#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#লেখনীতে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_২৮ [ রোমান্টিক খুনসুটি ]
[ সময় – রাত ১২ঃ০০ ]
রাতের আকাশে তালুকদার বাড়ির সকলে এখন ঘুমে আচ্ছন্ন রয়েছে, রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে সম্পূর্ণ বাড়ি শান্ত। তালুকদার বাড়ির সকল বৃদ্ধ মহিলা ঘুমিয়ে পড়েছে, সকলে ফজরের নামাজের জন্য উঠে যার কারণে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়ির এক রুমে ইনায়া আর অরণ্য পাশাপাশি অবস্থান করছে, যদিও তাদের মধ্যে বিশাল দুরত্ব রয়েছে। মধ্য রাতে হঠাৎ কারো কণ্ঠ শুনে ইনায়ার ঘুম ভেঙে যায়, চোখ খুলে উপলব্ধি করতে পারে অরণ্যর কণ্ঠ। ইনায়া পাশ ফিরে অরণ্যর দিকে তাকিয়ে দেখে, অরণ্য তার শরীরে থাকা কাঁথা শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে।
ইনায়া অল্প সময় পর উপলব্ধি করে, মধ্যে রাতে যে কণ্ঠ সে শুনেছে তা আর কারো না অরণ্যর। ইনায়া অরণ্যর মধ্যে দুরত্ব মাএা কমিয়ে ওর কাছে যায়, অরণ্যর মাথায় আলতো করে হাত রাখে। ইনায়ার সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হয় অরণ্যর শরীরে জ্বর এসেছে, অরণ্যর সারা শরীরে ইনায়া ছুঁয়ে বুঝতে পারে জ্বরের তীব্রতা অনেক। অরণ্যর শরীর রীতিমত জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, ইনায়ার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। বিকালে বৃষ্টির পানি কারণে অরণ্যর শরীরে এতো জ্বর হয়েছে।গ্রামের মধ্যে রাত বারোটার সময় ডক্টর বা ঔষধ পাওয়া অসম্ভব, খাবার খায়িয়ে যখন অরণ্যকে ঔষধ খেতে বলেছে। তখন অরণ্য জেদ করে ঔষধ খায় নাই, এই সামান্য বৃষ্টির পানির ফোঁটায় তার জ্বর আসবে না বলে দেয়।
ইনায়ার এখন অরণ্যর উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে, আবার অরণ্যর জ্বরে পুড়ে যাওয়া শরীর আর ওর অসহায় মুখ থেকে মায়া লাগছে। অরণ্যর শরীর থেকে হাত সরিয়ে নেয় ইনায়া, এরপর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ওয়াশরুম চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি আর টাওয়াল ভিজিয়ে নিয়ে আসে, এরপর অরণ্যর মাথার কাছে বসে ওকে মৃদু স্বরে ডাক দেয় –
“- অরণ্য উঠুন অরণ্য। আপনার শরীরে অনেক জ্বর এসেছে, একবার পানি দিয়ে গাঁ মুছে দিলে শরীর থেকে জ্বরের তীব্রতা কমে যাবে “।
ইনায়ার কথা অরণ্যর কান অবধি পৌঁছায় নাই, কারণ অরণ্যর শরীরে জ্বরের তীব্রতা বেড়ে গেছে সে এখন অজ্ঞান প্রায়। প্রায় পাঁচ মিনিট ইনায়া অরণ্যকে ডাকে, তবে অরণ্যর শরীর কোনো রেসপন্স করে না। ইনায়া বাধ্য হয়ে অরণ্যর শরীরে পানি দিয়ে আলতো করে মুছিয়ে দিতে থাকে। অরণ্য হাত পা পানি দেওয়ার পর এইবার অরণ্যর শার্টের বাটনের উপর হাত দেয় ইনায়া। ইনায়া সংকোচ বোধ করে অরণ্যর শরীরে এমন করে টার্চ করার জন্য, কিন্তু অরণ্যর অসুস্থতা আর জ্বরের তীব্রতার কাছে সে বাধ্য হয়।
ইনায়া সযত্নে অরণ্যর শার্টের প্রথম বাটান খুলে, অরণ্য তার স্বামী তাকে সামান্য স্পর্শ করার অধিকার রয়েছে ইনায়ার। তবুও তার মন থেকে সংকোচ আর ভয় কাটে নাই। ইনায়া কাঁপা কাঁপা হাতে অরণ্যর বুকের অংশ আবৃত করে। অরণ্যর বুকে অল্প অল্প পশম রয়েছে, যদিও তা ভীষণ সুন্দর। অরণ্যর বুক তাকে বড্ড আকর্ষণ করছে। ইনায়ার ইচ্ছা করছে এই বুকে তার ঠোঁট ছুয়েঁ দিতে, সারাজীবন স্বামীর বুকের মধ্যে অবস্থান করতে। তবে ইনায়া নিজের ইচ্ছা আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে বালতির পানি দিয়ে টাওয়াল ভিজিয়ে নেয়। এরপর সযত্নে অরণ্যর সারা শরীরে মুছে দেয়, অরণ্যর শরীরে ঠান্ডা অনুভব করে। জ্বরের মধ্যে শরীরে এমন ঠান্ডা অনুভূতি তার ভালো লাগছে, ইনায়া অরণ্যর দিকে তাকিয়ে দেখে।
অরণ্যর এমন মায়াবী রূপ ইনায়া আগে কখনো খেয়াল করে নাই, একজন পুরুষকে জ্বরের মধ্যে যে এতো সুন্দর লাগতে পারে তা ইনায়ার বোধহয় জানা ছিলো না। ইনায়া ঠোঁটে মৃদু হাসি বজায় রেখে অরণ্যর মাথায় পানি দেয়। এরপর আবার ওয়াশরুমে চলে বালতি আর পানি রেখে আসে, তবে টাওয়াল পাশে থাকা টেবিলে রেখে দেয়। অরণ্যর শরীর অল্প উঁচু করে তার শরীর থেকে শার্ট সরিয়ে দেয়। জ্বরের মধ্যে যদি শরীরে কোনো জামা কাপড় না থাকে, তাহলে জ্বরের তীব্রতা কমে যায়। ইনায়া অরণ্যর কপালে থাকা চুলে সরিয়ে দেয়, তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
অরণ্যর শরীর এখন ভালো লাগছে, শরীরে শীতল ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। ইনায়া অরণ্যর কপালে চুল সরিয়ে সেখানে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়, আজ প্রথম কোনেন পুরুষ মানুষকে কপাল তার ঠোঁট স্পর্শ করছে। প্রায় সারারাত অরণ্যর সেবা যত্ন করে ইনায়া, প্রায় দশ মিনিট পর পর অরণ্যর শরীর মুছিয়ে দেওয়া, তার মাথায় পানি দেওয়া। ফজরের আজানের সময় অরণ্যর শরীরে জ্বর কমে যায়, আর সারারাত নির্ঘুম থাকার কারণে ইনায়ার চোখে ঘুম এসে পড়ে।
[ সকাল নয়টা চৌধুরী বাড়ি ]
চৌধুরী বাড়ির সকলে খাওয়া দাওয়া করার জন্য টেবিলে উপস্থিত হয়, মূলত এই সকালে তাদের একে অপরের সাথে দেখা হয়। অরুণা বেগম রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে রাখে, অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে ইভান। ইভান খাবার টেবিলে বসে অরুণা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে –
“- আম্মু তুমি প্রভাকে থাকার জন্য ইনায়ার রুম কেনো দিয়েছ? চৌধুরী বাড়িতে গেস্ট রুম বা নরমাল রুমের অভাব পড়েছে?
অরুণা বেগম যানে ইভান এমন কথা তাকে জিজ্ঞেস করবে। অরুণা বেগম বলে –
“-প্রভা এই বাড়ির অতিথি। আর প্রভার আজ সকালে আসার কথা ছিলো কিন্তু ও তাড়াতাড়া করে কালকে সকালে চলে এসেছে। যার জন্য কোনো ভালো রুমের আয়োজন করা হয়ে উঠে নাই, যার জন্য ইনায়ার রুমে অল্প দিনের জন্য থাকবে ও।
ইভান খাবার টেবিলে বসে মায়ের সাথে আর কোনো কথা বলে না, সে খাবার খাওয়া শেষ হলে অফিসের জন্য রওনা দেয়।
চৌধুরী বাড়ির সামনে ইভানের গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে, বাড়ির সদর দরজা পার হয়ে ইভান গাড়িতে উঠে বসে। ড্রাইভার যখন গাড়ি ছাড়বে অফিসের উদ্দেশ্য তখন, একজন মেয়ে এসে গাড়ির কাচেঁর জানলায় নক করে। ইভান বিরক্ত করে কাচঁ সরিয়ে দেয় সেখানে আর কেউ না প্রভা ছিলো। ইভান বলে –
“- কি হয়েছে প্রভা? গাড়ির কাচেঁ এমন শব্দ করছেন কেনো?
ইভানের কথার উত্তরে প্রভা বাচ্চাদেন ন্যায় বলে উঠে –
“- সরি ইভান আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। কিন্তু আজকে আমি চৌধুরী কোম্পানি জয়েন করব, সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে রেডি হতে দেরি হয়ে গেছে। যখন আপনি অফিসে যাবেন আর আমি ও যাব। আমরা কি একসাথে যেতে পারি?
প্রভার কথা শুনে ইভান যথেষ্ট বিরক্ত হয়, ছোটবেলা থেকে মেয়েদের থেকে যথেষ্ট দুরত্ব অবলম্বন করে সে চলেছে। তবে ইভান প্রভার উত্তরে না করতে পারবে না, কারণ প্রভা বাড়ির অতিথি। ইভান বলে –
“- ওকে গাড়িতে উঠে বসুন “।
ইভানের সম্মতি পেয়ে প্রভা গাড়িতে উঠে বসে, ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করে। ইভান আর প্রভা দুইজনে নীরব। তবে প্রভার চোখে মুখে এখনো ঘুম রয়েছে। বিদেশে তার এতো সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস নাই, যার জন্য প্রভা গাড়িতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুম কাটানোর চেষ্টা করে। প্রায় দশ মিনিট পর ইভান খেয়াল করে প্রভা ঘুমিয়ে পড়েছে, তবে তার মাথা গাড়ির ঝাঁকুনির কারণ পড়ে যাচ্ছে। ইভান তার হাত দিয়ে প্রভার ঘুমন্ত মুখ ধরে ফেলে, এরপর এগিয়ে গিয়ে যায় প্রভার কাছে। ঘুমন্ত প্রভা তার মাথা রাখে ইভানের কাঁধে, ইভান প্রথমে বিরক্ত হয় পরে প্রভার ঘুমন্ত মুখ দেখে শান্ত হয়ে যায়। বাচ্চা মেয়েদের মতো ঘুমিয়ে রয়েছে প্রভা, ইভান যা দেখে মৃদু হাসি দেয়।
[ তালুকদার বাড়ি ]
সকালের মিষ্টি রোদ অরণ্যর চোখে পড়ে, অরণ্য ঘুম ভেঙে যায় চোখ খুলে তার মাথা ব্যাথা করছে। অরণ্য টেবিলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল নয়টা বেজে গেছে, অরণ্য যখন বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে। তখন তার চোখ যায় তার বুকে ঘুমিয়ে থাকা ইনায়ার দিকে, অরণ্যর বুক জুড়ে ইনায়ার দখল রয়েছে। অরণ্য প্রথমে অবাক হয় কারণ তার শরীরর শার্ট না থাকায়, পরে ঘরের মধ্যে মগ আর ভিজা টাওয়াল দেখে বুঝে যায় বৃষ্টির পানি শরীরে পড়ার কারণে তার জ্বর এসেছে। প্রায় অনেক সময় অরণ্য ইনায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে, এরপর ভাবে যদি ইনায়া ঘুম থেকে উঠে তাদের দুইজনকে এমন অবস্থায় দেখে তাহলে অনেক লজ্জায় পড়ে যাবে।
অরণ্য নিজের বুকের উপর থেকে ইনায়ার শরীর ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, যার ফলে ইনায়ার ঘুম ভেঙে যায়। তবে সারারাত জেগে থাকার কারণে সে ভীষণ টার্য়াড
যার জন্য ইনায়ার বিরক্ত হয়ে বলে –
“- ওম অরণ্য কি করছেন? আর একটু ঘুমাতে দেন? এতো তাড়াতাড়ি উঠে কি করব শুনি?
ইনায়ার জবাব শুনে অরণ্য অবাক, তাহলে কি ইনায়া সজাগ থাকা অবস্থায় ইচ্ছা করে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরেছে। অরণ্য বলে –
“- ইনায়া আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছেন?ঘুম থেকে উঠলে কিন্তু আমাকে দোষ দিবেন না?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া শক্ত করে অরণ্যকে জড়িয়র ধরে, ওর বুকের পশমে মাথা নেড়ে জবাব দেয় –
“- আপনি আমার স্বামী অরণ্য। নিজের স্বামীকে জড়িয়ে ধরার অধিকার কি আমার নাই, এখন আমাকে ঘুমাতে দেন।
ইনায়ার এমন জবাব শুনে অরণ্য অবাক হয়, তবে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠে। অরণ্য ইনায়াকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে, যেনো ছেড়ে দিলে ইনায়া পালিয়ে যাবে। ঘুমের মধ্যে ইনাযার মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে, ওর গাল দুটো লাল হয়ে যকয়। অরণ্য বলে –
“- অবশ্যই নিজের স্বামীকে জড়িয়ে ধরার অধিকার ইনায়ার রয়েছে। কারণ এই অরণ্য রাজ চৌধুরী শুধু ইনায়ার। শুধু মাএ তার বিবাহিত বউয়ের। এখন ঘুমান যতখন ইচ্ছা “।
#চলবে।
#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_২৯
[ সকাল -১০:০০ ]
তালুকদার বাড়ির রুমের এক দরজায় অনেক সময় ধরে একজন নক করে যাচ্ছে, কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ বা কোনো বক্ত্যি দরজা খুলে দিচ্ছে না। অরণ্য আর ইনায়া অনেক সময় ধরে ঘুমিয়ে রয়েছে, মূলত তাদের রুমের দরজায় বারবার নক করে যাচ্ছে একজন বৃদ্ধ মহিলা। সকাল দশটা বেজে গেছে কিন্তু অরণ্য আর ইনায়া ঘুম থেকে উঠে নাই, দরজা খুলে নিচে খাবার খেতে আসে নাই। যার জন্য বৃদ্ধ মহিলা টেনশন করছে, দরজার শব্দ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। ঘুমের মাঝে দরজায় এমন শব্দ শুনে যথেষ্ট বিরক্ত হয় অরণ্য, কপাল কুঁচকে চোখ খুলে দেখে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে ইনায়া।
ঘুমন্ত ইনায়াকে দেখে অরণ্যর বিরক্ত হয়ে যাওয়া চেহারা বদলে যায়, অরণ্য ইনায়ার দিকে এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত ইনায়াকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে, ইনায়ার কপালে আসা ছোট ছোট চুল কানের পিছনে গুঁজে দেয় অরণ্য। কিন্তু দরজার শব্দের কারণে তাদের মধুর সময় খুব বেশি স্থায়ী হয়ে উঠে নাই। অরণ্য বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, এরপর শরীরে শার্ট জড়িয়ে দরজার কাছে যায়। অরণ্য দরজা খুলে দেয় সামনে কয়েকজন বৃদ্ধ মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে, অরণ্য সৌজন্যে রক্ষায় হাসি মুখে বলে –
“- কি হয়েছে নানু মণিরা কোনো সমস্যা?
বৃদ্ধ মহিলারা রুমের ভিতরে তাকিয়ে দেখে ইনায়া ঘুমিয়ে রয়েছে, আর অরণ্যকে দেখে মনে হচ্ছে সে সুস্থ আছে বৃদ্ধ মহিলারা বলে –
“- সরি অরণ্য বাবা তোমাদের বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত, আসলে সকাল দশটা বেজে গেছে কিন্তু তোমরা খাবার খেতে আসো নাই। যার জন্য ডাকতে এসেছি তোমাদের “।
অরণ্য বৃদ্ধ মহিলার চিন্তার কারণ বুঝতে পারে অরণ্য বলে –
“- আসলে কালকে বৃষ্টিতে ভিজার কারণে রাতে আমার অনেক জ্বর হয়, ইনায়া সারারাত জেগে আমার সেবা যত্ন করে। যার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যান, আপনারা যান ইনায়া আর আমি নিচে খাবার খেতে আসছি.
বৃদ্ধ মহিলা অরণ্যর মুখে জ্বরের কথা শুনে বলে –
“- জ্বর কি এখনো আছে তোমার অরণ্য? গ্রামে ডক্টর রয়েছে ওনাকে কি কল করব?
“- না জ্বর এখন কমে গেছে টেনশন করবে না আপনারা “।
বৃদ্ধ মহিলারা অরণ্যর জ্বর কমে গেছে শুনে সসত্ত্বির শ্বাস নেয়, তারা সকলে নিচে চলে যায় অরণ্য রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। অরণ্য আবার বিছানায় ফিরে আসে ইনায়ার কাছে, ওর কাছে এসে জড়িয়ে ধরে ইনায়াকে এরপর ডাক দেয় ইনায়াকে –
“- ইনায়া ঘুম থেকে উঠুন ইনায়া। সকাল দশটা বেজে গেছে তাড়াতাড়ি উঠুন “।
অরণ্যর ডাক শুনে ইনায়ার ঘুম ভেঙে যায়, ইনায়া পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে থাকা অরণ্যর দিকে তাকিয়ে দেখে। অরণ্য তার দিকে ঝুঁকে রয়েছে, সকালে অরণ্যকে এমন করে জড়িয়ে ধরার কথা মনে হয়ে লজ্জায় গাল লাল হয়ে যায়। তবে কাল রাতে অরণ্যর জ্বরের কথা মনে হতেই ইনায়া তার হাত দিয়ে অরণ্যর কপালে ছুয়েঁ দেখে। অরণ্যর শরীরে এখন আর জ্বর নাই, কালকে রাতে অরণ্যর জ্বরের যে তীব্রতা ছিলো ইনায়া ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলো। সারারাত মাথায় পানি আর জল পট্রি দেওয়ার কারণে জ্বর কমর গেছে। ইনায়া বলে –
“- অরণ্য এখন আপনার শরীর কেমন লাগছে? আর সকালে জ্বরের ঔষধ খেতে হবে, আপনি ফ্রেশ হন আমি খাবার নিয়ে আসি “।
ইনায়া কথাটা বলে যখন ঘুমু ঘুমু অবস্থায় বেড থেকে উঠতে যাবে, তখন অরণ্য ওর হাত ধরে ফেলে। অরণ্য ইনায়ার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে আর বলে –
“- কি ব্যাপার মিসেস ইনায়া কাল সারারাত এই অরণ্য চৌধুরীর সেবা করলেন? আবার সকালে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লেন? এখন তার শরীরের এতো চিন্তা করছেন? কোথাও অরণ্য রাজ চৌধুরী প্রেমে পড়ে গেলেন না তো আপনি?
অরণ্যর এমন কথায় ইনায়া বিরক্ত হয় না বরং সে হেঁসে জবাব দেয় –
“- যদি প্রেমে পড়ে যায় তাহলে অসুবিধার কিছুই দেখছব না আমি। বিয়ের পর স্বামীর প্রেমে পড়ে যাওয়া জায়েজ আছে, আর শএুর যত নিকটে যাবে তত তার দুর্বলতার বিষয়ে জানা যাবে “।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য আর ইনায়া দুইজনে হেঁসে দেয় এরপর ইনায়া বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। অন্যদিকে ইভানের গাড়ি অফিসের সামনে এসে দাঁড়ায়।
#চলবে
#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#লেখনীতে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৩০ [ ইনায়া আর ইভানের দেখা ]
তালুকদার বাড়িতে আজ শফিক সাহেবের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে কয়েকজন মাদ্রাসার ছাএ, গ্রামের কিছু মানুষকে খাওয়ানো হবে। প্রতি বছর এই দিনে তালুকদার বাড়িতে গরীর দুঃখী মানুষকে খাওয়ানো হয়, যতদিন ইনায়ার নানু বেঁচে ছিলেন ওনি তার স্বামীর আত্মার মাগফিরাত কামনার জন্য তার মৃত্যু বার্ষিকীর দিন অনুষ্ঠান করতেন। এরপর থেকে বৃদ্ধ আশ্রমের মহিলারা এই দিনে গ্রামের মানুষ সহ গরীর দুঃখীদের খাওয়ার। আজ ইনায়া আর অরণ্য আছে বলে আরো সুন্দর আর বড়ো করে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।
বৃদ্ধ আশ্রমের সকলে এখন বাড়ির সদর দরজায় বসে দুপুরের রান্নার জন্য তরকারি কাটাকুটি করছে, আর বাড়ির গিন্নির মতো রান্না ঘরে রান্না করছে ইনায়া। ছোটবেলা থেকে ইনায়া রান্না করতে পারে, কিন্তু পড়াশোনা আর বিজনেস দুইটা একসাথে সামলাতে হতো দেখে সে সারাদিন বিজি থাকত। আর অরুণা বেগম ইনায়াকে কখনো রান্না ঘরে যেতে দেয় নাই, চৌধুরী বাড়ির সকল রান্না অরুণা বেগম করেন। তবে ইনায়া সব রান্নায় করতে পারে, আর তার রান্না করা খাবার যথেষ্ট সুস্বাদু হয়।
বাড়ির সকলে তাদের কাজে বিজি এখন, অরণ্য সকলের খাওয়া দাওয়া বিষয়টা দেখছে। প্রচুর গরম পড়েছে, কালকে বৃষ্টির পর আজ রোদের তীব্রতা দিগুণ হয়ে গেছে। বাহিরে রোদের মধ্যে অরণ্য সব কাজ করে টার্য়াড হয়ে গেছে, যার জন্য সে বিশ্রাম নিতে ভিতরে আসে। সদর দরজায় কাজ করা কয়েকজন বৃদ্ধ মহিলাকে ইনায়ার কথা জিজ্ঞেস করে। তারা বলে ইনায়া রান্না ঘরে রান্না করছে, অরণ্য সেখানে যায়। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে ইনায়া কমড়ে কাপড় গুঁজে পাক্কা রাধুঁনির মতো রান্না করছে, বিয়ের পর আজ প্রথম ইনায়াকে রান্না ঘরে যেতে দেখেছে অরণ্য।
রান্না ঘরে গরমে ইনায়ার শরীর দিয়ে ঘাম ঝড়ে পড়ছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। বাহিরে যা রোদ তারপরও গ্রামের রান্নাঘর খড়ি দিয়ে রান্না করতে হয়। যার কারণে ইনায়ার আরো বেশি গরম করছে, তবুও সে রান্না করে যাচ্ছে। তবে অরণ্য ইনায়াকে দেখে সবসময়ের মতে্ মুগ্ধ হয়ে যায়, প্রেমে পড়লে মনে হয় ভালোবাসার মানুষকে সকল পরিস্থিতিতে সুন্দর লাগে। অরণ্য ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে রান্না ঘরে ইনায়ার কাছে যায়, ইনায়ার পিছনে দাঁড়িয়ে ওর বেঁধে রাখা খোপা করা চুল ছেড়ে দেয়।
রান্না করার মধ্যে হঠাৎ করে চুল খুলে যাওয়ার কারণ ইনায়া যথেষ্ট বিরক্ত হয়, এমনি গরমের মধ্যে রান্না করছে এখন চুলের কারণে আরো বেশি গরম করছে। ইনায়া যখন রান্না করা রেখে তার চুল বাঁধতে যাবে, তখন অনুভব করে তার পিছনে একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইনায়া পিছনে ঘুরে দেখে অরণ্য সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার ঠোঁটে মুচকি হাসি। ইনায়ার আর বুঝতে বাকি থাকে না তার শক্ত করে বাঁধা চুল কি করে খুলে গেছে, ইনায়া রাগী স্বরে বলে –
“- অরণ্য কি করছেন আপনি এখানে? আর গরমের মধ্যে মাথার চুল কেনো খুলে দিলেন? যানেন কতো গরম করছে আমার?
ইনায়া কথাটা রাগী স্বরে বলে কিন্তু অরণ্যর ঠোঁটর কোণে এখনো মুচকি হাসি রয়েছে, গরমের মধ্যে ইনায়ার কপালে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম আর ইনায়ার রাগী চোখ সব মিলিয়ে ইনায়াকে অনেক সুন্দর লাগছে। অরণ্য শুধু ভাবে তার বউ এতো সুন্দর কেনো? রান্না করা অবস্থায় কি কোনো মহিলাকে এতো সুন্দর লাগতে পারে? এমনি বাহিরে যে গরম তার উপর তার বউয়ের এমন রূপ কোথাও এতো রূপের আগুনে অরণ্য পুড়ে না যায়। ইনায়ার কথায় অরণ্য কোনো উত্তর দেয় না, কারণ অরণ্য এক দৃষ্টিতে ইনায়াকে দেখে যাচ্ছে আর ওর ভাবনায় বিভোর হয়ে যাচ্ছে।
ইনায়া খেয়াল করে দেখে অরণ্যর মুখ লাল হয়ে গেছে, তার শরীর সম্পূর্ণ ঘামে ভিজে গেছে। ইনায়া মূহুর্তের মধ্যে তার রাগ ভুলে যায়, বাহিরে অনেক সময় রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করার জন্য হয়তো অরণ্যর গরম লাগছে। ইনায়া বলে –
“- অরণ্য আপনি এতো সময় বাহিরে রোদের মধ্যে কেনো কাজ করছেন? দেখেন চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে? রুমে যান আপনি আমি লেবুর জল নিয়ে আসছি “।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য রুমে যায় না বরং সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে, ইনায়া রান্না ঘর থেকে বের হয়ে যখন ফ্রি থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসতে যাবে তখন অরণ্য ওর হাত ধরে ফেলে। অরণ্য বলে –
“- বউ তুমি এতো সুন্দর কেনো? বিশ্বাস করো বউ তোমর এই রূপের তেজ আর সয্য করা যাচ্ছে না। দেখা যাবে তোমার রূপের গরমে এই অরণ্য রাজ চৌধুরী কোথায় পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে? তখন কিন্তু তুমি বিধবা হয়ে যাবে বউ “।
অরণ্যর মুখে বউ তার তুমি ডাকটা শুনে ইনায়ার লজ্জায় লাল দুটি লাল হয়ে যায়, আর তার হাসি ও পায় অরণ্যর কথা শুনে। লোকটা সত্যি অদ্ভুত ভিন্ন সময় ভিন্ন রূপ তার, এক সময় মজার কথা বলবে সবসময় তার মুখে হাসি থাকবে। আর অন্য সময় হলে গম্ভীর হয়ে যাবে, তবে অরণ্যর ঠোঁটে হাসি দেখতে ইনায়ার অনেক ভালো লাগছে।
। অরণ্য ইনায়ার দিকে সামান্য এগিয়ে আসে আলতো হ্তে তার গাল ছুঁয়ে দেয়, ইনায়ার হুঁশ ফিরে আসে সে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে, যদি বৃদ্ধ কোনো মহিলা এখানে হঠাৎ করে চলে আসে। তখন কি হবে? ইনায়া আবার রাগী স্বরে বলে –
“- অরণ্য কি করছেন আপনি? দূরে সরুন? বাড়িতে কদো মানুষ কেউ যদি রান্না ঘরে চলে আসে তখন কি হবে?
“- সো হোয়াট ইনায়া বউ হন আপনি আমার। বিয়ের পর জামাই বউ একটু রোমান্স করবে সেটা স্বাভাবিক বিষয় “।
অরণ্যর কথা শুনে ইনাযা বলে –
“- এইটা আপনার রুমে নয় রান্না ঘরে।
“- তাহলে রুমে চলেন সেখানে গিয়ে রোমান্স করি।
অন্যদিকে চৌধুরী কোম্পানির এমডির চেয়ারে বসে গভী মনোযোগ কাজ করছে ইভান। অফিসের সকল দায়িত্ব এখন সে পালন করে, আর প্রভা তার কেবিনে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। প্রভাকে সে তার পারসোর্নাল এসিস্ট্যান্টে হিসাবে নিয়োগ করছে, কারণ অফিসে আর কোনো পোস্ট খালি ছিলো না। প্রভা ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে, ইভান তার মনোযোগ কাগজের উপর থেকে সরিয়ে সামনের দিকে তাকায়। ইভানের চোখ যায় প্রভার দিকে, প্রভা কাজ করে যাচ্ছে তার দিকে যে ইভান তাকিয়ে রয়েছে সেই বিষয়ে তার কোনো খেয়াল নাই।
ইভান এক দৃষ্টিতে প্রভার দিকে দেখতে থাকে, মেয়েটা অনেক সুন্দরী তবে তার ইনায়ার চেয়ে কম। তার ইনায়া কথাটা বলতে গিয়ে ইভান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এতোদিনে হয়তো ইনায়া অরণ্যকে ভালোবেসে ফেলেছে, অবশ্য স্বামী হয় তার একদিন একদিন তো প্রেমে পড়বেই। ইভান তার ভুলের কারণে ইনায়াকে হারিয়ে ফেলেছে, ছোটবেলার থেকে জীবনে সবকিছু সে পেয়েছে। শুধু ইনায়াকে ছাড়া, এই জীবনে ইনায়া ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে টারবে কি না তা ইভান যানে না।
#চলবে