তোমার নিমন্ত্রণে পর্ব-৩৬

0
89

#তোমার_নিমন্ত্রণে (পর্ব ৩৬)
নুসরাত জাহান লিজা

দীপ্তর সমস্ত অনুভূতি অসাড় হয়ে আছে। শিমুলের ডাকে কেবল মাথা নাড়ায়। এরপর চোখ তুলে একবার তাকালো। চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে। ঠোঁটের কাছটা ফুলে আছে, সেখানে রক্ত। দীপ্তর মনে হচ্ছে ওর সমস্ত পৃথিবী রঙহীন, ধূসর, বিবর্ণ হয়ে গেছে একটা মুহুর্তেই। গলার কাছটায় কী যেন এক অসহনীয় কষ্ট দলা পাকিয়ে আছে। পাজর বেয়ে উঠে আসতে চাইছে নীল রঙা যন্ত্রণার অসহ্য দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু পুরোপুরি বেরুতে পারছে না, তাই চাপ পড়ছে হৃৎপিণ্ডে। বুকের বাঁ পাশটায় অবর্ণনীয় ব্যথা।

শিমুল প্রায় নিস্পন্দ দীপ্তকে হাত ধরে টেনে ক্যাফেটেরিয়া থেকে বাইরে বের করল। গাড়িতে বসেও একভাবে তাকিয়ে আছে দীপ্ত। সেই দৃষ্টিতে প্রাণ নেই। এমন প্রাণহীন দীপ্তকে কোনোদিন দেখেনি শিমুল। চোখ দুটো যেন পাথরের।

শিমুল এখন দীপ্তকে নিয়ে ওর বাসায় যেতে চায় না। আঙ্কেলকে চিন্তায় ফেলা ঠিক হবে না। তাই নিজের বাসায় নিয়ে যাচ্ছে।

“দীপ্ত, কিছু বল প্লিজ…”

শিমুল দীপ্তকে কথা বলাতে চাইছে৷ তাহলে ভেতরের গোমট ভাবটা কেটে যেতে পারে। কিছু না বলুক অন্তত মন খুলে কাঁদুক এটাও চাইছে৷

“শ্রেয়সী ভুল বলে। রাতের পরে সবার জীবনে সূর্য হাসে না। যাদের জীবনে একবার সূর্য ডুবে যায়, তাদের জীবনে আর ভোর আসে না। সেখানে সবসময় ঘুঁটঘুঁটে রাতই থেকে যায় সারাজীবন।”

শিমুল একবার চমকে দীপ্তর দিকে তাকাল, কেমন অপ্রকৃতস্থ মনে হচ্ছে। ঠোঁটের কোণের তীর্যক হাসিতে গভীর অবসান। কারো হাসিতেও যে এত বিষণ্ণতা থাকতে পারে, তা আজকের আগে কোনোদিন দেখেনি শিমুল। কথাগুলোও কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।

***
শ্রেয়সী ওর ডেস্কে বসেছিল। কালকের মধ্যে একটা পেপার সাবমিট করতে হবে। বসে বসে ক্রসচেক করছি। এরইমধ্যে সোমার কল এলো৷ প্রথমে ধরল না, ভাবল একেবারে কাজটা গুছিয়ে এরপর কথা বলবে। তাই কেটে দিল। কিন্তু আবার কল এলো। রিসিভ করতেই বলল,

“শ্রেয়সী, আমি নিলয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছিলাম। হঠাৎ করে দীপ্ত ভাইয়াকে দেখলাম। মারামারি করছিল।”

শ্রেয়সী বিস্মিত হলো, মারামারি! দীপ্ত কেন মারামারি করতে যাবে, “তুই ভুল দেখেছিস বোধহয়।”

“আমি তোকে একটা ভিডিও পাঠাচ্ছি। দেখ। আমার কাছে বিষয়টা খুব জটিল মনে হয়ছে। তাই মনে হলো তোকে জানাই। উনি কোনো সমস্যায় আছে বোধহয়।”

শ্রেয়সী ভিডিওটা ওপেন করতেই যা দেখল তাতে ওর কেমন প্রতিক্রিয়া করা উচিত তাই বুঝল না। সৌম্যকে দেখে মনে পড়ল এর সাথেই সে দেখা করতে গিয়েছিল, তখনই দীপ্তর সাথে ওর মূল যোগাযোগ শুরু হয়। এরপর আর সৌম্যকে দেখেনি সে। ভিডিওতে কথাগুলো স্পষ্ট নয়। একটু দূর থেকে করা। তবে সৌম্যকে দেখে সে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলল। এই দ্বন্দ্বযু দ্ধের কেন্দ্রবিন্দু ওর নিজেরই হবার সম্ভাবনা বেশি। দীপ্তকে এভাবে ভাঙে পড়ে হাত জুড়তে দেখে শ্রেয়সীর ভেতরে ঢেউ ভাঙতে লাগল। সে যতদূর চেনে, দীপ্ত নিজের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে অত্যন্ত খুঁতখুঁতে। কখনো বাড়াবাড়ি পর্যায়ে তা চলে যায় বলেই ও প্রথমে রিজেক্ট করে দিয়েছিল। কতটা ভেঙে পড়লে বা কোন পর্যায়ে গেলে মানুষ জাগতিক প্রখর সম্মানবোধকেও বিসর্জন দিতে পরোয়া করে না, তা উপলব্ধি মাত্রই ভীষণ অস্থির হয়ে উঠল সে। জরুরি কাজ শিঁকেয় তুলে ছুটল বসের ঘরে।

“আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কোনো সমস্যা? অসুস্থ বোধ করছেন?”

“স্যার, আমার এক্ষুণি ছুটি লাগবে। ভীষণ জরুরি আর ব্যক্তিগত কারণে।”

“কিন্তু, কাল,..”

“ঠিক আছে, আপনি আপনার কাজটা সুমন সাহেবকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান। আপনি কাজের প্রতি সিনসিয়ার। তাই জানি অপ্রয়োজনে আপনি ছুটি নেবেন না।”

শ্রেয়সী পাঁচ মিনিটে কাজটা বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো। দীপ্তকে কল দেবার কথা ভেবে সেই চিন্তা বাদ দিল। সাথে শিমুলকে দেখেছে সে ভিডিওতে। তাই শিমুলের নম্বর ডায়াল করল।

“ভাইয়া, দীপ্ত আপনার সাথে আছে এখনো?”

“এখনো মানে? তুমি…”

“আমি সব জানি শিমুল ভাইয়া। কোথায় আপনারা?”

“আমার বাসার দিকে যাচ্ছি।”

“আমি আসছি। ওকে একলা ছাড়বেন না প্লিজ।”

জ্যাম পেরিয়ে আসতে প্রায় চল্লিশ মিনিট লেগে গেল শ্রেয়সীর। শান্তা দরজা খুলে দিল, সে ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল। ওর হাতে আইস কিউব তুলে দিয়ে বলল,

“ডানদিকের ঘরে যা।”

শ্রেয়সী কোনো কথা না বলে ভেতরে চলে এলো। দীপ্ত বিছানায় বসে আছে, স্ট্যাচুর মতো।

পাশে শিমুল, সে শ্রেয়সীকে দেখে উঠল, “আজ সুযোগটা কাজে লাগাস দীপ্ত।” ফিসফিসিয়ে বলে বেরিয়ে গেল।

শ্রেয়সী দরজা লক করে দিল। পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে দীপ্তর চিবুক ধরে মাথাটা তুলল। ঠোঁটের কাঁটা অংশটুকু দেখে ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। কোনো প্রশ্ন না করে পাতলা কাপড়ে প্যাঁচিয়ে বরফ ঘষতে শুরু করল।

কিছুক্ষণ সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমি আজ এক্সপ্লেনেশন চাইছি তোমার কাছে দীপ্ত।”

দীপ্ত মাথা ঘুরিয়ে যেন পালাতে চাইছিল, শ্রেয়সী শক্ত করে দুই হাতে ওর মুখ উঁচু করে নিজের দিকে ধরে রেখে দীপ্তকে বাধ্য করল নিজের চোখের দিকে তাকাতে। দীপ্ত বেশিক্ষণ শ্রেয়সীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না। ওই চোখে সে নিজের জন্য ঘৃণা সহ্য করতে পারবে না। দীপ্ত চোখ বন্ধ করে ফেলল, বন্ধ চোখের কোণ বেয়ে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোঁটা।

শ্রেয়সী সেই জল নিজের হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বলল, “তোমার ওই বন্ধুর সাথে আমাকে নিয়েই তো ঝামেলা করেছ, তাই না? আজ সত্যি কথা বলবে।”

“আমার কপালটাই খারাপ শ্রেয়সী। কিন্তু আমাকে তো বলতেই হবে। কিন্তু জানি জানলে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমাকে আর ভালোবাসবে না। আমার সাথে তোমার সময়গুলো ভাগাভাগি করবে না।”

“দীপ্ত, যা বলার সোজাসুজি বলো। এখন এসব শুনতে ভালো লাগছে না। তুমি জানো আমার কতটা টেনশন হচ্ছে? আমাকে তুমি কষ্ট দিচ্ছ প্রতিনিয়ত। বুঝতে পারছ না?”

দীপ্তর মধ্যে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে খানিকটা।

“শুনলে আরও কষ্ট পাবে। সব কথা শুনতে নেই। না শুনেই আমার সাথে থেকে যাও না? খুব কি ক্ষতি হবে?”

দীপ্তর কাতর গলা শুনে কষ্ট হলেও শ্রেয়সী পিছু হটলো না, বলল, “তুমি আমাকে তোমার খুব কাছের বন্ধু হবার প্রস্তাব দিয়েছিলে দীপ্ত, এত কাছের যেখানে হৃদয় খুলে দেয়া যায়। তোমার মনে আছে আমি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলাম? তাহলে আজ বন্ধুত্ব ভেঙে দিয়ে যে আমাকে অপমান করতে চাইছ এটা বুঝতে পারছ না?”

“শুনলেই তো তুমি চলে যাবে!”

“আজকের ঘটনাটা শুনতে চাইছি। আগে কী হয়েছে না হয়েছে সেটা তুমি না বলতে চাইলে আমি জিজ্ঞেস করব না। কিন্তু আজ যা ঘটেছে তা সাধারণ ঘটনা নয়। তুমি একটা পাবলিক প্লেসে মারামারি করেছ। যেখানে আমি ইনভলভড। তাই আমাকে শুনতে হবে। তুমি নিজে কষ্ট পাচ্ছ, আমি কষ্ট পাচ্ছি, বাবা টেনশনে থাকে সবসময়।”

“তাহলে কথা দাও সব শুনে তুমি চলে যাবে না?”

এবার শ্রেয়সী রেগে গেল, সে সরে গিয়ে বলল, “তুমি না বললে আমি এখনি চলে যাচ্ছি।’’

শ্রেয়সী দরজা পর্যন্ত যেতেই দীপ্ত ভীষণ কাতর গলায় ডাকল, “শ্রেয়সী…”

সেই ডাকে কী ছিল শ্রেয়সী জানে না, কিন্তু ওর পা থমকে গেল। এতটা আবেগ কারোর গলায় থাকতে পারে ওর জন্য!

“আমি বলব। ফিরে এসো প্লিজ।”

শ্রেয়সী এসে দীপ্তর পাশে বসল।

“আমি তোমার কাঁধে মাথাটা রাখতে পারি শ্রেয়সী? প্লিজ।”

শ্রেয়সী দীপ্তর মনের ঝড়কে যেন প্রত্যক্ষ করে নিজেই জড়িয়ে ধরল।

দীপ্ত ক্ষণকাল নীরবে বসে রইল। নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করছে। শ্রেয়সী ভেতরে ভেতরে খানিকটা শঙ্কিত, কী এমন কথা বলবে ছেলেটা, যা বলতে এতটা ভয় পাচ্ছে। মনে মনে নিজেকে শক্ত করে নিল সে।

“আগে বলে নিই, আজ তুমি যা-ই শোনো, শোনার পরে সিদ্ধান্ত নেবার আগে একটা কথা শুধু মনে রেখো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। কতটা জানি না, তবে তুমি আমার পাশে থাকবে না, এমন কথা ভাবতেও আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। আর প্লিজ কিছুক্ষণ শুনেই থামিয়ে দিও না। কষ্ট হলেও আমার পুরো কথাটা শুনবে।”

শ্রেয়সীর ভেতরে আশঙ্কার মেঘ গাঢ় হলো। কিন্তু দীপ্তকে কথা বলার সুযোগ দিল।

দীপ্ত ওদের দেখা হওয়া থেকে শুরু করে আজকের সৌম্যর সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুব মন দিয়ে শুনলো। প্রথমদিকে দীপ্তর ওকে নিয়ে ভাবনা শুনে ভীষণ রাগ হয়েছে, মনে হয়েছে সব ছেড়েছুড়ে চলে যায়। আবার পরবর্তীতে দীপ্তর পরিবর্তিত অনুভূতি শুনে মনে প্রশান্তি এসেছে। সবশেষে সেই রাগ এখনো রয়ে গেছে। তবুও দীপ্তকে সে এড়িয়ে যেতে পারছে না।

শ্রেয়সী দীপ্তকে প্রথম দেখায় ভেবেছিল সেলফ অবসেসড, প্রচণ্ড দাম্ভিক আর অহংবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। কিন্তু ওর সাথে মিশতে গিয়ে বুঝেছিল, দীপ্ত আসলে শেলফিশের মতো। যার বাইরেরটা শক্ত খোলসে আবৃত, ভেতরে ভীষণ নরম আর সংবেদনশীল এক মন আছে। যে আসলে ভালোবাসার কাঙাল। যাকে বিন্দুসম ভালোবাসলে সে ফিরিয়ে দেয় এক সমুদ্র। বিয়ের পরে আস্তে আস্তে উপলব্ধি করেছে, দীপ্তর ভেতরের ভঙ্গুর সত্তাকে, যে ভেতরের সেই ভগ্নদশা লুকোতেই নিজেকে খোলসের আড়ালে ঢেকে রাখতে চায়। আজ সেই ভাবনা আরও পাকাপোক্ত হলো।

শ্রেয়সী বুঝতে পারল, এই বিষাদে ঘেরা রাজপুত্র সে নিজে কতটা ভালোবাসে! দুজন মানুষের ভালোবাসা একসাথে মিলে তৈরি হয়েছে এক প্রবল চৌম্বকীয় বল। যা পরস্পরকে পরস্পরের দিকে টানছে। সেই শক্তিশালী ভালোবাসাকে পায়ে দলে চলে যাবার মতো বোকামী সে করবে না। তবুও এই দোটানা সে চায় না। এমন ভঙ্গুর দীপ্তকেও সে প্রতিনিয়ত ধুঁকে ধুঁকে ক্ষয়ে যেতে দেখতে পারবে না। এর অবসান প্রয়োজন। একটা স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। অন্তত সামনের মানুষটার সদিচ্ছা প্রয়োজন। সেজন্য শ্রেয়সীর খানিকটা সময় প্রয়োজন।

“তুমি আমাকে চলে যাবে না তো?”

আবারও এই প্রশ্ন করল দীপ্ত। শ্রেয়সী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমার দুইদিন সময় লাগতে ভাবতে। এখনই আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। একটা কথা শুধু জিজ্ঞেস করতে চাই, তুমি আমাকে ভালোবাসো ঠিক আছে। কিন্তু নিজেকে ভালোবাসো না। নিজেকে ভালোবাসা শিখতে হবে। সেটা শিখবে কথা দাও। যাতে আমি ভাবতে পারি। তোমার এই কথাটা যদি বিয়ের আগে বা তখনই আমাকে বলে দিতে, আমার খারাপ লাগত না। এখনো এটার জন্য যতটা না খারাপ লেগেছে, তার চাইতে বেশি খারাপ লেগেছে তোমার কয়দিন পরপর আমাকে উপেক্ষা করাটা।”

“এবার চলো বাসায় যাই।”

শ্রেয়সীর প্রস্তাবে দীপ্ত উঠে দাঁড়াল। আজ বলতে পেরে নির্ভার লাগছে। শ্রেয়সীটা ভীষণ চাপা স্বভাবের। ওর মুখ দেখে মনের থৈ পাওয়া যায় না৷ তবুও ভাবার জন্য যে সময় নিয়েছে, এটাও দীপ্তর জন্য একটা সুযোগ।

পরের দুই দিন শ্রেয়সী ভাবল, কিছু জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করল। দীপ্তর সাথে খুব একটা কথা বলল না।

আজ দীপ্তকে বলল, “আমি আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।”

দীপ্ত নিজের উদগত ভয়কে চেপে রেখে, বলল, ‘’বলো।” ওর ধারণা শ্রেয়সীকে সে হারিয়ে ফেলবে। এই দুই দিনের নির্লিপ্ততায় তাই মনে হয়েছে। কিন্তু মুখ ফুটে সে নিজে তা বলল না। চূড়ান্ত রায় শুনতে উৎকর্ণ হলো।

“আমি এখানে থাকব না-কি থাকব না, সেটা তোমার সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে।”

“কী সিদ্ধান্ত?” অবচেতনেই বলে দীপ্ত।

“আমি তোমাকে একজনের কার্ড দেব এখন। তুমি তার সাথে দেখা করবে।

“কে?”

শ্রেয়সী একটা ভিজিটিং কার্ড ওর হাতে দিল। দীপ্ত দেখল সেটা।

‘নিলুফার রায়হান
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।’

দীপ্ত দপ করে জ্বলে উঠল, “শ্রেয়সী, তোমার ধারণা আমি পাগল হয়ে গেছি? আমার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে?”

“তুমি একজন ম্যাচিওর মানুষ দীপ্ত। তুমি সবটা বোঝো। আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস নেই?”

“আছে, কিন্তু আমি কোনো সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাব না।”

“তুমি যাবে কি-না বলো। যদি রাজি হও, তাহলে আমি আছি, না রাজি হলে চলে যাব। ব্যাগ গোছানো আছে। যখন মনে হবে তুমি রাজি, তখন আমাকে ডেকো। আমি ফিরে আসব।”

“আমি যাব না।”

“আসি তাহলে। ভালো থেকো। নিজের যত্ন নিও। তুমি কথা দিয়েছিল নিজেকে ভালোবাসবে। কিন্তু কথা রাখতে পারলে না।”

দীপ্ত দেখল শ্রেয়সী সত্যিই চলে যাচ্ছে। বড় ব্যাগ সাথে। ওরও যাবার কথা ছিল সাথে কিন্তু একবারও জিজ্ঞেস করেনি, সে যেতে চায় কি-না। কার্ডটা হাতে নিয়ে সে বসে পড়ল মেঝেতে।

***
বেরিয়ে এসে শ্রেয়সীর ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। শ্রেয়সী চায় দীপ্ত অন্তত চেষ্টা করুক। নিজের উপরে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসুক। নিজে নিজে গুমরে গুমরে শেষ হয়ে যাবার যন্ত্রণা দীপ্তর পিছু ছাড়ুক৷ সফল হলো না বিফল তা কেবল সৃষ্টিকর্তার হাতে।

কিন্তু চেষ্টাটুকু করতে দোষ কোথায়। বাধ্য হয়ে ওকে হার্ড লাইনে যেতে হলো। তবুও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
………..
(ক্রমশ)