তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-০৩

0
3

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_০৩ ( ইভান আর ইনায়ার তালাক)

ইভান ছাদের নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে ইনায়ার শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেছে। সেটা দেখে ইভানের মনে মায়া হয় না বরং ও ছাদ থেকে চলে আসতে চাই তখন নাতাশা তার হাত ধরে ফেলে। নাতাশা আজ প্রথম তার ভাইয়ের সাথে এমন উচ্চ গলায় রাগ দেখিয়ে বলে –

“- ভাইয়া তুমি কি করলে এইটা? ইনায়াকে ধাক্কা কোনো দিলে ও ছাদ থেকে পড়ে গেছে? ওর শরীর থেকে রক্ত পড়ছে ও মারা যাবে “।

নাতাশার কথা শুনে ইভানের মনে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় নাই। বরং সে মনের তৃপ্তি নিয়ে তার বোনেকে উদ্দেশ্য করে বলে –

“- দেখ নাতাশা তোর ইনায়া আমার কেউ হয় না। তাই ওর শরীর রক্তাক্ত হোক বা ও মারা যাক তাতে ও আমার কিছু যায় আসে না “।

ইভান কথাটা বলে দ্রুত পায়ে হেটে ছাদের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায় নাতাশার রাগ হচ্ছে নিজের ভাইয়ের উপর। কিন্তু তার এখন রাগ দেখালে হবে না বরং ইনায়াকে বাঁচাতে হবে তাই সে চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে থাকে । নাতাশা তাড়াতাড়ি করে তার মা বাবাকে ডাক দিতে থাকে আর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে। অরুণা বেগম আর মিলন সাহেব নিজেদের রুমে বসে পারিবারিক কথা বলছিলো হঠাৎ করে নাতাশার চিৎকার শুনে তারা আতঙ্কিত হয়ে যায়। অরুনা বেগম তাড়াতাড়ি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে অন্যদিকে নাতাশা ও ছাদ থেকে নেমে আসে।

অরুণা বেগম নিজের মেয়েকে এমন তাড়াতাড়ি করে নিচে আসতে থেকে অবাক হয়। অরুণা বেগম বলে –

“- কি হয়েছে নাতাশা? এমন চিৎকার করে সবাইকে ডেকে যাচ্ছো কোনো? কি হয়েছে?

নাতাশা এতো দ্রুত নিচে নামার কারণে তার মুখ দিয়ে কোনো কথা আসছে না বরং সে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। নাতাশা কান্না করে দিয়ে বলে –

“- আম্মু আম্মু ইনায়া “।

“- কি হয়েছে ইনায়ার? ইনায়া কোথায় নাতাশা?

“- আম্মু ইনায়া ছাদ থেকে পড়ে গেছে?

“- হোয়াট “।

অরুণা বেগম যে কি বলবে সেটা অবধি ভুলে গেছে তবে নাতাশা দৌড়ে বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। ইনায়া যেখানে পড়ে গেছে সেখানে যায় নাতাশা এরপর বাড়ির গার্ড দারোয়ান সবাইকে ডাক দেয়। নাতাশা গিয়ে ইনায়ার মুখ উঁচু করে তুলে দেখে ওর কাপাল থেকে অবিরাম রক্ত পড়ছে। তবে চেহারার কোনো সমস্যা হয় নাই কারণ এই কাচঁ আসল না বরং বাড়ি সাজানো জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। তবে চৌধুরী বাড়ির ছাদ বেশ উঁচুতে অবস্থিত যার জন্য ইনায়ার শরীরে অনেক ক্ষতি হয়েছে।

অরুণা বেগম সেখানে উপস্থিত হয় নাতাশার কোলে সে ইনায়ার রক্তাক্ত শরীর দেখে নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে। মিলন সাহেব কাছে এসে জড়িয়ে ধরে ইনায়াকে এরপর দারোয়ান ও সকলের সাহায্য নিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। অরুণা বেগমের চারপাশে কি ঘটছে ওনি তাই ভুলে গেছেন শুধু চোখ দিয়ে জল বিসর্জন দিচ্ছে। মিলন সাহেব ডক্টরকে ডাক দেন ওনার গলা কাঁপতে থাকে তবুও ডক্টরের সাথে কথা বলে তাকে বাড়িতে আসতে বলে।

ডক্টর অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাড়িতে এসে পৌঁছায় । এরপর চিকিৎসা শুরু করে দেন অরুণা বেগম বাড়ির ভিতরে আসে এরপর ডক্টরের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে –

“- ডক্টর আমার মেয়ে ভালো হয়ে যাবে তো? ওর কোনো ক্ষতি হবে না তো? আমার মেয়ে কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে ডক্টর “।

চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক ডক্টর ওনি তাই সব ঘটনা যানেন। অরুণা বেগম যে ইনায়াকে কতো ভালোবাসে সেটা ওনার অজানা না তবে এখন যা অবস্থা ডক্টর কিছু বলতে পারছে না। ইনায়ার শরীরে কাঁচ ফুটে গেছে আর এতো উপর থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে বেশ অনেক সমস্যা হয়েছে। তবে ডক্টর শান্ত হয়ে বলে –

“- ম্যাম টেনশন করবেন না ইনায়া ঠিক হয়ে যাবে। দেখবেন উপর ওয়ালা কখনো আপনার মেয়ের থেকে আপনাকে দূরে করবে না। ওনার উপর বিশ্বাস রাখেন অরুণা ম্যাম “।

ডক্টরের কথাটা অরুণা বেগমের পছন্দ হয়েছে তবে ওনি কেনো সিউর হয়ে বললেন না তার মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে। মিলন সাহেব স্ত্রীর মনের অবস্থা বুঝতে পারে ইনায়া যে অরুণা বেগমের জন্য কি সেটা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। মিলন সাহেবের নিজের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তবে তার শক্ত থাকতে হবে পরিস্থিতি সামলে রাখতে হবে। কারণ ওনি যদি দুবর্ল হয়ে যান তাহলে অরুণা বেগমকে কেউ সামলে রাখতে পারবে না। মিলন সাহেব এগিয়ে গিয়ে অরুণা বেগমকে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসে আর বলে –

“- অরুণা কিছু হবে না আমাদের ইনায়ার।শুধু একটু ব্যাথা পেয়েছে ও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

অরুণা বেগম যেনো আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারে নাই স্বামীর বুকে মাথা রেখে অঝরে কান্না করে দেয়। মিলন সাহেবের নিজের ও কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পুরুষ মানুষ কি চাইলে ও কান্না করতে পারে। মিলন সাহেব স্ত্রীকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে অরুণা বেগম বলে –

“- মিলন বিশ্বাস করো ইনায়ার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচব না। ও আমার শুধু মেয়ে না বরং আমার কলিজা ওর শরীরে এক একটা আঘাত আমার কাছে মৃত্যুর সমান কষ্ট। মা হয়ে আমার মেয়ের মৃত্যু সয্য করতে পারব না মিলন আমার ইনায়াকে আমার সুস্থ চাই মিলন।

মিলন সাহেব নিজে ও ইনায়ার এমন অবস্থা সয্য করতে পারছে না ছোটবেলা থেকে ইনায়াকে সে নিজের মেয়ের মতো বড়ো করেছে। আর আজ সেই ইনায়া তার সামনে এমন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বাবা হিসাবে এইটা ওনি কেমন করে মেনে নিবে। মিলন সাহেব বলে –

“- আমাদের মেয়ের কোনো ক্ষতি হতে পারে না অসম্ভব “।

ডক্টর ইনায়ার শরীরে রক্ত বন্ধ করতে পেরেছে তবে এখনো জ্ঞান ফিরাতে পারে নাই আর কোনোদিন পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ নিচের দিকে পড়ে যাওয়ার কারণে মাথার পিছনে বেশ জোরে ব্যাথা লেগেছে তার।যার ফলে ও হয়তো কোমায় চলে গেছে। ডক্টর রুম থেকে বের হয়ে আসে অরুণা বেগম আর মিলন সাহেব ছুটে আসে। অরুণা বেগম এক বুক আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করে -.

“- ডক্টর কি হয়েছে আমার মেয়ের? ও সুস্থ হয়ে গেছে তাই না।আমার মেয়ে সাথে আমি কথা বলতে চাই বলুন সুস্থ হয়ে গেছে ইনায়া তাই না “।

অরুণা বেগমের কষ্ট দেখে ডক্টরের বেশ খারাপ লাগছে তবে সত্যি ঘটনা বলা উচিত ওনার। ডক্টর বলে –

“- সরি ম্যাম আমরা ইনায়ার শরীরের রক্ত বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি কিন্তু ওনার জ্ঞান ফিরাতে পারি নাই। হয়তো মাথায় আঘাত লাগার কারণে ওনি কোমায় চলে গেছেন “।

ডক্টর কথাটা বলে দিয়েছে কিন্তু অরুণা বেগমের মনে সেটা তীরের মতো বিঁধে গেছে। ইনায়া কখনো তার সাথে কথা বলবে না যা ওনি মেনে নিতে পারেন না। অরুণা বেগম বলে –

“- আমার মেয়ে কখনো আমার সাথে কথা বলবে না সেটা কি বিশ্বাস করা যায় ডক্টর। ও কথা না বললে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে ডক্টর। ওর মুখে মামণি ডাক না শুনলে আমি বাঁচতে পারব না। আপনার যতো টাকা দরকার সব নিয়ে যান কিন্তু আমার মেয়কে সুস্থ করে দেন ডক্টর। দয়া করুন ডক্টর “।

অরুণা বেগমের জন্য ডক্টরের কষ্ট লাগছে তবে যা সত্যি সেটা বলতে হবে ওনাকে। ডক্টর কথাটা বলে আবার রুমে চলে যায় অরুণা বেগম কান্না করতে করতে মাটিতে বসে পড়ে। মিলন সাহেব নিজেও তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না ওনি ও কথাটা শুনে দুইপা পিছিয়ে যান। অরুণা বেগম বলে

“- আমার মেয়ে কোমায় চলে যেতে পারে না। ও আমার সাথে কথা না বলে থাকতে কখনো পারবে না অসম্ভব “।

প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে কিন্তু ইনায়ার জ্ঞান ফিরে আসে নাই। অরুণা বেগম অনেক কান্না করেছে তবে কোনো কিছু হয় নাই ইভান একবারের জন্য হলে ও ইনায়াকে দেখতে আসে নাই। বরং সে এতোদিন নিজের ছোটবেলা বন্ধুদের সাথে দেখা করে তাদের সাথে পার্টি করেছে ঘুরে ফিরে কাটিয়ে দিয়েছে। আজকে ইভান বাড়িতে ফিরে আসে সে সুন্দরবনে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে ছিলো যেখানে এক সপ্তাহ ইনজয় করেছে।

নাতাশা রান্না করছে কারণ অরুণা বেগমের শরীর একদম ভালো না ইনায়ার চিন্তায় খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। হঠাৎ করে বাড়ির দরজার বেল বেজে উঠে নাতাশা রান্না করা রেখে দরজা খুলতে যায়। এরপর দরজা খুলে দেখে সামনে ইভান দাঁড়িয়ে আছে তার মন মেজাজ বেশ ফুরফুরে। নাতাশাকে দেখে ইভান বলে –

“- সুন্দরবন থেকে তোর জন্য অনো সুন্দর সুন্দর উপহার নিয়ে এসেছি। চল ভিতরে যায় তোকে সব দেখাবো “।

ইভানের হাসি মুখ নাতাশার সয্য হয় না সে কোনো কথা না বলে চলে আসে। ইভান পিছন পিছন আসে ছাদ থেকে ইনায়াকে ধাক্কা যে ইভান দিয়েছে সেটা এখন অবধি কেউ যানে না। নাতাশা কাউকে বলে নাই তবে নিজের ভাইয়ের উপর সকল ভালোবাসা তার শেষ হয়ে গেছে। কারণ তার ভাইয়ের এতোটা জঘন্য রূপ দেখে তার মনের মধ্যে শুধু ঘৃণা হয় ইভানের জন্য। ইভান বলে –

“- আচ্ছা বাড়িতে মানুষ এতো কম কোনো? আব্বু আম্মু কোথায়?

“- আব্বু অফিসে গেছে আর আম্মু রুমে আছে। আর ইনায়া কোমায় ওর জ্ঞান ফিরে নাই “।

“- এই ইনায়ার কথা জানতে চাই না আমি। ও যদি মারা যায় তাহলে ও আমার কিছু যায় আসে না “।

ইভানের কথাটা শুনে নাতাশা নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না কারণ ইনায়াকে সে তার বন্ধুর মতো দেখেছে। ছোটবেলা থেকে তারা সমবয়সী থাকার কারণে এক সাথে পড়াশোনা করেছে খেলা করেছে। আজকে ইভান তার সাথে এমন করেছে সেটা নাতাশা মেনে নিতে পারে নাই নাতাশা রাগী কণ্ঠে বলে –

“- ভাইয়া ইনায়া মারা গেলে তোমার কষ্ট হবে না কারণ তোমার মধ্যে কোনো মন বা মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নাই। আরে মানুষের তো একটা পশুকে খুন করার আগে তার কষ্ট হয় কিন্তু তোমার হয় নাই। কারণ তুমি মানুষ না অমানু হয়ে গেছো? তোমার মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নাই ছি:

“- হ্যা আমি অমানুষ কারণ ওই ইনায়ার উপর আমার কোনো ফিলিংস নাই। ওকে ঘৃণা করি আমি “।

“- ভাইয়া তুমি সেইদিন ইনায়াকে ছাদ থেকে ফেলে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছো। কালকে দেখা যাবে নিজের বোনকে ও খুন করে ফেলবে “।

নাতাশার কথা শেষ হওয়ার আগে হঠাৎ করে একটা গ্লাস ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনে ইভান আর নাতাশা পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে অরুণা বেগম দাঁড়িয়ে আছে ওনার হাত থেকে গ্লাস ভেঙে গেছে। নাতাশা তাড়াতাড়ি করে তার মায়ের কাছে যায় আর বলে –

“- আম্মু তুমি এখানে? কোনো কিছুর কি দরজার তোমার?

অরুণা বেগম কোনো কথা শুনে না বরং সে নাতাশার হাত সরিয়ে দিয়ে সামনে দাঁড়ায় ইভানের। ইভান ভালো করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে শরীরে কোনো শক্তি নাই মনে হচ্ছে ওনার। গলার হাড়ঁ দেখা যাচ্ছে এমন অবস্থা হয়েছে অরুণা বেগমের। অরুণা বেগম বলে –

“-নাতাশা এইটা কি বললো ইভান? তুমি কি সত্যি ইনায়াকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছো? ইনায়ার কোমায় চলে যাওয়ার পিছনে কি তোমার কোনো হাত আছে ইভান?

ইভান তার মায়ের কথা শুনে একটা অদ্ভুত রিয়েকশন দেয় যেখানে তার খারাপ লাগা বা ভালো লাগা প্রকাশ পায় না। ইভান খুব শান্ত স্বরে সত্যি কথা বলে দেয় –

“- হুম আমি ইনায়াকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছি। ওই মেয়েকে খুন করার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু বেঁচে গেছে। যদি মরে যেতো তাহলে আরো ভালো হতো “।

ইভানের শান্ত স্বরে বলা কথাটা অরুণা বেগমের মনের মধ্যে অশান্তি আর রাগের ঝড় তুলে। অরুণা বেগম শরীরে সব শক্তি দিয়ে ইভানের গালে থাপ্পড় দেয় যার দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠে ইভানের গালে। নাতাশা নিজে ও চমকে যায় ইভান নিজের গালে হাত দেওয়ার আগে আরেকটা থাপ্পড় পরে ওর গালে। অরুণা বেগম অগ্নি চোখে তাকিয়ে গর্জন করে বলে –

“- তোমার সাহস কি হয় তুমি আমার মেয়েকে খুন করার চেষ্টা করলে? তোমার জন্য ইনায়া আজকে কোমায় চলে গেছে? আমার ছেলে হয়ে তুমি একটা নিষ্পাপ মেয়েকে খুন করার চেষ্টা করছো? তুমি একটা খুনি ইভান “।

আজ প্রায় পনেরো বছর পর অরুণা বেগম আবার নিজের ছেলের গালে থাপ্পড় দিলেন। অরুণা বেগমের শরীরে রাগ ঠিক কতটা সেটা ওনার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। ইভান নিজের গালে হাত দিয়ে দেখে সেখানে থাপ্পড়ের দাগ বসে গেছে। আজকে আবার ওই ইনায়ার জন্য তার মায়ের কাছ থেকে থাপ্পড় খেতে হয়েছে তার ইভান বলে –

“- হ্যা আম্মু আমি খুনি ওই ইনায়ার খুনি। ওই মেয়ের জন্য আমার জীবন থেকে সব সুখ নষ্ট হয়ে গেছে ওই মেয়েকে আমি ঘৃণা করি। ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছি ওকে কিন্তু একটুর জন্য বেঁচে গেছে। তবে পরের বার ওকে সত্যি খুন করে ফেলবো আমি “।

ইভানের কথা শুনে অরুণা বেগম সত্যি অবাক হয় তার ছেলে হয়ে কোনো মেয়েকে খুন করার চেষ্টা করতে পারে ভাবতে পারে নাই। পনেরো বছরে ইভানের রাগ কমে নাই বরং সেটা সময়ের সাথে সাথে ঘৃণার জন্ম দিয়েছে। অরুণা বেগম বলে –

“- ইভান কোনো ঘৃণা করো তুমি ইনায়াকে কি করেছে ও তোমার সাথে ?

“- আম্মু ইনায়া আমার যা ক্ষতি করেছে সেটা অন্য কেউ করে নাই। ওর জন্য আজকে আমার মা আমার থেকে দূরে সরে গেছে। নিজের পরিবার থেকে পনেরো বছর দূরে থাকতে হয়েছে শুধুমাত্র ওই মেয়েটার জন্য। যদি ইনায়া আমার জীবনে না আসতো তাহলে এতো কিছু হতো না। তাই ঘৃণা করি ওকে “.

“- তার জন্য কি তুমি ইনায়াকে খুন করার চেষ্টা করবে ইভান?

“- হ্যা করব অবশ্যই করব ওকে আমি মেরে ফেলতে চাই “।

“- ইনায়া তোমার বউ হয় ইভান “।

অরুণা বেগমের কথা শুনে ইভান হাসে আর বলে –

“- যেখানে বিয়েই আমি মানি না সেখানে ইনায়াকে বউ হিসাবে কি করে মেনে নিবো। ইনায়া নামটা আমার কাছে ঘৃণিত নাম ওকে দেখলে আমার শুধু ঘৃণা লাগে “।

হাসপাতালে ইনায়ার চিকিৎসা হচ্ছে এখন ওর অবস্থা ভালো বিদেশ থেকে সবচেয়ে বড়ো ডক্টর ওর জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনদিন আগে ইনায়ার মাথার একটক অপারেশন করা হয় যার কারণে ও শরীর এখন সুস্থ তবে কোমায় থেকে বের হয় নাই সে। হাসপাতাল থেকে অপারেশন শেষ করে ওকে কালকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

জানালা দিয়ে মিষ্টি রোদ আসে ইনায়ার রুমে ওর চোখ খুলে যায় আসতে আসতে করে। চোখ খুলে দেখে সে তার রুমে আছে তবে আশেপাশে কেউ নাই ইনায়া নিজের মাথায় হাত ধরে উঠে বসে। টেবিলে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে দুপুর বাজে এরপর মাথা ধরে বিছানা থেকে উঠে বসে। তার কর্ভার থেকে ফোন বের করে সেখানে দেখে থাকা তারিখ দেখে সে চমকে যায়। ইনায়া বলে –

“- আমার যতদূর মনে পড়ছে আমি ১ তারিখ ছাদ থেকে পড়ে যায় কিন্তু আজকের তারিখ দেখাচ্ছে সাত। তাহলে কি আমি সাতদিন অজ্ঞান ছিলাম?

ইনায়ার মনে পড়ে সেইদিন ছাদে থাকা ছেলেটার কথা যে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু সেই ছেলের পরিচয় কি এই বাড়িতে কি করছে? সেটা ইনায়া যানে না। আশেপাশে অরুণা বেগম বা নাতাশাকে দেখতে পায় না সে। ইনায়া বলে –

“- মামণি কোথায়? ভালো বাবা কোথায়? আমি এতোদিন ধরে অজ্ঞান ছিলান নিশ্চয়ই মামণি অনেক টেনশন করছে আমার জন্য। আমাকে মামণির কাছে যেতে হবে কিন্তু মাথায় এমন ব্যাথা কোনো করছে “।

ইনায়া মাথায় হাত দিয়ে দেয়ালে হাত দিয়ে দিয়ে বাহিরে যায় অন্যদিকে ইভান আর অরুণা বেগমের ঝগড়া এখনো থামে নাই বরং সেটা বেড়ে গেছে। অরুণা বেগম বলে –

“- ইভান তোমার আর ইনায়ার বিয়ে হয়েছে। ইনায়া তোমার বউ সেটা তুমি ভুলে যেতে পারো না। আইনি ভাবে ইনায়া তোমার বিবাহিত স্ত্রী “।

“- আম্মু তুমি ভুলে যেও না ইনায়া আর আমার যখন বিয়ে হয়েছে তখন আমারা দুইজনে নাবালক ছিলাম সে আইনি কোনো বৈধতা নাই আমাদের বিয়ের। তবে ইসলামি শরিয়তে ইনায়া আমার বউ আর আমি সেখান থেকে ও ওকে মুক্তি দিতে চাই। ওকে তালাক দিবো আমি “।

অরুণা বেগম ইভানের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। অন্যদিকে ইনায়ার মাথায় প্রচুর ব্যাথা করছে কিন্তু বাড়ির সবাইকে সে দেখতে চাই। ইনায়া শুনতে পাই বাড়ির ড্রয়িং রুম থেকে মামণির শব্দ শোনা যাচ্ছে তাই ইনায়া সেখানে যায। নাতাশা অরুণা বেগম আর ইভান প্রতৈকে এখন তাদের কথা নিয়ে বিজি যার জন্য সিঁড়ির দিকে কারো খেয়াল নাই। ইনায়া সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে ওর মাথা দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে তবে মামিণকে দেখে সে সব ভুলে যায়। ইনায়া যখন তার মামণিকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তখন ও সেইদিনের ধাক্কা দেওয়া ছেলেটাকে দেখে।

অরুণা বেগম বলে –

“- ইভান তুমি কিন্তু অতিরিক্ত করছো এখন?

“- না আম্মু অতিরিক্ত এখন করবো।

ইভান নিজের মায়ের কাছে যায় এরপর একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে –

“- আমি ইভান চৌধুরী নিজের সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিসকে নিজের বিবাহিত স্ত্রী ইশতিয়া জান্নাত ইনায়াকে তালাক দিচ্ছি।

“- এক তালাক

“-দুই তালাক

“- তিন তালাক “।
সবাই পেজ টা ফলো করে রাখবে।। তাহলে নতুন পর্ব আসার সাথে সাথে পেয়ে যাবেন
“- আজকের পর থেকে ইনায়ার সাথে আমার ইসলামি শরিয়তের মতে কোনো সম্পর্ক নাই। ইনায়া সাথে আমি সকল ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করলাম “।

ইভানের কথায় চৌধুরী বাড়ি নিরব হয়ে যায় অরুণা বেগম নিজের ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে ইভান হাসতে থাকে ওর মনে আজ খুশি অনেক খুশি। নাতাশা খেয়াল করে পিছনে ইনায়া দাঁড়িয়ে আছে যেটা দেখে নাতাশা অবাক হয়ে বলে –

“- ইনায়া “।

#চলবে