#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_০৭ ( ইনায়া খুনের দায়ে জেলে)
ইনায়া চিঠিটা পড়ে আর চোখকে বিশ্বাস করেতে পারছে না মানে আদালতের নোটিশ ভুল হতে পারে না। কিন্তু এই নোটিশের মানে কি তার কোম্পানির সকল কাজ বন্ধ করে দিয়েছে মানে। আর এখানে কোন কোম্পানির কথা বলা হয়েছে এই নামে ইনায়ার কোনো কোম্পানি নাই। তাহলে তার নামে আদালত থেকে কোনো নোটিশ এসেছে?
ইনায়া নোটিশের কোনো কিছু বুঝতে পারছে না ইনায়া নিজের ফোন রিসিভ করে কল দেয় তার ম্যানেজার আসিফকে। আসিফ ফোন ধরে বলে –
“- জি ম্যাম বলেন?
“- আচ্ছা আসিফ আমাদের কি এসএস গ্রুপ নামে কোনো কোম্পানি আছে। যার মালিকানা আমার নামে দেওয়া?
“- না ম্যাম আমাদের এমন কোনো কোম্পানি নাই। কিন্তু হঠাৎ করে এইটা কোনো জিজ্ঞেস করছেন ম্যাম?
“- না আসলে আজকে একটা নোটিশ এসেছে আদালত থেকে আমার কোম্পানি এসএস গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে দেওয়ার নোটিশ এসেছে। কিন্তু আমার এমন কোনো কোম্পানি নাই আমার শুধু একটা ব্যন্ড আছে। তাহলে কি আদালত আমাকে মিথ্যা নোটিশ দিয়েছে?
“- হুম হতে পারে ভুল করে নোটিশ এসেছে “।
“- আসিফ তুমি চেক করে দেখো আমাদের এইরকম কোনো কোম্পানি আছে কি না? আদালত থেকে মিথ্যা নোটিশ সাধারণ আসে না ? তুমি চেক করে আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিও “।
“- ওকে ম্যাম “।
ইনায়া ফোন রেখে হাতে থাকা চিঠি আবার ভালো করে পড়ে কিন্তু সে বুঝতে পারে না এই এসএস গ্রুপের মালিক সে হবে কোনো। তার নামে এমন কোনো কোম্পানি নাই তাহলে? ইনায়া নিজের রুমে চলে যায় সেখানে টেবিলে নোটিশ রেখে দেয়। হঠাৎ করে ইনায়ার ফোনে একটা কল আসে ইনায়া তা দেখে অরুণা বেগম ফোন করেছে। ইনায়া ফোন রিসিভ করে বলে –
“- হুম মামণি কেমন আছো তোমরা? ভালো বাবা আর নাশতা কেমন আছে?
“- এখানে প্রতৈকে ভালো আছে। আচ্ছা তোর কথা বল অরণ্যর সাথে তোর দেখা হয়েছে মানে ও সাথে বিয়ে দিয়েছি বলে কি নিজের মামণির উপর তোর রাগ হয়েছে? আর অরণ্য কি তোর উপর কোনো অত্যাচার করেছে?
অরণ্যের নাম শুনে ইনায়ার হাসি মুখ থেকে উঠে যায় তবে সে অরুণা বেগমকে কষ্ট দিতে চাই না। অরুণা বেগম যদি জানতে পারে ইনায়া অরণ্যকে নিজের স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারে নাই। তাহলে ওনার মনে অনেক কষ্ট লাগবে যা ইনায়া চাই না তবে অরণ্য আর ইনায়ার সম্পর্ক কখনো সাধারণ স্বামী স্ত্রীর মতো হতে পারবে না। ইনায়া বলে –
“- মামণি ছোটবেলা থেকে এই ইনায়া কি কখনো তোমার সিদ্ধান্তের উপর কথা বলেছে? আর অরণ্যর সাথে যেহেতু আমার বিয়ে হয়েছে ওনি আমার স্বামী। অরণ্যর সাথে আমার যতই শএুতা থাকুক ওনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সেটা তো মিথ্যা হয়ে যেতে পারে না “।
অরুণা বেগম ইনায়ার কথা শুনে হাসে অরুণা বেগম যানে অরুণ্য কখনো ইনায়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না। অরুণা বেগম বলে –
“- ইনায়া দেখবি তুই সুখী হবি রে মা। তোর মামণির দোয়া সবসময় তোর সাথে থাকবে “।
“- আমি জানি মামণি। তবে তোমাকে অনেক মিস করছি আমি মামণি বড্ড বেশি “।
“- তোকে ও আমরা অনেক মিস করছি ইনায়া। আর আজকে অরণ্য আমাদের নিজে দাওয়াত করেছে তোদের বউ ভাতের অনুষ্ঠানে জয়েন করার জন্য। রাতে তোর সাথে দেখা হবে আমাদের ইনায়া “।
চৌধুরী পরিবারকে এই বাড়িতে আসার জন্য অরণ্য নিজে দাওয়াত করেছে সেটা শুনে ইনায়া চমকে যায়। যেই অরণ্য চৌধুরী পরিবারের নাম ও শুনতে পছন্দ করে না সেই অরণ্য তাদের বউভাতের অনুষ্ঠানে দাওয়া দিছে। অরণ্যর মনে আসলে চলছে টা কি ও কি এই বাড়িতে সবাইকে ডেকে এনে অপমান করতে চাই। কিন্তু ইনায়া কখনো সেটা হতে দিবে না। ফোনের অপর পাশ থেকে ইনায়ার কোনো রিপ্লাই না পেয়ে অরুণা বেগম বলে –
“- কি হয়েছে ইনায়া হঠাৎ করে এমন চুপ হয়ে গেলি কোনো?
“- না কিছু না মামণি। আচ্ছা অরণ্য কখন তোমাকে ফোন করে ইনভাইট করেছে?
“- সকালের দিকে ফোন করে বলেছে তোর আর অরণ্যর বউ ভাতের অনুষ্ঠান হবে আজকে। সেখানে যাতে আমরা সকলে উপস্থিত থাকি “।
ইনায়া কথাটা শুনে স্বাভাবিক ভাবে হাসে এরপর অরুণা বেগমের সাথে ও অল্প কিছুখন কথা বলে। ইনায়া ফোন রেখে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে অরণ্য রুমে এসেছে। ইনায়া যায় অরণ্যর কাছে আর ওর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে –
“- সমস্যা কি আপনার কি করতে চান আপনি? চৌধুরী পরিবারের সকলে আপনার শএু তাহলে ওদের কোনো বউ ভাতের অনুষ্ঠানে ইনভাইট করেছেন? আপনি মনে কি চলছে অরণ্য?
অরণ্য হেঁসে জবাব দেয় –
“- সবসময় এতো রেগে কথা বলেন কোনো আপনি? আমি আপনার শএু হয় তার সাথে জামাই হয়। জামাইয়ের সাথে ভালোবেসে কথা বলতে হয় তাকে সম্মান করতে হয় “।
“- অরণ্য একদম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবেন যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দেন। বলুন চৌধুরী পরিবারের সবাইকে কোনো ইনভাইট করছেন আপনি? একটা কথা ভালো করে শুনে রাখুন অরণ্য আপনার জন্য যদি আমার মামণি বা ভালো বাবার কোনো ক্ষতি বা অপমান হয়। তাহলে কিন্তু এই ইনায়া আমাকে খুন করে ফেলবে “।
ইনায়ার খুন করার কথা শুনে অরণ্য ভাবে মানুষের বউরা তাদের জামাইকে একটু পর পর কিস করতে চাই। আর বউ তাকে কথায় কথায় খুন করতে চাই আম্মু গো কোন জল্লাদ মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলে। নাতি নাতনির মুখ না দেখে নিজের ছেলের মরা মুখ তোমাকে দেখতে হবে। অরণ্যর কোনো জবাব না পেয়ে ইনায়া আবার জিজ্ঞেস করে –
“- কি সমস্যা আপনার উত্তর দেন না কোনো?
“- আরে জল্লাদ বউ থুক্কু মিসেস ইনায়া শান্ত হয়ে যান। শুনুন চৌধুরী পরিবারের সাথে আমার শএুতা অবশ্যই আছে কিন্তু ওনারা আপনার পরিবার। মেয়ের বউ ভাতে যদি তার পরিবারের কেউ না আসে তাহলে বিষয়টা খারাপ দেখা যায়। যার জন্য ওনাদের আমন্ত্রণ যানাতে হয়েছে আমার “।
“- সত্যি বলছেন?
“- তিন সত্যি বউ আমার বিশ্বাস করেন “।
অরণ্যে কথা শুনে ইনায়ার বিশ্বাস হয় কোনো জানি অরণ্যে কথা এখন অবিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না তার৷ অরণ্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করতে থাকে আর বলে –
“- আজকে আমাদের বউ ভাতের অনুষ্ঠান তাই দয়া করে রেডি থাকবেন। আর অনুষ্ঠানে কোনো ঝামেলা করবেন না কারণ সেখানে অনেক মিডিয়া আর আপনার পরিবারের লোক থাকবে?
“- অরণ্য আপনার কথা কি মানে আমি কি ঝামেলা করি?
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য পিছনে ফিরে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে –
“- না আপনি ঝামেলা করেন না। বরং নিজের স্বামীর খুন করেন?
“- যদি সত্যি আপনাকে কোনো খুন করে ফেলতে পারতাম?
“- খুন যদি আপনি করেন তাহলে অরণ্য রাজ চৌধুরী খুশি মনে তা গ্রহণ করতে রাজি?
“- এইসব সস্তার ডায়লগ অন্য মেয়েকে দিয়ে তাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা। বাট এই ইনায়াকে না “।
“- আপনি কি চান আমি অন্য মেয়ের সাথে এমন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলি “.
“- শুনুন অরণ্য রাজ চৌধুরী আপনি মেয়েদের সাথে মিষ্টি করে কথা বলেন বা তিতা করে বলেন সেটা নিয়ে এই ইনায়ার কোনো মাথা ব্যাথা নাই। ইসলামের চারটা বিয়ে জায়েজ আছে আপনার যদি খুব শখ থাকে তাহলে চারটা কোনো এর বেশি ও করতে পারেন। এই ইনায়া আপনাকে অনুমতি দিয়ে দিয়েছে “।
ইনায়া কথাটা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায় অরণ্য নিজের কপালে হাত দিয়ে একটা চুমো খায়। কপাল করে একটা বউ পেয়েছে সে বিয়ের পরের দিন সকালে নিজের স্বামীকে চার বিয়ে করার পারমিশন দিয়ে দেয়। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবদেন জানায় এমন বউ যেনো ঘরে ঘরে দেয় আমি একা কোনো সয্য করব।
সময় বিকাল পাঁচটা অরণ্য রাজ চৌধুরী বাড়িতে আজ অনেক মেহমান এসেছে। অনেক মিডিয়া বড়ো বড়ো শহরের ব্যবসায়ি সকলে উপস্থিত হয়েছে ইনায়া ওর রুমে বসে আছে। অরণ্য পড়নে একটা সাদা পানজাবি আর পায়জামা উপস্থিত সকলের সামনে অরণ্য বেশ ভালো করে কথা বলছে। তবে এখন সকলে ইনায়াকে দেখতে চাই মিডিয়ার লোক ও অরণ্য আর ইনায়াকে একসাথে দেখতে চাই।
অরণ্য সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায় নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করে। অরণ্য বলে –
“- ইনায়া আপনি কি রেডি হয়েছেন? আমি কি ভিতরে আসবো?
“- হুম আসেন “।
ইনায়ার জবাব পেয়ে অরণ্য ভিতরে ঢুকে যায় সেখানে খাটের উপর নতুন বউয়ের মতো করে বসে আছে ইনায়া।পড়নে তার সাদা শাড়ি মাথায় টিকলি শরীরে সিম্পল সাজ এতে যেনো ইনায়াকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। অরণ্য নিজের চোখ সরাতে পারছে নাই ইনায়ার থেকে প্রায় দুই মিনিট তাকিয়ে থাকে ইনায়ার দিকে। এরপর অরণ্যর হুশঁ ফিরে আসে সে ইনায়ার বেডের কাছে গিয়ে তার হাত বাড়িয়ে দেয়।
ইনায়া অরণ্যর হাত ধরে বেড থেকে নামে অরণ্য বলে –
“- ইনায়া আমাকে খুন করার জন্য আপনার আর বন্ধুকের ব্যবহার করতে হবে না। এতো সুন্দর করলে সাজলে অরণ্য রাজ চৌধুরী কোনো যেনো পুরুষ খুন হয়ে যাবে।
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার রাগ না বরং লজ্জা লাগছে তবে সে কোনো কথা বলে না। অরণ্য ইনায়ার হাত ধরে নিচে নিয়ে যায় তারা যখন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে তখন সব আলো তাদের উপর পড়ে। মিডিয়ার সকলে তাদের ছবি তুলতে বিজি থাকে অন্যদিকে ইনায়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে ইভান ও আসে। সে আসতে চাই নাই বাট অরুণা বেগম জোর করে নিয়ে আসে ইভান দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
অরুণা বেগম আর মিলন সাহেব এসে ইনায়ার সাথে কথা বলে যদি ও অরণ্য বা ওর বোন কোনো কথা বলে নাই তাদের সাথে। অনুষ্ঠান শুরু হয় সেখানে উপস্থিত অনেক কাপল ডান্স করতে থাকে সেটা দেখে অরণ্য নিজের হাত ইনায়ার দিকে এগিয়ে দেয়। ইনায়া ভ্রু কুচঁকে অরণ্যর দিকে দেখে৷ অরণ্য কোনো কথা না বলে ইনায়ার হাত ধরে তাকে সকলের মধ্যে নিয়ে আসে।
ইনায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে অরণ্য নিজের কাছে নিয়ে আসে ইনায়া চমকে যায়। অরণ্য বলে –
“- কি সমস্যা আপনার অরণ্য এমন করছেন কোনো? কোমড় থেকে হাত সরান বলছি?
“- আমি আপনার কোমড় না জড়িয়ে ধরি তাহলে ডান্স কি করে করব। আর আমি আপনাকে টার্চ করি নাই বরং শাড়ির উপর হাত রেখেছি “।
অরণ্য ইনায়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে এরপর ওর হাত দিয়ে ওকে ঘুরাতে থাকে। পরে একবার ইনায়াকে পিছনে ঘুরিয়ে নিয়ে এসে ওর কাঁধে কাছে নিজের মুখ নেয়। ইনায়ার শরীরে শিহরণ বয়ে যায় এরপর তারা ডান্স করতে থাকে। অন্যদিকে ইভান তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখে যাচ্ছে ইভানের কোনো জানি খারাপ লাগছে ইভান বলে –
“- যাকে নিজের জীবন থেকে ইচ্ছা করে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। তার সাথে অন্য অন্য পুরুষকে দেখলে খারাপ কোনো লাগছে আমার?
ইনায়া আর অরণ্যের ডান্স করার মধ্যে বাড়িতে প্রবেশ করে পুলিশের সদস্য। সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সেই দিকে ইনায়া আর অরণ্য পুলিশকে দেখে নিজেদের ডান্স থামিয়ে দেয়। পুলিশ এগিয়ে আসে ইনায়ার দিকে এরপর বলে –
“- মিসেস ইনায়া আপনাকে খুনের দায়ে এরেস্ট করা হলো।
“- মানে?”
“- আপনার জন্য প্রায় বিশজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে যার শাস্তি হিসাবে আপনাকে জেলে যেতে হবে আমাদের সাথে।
#চলবে