তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-৫১ এবং শেষ পর্ব

0
3

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#লেখনীতে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#অন্তিম_পর্ব[ ৫১ ]

———°°★ ” বিয়ে করবে আমায় প্রভা ” ইভানের কণ্ঠে বলা কথাটা যেনো বিশ্বাস করতে পারল না প্রভা। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাওয়ার উদ্দশ্যে পা বাড়িয়ে আবার থমকে যায়। প্রভা পুনরায় পিছনে ফিরে দেখে, ইভান শান্ত গলায় কথাটা বলে। ইভান তাকে বিয়ে করার কথা বলছে, এইটা কি প্রভা স্বপ না বাস্তব। প্রভা উৎসুক নয়নে জিজ্ঞেস করে ————–

———- “- কি বললেন ইভান? আবার বলুন? ———–.

———— °°★ ইভান এগিয়ে আসে যায় প্রভার কাছে। এরপর ওর হাত শক্ত করে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। প্রভা যে তাকে ভালোবাসে সেটা ইভান আগে থেকে যানে, ইভান অবুঝ নয়। কিন্তু প্রভার ভালোবাসা গ্রহণ করার মতো হৃদয় ইভানের নেই, ওর মনে যে কখনো ইনায়া রয়েছে। ইনায়া এখন সম্পূর্ণ রূপে অরণ্যর স্ত্রী সেটা ইভান যানে, তবুও তার মনে এই সত্যিটা মানতে চাই না। প্রভার প্রতি তার হয়তো ভালোবাসা নেয়, কিন্তু মায়া রয়েছে, বিশ্বাস আছে, একটা সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য কি শুধু ভালোবাসার দরকার হয়। সম্মান, আর বিশ্বাস দিয়ে কি ঘর বাঁধা যায় না, ভবিষ্যতে অনেক দিন পর হলে ও ইভানকে কখনো না কখনো বিয়ে করতে হবে।

——-°°★ বিয়ে যখন অন্য নারীকে করতেই হবে, তখন প্রভাকে করে ফেলা যাক। প্রভা মেয়েটা ভালো, এই যুগে এমন মেয়ে পাওয়া ভাগ্যর বিষয়। আর একবার সে জেদ, আর ঘৃণার জন্য তার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলেছে, এখন আর সেই ভুল করতে চায় না। সারাজীবন প্রভার হাত শক্ত করে ধরে রাখতে চাই, আগে বিয়েটা করে ফেলি ভালোবাসা না হয় পরে হবে। ইভান প্রভার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে —————-

——-“- প্রভা তোমাকে ভালোবাসতে পারব কি জানি না, তবে সারাজীবন একজন বন্ধু, আর আর্দশ স্বামী হয়ে তোমার পাশে থাকব। চলো বিয়ে করে নেয়, ভালো না হয় পরে বাসব। বিয়ে করবে আমায় প্রভা? —————–..

°°★ ইভানের কথা শুনে প্রভা চোখে অশ্রু বিন্দু জমা হয়। প্রভা এগিয়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইভানকে, অল্প সময় নিশ্চুপ থেকে ইভান ও বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয় প্রভাকে। প্রভা বলে ———–

—- বিয়ে করব আমি ইভান। ভালোবাসি আপনাকে আমি ——-.

°°★ মালদ্বীপে হানিমুন আর ইনজয় করা হলো না অরণ্য ইনায়া। তারা সেখান থেকে লন্ডনে চলে যায়, লন্ডনে ফুফা আর তার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য যেতে হয়েছে। অরণ্য মনে মনে অনেক খুশি, কিন্তু সকলের সামনে কষ্ট পাওয়ার নাটক করে। অরণ্য যেহেতু খুন করেছে, তাই লাশ দাফনের কাজ ও তাকে করতে হয়েছে। রাফি রায়হান হানিয়া বেগমের সাথে মিলে তার বাবাকে খুন করে, আর তার ছেলে আদনান ড্রাগ ব্যবসায় জড়িত। যে এসএস কোম্পানির খাবার অতিরিক্ত মুনাফা পাওয়ার আশায় রাসায়নিকের পদার্থ মিশিয়ে মানুষ খুন করেছে। পাপ কখনেন বাপকে ছাড়ে না এইটা তাদের অপর্কমের শাস্তি ছিলো।

°°★ সময় খুব দ্রুত প্রবাহিত হয়, অরণ্য আর ইনায়ার সম্পর্কে আর এখন কোনো বাধা নেই। তারা সুখে শান্তিতে সংসার করছে, এসএস কোম্পানির এমডি দায়িত্ব পালন করছে এখন সে। আদালতের সাল আইনি জটিলতা থেকে এখন মুক্ত সে।। অন্যদিকে ইভান আর প্রভার বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে, সামনের সপ্তাহে তাদের বিয়ে। আজ ইনায়া আর ইভানের মিটিং রয়েছে অফিসে, তারা একসাথে কোম্পানির উন্নয়নের আলোচনা করবে।

°°★ মিটিং শেষ, হঠাৎ করে ইনায়ার মাথা ঘুড়ে পড়ে যায়। ইভান তাড়াতাড়ি করে গিয়ে তাকে ধরে, এরপর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অরণ্য সহ পরিবারের বাকি সদস্যরা আসে, ডক্টর ওকে চেক করে। ইনায়ার জ্ঞান ফিরে আসে তখন সামনে ইভান ছিলো। ইনায়া বলে –

______”- ইভান ভাই কি হয়েছে আমার? —–

——°★ ইনায়ার মুখে ভাই ডাকটা শুনে ডক্টর। ডক্টর মনে করে যে ইভান ইনায়ার আপন ভাই, ডক্টর খুশি মনে বলে ———-

______ কংগ্রেস মিস্টার ইভান আপনি মামা হতে যাচ্ছেন। আপনার বোন ইনায়া বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে —-.

°°★ ইভান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এমন সময় ডক্টরের কেবিনে প্রবেশ করে অরণ্য, ইভান মামা হচ্ছে কথাটা শুনে তার অনেক খুশি লাগে। সে বাবা হবে কথাটা শুনে তার যতটা না খুশি হচ্ছে ইভান মামা হবে কথাটা শুনে এর চেয়ে বেশি খুশি হয়। ইভানের মুখটা দেখার মতো ছিলো, বেচারা কথা ছিলো বাবা হওয়ার হয়ে গেলো মামা। অন্যদিকে ইনায়া বিশ্বাস হচ্ছে না যে সে মা হতে যাচ্ছে, ইনায়ার খুশিতে চোখে পানি চলে আসে। অরণ্য ইভানের কানে কাছে গিয়ে বেসুরে কণ্ঠে বলে ———

——- “- পরাণ যায় জ্বলিয়া রে পরাণ যায় জ্বলিয়া ——-.

°°- অরণ্য এমন গান শুনে ইভান তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে, অরণ্য একটা ডেভিল হাসি দিয়ে এগিয়ে যায় ইনায়ার কাছে। এরপর ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে, তাদের দুইজনের এমন মূহুর্তে ইভানের এখান থাকা উচিত নয়। তাই ইভান বের হয়ে যায় কেবিন থেকে, এরপর সকলে এসে তাদরে অভিনন্দন জানায়। ইনায়া আর অরণ্য অনেক খুশি আজ ——–.

°°★ প্রায় এক সপ্তাহ কেটে যায় আজ প্রভা আর ইভানের বিয়ে। বিয়ের আসরে সকলে উপস্থিত হয়, প্রভাকে বিয়ের কনের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের একসাথে বসানো হয়েছে, কাজী বিয়ের কাজ শুরু করে দেয়। ইনায়া দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার দৃষ্টি এখন ইভানের দিকে। এই মানুষটার জন্য পনেরো বছর সে অপেক্ষা করেছে, আর আজ সেই মানুষটার বিয়ে দেখছ সে। জীবন কি অদ্ভুত তাই না, কখন কি হয়ে যায় কেউ বুঝতে পারে না।

°°★ প্রভা কবুল বলে দেয়, কাজী ইভানকে বলে কবুল বলতে ইভান একবার ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে, ইনায়া মাথা দিয়ে কবুল বলার ইশারা করে। ইভান বলে —

—— ‘- কবুল ____.

——- বিয়ের আসরে সকলে মিষ্টি মুখ করে, ইনায়া একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। হঠাৎ একজনের হাত ইনায়ার কাঁধে এসে পৌঁছায়, ইনায়া তাকিয়ে দেখে অরণ্য। অরণ্য ইনায়াকে সামনের দিকে ইশারা করে, ইভান প্রভার বিয়ে দেখার জন্য। ইনায়া হাসি মুখে সেইদিকে তাকায়, ইনায়া তার মাথাটা অরণ্যর কাঁধে রাখে। এরপর বলে ——-

—–“- শএু নন আমি আমার স্বামী হন। আমার জীবনে অনাঙ্ক্ষিত মেহমানের মতো এসেছিলেন আপনি , আর আজ আমার সমস্ত অস্বস্তি জুড়ে মিশে আছেন। সহস্র শব্দে, হাজার বার বলব ভালোবাসি “।

______ “- ইনায়ার লেখা সমস্ত চিঠি আজ ও সে যত্ন করে রেখে দিয়েছে। কারণ সেটা তার একতরফা ভালোবাসার সৃতি, কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটা আজ অন্যকারো। কিছু সম্পর্কের কোনো নাম হয় না, শুধু একতরফা ভালোবাসা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। আর জীবনে প্রথম প্রেম হয়, বরং যে প্রথম ভালোবাসার সন্ধান করেন। যে আপনাকে আগলে রাখবে যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে ।

নতুন গল্প আসবে সকলে পড়বেন। আর গল্পটা কেমন হয়েছে এর রিভিউ দেন।

——————- সমাপ্ত ——————