#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_০৮ ( ইনায়ার যখন খুনি)
বউভাতে উপস্থিত সকলে চমকে যায় হঠাৎ করে পুলিশের এমন করে আসার কারণে। ইনায়া আর অরণ্য দুইজনে ডান্স স্টপ করে পুলিশের কথা শুনে। পুলিশ এসে দাঁড়ায় ইনায়ার সামনে এরপর ওর দিকে তাকিয়ে বলে –
– মিসেস ইনায়া রাজ চৌধুরী আপনাকে খুনের দায়ে এরেস্ট করা হলো। আদালত থেকে আপনার কোম্পানির বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করা হয়েছে। এসএস গ্রুফ অফ ইন্ডাস্ট্রির খাবার খেয়ে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এডমিট হয়েছে তার মধ্যে কিছু মানুষের মৃত্যু ও হয়েছে “।
পুলিশের সব কথা ইনায়ার মাথার উপর দিয়ে চলে যায় মানে কি বলছেন কি ওনি। এসএস গ্রুপ নামে ইনায়ার কোনো কোম্পানি নাই তার তার সকল ড্রেসের কালেকশন আর ডিজাইনিং নিয়ে। সেখানে তার কোম্পানির খাবার খেয়ে মানুষ কি করে মারা যেতে পারে। ইনায়ার সকালে আসা আদালত থেকে নোটিশের কথা মনে পড়ে। ইনায়া বলে –
“- পুলিশ স্যার আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে এসএস কোম্পানির মালিক আমি না। আমার এই নামে কোনো কোম্পানি নাই। আর নিজের কোম্পানির খাবারে বিষ মিশিয়ে আমি কোনো মানুষ কে খুন করতে যাবো?
“- দেখেন মিসেস ইনায়া এসএস কোম্পানির মালিক আপনি না অন্য কেউ সেটা আমরা জানি না। আদালত থেকে আমাদের অর্ডার এসেছে আপনাকে এরেস্ট করার জন্য আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেহে হবে। আর কি সত্যি কি মিথ্যা সেটা কোর্টে প্রমাণ হবে “।
ইনায়া আর পুলিশের কথা শুনে অরুণা বেগম আর মিলন সাহেব এগিয়ে আসে। অরুণা বেগম গিয়ে ইনায়ার কাঁধে হাত রাখে চোখের ইশারায় ইনায়াকে শান্ত থাকতে বলে। মিলন সাহেব বলে –
“- পুলিশ স্যার আমার অবর্তমানে ইনায়া চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির এমডির দায়িত্ব পালন করে। আর ইনায়া নিজস্ব একটা বিজনেস আছে তবো তার নাম এসএস কোম্পানি না। ইনায়ার সাথে বা চৌধুরী কোম্পানির সাথে এসএস কোম্পানির কোনো সম্পর্ক নাই। আদালত থেকে হয়তো ভুল নোটিশ এসেছে আমার মনে হয় আপনাদের ভালো করে চেক করা দরকার “।
মিলন সাহেবের কথা শুনে পুলিশ অফিসার নিজের পকেট থেকে একটা কাগজ বাহির করে। পুলিশ কাগজটা মিলন সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে –
“- দেখেন স্যার আমরা পুলিশের লোক আদালত আমাদের যা আদেশ দিয়েছে সেটা পালন করা আমাদের দায়িত্ব। মিসেস ইনায়া এই শহরের বড় বিজনেস ওমেন ওনাকে এরেস্ট করার আগে আমরা সব বিষয় ভালো করে তদন্ত করেছি। কিন্তু এই কথা একদম সত্যি যে মিসেস ইনায়া এসএস কোম্পানির মালিক ওনার কোম্পানি খাবার তৈরি না করে বিষ তৈরি করে যা খাওয়ার ফলে মানুষের মৃত্যু ঘটে.
মিলন সাহেব নিজের হাতে থাকা কাগজ ভালো করে পড়ে কিন্তু সেই কাগজে যা আছে সেটা দেখে ওনি অবাক। এসএস কোম্পানি মালিক সত্যি ইনায়া। মিলন সাহেব বলে –
“- ইনায়া এই কাগজের মানে কি?
মিলন সাহেব কথা শুনে ইনায়া তার হাত থেকে কাগজ নিয়ে ভালো করে দেখতে থাকে৷ কাগজে স্পষ্ট লেখা আছে এসএস কোম্পানির বর্তমান মালিক ইনায়া এবং। প্রতিবছর এসএস কোম্পানির প্রফিটের টাকা তার ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়। ইনায়া বলে –
“- ভালো বাবা তুমি বিশ্বাস করো এই কোম্পানির নাম আমি কখনো শুনি নাই তাহলে এই মালিক কি করে হতে পারি আমি। আর আমার ব্যংক একাউন্টে এসএস কোম্পানির কোনো টাকা নাই আমি সত্যি কিছু জানি না এই বিষয়ে “।
পুলিশ ইনায়ার কোনো কথা শুনে না সে এগিয়ে সে ইনায়ার হাতে যখন হাতকড়া পড়িয়ে দিতে যাবে। তখন অরণ্য এসে ইনায়ার হাত সরিয়ে নেয় অরণ্য শান্ত গলায় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলে –
“- আরো পুলিশ স্যার বাসর রাতে আমি নিজের বউকে হাত ধরতে পারি নাই। কিন্তু আপনি দেখি আমার আগে আমার বউকে টার্চ করার চেষ্টা করছেন।
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া ওর দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি এই লোকটা কি কখনো ভালো হবে না।ইনায়া অরণ্যর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে দেখে কিন্তু অরণ্য একটা ডোনট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বলে। পুলিশ অফিসার বলে –
“- দেখেন মিস্টার অরণ্য রাজ চৌধুরী বাসর রাতে আপনারা স্বামী স্ত্রী কি করেছেন সেই বিষয়ে জানার কোনো আগ্রহ আমার নাই৷ কিন্তু ইনায়া বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে ওনাকে আমাদের থানায় নিয়ে যেতেই হবে “।
“- পুলিশ অফিসার আপনি এমন করে কথা বলছেন যেনো ইনায়া আমার না আপনার বউ। দেখেন বিয়ে করেছি বউয়ের সাথে থাকার জন্য এখন যদি বউকে আপনি জেলে তুলে নিয়ে যান তাহলে আমার কি হবে। বউ ছাড়া এক রাত ও এই অরণ্য রাজ চৌধুরী কাটাতে পারবে না। এক দফা এক দাবি বউ চাই আমার “।
অরণ্যর কথা শুনে পুলিশ বেশ বিরক্ত হয় মানে কি বলছে এই লোক মাথা খারাপ না কি ওনার। তবে পুলিশের নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে তারা ইনায়ার হাতে হাতকড়ি পড়িয়ে দেয় এরপর তাকে নিজের সাথে নিয়ে যায়। অরণ্য ইনায়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে তার মাথায় এখন কি চলছে সেটা কেউ যানে না।
ইনায়া এখন জেলখানায় বসে আছে শহরের প্রায় প্রতিটা টিভি চ্যানেলে তার এরেস্ট হওয়ার কথা যানানো হচ্ছে। ইনায়া কিছু বুঝতে পারছে না তার সাথে কি হচ্ছে এই এসএস কোম্পানির মালিক আসলে কে সে সত্যি জানে না। আর ইনায়া জন্মের আগে এই কোম্পানি গড়ে উঠেছে কিন্তু কে এই কোম্পানি তার নামে করে গেছে।
অন্যদিকে অরণ্য তার উঁকিলের সাথে ইনায়ার বিষয়ে কথা বলছে। অরণ্য নিজের ফোন দিয়ে একজনকে ফোন করে অরণ্য বলে –
“- এসএস কোম্পানি নামে আমার সকল তথ্য চাই। আর ইনায়া কি সত্যি এই কোম্পানির এমডি সেই বিষয়ে আমি জানতে চাই.
ইনায়া সাথে দেখা করতে মিলন সাহেব আর অরুণা বেগম আসে অরুণা বেগম ইনায়ার কাছে এগিয়ে আসে। অরুণা বেগমকে দেখে ইনায়া কান্না করে দিয়ে বলে –
“- মামণি সবসময় আমার সাথে এমন কোনো হয় মামণি? আমি কি ক্ষতি করেছি কারো মামণি? জীবনে কি সত্যি কখনো সুখ হবে না আমার?
ইনায়ার কথা শুনে অরুণা বেগম ওর মাথায় হাত রাখে। অন্যদিকে হাসপাতালে প্রায় একশো মানুষ এডমিট হয়েছে সকলের অবস্থা খুব খারাপ। এসএস কোম্পানির খাবার খেয়ে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে গেছে এর মধ্যে কিছু মানুষের মৃত্যু ও হয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটা খবরের কাগজে বর্তমানে এসএস কোম্পানির এমন নিউজের কথা বলা হচ্ছে।
ইনায়াকে কালকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে হয়তো তার কোম্পানির বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে যার জন্য তার কঠিন শাস্তি হতে পারে। অরণ্য নিজের রুমে বসে আছে তার রুমে মন টিকছে না বারবার ইনায়ার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে তার। অরণ্য রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায় এরপর গাড়ি করে থানার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। ইনায়ার শরীর অনেক টার্য়াড হয়ে গেছে যার জন্য সে এখন জেলখানার মধ্যে ঘুমিয়ে আছে।
অরণ্য থানার কাছে যায় সেখানে গিয়ে পুলিশের অনুমতি নিয়ে ইনায়ার সাথে দেখা করে। ইনায়া তখন ঘুমিয়ে ছিলো ইনায়া নিচে শুয়ে আছে। অরণ্য তার কাছে যায় সে দেখে ইনায়া ঘুমিয়ে আছে ইনায়ার মুখ দেখে তার বড্ড মায়া হচ্ছে। ঘুমিয়ে থাকার কারণে ইনায়ার সামনে থাকা চুল এলো মেলো হয়ে গেছে অরণ্য তা কানের পিছনে গুঁজে দেয়।
#চলবে