তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
5

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৩৩ [ ইনায়া আর ইভানের প্রথম দেখা ]

[ সকাল নয়টা চৌধুরী বাড়ি ]

সকাল নয়টার সময় চৌধুরী বাড়ির সকলে নাস্তা করার জন্য টেবিলে বসে রয়েছে, প্রভা আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে না বরং সে সবার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। অন্যদিকে ইভান সারারাত ঘুমায় নাই, তার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় ইভান, ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। আজ ইনায়ার সাথে তার মিটিং রয়েছে, কতদিন পর ইনায়াকে দেখবে সে, তার অপেক্ষা প্রহর যেনো শেষ হচ্ছে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইভান অনেক সময় ধরে নিজেকে তৈরি করে, এরপর রেডি হয়ে নিচে আসে। আজ ইভানের মন মেজাজ যথেষ্ট ভালো, সে হাসি মুখে সবাইকে গুড মনিং বলে আর সবার সাথে খেতে বসে যায়।

অরুণা বেগম ইভানের হাসি মুখ দেখে খুশি হয়, ওনি বুঝতে পারে ইভানের জীবনে প্রভার আগমন ঘটনার কারণ ইভান এতো পরিমাণে খুশি। প্রভার সাথে জীবন শুরু করলে ইভান ভালো থাকবে, অতীতে যা হয়েছে সব ভুলে যাওয়া উচিত। অরুণা বেগম সবাইকে খাবার দেয়, এরপর চৌধুরী বাড়ির প্রতৈক সদস্য সকালের নাস্তা খাওয়া শেষ করে। অফিসের জন্য বের হয়ে যায় প্রভা আর ইভান, প্রভা আজ নিজের গাড়িতে যাবে। প্রভা যখন তার গাড়িতে উঠতে যাবে তখন ইভান বলে –

“- প্রভা আপনি আমার গাড়িতে অফিসে যাবেন আজ। কয়েকটা বিষয় আপনার সাথে কথা বলা জরুরি আমার “।

“- ওকে “।

ইভানের কথা অনুসারে প্রভা তার গাড়িতে উঠে পড়ে, গাড়িতে বসে তারা অফিসের ফাইল আর মিটিং বিষয়ে কথা বলে। কাজের প্রয়োজনে ইভান আর প্রভার মধ্যে এখন ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, আর প্রভা ইভানের পিএ তাই ওর প্রতিটা বিষয়ে প্রভার মতামতের দরকার হয়।

অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামে ইনায়া আর অরণ্য, সায়মার সাথে সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে গাড়ি করে বেরিয়ে যায়। অরণ্যর অফিসে যাওয়ার জচৌধুরী কোম্পানি অতিক্রম করে যেতে হয়। যার জন্য অরণ্য ইনায়াকে লিফট দেয়, গাড়িতে যতখন সময় থেকেছে অরণ্য আর ইনায়া দুইজনে শান্ত ছিলো। অরণ্য ইনায়াকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করলে, ইনায়া শুধু হুম আর না এইরকম করে জবাব দিয়েছে। প্রায় তিরিশ মিনিট পর তারা চৌধুরী কোম্পানির সামনে এসে, ইনায়া নিজেকে রেডি করে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার উদ্দেশ্য বলে –

“- ওকে অরণ্য আমি যায় “।

গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার আগে অরণ্য ওর হাত ধরে ফেলে, সামনে থাকা ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে –

“- ড্রাইভার তুমি একটু বাহিরে যাও “।

ড্রাইভার অরণ্যর কথা অনুসারে বাহিরে চলে যায়, অরণ্য ইনায়াকে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অরণ্য যতটা কাছে নিয়ে আসা যায, ইনায়াকে ঠিক ততটা কাছে সে নিয়ে আসে। ইনায়া অরণ্যর এমন কাজে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। অরণ্য হাসি মুখে বলে –

“- বউ এতো সময় ধরে আমার থেকে দূরে থাকবে তুমি। তোমাকে অনেক মিস করব, আমার অনেক কষ্ট হবে?

অরণ্যর এমন কথা শুনে ইনায়া বলে –

“- তো এখন কি করব আমি?

ইনায়া কতটা কর্কশ গলায় বলে, অরণ্যর রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজাতে ইনায়ার এমন কথায় যথেষ্ট। তার বউ বড্ড আনরোমান্টিক যখন একটু রোমান্স করার চিন্তা ভাবনা করে, তখন তার বউ সবসময় দূরে সরিয়ে রাখে তাকে। বিয়ের এতোদিন পর বউয়ের আদর ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য অরণ্য হয় নাই। অরণ্য বলে –

“- তুমি একটা কাজ করতে পারো দশ বিশটা চুমু খেতে পারো, আবার চাইলে গাড়িতে বাসর ও করতে পারো। বলো এই দুইটার মধ্যে কোনটা তুমি করতে চাও বউ?

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার বিরক্তি মাখা মুখ আরো বিরক্তিকর হয়ে যায়, এই লোকটার মাথায় যে কখন কি চলে কেউ যানে না। ইনায়া বলে –

“- হঠাৎ করে আপনি এতো রোমান্টিক কি করে হয়ে গেলেন অরণ্য? আর আমি আপনাকে কেনো দশটা বিশটা কিস করব? গাড়িতে বাসর বা করব কেনো? কে হন আপনি আমার?

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য ওর মাথায় হাত দেয় আর বলে –

“- হায়রে আমার বউয়ের কি সৃতি শক্তি লোভ পেয়ে গেলো না কি? বাসর করার আগেই যদি বউ বিয়ের কথা ভুলে যায় তাহলে তো সর্বনাশ। বউ তুমি না আমাকে ভালোবাসো? লক্ষী বউ আমার তোমার স্বামীকে চার পাঁচটা চুমো দেও বউ?

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আমি গেলাম আপনি থাকেন। অসভ্য লোক, জঘন্য পুরুষ “।

ইনায়া কথাটা বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, অরণ্য শব্দ করে হাসে। ইনায়ার মুড খারাপ ছিলো কিন্তু অরণ্যর কথা শুনে তার হাসি চলে আসে, তার মন ভালো হয়ে যায়। ড্রাইভার গাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে গাড়ি আবার চলতে থাকে। অরণ্যর ফোনে তখন একটা কল আসে যা দেখে অরণ্য সিরিয়াস হয়ে যায়। অরণ্য ফোন রিসিভ করে বলে –

“- হুম আমার কাজ কতদূর হয়েছে “।

একজন লোক ফোনের রিসিভ হয়, আর বলে –

“- জি স্যার কাজ হয়ে গেছে।

“- তুমি শুধু রূপনগর গ্রামে ইনায়ার যাওয়ার খবর ওনার কানে একবার পৌঁছে দাও। এরপর যা করার আমি করছি “।

চৌধুরী কোম্পানির ভিতরে ইনায়া ঢুকে যায়, ইনায়া নিজেকে শান্ত করে। যদিও অরণ্যর কথার কারণে ইনায়ার হাসি পায়, তবুও সে ইভানের সাথে কথা বলবে দেখা হবে যার কারণে তার মন খারাপ হয়ে যায়। ইনায়া নিজেকে শান্ত করে, এরপর অফিসের ভিতরে চলে যায়। কোম্পানির ভিতরে যায়, ইনায়া তার পিএকে আসতে বলে। তার সকল কাজ তার পিএ সামলায়, ইনায়া মিটিং কেবিনে ঢুকে যায। যেখানে ইভান আর প্রভা উপস্থিত ছিলো। ইভান ইনাযার দিকে তাকায়।

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৩৪ [ খুনির মুখোশ ]

চৌধুরী কোম্পানির এমডির চেয়ারে বসে আছে ইভান, তার দৃষ্টি এখনো সামনে দিকে রয়েছে। শুধু সামনে তাকিয়ে থাকা মানুষকে দেখে যাচ্ছে, এতোদিন পর ইনায়াকে দেখে ইভানের কষ্ট হচ্ছে না আনন্দ হচ্ছে না সে বুঝতে পারে না। ইনায়া ও ইভানের দিকে অল্প সময় তাকিয়ে থাকে, এরপর চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। যার সাথে তার এখন কোনো সম্পর্ক নাই, তার জন্য মনে মায়া বাড়িয়ে লাভ নাই। ইনায়া শান্ত হয়ে এগিয়ে যায় ইভানের কাছে, ইভান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ইনায়া তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় এরপর শান্ত গলায় বলে –

“- হ্যালো মিস্টার ইভান চৌধুরী আমি ইনায়া।

ইনায়ার কথা শুনে ইভান মৃদু হাসে, ইভান বলে –

“- হ্যালো আমি ইভান চৌধুরী। চৌধুরী গ্রুপের এমডি, আপনার সাথে অনেক দিন পর দেখা হয়ে ভালো লাগছে “।

ইভানের কথা কেমন যানি অদ্ভুত শুনালো ইনায়ার কাছে, বিয়ের আগে তার সাথে এতো শান্ত, ভদ্র, আর বিনয়ের সাথে কখনো কথা বলে নাই ইভান। ইভানের চোখ মুখ আর চেহারায় সেই রাগী আর রগচটা ভাব নেই, মনে হয় কত রাগ সে নির্ঘুম রাএী কাটিয়ে দিয়েছে তার কোনো হিসাব নাই।ইনায়ার মায়া হয় ইভানের প্রতি, তবে বৃথা মায় বা কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই নাই। ইনায়া হাসি মুখে বলে –

“- চলুন মিটিং শুরু করা যাক “।

মিটিং শুরু হয়ে যায় চৌধুরী গ্রুপের অনেক মেম্বার সেখানে উপস্থিত হয়, যার মধ্যে প্রভা ও রয়েছে। প্রভা ইভানের পিএ তার সাথে সবসময় থাকবে, প্রভা কোম্পানির ফাইল বের করে কথা বলা শুরু করে দেয়। ইনায়া সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনে যাচ্ছে, যদিও ইভান মিটিংয়ে পূর্ণ মনোযোগ রাখতে পারে না। কারণ তার চোখ হাজার বার শুধু ইনায়ার দিকে চলে যাচ্ছে, ইদানীং বড্ড অতিরিক্ত ইনায়াকে মিস করছে সে। ইনায়া নিজের কাজের মধ্যে তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আসে না, আর তার এখন আগের মতো ইভানকে দেখার ইচ্ছা করে না। মনের ভিতরে ইভানের জন্য ভালোবাসা বা মায়া হয়েছে, তবে সেটা তার হৃদয়ের এক কোণে তার সমগ্র হৃদয় জুড়ে শুধু অরণ্যর অবস্থান।

নিজের অতীত প্রতিটা নারী ভুলে যেতে চাই,কিন্তু তা হয়তো সম্ভব হয় না। তবে বর্তমান জীবন স্বামী সংসার সব মিলিয়ে হয়তো তার মনে প্রিয় মানুষের থাকা সৃতির উপর ধুলো পড়ে যায। মাঝে মধ্যে রাতের আঁধারে তা মনে পড়ে, আবার সকাল হলে দৈনন্দিন জীবনে সকল মায়ায় তা ভুলে যায়। হয়তো ইনাযার সাথে তাই হয়েছে, আগের মতো ইভানের জন্য তার মনে এখন অনুভূতি জাগে না, রাতের শেষ প্রহরে তার জন্য আর সে চিঠি লিখে না। ইভানের জন্য যত্ন করে আগলে রাখা সকল চিঠি এখন শুধু চিলেকোঠায় ঠাঁই পেয়েছে।

মিটিংয়ে মধ্যে হঠাৎ করে ইনায়ার চোখ যায় ইভানের দিকে, দেখ ইভান এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ইনায়া নিজের চোখ সরিয়ে নেয়, সে আর মিথ্যা মায়া বা ভালোবাসায় নিজেকে জড়াতে চাই না। ইনায়া কাজের উপর মনোযোগ দেয়, প্রভা তার কথার মধ্যে ইভানকে দেখে। ইভানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে, সে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। প্রভা বুকটা কেমন যানি মোচড় দিয়ে উঠে, তার মনে একটা কথা হাজার বার সহস্র বার শুনা যাচ্ছে ইভান কি তবে ইনায়াকে ভালোবাসে?

প্রায় এক ঘণ্টা পর মিটিং শেষ হয় ইনায়া আর ইভানের মধ্যে চুক্তি হয়, কোম্পানির ব্যন্ডর হয়ে কাজ করবে। মিটিং শেষ করে সকলে অফিস রুম থেকে বের হয়ে যায়, শুধু ইনায়া, ইভান,প্রভা সেখানে উপস্থিত রয়েছে। প্রভা প্রথম আজ ইনায়াকে দেখছে, অরুণা বেগমের মুখে আগে ইনায়ার কথা অনেক শুনেছে কিন্তু কখনো দেখা হয় না। প্রভা এগিয়ে যায় ইনায়ার কাছে আর বলে –

‘- হাই ইনায়া আমি অরুণা আন্টির বন্ধুর মেয়ে প্রভা “।

প্রভা ইনায়ার সাথে কথা বলে, অরুণা বেগমের বন্ধুর কথা যানে ইনায়া। অন্যদিকে ইভান দূর থেকে শুধু দেখ যাচ্ছে ইনায়াকে, প্রভা সামনে থাকায় তার সাথে কথা বলতে পারছে না। প্রভা ইনায়ার সাথে কথা বলার মধ্যে ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখে, ইভানের অস্থিরতা সে বুঝতে পারে। অফিসের কাজের ওযুহাত দিয়ে প্রভা রুমে থেকে বের হয়ে যায়, ইভান এগিয়ে আসে ইনায়ার কাছে। ইনায়ার সামনে এসে দাঁড়ায় আর বলে –

‘- কেমন আছো ইনায়া? নিশ্চয়ই খুব ভালো “।

ইভানের কথা শুনে ইনায়ার হাসি পায়, ইনায়া বলে –

“- খারাপ থাকার কথাও না। আর আপনার আর আমার দুইজনের ভালো থাকার জন্য তালাক আর নতুন করে বিয়ে হয়েছে তাই না “।

ইনায়ার কথা শুনে ইভান মৃদু আত্মর্নাথের স্বরে বলে –

“- অবশ্যই। তবে কি যানো ইনায়া তোমাকে বিয়ে দিয়ে আমি ভালো নেই? কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া আমার? তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতি রাত কান্না করি, তোমাকে একবার দেখার কামনা কি। তবে কি তোমাকে ভালোবাসি আমি ইনায়া?

ইভানের মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে ইনায়া চমকে যায়, ইভান তাকে ভালোবাসে, তার জন্য কান্না করে? হয়তো আগের সময় হলে ইভানের ভালোবাসি কথা শুনে ইনায়া খুশি হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে ইনায়ার মনে শুধু একটু ভালোলাগা কাজ করে এ ছাড়া আর কিছু নয়। ইনায়া বলে –

“- কিন্তু এখন তো আপনার প্রতি আমার সকল অনুভূতি মারা গেছে ইভান ভাই। এই দেখেন আপনার মুখে ভালোবাসি কথা শুনে, আমার কিছুই যায় আসছে না। আপনার কষ্টের অনুভূতি আমার কাছে শুধু মাএ কিছু কথা, তবে কি আমি অরণ্যকে ভালোবেসে ফেলেছি ইভান ভাই?

অন্যদিকে অরণ্যর লোক তার কাজ করছে, রূপনগর গ্রামে শাফায়াতের মৃত্যুর তদন্ত করতে যাওয়ার কথাটা আসল অপরাধী কাছে পৌঁছে দিয়েছে। যদি ও ইনায়ার প্রতিটা গতিবিধির উপর তার নজর রয়েছে, সে শুধু চুপ করে রয়েছে তার পরিকল্পনা সফল করার জন্য। একজন লোক ফোন করে অপর পাশে কেউ রিসিভ করে –

“- হুম বলো “।

“- ম্যাম ইনায়া কিন্তু রূপনগর গ্রামে গিয়ে সবকিছু জানার চেষ্টা করেছে, ও যদি একবার এসএস কোম্পানির আসল খুনির বিষয়ে যেনে যায় তাহলে কিন্তু সব শেষ হয়ে যাবে?

লোকের কথা শুনে অপরিচিত মহিলার কণ্ঠে হাসির শব্দ শুনা যায়, অপর পাশেন মহিলা বলে –

“- ইনায়া আমার শএু নয় আবার বন্ধু ও নয়। ইনায়া শুধু দানের একটা গুটি আসল খেলা খেলছে অরণ্য রাজ চৌধুরী। অরণ্য যতদিন রয়েছে ততদিন ইনায়ার কোনো ধরণের ক্ষতি করা সম্ভব নয়, আর অরণ্য আমাকে ও খুন করবে না। ওকে রাস্তা থেকে সরাতে হবে?

“- কিন্তু ম্যাম অরণ্য রাজ চৌধুরী কে কি খুন করা সম্ভব?

“- সম্ভব নয় আবার অসম্ভব নয়।

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৩৫

চৌধুরী কোম্পানির থেকে বের হয় ইনায়া, তার অন্য মিটিং রয়েছে যার জন্য সে তার পিএকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। অন্যদিকে ইভান ইনায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, তার বুকটা ব্যাথা করছে। ইনায়ার কণ্ঠ অরণ্যর জন্য ভালোবাসার কথা শুনে তার কষ্ট দিগুণ বেড়ে গেছে, ইভান শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ইনায়ার দিকে। অন্যদিকে প্রভা অফিস রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে, ইভান আর ইনায়ার কথা শুনে সে সব বুঝতে পারে। প্রভার কষ্ট হয় ইভানের জন্য, কিন্তু সে ইভানের কাছে যায় না।

আজ এসএস কোম্পানির সকল শেয়ারের মালিকের সাথে ইনায়ার মিটিং রয়েছে, তারা এতোদিন এসএস কোম্পানির অন্য মালিকের সাথে কথা বলেছে যার চেহারা তারা দেখতে পারে নাই। কিন্তু আজ সম্মুখে দেখবে আসল এমডিকে, মিটিং ঠিক করে কোম্পানির ম্যনেজার। এসএস কোম্পানি আদালতের নোটিশে বন্ধ থাকায়, সেখানে কোনো ধরণের মিটিং করা সম্ভব না। যারা জন্য শহরের এক রেস্টুরেন্টে তাদের সকলে আসার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়েছে, ইনায়ার গাড়ি রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়ায়। ইনায়া গাড়ি থেকে বের হয়, তার পরনে ব্যাক শ্যুট দেখতে একদম বিজনেস ওমেন লাগছে।

প্রায় পনেরো দিন পর এমন বিজনেস লুকে দেখা যাচ্ছে তাকে, কারণ এতোদিন যাবতীয় ঝামেলার কারণে সে ব্যবসা থেকে দূরে থেকেছে। তবে এখন থেকে সে নিজের কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে চাই, এখন সফলতা অর্জন করতে চাই। ইনায়ার রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকে যায়, তার দিকে সকলে তাকিয়ে থাকে। ইনায়ার ব্যন্ড এই শহরে যথেষ্ট জনপ্রিয়, আর সে চৌধুরী কোম্পানির এমডি রূপে কাজ করেছে যার জন্য সকল শেয়ারের মালিক তার পরিচিত। ইনায়া সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করে, প্রথমে সকলে অবাক হয় পরে সব ঘটনা আর সত্যি তাদের জানায় ইনায়া।

এসএস কোম্পানির পূর্বে করা সকল ডিল টাকার লেনদেন বন্ধ করে দেয় ইনায়া, যতদিন না নতুন করে আদালতের নিদের্শে এসএস কোম্পানি খুলবে ততদিন সকল প্রকার আর্থিক আর প্রাতিষ্ঠানিক কাজ অফ থাকবে। সকল শেয়ারের সাথে কথা বলে ইনায়া বুঝতে পারে, ওনারা সকলে এতোদিন অনেক টাকা নষ্ট করেছে এসএস কোম্পানির এমন জঘন্য খাবার তৈরি করতে। তবে ইনায়া তাদের বলে সব টাকা ফিরত দেওয়া হবে, আর নিজেকে সে নিদোষ প্রমাণ করবে আর আসল অপরাধীর শাস্তি দিবে। আবার এসএস কোম্পানি তার কাজ শুরু করবে, এবং এইবার কোনো বিষাক্ত বা খারাপ পণ্য তৈরি করা হবে না যথেষ্ট গুণগত মান সম্পন্ন জিনিস তৈরি করা হবে।

ইনায়া সকলের বিশ্বাস যোগ্য করতে সক্ষম হয়, আর সে আগে থেকে ব্যবসা সামলায় যার জন্য সে যানে কি করে মানুষের মন জয় করতে হবে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর মিটিং শেষ হয়, সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে একসাথে। অরণ্য আজ তার কোম্পানি অনেক দিন পরে এসেছে, প্রচুর কাজ জমা রয়েছে যা শেষ করতে অনেক সময় লাগবে। অরণ্য মেসেজ করে ইনায়াকে বলে দেয়, তার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হবে। অন্যদিকে ইনায়া বাড়িতে ফিরে আসে, ফ্রেশ হয়ে সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। আজ তার হাতে সময় রয়েছে, যার জন্য সে ঠিক করে দুপুরের রান্না সে করবে।

ইনায়া রান্নাঘরে যায়, কিন্তু সেখানে সে যা দেখে তা দেখ পুরো অবাক। রেহানা বেগম রান্নাঘরে রান্না করছে, যা দেখে ইনায়া পুরো অবাক হয়ে যায়। বিয়ের পর থেকে রেহানা বেগমকে কখনো রান্নাঘরে বা বাড়ির অন্য কোনেন কাজ করতে দেখে নাই। অরণ্য বলে ছিলো যখন সে বাহিরে থাকে, তখন তার আম্মু রুম থেকে বের হয়। রেহনা বেগম ইনায়াকে রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, হাসি মুখে বলে –

“- ইনায়া তুমি এখানে? আর বাহিরে দাঁড়িয়ে রয়েছ কেনো?

রেহানা বেগমের কথা শুনে ইনায়া রান্না ঘরের ভিতরে যায়, এরপর হাসি মুখে বলে –

“- মা আপনি রান্নাঘরে এসেছেন কোনো কারণে? কিছু লাগবে আপনার? আমি সাহায্য করব কি?

ইনায়ার কথা শুনে রেহানা বেগম হেঁসে বলে –

“- না প্রয়োজন নেই। আসলে সায়মার পেটে হঠাৎ করে ব্যাথা করছে যার জন্য একটু গরম পানি করছি, আর দুপুরের খাবার রান্না করব “।

রেহানা বেগম রান্না করবে? কথাটা অবিশ্বাস্য শুনালো ইনায়ার কাছে, হঠাৎ করে রেহানা বেগমের এমন পরিবর্তন কি করে হলো। ইনায়া বলে –

“- সায়মার পেটে কি অতিরিক্ত ব্যাথা করছে? আর মা আপনি রান্না করবে হঠাৎ, মানে আপনি তো রুম থেকে বের হন না।আজ কি অরণ্য বাসায় নেই বলে রান্না করবেন?

রেহানা বেগম ইনায়ার কথায় রাগ করে নাই,কারণ ইনায়া যে কথাটা কৌতূহল নিয়ে তা ওনি বেশ বুঝতে পারে। রেহানা বেগমের অরণ্যর প্রতি রাগ অভিমান সব রয়েছে, কিন্তু সে তার জেদের কারণে নিজের ছেলে মেয়েদের উপর থাকা সকল দায়িত্ব ভুলে যেতে পারে না। অরণ্য খারাপ, নিষ্ঠুর কিন্তু তার সন্তান হয়, আর সায়মার বাচ্চা পেটে এই সময় একটা মেয়ের তার মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসা আর যত্ন না পেলে তার এবং তার বাচ্চার ক্ষতি হবে। এখন থেকে রেহানা বেগম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে ওনি সকল দায়িত্ব পালন করবেন, তবে তার সন্তানের করা অন্যায় মাফ করে দিবে না। রেহানা বেগম বলে –

“- আজ থেকে সকল রান্না সহ ঘরের কাজ আমি করব, মায়ের সকল দায়িত্ব পালন করব। সন্তান অন্যায় বা অপরাধ করলে তাকে শাস্তি দেওয়া যায়, কিন্তু তাকে ঘৃণা করা যায় না।

রেহানা বেগম কথাটা বলে আবার রান্নার কাজ করে থাকে, সন্তান অন্যায় করেছে কথাটা যে অরণ্যকে মিন করে বলেছে তা ইনায়া যানে। কিন্তু অরণ্য কি এমন অপরাধ করেছে যে রেহানা বেগম তাকে ঘৃণা করে? অরণ্য যথেষ্ট ভালো আর ভদ্র একজন লোক, নিজের মাকে সে অনেক ভালোবাসে যা তার কথায় স্পষ্ট বুঝা যায। অরণ্যকে যদি তার চিরশত্রু ভালোবাসতে পারে, তবে তার মা কেনো সেটা করতে পারে না। ইনায়া মনের মধ্যে সাহস জুগিয়ে জিজ্ঞেস করে –

“- আচ্ছা আম্মু আপনার আর অরণ্যর মধ্যে কি ঝামেলা হয়েছে? মানে আপনি অরণ্যকে ঘৃণা কেনো করেন? অরণ্য কি অপরাধ করেছে?

ইনায়ার কথায় রেহানা বেগম বলে –

“- একদিন বলব যে তোমার স্বামী ঠিক কতটা নিষ্ঠুর, যদি এখন যানতে পারো তাহলে মনের মধ্যে থাকা অপ্রকাশিত ভালোবাসা। ঘৃণার অতলে হারিয়ে যাবে “।

ইনায়া বোকার মতো চুপ করে শুনে যায় সে রেহানা বেগমের কথার মানে বুঝতে পারে না, তবে ইনায়ার আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। ইনায়া আর রেহানা বেগম রান্না করছে, ইনায়া আগে থেকে রান্না পার৷ যার জন্য তাকে কিছু শিখিয়ে দিতে হয় নাই। দুপুরের রান্না শেষ করে ইনায়া রুমে চলে আসে, এসির ঠান্ডায় শরীর শীতল করার চেষ্টা করে। রুমটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, এই বাড়িতে মানুষ অনেক কম শুধু গুণা কয়েকজন। আর বিয়ের পর থেকে প্রতিটা সময় অরণ্য ইনায়ার সাথে থেকেছে, যার জন্য এখন ইনায়ার ভীষণ একা লাগছে। অরণ্যকে ছাড়া সে গভীর একাকিত্ব অনুভব করছে, রুমে অরণ্যর কণ্ঠ না শুনলে তার ভালো লাগে না।

বেডে মধ্যে থাকা ফোন ইনায়া হাতে নেয়, এরপর অরণ্যকে ফোন দেয়। অরণ্য অফিসের ফাইল চেক করছে, হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠে। অরণ্য ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে ইনায়া কল করেছে, অরণ্য প্রথমে অবাক হয়। এই প্রথমবার ইনায়া তাকে ফোন করেছে, অরণ্য বলে –

“- কি মিসেস ইনায়া রাজ চৌধুরী নিজের স্বামীকে কি অনেক মিস কর ছিলেন আপনি? যদি সকালে গাড়ির মধ্যে আমার কথা অনুসারে চার পাঁচটা চুমো দিতেন। তাহলে এতো কষ্ট ফিল হতো না “।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার মুখে ততক্ষণ চিন্তার ছাপ দূর হয়ে রাগ প্রকাশ পায়, এই লোক তার অনুভূতি কখনো বোঝার চেষ্টা করে না। সবসময় তাকে নিয়ে মজা করে থাকে, ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আপনি না সত্যি নিলজ্জ হয়ে যাচ্ছেন? আর আমি আপনাকে কেনো মিস করব?

“- ওহ রিয়েলি মিস করছেন না আমাকে? তাহলে কেনো ফোন করেছেন? সত্যি করে বলুন ইনায়া জামাই ছাড়া থাকতে পারছেন না “।

ইনায়া অরণ্যকে মিস করছে কিন্তু সে তা প্রকাশ করে না, ইনায়া বলে –

“- আপনি কখন বাড়িতে ফিরবেন তা যানতে ফোন করেছি? বলছি অফিসে কি অনেক কাজ জমা হয়েছে? রাতে বাড়িতে ফিরতে কি অনেক লেইট হবে? দুপুরের খাবার কি খেয়েছেন?

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য হাসে, ইনায়া যে ধীরে ধীরে অরণ্যর প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে যা সে বেশ বুঝতে পারে। ইনায়া এখন অরণ্যকে নিয়ে চিন্তা করে, তার ভালো মন্দ সকল বিষয়ের খেয়াল রাখে যা অরণ্যর পছন্দ। অরণ্য বলে –

“- ইনায়া আপনাকে না বউ বউ লাগছে আজ। আর দুপুরের খাবার খাবো মাএ দুইটা বাজে?

ইনায়া বলে –

“- রাতে বাড়িতে ফিরবেন কখন? অপেক্ষা করব?

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্যর হাসি মুখ ভীষণতায় ছেয়ে যায়, অরণ্য আকাশের দিকে তাকিয়ে অল্প হেঁসে জবাব দেয় –

,, – হুম ফিরব তবে মানুষ হয়ে না বরং লাশ হয়ে। তখন অপেক্ষা না বরং হাহাকার করবেন আমার জন্য “।

#চলবে