তোমার নিমন্ত্রণে পর্ব-৫+৬

0
125

#তোমার_নিমন্ত্রণে (পর্ব ৫+৬)
নুসরাত জাহান লিজা

“তাহলে দীপ্তও প্রেমে পড়ল, আমরা এবার ঢাকঢোল পিটিয়ে একটা বিয়ে খেতে যাচ্ছি। তাও আবার কার! আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর দীপ্তর?”

কেবলই পানি মুখে নিয়েছিল দীপ্ত, শিমুলের কথায় রীতিমতো কাশি উঠে গেল ওর, ফলত মুখের পানি ছিটকে টেবিলে ছড়িয়ে পড়ল। ধাতস্থ হয়ে বলতে চেষ্টা করল, “তুই ভুল বুঝছিস। এতদূর গড়ায়নি বিষয়টা হলো…”

ওকে শেষ করতে না দিয়ে শিমুল বলল, “তুই কি লজ্জা টজ্জা পাচ্ছিস নাকি?”

আঁতে লাগল কথাটা, তাই আপাতত বলল, “এতকিছু তোর ভাবতে হবে না। শুধু বল, খুব মুডি একটা মেয়েকে কী করে ইমপ্রেস করা যায়?”

“ইম্প্রেস করার প্রথম ধাপ হলো মেয়েটার বেশি বেশি প্রশংসা করা। স্পেশালি রূপের। বুঝলি?”

শিমুলের কথায় দীপ্তর ভ্রু কুঁচকে গেলে, সে বলল, “রূপের প্রশংসা? যদি আমার কাছে ওকে সুন্দর না লাগে তাও?”

শিমুল মজা করে দীপ্তর রান্না করে খিচুড়ি মুখে দিয়েছিল, খানিকটা সময় নিয়ে মুখের গ্রাসটুকু গিলে বলল,

“প্রেমে পড়লে প্রেমের আলোতে গোটা পৃথিবীটা সুন্দর মনে হয় দোস্ত, আর তুই বলছিস যার প্রেমে পড়েছিস তাকে সুন্দর লাগবে না! এটা হতেই পারে না।”

বন্ধুর বিশেষজ্ঞ মতামত পেয়ে দীপ্তর কুঁচকানো কপালে আরও কিছু ভাঁজ যুক্ত হলো, “প্রেমে পড়েছি মানে?”

“প্রেমে না পড়লে খামাখা একটা মেয়েকে ইম্প্রেস করতে যাবি কোন দুঃখে?”

এইটা অবশ্যই একটা যুক্তিযুক্ত কথা। সে কথার উত্তর দীপ্ত এই মুহূর্তে কাউকে দিতে চায় না। আপাতত এটা ওর ভীষণ গোপন বিষয়৷ তাই সে কথা কাটানোর জন্য বলল,

“আরে তা না, জাস্ট একটা ভালো লাগা। এখনো তেমন কিছু না। আগে তো জানাশোনা হোক। তাই না? পরে আমাকে ছ্যাঁচড়া ভাববে না এখনি প্রশংসা টশংসা করলে?”

“তাহলে শোন, ফার্স্ট ইমপ্রেশন বলে একটা টার্ম আছে। প্রথম দেখায় একটা ভালো ধারণা জন্মে গেলে বাকি কাজ সহজ হয়ে যায়।”

দীপ্ত নিজের মনেই আওড়াল, “ফার্স্ট ইম্প্রেশনের জন্যই এই অবস্থা। সেটার আবার ভালো।”

“আর কি উপায় আছে বল। খাওয়া শেষ হলে আমি নোট করে নেব।”

শিমুল ঘর কাঁপিয়ে হাসল এবার, বলল, “শোন, মুখস্ত বিদ্যা দিয়ে আর যাই হোক প্রেম হয় না। মেয়েদের সিক্সথ সেন্স অত্যন্ত প্রখর। সো বি জেনুইন। ওকে?”

ধুত্তেরি ছাই, কীসব উদ্ভট বকছে গাধাটা! মনে হলো দীপ্তর। মনে মনে কিছু বাছা বাছা অকথ্য শব্দে বন্ধুকে গালি দিতেও ভুলল না। জেনুইন কিছু থাকলে তো! আর ওমন কথায় কথায় ফুঁস করে উঠা মেয়ের প্রতি কীসের প্রেম প্রেম গদগদ। একে সেদিন কোন কুক্ষণেই না সে কল দিয়েছিল। এখন এসে প্রেমের পাঠ নিচ্ছে৷

“বুঝলাম। আর?”

“তোর একটা প্লাস পয়েন্ট আছে কিন্তু। তুই এই যে ফার্স্ট ক্লাস খিচুড়ি রেঁধেছিস। রান্না পারা ছেলেদের মেয়েরা এমনিতেই অনেক পছন্দ করে। বউয়ের প্রতি তারা অনেক কেয়ারিং হয়।”

“কিন্তু রান্নাটা আমি কাউকে পটানোর জন্য শিখিনি। আমার প্রয়োজনে শিখেছি।”

“তুই এত নিরামিষ হয়ে গেলি কী করে দীপ্ত? তোর দ্বারা প্রেম হবে না। মেয়েরা সংবেদনশীল ছেলে পছন্দ করে, যাদের সেন্স অব হিউমার খুব স্ট্রং তাদের পছন্দ করে। তোর মতো কাঠখোট্টা আচরণ করলে একশো হাত দূর দিয়ে হাঁটবে ওরা।”

“তুই খা। খেয়ে বিদায় হ৷ আমি একটু ঘুমাই। মাথা ঝিমঝিম করছে।”

“বিদায় হব তবে আগে আড্ডা দেই তোর সাথে। অনেক দিন আড্ডা হয় না। আঙ্কেল কবে আসবে? তোর চাইতে আঙ্কেলের রসবোধ ভালো।”

“ফ্রিজে রসোগোল্লা আছে, আমার কথাগুলো সেই রসে ডুবিয়ে খা। তাহলে রসালো লাগবে। শালা!”

আরও ঘণ্টাখানেক আড্ডা দিয়ে শিমুল চলে গেল। দীপ্ত মুখে যতই বলুক, শিমুলের বলা কথাগুলো মাথায় নিল। যদিও কষ্ট হবে, তবে এর ফল নিশ্চয়ই ভালো হবে। তার জন্য একটু গদগদ কথা নাহয় বলল।

***
আজ শুক্রবার। দীপ্ত মসজিদ থেকে ফিরে রেডি হতে শুরু করল। পাক্কা দুই ঘণ্টা সময় নেবার পরে সে সন্তুষ্ট হলো নিজের সাজসজ্জায়। পাঁচটা পাঞ্জাবি পরে এরপর এটাকে সিলেক্ট করেছে। ওকে দেখতে ভীষণ হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। বেরুনোর আগে ঘড়ি পরল। পারফিউম দিয়ে এরপর সানগ্লাস হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো৷

ওর মনে পড়ল বাবা সেদিন ওর ন্যাকামির লিস্ট দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “তুই ঘণ্টা ধরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকিস। ছেলেরা এত সময় নিয়ে রেডি হয়? আবার বলিস প্রেম করা ন্যাকামি!”

দীপ্ত উত্তরে বলেছিল, “বাবা, আয়না কী শুধু মেয়েদের ইউজ করার জন্য বানানো? ছেলেরা যদি পরিপাটি থাকতে চায় তাহলে সমস্যা কোথায়?”

রেস্টুরেন্টে চারটায় এসে পৌঁছেছে দীপ্ত। আসার কথা ছিল সাড়ে তিনটায়। কিন্তু এসে দেখে শ্রেয়সী এখনো আসেনি। তেরো মিনিট অপেক্ষা করার পর মহারানী এলেন।

“আপনি কখন এসেছেন? একটু কি লেট হয়ে গেছে আমার?”

তেরো মিনিট পরে এসেও তিনি বুঝতে পারছেন না লেট করেছেন কি-না। দীপ্ত মনে মনে শ্রেয়সীর কথায় বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ না করে বলল, “না না, সামান্য তেতাল্লিস মিনিট। সমস্যা নেই।”

নিজে যে আধাঘন্টা পরে এসেছে তা আর প্রকাশ করল না, ইচ্ছে ছিল মেয়েটাকে অপেক্ষা করানোর। কিন্তু উল্টো তারই অপেক্ষা করতে হলো।

“কী খাবেন বলুন। অর্ডার করে দিই।” শ্রেয়সী বলতে দীপ্ত বলল, “আপনি দিন।”

“ট্রিটটা আমার পক্ষ থেকে তাই না?”

দীপ্ত অর্ডার করার পরে শ্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে দেখল, শ্রেয়সী সচরাচর যেমন পরিপাটি থাকে সেভাবেই এসেছে। খুব বেশি প্রসাধন নেই মুখে, গাঢ় লিপস্টিক ছাড়া। তাতে দেখতে ভালো লাগে।

“আপনাকে ভালো দেখাচ্ছে।”

এমন শুকনো কমপ্লিমেন্ট শ্রেয়সী আগে পায়নি। তবে দীপ্তর মুখ থেকে এমন কথা শুনে সে সরু চোখে তাকালো একবার। এরপর বলল,

“ধন্যবাদ।”

দীপ্ত এভাবে বলতে চায়নি। চেয়েছিল আরেকটু সুন্দর করে বলতে। কিন্তু অনভ্যস্ততায় এটাই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে৷ দীপ্ত মনে করার চেষ্টা করল এরপর কী বলা যায়! নিজের রান্না পারাটা কী করে জানানো যায় তা ভাবতে ভাবতে সে বলল,

“আপনি রান্না করতে পারেন?”

শ্রেয়সী এবার আরও একবার তাকালো দীপ্তর মুখের দিকে, এবার দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ।

“আমরা বিয়ে, দেখাদেখি স্টেজ পেরিয়ে এসেছি দীপ্ত। তাই এসব প্রশ্নের আদৌ কি প্রয়োজন আছে?”

দীপ্ত বুঝল সে আবারও ভুল কথা বলে ফেলেছে। সেটাকে কাটিয়ে নিতেই সে বলল, “আপনি যা ভাবছেন তা না। আসলে আমি রান্না করতে পারি৷ তাই ভাবলাম বিষয়টা আপনার সাথে কমন পড়ে কি-না দেখি।”

যদিও বুঝল কথাটা কেমন বোকা বোকা, হাস্যকর শোনাচ্ছে৷ সে গা ঝাড়া দিল। শিমুলের কথাটা মনে পড়ল, “বি জেনুইন।”

“ওকে। ভালো লাগল জেনে। আর কী কী পারেন?”

“অনেক কিছুই।”

এবার দীপ্ত ভিন্ন পথে হাঁটল।
“আপনি বই পড়তে পছন্দ করেন?”

“ভীষণ।”

“বাহ্! প্রিয় লেখক?”

“অনেক। আমি সব ধরনের বই পড়ি। দেশি-বিদেশি সব লেখকের। তাই লম্বা লিস্ট। বলে শেষ করা যাবে না।”

“আমারও লম্বা লিস্ট। প্রতিদিন ব্যস্ততার মধ্যেও তিন-চার পৃষ্ঠা হলেও পড়ি।”

“আমি কত যে টেক্সট বুকের নিচে রেখে চুরি করে পড়েছি। পরীক্ষার আগে অবশ্য। এমনিতে বাবা-মা উৎসাহ দিত। কিন্তু পরীক্ষার আগে মা খুব রেগে যেত৷ ধরা পড়ে ভীষণ বকা শুনতাম।” হেসে বলল শ্রেয়সী।

মায়ের কথায় দীপ্ত খানিকটা উদাসীন হলো। ওর মা’র সাথে যদি বাবা-র ছাড়াছাড়ি না হতো, তবে তিনিও কি ওকে এভাবে আদরে শাসনে রাখতেন! ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগ হলো ওই মহিলার উপরে।

নানা কথায় কখন যেন অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল৷ দীপ্ত জিজ্ঞেস করল,

“আপনার কেমন ছেলে পছন্দ বেটার হাফ হিসেবে?”

শ্রেয়সী তাকাতে সে তড়িঘড়ি করে বলল, “আবার অন্যকিছু ভাববেন না প্লিজ। আমাকে রিজেক্ট করেছেন, তাই আপনার ক্রাইটেরিয়া জানতে কৌতূহল হলো। সেজন্যই জিজ্ঞেস করেছি।”

শ্রেয়সী খানিকটা মুহূর্ত নীরব থেকে বলল, “আমি চাই আমি যাকে বিয়ে করব, সে আমাকে বুঝবে। আমার ভালোলাগা মন্দলাগার প্রতি তার সম্মান থাকবে। বিশ্বাস আর সম্মান হচ্ছে মূল জিনিস যেকোনো সম্পর্কে। ইগোকে যারা প্রোয়োরিটি দেয় তারা অন্যের পছন্দকে সম্মান করতে জানে না।”

“শেষের কথাটা আমাকে মেনশন করে বললেন?”

“আমি জাস্ট আমার চাওয়াটুকু বলেছি।”

“বিষয়টা আপনার পক্ষ থেকেও একই থাকবে?”

“অবশ্যই। সম্পর্কটা তো দ্বীপাক্ষিক। তাই না?”

দীপ্ত যেন নিমগ্ন চিত্তে কিছু একটা ভাবছিল, ওদের বাবা-মা’’র প্রতিদিন ঝগড়া হতো। তুমুল কথা-কাটাকাটি। সে ছোট ছিল, সম্পর্কের জটিলতা সে তখন বুঝত না। তবে এখন মনে হয় তাদের মধ্যে পারস্পারিক যে সম্মানবোধ সেটা অনুপস্থিত ছিল। শ্রেয়সীর চাওয়ায় আজ কেন যেন ওর রাগ হতে গিয়েও রাগটুকু মিইয়ে গেল।

শ্রেয়সী হয়তো খানিকটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল, কিছুটা কফি ছলকে ওর ওড়নায় পড়ল। দীপ্ত তড়িঘড়ি করে টিস্যু এগিয়ে দিল।

খাবার শেষ করার পরে শ্রেয়সী বিল দিতেই ওরা ওঠে দাঁড়ায়। বেরুতে বেরুতে অস্ফুটস্বরে দীপ্ত বলল, “আমরা বন্ধু হতে পারি?”

শ্রেয়সী ওর দিকে তাকিয়ে আরেকবার ওকে জরিপ করে বলল, “বন্ধুত্ব আমার কাছে হৃদয়ের কাছাকাছি একটা বিষয়৷ এত দ্রুত কাউকে আমি বন্ধু ভাবতে পারি না। স্যরি।”

শ্রেয়সী চলে গেলে দীপ্তর একটু আগে না উঠা রাগটা ফিরে এলো। এত কীসের দেমাগ ওই মেয়ের। ওর চার্ম কোনো কাজেই লাগল না। মিউচুয়াল বলল, অথচ ফিরতি একটা প্রশংসা বাক্য ওকে বলল না। আবারও জেদটুকু ফিরে এলো। আরও কাঠখড় পোড়াতে হবে ওকে।

***
বাবা গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে এলেন মঙ্গলবার। জমি জমা সংক্রান্ত ঝামেলা এখনো শেষ হয়নি তিনি সামনে আবার যাবেন এক সপ্তাহ পরে।

দীপ্তর একা একা বাবাকে ছাড়া বাসায় তেমন একটা ভালো লাগে না। ভীষণ মিস করেছে এই কয়দিন বাবাকে। আজ বেশ শান্তি পাচ্ছে।

“ভূতের বাড়ির ভূতদের আই মিন পেত্নীদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করে নিয়েছিস নাকি?”

“মানে?”

“আসার পর থেকেই দেখছি কেমন হুতোম প্যাঁচার মতো মুখ করে আছিস। ভাবলাম আছড় করল কি-না।”

“উফ বাবা! তুমি না? তুমি কখনো সিরিয়াস হতে পারো না?”

“তোর মতো? তাহলে আমাকে এখনকার চাইতে বেশি ভালোবাসতি?”

দীপ্ত এবার মৃদু হেসে বলল, “বাবা, তুমি যেমন আছো তেমনই থেকো। তাতে আমার ভালোবাসায় কমতি হবে না কোনোদিন।”

মোহসীন সাহেব ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন৷ তার বড্ড আদরের ছেলে। তার একমাত্র বেঁচে থাকার স্পৃহা।

***
দীপ্তর এই কয়েকদিন কেটেছে নিত্য-নতুন মুভি আর সিরিজ দেখে। আজ ফেসবুকে ঢুকতেই মনে হলো শ্রেয়সীকে খুঁজে ওর প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করলে কেমন হয়! তাতে ওকে আরও ভালোমতো জানা যাবে। একটা টোটকা সে ঠিকই বের করে ফেলবে ওকে পটানোর। ওর পুরো নাম ওর মনে আছে, জিডি করার সময় দেখেছিল।

পুরো নাম লিখে সার্চ করল, বেশকিছু প্রোফাইল দেখতে দেখতে পেয়ে গেল। ক্লিক করতেই হতাশ হলো। লকড প্রোফাইল। ধূর! কোনো মানে হয়। ভেবেছিল ওকে জানতে না দিয়ে সে কার্যসিদ্ধি করবে। এখন কীভাবে তা হবে। ভাবতেই ভাবতেই ‘এ্যাড ফ্রেন্ড’ বাটনে ক্লিক করল খানিকটা অন্যমনস্ক ভাবেই৷

এরপর ভাবল ক্যান্সেল করে দেবে, কিন্তু তখনই ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। সবকিছুর একসাথে ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে হবে কেন!

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, এরপর মনে হলো শ্রেয়সী কী না কী ভাববে? যদি সত্যি সত্যি ছ্যাচড়া ভাবে! সে রিচার্জ করল, এরপর ডাটা প্যাক কিনে আবার ফেসবুকে এলো। রিকুয়েস্ট পাঠানোর পরে ছত্রিশ মিনিট চলে গেছে। ক্যান্সেল বাটনে ক্লিক করতে যাবে তখনই নোটিফিকেশন এলো একটা।

শ্রেয়সী ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছে। দীপ্তর মুখে হাসি অনিন্দ্য সুন্দর এক হাসিতে উদ্ভাসিত হলো। যাক প্রথম ধাপ কমপ্লিট।

***
শ্রেয়সী নিজের নতুন জবটা বেশ এনজয় করছে। নতুন পরিবেশে সে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। দুদিন আগে বাবা-মা এসে দেখা করে গেছেন ওর সাথে। মা এবারও দুটো বায়োডাটা ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। শ্রেয়সী খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ছয়টা মাস যাক৷

দীপ্তর প্রতি ওর ধারণা প্রথমদিকের চাইতে কিছুটা পাল্টেছে। বাসে ওকে সত্যিকার অর্থেই সে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। সেদিন রেস্টুরেন্টে খানিকটা অন্য সুরেই কথা বলেছে। ছেলেটা হয়তো খানিকটা অনুতপ্ত। সবাই তো সবকিছু প্রকাশ করতে পারে না। সেদিনও ওর ওড়নায় কফি পড়ায় কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে অসুবিধা হচ্ছে কিনা।

শেষে বন্ধুত্বের প্রস্তাবটাতেও আন্তরিকতা ছিল। তবে ওটা নিয়ে দীপ্ত অন্য গায়েপড়া ছেলেদের মতো আর ওকে বিরক্ত করেনি৷

এই কয়েকদিনে অবশ্য দীপ্তর কথা ওর মাথায় ছিল না। আজ হঠাৎ ফেসবুকে ঢুকতেই ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দেখল দীপ্তর। সে সাথে সাথে এক্সেপ্ট করল না, খানিকটা সময় নিয়ে প্রোফাইল ঘাটল৷ সত্যিই তার এডমায়ারারের অভাব নেই। অল্প কিছু মেয়ে ছাড়া মেয়েদের কমেন্টে তেমন একটা রিপ্লাই করে না দীপ্ত।

মেমোরিজ থেকে কিছু শেয়ার পোস্ট আছে। ডিবেট করত, আবৃত্তিও। বেশ গুণ আছে তো, স্বীকার করল শ্রেয়সী।

ওর মনে হলো এক্সেপ্ট করাই যায়, অন্তত ডিস্টার্বিং হবে না ওর জন্য। সাত-পাঁচ ভেবে সে ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় যোগ করে নিল দীপ্তকে।
…………
(ক্রমশ)