইভান ভাই আপনি হঠাৎ ফোন করেছেন কেনো? নিজের জীবনের সবচেয়ে ঘৃণিত নারীকে বিদায় দিয়ে নিশ্চয়ই অনেক সুখে আছেন? বলেন না ইভান ভাই আমার বিদায়ে আপনার আত্মা ঠিক কতটা সন্তুষ্ট হয়েছে?

ইনায়ার কথা শুনে ইভান এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তার হঠাৎ করে ফোন দেওয়ার কারণ কি ইনায়া সত্যি উপলব্ধি করছে পারছে না? ইভান ইনায়াকে ঘৃণা করে বড্ড বেশি অপছন্দ করে তবে কেনো আজ ইনায়ার কণ্ঠ শুনে তার মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। যাকে নিজের জীবন থেকে হাসি মুখে বিদায় দিয়েছে তার কণ্ঠে নিজের নাম শুনে এতো শান্তি কেনো লাগছে ইভানের। তার জীবনে ঘটে যাওয়া সকল কেনো র উত্তর কি দিতে পারবে ইভান?

ইনায়ার বিয়ের পর থেকে ইভানের জীবনে সব সুখ হারিয়ে গেছে শুধু মস্তিক জুড়ে ঘিরে আছে ইনায়ার সৃতি। তার রাতের ঘুমের মধ্যে সপ্নে জুড়ে শুধু থাকে একজন মানুষ তার নাম ইনায়া। ইভান কি সত্যি ইনায়াকে গভীর ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে নিজের মনের ঘৃণা আড়ালে ইনায়ার জন্য মায়া জমিয়ে রেখেছে। কিন্তু এখন কি হাজার জনম ত্যাপসা করে ও ইনায়াকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবে? ইভানের ভাবনার মাঝে ইনায়া আবার তাকে পুনরায় ডাক দেয় যার কারণে হুঁশ ফিরে আসে। ইভান বলে –

“- ইনায়া কেমন আছেন আপনি? স্বামী সংসার নিয়ে নিশ্চয়ই খুব সুখে শান্তিতে দিন কাটছে আপনার?

ইভানের কথা শুনে ইনায়ার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে সুখ শব্দটা কি তার ভাগ্য আছে? জীবন শুধু তাকে কষ্ট ছাড়া আর কিছু উপহার দেয় নাই। যাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসে পনেরো বছর অপেক্ষা করেছে সে তাকে ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। নিজের ভালোবাসার দহনে পুড়িয়ে অন্য কারো হাতে তুলে দিয়েছে। অবশ্য ইভান কি বুঝতে ইনায়ার কষ্ট সে তো কখনো ইনায়াকে ভালোবাসে নাই। সারাজীবন ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে রেখেছে মিথ্যা অপরাধে দোষী করে তার জীবন থেকে ছুড়েঁ ফেলে দিয়েছে।

ইনায়ার চোখ বেয়ে পড়া জল এক হাত দিয়ে মুছে নেয় বুকে কষ্ট জমিয়ে রেখে মুখে হাসি নিয়ে বলে –

“- অবশ্যই ইভান ভাই স্বামী সংসার নিয়ে অনেক সুখে দিন কাটছে আমার? বিশ্বাস করেন ইভান ভাই এই ইনায়া পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। এতো সুখ উপর ওয়ালা আমার ভাগ্য কেনো দিলেন বলেন তো ইভান ভাই। অতিরিক্ত সুখ ইনায়ার কপাল যে সয্য হয় না “।

ইনায়ার কথা শুনে ইভান কথা না বলে শান্ত হয়ে যায় অন্যদিকে ইনায়া নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারে না। ইনায়া নীরবে কান্না করে তবে কার কণ্ঠে কেনো কান্নার আওয়াজ হয় নাই। কারণ ইনায়া অনেক আগেই বুকে কষ্ট জমিয়ে রেখে মুখে হাসি নিয়ে কথা বলা আর শব্দ ছাড়া কান্না করা শিখে গেছে। ইনায়া বলে –

“- তবে ইভান ভাই আপনি কি শুধু আমার সুখের সংসারের গল্প শোনার কথা জানার জন্য ফোন করেছেন? হঠাৎ করে আমার বিষয়ে জানার এতো আগ্রহ কেনো আপনার?

“- না মানে আসলে ইনায়া আপনার সংসার কেমন চলছে তা জানার জন্যই কল দিয়েছি।অরণ্য খুব ভালো ছেলে নিশ্চয়ই ও সাথে আপনি ভালো থাকবেন ইনায়া “।

“- কি অদ্ভুত বিষয় তাই না ইভান আপনি আমার ভালো চাইলেন কিন্তু আমাকে চাইলেন না। আর ইভান ভাই আমার স্বামী অরণ্য যথেষ্ট ভালো মানুষ। ভাগ্য করে এমন জীবনসঙ্গী পাওয়া যায় ওর সাথে আমি অনেক ভালো আছি।

“- আপনি অরণ্যকে ভালোবাসেন তাই না ইনায়া?

“- ইভান ভাই ভালোবাসা কখনো শখ বা বিলাসিতা নয়, ভালোবাসা হচ্ছে একটি মানুষের প্রতি নিশ্বার্থ অনুভূতি “।

ইনায়ার মুখে অরণ্যর নাম শুনে ইভানের বুকের ভিতরে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সেটা সে মুখে প্রকাশ করে নাই শুধু চুপচাপ শুনে যায় নিজের প্রিয়তমার কণ্ঠে অন্য পুরুষের নাম। যাকে নিজের হাতে অন্যর অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়েছে তার জন্য কান্না করা মানায়। ইনায়া আজ অরণ্যর বউ এই বাস্তব কথাটা ইভানের কাছে মৃত্যু সমতূল্য। ইনায়াকে অন্য কারো সাথে দেখার আগে তার যদি মৃত্যু হতো তাহলে ও এতো কষ্ট হতো না। ইভান আর শুনতে পারল না ইনায়ার আর অরণ্যর সুখের সংসারের গল্প। ইভান ফোন রেখে দেওয়ার আগে ছোট করে বলে –

“- বিদায় ইনায়া আজ আর আপনার স্বামী ভালোসার গল্প শুনার আগ্রহ নাই। সারাজীবন সুখে শান্তিতে সংসার করবেন যদি সময় হয় তাহলে না হয় আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন “।

ইভান আর ইনায়ার উত্তরের অপেক্ষা করে নাই সে ফোন কেটে দেয়। ইভান ফোন বিছানায় ছুড়েঁ মারে এরপর জীবনের বাস্তবতা থেকে টার্য়াড হয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে। তার বুকের বা পাশে বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে এই ব্যাথার কি কেনো ঔষধ আছে। আর কে এই ব্যাথার ঔষধ লাগিয়ে দিবে তাকে যে ছিলো সে তো আজ অন্য কারো। কেনো আজ এতো পীড়া হচ্ছে তার এক অজানা দহনে সমগ্র দেহ মন পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসা কি এতো কষ্ট দেয় মানুষকে?

অন্যদিকে ইনায়া ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ইভান ফোন রেখে দিয়েছে যা দেখে সে হাসে। ইনায়ার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল সযত্নে মুছে নেয়। ইনায়া মনে মনে বলে –

“- মূল্য দিয়ে অমূল্য বানিয়ে মূল্যহীন মানুষ বানিয়ে দিয়ে এখন জিজ্ঞেস করছেন সুখে আছি কি না? কি এমন হতো ইভান যদি পৃথিবীর সব নিয়ম ভেঙে আপনি আমার হয়ে যেতেন। শুধু ঘৃণা না করে ভালোবেসে আগলে রাখতেন তাহলে আজ আমি আর আপনি বাস্তবতা মেনে নিয়ে একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতাম না। কেনো ভালোবাসলেন না আমাকে ইভান ভাই কেনো?

ইনায়া নিজের মনে মনে বলা কথাটা বলে ফুপিয়ে কান্না করে দেয় এরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে অল্প সময় নিজের সাথে কাটায়। ইনায়া মনে হয় হঠাৎ করে পিছনে ছায়ার মতো কেউ এতোখন দাঁড়িয়ে ছিলো কিন্তু ভালো করে খেয়াল করে দেখে সেখানে কেউ নাই। নিজের মনের ভুল ভেবে ইনায়া আর এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর ইনায়া রুমে এসে দেখে অরণ্য মাএ ঘুম থেকে উঠেছে যা ওর চোখ মুখে ফুলা ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে। ইনায়ার দিকে তাকিয়ে অরণ্য বলে –

“- ইনায়া আপনি কখন ঘুম থেকে উঠলেন? আর আপনার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো? যেনো মনে হয় অনেক সময় ধরে কান্না করেছেন? কিছু কি হয়েছে আপনার?

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া বুঝতে পারে কান্না করার জন্য তার চোখ মুখ ফুলে গেছে। কিন্তু অরণ্যকে সত্যি কথা বলা যাবে না তাই সে বলে –

‘- না অরণ্য এমন কিছু না আসলে অনেক সময় ঘুমিয়ে ছিলাম যার জন্য এমন হয়েছে। আপনি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি আপনার কফি নিয়ে আসছি “।

ইনায়া কথাটা বলে অরণ্যর সামনে থেকে চলে যেতে চাই ঠিক তখন ওর হাত শক্ত করে ধরে ফেলে অরণ্য। অরণ্য হাতে টান দিয়ে ইনায়াকে নিজের খুব নিকটে নিয়ে আসে। অরণ্যর এমন কাণ্ডে অবাক হয়ে যায় অরণ্য ইনায়ার গালে আলতো করে ছুয়েঁ দিয়ে বলে –

“- ইনায়া আপনি আমাকে ঘৃণা করেন বড্ড বেশি ঘৃণা করেন। আমার কেনো অভিযোগ নাই কিন্তু প্রমিজ করেন কখনো ছেড়ে চলে যাবেন না আমাকে। বিশ্বাস করেন ইনায়া এই অরণ্য আপনাকে ছাড়া বাচঁবে না।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার চোখ যায় অরণ্যর চোখে জমে থাকা পানির দিকে। অরণ্যর চোখে পানি কেনো তাহলে কি অরণ্য শুনে ফেলেছে ইভান আর ইনায়ার কথা। ইনায়া তার গালে থাকা অরণ্যর হাতের উপর নিজের হাতের ছোঁয়া দেয় এরপর বলে –

“- অরণ্য মেয়েদের বিয়ের পর স্বামী তার সবকিছু। আপনি আমার স্বামী আর আমি আপনার বিবাহিত স্ত্রী। আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো আমি।

“- ইনায়া আমার ভালোবাসার মানুষ সবসময় দূরে চলে গেছে আমার গর্ভধারণী মা ও আমাকে ঘৃণা করে। সবার ঘৃণা সয্য করে আমি বেঁচে আছি কিন্তু আপনার থেকে দূরে গেলে আর বাঁচতে পারব না।

“- হুম আমি জানি অরণ্য। আচ্ছা এখন ইমোশনাল কথা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হন আমি কফি নিয়ে আসছি “।

অরণ্য ইনায়ার যাওয়ার দিকে অল্প সময় তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অন্যদিকে ইনায়া রুম থেকে বের হয় একটু দূরে গিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।ইনায়া মনে মনে বলে –

“- অরণ্য আমাকে মাফ করে দিবেন হয়তো এই জীবনে আমি আপনাকে কখনো ভালোবাসতে পারব না। কিন্তু কখনেন ছেড়ে ও যাবো না আপনি আমার স্বামী অরণ্য। নারীর জীবনে অতীত থাকতে হয় না যা থাকে তা হলো বর্তমান।

” অতীত থাকা দোষে কিছু না কিন্তু অতীতে পড়ে থাকা ঠিক না “।

#চলবে