গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :- ৯
🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀
_অতীত _
মাথার উপরের সোনালী সূর্যটা চারিদিকে নিজের আভা ছড়াতে ব্যস্ত।শীতের সকালে মিঠে রোদ মানব জীবনে বড্ড আরামদায়ক অনুভুতি নিয়ে আসে। নতুন সকলে নতুনের সূচনা। এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সপ্তদশী মুগ্ধ। পরনে তার বটন গ্রিন কালারের কুর্তা ও প্লাজো। ভিন্ন দেশে সকালের ভিন্ন রূপ দেখতে ব্যস্ত সে। হঠাৎ ডাকে পিছন ফিরে তাকায়।
” কিরে এই ল্যাগেজটা নে। কখন থেকে ডাকছি, সাড়া নেই। চল তুর্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।”
“শুনিনি ভাইয়া। চলো।”
” কিরে তুর্য দরজাটা খোল, লাগেজ গুলো ঢোকাই।”
” আরে ব্রো। কেমন আছিস?” তুর্য আরফিন কে জড়িয়ে ধরে।
” ভালো ব্রো। তোর খবর কি বল?”
” এটা কি আমাদের মুগ্ধতা??”
” চিনতে পারছিস না??
“দেখে চিনতেই পারিনি ব্রো, লাস্ট চার বছর আগে দেখেছি। চল গাড়িতে ওঠ,বাকি কথা বাড়ি গিয়ে হবে। আম্মু নিজের বড়ো ভাইজানের ছেলে মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।”
গাড়িতে করে তারা তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
।
।
।
।
” কেমন আছিস মুগ্ধ মা??”
“খুব ভালো। তুমি কেমন আছো ফুফুমনি??”
” আমার ছেলে মেয়ে দুটিকে দেখে আমি খুব আনন্দে আছি। হ্যাঁ রে আরফিন আব্বাজান তোদের এখানে আসতে দিলো?? আটকান নাই??”
” দাদাজান জানেন না যে আমরা এখানে এসেছি। আব্বু বলেছে আমরা নানা বাড়ি গিয়েছি।”
” সেকি!!! বাড়ির কেও যদি বলে দেয়??”
” মেহু আর আম্মু আব্বু ছাড়া আর কেও কিচ্ছুই জানে না।”
” তাই বল। মেহেক কেও তো নিয়ে এলে পারতি?”
” ওকে মেজো চাচা ছাড়লে তো। জন্যই তো কোথাও যেতে দেই না।”
” মেজো ভাইজানের ওই এক স্বভাব। হইছে একেবারে আব্বাজানের কপি। তোরা যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। আরফিন তুই তুর্যের রুমে ওর সাথে থাকবি, আর মুগ্ধ তুই তুবার রুমে।”
দুপুরে খাবারের টেবিলে সবাই উপস্থিত হয়। সাবা বেগম ( মুগ্ধর ফুফু) আজ ভাতিজা ও ভাতিজির জন্য অনেক আয়োজন করেছে। ডাইনিং টেবিলে এসেই মাথায় হাত মুগ্ধর।
” এত্তো খাবার!!!! কে খাবে গো ফুফু??”
” কেনো তোরা খাবি।”
” এই এক মাসে মনে হয় আমাকে হাতি করে পাঠাবে তুমি”
” দেখো আমার সোনা ফুফুমনি একটু দোয়া করো এতো খেতে পারবো না।”
” চুপচাপ শেষ করে উঠবি দুটোতে ” ধমক দেন সাবা বেগম।
ফুফুর ধমকে মুগ্ধ ও আরফিন খাওয়াই মনোনিবেশ করে।
” আচ্ছা ফুফু তুবা কই?? এসে থেকে তো দেখলাম না??”
” আজ তো সানডে, ওরা বান্ধবীরা ঘুরতে গেছে। বিকেলে এসে তোদের সাথে ঘুরতে বেরোবে।”
” আচ্ছা ”
।
।
।
।
বিকেলবেলায় তুর্য, আরফিন,তুবা ও মুগ্ধ আইফেল টাওয়ার দেখতে বেরোয়। দূরে ব্ল্যাক মার্সিডিজে বসে একজন রেড টপ ও অফ হোয়াইট জিন্স পরিহিতা মুগ্ধর দিকে মুগ্ধ চোঁখে তাকিয়ে আছে, তা সম্পূর্ণ অজানা মুগ্ধতার।
” আচ্ছা মুগ্ধ তুমি চুলটা বেঁধে রাখো কেন?? খুলে রাখলে তোমায় বেশী ভালো লাগে।” তুর্য মুগ্ধ কে কফির কাপ এগিয়ে দিতে দিতে বলে।
মুগ্ধ কাপটি নেয় ” অতো বড় চুল খুলে রাখলে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয় তুর্য ভাইয়া তাই আরকি।”
তুবা সঙ্গে সঙ্গে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,” হ্যাঁ রে ভাইয়া তুই আবার মেয়েদের চুল খোলা বাঁধা কবে থেকে নোটিশ করতে লাগলি রে??”
তুর্য একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় “সেটা তোকে ভাবতে হবে না, তুই নিজের বয়ফ্রেন্ডের কথা ভাব”
” বয়ফ্রেন্ড!!! এই বয়সে??” আরফিন বলে।
” হ্যাঁ মনে ওই আরকি স্কুল ক্রাশ….”
” থাক বোন আমার, আমি বুঝে গেছি।”
” আরফিন ভাইয়া তুমি এভাবে বলছো তো, দেখোগা মুগ্ধ আপু ও মেহু আপুরও বয়ফ্রেন্ড আছে নিশ্চয়। এখনকার দিনে তো এটা নরমাল।”
” এই মোটেও না আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।আর এগুলো ফ্রান্সে নরমাল হলেও আমাদের তালুকদার বাড়িতে নরমাল নয়।” তৎপর বলে ওঠে মুগ্ধ।
” তাহলে তিহানটা কে আপু??”
তুর্য বাদে বাকিরা মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। আর এদিকে মুগ্ধ তো লজ্জায় শেষ।
।
।
।
।
কাজিনরা সব একসাথে হলে গল্প করতে করতে কখন যে রাত পেরিয়ে যায় তার কোনো খেয়াল থাকে না। ভোর রাতের দিকে তুবা ও মুগ্ধ নিজেদের রুমে শুতে আসে।
” হ্যাঁ গো আপু তিহান ভাইয়ার ছবি দেখাবে না??”
” না। তুই সবার সামনে বলে দিলি কেনো? ভাইয়ারা কি ভাববে??”
” কি আবার ভাববে মানুষে প্রেম করতে পারে না??”
” আমাদের বাড়ীতে এসব হয়না। দেখিস না ফুফুমণি লাভ ম্যারেজ করেছে বলে দাদাজান কোনো সম্পর্ক রাখেনি।”
” নানা যে কেনো এমন করে?….. সে সব বাদ দাও, এই মাসে তো তোমার বার্থডে, কি প্ল্যান??”
” কোনো প্ল্যান নেই। আব্বু আম্মু কে ছেড়ে প্রথম বার জন্মদিন পালন করতে হবে, তাই মন খারাপ করছে আমার।”
মুগ্ধর কথা শুনে মনে মনেই হাসে তুবা।
” ডোন্ট ওরি আপু কেও একজন তোমার 18th birthday কে স্পেশাল বানানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যস্ত।”
।
।
।
।
দেখতে দেখতে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। আজ মুগ্ধর আঠারো বছরের জন্মদিন।
” শুভ জন্ম দিন মুগ্ধ মামনি। আজ আমি সব রান্না মুগ্ধর পছন্দের করেছি।”
” এতো কিছু কেনো করতে গেলে ফুফুমনি তোমার তো কষ্ট হবে”
” নিজের ভাতিজির জন্য আমি কি এটুকুনি করতে পারি না??”
” আচ্ছা আম্মু আজ সন্ধ্যে তে কিন্তু আমরা রেষ্টুরেন্ট এ যাচ্ছি।”
” তুর্য তোরা যা, আমি আর তোর আব্বু যাবো না।”
” কেনো ফুফুমনি তুমিও চলনা।” মুগ্ধ বলে।
” না না আম্মু তোমাদের যেতে হয়না, আজকে আমাদের মজা করতে দাও।” তুবা মুগ্ধ কে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলে।
।
।
।
।
” ভেতরে আসবো মুগ্ধ??”
আওয়াজ পেয়ে পিছনে ঘুরে তাকায় মুগ্ধ।
” আরে তুর্য ভাইয়া এসো এসো ”
” কিছু কথা বলার ছিলো।”
“বলো না কি বলবে?”
” তুই কি… না মানে সত্যি প্রেম করছিস??”
মুগ্ধ একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় “না মানে ভালো লাগে একজন কে।”
” সেই ভাগ্যবান মানুষটা কি তিহান??”
নিজের উওর হিসাবে নিরবতা পেয়ে তুর্য সিওর হয় যে মুগ্ধ তিহানকে ভালবাসে। থমথমে মুখে তুর্য বলে,” আমি তোমায় ভালোবাসি মুগ্ধ। কোনোভাবে আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না??”
” এসব কি বলছো তুর্য ভাইয়া?? আমি তোমাকে নিয়ে ওইসব ভাবিও না।”
তুর্য গিয়ে মুগ্ধতার হাত ধরে ” প্লীজ মুগ্ধ একটা চান্স।”(গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)
মুগ্ধ হাত ঝটকে সরে যায় ” আমি পারবো না তুর্য ভাইয়া প্লীজ বোঝো।”
অনেক কষ্টে কোনো রকমে নিজেকে সামলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তুর্য।
____________
চারিদিকে আঁধারের মাঝে রকমারি আলোর খেলা।এতো জোরে গান বাজছে যে পাশে দাঁড়ানো মানুষও কথা শুনতে বেগ পাবে।
” তুবা রেষ্টুরেন্ট বলে এটা কথা নিয়ে এলি বলতো?”
” আপু এটা নাইট ক্লাব।”
” মানে?? এখানে কেনো এনেছিস ?? আমি চললাম” মুগ্ধ বেড়িয়ে যেতে নিলে তুবা ওর হাত ধরে আটকায়। ” এই আপু তোমাকে কি রেড গাউন টা পড়িয়েছি এখান থেকে চলে যাবে বলে?? এসো এদিকে।
” আমায় ছাড় তুবা আমি বাড়ি যাবো।”
” আচ্ছা দুমিনিট দাঁড়াও আমার বিএফের সাথে দেখা করেই চলে যাবো।”
কোনোরকমে মুগ্ধ কে রাজী করিয়ে একটা টেবিলে নিয়ে বসে তুবা। তুবার বয়ফ্রেন্ড তুবা কে নিয়ে নাচতে গেছে।তুবা যেতে না চাইলেও জোর করে তাকে নিয়ে যায়। আর এদিকে একা বসে থাকতে মুগ্ধর খুব ভয় করছে। সাথে করে এই তুবা টা যে কেনো এই গাউন টা পড়িয়েছে,ভারী আনকমফোর্টেবল ফিল হচ্ছে মুগ্ধর। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে মুগ্ধর, সামনের বোতল থেকে সে ঢোক ঢোক করে জল খেয়ে নেয়।কিছুক্ষণ পর তুবা এসে দেখে সেখানে মুগ্ধ নেয়।
” আপু কোথায় গেলো?? আপু……”
Haadson Ke Is Shehar Mein
Aaj Koyi Aayega
Khol Dega Raaz Ya Phir
Raaz Khud Ban Jayega
Raat Ki Aagosh Mein Ye
Raaz Rehne Dijiye
Kijiyega Kal Khulasa
Aaj Rehne Dijiye
Hai Koyi Parwana Yahan
Jo Jaan Pe Apni Khelega
Hai Koyi Parwana Yahan
Jo Jaan Pe Apni Khelega
Aashiqui Mein Hoke Fanna
Baahon Mein Shama Ko Le Lega
Itni Haseeno Pe
Kitni Dafa Ye Dola
Phir Bhi Fakeero Ka
Pehne Hue Hai Chola
Itar Ki Sheeshi Hai
Jahan Bhi Khul Jaaye
Hawa Mein Ghool Jaaye
Dil Jogi Da Har Funn Maula
Har Funn Maula
গানের তালের সাথে সাথে টেবিলের উপরে এক অষ্টাদশী যুবতী নাচতে ব্যস্ত। টেবিলের সামনে নীচে বসে আছে এক বছর তিরিশের পুরুষ। ফর্সা মুখে কালো চাপ দাড়ি অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে। কালো শার্ট,কালো প্যান্ট কালো কোর্ট আপাদমস্তক কালোতে ঢাকা, ফর্সা জিম করা শরিরে কালো রঙটা যেনো আরো বেশি আকর্ষনীয় করে তুলেছে পুরুষটিকে। দৃষ্টি আবদ্ধ তার সামনের নৃত্যরত যুবতীর পানে।
টাল সামলাতে না পেরে পিছনে পরে যেতে নিলে মুগ্ধর হাত ধরে টেনে কাঁধে তুলে নেয় সে পুরুষটি। নিয়ে যা নিজের জন্য বরাদ্দ হোটেলের রুমে।
” অবশেষে ইভান চৌধুরীর কাছে ধরা দিলে মুগ্ধ।” মুগ্ধ কে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তার পাশে আধাশোয়া হয়ে শুয়ে আছে ইভান।
মুগ্ধ নিজের হুশে নেয়।তার শরীরে কেমন যেন একটা অনুভুতি হচ্ছে, এই অনুভুতি কখনো এর আগে হয়নি। নেশা নেশা চোঁখে মুগ্ধ দেখতে থাকে তার পাশে শায়িত পুরুষটিকে।
” আপনার ঠোঁট গুলো এতো গোলাপী কেনো মিঃ অজানা মানুষ??” প্রশ্ন করে মুগ্ধ।
ইষৎ হেসে উত্তর দেই ইভান ” why ছুঁতে মন যাচ্ছে বুঝি??”
ইভানের বলতে দেরী হলেও মুগ্ধর ইভানের অধর নিজের আয়ত্তে নিতে দেরী হয়নি। অধর সুধা পান করতে করতেই ইভানের শার্ট খুলতে উদ্ধত হয় মুগ্ধ।
” Are you sure মুগ্ধ??” মুগ্ধ কে ছাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে ইভান। উত্তর হিসাবে মুগ্ধ ইভানের গলায় মুখ গুঁজে দেয়।
রাতের গভীরতার সাথে সাথে মুগ্ধ ও ইভানের স্পর্শের গভীরতাও বাড়তে থাকে। বাইরের আবহাওয়ায় ঠাণ্ডা বাড়ার পরিমাণ যেনো রুমের ভেতরের উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
অনেক্ষন পর, তারা ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে। মুগ্ধ ইভানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।ইভান সিগারেটে টান দিতে ব্যস্ত।
” এইটা আমার প্ল্যানে ছিলো না মুগ্ধ। তুমি নিজে থেকে আমার কাছে এসে অনেক বড়ো ভুল করলে। এর ফল যে তোমাকে সারাজীবন ভুগতে হবে babe 😈। এই ইভান চৌধুরীর কাছে নিজের ইচ্ছায় আসা যায় ঠিকই কিন্তু যাওয়া নির্ভর করে শুধুমাএ ইভান চৌধুরীর ওপর। এই এক রাতেই তুমি আমার নেশা হয়ে উঠেছো। তোমাকে ছাড়া আমার বাঁচা যে দুষ্কর my Snowflake ❄️।”
বাইরে তুষারপাত আরম্ভ হয়েছে,বছরের প্রথম তুষারপাত। মুগ্ধর দিকে নেশক্ত চোঁখে তাকিয়ে আছে ইভান। হঠাৎ মুগ্ধর ঠোঁটে কিস করে ইভান। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে ঘুমের রাজ্যে ডুব দেয়।
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা