তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-৪৮+৪৯+৫০

0
7

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৪৮ [ আসল শএুর পরিচয় ]

°★ রেস্টুরেন্ট থেকে খাবারের অর্ডারের অর্ডার করে ইভান। ইনায়া অনেক সময় আগে খাবার অর্ডার করে ছিলো, যার ফলে ওর খাবার এখন রেডি হয়ে গেছে। ইভান ইনায়াকে ডাকার জন্য সমুদ্রর কাছে যায়, তবে দূর দুরন্ত পর্য়ন্ত ইনায়াকে না দেখে অবাক হয়ে যায়। প্রায় পাঁচ মিনিট আগে এখানে সমুদ্রর পানির শব্দ জলচ্ছাসের সাথে খেলা করছিলো হঠাৎ কোথায় চলে গেলো। খাবার অর্ডার করেছে সেটা না নিয়ে রির্সোটে ফিরে যাওয়ার কথা না, কেনো যানি ইভানের মনে সন্দেহ হয়। সমুদ্রর আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় সে ইনায়াকে খুঁজতে থাকে,তবে কোথাও ইনায়ার সন্ধান পায় না।

°★ ঘুমন্ত অবস্থায় এমন কথা শুনে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে অরণ্য। ফোনের স্কিনে খেয়াল করে দেখে, অপরিচিত শএু কল করেছে। শএুর প্রতিটা কথা যখন অরণ্য বুঝতে পারে, তখন সে চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে। বিছানা ছেড়ে উঠে যায়, ওয়াশরুমে যায় ইনায়া সেখানে আছে কি না দেখতে। কালকে যেমন ইনায়া সারপ্রাইজ দিয়েছে, আজ ও তার কোনো পরিকল্পনা করছে না কি তা যানতে রুমে থেকে বের হয়। অরণ্য প্রায় সব জায়গায় খুঁজে কিন্তু কোথাও ইনায়া নেই, তার লোক সহ প্রতৈকে ইনায়ার খোঁজ করে। অরণ্য রিসাের্ট থেকে বের হয়ে সমুদ্রর কাছে যায়, সেখানে খুঁজতে থাকে। কারণ রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে ইনায়া সমুদ্রর কাছ৷ গিয়েছে।

°★ সমুদ্রর কাছে হাজার হাজার মানুষ রয়েছে, কিন্তু কোথাও ইনায়া নাই। প্রতৈক মানুষকে ইনায়ার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে, কোথাও দেখেছে কি না কিন্তু প্রতৈকে না করে দেয়। অন্যদিকে ইভান অরণ্যকে দেখে এগিয়ে আসে তার কাছে, এরপর বলে –

______ “- অরণ্য ইনায়া কোথায়? রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার করে বাহিরে সমুদ্রর কাছে এসেছিলো। হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো? তোমার সাথে কি ইনায়ার দেখা হয়েছে?

°★ ইভানের কথা শুনে অরণ্য তার দিকে তাকায়৷ সকাল নয়টার সময় ইনায়ার ঘুম ভেঙেছে, রাতে কিছু না খাওয়ার কারণে তার হয়তো খিদে পেয়েছে। যার কারণে রিসাের্ট থেকে বের হয়ে সমুদ্রের কাছে এই রেস্টুরেন্টে এসেছে। খাবার অর্ডার করে কিন্তু খাবার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে সে সমুদ্রের কাছে চলে আসে। তখন ইভানের সাথে দেখা হয় তার, ইভান যখন রেস্টুরেন্টে নিজের খাবার নিতে যায়। তখনই ইনায়ার কিডন্যাপ হয়, আর এরপর অরণ্যর কাছে ফোন করে। অরণ্য মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে, তার এখন নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে। সে কি করে এতোটা কেয়ারলেস হতে পারে, ইনায়া রুম থেকে বের হয়ে কোথায় যাচ্ছে তা সে কেনো খেয়াল রাখতে পারে নাই।

°°★ অরণ্যর সাথে থাকা বর্ডিগাড কি করছিলো, তাদের কি এখানে হানিমুনে নিয়ে আসা হয়েছে। ইনায়ার প্রতি নজর রাখার জন্য এসেছে তারা, কিন্তু সমুদ্রর মধ্যে এতো মানুষের ভিড়ে ইনায়াকে কিডন্যাপ করে নিয়ে চলে গেলো কিন্তু কেউ কিছু করতে পারল না। বডিগার্ড সকলে আশেপাশে খুঁজে যাচ্ছে, কিন্তু অনেক সময় ধরে খোঁজার পর ও ইনায়ার কোনো দেখা না পেয়ে তারা ফিরে আসে অরণ্যর কাছে এরপর বলে ————–

———— “- বস ইনায়া ম্যামকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? এখন কি করব? পুলিশ হল করব? ——–

°°★ অরণ্য তার বডিগার্ডের কথা শুনো দাঁত কটমট করে তাদের দিকে তাকায়। যেনো এখুনি সবাইকে খুন করে মাটির নিচে পুঁতে দিবে। ইভান তাদের কথা শুনে অবাক হয়, অরণ্যকে স্যার বলো ডাকছে কেনো? মালদ্বীপে আসার সময় কি অরণ্য বডিগার্ড নিয়ে এসেছে কিন্তু কেনো?

অরণ্যর শরীরে এখন রাগে জ্বল যাচ্ছে, তার হাতে থাকা ফোনে সময় দেখে তার ভয় আর রাগ দুইটাই হচ্ছে। ঘড়িতে প্রায় সকাল ১০:০০ বাজে, শএুর কথা অনুয়ায়ী দুপুর বারোটার মধ্যে সে ইনায়াকে খুন করে ফেলবে। খুন শব্দটা উচ্চারণ করতে গেলে অরণ্যর ভয় করছে, সে ইনায়াকে ছাড়া কি করে বাচঁবে। যদি ইনায়া মৃত্যু হয় তবে যে অরণ্যর ও মৃত্যু হবে। কারণ ইনায়াকে ছাড়া বেঁচে থাকা তার দ্বারা অসম্ভব, ওই অষ্টাদশী নারীকে যে সে অনেক ভালোবাসে। অরণ্য একবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে, আরেকবার তার বডিগার্ডকে আশেপাশে খুঁজতে বলছে।

°★ অরণ্যর এমন অবস্থা দেখে ইভান ওকে সান্তনা দেয় আর বলে ———–

______ “- অরণ্য ইনায়া মনে হয় কোথাও হারিয়ে গেছে? সমুদ্রে এতো মানুষের ভিড়ে হয়তো, পথ ভুলে কোনো অজানা রাস্তায় চলে গেছে। থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্ট দিলে তারা ইনায়াকে খুঁজে বের করবে.

°★ ইভানের কথা শুনে অরণ্য শান্ত হয় নাই, কারণ সে যারে ইনায়া হারিয়ে যায় নাই ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আর ইনায়া এখন অনেক বিপদে হয়েছে, যদি এখুনি তাকে খুঁজে না পাওয়া যায় তবে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবে ইনায়াকে। অরণ্য বলে ———

_______”- ইনায়া হারিয়ে যায় নাই বরং ওর ওর কিডন্যাপ করা হয়েছে? আর ইনায়ার জীবন এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদি এখুনি ওর খোঁজ না পাওয়া যায়, তবে ওরা মেরে ফেলবে আমার ইনায়াকে ——–.

°★ অরণ্যর এমন কথা শুনে ইভান সম্পূর্ণ শকড হয়ে যায়। ইনায়াকে কিডন্যাপ করা হয়েছে কথাটা যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না, কারণ বিজনেস বা ব্যক্তিগত জীবনে তার কোনো শএু নেই। ইনায়া যথেষ্ট সাহসী আর মিশুক একজন মানুষ, যার সাথে ব্যবসা বা অন্য যেকোন বিষয়ে কেউ শএুতা করবে না। আর অরণ্য কি করে যানল ইনায়ার কিডন্যাপ হয়ে গেছে, তবে কি অরণ্য যানে কে ইনায়াকে কিডন্যাপ করেছে । এর জন্য মালদ্বীপে সাথে করে বডিগার্ড নিয়ে এসেছে, কিন্তু কে এই শএু সে ইনায়াকে খুন করতে চাই। যার জন্য মালদ্বীপে তাদের হানিমুনে চলে এসেছে, ইভান বলে ———

———– “- ইনায়া কিডন্যাপ হয়ে গেছে মানে? তুমি কি করে জানলে সেটা? আর ইনায়ার সাথে তো কারো শএুতা নেই, তবে কে তাকে খুন করার চেষ্টা করবে? তুমি কি তার পরিচয় যানো? আসল অপরাধী কে?

°°★ এতোবছর অরণ্য বাড়ির প্রতৈক সদস্যর কাছ থেকে শএুর পরিচয় লুকিয়ে রেখেছে কিন্তু আর নয়। আগন্তুক শএু যে কোনো অপরিচিত মানুষ নয়, বরং তাদের আপনজন তা সকলের জানা দরকার। আর ইভান চৌধুরী বাড়ির সন্তান তাই তার জানার অধিকার রয়েছে সবকিছু বিষয়ে। অরণ্য শান্ত হয়ে বলে ———–

———- “- ওনি শুধু ইনায়ার শএু নয় বরং আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় শএু। ঘরের শএু বিভীষণ, আমাদের প্রিয় ফুফু। বিদেশে এতো বছর তুমি যার কাছে থেকে পড়াশোনা করেছো, যে বক্ত্যি এতো বছর ধরে তোমার মনে ইনায়ার প্রতি বিষ ঢেলে গেছে। যার কারণে ঘৃণা আর রাগে তুমি ইনায়াকে ডিভোর্স দিয়েছ। আমার বাবা এক্সিডেন্টর জন্য দায়ী ওনি, ইনায়ার মা বাবার হত্যা কারী ওনি। এসএস কোম্পানির ঔষধে বিষ মিশিয়ে হাজারো অসহায় বাচ্চার খুনি হানিয়া বেগম আমাদের ফুপি “————-.

°°★ অরণ্যর কথা ইভান বিশ্বাস করে না , অসম্ভব তার ফুপি এমন কাজ কখনো করতে পারে না। যিনি পনেরো বছর তাকে মায়ের ভালোবাসা, আদর, দিয়ে বড়ো করেছেন ওনি এতো নিকৃষ্ট হতে পারেন না। তবে ফুপি সবসময় ইনায়ার নামে বাজে কথা বলত, অরূণা বেগম ইনায়ার জন্য ইভানকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সবকিছু মূলে ইনায়া রয়েছে, এইসব বলতো যার কারণে ইভানের মনে ইনায়ার প্রতি ঘৃণা জন্মাতে থাকে। ইভান ব্রেন ওয়াশ করে, যার ফলে সে দেশে ফিরে এসে ইনায়াকে ডিভোর্স দেয়। কিন্তু তার ফুপি খুনি হতে পারে না, নিজের ভাইকে হত্যা করার মতো এমন জঘন্য অপরাধ ওনি করতে পারে না। ইভান দ্রুত বলে ———-

———- “- অসম্ভব অরণ্য আমার ফুপি এতো জঘন্য আর নিচুঁ কাজ করতে পারে না। আর চাচ্চুতো ওনার আপনার ভাই, তাহলে কেনো তাকে খুন করতে যাবে ওনি। ইনায়ার বাবা আর মা ছিলেন ফুপির সবচেয়ে ভালো বন্ধু তাদের বা কেনো খুন করবেন। ইনায়ার সাথে তার কি শএুতা থাকতে পারে?

°★ অন্যদিকে ইনায়া অজ্ঞান করে গাড়ি করে একটা গো ডাউনে নিয়ে যাওয়া হয়, তার চোখ মুখ এখন কাপড় দিয়ে বাঁধা। ইনায়াকে নিয়ে গিয়ে এখন, চেয়ারের সাথে বেঁধে দেয়। শক্ত দড়ি দিয়ে। অন্যদিকে অরণ্যর হঠাৎ করে মনে পড়ে, সে গত তিনদিন আগে ইনায়াকে হাতের ঘড়ি গিফট করেছে। যার মধ্যে জিপিএস ট্যাকার লাগানো ছিলো, ইনায়ার সেফটির জন্য এমন করেছে। অরণ্য ফোন বের করো তাড়াতাড়ি রামিমকে কল করে –

_____” রামিম ইনায়ার হাতে থাকা ঘড়ির লোকেশন ট্র্যাক কর। ও কোথায় রয়েছে সেটা জানতে হবে আমাদের?

—— ” ওকে বস _____.

°★ ইনায়ার মাথায় এখন বন্ধুক হাত করে দাঁড়িয়ে রয়েছে একজন মহিলা। ঘড়িতে প্রায় বারোটা বেজে গেছে, ইনায়ার জ্ঞান ফিরে নাই এখনো। আর একটু সময় পর ইনায়ার মৃত্যু নিশ্চত।

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৪৯ [ ইনায়া কি সত্যি মারা গেছে? ]

প্রায় দুই ঘণ্টা পর ইনায়ার জ্ঞান ফিরে আসে। চোখের উপর কালো কাপড় দ্বারা বাঁধা, আর তার হাত পা মোটা রশি দিয়ে চেয়ারের সাথে বাঁধা। ইনায়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু সে সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়। সমুদ্রর তীর থেকে যে তাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে, সেটা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগে না। কিন্তু তার সাথে কার শএুতা থাকতে পারে, কোনো অপরিচিত ব্যক্তির কি?আগন্তুক শএু যে এতোদিন ইনায়ার আড়ালে থেকে তার ক্ষতি করে গেছে। যার কারণে দুইবছর আগে অরণ্যর এক্সিডেন্ট হয়েছে, এসএস কোম্পানির খাবারে বিষ মিশিয়ে যে হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে।

°°★ ইনায়া তার চোখ আর হাতের বাধঁন ছাড়ানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে ইনায়ার হাতে ঘড়িতে থাকা জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করে রামিম তার লোকেশন ট্রাক করে। সমুদ্রের থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে এখন ইনায়া অবস্থান করছে, যা শুনে অরণ্য লোকজন নিয়ে সেখানে ছুটে যায়। যদিও ইভান তাদের সাথে যায় না, কারণ অরণ্য তাকে নিয়ে যেতে চাই নাই সেখানে অনেক ঝামেলা হবে যা ইভানের সম্মুখে না হওয়াই ভালো। তাছাড়া ইভান অনেক ছোটবেলা থেকে তার ফুপির কাছে থেকেছে বিদেশে, প্রায় পনেরো বছর বিদেশে তার কাছে থেকে পড়াশোনা করেছে। ফুপি তার কাছে মায়ের সমান, আর ফুপি অরণ্যকে ঘৃণা করতে পারে কিন্তু ইভানকে ওনি ভালোবাসেন। যদি এখন ইভান ফুপির কুৎসিত আর নোংরা রূপ দেখে, তবে তার কষ্ট হবে এবং মন ভেঙে যাবে।

°°★ গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছে, রাস্তা যেনো শেষ হচ্ছে না। অরণ্য বারবার ঘড়ির দিকে সময় দেখে যাচ্ছে, আর জিপিএস ট্রাকার দিয়ে দেখছে লোকেশন অনুযায়ী কতদূরে রয়েছে ইনায়া। সারা শরীর বেয়ে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে, অন্তর জুড়ে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ইনায়া এখনো চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় রয়েছে, তার হাত পায়ের বাঁধন মুক্ত করার চেষ্টা করছে। চেয়ারে থাকা একটা পেরেক দিয়ে হাতের দড়ির মধ্যে ঘষে যাচ্ছে। হঠাৎ করে তার চোখ থেকে কালো কাপড় সরিয়ে দেয় একজন, কিন্তু তার হাতের বাধঁন এখনো খোলা হয় নাই ———-.

__ °°★ কালো কাপড় সরে যায় চোখের উপর থেকে। ইনায়া চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় অনুভব করে বাহিরে থেকে আসা রৌদ্রর আলো তার চোখে পড়ছে। ইনায়া পিটপিট করে চোখ খুলে, সামনে তাকিয়ে দেখে কয়েকজন সুষম দেহের অধিকারী পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। যাদের প্রতৈকের হাত রয়েছে বন্ধুক, আর তাদের চোখে হিংস্র আর নাশকতা। এখানে প্রায় বিশ থেকে তিরিশ জন লোক উপস্থিত রয়েছে, কিন্তু তারা সকলে তো ইনায়ার শএু হতে পারে না। নিশ্চয়ই কারো নির্দেশে তারা ইনায়াকে কিডন্যাপ করেছে, কিন্তু মানুষটা কে সেটা জানার জন্য ইনায়া বলে ————–

———-! “- কেনো কিডন্যাপ করেছেন আমায়? কি শএুতা রয়েছে আপনাদের সাথে আমার? আর কার কথায় বা কিডন্যপা করেছেন? আসল অপরাধীকে আমার সামনে আসতে বলুন, কে আমার শএু সেটা যানতে চাই আমি “।

°°★ ইনায়ার কথা শুনে সকল গুন্ডা সরে যায়, তাদের পিছন থেকে একজন মহিলা বের হয়ে আসে। যার হাতে ও বন্ধুক রয়েছে, কিন্তু অপরিচিত মহিলাকে দেখে ইনায়া থমকে যায়। এই মহিলা অপরিচিত নয়, বরং তার পরিচিত। ছোটবেলার সকল সৃতি হয়তো ইনায়ার মনে নেই, তার বাবা মায়ের চেহারা কিছু মনে আছে তার। সামনে থাকা মহিলা তাদের বাড়িতে আগে অনেকবার আসত, তার বাবার মৃত্যুর আগে ওনি বাবার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলেন। আর ওনি তো মিলন সাহেবের বোন, চৌধুরী বাড়িতে কয়েকবার এসেছেন ওনি।

°°★ ইনায়া অস্পষ্ট স্বরে বলে ———-

——- “- ফুপি আপনি এখানে? ——-

°°★ চৌধুরী বাড়ির একমাত্র কন্যা সন্তান হানিয়া বেগম। মিলন চৌধুরী আর মাহির চৌধুরীর বোন, যার বিয়ে হয়েছে লন্ডনে । যেখানো স্বামী সন্তান নিয়ে থাকেন ওনি, দেশে আসা ওনি খুব একটা পছন্দ করেন না। প্রায় পাঁচবছর বা তার ও অধিক সময় পর পর ওনি দেশে আসেন। হানিয়া বেগম অনেক বড়োলোক, ওনার স্বামী ও বিদেশের অনেক বড়ো ব্যবসায়ী। বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য ইভান সেখানে যায়, এতোবছর সেখানে থেকে পড়াশোনা শেষ করে। কিন্তু ওনি এখানে কি করছেন, আর ইনায়ার কিডন্যাপ বা কেনো করিয়েছেন ওনি। ইনায়ার সাথে কি শএুতা থাকতে পারে ওনার, ইনায়ার এমন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে হানিয়া বেগম সয়তানি হাসি দিয়ে বলে ————-

———– “- কি ইনায়া রাজ চৌধুরী। এতোদিন পর আমাকে দেখে খুশি হও নাই। তোমার বাবার প্রিয় বন্ধু, সম্পর্কে তোমার ফুফু শাশুড়ী হয়। আর শএুতায় তোমার বাবার খুনি, এসএস কোম্পানির সাবেক এমডি ———-.

°°★ ” হানিয়া বেগম তাহলে ইনায়ার আগন্তুক শএু ” কথাটা যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ইনায়ার। আর ওনি তার বাবার প্রিয় বন্ধু ছিলেন,তবে কেনো তার বাবাকে খুন করতে যাবেন ওনি? আর যার স্বামী বিদেশের সবচেয়ে বড়ো বিজনেস ম্যান সে কেনো এসএস কোম্পানির টাকার লোভ করতো যাবে। আর অরণ্যর কথা অনুসারে এই আগন্তুক শএু তার বাবার হত্যা করছে। যদি হানিয়া বেগম খুনি হয়, তবে সে কোনো নিজের আপন ভাইয়ের খুন করবে। ইনায়া বলে ———-

_______ “- আমার সাথে কি শএুতা রয়েছে আপনার? আর আমার আব্বু আমার বন্ধু ছিলেন, তবুও তাকে কেনো খুন করলেন আপনি? এতো টাকার মালিক হওয়ার পর কেনো এসএস কোম্পানির টাকা চুরি করেছেন আপনি? আর কেনো নিজের ভাইকে খুন করেছেন?

ইনায়ার কথা শুনে হানিয়া বেগম বলে ———

_____ “- ইনায়া তোমার সাথে আমার কোনো শএুতা নেই। শএুতা রয়েছে তোমার বিশ্বাসঘাতক বাবা, আর সয়তান স্বামীর সাথে। আর এসএসে কোম্পানির আড়ালে আমার সমস্ত অবৈধ ব্যবসা লুকিয়ে ছিলো, যার কারণে এই কোম্পানি দরকার আমার ————-.

______ “- আমার বাবা কি ক্ষতি করেছে আপনার? আর অরণ্য যথেষ্ট ভালো মানুষ, আর সে আপনার ভাইয়ের ছেলে তবুও তাকে খুন করার জন্য গাড়ির এক্সিডেন্ট করিয়েছেন আপনি? আর এসএস কোম্পানির মালিক আমি আপনি নন, আর আমার কোম্পানির খাবারে কোনো বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে মানুষ হত্যা করতে দিব না আমি ————–.

______ °★ ইনায়ার কণ্ঠে এমন তেজ দেখে হানিয়া বেগম হাসে আর বলে ———–

———- “- ওয়াও একদম বাবার কার্বন কপি হয়েছ তুমি ইনায়া। তোমার বাবা মানে আমার প্রিয় বন্ধু এইরকম ছিলো, সবসময় সত্যর পথে চলত। যার কারণে আমার মতো এমন সুন্দরী, মর্ডান ইম্মার্ট মেয়ের ভালোবাসা প্রত্যাখান করে। এক গ্রাম্য মেয়ের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করে, যার শাস্তি স্বরুপ মৃত্যু উপহার দিয়েছি ওকে ——–.

ইনায়া অবাক হয়ে বলে —————

——– “- আপনি শুধু মাএ প্রতিশোধের জন্য আমার বাবাকে খুন করছেন? ওনি আপনাকে বিয়ে করে নাই বলে? এইটাই কি মূল কারণ আমার বাবার হত্যার?

হানিয়া বেগম কথাটা শুনে মাথা নাড়িয়ে না বলে —–

—– “- একমাত্র প্রতিশোধের জন্য ইনায়ার বাবাকে খুন করে নাই হানিয়া বেগম। বরং একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিজের বন্ধু আর ভালোবাসার মানুষকে খুন করেছে। অরণ্যর বাবা মানে মাহির চৌধুরী যখন রেহানা বেগমকে বিয়ে করে তখন মিলন চৌধুরী আর তার বাবা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। কারণ রেহানা বেগম গরীব ঘরের সন্তান ছিলেন। এরপর মাহির চৌধুরী তার পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেয় বস্তিতে, মাহির সাহেব সামান্য কাজ করে তাদের সংসার চালাতো। বিয়ের কয়েকবছর পর তাদের ছেলে সন্তান হয় যার নাম অরণ্য। অন্যদিকে ইনায়ার বাবা ইমতিয়াজ আহমেদ বিয়ে করেন অরুণা বেগমের বান্ধবী রুনা বেগমকে —————.

———- “- ইমতিয়াজ আহমেদকে আবার পছন্দ করতেন হানিয়া বেগম। কিন্তু চৌধুরী বাড়ির এক অনুষ্ঠানে হানিয়া বেগমের সাথে উপস্থিত হন ইমতিয়াজ আহমেদ। সেখানে অরুণা বেগমের বান্ধবীকে দেখেন ওনি, এরপর তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। যখন হানিয়া বেগম তাকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করেন, তখন ওনি মানা করে দেন। কারণ হানিয়া বেগমকে ওনি বন্ধুর নজরে দেখতেন, যার ফলে হানিয়া বেগম রাগ করেন। কিন্তু ওনি মনে শএুতা নিয়ে, শুধু নাটক করে যান যে ওনি ইমতিয়াজ আহমেদ আর রুনার বিয়ে মেনে নিয়েছেন “——–

—— “- কয়েক বছর পর তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় ইনায়া। রুনা বেগমের বাবা শফিক সাহেব মেয়ের প্রেমের বিয়ে মেনে নেন নাই, যার ফলে ওনি তাদের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিছিন্ন করে। রুনা বেগম ও তার বাবার উপর রাগ করেন, কিন্তু ইনায়ার জন্মের খবর শুনো শফিক সাহেব খুশি হন। মেয়ের অন্যায় ভুলে যান নাই, তবে নাতনির জন্য ওনি কিছু জমিন আর এসএস কোম্পানি লিখে দেয়। যার বিষয়ে শুধু ইমতিয়াজ আহমেদ যানত, রুণা বেগম নয়। ইমতিয়াজ আহমেদ এসএস কোম্পানির বিষয়টা হানিয়া বেগমকে বলে ——–.

°°★ ইমতিয়াজ আহমেদ পরিবার যথেষ্ট ধনী ছিলো, তাদের নিজস্ব ব্যবসা তাকে সামলাতে হতো। তাছাড়া তখন ইনাযার মা রুনা বেগমের অসুস্থ হয়ে পড়েন, যার কারণে ওনারা সকলে বিদেশে চলে যান। সকল দায়িত্ব দিয়ে যান হানিয়া বেগমের উপর, মাহির সাহবে তখন বেকার পুরুষ বউ বাচ্চার খরচ সামলাতে ওনি হিমশিম খান। যার জন্য মিলন সাহেব আড়াল থেকে এসএস কোম্পানির চাকরি করার জন্য অফার করেন তাকে। হানিয়া বেগম ও তার ভাইকে কাজ দিতে রাজি হন ——–.

°°★ এসএস কোম্পানির দায়িত্ব কয়েকদিন ভালোই পালন করছিলেন ওনি। যতখন না ওনার পরিচয় হয় একজন ড্রাগ ডিলারের সাথে, যে তাকে কোটি টাকার অফার করে। হানিয়া বেগম নিজের লোভ সংযত রাখতে পারে নাই, ওনি রাজি হয়ে যান। এসএস কোম্পানির খাবার বিদেশে পাঠানো হতো, যার মধ্যে হাজারো ড্রাগস পাচার করা হতো। এর ফলে হানিয়া বেগম একাউন্ট কোটি টাকা জমা হতো। কিন্তু এই বিষয়টা নজর এড়ায় না মাহির চৌধুরী।

°°★ মাহির চৌধুরী তার বোনকে অনেক বার সর্তক করেছে খাবার ড্রাগস না মিশাতে। কিন্তু ওনি শুনে নাই লোভ থেকে বের হতে পারে নাই। হানিয়া বেগমের বিরুদ্ধে সকল তথ্য প্রমাণ জোগাড় করেন ওনি, যা ইমতিয়াজ আহমেদকে দেখাতে চান। কিন্তু হানিয়া বেগম এর আগেই তার আপন ভাইয়ের খুন করেন শাফায়াতের সাহায্য। শাফায়াত ইনায়ার মামা ছিলো, কিন্তু এসএস কোম্পানি তার নামে না লিখে দেওয়ায় ওনি রেগে ছিলেন। যার ফলে হানিয়া বেগমের সাথে হাত মিলান,

°°★ মাহীর চৌধুরীর মৃত্যু হয় এক্সিডেন্ট যার খবর ইমতিয়াজ আহমেদ শুনেন। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসেন ওনি, এসএস কোম্পানির সকল দায়িত্ব আবার ওনার কনট্রালে নিয়ে নেয়। আর খুব সহজেই বুঝে যান হানিয়া বেগমের সকল ষড়যন্ত্র, যার কারণে ওনি তার বিরুদ্ধে থাকা সমস্ত প্রমাণ পুলিশকে দিয়ে দিতে চান। হানিয়া বেগম ভয় পেয়ে যায়,তার ক্রাইম পার্টনার রাফির সাথে মিলে একই ভাবে ইমতিয়াজ আহমেদের এক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলেন। এরপর এসএস কোম্পানির সহ সকল সম্পত্তির অবৈধ মালিক হন হানিয়া বেগম। আর বিদেশের ড্রাগস ডিলার রাফিকে বিয়ে করেন, এখানে এসএস কোম্পানির দায়িত্ব দিয়ে যান শাফায়াতকে। আর তখন বিধবা রুনা বেগমের জায়গা হয় চৌধুরী বাড়িতে।

°★ [ বর্তমান সময় ] ইনায়া সকল ঘটনা শুনে অবাক হয়ে যায়, তার বাবার খুনি এই হানিয়া বেগম। ইনায়ার রাগের পরিমাণ দিগুণ বেড়ো যায়, অন্যদিকে অরণ্য প্রায় গোডাউনের কাছে পৌঁছে গেছে। ঠিক তখন তার ফোনে কল করে হানিয়া বেগম, অরণ্য কল রিসিভ করে। হানিয়া বেগম বলে –

——- “- ইনায়ার মৃত্যুর আগে একবার ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছা আছে তোমার?

——- “- ফুপি ইনায়ার যদি কিছু হয় তাহলে কিন্তু আমি আপনাকে খুন করে ফেলব। ওর কোনো ক্ষতি করবেন না আপনি? ———;

°★ অরণ্যর কণ্ঠ শুনে ইনায়া বলে ——–

______ “- অরণ্য ওনি আমার বাবাকে খুন করেছেন।এই মহিলাকে আপনি ছাড়বেন না, যদি আমি মারা ও যায় তবুও আপনি ওকে খুন করবেন?——

—— “- ইনায়া কিছু হবে না আপনার? যতদিন বাঁচব একসাথে বাঁচব। আমি এখুনি আসছি আপনার কাছে —–.
হানিয়া বেগম ফোন কানে নিয়ে বলে ——-

‘- তোমাদের এতো ভালোবাসা দেখার আমার হাতে নেই। শেষবার ইনায়ার কণ্ঠ শুনে নিলে, এখন ওর মৃত্যুর চিৎকার ও শুনো।

°°★ হানিয়া বেগম বন্ধুক তাক করে ইনায়ার দিকে। ইনায়া চোখ বন্ধ করে নেয়, অরণ্য ফোনের অপর পাশ থেকে বারবার বলছে যাতে ইনায়ার কিছু না করে। কিন্তু হানিয়া বেগম শুনে না, ওনি বন্ধুকের টিগারে চাপ দেন। হঠাৎ করে এক গুলি ছুটে যায় চেয়ারের দিকে, গুলির শব্দ শুনে অরণ্য বলে -;——–

——–“- ইনায়া “——–

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#লেখিকা_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৫০ [ হানিয়া বেগমের মৃত্যু ]

গুলির শব্দ শুনে অরণ্য চিৎকার দিয়ে উঠে। গাড়িতে থাকা প্রতৈক সদস্য ভয় পেয়ে যায়, ফোনের অপর পাশ থেকে অন্য কোনো শব্দ আসছে না। অরণ্যর শরীর বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে যায়, তার এখন কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। যদি ইনায়া বেঁচে না থাকে তবে সে কি করে বাচঁবে। বাবার মৃত্যুর পর সে বড্ড একা হয়ে গিয়েছিলো, প্রিয় মানুষকে হারানো তীব্র ব্যাথা অনুভব করছিলে্। আজ এতোবছর পর আবার সেই একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে সে,কিন্তু কি করবে তা যানে না। কবে এতোদিন শুধু রক্তের সম্পর্কর কারণে হানিয়া বেগমকে শাস্তি দেয় নাই অরণ্য, কিন্তু এখন তার অপকর্মের শাস্তি অবশ্যই তাকে দিবে।প্রিয় মানুষকে হারানো বেদনা তাকে ও সয্য করতে হবে।

°°★ ——— অন্যদিকে গোডাউনে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। চেয়ার থেকে অঝরে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে, যা দেখে হানিয়া বেগম পৈশাচিক হাসি দেয়। ইনায়ার চেয়ার এখন মাটিতে ধুলোয় পড়ে রয়েছে, আর ব্যাথায় সামান্য কাতরে উঠে ইনায়া। গুলি ইনায়ার শরীরে লাগে নাই, কারণ হানিয়া বেগম যখন তার আগের করা পাপের কথা শুনা ছিলো, তখন ইনায়া চেয়ারে থাকা পেরেক দিয়ে তার হাতের বাঁধন খেলার চেষ্টা করছিলো। হানিয়া বেগম তার কাহিনী বলায় এতোটা বিজি হয়ে যায় যে, সে ইনায়ার দিকে ভালো করে খেয়াল করে নাই। যখন বন্ধুক থেকে গুলি চলে তখন ইনায়া তার হাতের বাঁধন খুলে ফেলে, আর চেয়ারে ধাক্কা দিয়ে নিচে পড়ে যায়। তবে তার হাতের খুব কাছ দিয়ে গুলি যাওয়ার কারণে, সেখানে অল্প ক্ষত হয়ে যায়।

°°★ হানিয়া বেগম যখন বুঝতে পারে যে ইনায়া এখনো বেঁচে আছে। তখন ওনি ইনায়ার দিকে উদ্দেশ্য করে আবার গুলি ছুঁড়েন, ইনায়া গড়িয়ে অন্য পাশে চলে যায়। সেখানে থাকা একজন লোককে মেরে তার হাত থেকে গুলি নেয় ইনায়া, গুলি করা ইনায়ার জন্য কঠিন বিষয় নয়। বরং এর আগে ও সে মানুষ খুন করেছে, ইনায়া প্রথম গুলিটা হানিয়া বেগম হাতে করে। যার ফলে হানিয়া বেগমের হাত থেকে গুলি পড়ে যায়, আর ওনি ব্যাথায় আত্মানাথ করো উঠে। ইনায়া তার বন্ধুক দিয়ে অন্য লোকজনকে গুলি করতে থাকে, যার ফলে সাথে সাথে সেখানে প্রায় পাঁচ দশটা লাশ পড়ে যায়।

°°°★ ——— হানিয়া বেগম ইনায়ার এমন রূপ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। ইনায়াকে যথেষ্ট ভীতু আর চুপচাপ মেয়ে বলে ওনি জানতেন।কিন্তু ইনায়া যে সাহসী রূপ ওনি দেখছেন তা অবাক করা বিষয়, বন্ধুক দিয়ে যেভাবে গুলি করছে তা দেখে মনে হচ্ছে সে আগে ও মানুষ খুন করেছে। হানিয়া বেগম ইনায়াকে দেখতে এতো বিজি হয়ে যান যে, ওনার হাতের ক্ষতর দিকে খেয়াল করে নাই। হানিয়া বেগমের সাথে থাকা প্রায় সকল লোক ইনায়ার গুলি খেয়ে আহত হয়ে গেছেন, এর মধ্যে কিছু মারা ও গেছে। ইনায়ার শরীরে এখন প্রচুর রাগ, হানিয়া বেগম তার মা বাবাকে খুন করেছে কথাটা যতবার মনে পড়ছে। ততবার তার রাগের পরিমাণ তীব্র হয়ে যাচ্ছে, শুধু মাএ এই মহিলার জন্য ইনায়ার জীবন থেকে সব সুখ শান্তি হারিয়ে গেছে।

°°★ ইনায়ার হাতের কনুই থেকে রক্ত পড়ে যাচ্ছে, এর ফলে সে হয়তো কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। আর কাল রাত থেকে কিছুই খাওয়া হয় না, সকালের নাস্তা করার আগেই তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। কিন্তু ইনায়া এখন দুর্বল হয়ে পড়লে চলবে না, তার মা বাবার খুনিকে শাস্তি দিতে হবে। ইনায়া এইবার এগিয়ে আসে হানিয়া বেগমের কাছে, এরপর হাত গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। প্রায় তিনটা, চারটা থাপ্পড় যে পড়ে তা ভুল নয়, হানিয়া বেগম থাপ্পড় খেয়ে রাগী চোখে তাকায় ইনায়ার দিকে। হানিয়া বেগম কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ইনায়া তার মাথার চুল শক্ত করে ধরে বলে —————

———– “- শুধু মাএ আপনার জন্য ফুপু আমার জীবন থেকে সমস্ত সুখ হারিয়ে গেছে। আমার বাবা বিশ্বাস করে তার কোম্পানির দায়িত্ব দিয়েছিলো আপনাকে। কিন্তু আপনি কি করলেন শুধু মাএ নিজের লোভের জন্য তাকে খুন করলেন। আমার বাবার হত্যাকারীকে শাস্তি আমি অবশ্যই দিব, আর সেটা হলো মৃত্যু “—————.

°°★ ইনায়া কথাটা বলে হানিয়া বেগমের দিকে বন্ধুক তাক করে,হানিয়া বেগম ভয়ে দূরে সরে যান। ওনি বলেন ———–

——-“- ইনায়া তুমি আমাকে খুন করতে পারো না। আমি তোমার ফুপি শাশুড়ী হয়। ক্ষমা করে দেও আমাকে ইনায়া ———.

°°★ ইনায়া শত কষ্টের মধ্যে মৃদ্যু হেঁসে বলে ——–

——– “- আপনার মতো এমন লোভী মহিলা কারো ফুপি হওয়ার যোগ্য নয়। আর ক্ষমাতো মানুষকে করা যায় আপনার মতো এমন সয়তানকে নয় ———-.

°°★ ইনায়ার বন্ধুকের টিগারে চাপ দেওয়ার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় অরণ্য। গাড়ি থেকে নেমে ছুটে আসে এখানে, ইনায়াকে সুস্থ থাকতে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অরণ্য বলে ————

——— “- ইনায়া আপনি ঠিক আছেন? কোথায় ব্যাথা লাগে নাই তো? ফুপি কেনো ক্ষতি করে নাই তো আপনার?

°°★ ইনায়ার শরীর শক্ত করে বুকের মাঝে ধরে কথাটা বলে অরণ্য। ইনায়া নিজের মাঝে জমিয়ে রাখা কষ্ট, চোখের পানির বিন্দুর মাধ্যমে প্রকাশ করে। ইনায়া কান্না করতে থাকে আর বলে ———————

————-“- অরণ্য ফুপি আমার আব্বুকে খুন করেছে। এসএস কোম্পানির খাবার বিষ মিশিয়ে হাজারো অসহায় বাচ্চার হত্যা করেছেন। বাবার খুনি ওনি “।

°°★ অরণ্য ইনায়াকে শান্ত করে, হানিয়া বেগমের দিকে একবার রাগী চোখে তাকায়। ইনায়ার কনুই থেকে অতিরিক্ত রক্ত পড়ার কারণে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। বিন্দু মাএ শক্তি তার শরীরে অবশিষ্ট নেয় এখন, তার সাথে সারা শরীরের সমস্ত ভার অরণ্যর শরীরে ছেড়ে দেয়। অরণ্য অনুভব করে ইনায়ার নিঃশ্বাসের গতির তীব্রতা কমে গিয়েছে। অরণ্য বুকের মধ্যে থাকা ইনায়ার মুখে উচ্চুঁ করে দেখে, সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। অরণ্যর চোখ যায় ইনায়ার হাতের কনুইয়ের দিকে, সেখান থেকে রক্ত পড়া দেখে অরণ্যর শরীরের রাগ দিগুণ বেড়ে যায়। ইনায়াকে কোলে তুলে নেয়, এরপর গাড়ির মধ্যে নিয়ে বসায়। গাড়ি থাকা বডিগার্ডকে উদ্দেশ্য করো বলে ———

————– “- ইনায়া অজ্ঞান হয়ে গেছে, হাসপাতালে নিয়ে এডমিট করিয়ে দাও ওকে। আর শুনো যদি আমার বউয়ের কিছু হয়, তবে শুধু হানিয়া বেগম নয় তোমাদের কেউ খুন করব আমি। আমি আসছি “————.

°°★ অরণ্যর এমন শান্ত গলায় বলা কথাটা শুনে বডিগার্ড ভয় পেয়ে যায়। তারা ইনায়াকে নিয়ে গাড়ি করে হাসপাতালে উদ্দেশ্য রওনা দেয়, অরণ্য এগিয়ে আসে হানিয়া বেগমের কাছে। হানিয়া বেগম ভয় পায়, অরণ্যর এমন শান্ত রূপ কোনো ঘূর্ণিঝড়ের আভাস দিচ্ছে তাকে। হানিয়া বেগম কথা বলার আগেই, অরণ্য তার ফোন থেকে একটা নিউজ বের করে। এরপর শান্ত গলায় বলে —————

————” – ফুপি তোমাকে না বলেছিলাম যদি তুমি আমার ইনায়ার ক্ষতি করো। তবে তোমার পরিবারের লাশের জন্য দাফনের কাপড় কিনে রাখতে৷ এই নাও আমি তোমাকে লাশ দিলাম, এখন কাফনের কাপড় কি তুমি কিনবে না আমি? ————.

°°★ অরণ্য কথাটা বলে ফোন ছুঁড়ে দেয় হানিয়া বেগমের কাছে। সংবাদ মাধ্যমে স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে, লন্ডন শহরের সবচেয়ে বড়ো ব্যবসায়ী রাফি রায়হান, আর তার একমাত্র ছেলে গাড়ি এক্সিডেন্ট এইমাত্র মারা গেছে। হানিয়া বেগম খবরটা দেখে কান্না করে দেন, কিন্তু অরণ্য শব্দ করে হাসতে থাকে। হানিয়া বেগম বলে ———–

———– “- অরণ্য তুমি আমার সন্তান আর স্বামীকে খুন করেছ তাই না? ওরা দুর্ঘটনায় মারা যায় নাই। তুমি এতোটা জঘন্য কি করে হতে পারলে?

°°°★ অরণ্য আজ প্রাণখুলে হাসে এরপর বলে ———

——-” সয়তানের মুখে জ্ঞানের বাণী মানায় না। আর ওরা দুর্ঘটনায় মারা গেছে, যেমন আমার বাবা আর শশুড় দুর্ঘটনায় মারন গিয়ে ছিলো ঠিক তেমন। কেমন লাগে নিজের প্রিয় মানুষের মৃত্যুর কথা শুনতে?

°°★ হানিয়া বেগম অঝরে কান্না করতে থাকে, ঠিক যেমন ষোলো বছর আগে তার মা কান্না করছিলো। সন্তানের লাশ নিজের চোখে দেখার যে কষ্ট সেটা হানিয়া বেগম এখন বুঝছে। অরণ্য পৈশাচিক হাসি দেয়, অরণ্য বলে ———-

——“- ফুপি তোমার স্বামী আর সন্তান তো তাদের অপকর্মের শাস্তি পেয়ে গেলো। এখন তোমাকে কি দেওয়া যায় বলতো? যেহেতু তুমি সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু উপহার দেওয়া উচিত তাই না ———–.

°° হাসপাতালে ইমারজেন্সি কেবিনে ডক্টর ইনায়ার হাতে বেন্ডেজ করে দিচ্ছে। তার হাতের কনুইয়ে গুলি লাগে নাই, শুধু ছোঁয়া লেগেছে যার ফলে কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। অরণ্য হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়, এখন সে হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে। ইভান, প্রভা সেখানে রয়েছে ডক্টর বলেছে ইনায়ার জন্য টেনশন করার দরকার নাই। ইনায়া সম্পূর্ণ সুস্থ, হঠাৎ অরণ্যর ফোন বেজে উঠে রেহানা বেগম কল করেছে। অরণ্য রিসিভ করে ———

——–°°★ রেহানা বেগম বলে ———-

——– “- অরণ্য লন্ডনে তোমার ফুপা আর আদনান গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আর তোমার ফুপির এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যাবে না। অরুণা ভাবী আর মিলন ভাই লন্ডনে যাবে, তোমরা তাড়াতাড়ি চলে আসো —–.

°°★ অরণ্য মায়ের কথা শুনে নীরবে হাসে, কিন্তু নাটক করে চিন্তিত হয়ে বলে ———

—— কি বলছ আম্মু ফুফা মারা গেছে মানে? আদনান ও মারা গেছে? তুমি চিন্তা করো না আমরা এখুনি রওনা দিচ্ছি। লন্ডনে দেখা হবে আমাদের ——–.

—– “- ওকে “—-.

°°★ অরণ্যর কথাটা ইভান শুনে, অরুণা বেগম তাকে আগেই খবরটা বলেছে। এই দুর্ঘটনার পিছনে যে আসলে কে আছে, সেটা হয়তো ইভান যানে। কিন্তু সে চুপ থাকে, হয়তো যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে। প্রভা বড্ড চুপচাপ আর শান্ত, ইভান প্রভার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রভা হুম, আর না ছাড়া কিছুই বলে নাই। প্রভার এমন ব্যবহারের কারণ ইভান বুঝতে পারে না, অন্যদিকে ডক্টর বলে যে ইনায়ার জ্ঞান ফিরে এসেছে। অরণ্য ছুটে যায় কেবিনে, ইনায়া চোখ খুলে অরণ্যকে দেখে ইনায়া বলে ————–

——– “- অরণ্য আপনি ফুপিকে শাস্তি দিয়েছেন?

°°★ ইনায়ার কথা শুনে হাসে আর বলে ———-

——– অবশ্যই বউ। আমার বউ আর্দেশ করেছে একটা কাজ করার, আর অরণ্য রাজ চৌধুরী সেটা করবে না তা কি করে হয়। আর ফুপির সাথে আমার পুরানো শএুতা রয়েছে, যার শাস্তি ওনাকে দেওয়া হয়েছে ———–.

°°★ ইনায়া খুশি হয়, আজ হয়তো তার বাবা মায়ের আত্মা শান্তি পাবে। ইনায়া অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে বলে ———–

——– ভালোবাসি আপনাকে অরণ্য। আর ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য। ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি “——–।

অরণ্য শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ——–

—— ভালোবাসি বউ তোমায় অনেক ভালোবাসি ——.

°°★ প্রভা এখন ইভানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হৃদয় তার হাজারো কথা, আর কষ্ট রয়েছে কিন্তু সবকিছু লুকিয়ে রেখে প্রভা বলে ————

——-‘- ইভান আপনারা হয়তো মালদ্বীপ থেকে লন্ডনে চলে যাবে।কিন্তু আমি আর সেখানে যেতে চাই না, অনেকদিন হলো দেশে ফিরে যায় না। তাই আমি এখন চৌধুরী বাড়িতে চলে যাব, এরপর ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে চলবে যাব নিজ দেশে। আপনার আর আমার আর হয়তো কখনো দেখা হবে না ——–.

°°★ —– প্রভা কথাটা বলে ইভানকে কিছু বলার সুযোগ দেয় না, সে চলে যেতে চাই হাসপাতাল থেকে। এর আগেই ইভান তার হাত ধরে বলে ——–

——- “- আপনি আমায় ভালোবাসেন প্রভা? ——–

°°★ ইভানের কণ্ঠে এমন কথা শুনে প্রভা থমকে যায়। কি বলবে সে। প্রভা শান্তি গলায় বলে ———-

——- “- যদি বলি ভালোবাসি?

—– “- বিয়ে করবেন আমায় প্রভা। সারাজীবন ভালোবেসে যাবেন আমায় ——-.

#চলবে