তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-০৯

0
5

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_০৯ ( আদালতে ইনায়া)

ঘুমন্ত ইনায়ার মুখের তিকে অরণ্যর ভীষণ মায়া লাগে কালকে অবধি যে মেয়েটা সুস্থ স্বাভাবিক ছিলো। আজ তার অবস্থা কতটা খারাপ হয়ে গেছে অরণ্য খুব শান্ত স্বরে ইনায়ার নাম ধরে ডাক দেয় অরণ্য বলে –

“- ইনায়া এই বউ আমার উঠুন।

ইনায়ার শরীর প্রচুর টার্য়াড থাকার কারণে সে ঘুমিয়ে যায় তবে হঠাৎ করে শান্ত গলায় কোনো পুরুষের ডাক শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়। ইনায়া ধীরে ধীরে চোখ খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষকে ভালো করে দেখে সে আর কেউ না অরণ্য। অরণ্যকে দেখে ইনায়ার চোখ থেকে ঘুম উড়ে যায় ইনায়া উঠে দাঁড়িয়ে যায়।এরপর ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আপনি এখানে কি করছেন? আপনার এখন বাসায় বসে পার্টি করা উচিত।ফাইনালি আপনার শএু এই ইনায়া আপনার জীবন থেকে চলে এসেছে। আর কালকে আমার কেস আদালতে উঠবে বর্তমানে সকল প্রমাণ আমার বিরুদ্ধে। তাই হয়তো মানুষ খুন করার অপরাধে আমার জেল বা ফাঁসি হয়ে যাবে?

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য মনে খারাপ লাগা কাজ করে কোনো যানি ইনায়ার চলে যাওয়া কথা শুনে অরণ্যর কষ্ট হয়। অরণ্য বলে –

“- ইনায়া এমন কিছু হবে না আপনার সাথে আমার শএুতা আছে কিন্তু সেটা শুধু বিজনেসের কারণে। কিন্তু আপনি আমার বিবাহিত বউ আপনাকে বিপদ থেকে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। কালকে আদালতে কোনো সব সত্যি প্রমাণ হবে ।কোনো অন্যায় হবে না আপনার সাথে ইনায়া “।

অরণ্যর মুখে অন্যায় হবে না কথাটা শুনে ইনায়া হাসে তার জীবনে আর কি ভালো হওয়া বাকি আছে যে সেটা হবে। প্রতিটা মানুষের ধৈর্য ধরার একটা লিমিটা আছে ইনায়ার জীবনে ছোটবেলা থেকে শুধু দুঃখ পেয়ে এসেছে সারাজীবন ও মনে হয় তাই পাবে। ইনায়া বলে –

“- যানেন অরণ্য জন্মের পর থেকে যাকে আমি ভালোবাসে এসেছি প্রতৈকে আমার থেকে দূরে চলে গেছে। আমার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন আমার বাবা মারা যায় এক্সিডেন্ট। এরপর কাজের লোকের পরিচয়ে চৌধুরী বাড়িতে থাকতে হয় এর কিছুদিন পর মায়ের একটা জটিল অসুখ হয় যার ফলে মা ও মারা যায়। এরপর মামণি আর ভালো বাবা আমাকে বড়ো করে পড়াশোনা শিখায়।

“- ইনায়া এমন ভেঙে পড়বেন না জীবনে যা হয় ভালোর জন্য হয় “।

“- অরণ্য আমার জীবনে কখনো ভালো হবে না শুধু মরে গেলে সব সমাধান হবে। কালকে যদি আদালতে আমাকে খুনের দায়ে ফাঁসি দেয় তাহলে অনেক খুশি হবো আমি।বিশ্বাস করেন এই পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকতে আমার ইচ্ছা করে না বিরক্ত হয়ে গেছি আমি। বারবার কষ্ট সয্য করতে করতে “।

ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য নিজের হাত জেলখানার শিকের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় এরপর ইনায়ার উড়না নিজের হাতের মধ্যে রেখে।ইনায়ার গালে টার্চ করে অরণ্যর হাতের ছোঁয়া পেয়ে ইনায়ার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। ইনায়ার চোখে জমে থাকা জল অরণ্য সযত্নে মুছে দেয় এরপর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে অরণ্য বলে –

“- ইনায়া প্রতিটা মানুষের জীবনে কষ্ট থাকে শুধু সবাই প্রকাশ করতে পারে না। আপনি যে কষ্ট কান্না করে প্রকাশ করেন অন্য কেউ হয়তো সেটা হাসি দিয়ে নিজের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। ইনায়া শান্ত হয়ে যান সব ঠিক হয়ে যাবে

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার ভালো লাগে ইনায়া অরণ্যের দিকে ভালো করে তাকিয়ে তাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা কে বুঝার চেষ্টা করে। অরণ্যর প্রতিটা কেয়ার ইনায়ার ভালো লাগছে। ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আপনি না আমাকে শএু মনে করেন? তাহলে এই শএুর বিপদে সাহায্য কেনো করতে চান আপনি? আমার উপর বিশ্বাস করেন আপনি অরণ্য?

।ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য মুখে একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলে –

“- সত্যি বলতে ইনায়া আমার বিশ্বাস হয় যে আপনি মানুষ খুন করেছেন? মানে যে বউ বাসর ঘরে নিজের জামাইকে খুন করার চেষ্টা করতে পারে সে অন্য মানুষকে খাবারে বিষ মিশিয়ে খায়িয়ে ও দিতে পারে।

অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া অবাক এই লোক একটু আগে তার সাথে কতো সুন্দর করে কথা বল ছিলো। এখন আবার সয়তানি শুরু করে দিয়েছে ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আপনাকে খুন করার চেষ্টা না করে একবারে খুন করে ফেললে ভালো হতো। আর আমি সব মানুষকে খাবারে বিষ মিশিয়ে খুন করেছি একবার বাড়িতে ফিরলে আপনাকে ও করব “।

“- ইনায়া নিজের একমাত্র স্বামীকে আপনি খুন করতে চান। উপর ওয়ালা তুমি আমার কপালে কি খুনি বউ দিলে। এখন মনে হচ্ছে চারটা বিয়ে করতেই হবে এক বউ দিয়ে হবে না আমার “।

“- দয়া করে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে আমাকে মুক্তি দেন জঘন্য লোক একটা “।

ইনায়া আর অরণ্য দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়ার মধ্যে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়।পুলিশ অফিসার এগিয়ে আসে ওদের কাছে অরণ্য নিজের হাত ইনায়ার গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয়।পুলিশ বলে –

“- অরণ্য সাহেব কেমন আছেন আপনি? আর নিজের বউয়ের সাথে জেলে দেখা করতে এসে কেমন লাগছে আপনার?

পুলিশের কথার উত্তর দেয় অরণ্য।

“- বউ ছাড়া আর কি ভালো থাকা যায় পুলিশ সাহেব। আর বউয়ের সাথে মানুষ বিয়ের পর হানিমুনে যায় আমি না হয় জেলখানায় এসেছি সমস্যা কি। অরণ্য রাজ চৌধুরী সবসময় একটু আলাদা টাইপের কিছু করতে পছন্দ করে।

“- ওহ তাই না কি তাহলে আপনি বললে থানাকে আপনার বাসর ঘরের মতো করে সাজিয়ে দেয়। থানায় হবে আপনার বাসর ঘর কি বলেন অরণ্য?

“- পুলিশ সাহেব আমার কোনো অসুবিধা নাই আপনি যদি বাসর ঘর সাজাতে পারেন তাহলে আমি ও বাসর করতে পারি। বাই দ্যা ওয়ে আমার বউয়ের ভালো করে খেয়াল রাখবেন ইনায়া যা চাই তাই যাতে হয়।

“- মিস্টার অরণ্য এইটা থানা আপনার বাড়ি না। আর ইনায়া চৌধুরী একজন অপরাধী অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হবে।

পুলিশের কথা শুনে অরণ্য বলে –

“- যদি আমার বউয়ের কোনো সমস্যা হয় তাহলে আপনার বউ ও আপনার বাড়িতে থাকবে না পুলিশ স্যার?

“- মানে?

“- মানে খুব সহজ আমার আবার বউ ছাড়া রাতে ঘুম আসে না তাই যদি আমার বউকে আপনি না ছাড়েন। তাহলে আপনার বউকে আমি উঠিয়ে নিয়ে আসবো এরপর কি হতে পারে সেটা আপনি ভালো করে যানেন। এই অরণ্য রাজ চৌধুরী এই শহরের কি সেটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। সো ইনায়ার যাতে কোনো সমস্যা না হয় কথাটা মাথায় রাখবেন।

অরণ্য কথাটা বলে ইনায়াকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় গাড়ি চালিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য। ইনায়া পুলিশের দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায় ভিতরে। অরণ্য নিজের রুমে শুয়ে আছে তার ঘুম আসছে না তার বারবার ইনায়ার কান্না করা মুখের কথা মনে পড়ে। অরণ্য মনে মনে বলে –

“- ইনায়া আপনি আমার বিবাহিত স্ত্রী। স্বামী হিসাবে আপনাকে বিপদ থেকে বাঁচানো আমার দায়িত্ব। কালকে আদালতের সামনে ইনায়াকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।

আদালতে সকাল এগোরাটা সবাই উপস্থিত হয়েছে ইনায়া কোর্টে বসে আছে। ইনায়ার পক্ষে থেকে কোনো উঁকিল ঠিক করা হয় নাই জর্জ নিজের জায়গায় বসে আছে। পাঁচ মিনিট পর ইনায়ার কাছে এসে বসে অরণ্য। অরণ্যর মুখে কোনো চিন্তার ছাপ নাই ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে –

“- কি ব্যাপার বউ জামাই ছাড়া রাত কেমন কাটছে?

অরণ্যর মুখে এমন কথা শুনে ইনায়া শকড হয়ে যায় এই ব্যাডা কি কোনো পরিস্থিতিতে সিরিয়াস হবে না। ইনায়া বলে –

“- আপনি কি কখনো ভালো কথা বলতে পারেন না। আজব এখন চুপচাপ আদালতের রাই শুনেন।

“- আরে আদালত রাই কি শুনবো আমি সব আমার জানা। সো চিল করেন “।

“- আপনার মাথায় কি চলছে অরণ্য? আর আমার জন্য উঁকিল ঠিক করা হয় নাই কোনো?

“- আমার বউজান সবাই আদালতে লড়াই করার জন্য টাকা দিয়ে উঁকিল কিনে। আর আমি নাহ জর্জকে কিনে নিবো শুধু দেখতে থাকেন বউ এই অরণ্য রাজ চৌধুরী গেমটা কি করে খেলে।

#চলবে