#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৪২ [ অরণ্যর এক্সিডেন্ট কে করিয়েছে? ]
আজ মঙ্গলবার অরণ্য বাড়ি ফিরবে। সকাল থেকে রেহানা বেগম রান্না করা শুরু করে দেন। শুধু অরণ্য না চৌধুরী বাড়ির প্রতৈক সদস্য আজ তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবে। কাল রাতে অরণ্যর সুস্থতার খবর সকলকে জানানো হয়েছে, হাসপাতালে রেহানা বেগম আর সায়মা দেখা করতে যেতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু ডক্টর বলেছে যে অরণ্য এখন সম্পূর্ণ সুস্থ, সে কাল সকালে বাড়ি ফিরতে পারবে। যার কারণে রেহানা বেগম আর সায়মা আর হাসপাতালে যায় নাই। সায়মা বাড়ির সব জিনিসপত্র সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছে।
প্রায় বারোটার দিকে অরণ্যর গাড়ি তার বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হয়। হাসপাতালে প্রায় দুইবছর অরণ্য এডমিট থেকেছে, সেখানে কিছু কাগজপএ আর অন্য সব কাজ শেষ করে আসতে সময় লাগে। গাড়িতে এখন ইনায়া আর অরণ্য অবস্থান করছে, ইনায়া এতোখন অরণ্যর হাত শক্ত করে ধরে বসে থাকে। যেনো হাত ছেড়ে দিলে অরণ্য পালিয়ে যাবে, অবশ্য এতো অরণ্য খুশিই হয়। কোমায় থেকে ফিরে এসে তার বউ এতেন যত্ন করছে, আদর করছে, ভালোবাসা দিচ্ছে যা অরণ্যর কাছে সপ্নের মতো। যদি অরণ্য আগে যানত যে ইনায়া তাকে এতো ভালোবাসবে, তবে অনেক আগেই এক্সিডেন্ট করিয়ে হাসপাতালে এডমিট হতো।
গাড়ি বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায় ইনায়া গাড়ি থেকে নেমে যায়। এরপর অরণ্যর কাছে গিয়ে ওকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে সাহায্য করে। দুইজনে একসাথে বাড়ির ভিতরে চলে যায়, আজ কতদিন পর আবার সে আবার তার বাড়িতে ফিরে এসেছে। রেহানা বেগম আর সায়মা এগিয়ে আসে অরণ্যর কাছে, রেহানা বেগম অরণ্যর মাথায় হাত রেখে বলে –
“- তোমাকে অনেক মিস করেছি আমরা অরণ্য। নামাজ পড়ে কতো কান্না করেছি তোমার সুস্থতার জন্য। যাও এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো, তোমার জন্য নিজ হাতে খাবার রান্না করেছি আমি “।
মাথায় রেহানা বেগমের হাতের আলতো ছোঁয়া পেয়ে অরণ্য চোখ বন্ধ করে নেয়। আজ প্রায় দশ বছর পর তার মা তার মাথায় হাত রেখেছে, মায়ের এমন রূপ এতোদিন পর সে দেখছে। মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য, তার কণ্ঠে নিজের নাম শুনার জন্য, একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অরণ্য কতো ছটফট করেছে। মায়ের ভালোবাসা পাওয়া অরণ্যর কাছে একটা সপ্ন ছিলো, যা আজ পূর্ণতা পেয়েছে। অরণ্য এগিয়ে গিয়ে রেহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে, এরপর বলে –
“- সত্যি আম্মু তুমি আমাকে মাফ করে দিয়েছ? আমার সুস্থতার জন্য কান্না করেছ? আমি বাড়ি ফিরব বলে তুমি নিজ হাতে রান্না করেছ? বিশ্বাস হচ্ছে না আমার?
রেহানা বেগম আজ এতো বছর পর আবার তার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নেয়। তাদের কথা বলার মধ্যে সায়মা ও ছুটে আসে, সে তার মা ভাইকে জড়িয়ে ধরে। আজ প্রথমবার দুই সন্তানকে এতো কাছ থেকে একসাথে আগলে রেখেছে, তাদের পরিবার সম্পূর্ণ হয়েছে। বাড়ির সদর দরজায় ইনায়া দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার মনের জন্য সুখের অনুভব হয়। আবার সে তার শশুড় বাড়ির প্রতৈক সদস্যকে একসাথে দেখেছে, বিয়ের পর আজ প্রথমবার।
পরিবারের সাথে সুন্দর মূহুর্ত কাটিয়ে অরণ্য আর ইনায়া রুমে চলে যায়। অরণ্যর শরীর এখন সুস্থ, কিন্তু ডক্টর বলেছে তাকে রেস্ট নিতে। নিয়মিত ঔষধ কন্টিনিউ করতে, রেহানা বেগম আবার রান্না ঘরে যায়। আজ তার সংসার পূর্ণ হয়েছে, তার চোখে পানির বিন্দু জমা হয় এই কান্না কষ্টের না সুখের। দুইজন সন্তান আজ রেহানা বেগমর খুশি, নিজেদের সংসার নিয়ে এর থেকে বেশি একজন মায়ের আর কি চাওয়া রয়েছে। রুমে প্রবেশ করে অরণ্য, দুইবছর আগের রেখে যাওয়া রুম আর আজকে থাকা রুমের মধ্যে বিন্দু মাএ পার্থক্য নেই। প্রতিটা জিনিস একই রকম করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
অরণ্যর সাথে রুমে প্রবেশ করে ইনায়া। অরণ্যকে তিক্ষ চোখে রুম পর্যবেক্ষণ করতে দেখে বলে –
“- কি মিস্টার অরণ্য রাজ চৌধুরী? ঘরের সব জিনিসপত্র সুন্দর করে সাজানো আছে তো? দুইটা বছর অনেক যত্ন করে রুমটা আগলে রেখেছি।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য হাল্কা টান দিয়ে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। এরপর দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে –
“- ম্যাডাম শুধু কি ঘরের যত্ন করলে হবে? বরের বুঝি যত্ন করতে হবে না? চলুন না ইনায়া একটু রোমান্স করি?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া তাকে মৃ্দ্যু ধাক্কা দিয়ে, দূরে সরিয়ে বলে –
“- হাসপাতাল থেকে এসেছেন আগে গোসল করেন ফ্রেশ হন। রান্না ঘরে যেতে হবে আমার, অনেক কাজ রয়েছে “।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য অভিমান করে দূরে সরে যায়, অতীতে থাকুক বা বর্তমানে সবসময় তার বউ দূরে থাকতে চাই তার থেকে। এতোদিন পর জামাই কোমায় থেকে ফিরেছে, কোথায় জামাইকে দেখে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে ভালোবাসবে রোমান্স করবে। সেটা না শুধু সারাক্ষণ পালায় পালায় করে, বাজার থেকে একটা রশি কিনে নিয়ে আসতে হবে। বউকে শক্ত করে রশি দিয়ে বেঁধে তারপর বাসর করবে, রোমান্সের সময় নো তিড়িং বিরিং।
বিছানায় বসে থাকে অরণ্য, তার ভাবনার মাঝে ইনায়া চলে যায় ওয়াশরুমে। অরণ্যর অভিমান হয়েছে সেটা ইনায়া যানে, কিন্তু এখন যদি অরণ্যর সাথে রাগ ভাঙ্গাতে যায়। তাহলে সে আর রান্না ঘরে যেতে পারবে না, রেহানা বেগম একা রান্না করছেন আর আজ চৌধুরী পরিবারের সকল সদস্য আসবে। কতো কাজ রয়েছে। রেহানা বেগম একা সব সামলে নিতে পারবে, যদি ইনায়া রান্না ঘরে না যায় তবুও কিছু বলবে না। ইনায়ার শাশুড়ীর ভাগ্য সবসময় ভালো, অরুণা বেগম যখন তার শাশুড়ী ছিলো তখন সবসময় তাকে মেয়ের মতো করে আগলে রেখেছে। রেহানা বেগম ও তার বিপরীত নয়, ওনি ও ইনায়া আর সায়মাকে সমান চোখে দেখেন। নিজের মেয়ের মতো করে ভালোবাসেন। তবুও ইনায়া এই বাড়ির বউ তার একটা দায়িত্ব রয়েছে যা সে সবসময় পালন করে। অরণ্য যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এডমিট ছিলো, তখন ইনায়ার অফিস সামলাতে হয়েছে। যার কারণে সে বাড়ির কাজে সময় বেশি দিতে পারত না, তবে রাতে অফিস থেকে ফিরে ডিনার সেই তৈরি করত। বন্ধেন দিন বাড়ির যাবতীয় কাজ আর রান্না ইনায়া করে। রেহানা বেগম তাকে নিষেধ করেছে, তবুও ইনায়া করে।
বিছানায় বসে রয়েছে অরণ্য, এমন সময় তার রুমে আয়ান প্রবেশ করে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরার সময় আয়ান ঘুমিয়ে ছিলো, যার কারণে তার সাথে দেখা হয় না। এতো ঘটনার মধ্যে সায়মার যে গর্ভবতী ছিলো, সেটা অরণ্য ভুলে গেছে। আয়ান ছোট ছোট পা ফেলে রুমে আসে, বিছানায় অন্য একজন পুরুষকে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়। তার জন্মের পর অরণ্যকে সে কখনো দেখে নাই, যার কারণে সে তাকে চিনতে পারে না। আয়ান বলে –
“- মাম্মা মাম্মা কোথায় তুমি?
হঠাৎ কোনো বাচ্চার মুখে মাম্মা ডাক শুনে অরণ্য ভ্রু কুঁচকে সেইদিকে তাকিয়ে দেখে। দরজার কাছে এক বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আয়ান রুমের চারপাশে ইনায়াকে খুঁজার চেষ্টা করছে। অরণ্য বাচ্চাকে হাতের ইশারায় ডাক দেয়, আয়ান অরণ্যর কাছে যায়। অরণ্য বলে –
“- এই বাবু তুমি কে? কাকে মাম্মা বলে ডাকছ?
অরণ্য মনে করে কোনো কাজের লোকের ছেলে হবে হয়তো, আয়ান বলে –
“- আমি বাবু নয় আমি আয়ান। মাম্মা কোথায়? তুমি আমার মাম্মা রুমে কি করছ?
“- ওকে আয়ান এইটা তোমার মাম্মা রুম নয়। তোমার মাম্মা হয়তো অন্য রুমে রয়েছে? সেখানে যাও “।
আয়ান জেদ দেখিয়ে বলে –
“- না এইটা আমার মাম্মা রুম। তুমি পঁচা আঙ্কেল আমার মাম্মার রুম থেকে যাও। মাম্মা কোথায় তুমি?
আয়ান আশেপাশে ইনায়াকে না দেখে কান্না করে দেয়। অরণ্য বাচ্চার কান্না করা দেখে বলতে থাকে –
“- আরে বাবু তোমার মাম্মা কে? আচ্ছা তোমার মাম্মার নাম কি?
“- ইনায়া “।
আয়ানের মুখে ইনায়ার নাম শুনে অরণ্য অবাক। বাচ্চা ছেলেটা ইনায়াকে মাম্মা বলে ডাকছে কেনো? দুইবছর আগে ইনায়ার বাচ্চা পেটে ছিলো না, আর থাকবে কি করে তাদের তো বাসর হয় নাই। যা বউ তার কাছে আসলে দূরে সরে যায়, কোথাও ইনায়ার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায় নাই তো? না না বিয়ে হয়ে গেলে নিশ্চয়ই অরণ্যর জন্য হাসপাতালে ছুটে যেত না? আয়ান এমন চুপচাপ থাকতে দেখে অরণ্যকে বলে –
“- কি হয়েছে মামা তুমি এমন চুপ করে আছো কেনো? বলো না মাম্মা কোথায়?
আয়ানের কথা শুনে এখন নিজের উপর কষ্ট লাগছে অরণ্যর। তার সপ্ন ছিলো তার দশটা বাচ্চা হবে, আর সব বাচ্চা ইভাকে মামা বলো ডাকবে। কিন্তু এখন তার বউয়েন বাচ্চা তাকেই মামা বলে ডাকছে, এইজন্য মানুষ বলে অন্যজনকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করলে। উল্টো নিজেকেই বিপদে পড়তে হয়। অরণ্য বলে –
‘- এই বাচ্চা তুমি আমার বউকে মাম্মা বলে ডাকবে না। ইনায়া শুধু আমার বাচ্চার মাম্মা হবে “।
আয়ান অরণ্যর ধমক শুনে কান্না করে দেয়। ওয়াশরুম থেকে আয়ানের কান্নার আওয়াজ শুনে ইনায়া বের হয়ে আসে। ওয়াশরুমের দরজা খুলে ইনায়াকে বের হয়ে আসতে দেখে, আয়ান তার কাছে যায় ছুটে যায়। ইনায়া আয়ানকে কোলে তুলে নেয় আর বলে –
“- কি হয়েছে আয়ান বাবা? কান্না করছ কেনো? কে বকা দিয়েছে তোমাকে? কার এতো সাহস আমার আয়ান বাবুকে বকা দেয়?
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্যর মনে হয় হার্ড এট্যার্ক করবে। বউ তার বেইমান নারী। আয়ান কান্না করা দুইচোখে অভিমানী স্বরে অরণ্যর দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে –
‘- মাম্মা ওই পঁচা মামা আমাকে বকা দিয়েছে । বলে তুমি না কি আমার মাম্মা নও, আর আমাকে অনেক জােরে ধমক দিয়েছে “।
আয়ানকে অরণ্য বকা দিয়েছে? কথাটা ভেবেই ইনায়া অরণ্যর দিকে তাকিয়ে বলে –
“- অরণ্য আপনি আয়ানকে বকা দিয়েছেন কেনো? জন্মের পর প্রথমবার ভাগনাকে দেখলেন, আর ওকে বকা দিলেন “। মামা হয়ে এমন ধমক কেনো দিয়েছেন?
ইনায়ার কড়া কণ্ঠ সম্পূর্ণ শুনে নাই অরণ্য। শুধু মামা শব্দটা শুনেছে মামা মানে অরণ্য বলে –
“- মামা মানে?
“- কি মামা মানে? সায়মার ছেলে কি আপনাকে মামা বলে ডাকবে না?
সায়মার কথা শুনে অরণ্যর মনে পড়ে যায় কোমায় যাওয়ার আগে সায়মা গর্ভবতী ছিলো। আর সে কোমায় থেকেছে দুইবছর, এখন অরণ্য সবটা বুঝতে পারে। আয়ান হয়তো ইনায়াকে আদর করে মাম্মা বলে ডাকে, ইনায়া আয়ানকে কোলে নিয়ে আসে অরণ্যর কাছে এরপর ওর কোলে দিয়ে বলে –
“- আয়ান ওনি তোমার মামা হয়। আর এখন মামা আর আয়ানকে বকা দিবে না। খুব আদর করবে “।
অরণ্য আয়ানকে কোলে নেয়, ওর চেহারা ভালো করে দেখে সত্যি ওর সায়মার ছেলে। ছোটবেলা সায়মার মুখ অনেকটা আয়ানের মতো ছিলো, অরণ্য বলে –
“- সরি আয়ান বাবু মামা তোমাকে বকা দিয়েছে। কিন্তু মামা এখন আর তোমাকে বকা দিবে না, অনেক আদর করবে। চকলেট দিবে, ঘুরতে নিয়ে যাবে?
“- সত্যি মামা?
“- হুম সত্যি?
আয়ান আর অরণ্য একসাথে সময় কাটায়, অন্যদিকে অরণ্যর গাড়ির এক্সিডেন্ট যে লোক করিয়েছে আজ সে জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়েছে। তার নাম জামিল, জামিল থানা থেকে বের হয়ে ফোন করে অপরিচিত নাম্বারে বলে –
“- আমি থানা থেকে বের হয়ে গেছি? আজ দুইবছর পর?
অপরিচিত লোকটা বলে –
“- হুম। তবে তুমি অরণ্যর এক্সিডেন্ট করিয়ে কোনো উপকার করো নাই আমার? অরণ্য কোমায় যাওয়ার পর ইনায়া আমার সমস্ত পরিকল্পনা নষ্ট করে দিয়েছে? এসএস কোম্পানির সকল টাকা আমার একাউন্টে আসার আগেই ইনায়া সকল শেয়ার হুলডারের সাথে কথা বলে তা বন্ধ করে দিয়েছে? একবার ট্রাক দিয়ে গাড়িটা চাপা দেওয়ার আগে আমাকে জানাবে তো?
জামিল অবাক হয়ে বলে –
“- ম্যাম কি বলছেন আপনি? অরণ্য রাজ চৌধুরীর এক্সিডেন্ট আমার গাড়ি দিয়ে হয় নাই? আমি ট্রাক নিয়ে পৌঁছানোর আগেই অন্য এক ট্রাক এসে অরণ্যর গাড়িটাকে ধাক্কা দেয়। কিন্তু পুলিশ ভুল করে আমাকে গ্রেফতার করে?
অপরিচিত লোকটা ড্রাইভারের কথা শুনে অবাক হয়ে বলে –
“- হোয়াট তুমি এক্সিডেন্ট করা ও নাই অরণ্য ?
“- না ম্যাম “।
অপরিচিত লোকটা রাগে স্বরে বলে –
“- অরণ্য “।
অরণ্যর ফোনে একটা কল আসে, অরণ্য সেটা রিসিভ করে সয়তানি হাসি দিয়ে বলে –
“- প্রায় দুইবছর পর তোমার সাথে কথা হলো রামিম?
“- বস আপনার কাছে সয়তান ও হার মানবে। নিজের এক্সিডেন্ট নিজেই করিয়ে, ইচ্ছা করে কোমায় গিয়ে কি মজা পেলেন আপনি?
#চলবে
#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৪৩ [ অরণ্য কি তবে আসল খুনি? ]
অপরিচিত কণ্ঠে কথাটা শুনে অরণ্যর মুখে একটা সয়তানি হাসি ফুটে উঠে, যাক অনেকদিন পর এমন মিথ্যা নাটক থেকে বের হয়ে এসেছে। আড়চোখে একবার অরণ্য রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে, কোথাও ইনায়া আছে কি না। তবে ইনায়া এখন রান্না ঘরে রান্না করছে, আর আয়ান বিছানায় বসে খেলা করছে। তাদের রুমে আয়ানের জন্য অনেক খেলনা রেখেছে ইনায়া, যা অরণ্য আয়ানের হাত ধরিয়ে দেয় আর বলে –
“_____ আয়ান তুমি এখানে খেলো। তোমার মামার জুরুরি কথা আছে, সে একটু বেলকনিতে যাবে “।
_____” ওকে মামা.
° আয়ান সম্মতি দেয় অরণ্যকে, ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে যায় অরণ্য । তার হাতে থাকা ফোনে এখনো কল চালু রয়েছে, যার সাথে সে কথা বলছে সে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক রামিম। অরণ্যর সমস্ত পরিকল্পনার বিষয়ে রামিম যানে, আজ কোমায় থেকে ফিরে আসার খবর শুনে রামিম কল করছে। রামিম আবার বলে –
____ ‘” বস কোমায় থাকতে কেমন লাগে? আর আপনার পরিকল্পনা কিন্তু সার্থক হয়ে। তবে যায় বলেন বস ইনায়া ম্যাম কিন্তু সত্যি প্রচুর চালাক, যদি একটা ভুল হতো তবে সম্পূর্ণ খেলা আপনার বিপক্ষে চলে যেতো __________.
° ফোন কানে রেখে অরণ্য শব্দ করে হেঁসে উঠে। এতো কাঁচা খেলোয়াড় অরণ্য রাজ চৌধুরী নয়, যে তার পরিকল্পনা এতো সহজে অন্য একজন ধরে ফেলবে।অরণ্য তার মুখে সয়তানি হাসি রেখে জবাব দেয় –
____ “- অরণ্য রাজ চৌধুরী এতো সস্তা পরিকল্পনা করে না। তবে তোকে এক্সিডেন্টটা একদম রিয়েল স্টিক করতে বলেছিলাম। তাই বলে কি তুই আমাকে কোমায় পাঠিয়ে দিবি, দুইবছর আমার জীবন থেকে চলে গেছে। যদি সত্যি মারা যেতাম তখন কি হতো?
অরণ্যর কথা শুনে রামিম বলে __
____ “- বস সব তো আপনার পরিকল্পনা অনুসারে করছি।আর কি করব বলুন পুলিশ, সাংবাদিক, সকলের যেনো সন্দেহ না হয় এর জন্যই তো এতটা কষ্ট করে সবকিছু সাজাতে হয়েছে। আর আপনার বউ সে সন্দেহ করে যদি সামান্য পরিমাণ ভুল হয়ে যেতে। তবেই সবর্নাশ —–.
____ “- বউটা আমার যথেষ্ট চালাক। তবে অরণ্য রাজ চৌধুরী অভিনয় এতোটা নিখুঁত করে করছে যে। বউ কেনো সম্পূর্ণ পরিবার বিশ্বাস করেছে। ইউ নো হেয়াট অভিনয়ের জন্য অরণ্য রাজ চৌধুরী সেরা ____ “।
____ “- অবশ্যই বস। তবে যায় বলেন বস, আপনার বুদ্ধির কাছে সয়তান বুদ্ধি ও হেরে যাবে। কি অসাধারণ পরিকল্পনা আর দারুণ অভিনয় করেছেন আপনি। গাড়ির দুর্ঘটনা নিজেই করিয়ে, সম্পূর্ণ দোষ আগন্তুক শএুর উপর দিয়েছেন। এমন জায়গায় এক্সিডেন্ট হয়েছে সেখান থেকে হাসপাতাল মাএ দশ মিনিটের দুরত্বে রয়েছে। যদি আপনি আঘাত পান, তবে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। আর এম্বুলেন্স আগে থেকেই রেডি করা হয়েছিলো, যার কারণে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছাতে পেরেছে ____.
_____” হুম যখন এক্সিডেন্ট হয়েছে তখন মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছিলাম আমি। যদি বিদেশ থেকে আগে থেকেই ডক্টর নিয়ে না আসতাম, তবে কোমায় না সোজা উপরে চলে যেতাম ___.
____”- অবশ্যই বস রাত প্রায় দুইটার সময় কি ডক্টর পাওয়া যেতো হাসপাতালে। এর জন্যই আগে থেকেই বিদেশ থেকে ছয়জন ডক্টর নিয়ে আসা হয়েছে। যদি আপনার মাথায় বা শরীরে আঘাত লাগে, তবে তারা যেনো ঠিক করতে পারে _____ “।
° হাসপাতাল যেখানে অরণ্য এডমিট থেকেছে সেটা অরণ্য অনেক আগেই কিনে নিয়েছে। যার কারণে সেখানে থাকা সবকিছুর উপর তার নিয়ন্ত্রণ চলে। আদালতে ইনায়া যে প্রমাণ দিয়ে নিজেকে ফাঁসির রায় থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে, সে সকল প্রমাণ রামিম অগোচরে থেকে ইনায়াকে দিয়েছে। যা সুস্থ থাকা অবস্থায় অরণ্য রেখে গিয়েছে, আর জর্জকে বিপুল পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছে যার কারণে সে কেস অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। এসএসে কোম্পানির সমস্ত টাকা এখন ইনায়ার একাউন্টে, যার পরিকল্পনা অরণ্য আগেই করে গেছে। রামিম শুধু অরণ্যর কথা অনুসারে কাজ করে গেছে, আর ইনায়ার আড়ালে থেকে তাকে সাহায্য করেছে।
° সব পরিকল্পনা এতো নিখুঁত করে সাজিয়ে রেখেছে অরণ্য। শুধু ইনায়া নয় প্রতিটা সদস্য তাকে বোকার মতো বিশ্বাস করেছে। এই গল্পে আসল ভিলেন অরণ্য, আবার সেই প্রধান নায়ক। গাড়ি দুর্ঘটনার ফলে ইনায়ার মায়া জন্মে গিয়েছে অরণ্যর প্রতি। রেহানা বেগম তার ছেলেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, সায়মা তার ভাইয়ের থেকে সকল দুরত্ব মিটিয়ে তার কাছে চলে এসেছে। মিলন চৌধুরী আর অরুণা বেগম ঠিক কেমন মানুষ তা অরণ্য যানতে পেরে গেছে। হাসপাতালে ইনায়ার কান্না করা, অরণ্যর জন্য ছটফট করা দেখে বুঝে গেছে ইনায়া অরণ্যকে ভালোবাসে।
° এসএস কোম্পানির সকল মিথ্যা মামলা থেকে ইনায়া মুক্তি পেয়ে গেছে, আর শহরের সকল সংবাদ মাধ্যমে অরণ্যর দুর্ঘটনা অনেক ভয়াবহ করে সম্রচার করা হয়েছে। যার ফলে জনগণ সহ সকলের তার প্রতি মায়া হয়েছে, আর এসএস কোম্পানির কাণ্ডে যারা ইনায়াকে ঘৃণা করত। স্বামী অসুস্থতায় ইনায়ার এমন অবস্থা দেখে তাদের মনে মায়া হয়েছে। সুতরাং সম্পূর্ণ পরিকল্পনা সফল, যাকে বলো হিট.
প্রায় দশ মিনিট বেলকনিতে অবস্থা করে অরণ্য, রামিমের সাথে তার অনেক আগেইকথা বলা শেষ হয় গেছে। হঠাৎ পিছন থেকে এক হাত আষ্টেপৃষ্টেজড়িয়ে ধরে অরণ্যকে। সমগ্র বুক জুড়ে হাতের বন্ধন ঘিরে রয়েছে, যা অনুভব হওয়া মাএই মৃদু হাসি ফুটে উঠে অরণ্যর মুখে। অল্প সময় সে প্রিয়তমার আলিঙ্গন উপভোগ করে। এরপর হাত ধরে তাকে সামনে নিজের কনছে নিয়ে আসে। অরণ্য বলে –
_____ “- কি ব্যাপার ইনায়া আজ স্বামীকে এতো ভালো বাসা দিচ্ছেন? কোথাও শএুর প্রেমে পড়ে যান নি তো?
____ “- শএুর প্রেমে তো অনেকদিন আগেই ধরে গেছি। নিজের সমস্ত নারী সত্তা দিয়ে তাকে স্বামী রূপে গ্রহণ করেছি ___.
বাহিরে থাকা উষ্ণ বাতাসে ইনায়ার কপালে থাকা চুল উড়ছে। যা অরণ্য তার আলতো হাতে কানের পিছনে গুঁজে দেয়। ইনায়া মিটমিট করে তাকিয়ে দেখে যাচ্ছে তার যত্ন করা স্বামী নামক পুরুষকে। এই অচেনা পুরুষকে সে বড্ড ভালোবাসে, যাকে ছাড়া বেঁচে থাকা দায়। ইনায়ার এমন চাহনি দেখে অরণ্য বলে ___
___ “- যদি স্বামীকে ভালোবাসেন তবে তার কাছে ধরা দেন। নিজেকে তার তাকে সমর্পণ করে দেন। একবার আপন করার সুযোগ দেন তাকে —.
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া লজ্জায় লাল হয়ে যায়। প্রিয়তমা স্ত্রী লাজুক গালে হাত রেখে তাকে আরেকটু কাছে নিয়ে আসে। ইনায়া মাথা নিচুঁ করে জবাব দেয় –
____ ” একবার সুস্থ হন এরপর সব হবে ___.
অরণ্য আগ্রহ প্রকাশ করে বলে –
___ ” সত্যি হবে __.
ইনায়া আবার মাথা নিচুঁ করে জবাব দেয় –
___”- হুম হবে ___.
লজ্জা মিশ্রিত মুখে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ইনায়াকে। অরণ্য মুগ্ধ হয়ে অল্প সময় তাকিয়ে থাকে। যেনো সামনে থাকা নারীর রূপে সে ঝলসে যাবে। অরণ্য আনমনে বলে –
___ ” অনেক সুন্দর লাগছে আপনাকে ইনায়া “।
____ ” সত্যি? —
__ “- হুম আমার মাম্মা অনেক বিউটিফুল “।
অরণ্য আর ইনায়ার কথা বলার মধ্যে আয়ান বলে উঠে শব্দটা। এরপর সে আসে ইনায়ার কাছে, সযত্নে আয়ানকে কোলে তুলে নেয় ইনায়া। অরণ্য তাদের কাণ্ড দেখে হেসে ফেলে এরপর বলে –
___ আয়ান বাবু শুধু কি তোমার মাম্মা বিউটিফুল? তোমার মামা বুঝি সুন্দর না?
আয়ান বাচ্চাদের মতো কণ্ঠে বলে উঠে –
___ ” হুম আমার মামা ও অনেক সুদর্শন “।
চৌধুরী বাড়ির সকল সদস্য আজ অরণ্যর বাড়িতে এসেছে। বসার ঘরে সকলে আড্ডা দিচ্ছে। রেহানা বেগম আর অরুণা বেগম রান্না ঘরের সব জিনিসপত্র নিয়ে আসছে। যদিও অরুণা বেগম আত্মীয় তবুও ওনি ঘরের কাজ করছেন। ইনায়া আর সায়মা অন্য সব আয়োজন করছে। ইভান, মিলন সাহেব, আর সায়মার স্বামী তারা একসাথে আড্ডা দিচ্ছে। অরণ্য উপর থেকে তাদের দেখে যাচ্ছে। আজ কতোদিন পর তার সপ্ন সত্যি হয়েছে, তার পরিবার আবার একসাথে হয়েছে। দুইবছর কোমায় থাকা সার্থক হয়েছে।
দুপুরে সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাত ছয়টার দিকে চৌধুরী বাড়ির প্রতৈক সদস্য বিদায় নেয়। সারাদিন সকল কাজ করে ইনায়া এখন বড্ড টার্য়াড। সে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। অরণ্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইনায়াকে তার কাছে ডাকে। এরপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। ইনায়া এখন ঘুমিয়ে রয়েছে আর অরণ্য তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রাতের আকাশে চাঁদ দেখায় ব্যস্ত ইভান। অফিসের কাজ থেকে অবসর নিয়েছে আজ সে। হঠাৎ ইভান অনুভব করে তার পাশে একজন নারী অবস্থান করছে। অপরিচিত নারীর শরীর থেকে আসা মিষ্টি সুভাস তার বড্ড পরিচিত। ইভান হাসি মুখে বলে –
___ ” প্রভা তুমি এতো রাতে ছাদে কেনো? ___
প্রভার শরীর অসুস্থ থাকার কারণে সে অরণ্যর বাড়িতে যাওয়া হয় নাই। প্রভা এক কাপ কফি ইভানের দিকে এগিয়ে দেয়। কফির বড্ড প্রয়োজন এখন ইভানের যা হয়তো প্রভা বুঝে গেছে। প্রভা হেঁসে বলে –
___ ” রাতের আকাশে চাঁদ দেখার জন্য এসেছি ___
__” ভীষণ একা একা লাগ ছিলো আমার। থেকে যাও তুমি __
___” সারাজীবন? ___
ইভান অবাক হয়ে বলে –
___ মানে? __
প্রভা বেখেয়ালি হয়ে বলে ___
___ ” সব কথা বলে না হৃদয় কিছু কথা বুঝে নিতে হয়. __
গল্পটা কেমন হয়েছে? আমি চাইলে তুমি আমার রাত ৬: ০০ সময় আসবে। আর গল্পটার সুন্দর রিভিউ দিবেন কিন্তু অবশ্যই।
#চলবে
#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৪৪ [ অরণ্য আর ইনায়া হানিমুন ট্র্যুর ]
________ °★ সকাল নয়টা জানালা ভেদ করে রােদের আলো রুমে এসে পড়ছে ইনায়া। ঘুমন্ত ইনায়া পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়, সে নিজেকে অরণ্যর বুকে আবিস্কার করে। আষ্টপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে অরণকে, যেনো হাতের বাঁধন ছেড়ে দিলে অরণ্য পালিয়ে যাবে। আজ প্রায় দুইবছর পর এমন সকাল ইনায়ার জীবনে এসেছে, কতদিন অপেক্ষা করেছে শুধু এই সকালের জন্য। অল্প সময় ঘুমন্ত অরণ্যকে দেখে সে, এরপর ঘড়ির দিকে খেয়াল করে দেখে সকাল নয়টা। সবর্নাশ সকাল নয়টা বেজে গেছে, আর ইনায়া এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে।
_____ °★ আজ অফিসে মিটিং রয়েছে তার, তাড়াতাড়ি সেখানে যেতে হবে। আজ সকালের নাস্তা তৈরি করার পরিকল্পনা করে ছিলো ইনায়া, কিন্তু এখন মনে হয় সেটা আর সম্ভব নয়। সকাল নয়টা যেহেতু বেজে গেছে নিশ্চয়ই রেহানা বেগম রান্না করে ফেলেছেন। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ইনায়া, এরপর ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। কিন্তু অরণ্য এখনো বিভোর হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে, যার কারণ তার অসুস্থতার জন্য ঘুমের ঔষধ দিয়েছে। আর অরণ্যর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে, এতোদিন সে অফিসে যাবে না। বাড়িতে থাকবে রেস্ট নিবে, আর সে যেতে চাইলে ও ইনায়া তাকে যাওয়ার অনুমতি দিবে না “।
_____ “- প্রায় বিশ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে ইনায়া। অফিসের কাজ শেষ হতে প্রায় রাত হয়ে যাবে, তখন গোসল করার সময় থাকবে না। যার জন্য সে এখুনি গোসল সেরে নেয়, এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিজা চুল টাওয়াল দিয়ে মুছতে থাকে। সামান্য তৈরি হয়ে নিচে চলে যাবে সে, কিন্তু যাওয়ার আগে অরণ্যকে ঘুম থেকো উঠানো দরকার। বিছানার কাছে এগিয়ে যায় ইনায়া, এরপর আলতো করে ভিজে যাওয়া হাতে অরণ্যর মাথায় হাত রাখে। শান্ত স্বরে ডাক দেয় –
____ “- সকাল নয়টা বেজে গেছে অরণ্য। ঘুম থেকে উঠুন। সকালে খাওয়া দাওয়া শেষ করে, ঔষধ খেতে হবে আপনাকে ___.
___ শান্ত স্বরে ডাকে ইনায়া, কিন্তু অরণ্য উঠে যা বরং সে নাক মুখ কুঁচকে না তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। অরণ্যর বাচ্চাদের মতো এমন আচরণ দেখে, ইনায়া হেঁসে ফেলে। ঘুমন্ত অবস্থায় অরণ্যকে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়, পুরুষ মানুষ কি এতো সুন্দর হতে পারে? সেটা বোধহয় তার স্বামীকে না দেখলে সে জানতে পারত না। কিন্তু এখন স্বামীর রূপের প্রেমে যাওয়া বাদ দিয়ে তাকে উঠাতে হবে, ইনায়া এখন সামান্য জোরে ডাক দেয় অরণ্যকে —-
____” অরণ্য ঘুম থেকে উঠুন। অরণ্য ___.
° গম্ভীর কণ্ঠে ইনায়ার ডাক শুনে অরণ্যর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে, তার সামনে তাকিয়ে দেখে ইনায়া বসে আছে সেখানে। এতোখনের বিরক্তিমাখা মুখ মুগ্ধতায় ছুয়েঁ যায়, সদ্য গোসল করে আসা নারীর রূপে উন্মাদ হয়ে যায় অরণ্য। সৃষ্টিকর্তার এক নিখুঁত সৃষ্টি তার বউ, যার রূপ,আর লাবণ্য যেনো অফুরন্ত। যেনো জান্নাতের হুর, যার প্রেমে অরণ্য হাজার বার শতবার পড়তে রাজি। অরণ্য তার লোভনীয় দৃষ্টি দিয়ে ইনায়ার সমস্ত শরীর একবার পর্যবেক্ষণ করে, অস্বস্তি বোধ করে ইনায়া। আজ ইনায়াকে ছুঁয়ে দেখার তীব্র ইচ্ছা করছে অরণ্য, অবশ্যই ইনায়ার প্রতি তার অধিকার রয়েছে। বউ হয় তার সম্পূর্ণ হালাল বস্তু, অরণ্য একটান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে ইনায়াকে।
★° বিছানায় এক ধাক্কায় ফেলে দেয় ইনায়ার সম্পূর্ণ শরীর। অরণ্য তার উপর ঝুঁকে যায়, ইনায়ার নিশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। হার্টবিট যেনো এখন রেলের গতিতো ছুটে চলছে, যা অরণ্য অনুভব করতে পারছে। সামান্য ছোঁয়ায় তার বউয়ের যে অবস্থা করছে, যদি সম্পূর্ণ শরীর জুড়ে অরণ্যর হাতের বিচরণ চলে তখন কি অবস্থা হবে ইনায়ার। সম্পূর্ণ গাল লাল হয়ে যাচ্ছে ইনায়ার লজ্জায়, যেনো ওর গাল নয় বরং টমেটো। অরণ্য তার হাত দিয়ে ইনায়ার গাল ছুঁয়ে দেয়, এরপর এগিয়ে যায় সেখানে। দীর্ঘ সময় ধরে গাঢ় চুম্বন করে সেখানে, প্রায় শত খানের বার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। ইনায়া সঙ্গে সঙ্গে অরণ্যর গলায় হাত রাখে, অরণ্য ইনায়ার কানের কাছের গিয়ে মাতাল করা কণ্ঠে বলে –
____ “- শএু হয়ে জীবনে এসেছেন বউ হয়ে থেকে যান। সারাজীবন ভালোবাসা, আর যত্ন করে দিয়ে আগলে রাখব কথা দিলাম। ভালোবাসি বউ অনেক ভালোবাসি তোমায় “—–.
°★ ইনায়ার ভালোবাসি শব্দটা শুনে মনটা জুড়িয়ে যায়। তার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে, কম্পিত ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে দেয় অরণ্য। এরপর অগ্রসর হয় সেইদিকে, যখন ইনায়ার একদম কাছে গিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিত করবে। হঠাৎ করে তখন দরজায় করার শব্দ শুনা যায়, অরণ্য যথেষ্ট বিরক্ত হয়। সম্পূর্ণ মোড নষ্ট করে দিয়েছে তার, বাহির থেকে সায়মা ডাক দেয় –
___ “- ইনায়া তুমি কি এখনো ঘুম থেকে উঠো নাই। আজকে না তোমার অফিসে মিটিং রয়েছে? ইনায়া? ___
°★ অফিসের মিটিং শব্দটা শুনে ইনায়ার হুঁশ ফিরে আসে। তার দেরি হয়ে যাচ্ছে, এখন যদি অরণ্যর সাথে তাকে তবে তার মিটিং মিস হয়ে যাবে। শরীরের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে অরণ্যকে উঠিয়ে দেয় ইনায়া, এরপর তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যায়। বিরক্তি নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে অরণ্য, দরজা খুলে দেয় ইনায়া। সায়মা বলে —-
____ “- এতো দেরি কেনো করলে ঘুম থেকো উঠতে? আম্মু কখন থেকে খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে যাচ্ছে তোমাদের। তাড়াতাড়ি নিচে যাও, না হলে কিন্তু বকা খাবে —-.
°★ রেহানা বেগম সকলের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট কড়া। সায়মার সাথে ইনায়া নিচে চলে যায়, তবো আয়ান তার মামার ঘরের ভিতরে আসে। এতাখন সায়মার কোলে ছিলো সে, বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে অরণ্য। বাড়ির প্রতৈক সদস্য তার শএু, বউ এমনি তার থেকে দূরে দূরে থাকে। আর যখন বউ তার কাছে আসতে চাই, তখন বাড়ির কেউ এসে বিরক্ত করে। মনে হয় না এই জনমে অরণ্যর বাসর হবে, বিয়ের প্রায় তিনবছর হয়ে গেলো কিন্তু এখনো বাসর হলো না কি দুঃখের বিষয়।
°★ আয়ান রুমে প্রবেশ করে, বিছানায় শুয়ে থাকা অরণ্যর কাছে ছুটে যায়। এরপর আদুরে স্বরে বলে –
___ “- মামা কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করে বিছানায় শুয়ে আছো কেনো?
°★ আয়ানের কণ্ঠ শুনে অরণ্য এগিয়ে আসে তার কাছে। এরপর কোলে তুলে নেয়, অরণ্য বলে –
___ ” বউয়ের সাথে রোমান্স করতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু তোর মা সেটা হতে দিলো না। এখন আর কি করার চলো খেলা করি, রোমান্স সবার ভাগ্যে থাকে না —-.
★° অরণ্যর থেকে রোমান্স শব্দটা শুনে আয়ান সেটা জানার চেষ্টা করে এইটা কি। কিন্তু তার বাচ্চা মাথায় এই শব্দের মানে খুঁজে পায় না, আয়ান বলে —–
——– ” মামা রোমান্স কি? এইটা কি খাওয়ার জিনিস? আম্মু কি তোমার থেকে এই জিনিস কেঁড়ে নিয়েছে?
___ “- এর মানে তুমি এখন বুঝবে না আয়ান। বড়ো হলে অবশ্যই জানবে। এখন তুমি এখানে বসো, আমি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসি। এরপর একসাথে খেলাধুলা করব___.
___ “- ওকে মামা ___.
সকাল খাওয়ার টেবিলে সকলে নাস্তা করার জন্য উপস্থিত হয়। অরণ্য, ইনায়া সহ সায়মা আর তার স্বামী। সায়মার স্বামী অনেক দিন বিদেশে থেকেছে, তার সমস্ত ব্যবসার বেশির ভাগ বিদেশে। যার জন্য তাকে সেখানে থাকতে হয়, জরুরি কাজের জন্য অরণ্য ইনায়ার বিয়েের অনুষ্ঠানে সে উপস্থিত হতে পারে নাই। যার জন্য তাদের বিয়েতে কোনো গিফট দিতে পারে নাই, সায়মার স্বামী রাব্বি বলে —-
____ ” অরণ্য ভাইয়া তোমাদের বিয়েতে আমার কিছুই গিফট দেওয়া হয় নাই। যার জন্য আমার আর সায়মার তরফ থেকে হানিমুনের টিকিট তোমাদের জন্য ___.
° রাব্বির থেকে হানিমুন ট্রুর কথা শুনে অরণ্য খুশি হয়ে যায়। একে বলে হয়তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। অরণ্য তার থেকে টিকিট নেয়, ইনায়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। হানিমুনে গেলে এই অরণ্য তাকে কাঁচা চাবিয়ে খেয়ে ফেললে, তার যে কি অবস্থা হবে। অরণ্য ইনায়ার কাছে গিয়ে বলে —–
____ ” বউ তোমার হানিমুনে গিয়ে কে বাঁচাবে? তুমি শেষ। অরণ্য রাজ চৌধুরী তোমাকে শেষ করে দিয়েই শান্ত হবে ____.
#চলবে