তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-২২+২৩+২৪

0
5

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_২২ (অরণ্যই কি তবে খুনি?)

ঘড়ির কাটায় রাত প্রায় দুইটা অরণ্য আর ইনায়া একটা বেডের দুই পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। তাদের একে অপরের দুরত্ব প্রায় অনেক। শেষ রাতের দিকে গ্রামে বৃষ্টি হয়েছে যার জন্য আশেপাশ থেকে শীতল বাতাস ভেসে আসছে। ইনায়ার শরীর উষ্ণ হওয়ার জন্য এমন কোনো গরম কিছু পরিধান করে নাই, যার জন্য তার শরীরে বেশ ঠান্ডা অনুভব করছে। গ্রামের শীতের পরিমাণ সবসময় অধিক থাকে, যার জন্য ইনায়ার শরীরে ধীরে ধীরে আরো বেশি ঠান্ডা হয়ে বরফ হয়ে যাচ্ছে।

সময় প্রায় রাত দুইটা যার জন্য অরণ্য ঘুমিয়ে আছে, পাশে থাকা ইনায়ার প্রতি তার বর্তমানে খেয়াল নাই। ইনায়া শরীরে উষ্ণতা অনুভব করার জন্য সে গুটিশুটি হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকে। অরণ্য অন্য পাশে থেকে যখন ইনায়ার দিকে ফিরে তখন ইনায়ার কাছে যায় অরণ্যর। তীব্র শীতের কারণে ইনায়া শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অরণ্যকে, তার শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার কারণে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণতা অনুভব করে। ঘুমের মাঝে অরণ্যর শরীরে কোনো নারীর শীতল ছোঁয়া অনুভব করে তার ঘুম ভেঙে যায়, চোখ খুলে তার বাহুতে আবদ্ধ থাকা ইনায়ার দিকে তার চোখ যায়।

ঘুম ঘুম চোখে অরণ্য ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে, নিজের বুকে ইনায়াকে দেখে তার চোখে মুখে প্রশান্তি নেমে আসে। ঘুমন্ত অবস্থায় ইনায়াকে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে, যদি ওর রূপের বর্ণনা করতে যায় অরণ্য তাহলে হয়তো এক উপন্যাস লেখা যাবে। অরণ্য ইনায়াকে নিজের বাহুর মধ্যে আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়, ইনায়ার ঠান্ডা হয়ে যাওয়া শরীরে উষ্ণতা দেয়। ইনায়া গরম কিছু অনুভব করে আবার শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে, অরণ্য মুখে হাসি বজায় রেখে আবার ইনায়াকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল প্রায় সাতটা জানালার কাঁচ ভেদ করে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে রুমে, গ্রামে সূর্যের তাপ সবসময় অত্যাধিক প্রখর হয়। সূর্যের এক ঝিলিক এসে পড়ে ইনায়ার চোখে তার চোখ খুলে যায়, ইনায়া পিটপিট করে চোখ খুলে এরপর ঘুমের রেশ কাটিয়ে যখন বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে। তখন সে অনুভব করে তাকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, ইনায়া ভালো করে খেয়াল করে দেখে সে অরণ্যর বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। অরণ্য তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যেনো ছেড়ে দিলে সে পালিয়ে যাবে। কাল রাতে ইনায়া আর অরণ্য যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে ঘুমিয়ে ছিলো তাহলে সকালে কি করে একে অপরের এতো কাছে?

ইনায়ার মনে পড়ে মাঝ রাতে তার শরীরে বেশ ঠান্ডা অনুভব কর ছিলো যার জন্য সে শক্ত একটা বালিশ জড়িয়ে ধরে। কোথাও বালিশ মনে করে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে নাই তো সে? ইনায়া নিজের করা কাজে নিজেই ফেঁসে গেছে। ইনায়ার এখন লজ্জায় মাটিতে লুকিয়ে পড়তে ইচ্ছা করছে, তবে অরণ্য যেহেতু ঘুমিয়ে আছে তার মানে কালকে রাতের ঘটনা সে কিছুই যানে না। ইনায়া তাড়াতাড়ি করে অরণ্যর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়, এরপর বিছানা থেকে ধীরে ধীরে নেমে যায় এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

প্রায় পনেরো মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয় ইনায়া, রুমে এসে দেখে অরণ্য এখনো ঘুমিয়ে আছে। ইনায়া অরণ্যকে ডাক বা বিরক্ত না করে আয়নার সামনে চলে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হ্রেয়ারড্রয়ার দিয়ে চুল শুকাতে থাকে, ইনায়ার ভিজা চুলের পানি এসে পড়ে অরণ্যর মুখে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে চোখে পানি এসে পড়ার কারণে তার ঘুম ভেঙে যায়, বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকিয়ে যা দেখে তা দেখে সে অবাক।

সদ্য গোসল শেষ করে আসা ইনায়ার চুল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, তার পরনে লাল শাড়ি হাতে থাকা লাল রঙের চুড়ি আর চুল বেড়ে সারা শরীরে পানি পড়া। সব মিলিয়ে ইনায়াকে অনেক সুন্দর লাগছে, অরণ্যর বিরক্ত হয়ে যাওয়া মুগ সঙ্গে সঙ্গে মুগ্ধতায় ভরে যায়। অরণ্য নিজের হাত মাথার পিছু রাখে এরপর এক দৃষ্টিতে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইনায়াকে এই অবস্থায় ঠিক কতটা মোহনীয় লাগছে তা হয়তো সে নিজে ও যানে না, অন্যদিকে অরণ্যর মনে নিষিদ্ধ বাসনা জেগে উঠে তার নিজের মনকে শান্ত রাখতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

অরণ্য ইনায়ার দিকে দেখে হালকা শুকনো ঢুক গিলে, তার এখন নিজের মনের চাওয়ার কথা ভেবে ইচ্ছা করছে ইনায়াকে ছুঁয়ে দিতে। তাকে গভীর থেকে গভীর ভাবে ভালোবাসতে কিন্তু সে তা পারবে না, ইনায়ার অনিচ্ছায় সে তাকে ছুয়েঁ দিতে পারবে না। নিজের চাহিদার জন্য কাপুরুষের মতো বউয়ের উপর জোর খাটাতে পারবে না, অরণ্য এতো নিচুঁ মন-মানসিকতার কাজ করতে পারবে না। অরণ্য নিজের মন আর বিবেকের যুদ্ধে তার বিবেক জয় লাভ করে, সে ইনায়ার উপর থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।

অরণ্যর চোখ সরিয়ে নেওয়ার আগেই ইনায়ার চোখ যায় বিছানায় শুয়ে থাকা অরণ্যর দিকে, কালকে রাতে ঘটনার জন্য অরণ্যর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইনায়ার ভীষণ লজ্জা করছে। তবুও ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে –

“- অরণ্য আপনি ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন? যান ফ্রেশ হয়ে আসুন? আমি আপনার জন্য কফি নিয়ে আসি নিচ থেকে?

ইনায়ার কণ্ঠে অরণ্যর হুঁশ ফিরে আসে এতোখন ইনায়ার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো, তা ভেবে তার নিজের উপর রাগ হচ্ছে। ইনায়া যখন তার সামনে আসে তখন অরণ্যর সবকিছু এলেমেলো হয়ে যায়, মনের মধ্যে থাকা সুপ্ত অনূভুতি বার বার তাকে ইনায়ার প্রতি আকৃষ্ট করে। পুরুষ মানুষের নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক কতটা কঠিন তা হয়তো অরণ্য উপলব্ধি করতে পারে, তবে যতোই কষ্ট হোক না কেনো ইনায়া যতদিন না অরণ্যকে ভালোবাসবে ততদিন অরণ্য তার সীমা অতিক্রম করবে না। ইনায়া কথার উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করে –

“- অরণ্য কথার উত্তর দেন না কেনো? কোন ভাবনার জগৎতে হারিয়ে গেলেন আপনি? যান ফ্রেশ হয়ে আসুন “।

ইনায়া আয়নার সামনে থেকে সরে অরণ্যর কাছে যায়, বিছানার কাছে ঝুঁকে অরণ্য কি ভাবছে তা বুঝার চেষ্টা করে। হঠাৎ করে অরণ্য তার হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের উপর ফেলে দেয়, ইনায়া এসে পড়ে অরণ্যর বুকে। ইনায়া অরণ্যর এমন কাজে হঠাৎ করে থতমত খেয়ে যায় সে উঠতে যাবে, এমন সময় অরণ্য তার হাত ধরে ফেলে। অরণ্য ইনায়ার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে বলে –

“- এই সুন্দরী আমাকে পা*গল করার জন্য কি এমন মহোনীয় রূপ নিয়ে আমার আসবে আসো। এতো পাষাণ হওয়া কিন্তু ঠিক না, নিজের বরকে এমন অসহ্য জ্বালিয়ে কি শান্তি পাও?

ইনায়া অরণ্যর কথার মানে বুঝতে পারে না তবে অরণ্যর এতো কাছে এসেছে বলে তার কেমন যানি লজ্জা লাগছে, ইনায়ার গাল রক্ত জবার মতো লাল হয়ে গেছে। অরণ্যর এমন ঘোর লাগা দৃষ্টি সব মিলিয়ে ইনায়া লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তবে ইনায়া সব লজ্জা আর ভালো লাগা দূরে সরিয়ে অরণ্যের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া চেষ্টা করতে থাকে, অরণ্য আরো শক্ত করে ইনায়াকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। ইনায়া শান্ত গলায় বলে –

“- অরণ্য কি করছেন আপনি? ছাড়ুন?

“- যে বুকে শুয়ে কাল সারারাত পার করে দিলেন। আজ সেখানে থেকে ছাড়া পাওয়ার এতো তাড়া কেনো আপনার?

অরণ্যর মুখে কাল রাতের কথা শুনে ইনায়া টনক নড়ে তার মানে অরণ্য রাতে জড়িয়ে ধরার কথা সব জানে, ইনায়াকে আরো অধিক লজ্জা ঘিরে ধরে। ইনায়া মৃদু স্বরে বলে –

‘- কালকে রাতের ঘটনার জন্য সরি। না মানে অতিরিক্ত শীতের কারণে বাধ্য হয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি। এই ভুল হবে না আর কখনো?

“- সরি বলার দরকার নাই। স্বামী হয় আপনার জড়িয়ে ধরার অধিকার রয়েছে আপনার। আর আমি চাই আপনি এই ভুল সারাজীবন করে যান, প্রতি রাতে আপনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চাই আমি “।

ইনায়ার আরো অল্প সময় অরণ্যর বুকে অবস্থান করে এরপর তার কি যেনো মনে পড়ে, যার কারণে ইনায়া অরণ্যকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। ইনায়া এমন কাণ্ডে অরণ্য বিরক্ত হয়ে বলে –

“- কি হয়েছে এমন করছেন কেনো?

“- অরণ্য ছাড়ুন আমাকে। আর আপনি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়? আমাদের রেডি হয়ে বের হতে হবে?

ইনায়ার মুখে বের হতে হবে শুনে অরণ্য বলে –

‘- এতো সকালে কোথায় যাবো আমরা?

“- আপনার শশুড় বাড়িতে?

শশুড় বাড়ি কথাটা শুনে অরণ্য ইনায়ার মুখে অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে বলে –

“- ছিঃ ছিঃ ইনায়া আপনি কেমন বউ বলুন? বিয়ের কয়েকদিন পর স্বামীর বিয়ে দিতে চান? চার বিয়ে করা জায়েজ আছে বলে কি আপনি আমার সাথে এমন জোর করবেন?

“- হুম করব। অরণ্য উঠুন না ফ্রেশ হন “।

‘- ইনায়া আপনার মনে কি একটু দয়া মায়া নাই এমন অসহায়, বেচারা মানুষকে চার বিয়ে করাতে চান? চার বউকে সয্য করার ক্ষমতা কি আমার আছে, শএু হলে এতো বড়ো ক্ষতি আমার করবেন না।

ইনায়া অরণ্যর কথায় বিরক্ত হয়ে বলে –

“- হুম শএু কখনো উপকার করে না। এখন যান রেডি হন “।

ইনায়া এই বলে অরণ্যর বুক থেকে উঠার চেষ্টা করে তখন অরণ্য আবার হাত ধরে বলে –

“- সত্যি করে বলুন কোথায় যাবো আমরা?

“- থানায় যেতে হবে। শাফায়াত মামার কেসের ডিটেইলস জানতে, ওনার মৃত্যুর আসল রহস্য জানার জন্য থানায় যেতে হবে “।

থানায় যাওয়ার কথা শুনে অরণ্য ইনায়ার হাত ছেড়ে দেয়, ইনায়া বিছানা ছেড়ে উঠে যায়। এরপর অরণ্যকে ফ্রেশ হতে বলে সে চলে যায় নিচে।অন্যদিকে অরণ্যর মুখ গম্ভীর হয়ে যায় সে পাশে থাকা তার ফোন বের করে, একজন অপরিচিত লোককে কল করে অরণ্য বলে –

“- সানি রূপনগর থানায় শাফায়াত হত্যার আসল খুনের ফাইল সরিয়ে ফেল, আগুন জ্বালিয়ে দে সেটাই। যাতে ইনায়া আসল সত্যির বিষয়ে কখনো যানতে না পারে।

“- ওকে “.

অরণ্য কথাটা বলে ফোন রেখে দেয় দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দেয়। ভবিষ্যতে ইনায়া যখন যানতে পারবে আসল ঘটনার অপরাধী কে, তখন কি হবে, অরণ্য কি সয্য করতে পারবে ইনায়ার চোখে তার জন্য ঘৃণা? যদি নিজের অতীত আর পাপ লুকিয়ে রাখতে ইনায়াকে তার খুন করতে হয়, সে কি পারবে নিজ হাতে ইনায়াকে খুন করতে? কিন্তু পরিস্থিতি যা হচ্ছে একদিন সত্যি ইনায়ার মৃত্যু অরণ্যর হাতে লেখা আছে?

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_২৩ ( থানায় ইনায়া অরণ্য)

সকাল প্রায় নয়টা বাজে অরণ্য খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নেমে আসে ইনায়া অনেক আগেই রান্না ঘরে এসেছে, টেবিলে সকল খাবার সাজানো রয়েছে তবে খাবারের পরিমাণ অনেক। ইনায়া রান্না ঘর থেকে চলে আসে খাবার টেবিলের কাছে, অরণ্য আর ইনায়া খাবার খেতে বসে যায়। বৃদ্ধ মহিলারা তাদের খাবার বেড়ে দেয় তবে আজকে খাবারে হালকা সকালের নাস্তা দেওয়া হয়েছে, ইনায়া যেহেতু খাবার তৈরির আগেই রান্না ঘরে চলে গিয়ে ছিলো যার জন্য সে অতিরিক্ত খাবার তৈরি করতে নিষেধ করে দেয়।

খাবার খাওয়া শুরু করে ইনায়া আর অরণ্য বৃদ্ধ মহিলা তাদের সাথে বসে আছে। প্রায় দশ মিনিট পর খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইনায়া উপরে চলে যায়, অরণ্য তার পিছনে পিছনে আসে রুমে। ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে আর বলে –

“- অরণ্য আপনি রেডি হন তাড়াতাড়ি? থানায় যেতে হবে তো?

ইনায়ার মুখে থানা কথাটা শুনে অরণ্যর মুখ গম্ভীর হয়ে যায় তার পা স্থির হয়ে যায়। অরণ্য ইনায়ার থেকে আসল সত্যি লুকিয়ে রাখতে পারবে না বেশি দিন, কিন্তু সে কি করবে ইনায়া যদি সব ঘটনার পিছনে কারণ আর উদ্দেশ্য জেনে যায় তাহলে তাকে ঘৃণা করবে। অরণ্য কি পারবে ইনায়ার চোখে তার জন্য ঘৃণা সয্য করতে। ইনায়া পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে অরণ্য এক ধ্যানে তাকিয়ে কি হয়েছে যেনো চিন্তা করে যাচ্ছে, ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে –

“- অরণ্য আপনি কি আমার কথা শুনেন নাই? যান রেডি হন বের হতে হবে?

অরণ্য শান্ত গলায় উত্তর দেয় –

“- এতো সকালে কি থানা খুলবে? মাএ খাওয়া দাওয়া শেষ করেছি একটু রেস্ট নেয় এরপর না হয় যাওয়া যাবে “।

অরণ্য কথাটা বলে দরজার কাছ থেকে হেঁটে রুমের মাঝে প্রবেশ করে, এরপর শরীর ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসে যায়। অরণ্যর এমন আচরণ দেখে ইনায়া বলে –

“- অরণ্য গ্রামের মানুষ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাই থানায় পুলিশ তাড়াতাড়ি এসে পড়বে। আর আমাদের যেতে সময় লাগবে? রেস্ট পরে নিবেন এখন রেডি হন?

“- ইনায়া এতো তাড়াহুড়ো কেনো করছেন? আর আপনার মামার বিষয়ে যদি থানায় কেনো তথ্য না খুঁজে পান তখন কি হবে?

অরণ্য কি সত্যি বুঝতে পারছে না ইনায়া এমন কেনো করছে? তার মামলার রায়ের তারিখ দ্রুত চলে আসছে? আর এসএস কোম্পানির আসল অপরাধী বিষয়ে জানার আগ্রহ ইনায়ার রয়েছে? যদি শাফায়াতের মৃত্যুর বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়া যায় তাহলে কতো বড়ো সমস্যা হতে পারে? অরণ্য শুরু থেকে ইনায়াকে সাপোর্ট করছে? তাহলে এখন তার এমন উদাসীনতার কারণ কি? ইনায়া বলে –

“- অরণ্য শাফায়াত মামার মৃত্যু সাধারণ বলে মনে হয় না? নিশ্চয়ই মামার মৃত্যুর পিছনে কেনো আগন্তুকের ষড়যন্ত্র রয়েছে। থানায় গিয়ে যদি মামার মৃত্যুর বিষয়ে অল্প তথ্য পাওয়া যায় তবে তা অনেক উপকার হবে? যতখন না আসল অপরাধীকে খুঁজে শাস্তি দিতে পারব ততক্ষণ এই ইনাযার মনে শান্তি হবে না।

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য হালকা ঢুক গিলে ইনায়ার দিকে তাকায়, ইনায়ার চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠছে সে তার মামার খুনির বিষয়ে জানার জন্য কতো আগ্রহী। অরণ্য ইনায়াকে যথেষ্ট ভালো করে যানে, যদি ইনায়া কেনো কাজ করার জন্য একবার জেদ ধরে তবে তা সে অবশ্যই করে ছাড়বে। ইনায়ার এমন জেদ অরণ্য জেদ অরণ্যর ভয়কে আরো দিগুণ বাড়িয়ে দেয়, তার এখন গা বেয়ে ঘাম পড়ছে। ইনায়া অরণ্যকে জোর করে রেডি করে এরপর তারা প্রায় বিশ মিনিট পর বেরিয়ে পড়ে থানার উদ্দেশ্য।

তালুকদার বাড়ির সামনে থাকা রিকশায় করে ইনায়া আর অরণ্য থানার উদ্দেশ্য রওনা দেয়, পাশাপাশি সিটে একে অপরে বসে আছে। গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করছে ইনায়া সত্যি রূপনগর গ্রাম, কেনো রূপকথার থেকে কম সুন্দর না। ছোটবেলা থেকে শহরে বড়ো হওয়ার কারণে গ্রামে কখনো আসা হয় নাই ইনায়ার, আজ প্রথম সে গ্রামে ঘুরতে এসেছে আর গ্রামের মনোমুগ্ধকর পরিবেশের প্রেমে পড়ে গেছে।

ইনায়া আর অরণ্য যে রিকশা করে যাচ্ছে সেই রিকশা ওয়ালার সাথে ইনায়া গল্প করছে, তালুকদার বাড়ির নাতি যানার পর রিকশা ওয়ালা তাকে অনেক সম্মান জানায়। ইনায়া তালুকদার বাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য তার নানার স্বভাব, এরপর তাদের পূর্ব পুরুষদের কথা জিজ্ঞেস করছে রিকশা ওয়ালার কাছে। শফিক তালুকদারের সম্পত্তির পরিমাণ বিশাল যা ইনায়া বুঝতে পারে, গ্রামের প্রায় সকল জমির মালিক তার নানা। বর্তমানে উত্তর অধিকারী সূএে তার নামে হয়েছে, গ্রামের অনেক জমি দেখিয়ে রিকশাচালক বলে এইটা তার নানার জমির।

শফিক সাহেবের প্রশংসা শুনে অনেক ইনায়া সারা রাস্তা জুড়ে তার নানার বীরত্ব আর উদার মন মানসিকতার কথা শুনে ইনায়া। ইনায়ার মনে ভীষণ খুশি অনুভব হয়, যদি ও অরণ্য যথেষ্ট শান্ত থাকে তার কণ্ঠ দিয়ে কেনো স্বর উচ্চারীত হয় নাই। বরং অরণ্যর শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে, তার মুখে চিন্তা বিষাদ আর গম্ভীরতার ছাপ ফুটে উঠে। অরণ্যর এমন আচরণ ইনাযার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে রিকশা দিয়ে যাওয়ার কারণে হয়তো অরণ্য বিরক্ত হচ্ছে। যার জন্য সে চুপচাপ তা মনে করে ইনায়া।

সকাল দশটা রুপনগর থানার সামনে রিকশা এসে থামে ভাড়া পরিশোধ করে গাড়ি থেকে নেমে, মাটির উপর দাঁড়ায় ইনায়ার আর অরণ্য। ইনায়ার মুখে নতুন রহস্য আর আসল অপরাধী খোঁজার প্রবল ইচ্ছার আনন্দ ফুটে উঠে, অরণ্যর চোখে মুখে ভয় থানার সামনে দাঁড়াতে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সময় ব্যয় না করে তারা থানার ভিতরে ঢুকে যায় পুলিশের কেবিনে ঢুকে, পুলিশ তাদের দেখে চেয়ারে বসার জন্য অনুরোধ করে। ইনায়া বসে যায় অরণ্য ও বসে যদি ও তার হাত পা কাঁপছে, তবে সব প্রমাণ সে লুকিয়ে রেখেছে ইনায়া আসল সত্যি জানবে না।

তবে এতো অল্প সময়ের মধ্যে সান পুলিশকে মেনেজ করছে পেরেছে না কি তা নিয়ে অরণ্যর যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ইনায়া বলে –

“- রূপনগর গ্রামের পূর্ব জমিদার মৃত শফিক তালুকদারের নাতনি আমি ইনায়া তালুকদার। শফিক সাহেবের একমাত্র ছেলে শাফায়াত তালুকদার অনেক বছর আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের কিছু তথ্য জানার আছে?

ইনায়ার কথা শুনে পুলিশ শাফায়াতের মৃত্যুর বিষয়ে ধারণা লাভ করে, যদি ও তালুকদার বাড়ির প্রতৈক সদস্যর পরিচয় তার জানা রয়েছে। পুলিশ অফিসার বলে –

“- দেখুন মিসেস ইনায়া শফিক সাহেব এই রূপনগরের যথেষ্ট সম্মানীয় লোক ছিলেন, তবে তার ছেলে শাফায়াত সাহেব এই গ্রামে বেশি থাকেন নাই যার কারণে তার বিষয়ে আমি বেশি কিছু জানি না। তবে শাফায়াত সাহেবর মৃত্যুর বিষয়ে রূপনগর থানায় কেনো তথ্য নাই “।

পুলিশের মুখে না কথাটা শুনে ইনায়া অবাক পুলিশ তার নানার বিষয়ে যদি জেনে থাকে, তাহলে শাফায়াতের মৃত্যুর বিষয়ে কেনো যানবে না। আর শাফায়াত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় নিশ্চয়ই মৃত্যুর পর থানায় কেনো ফাইল করা হয়েছে, বা তার মৃত্যুর তদন্ত করা হয়েছে। তবে পুলিশের না শুনে অরণ্য মনে মনে খুশি হয়, সানভি যে টাকা দিয়ে সব প্রমাণ লোভ করে দিয়েছে তা অরণ্য বুঝতে পারে। অরণ্য শান্ত হয়ে যায় সে ইনাযার দিকে তাকিয়ে দেখে। ইনায়া বলে

“- শাফায়াত মামার মৃত্যুর পর কি তার মৃত্যুর কেনো তদন্ত হয় নাই? তার মৃত্যুর কারণ কি শুধু গাড়ির এক্সিডেন্ট না অন্য কিছু তা কি জানা হয় নাই? শাফায়াত মামার কি মৃত্যুর কেনো ফাইল কি এই থানায় নাই।

ইনাযাার কথা শুনে পুলিশ অরণ্যর দিকে তাকায়, অরণ্য শান্ত হয়ে বস আছে পুলিশ অরণ্যকে ভালো করে যানে।কারণ সানভি তাকে টাকা দিয়েছে যেখানে অরণ্যর নাম সামনে আসে নাই। পুলিশ অফিসার বলে –

“- না শাফায়াত তালুকদারের মৃত্যুর বিষয়ে কেনো তথ্য থানায় নেই।

পুলিশ অফিসারের এমন শান্ত গলার জবাব ইনায়ার শরীরে রাগ দিগুণ বাড়িয়ে দেয়, ইনায়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় তার রাগ হচ্ছে। অরণ্য যানে এখন ইনায়া কি করবে তবে সে শান্ত হয়ে বসে থাকে৷ ইনায়া যদি একবার আসল অপরাধীর কথা জেনে যায় তাহলে অরণ্যর এতো বছর ধরে করা সমস্ত পরিকল্পনা বৃথা যাবে, শাফায়াত মৃত্যু আর এসএস কোম্পানির আসল মালিকের নাম কখনো সামনে আসবে ন। ইনায়া আর অরণ্য আবার শএু হবে একে অপরে সব রকম চেষ্টা করবে সত্যি আর মিথ্যা আড়ালে রাখতে।

আজকে আমার পরীক্ষা ছিলো যার জন্য গল্প দিতে পারি নাই। পর্ব যথেষ্ট ছোট হয়েছে তবে কালকে বিকালে বড়ো আর রহস্য গল্প হবে আর ইভান ইনায়া অরণ্যর প্রেমের এিকোণ সমীকরণ আসবে। অপেক্ষা করবেন সবাই।

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_২৪ ( অরণ্য ইনায়ার বিচ্ছেদ)

ইনায়া রাগী স্বরে শান্ত হয়ে হাজার আবার পুলিশের কাছে শাফায়াতের মৃত্যুর ফাইলের বিষয়ে জানতে চাই, কিন্তু পুলিশ তার কথায় অটল থাকে শাফায়াতের মৃত্যুর সম্পূর্ণ ঘটনা তার বা থানার অজনা তা বলে বিদায় করে দেয় ইনায়াকে। শেষ মূহুর্তে ইনায়া মিনতি করে বলে একবার পুরানো ফাইল চেক করে দেখতে, থানায় এক কোণে থাকা তালা বন্ধ রুমে হয়তো কোথাও না কোথাও তার মামার মৃত্যুর কেনো তথ্য লুকিয়ে আছে। ইনায়া নিজের মামার খুনির বিষয়ে জানতে চাই, তার আগন্তুক শএুর পরিচয় স্পষ্ট করে সকলের সামনে তাকে দোষী প্রমাণ করতে চাই। নিজের অতীতের সকল রহস্য জানার জন্য তার মন উতলা হয়ে গেছে।

ইনায়ার সকল চেষ্টা পুলিশের কাছে ব্যর্থ হয় সে তাকে নিষেধ করে দেয় থানায় তার মামার মৃত্যুর কেনো কাগজ নাই, পুলিশ তাকে বাধ্য করে থানা থেকে বের হয়ে যেতে। পুলিশের ব্যবহার ইনায়ার কাছে অদ্ভুত লাগে, তবে অরণ্য যথেষ্ট শান্ত থাকে পুলিশের বলা প্রতিটা কথা অরণ্যর কান অবধি আসে ইনায়া মিনতি আর রাগ সবই অরণ্য শুনে। তবুও অরণ্য শান্ত সমুদ্রের মতো শান্ত থাকে, একবার প্রতিবাদ করে নাই পুলিশের কথার বিরুদ্ধে ইনায়ার দেওয়া যুক্তির পক্ষে আওয়াজ তুলে নাই।

রূপনগর থানার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে ইনায়া আর অরণ্য, বাহিরে প্রচুর রোদ তীব্র রোদে সারা গ্রাম পুড়ছে যেনো সূর্যর তেজ আজ একটু বেশিই। ইনায়ার শরীর রাগে আর রোদে পুড়ে যাচ্ছে, শরীর থেকে ঘামের বিন্দু বিন্দু কণা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। ইনায়ার ভীষণ রাগ হচ্ছে তার এখন মনে হচ্ছে সে হাজার চেষ্টা করার পর ও ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, সত্যর খোঁজার প্রয়াস করে ও সে এক বিশাল সমুদ্রের অদৃশ্য মায়ার বেড়াজালে জড়িয়ে যাচ্ছে। ইনায়া সকল ভাবনার মাঝে অরণ্যর দিকে তাকায়, সূর্যের তাপ যেমন প্রখর অরণ্যর নীরবতা তার চেয়ে ও অধিক গম্ভীর।

অরণ্যর হঠাৎ করে এমন নীরব হয়ে যাওয়ার কারণ ইনাযার যানা নেই, সকালে যেই অরণ্যর মুখে হাসি মুখে কথা বলেছে এখন তার মুখ এত শান্ত । ইনায়া বলে –

“- অরণ্য কি হয়েছে আপনার? বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে আপনি এতো শান্ত হয়ে গেলেন কেনো? আপনাকে জোর করে থানায় নিয়ে এসেছি বলে কি রাগ করেছেন এই ইনায়ার উপর?

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য তার দিকে তাকায়, শীতল চোখের চাহনি কণ্ঠে কেনো শব্দ নাই তবুও তার দৃষ্টি যেনো হাজার কথা বলে দিচ্ছে। অরণ্য চোখে এমন করে কবে তাকিয়ে দেখেছে ইনায়ার খেয়াল নাই, তবে আজ কেনো যানি অরণ্যকে তার বড্ড অচেনা লাগছে। বিয়ের পর অরণ্যর এমন শান্ত রূপের সম্মুখী তার অধিক বার হতে হয় নাই, কিন্তু আজ এমন কি হয়েছে যার জন্য অরণ্য এমন চুপ হয়ে যাচ্ছে। ইনায়া আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে –

“- অরণ্য উত্তর দেন কি হয়েছে আপনার? হঠাৎ করে আপনার চোখে মুখে এমন নীরবতা, গম্ভীরতা, আর এমন শীতল চোখের কারণ কি?

থানার সামনে থাকা দেয়ালে অরণ্য হেলান দিয়ে, নিজের শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দেয় এরপর ইনায়ার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে বিনয়ের স্বরে বলে –

“- ইনায়া আপনাকে যদি একটা অনুরোধ করে করি রাখবেন? শএু হিসাবে যদি একটা পরামর্শ দেয় শুনবেন?

অরণ্যর এমন কথা শুনে ইনায়া বুঝতে পারে অরণ্যর মনে বিশাল কোনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে, যার জন্য অরণ্য এমন শান্ত ব্যবহার করছে। ইনায়া আগ্রহ প্রকাশ করে –

“- বলুন কি অরণ্য কি এমন অনুরোধ বা আদেশ করবেন? শুনে দেখি শএুর কথায় কতো উপকার হয় আমার?

“- খুনের তদন্ত বন্ধ করে দেন। যে সত্যি খুঁজার চেষ্টা করছে তা মাটি চাপা দিয়ে দেন, মামার কবরের মতো তার মৃত্যুর রহস্য ও কবর দেন। চলুন নতুন করে আবার পথচলা শুরু করি “।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে, অরণ্য তাকে খুনিকে শাস্তি দিতে নিষেধ করছে। শুরু থেকে অরণ্য সবসময় ওর সাপোর্ট করেছে তাহলে আজ কেনো এমন ব্যবহার করছে, ইনায়ার কাছে জবাব নাই ইনায়া বলে –

“- আপনি কি বলছেন তা যানেন অরণ্য? আর কয়েকমাস পর আদালতে আমার খুনের রায়, যদি এখন এসএস গ্রুপের অপরাধীর কথা না জানতে পারি। তাহলে কালকে আমার ফাঁসি হয়ে যাবে, আপনি কি আমার মৃত্যু কামনা করেন?

“- না ইনায়া আপনার মৃত্যু হলে আমি কি করে জীবিত থাকব বলেন। তবে আসল খুনির নাম না যানলে আপনার শারিরীক মৃত্যু হবে, আর খুনির পরিচয় জানলে মানসিক। কোন মৃত্যুর কষ্ট আপনার কাছে অধিক বলে মনে হয়?

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া অবাক তাহলে কি অরণ্য যানে কে খুনি? খুনি কি তার খুব প্রিয়জন যার জন্য বলছে ইনায়ার কষ্ট হবে। কিন্তু তার পরিচয় কে খুনি হতে পারে? তার শএু হয়ে মৃত্যু কামনা করতে পারে? ইনায়ার উত্তর জানা নাই। ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আপনি কি যানেন মামার খুন করে করছে? আসল অপরাধী কে? সে কি আমার আপনজন?

অরণ্য শান্ত গলায় বলে –

“- যদি বলে যানি তাহলে? যদি বলি সে আপনার আপনজন তখন কি তার পরিচয় খোঁজা বন্ধ করে দিবেন?

“- কে সে? তার নাম কি? কে খুন করেছে আমার মামাকে? এসএস কোম্পানির মালিক কে? শহরের এতো নিরপরাধ শিশুকে খুন কে করেছে? এমন পাষাণ হৃদয় কার?

“- যদি না বলি?

“- আমার উত্তর চাই?

“- আপনার উত্তর চাই না আমাদের সংসার। ইনায়া যদি এই খুনের তদন্ত আপনি শুরু করেন তবে হারাতে হবে আমাকে। ফিরে যেতে হবে আবার চৌধুরী বাড়িতে, শএু ভেবে ঘৃণা করতে হবে আমাকে?

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার মাথায় শুধু একটা কথা আসে সে জিজ্ঞেস করে ফেলে –

“- তাহলে কি আপনি খুন করেছেন শাফায়াত মামার? এসএস কোম্পানির খাবারে বিষ মিশিয়ে কি নিষ্পাপ বাচ্চাদের খুন করেছেন? এতো জঘন্য অপরাধ কি করেছেন আপনি অরণ্য “।

“- যদি আমার উত্তর হ্যা হয় তাহলে কি করবে? ছেড়ে চলে যাবেন আমাকে ডিভোর্স দিবেন আমাকে? আবার ইভান চৌধুরীর বউ হয়ে যাবেন?

“- হুম হয়ে যাব “।

অন্যদিকে ইভান রুম থেকে বের হয় নাই আজ তার মনে ভীষণ আঁধার জমে রয়েছে, তার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে যা দেখে বোঝা যায় সে সারারাত নিঘুমে কাটিয়ে দিয়েছে। সকালে সূর্যের আলো ইভানের চোখ মুখে পড়ে ইভান শ্বাস ফেলে বল৷ –

“- যার জন্য আমি হাজারো রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিলাম, সে হয়তো অন্য কারো বুকে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। চাওয়ার অধিকার সবার থাকলে, ও পাওয়া ভাগ্য সবার থাকে না। কি করে পাওয়া যায় এমন ভাগ্য যে ভাগ্যে আপনি আমার হবেন ইনায়া “।

ইভান কথাটা ভেবে মৃদু হাসে সেই হাসির মধ্যে কতো দুঃখ লুকিয়ে রাখা ছিলো, তা সবার অজানা। প্রতিটা মানুষ জীবনে একবার ভুল করে, কিন্তু তার ভুলের শাস্তি সরূপ কি তার প্রিয় মানুষকে নিজের জীবন থেকে কেঁড়ে নেওয়া উচিত। কিন্তু ইনায়াকে কেউ ইনায়ার জীবন থেকে জোর করে কেঁড়ে নিয়ে যায় নাই, ইভান সব ইচ্ছায় তাকে অন্যর হাতে তুলে দিয়েছে। তবে আজ কেনো তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য এতো হাহাকার, কেনো তার সাথে জীবন কাটানোর এক আকাশ পরিমাণ ইচ্ছা ইভানের। সব কথার কেনো উত্তর যানা নাই ইভানের, শুধু বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে শ্বাস ফেলার জন্য ও ইনায়ার প্রয়োজন তার জীবনে।

সকালে অফিসে যেতে হবে যার জন্য বিছানা থেকে উঠে বসে, সারারাত অনিদ্রা যাপন করার জন্য তার চোখ খুলছে না। তবুও দায়িত্ব পালন তাকে করতে হবে, যার জন্য সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অন্যদিকে ইনায়া অরণ্যর কথা শুনে চোখ পানি চলে আসে, যেই অরণ্য কাল অবধি ইভানের নাম তার মুখে শুনে খুন করার ধমক দিয়েছে। আজ তার সামনে থাকা সেই অরণ্য ইভানের জীবনে তাকে ফিরে যেতে বলছে অবিশ্বাস্য, ইনায়া তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে –

“- আপনারা পুরুষ জাতি এমন কেনো, যখন যার প্রয়োজন হয় তখন ব্যবহার করেন। আবার ছুঁড়ে ও ফেলে দেন। যানেন প্রিয়জন আর প্রয়োজন কথাটার মধ্যে বিশাল পাথর্ক্য। কারো প্রিয়জন হতে পারি নাই কখনো হবে প্রয়োজনে সবার শীর্ষ তালিকায় ছিলাম আমি “।

#চলবে