#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_০৫ (ইনায়ার দ্বিতীয় বিয়ে)
চৌধুরী বাড়িতে বিশাল আয়োজন চলছে আর তিনদিন পর ইনায়ার বিয়ে যার জন্য বাড়িতে সাজসজ্জা হচ্ছে । অরুণা বেগম আর মিলন সাহেব অনেক বিজি বিয়ের কাজ নিয়ে তবে ইনায়ার সেই বিষয়ে কোনো ইন্টারেস্ট নাই। ইনায়া সারাক্ষণ অফিসের কাজ নিয়ে বিজি থাকে বাড়িতে বিয়ের কাজ দেখতে তার ভালো লাগে না। আর সে যানে ও না কার সাথে তার তিনদিন পর বিয়ে হচ্ছে আর সে জানতে ও চাই না। অন্যদিকে ইভান সে তো মহা খুশি ফাইনালি তার জীবন থেকে ইনায়া সারাজীবনের জন্য চলে যাবে।
চৌধুরী বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে সাজানো হচ্ছে যার প্রধান দায়িত্বে ইভান আছে সে নিজে উপস্থিত থেকে সকল কাজ দেখছে। বাড়িতে অনেক মেহমান এসেছে বিয়ে উপলক্ষে ইনায়া নিজের অফিস শেষ করে রাতে বাড়িতে ফিরে আসে। ইনায়া নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায় এরপর ফ্রেশ হয়ে বাহিরে চলে আসে। বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে গান বাজনার আয়োজন করা হচ্ছে যার কারণে কাজে ইনায়ার মন বসছে না।
ইনায়া কাজ করা বন্ধ করে নিজের রুম থেকে বের হয়ে যায় সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ছাদে যায় সেখানে বেশ শান্ত আবহাওয়া এখন। ইনায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে বড্ড বেশি অস্বস্তি লাগছে আজকে তার। বাড়িতে এতো মানুষ থাকার পর ও নিজেকে অনেক একা লাগছে সে ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে । ইনায়া যখন ছাদে দাঁড়িয়ে নিজের কল্পনার জগৎ সময় কাটাতে বিজি তখন ইভান এসে দাঁড়ায় ওর পিছনে। নিজের উপস্থিতি যানাতে ইভান পিছন থেকে ডাক দেয় ইনায়াকে
“- ইনায়া আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন?
নিজের ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে ইভানের ডাক শুনে চমকে যায় ইনায়া। ইনায়া পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে তার সামনে ইভান দাঁড়িয়ে আছে হাতে তার হাজার হাজার ফুলের বাহার। ইনায়া বলে –
“- ইভান ভাই আপনি এতো রাতে ছাদে কি করছেন? আর হাতে এতো ফুল নিয়ে কি কাউকে প্রপোজ করবেন?
ইভান একটু হাসে এরপর নিজের হাতে রাখা ফুল সেখানে থাকা একটা টেবিলের উপর রাখে। বাড়ি সম্পূর্ণ সাজানো শেষ হয়ে গেছে শুধু ছাদ সাজানো বাকি ছিলো যার জন্য ইভান ফুল দিয়ে ছাদ সাজাতে এসেছে। ছাদে এসে সে ইনায়াকে দেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে যার জন্য তার পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে ডাক দেয়। ইভান বলে –
“- আগামী কাল আপনার গায়ে হলুদ যার জন্য ছাদে ফুল দিয়ে সাজাতে এসেছি। কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন ইনায়া? ছাদ থেকে দাঁড়িয়ে কি নিজের বিয়ের সাজসজ্জা দেখছেন?
“- হুম তাই দেখছি জীবনে প্রথমবার এতো আয়োজন করে বিয়ে হচ্ছে আমার কেমন হয়েছে সেটা দেখতে হবে না। ইভান ভাই ছাদ সহ পুরো বাড়ি সুন্দর করে সাজিয়ে দিবেন কিন্তু যাতে বিয়ের দিন পুরো বাড়ি অনেক সুন্দর লাগে?
“- অবশ্যই ইনায়া কোনো চিন্তা করতে হবে না আপনার এই ইভান থাকতে ইনায়ার বিয়ের সাজসজ্জায় কোনো কমতি থাকবে না। আফটার অল দ্যা গ্রেট ইভান চৌধুরী একমাত্র বউয়ের বিয়ে বলে কথা জামাই হিসাবে একটা দায়িত্ব আছে আমার আপনার প্রতি।
ইভান কথাটা মজা করে বলেছে সেটা ইনায়া বুঝতে পারে ইনায়া একবার ভালো করে ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখে। নিজের মনের মধ্যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার যেই ইভানের জন্য এতোদিন অপেক্ষা করেছে সে। সেই ইভান আজ তার বিয়েতে হাসি মুখে সব কাজ করছে। নিজের জীবন থেকে বিদায় দেওয়ার জন্য তার বিয়ের ফুল দিয়ে ছাদ সাজিয়ে দিচ্ছে। ইনায়া বলে –
“- যাক এতোদিনে আপনি একটা দায়িত্ব পালন করলেন আমার প্রতি ইভান ভাই। আপনি হয়তো পৃথিবীর প্রথম স্বামী যে নিজের বউয়ের বিয়ের খাবার নিজেই রান্না করবেন “।
ইনায়ার কথা শুনে ইভান হাসে আর বলে –
“- অবশ্যই ইনায়া আপনি যখন বলেছেন তাহলে আপনার বিয়ের খাবার এই ইভান চৌধুরী রান্না করবে। তবে যায় বলেন আগে যানা ছিলো না আমার বউয়ের বিয়ের খাবার এতো মজা হয়। তাহলে আরো চার পাঁচটা বিয়ে কর তাদের তালাক দিতাম এরপর বিয়ের দাওয়াত দেখাত “।
“- হুম বুদ্ধিটা দারুণ ইভান ভাই সমস্যা নাই এখন আপনার আর আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে চাইলে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে।
“- ইনায়া সেটা তো করা যায় কিন্তু কি করব বলেন যতখন না এক বউয়ের বিয়ে দিচ্ছে ততক্ষণ অন্য কাউকে কি করে বিয়ে করি। আগে আপনাকে বিদায় কি পরে জীবনে অন্য কেউ আগমন করবে “।
“- কিন্তু ইভান ভাই আমি এখন আপনার বউ না আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে অনেক আগে। আজকের পর থেকে আমি আপনার বউ না বরং বোন। নিজের ছোট বোনের বিয়ের দায়িত্ব হিসাবে বড় ভাই হিসাবে আপনাকে নিতে হবে ইভান ভাই “।
ইনায়ার মুখে বড় ভাই কথাটা শুনে ইভান দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে –
“- ওয়াও বউ থেকে সোজা বোন। আর জামাই থেকে বড় ভাই দারুণ বিষয় সম্পর্ক বদলে গেলো একটি পলকে বউ থেকে কে যে বোন হলো রে “।
ইভানের হাসি ইনায়ার পছন্দ হয় না তাই সে কোনো কথা না বলে ছাদ থেকে চলে এসে। ইভান পাশের টেবিলে থাকা ফুল নিজের হাতে নিয়ে ছাদে সুন্দর করে সাজাতে থাকে। অন্যদিকে ইনায়া নিজের রুমে চলে আসে দরজা বন্ধ করে দেয় তার নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। ইনায়া বলে –
“- ইনায়া তুই কবে থেকে এইরকম বেহায়া হয়ে গেলি ইভান ভাই যখন তোকে ভালোবাসে না তখন তুই কোনো তাকে ভালোবাসবি। যে তোকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছে তার জন্য তুই কান্না কোনো করবি। ইভান ভাই যখন তোর বিয়েতে খুশি মনে সব কাজ করছে তখন তুই কোনো মন খারাপ করে থাকবি। এতোটা বেহায়া তুই কবে থেকে হলি? ইনায়া কবে থেকে?
ইনায়ার নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে সে নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় দেয়। ইনায়া সেই রাতে ঠিক করে সে নিজের জীবন থেকে ইভানের নাম সবসময়ের জন্য মুছে দিবে। আর কোনো দিন ইভানের জন্য কান্না করবে না নিজের নতুন জীবন শুরু হচ্ছে সেখানে ফোকাস করবে।
সময় খুব দ্রুত পার হয়ে যায় আজকে ইনায়ার বিয়ে চৌধুরী বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে অতিথিরা এসেছে শহরের অনেক ধনী বক্তিকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে বিয়েতে। নিজের রুমে বউ সাজে বিয়ের শাড়ি পড়ে বসে আছে ইনায়া তার সাজ প্রায় কমপ্লিট। ইনায়ার পড়নে তার মায়ের বিয়ে লাল বেনারসি শাড়ি, গায়ে গয়না, নাকে নোলক, হাতে চুড়ি,। মেকআপের লোক বলে –
“- ম্যাম আপনার সাজ কমপ্লিট আয়নায় নিজেকে দেখেন কেমন হয়েছে?
মেকআপ করা মহিলার কথা শুনে ইনায়া আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে তাকে একদম নতুন বউয়ের মতো লাগছে। নিজের মায়ের শাড়িতে তার সৌন্দর্য যেনো দিগুণ বেড়ে গেছে। তবে মনে ভয় হচ্ছে তার কপালে কি সত্যি কারো সাথে সংসার করা লেখা আছে। ইনায়া কি পারবে নিজের ভালোবাসা দিয়ে অচেনা একজন পুরুষের মন জয় করে নিতে। যদি সে ও ইভানের মতো ইনায়াকে ঘৃণা করে তখন কি করবে ইনায়া।
ইনায়া যখন আয়নার নিজেকে দেখতে থাকে তখন দরজা দিয়ে রুমে ভিতরে আসে অরুণা বেগম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইনায়াকে দেখে ওনার চোখ পানি এসে যায়। কারণ আজকে ইনায়াকে দেখতে একদম তার মায়ের মতো লাগছে নিজের বন্ধুর কথা মনে পড়ে যায় অরুণা বেগমের। কিন্তু খুশির দিনে চোখের পানি ফেলতে হয় না যে তাই সে এগিয়ে গিয়ে ইনায়ার মাথায় হাত রাখে আর বলে –
“- কি সুন্দর লাগছে আমার ইনায়াকে। চাঁদের সৌন্দর্য যেনো আমার মেয়ের সামনে কম পড়ে যাবে। কারো যেনো নজর না লাগে আমার মেয়ের সুখে “।
ইনায়া ট্রুল থেকে উঠে নিজের মামণিকে জড়িয়ে ধরে এরপর কান্না করে দেয় আর বলে –
“- মামণি আমি তোমাকে আর ভালো বাবাকে ছাড়া কি করে থাকবো বলো। এই বিয়ে আমি করতে চাই না মামণি “।
ইনায়ার কথা শুনে অরুণা বেগম হাসে আর বলে –
“- তোর মামণি আর ভালো বাবার ও তোকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হবে রে ইনায়া। কিন্তু কি করব বল মেয়ের সুখের জন্য সব কষ্ট সয্য করতে হবে আমাদের “।
ইনায়া অরুণা বেগম অনেক সময় কথা বলে এরপর সবাই ইনায়াকে বিয়ের আসরে নিয়ে আসার জন্য রুমে যায়। অন্যদিকে ইভান বিয়ের সকল কাজ করছে বরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বিয়ের আসরে নিয়ে যায়। তবে ইনায়ার বরকে তার বড্ড পরিচিত লাগছে কোথায় যেনো দেখেছে সে কিন্তু মনে করতে পারছে না। বউকে নিয়ে সকলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে ইভান সেইদিকে তাকিয়ে দেখে একবার। ইভান দেখতে থাকে ইনায়াকে কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে ইভানের চোখ যেনো জুড়িয়ে যায়।
সবাই ইনায়াকে বিয়ের আসরে বসিয়ে দেয় বরযাত্রী এসে ছবি তুলে এরপর কাজী আসে ইনায়ার কাছে আর বলে –
“- মা তুমি কি অরণ্য রাজ চৌধুরীকে বিয়ে করতে রাজি?
অরণ্য রাজ চৌধুরী নামটা ইনায়া ভালো করে শুনে নাই কারণ তার চোখ এখন ইভানের দিকে সীমাবদ্ধ আছে। কাজী আবার জিজ্ঞেস করে –
“- আপনি কি রাজি মা ইনায়া? রাজি থাকলে বলেন কবুল?
কাজীর কথা শুনে ইনায়া ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখে এরপর চোখে জমে থাকা পানি নিয়ে বলে –
“- কবুল
“- কবুল “।
“- কবুল “।
ইনায়ার মুখে কবুল শুনে সবাই খুশি হয়ে যায় তারা হাত তুলে দোয়া করতে থাকে। অন্য দিকে ইভানের মনের মধ্যে হঠাৎ করে ভীষণ কষ্ট অনুভব হতে থাকে। ইনায়া আজ থেকে অন্য কারো সেটা জেনে তার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু কষ্ট কোনো হচ্ছে। সবাই বরকে বিয়ের আসরে নিয়ে আসে একসাথে তারা ছবি তুলে কিন্তু ইনায়া একবার ও পাশে থাকা মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখে না। সে যানে ও তার স্বামীর পরিচয় কি তাকে দেখতে কেমন? তবে চারপাশের মেয়েদের কথা শুনে মনে হচ্ছে সেই অচেনা লোক দেখতে অনেক সুদশর্ন।
বিয়ে শেষ হয়ে যায় চৌধুরী বাড়ি থেকে ইনায়ার বিদায়ের সময় অরুণা বেগম আর মিলন সাহেব কান্না করছেন। কিন্তু ইভান তাদের সামনে আসে নাই সে তার রুমে চলে যায়। ইনায়া এখন গাড়িতে বসে আছে জানালা দিয়ে রাতের আকাশ দেখা যাচ্ছে। ইনায়ার পাশে বসে থাকা পুরুষ একদম চুপচাপ বসে আছে ইনায়ার কোনো ইচ্ছা নাই তাকে দেখার।
গাড়ি অল্প সময়ের মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে যায় সেখানে একজন মহিলা বের হয়ে আসে বরণ করার জন্য। ইনায়া সেইদিকে বেশি খেয়াল করে না এরপর তাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। বর্তমানে ইনায়া বাসর ঘরে বসে আছে ফুল দিয়ে সজ্জিত বিছানায় সে বসে আছে। তবে তার বর এখনো রুমে আসে নাই ইনায়ার ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে একজন সুষম দেহের অধিকারী লোক তার রুমে আসে। ইনায়া বিছানা থেকে উঠে এগিয়ে যায় তার কাছে এরপর তাকে যখন সালাম করবে তখন সে বলে-
“- ইনায়া ঠিক এমন করে সারাজীবন আমার পায়ের কাছে পড়ে থাকবেন আপনি। ওখানে আপনার জায়গা “।
হঠাৎ করে এমন কথা শুনে ইনায়া সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষের দিকে তাকায়। সামনে সে যাকে দেখতে পায় তাকে দেখে তার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায় এক ঝটকায় সরে যায় আর বলে –
“- মিস্টার অরণ্য রাজ চৌধুরী আপনি?
“- হ্যালো মিসেসে ইনায়া রাজ চৌধুরী। ওয়েলকাম আপনাকে আমার বাড়িতে বা আমার জীবনে আসার জন্য। তবে এইটা আপনার বাড়ি না জাহান্নাম আপনার জন্য “।
“- আপনার সাথে কি আমার বিয়ে হয়েছে অরণ্য। যাকে আমি নিজের থেকে ও বেশি ঘৃণা করি তার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আপনি আমার চিরশত্রু অরণ্য আপনার সাথে আমি কোনোদিন সংসার করব না। ঘৃণা করি আপনাকে আমি অরণা ঘৃণা করি “।
আজকে আমি অনেক অসুস্থ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারছি না তবুও গল্প দিয়েছি। দয়া করে নেগেটিভ কমেন্ট করবেন না কেউ।
#চলবে