তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-৩১+৩২

0
4

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৩১ [ নতুন রহস্য ]

বিকাল চারটা বাজে তালুকদার বাড়ির অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে, এখন ইনায়া আর অরণ্য বিদায় নিয়ে চলে আসবে। বৃদ্ধ আশ্রমের মহিলারা অনেক অনুরোধ করেছে, তাদের অল্প কয়েকদিন থেকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু অরণ্যর অফিস রয়েছে এখানে বেশিদিন থাকা সম্ভব নয়, আবার ইনায়ার আদালতের তারিখের সময় প্রায় শেষের দিকে। এইদিকে শাফায়াতের মৃত্যু আর এসএস কোম্পানির খাবারে বিষ কে দিয়ে তা জানা যায় নাই। রূপনগর গ্রামে যে উদ্দেশ্য এসেছে তা সফল হয় নাই, শাফায়াতের মৃত্যুর রহস্য সমাধান হয় নাই। আড়ালে লুকিয়ে থাকা আগন্তুকের পরিচয় এখনো সামনে আসে নাই, যার জন্য ইনায়া আর অরণ্য এখানে বেশি দিন থাকতে পারবে না।

আদালতের নোটিশের মেয়াদ শেষ হবার আগেই আসল অপরাধীর পরিচয় যানতে হবে, তালুকদার বাড়ির সমস্ত সম্পত্তির উত্তর অধিকারী সূএে মালিক ইনায়া। সম্পত্তির সমস্ত হিসাব ইনায়া পৌরসভায় গিয়ে কালেক্ট করছে, আর তালুকদার বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ মহিলাদের জন্য এই বাড়িটায় থাকার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। বৃদ্ধ মহিলারা সকলে ইনায়া আর অরণ্যকে বিদায় দেয়, তারা রূপনগর গ্রাম থেকে চলে আসে। শহরে যাওয়া উদ্দেশ্য গাড়ি রওনা দেয়, এখন রাস্তায় ট্রেনের মধ্যে অবস্থান করছে ইনায়া আর অরণ্য।

অন্যদিকে ইভান চৌধুরী বাড়িতে ফিরে এসেছে, প্রভা আর ইভান একসাথে এসেছে। প্রভা যথেষ্ট শান্ত মেয়ে, তবে ইভান তার চেয়েও বেশি শান্ত। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা ইভানের পছন্দ নয়, প্রভা যথেষ্ট কর্মঠ আর পরিশ্রম মেয়ে। বিজনেসের বিষয়ে তার বেশ ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিদেশ থেকে বিজনেসর উপর সট্রাডি করে এসেছে।

[ রাত ৯: ০০]

অরণ্যর গাড়ি এসে থামে তার বাড়ির সামনে, ট্রেন থেকে নেমে গাড়িতে উঠে বসে ইনাযা আর অরণ্য। রূপনগর গ্রাম থেকে শহরের রাস্তা অনেক, যার জন্য রাত নয়টা বেজে গেছে। ইনায়া গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে, সারাদিন রান্না করা,সহ গ্রামের এতো মানুষকে খাওয়ানো আর অধিক সময় গাড়িতে বসে থাকার কারণ তার শরীর অনেক টার্য়াড হয়ে গেছে। যার জন্য সে গাড়িতে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে, অরণ্য গাড়িতে বসে সারা রাস্তা ইনায়ার ঘুমন্ত মুখ দেখে কাটিয়ে দিয়েছে। তার মায়াবতী বউয়ের প্রতি তার মুগ্ধতা যেনো হাজার জন্ম চলে গেলে ও কমবে না। বাড়ির সামনে গাড়ি এসে দাঁড়ায়, অরণ্য দেখে ইনায়া এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে। অরণ্যর ইচ্ছা করে না ইনায়াকে ডাক দিতে, কিন্তু বাড়ির ভিতরে যেতে হবে যার জন্য অরণ্য শান্ত স্বরে ডাক দেয় –

“- ইনায়া ইনায়া “।

অরণ্যর ডাক শুনে ইনায়ার ঘুম অল্প ভেঙে যায়, তবে সে চোখ খুলে তাকায় না। শুধু একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে, অরণ্য বুঝতে পারে তার বউ গভীর ঘুমিয়ে তলিয়ে গেছে। অরণ্য মুচকি হাসি দেয় এরপর আলতো করে ইনায়াকে কোলে তুলে নেয়। ইনায়া অরণ্যর বুকে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে, অরণ্য ঘুমন্ত ইনায়াকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায় নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় ইনায়াকে শুয়িয়ে দেয়, এরপর সে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সে রুমের বাহিরে চলে যায়, ইনায়া বিছানায় ঘুমিয়ে রয়েছে।

চৌধুরী বাড়িতে সকলে রাতের খাওয়া দাওয়ার জন্য রেডি হয়, কিন্তু ইভান আর প্রভা তাদের রুমে বসে আছে। প্রভা অফিসের একটা ফাইল চেক করছে, কাল নতুন ব্যন্ডর সাথে সাথে চুক্তি হবে চৌধুরী কোম্পানির। তবে ফাইলের কিছু বিষয় প্রভা বুঝতে পারছে না, যার জন্য সে ইভানের থেকে সাহায্য নেওয়ার চিন্তা করে। ইভান নিজের রুমে বসে অফিসের কাজ করছে, বর্তমানে তার সারাদিন শুধু অফিস আর ফাইল নিয়ে কেটে যায়। পৃথিবীর সমস্ত সুখ, আনন্দ, বেদনা তার কাছে এখন তুচ্ছ মরীচিকা ন্যায়। এই মিথ্যা মায়ার বেড়াজালে নিজেকে জড়িয়ে যে কষ্ট তার হচ্ছে, হয়তো তার থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নাই।

বর্তমানে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় বক্ত্যি মনে হয় ইভান, যে নিজের দোষে নিজের মায়ের ভালোবাসা হারিয়েছে, জেদ বা ইগোর কারণে তার ভালোবাসাকে অন্য একজনের হাতে তুলে দিয়েছে। আর এখন শুধু অফিসের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, তার বুকের মধ্যে এক অদ্ভুত ব্যাথার আগমন ঘটেছে যা প্রতি মুহূর্তে তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। শুধু বাহিরের রাগী আর নিরবতা সবাই দেখে, ভিতরে থাকা কান্না আর অসহায়ত্ব শুধু সেই যানে। শুধু তার মনের ভিতরে যানে ইনায়াকে সে কতটা ভালোবাসে, তার জীবনের সব সুখ, টাকা, আর ভালোবাসার বিনিময়ে তার ইনায়াকে চাই। কিন্তু তা আর সম্ভব না ইনায়া এখন অন্য কারো বিবাহিত স্ত্রী, অন্য একজনের হাত তার শরীর ছুঁয়ে দিয়েছে।

হঠাৎ করে ইভানের রুমের দরজায় একজন নক করে, ইভান তার ভাবনার জগৎ থেকে বাহির হয়ে আসে। দরজার সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রভা দাঁড়িয়ে রয়েছে, ইভান শান্ত স্বরে বলে –

“- কি হয়েছে প্রভা? তুমি এখানে কেনো?

ইভান গম্ভীর গলায় কথাটা বলে কিন্তু প্রভার কাছে ইভানের গলার স্বর অন্যরকম লাগে। যেনো মনে হলো ইভান কান্না করেছে, আগের দিনের মতো ঠিক ততটা নীরবতা আর গম্ভীরতা আজ ইভানের কণ্ঠ স্বরে নাই। শুধু যেনো সকলের সামনে তার বাহিরের নকল রূপ দেখানোর প্রয়াস করছে, কিন্তু প্রভা ইভানের বিষয়ে এতো কেনো চিন্তা করছে। ইভান শুধু তার বস এর চেয়ে বেশি না, আর কখনো হবে ও না। প্রভাকে কথার উত্তর না দিতে দেখে ইভান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখে। প্রভা বলে –

“- কাল অফিসের মিটিং জন্য একটা ফাইল চেক করছি, কিন্তু কয়েকটা জায়গায় বুঝতে আমার অসুবিধা হচ্ছে। যার জন্য আপনার সাহায্য দরকার ইভান “।

প্রভার কথা শুনে ইভান বিরক্ত হয়, যদিও প্রভা ইভানের সাথে খুব বেশি কথা বলে না। জরুরি কোনো কাজ বা কারণ ছাড়া প্রভা কথা বলা পছন্দ করে না, আর ইভান ও তাই। তবে প্রভাকে দেখে ইভান বিরক্ত হয় কারণ প্রভার চেহারা দেখলে তার ইনায়ার কথা মনে পড়ে। প্রভা চোখে মুখে যে ভয় শান্তি নীরবতা সব ইনায়ার মধ্যে ছিলো, যার জন্য হয়তো ইভান প্রভার থেকে দূরে থাকতে চাই। ইভান প্রভার দিকে তাকিয়ে বলে –

,, _ হুম দেখা ও কি সমস্যা হয়েছে?

ইভানের অনুমতি পেয়ে প্রভা রুমের ভিতরে চলে আসে, এরপর তার হাতে থাকা ফাইল ইভানকে দেখায়। একসাথে অনেক সময় কাজ করতে থাকে, ইভান প্রভার সমস্যা সমাধান করে দেয়। ইভান ফাইলের মধ্যে হাত রেখে প্রভাকে দেখায়, প্রভা ও হাত রাখে যার ফলে দুইজনের হাত একসাথে হয়। প্রভা আর ইভান একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে, প্রভা মাথা নিচুঁ করে ফেলে। হঠাৎ করে দরজায় কারো গলার আওয়াজ শুনে প্রভা আর ইভান দূরে সরে যায়। অরুণা বেগম তাদের ডাকতে এসেছে। রাত অনেক হয়ে গেছে যার জন্য অরুণা বেগম ইভানকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে তার রুমে এসেছে।

অরুণা বেগম ইভান আর প্রভাকে দেখে ফেলে তারা সরে যাওয়ার আগেই, অরুণা বেগম বলে –

“- প্রভা তুমি এখানে? আচ্ছা তোমরা খাবার টেবিলে আসো রাতের ডিনার রেডি করা হয়েছে “।

অরুণা বেগম কথাটা বলে রুম থেকে চলে যায়, ইভান আর প্রভা একে অপরের দিকে তাকায়। এরপর ইভান বলে –

“- আচ্ছা আমাদের কালকের মিটিং কোন ব্যন্ডের সাথে হবে?

প্রভা নীরবতা ভেঙে জবাব দেয় –

“- ইজি শপ যা শহরের সবচেয়ে বড়ো ব্যন্ড এর মালিক হলেন ইনায়া চৌধুরী, ওনি অনেক বড়ো বিজনেস ওমেন। খবরের কাগজে দেখে ছিলাম অরণ্য রাজ চৌধুরীর সাথে ওনার বিয়ে হয়েছে। ওনি তো অরুণা আন্টির বন্ধাবীর মেয়ে তাই না?

প্রভা সব কথা ইভান শুনেছে কি না যানা নাই তবে শুধু মাএ ইনায়ার নাম তার কান অবধি পৌঁছে গেছে, ইভান শুকনো ঢুক গিলে বলে –

“- ইনায়ার সাথে ডিল হতে যাচ্ছে “।

“- হুম ওই ব্যন্ডর মালিা ইনায়া চৌধুরী, অরণ্য রাজ চৌধুরীর বউ “।

অরণ্যর বউ কথাটা শুনে তার মনের মধ্যে থাকা কষ্ট আরো দিগুণ হয়ে যায়, ইভান বলে –

“- প্রভা যান নিচে খাবার খেতে যান।

প্রভা উঠে খাবার খেতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়, তবে সে আবার জিজ্ঞেস করে –

“- আপনি খাবার খেতে যাবেন না ইভান “।

“- না আজ আর খিদে নাই আমার “।

ইভান আর কথা বলে না প্রভা রুম থেকে বের হয়ে যায়, ইভান বিছানায় গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। তার হৃদয় থেকে শুরু একটা শব্দ বারবার হাজার বার উচ্চারণ হচ্ছে। কাল তার ইনায়ার সাথে দেখা হবে, প্রায় কতদিন পর ইনায়ার সাথে দেখা করবে সে।

অন্যদিকে রাত দশটার সময় অরণ্য ছাদের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, আকাশ দেখে যাচ্ছে তার মন আজ বড্ড ভালো। ইনায়া যবে থেকে তার জীবনে এসেছে কেমন যেনো সুখ ফিরে পেয়েছে জীবনে, হারানো সকল সুঃখের শূন্য স্থান পূরণ হয়ে গিয়েছে ইনায়ার আগমনে। অরণ্যর ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে তার পিছন থেকে কেউ একজন ডাক দেয়, অরণ্য কণ্ঠটা শুনে চমকে যায়। এই কণ্ঠ তার বড্ড পরিচিত, অরণ্য পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে তার সামনে রেহানা বেগম দাঁড়িয়ে রয়েছে। অরণ্যর দুই চোখে বিশ্বাস করত পারছে না, তার মা কি তার নামে নিয়ে ডাক দিয়েছে।

রেহানা বেগম তার সামনে থাকা অরণ্যর দিকে দেখে, তারা মা ছেলে আজ কতো বছর পর একে অপরের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রেহানা বেগম নিজের ছেলের মুখ একবার ভালো করে দেখে, তার ইচ্ছা করছে তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। রেহানা বেগম বলে

“- অরণ্য “।

রেহানা বেগমের মুখে অরণ্য ডাকটা শুনে অরণ্যর চোখে পানি জমে যায়, তার মা তাকে নাম ধরে ডেকেছে। অরণ্যর মনে হচ্ছে সে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ, যে মা তার সামনে কখনো আসে নাই সে আজ তার নিজে এসে তাকে ডাকছে। অরণ্য বলে –

“- আম্মু “।

অরণ্যর মুখে আম্মু ডাকটা শুনে রেহানা বেগমের হৃদয় শান্তির প্রণয় বয়ে যায়। অরণ্যর চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে কতটা খুশি হয়েছে রেহানা বেগমের মুখে তার নাম শুনে। রেহানা বেগম নিজের মনকে শক্ত করে অরণ্যর করা অন্যায় সে কখনো ভুলে যেতে পারে না। রেহানা বেগম বলে –

‘- অরণ্য তোমার সাথে কথা আছে আমার?

অরণ্য বলে –

“- হুম আম্মু বলো কি কথা আছে? কোনো সমস্যা হয়েছে? কি হয়েছে শুধু একবার বলো?

রেহানা বেগম বলে –

“- তুমি ইনায়াকে কেনো বিয়ে করেছ অরণ্য? শুধু কি ইভান চৌধুরীর থেকে প্রতিশোধ নিতে? না তোমার কেনো পরিকল্পনা রয়েছে?

অরণ্য যানে রেহানা বেগম তাকে খুব ভালো করে চিনে, অরণ্য হাসি মুখে বলে –

“- যদি বলি ইনায়াকে আমি ভালোবাসি?

“- অসম্ভব “।

“- আর যদি বলি আমার নোংরা খেলার একটা গুটি ইনায়া তখন কি বলবে আম্মু?

“- কথাটা বিশ্বাস যোগ্য “।

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#লেখনীতে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৩২ [ অরণ্যর প্রথম ভালোবাসা ]

[ রাত ১০: ২০ মিনিট ]

অরণ্য আর রেহানা বেগম ছাদে দাঁড়িয়ে রয়েছে, অরণ্য শব্দ করে হেঁসে যাচ্ছে। অরণ্যর এমন হাসি রেহানা বেহমের মনে ভয় সৃষ্টি করছে, কারণ তার ছেলের এমন ব্যবহার সন্দেহ জনক। চৌধুরী পরিবারের কোনো সদস্যকে অরণ্যকে ভালোবাসতে পারে না অসম্ভব, আর ইভান চৌধুরীকে শুরু কষ্ট দেওয়ার জন্য ইনায়াকে অরণ্য বিয়ে করে নাই। যে শাফায়াত মৃত্যুর আসল অপরাধী অরণ্য, সে কেনো ইনায়াকে নিয়ে তার নানার বাড়িতে গিয়ে শাফায়াতের মৃত্যুর রহস্য সমাধান করবে। রেহানা চৌধুরীর যা মনে হচ্ছে অরুণ কোনো গভীর ষড়যন্ত্র করছে, সকলের সামনে অরণ্য যতই সাধারণ আর বোকা সাজার নাটক করুক না কেনো। আসলে অরণ্য সবচেয়ে বেশি চালাক আর নিষ্ঠুর। রেহানা বেগম বলে –

“- অরণ্য সত্যি করে বলো ইনায়াকে কেনো বিয়ে করেছ তুমি? যদি চৌধুরী বাড়ির প্রতি প্রতিশোধ নিতে ইনায়াকে বিয়ে করে থাকো , তাহলে বিয়ের প্রথম দিন থেকে ওর উপর অত্যাচার করো নাই কেনো? যদি তুমি শাফায়াতকে হত্যা করে থাকো তাহলে রূপনগর গ্রামে কেনো গিয়েছিলে? বউভাতের দিন তুমিই ইনায়াকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিলে? আবার তুমি ওকে বাঁচানোর জন্য জর্জকে টাকা দিয়েছ? আসলে অরণ্য তুমি করতে কি চাও?

মায়ের কথা শুনে অরণ্য শব্দ করে হেঁসে উঠে, যাক পৃথিবীতে একজন মানুষ রয়েছে যে তার আসল রূপ সম্পর্কে যানে। অরণ্য শান্ত হয়ে রেহানা বেগমের দিকে তাকায় আর বলে –

“- হুম ইনায়া আমার খেলার ছোট একটা গুটি মাএ সে আমাকে সম্পূর্ণ খেলা জিতিয়ে দিবে। চৌধুরী বাড়ির উপর প্রতিশোধ নেওয়া মাএ শুরু, আর শাফায়াত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় না বরং ওকে আমি খুন করেছি। কারণ ও আমার বাবাকে খুন করেছে, কর্ম ফল প্রতৈক মানুষের ভোগ করতে হয়। আর এখন অবধি ইনায়ার সাথে যা যা হচ্ছে ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, ওর ফাঁসির রাই হচ্ছে, বা রূপনগর গ্রামে ওর মামার মৃত্যুর রহস্যর খুঁজে যাচ্ছে সব আমার পূর্ব পরিকল্পনা।

অরণ্য নিজের মুখে সব সত্যি বলে, রেহানা বেগমের রাগ হচ্ছে ওনার ছেলের উপর। অরণ্য ঠিক কতটা জঘন্য আর নোংরা তা রেহানা বেগম যানে। আর এইজন্য রেহানা বেগম তার ছেলেকে ঘৃণা করে, এই ভালো মানুষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত চেহারা সে দেখতে চাই না। রেহানা বেগম ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে –

“- ছিঃ অরণ্য তুমি ঠিক কতটা নিচুঁ মন মানসিকতার অধিকারী। ইনায়া তোমার স্ত্রী হয়, বিয়ের পর ওকে সবসময় আগলে রাখা বিপদে ওর পাশে থাকা তোমার দায়িত্ব। আর তুমি নিজের প্রতিশোধ আর স্বার্থের জন্য ওর সাথে মিথ্যা ভালোবাসার নাটক করলে, এসএস কোম্পানির খাবারে বিষ ইনায়া মিশায় নাই তবুও ওকে তুমি ওকে বিনা কারণে জেলে পাঠালে। রূপনগর গ্রামে গিয়ে শাফায়াতের মৃত্যুর বিষয়ে কিছু যানতে পারবে না জেনে ও ওর পাশে থাকার অভিনয় করলে। এসএস কোম্পানির আসল অপরাধী কে তা যানার পর ও সত্যিটা বলছ না কেনো তুমি? আর কয়দিন পর যদি ইনায়ার ফাঁসি হয়ে যায় তবে তুমি শান্তি পাবে?

রেহানা বেগমের কথা অরণ্যর সয্য করে নেয়, কিন্তু তার প্রতি তার মায়ের ঘৃণার দৃষ্টি সয্য করতে পারে না। অরণ্যর বুকের ভিতর অনেক কষ্ট হচ্ছে, তার মায়ের চোখের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। অরণ্য বলে –

“- আম্মু তোমার কি মনে হয় এই অরণ্য রাজ চৌধুরী এতো জঘন্য? নিজের ছেলের মাথায় থাকা পরিকল্পনার বিষয়ে জানা, আর ছেলের চোখ দেখে সত্যিটা বোঝার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য থাকে? সব ঘৃণা আর রাগ ভুলে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলো না আম্মু। এই চোখে কি তুমি ইনায়ার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাও না? নিজের বাবার খুনের প্রতিশোধ নেওয়ার হিংস্রতা কি দেখতে পাও না? এতো বছরে শুধু একবার মায়ের মুখে নিজের নাম শুনার আত্মানাথ কি তুমি দেখতে পাও না? ওই চৌধুরী বাড়ির মিলন চৌধুরীর আর অরুণা বেগমের প্রতি ঘৃণা কি দেখো না? শুধু কি মিথ্যা অভিনয় আর স্বার্থ দেখো?

অরণ্যর কথা শুনে রেহানা বেগম কতোখন থমকে দাঁড়ায়, তার শরীরে থাকা রাগ কমে যায়। অরণ্যর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে, বাবার মৃত্যুর পর অরণ্য আজ প্রথম কান্না করছে। রেহানা বেগম বলে –

“- অরণ্য তুমি কি ইনায়াকে ভালোবাসো? তাহলে ওকে শান্তি কেনো দিলে? আর তোমার বাবার খুন শাফায়াত করেছে টাকার জন্য, তুমি তো শাফায়াতকে মেরে ফেলেছ তাহলে আর কিসের প্রতিশোধ নিবে তুমি? কার থেকে প্রতিশোধ নিবে? মিলন চৌধুরী আর অরুণা চৌধুরী তোমার বাবার খুনি না? হ্যা ওনারা যা করেছেন আমাদের সাথে তা অন্যায়। আর ইনায়ার সাথে যদি তোমার কোনো শএুতা নাই, তবুও ওকে শাস্তি কেনো দিচ্ছো? ওর যদি ফাঁসি হয়ে যায় তখন তুমি করবে?

রেহানা বেগমের কথার জবাবে অরণ্য বলে –

“- আমি মারা যাব আম্মু, ইনায়াকে হারিয়ে ফেললে তোমার অরণ্য বাচঁবে না আম্মু। ইনায়াকে আমি অনেক ভালোবাসি, বিশ্বাস করো আম্মু ইনায়ার যদি ফাঁসি হয়ে যায় তাহলে আমি ও জীবিত দাফন হয়ে যাব আম্মু। ইনায়ার সাথে কোনো মিথ্যা নাটক বা অভিনয় আমি করি নাই, ওকে সত্যি ভালোবাসি আমি।

অরণ্য আর রেহানা বেগম অনেক সময় কথা বলে, মা ছেলে আজ প্রথম কোনো বিষয়ে কথা বলে। রাত প্রায় বারেরটার সময় অরণ্য রুমে ফিরে আসে, ইনায়া বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। বিছানায় শুয়ে পড়ে অরণ্য, ইনায়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে ওর বুকে ইনায়ার মাথা রাখে। ইনায়া ও ঘুমের মধ্যে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে, অরণ্য মনে মনে বলে –

“- সরি ইনায়া আপনাকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য। বিশ্বাস করেন ইনায়া এই অরণ্য চৌধুরী নিষ্ঠুর বা স্বার্থপর নয়। শুধু নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া অতীত তাকে এমন তৈরি করেছে। তবে যায় হয়ে যাক অরণ্য আপনাকে নিজের থেকে দূরে করবে না কখনো। ভালোবাসি ইনায়া অনেক ভালোবাসি আপনাকে “.

অরণ্য কথাটা বলে ইনায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল প্রায় নয়টা বাজে ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে, আর তার মিটিং রয়েছে। ইনায়া যানে আজ চৌধুরী গ্রুপের তার কাজ, তার মানে আবার ইভানের সাথে দেখা হবে। ইনায়া জীবনে আর কখনো ইভানের সম্মুখী হতে চাই না, সে তার নতুন জীবন নিয়ে যথেষ্ট খুশি। আর ইভান নিশ্চয়ই নিজের অফিস নিয়ে বিজি থাকে। তবে ইনায়া নিজের কাজের জায়গায় যথেষ্ট প্রফেশনাল, আর সে প্রতিটা কাজ মনোযোগ সহকারে করে। সেখানে ইভান যদি থাকে তাহলে নিজেকে এলেমেলো লাগবে তার, হাজার চেষ্টা করলে ও প্রথম ভালোবাসা কেউ ভুলতে পারে না।

অরণ্য রুমে এসে দেখে ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, অরণ্য আজ অফিসে যাবে। অরণ্য বলে –

“- কি হয়েছে ইনায়া? এমন লেখক সাহিত্যের মতো কোন ভাবনার জগৎতে হারিয়ে গেলেন?

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার ঘোর কাটে আর বলে –

“- না কিছু হয় নাই। আসলে আজ দুইটা মিটিং রয়েছে, একটা চৌধুরী গ্রুপের মালিক ইভান চৌধুরীর সাথে। আর এসএস কোম্পানির শেয়ার হুল ডলারের সাথে।

চৌধুরী গ্রুপ কথাটা শুনে অরণ্যর ইভানের কথা মনে পড়ে, আজ ইনায়ার ইভানের সাথে মিটিং রয়েছে। তবে ইনায়া যথেষ্ট সাধারণ ভাবে কথাটা বলে যেনো ইভান ওর কেউ হয় না, অরণ্য সেটা ভেবে খুশি হয়। সে ইনাযার কাছে যায আর বলে –

“- ওকে তাহলে আমি আপনাকে ড্রব করে দিব।

#চলবে