তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-০৪

0
1

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_০৪

নাতাশার মুখে ইনায়ার নাম শুনে সবাই পিছনে ফিরে তাকায়। সিঁড়ির কাছে ইনায়া দাঁড়িয়ে আছে মাথার ব্যাথার জন্য সেখান থেকে রক্ত পড়ছে অরুণা বেগম নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অরুণা বেগম নিজের ঝগড়া ভুলে গিয়ে ইনায়াকে দেখতে বিজি হয়ে গেছে। অরুণা বেগম সিঁড়ির কাছে গিয়ে ইনায়ারকে জড়িয়ে ধরে আর বলে –

“- ইনায়া মা আমার তোর সত্যি জ্ঞান ফিরে এসেছে মা? তোর মামণি তোকে ছাড়া একদম ভালো ছিলো না রে ইনায়া। উপর ওয়ালার রহমতে আমার ইনায়া সুস্থ হয়ে গেছে.

ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলতে থাকে অরুণা বেগম কিন্তু ইনায়ার কানে হয়তো তার মামণির কথা যাচ্ছে। কিন্তু তার মনে এখনো ইভানের বলা তিনটা শব্দ শুনা যাচ্ছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষকে সে বেশ ভালো করে দেখে যাচ্ছে সে আজ পনেরো বছর পর ইভান তার সামনে এসেছে যার জন্য সে এতোবছর অপেক্ষা করেছে। যার জন্য রাতের পর রাত জেগে অপেক্ষা করছে ইভান হয়তো ইনায়াকে ভালোবাসে নাই। নিজের বউ হিসাবে কখনো মেনে নেই নাই। কিন্তু ইনায়া এতো বছর শুধু ওর অপেক্ষা করেছে নিজের মনের মধ্যে স্বামীর জায়গা দিয়েছে ইভানকে।

ইভান ও ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে সাতদিন আগে ছাদের উপর দেখেছে মেয়েটাকে রাতে চাঁদের আলোয় কি অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো সেইদিন। কিন্তু আজকে হয়তো অসুস্থার জন্য চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে সুন্দর চেহারায় অসুস্থতার ছাপ পড়ে গেছে। তবুও মেয়েটাকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ইভান যদি এই মেয়েকে ঘৃণা না করতো তাহলে হয়তো প্রথম দেখায় ওর প্রেমে পড়ে যেতো। কিন্তু ইভানের মনে ইনায়ার জন্য জমে থাকা ঘৃণা কখনো শেষ হবে না অসম্ভব।

ইনায়া তার দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু মুছে ফেলে। কারণ সে বুঝে যায় সাতদিন আগে ছাদ থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে ইভান ফেলে দিয়েছে। আর আজকে নিজের মুখে সকলের সামনে ইভানকে তাকে তালাক দিয়েছে। যার মানে ইভান পনেরো বছর পর ও ইনায়াকে ঘৃণা করে। ইনায়া শান্ত স্বরে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইভানকে বলে –

“- দীর্ঘ পনেরো বছর পর আপনার সাথে আবার দেখা হলো আমার ইভান ভাই। যদি সাতদিন আগে ছাদ থেকে আমাকে ধাক্কা না দিতেন তাহলে হয়তো এর আগে আপনার সাথে দেখা হয়ে যেতো। তবে নাইস টু মিট ইউ ইভান ভাই “।

ইনায়া বেশ শান্ত হয়ে কথাটা বলে তবে ইভান একটু অবাক হয় ইনায়ার এতো নরমাল ব্যবহার দেখে। কারণ ইভানের তালাক দেওয়া কথাটা ইনায়া শুনতে পাই তবুও এতো সাধারণ ব্যবহার করছে। ইভান বলে –

“- হুম অনেক দিন পর দেখা হলো ইনায়া। তবে যদি কোনো দিন আমাদের দেখা না হতো তাহলে আরো ভালো হতো। ছাদ থেকে পড়ে মরে কোনো গেলেন না আপনি?

ইনায়া কথাটা শুনে হাসে আর বলে –

“- আসলে মারা যাওয়া বা বেঁচে থাকা সব উপর ওয়ালার হাতে থাকে। মানুষ শত চেষ্টা করলে ও কাউকে মারতে পারে না আবার বাঁচাতে ও পারে না। যেহেতু আপনি আমাকে তালাক দিলেন আমি আর আপনার কেউ হয় না। আজকের পর থেকে আমাদের মধ্য থাকা সকল সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে “।

“- ইনায়া আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিলো ও না কোনোদিন। পনেরো বছর আগে বা পরে এই ইভান চৌধুরী সবসময় ইনায়াকে ঘৃণা করে গেছে আর ভবিষ্যতে ও তাই করে যাবে “।

ইভানের মুখে ঘৃণার কথাটা শুনে বেশ কষ্ট হয় ইনায়ার একজন নারী যতই শক্ত হোক না কোনো তার স্বামীর ঘৃণা সে সয্য করতে পারে না। তবে ইনায়ার মাথায় অনেক ব্যাথা করছে সেখান থেকে অবিরাম রক্ত পড়ে যাচ্ছে। শরীরের অসুস্থতা আর রক্ত শূন্যতার কারণে ইনায়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নাই। ইনায়া নিজের মাথায় হাত দেয় তার চোখের সামনে সব অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। অরুণা বেগম দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইনায়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছে। তিনি তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে গিয়ে ইনায়াকে ধরে ফেলেন।

ইনায়া পড়ে যায় তবে অরুণা বেগম তাকে ধরে ফেলে ইনায়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অরুণা বেগম দেখে ইনায়ার মাথা থেকে রক্ত পড়ছে সেটা দেখে ওনি বলে –

“- ইনায়া কি হয়েছে মা তোর? ওর মাথা থেকে অনেক রক্ত পড়ছে। নাতাশা যাও তাড়াতাড়ি ঔষধ নিয়ে আসো ডক্টরকে ফোন করো। এই ইনায়া “।

ডক্টর আসে ইনায়ার রুমে ওর চেকআপ করতে থাকে মাথায় কেটে যাওয়া স্থানে আবার ঔষধ লাগিয়ে দেয়। অরুণা বেগম এতোখন ইনায়ার পাশে বসে ছিলো ইনায়ার চেকআপ শেষ হলে। অরুণা বেগম জিজ্ঞেস করে ডক্টরকে –

“- ডক্টর কি হয়েছে ইনায়ার ও মাথা থেকে রক্ত কোনো বের হয়েছে? কোনো সমস্যা হয়েছে কি ডক্টর “।

“- না অরুণা ম্যাম তেমন কোনো সমস্যা না আসলে হঠাৎ করে কোময় থেকে উঠে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার কারণে। ওর মাথার ক্ষত থেকে রক্ত বের হয়েছে তবে টেনশন করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি ইনায়ার জ্ঞান
ফিরে আসবে “।

ডক্টর কথাটা বলে চলে যায় অরুণা বেগম ইনায়ার মাথায় হাত দিয়ে বুলাতে থাকে। ঘুমন্ত ইনায়াকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে একদম বাচ্চার মতো অরুণা বেগম বলে –

“- ইনায়া তোর মামণি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছে তোর জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। পনেরো বছর আগে ইভানের সাথে তোর বিয়ে দেওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল। ইভানের মতো জঘন্য আর নিচুঁ মানসিকতা মানুষ তোর জীবন সঙ্গী হওয়ার যোগ্য না। তোর মামণি নিজের ভুল সংশোধন করে নিবে তোর স্বামী হিসাবে বেটার কাউকে তোর জীবনে নিয়ে আসবে “।

অরুণা বেগম কথাটা বলে ইনায়ার মুখের দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা ইনায়ার জ্ঞান ফিরে আসে ধীরে ধীরে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে তার পাশে অরুণা বেগম বসে আছে। অরুণা বেগম ঘুমিয়ে আছে আসলে ইনায়ার অসুস্থতা জন্য ওনি বিগত সাতদিন ভালো করে ঘুমাতে পারেন নাই। রাতে যখন ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করেছেন ওনি ইনায়ার মায়া ভরা মুখ তার সামনে এসেছে। ইনায়া দেখে তার মামণি ঘুমিয়ে আছে সেটা দেখে সে হাসে তবে একটু আগে ইভানের মুখ থেকে বলা তালাক শব্দটা তার কানে বাজে। ইনায়া মনে মনে বলে –

“- ইভান ভাই আপনি আমার জীবনের প্রথম পুরুষ যার জন্য এই পনেরো বছর অপেক্ষা করেছি আমি। স্বামী হিসাবে প্রতিদিন যাকে নিজের কাছে চেয়েছি প্রতিদিন যাকে একবার দেখার জন্য নিজের চোখের পানি বিসর্জন দিয়েছি। কিন্তু আজকে আপনি কতো সহজে আমাকে তালাক দিয়ে দিলেন? কোনো ভালোবাসতে পারলেন না আমাকে ইভান ভাই “।

ইনায়া কথাটা বলে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে। বিছানা মধ্যে ইনায়ার নাড়াচাড়া করার জন্য অরুণা বেগমের ঘুম ভেঙে যায় ঘুম থেকে উঠে ওনি তাকিয়ে দেখে ইনায়া উঠে পড়েছে। অরুণা বেগম বলে –

“- ইনায়া মা আমার তোর জ্ঞান ফিরেছে। আজকে সাতদিন পর তোর সাথে কথা হলো ইনায়া “।

“- মামণি টেনশন করবে না আমি ঠিক আছি একদম পারফেক্ট৷ তোমার মেয়ে না আমি প্রচুর সট্রং “।

ইনায়ার কথা শুনে অরুণা বেগম হাসে এরপর ইনায়ার জন্য নাতাশা খাবার নিয়ে আসে। নাতাশা রুমে দরজায় এসে নক করে সেখানে অরুণা বেগম ইনায়ার সাথে কথা বল ছিলো। দরজায় কারো নক করার শব্দ শুনে তারা দুইজনে পিছনে তাকিয়ে দেখে নাতাশা এসেছে। অরুণা বেগম ইশারা দিয়ে নাতাশাকে ভিতরে আসতে বলে। নাতাশা খাবার হাতে নিয়ে ভিতরে যায় তবে ইনায়ার জ্ঞান ফিরে এসেছে দেখে খুশি হয়। নাতাশা বলে –

“- ইনায়া তোর জ্ঞান ফিরে এসেছে দেখে আমি অনেক খুশি হয়েছি। তোকে অনেক মিস করেছি আমরা সবাই আই রিয়েলি মিস ইউ বেস্টু “।

“- কিন্তু নাতাশা এখন মনে হচ্ছে আমি সত্যি সত্যি অজ্ঞান হয়ে যাবো। তুই আমার জন্য রান্না করলি বিশ্বাস হচ্ছে না আমার তোর রান্না খেয়ে কোথাও আমি আবার কোমায় না চলে যায় “।

“- শোন এই নাতাশা অনেক ভালো রান্না করে। সবাই নাতাশার রান্না প্রশংসা করে শুধু তুই ছাড়া। আমি চাই তুই আমার রান্না খেয়ে আবার কোমায় চলে যা “।

“- অসম্ভব এই ইনায়া আর কখনো কোমায় যাবে না অনেক দিন আমার মামণি ভালো বাবার দূরে থেকেছি আর না। আমার ভাগের সব আদর তোকে করেছে এতোদিন এখন এই ইনায়া ফিরে এসেছে। তোকে একটু ও আমার মামণির কাছে আসতে দিবো না বলে দিলাম “।

ইনায়া আর নাতাশার ঝগড়া দেখে অরুণা বেগম হাসতে থাকে সত্যি এই দুইটা মেয়ে এখনো বাচ্চায় থেকে গেছে। নাতাশার নিয়ে আসা খাবার ইনায়া খায় এরপর ডক্টরের লেখা ঔষধ অরুণা বেগম ইনায়ার হাতে দেয়। ইনায়া সেটা খেয়ে বিছানায় বসে রেস্ট নেয় অফিসের কাজ করতে চেয়েছে কিন্তু অরুণা বেগম নিষেধ করে দিয়েছে। ইভান নিজের রুমে বসে আছে তবে তার চোখের সামনে ইনায়ার সেই অসুস্থ মুখ ভেসে উঠে। ইভান বলে –

“- না না ইভান তোর দুর্বল হলে চলবে না ওই ইনায়ার উপর। ওকে সবসময় তোকে ঘৃণা করতে হবে তোর “।

ইভান কথাটা ভেবে কাজ করতে থাকে অন্যদিকে মিলন সাহেব বাড়ি ফিরে এসে শুনে ইনায়ার জ্ঞান ফিরে এসেছে। মিলন সাহেব অনেক খুশি হয় ওনি ইনাযার সাথে দেখা করে কথা বলে এরপর নিজের রুমে ফিরে আসে। অন্যদিকে অরুণা বেগম কার সাথে যেনো কথা বলছে মিলন সাহেব বিরক্ত না করে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়। এরপর ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করে –

“- অরুণা তুমি এতো রাতে কার সাথে কথা বলছো?

“- মায়ের সাথে “।

“- মায়ের সাথে হঠাৎ করে কথা বললে কোনো জরুরি বিষয় কি?

“- হুম মিলন ইনায়ার বিয়ের বিষয়ে মায়ের সাথে কথা বললাম “।

ইনায়ার বিয়ের কথা শুনে মিলন সাহেব অরুণা বেগমের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে। হঠাৎ করে ইনায়ার বিয়ে হবে কোনো আর কার সাথে বা বিয়ে হবে। মিলন সাহেব বলে –

“- ইনায়া বিয়ে মানে কার সাথে বিয়ে হবে? ইভান কি এই বিয়েতে রাজি? আর ইনায়ার বিয়ের বিষয়ে তুমি মাকে কোনো ফোন করেছো?

“- ইনায়ার বিয়ে হবে কিন্তু সেটা ইভানের সাথে না। বরং অন্য কারো সাথে। আর মাকে ফোন করেছি কারণ ইনায়া বউ হয়ে ওই বাড়িতে যাবে “।

অরুণা বেগমের মুখে ওই বাড়ি কথাটা শুনে মিলন সাহেব চমকে যায়। মিলন সাহেব বলে –

“- অরুণা তুমি যানো তুমি কি বলছো। ওই বাড়িতে ইনায়া বউ হয়ে গেলে ওরা ইনায়াকে মেরে ফেলবে। আর ওকে ইনায়া অনেক ঘৃণা করে কখনো ওকে বিয়ে করবে না ইনায়া.

“- মিলন বিয়ে ওই বাড়িতেই হবে ইনায়ার। আর ওই বাড়ির কেউ কোনো ক্ষতি করবে না ইনায়ার তুমি টেনশন করো না। আর ও এই বাড়ির সন্তান শুধু একটু ভুল বোঝার কারণে আমাদের থেকে দূরে সরে চলে গেছে। কিন্তু ইনায়ার সাথে বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে মিলন “।

মিলন সাহেব অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে অরুণা বেগমকে কিন্তু ওনি নিজের জেদে অটল থাকে। ইনায়া যখন নিজের রুমে বসে ফোনে ভিডিও দেখেছিলো তখন অরুণা বেগম ওর রুমে আসে। অরুণা বেগম বলে –

“- ইনায়া আমি কি তোর রুমের ভিতরে আসতে পারি?

অরুণা বেগমের কথা শুনে ইনায়া ফোন রেখে দরজার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে উত্তর দেয় –

“- অবশ্যই মামণি তোমার আবার রুমে আসার জন্য অনুমতি কোনো নিতে হবে। ভিতরে আসো “।

ইনায়ার সম্মতি পেয়ে অরুণা বেগম রুমের ভিতরে ঢুকে পড়ে এরপর বিছানার কাছে গিয়ে ইনায়র পাশে বসে। অরুণা বেগম ইনায়ার মাথায় হাত দেয় এরপর ওর একটা হাত নিজের হাতে রাখে। অরুণা বেগম বলে –

“- ইনায়া তোর কাছে যদি তোর মামণি কোনো কিছু চাই সেটা কি তুই রাখবি? বিশ্বাস কর তোর মামণি তোর ভালোর জন্য করবে? দয়া করে তোর মামণির আবদার টা রাখ মা?

অরুণা বেগমের এমন কথা শুনে ইনায়া একটু অবাক হয় কারণ আজ অবধি অরুণা বেগম তার কাছে কিছু চাই নাই। ইনায়া বলে –

“- মামণি এমন করে কোনো বলছে? ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর তুমিই আমার মা। তোমার কোনো কথার অবাধ্য কি হয়েছি কখনো আমি। তুমি শুধু আমাকে একবার বলো তোমার কি চাই? এই ইনায়া তার মামণির খুশির জন্য নিজের জীবন ও দিয়ে দিতে পারে.

ইনায়ার কথা শুনে অরুণা বেগম সাহস নিয়ে বলে –

“- আমি চাই তোর অন্য কোথাও বিয়ে দিতে। আমার পছন্দ করা ছেলেকে তুই কি বিয়ে করবি ইনায়া ?

মামণির মুখে বিয়ে কথাটা শুনে ইনায়া চমকে যায় অরুণা বেগম এমন কিছু বলবে সে আশা করে নাই। ইনায়া কি করে অন্য পুরুষকে বিয়ে করবে সে তো ইভানকে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকে নিজের স্বামী হিসাবে ইভানকে সবসময় নিজের মনের মধ্যে স্থান দিয়েছে। ইনায়া বলে –

“- মামণি তুমি কি বলছো এইসব বিয়ে মানে। কার সাথে বিয়ে হবে আমার। আর আমি কাউকে বিয়ে করতে পারব না মামণি “।

ইনায়া এমন কথা বলবে সেটা অরুণা বেগম যানে তাই সে ইনায়ার হাত নিজের মাথার উপর রাখে আর বলে –

“- ইনায়া তুই যদি কখনো তোর মামণিকে ভালোবেসে থাকিস বা নিজের মায়ের জায়গা দিয়ে থাকিস । তাহলে আমার মাথায় হাত দিয়ে তুই প্রমিস কর তোর মামণির পছন্দ করা ছেলেকে তুই বিয়ে করবি। আর যদি আমার কথার অবাধ্য হয়ে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবি তাহলে তোর মামণি মরা মুখ দেখবি “।

অরুণা বেগম কথাটা শুনে ইনায়া তার মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিতে চাই কিন্তু অরুণা বেগম সেটা করতে দেয় না। ওনি ইনায়ার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে –

“- বল ইনায়া তুই কি বিয়ে করবি না তোর মামণির মরা মুখ দেখবি “।

“- মামণি তুমি এইসব কি করছে মামণি। আমি বিয়ে করতে পারব না তুমি তো সব যানো মামণি। এমন কোনো করছে মামণি?

“- তুই বিয়ে করবি কি না ইনায়া “।

“- অসম্ভব আমি এই বিয়ে করতে পারব না মামণি “।

“- শেষ বার জিজ্ঞেস করছি তুই বিয়ে করবি না আমার মরা মুখ দেখবি? বল ইনায়া?

ইনাযা যানে অরুণা বেগম যা বলে তাই করে সে তার মামণিকে হারাতে পারবে না। তাই ইনায়া বলে –

“- আমি বিয়ে করব। হ্যা বিয়ে করব আমি। তুমি যার সাথে চাও তার সাথে করব তুমি সবকিছুর আয়োজন করো “।

ইনায়ার কথা শুনে অরুণা বেগম নিজের মাথা থেকে ইনায়ার হাত সরিয়ে ফেলে। এরপর বলে –

“- এই না হলে আমার মেয়ে। খুব তাড়াতাড়ি তোর অন্য কোথাও বিয়ে হবে একটা ভালো ছেলেন সাথে। তুই অনেক সুখী হবি আমার মেয়ে অনেক সুখে নিজের জীবন কাটাবো “।

অরুণা বেগম কথাটা বলে ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে ওনি যানেন ইনায়া ইভানকে ভালোবাসে। ইনায়ার মনের কথা অরুণা বেগম খুব ভালো বুঝতে পারে। কিন্তু অরুণা বেগম চাই না তার একটা ভুলের জন্য ইনায়া সারাজীবন কষ্টে থাকুক। নিজের বন্ধুর কাছে করা ওয়াদা ওনি রাখবেন ইনায়াকে ওনি ভালো ঘরে বিয়ে দিবেন। এমন একজন মানুষের সাথে ওর বিয়ে হবে যে ওকে সম্মান করবে ওকে ভালোবাসবে। অরুণা বেগম বলে –

“- আমি হয়তো প্রথম কোনো শাশুড়ী যে নিজের ছেলের বেচেঁ থাকার পর ও বউকে অন্য কোথায় বিয়ে দিবে। কিন্তু যে ছেলে নিজের বউকে সম্মান করতে পারে না যার মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নাই। সেই ছেলের জন্য অন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হতে দিবো না আমি। ইনায়া আমার ছেলের বউ না আমার মেয়ে শাশুড়ী হিসেবে না মা হিসাবে আমার দায়িত্ব ওকে সবসময় আগলে রাখা। আর তার জন্য যদি আমাকে নিজের ছেলের সংসার ভাঙাতে হয় তাও করব “।

অন্যদিকে ইনায়া মনে মনে বলে –

“- মামণি তুমি এইটা কি করলে আমি কি করে অন্য কাউকে বিয়ে করব তার সাথে সংসার করব। ইভান ভাইকে আমি ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি ওনার সাথে কখনো সংসার করা হয় নাই আমার। কিন্তু ওনাকে আমি স্বামী হিসাবে মেনে নিয়েছি সেই জায়গায় অন্য কাউকে কি করে দিবো। ইভান ভাইয়ের জন্য লেখা আমার সব চিঠি বলে দেয় আমি আজ ও ইভান ভাইকে ভালোবাসি।

গল্পটা কেমন হয়েছে? আজকে পারিবারিক ঝামেলার কারণে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারি নাই যার জন্য দুঃখিত.

#চলবে