গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা। #পর্ব :-২০
🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀
কিছুক্ষণ আগে চৌধুরী ম্যানসনে এসে পৌঁছেছেন ইশতিয়াক চৌধুরী। ড্যাড কে কাছে পেয়ে ইয়ানা, ইনায়া, ঈশান, ইভান সবাই গোল হয়ে বসে ড্যাডের সাথে গল্প করছে। এতো বড়ো হয়ে গেলেও এই একটা স্বভাব ওদের ভাইবোনদের পাল্টায়নি। যখনই ড্যাড বিজনেস ট্যুর থেকে বাড়ি ফেরে তখনই সবাই মিলে ট্যুরে কি হলো না হলো সেই গল্প শুনতে বসে।
” আচ্ছা তোমরা এবার ড্যাড কে ছাড়ো তাকে গিয়ে ফ্রেশ হতে দাও। আড্ডার আসর আবার ওবেলাই বসাবে।” বুশরা বেগম বলেন।
” সে নাহয় ফ্রেশ হওয়া যাবে পরে, আগে আমার পুত্রবধূকে দেখি। চ্যাম্প বউ কোথায়??”
” ড্যাড ও আসলে……”
” আমি এখানে।”
ইভানকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে মুগ্ধ বলে ওঠে। গিয়ে সালাম দেই তার শশুড়মশাই কে।
” একেবারে হুমুর মতোন দেখতে।” ইশতিয়াক সাহেব বলেন।
” হুমু????” অবাক হয় মুগ্ধ।
মুগ্ধের কথা ধ্যান ফেরে ইশতিয়াক সাহেবের। এই ভাবে সবার সামনে হুমুর নাম নিয়ে নিজের করা বোকামির জন্য ভারী বিব্রত হন উনি।
” বুশরা আমি রুমে গেলাম।”
কোনোরকমে স্থান ত্যাগ করেন তিনি। পিছনে ফেলে যান বিস্মিত একদল মানুষ।
______________
কিছুক্ষণ আগে বলা ঈশানের কথা শুনে থম মেরে বসে আছে মেহু। যেটা ঈশান বলে গেলো সেটা কি সত্যি?? আরফিন কি সত্যিই?? নাকি গায়ের জ্বালা মেটালো ঈশান?? তাকে জানতেই হবে সেটা।
ঠক ঠক
জামা পাল্টানোর সময় দরজায় কড়াঘাত হতেই পিছনে ঘুরে তাকায় আরফিন। সামনে দাঁড়ানো রমণীকে দেখে দুদণ্ড থমকায় সে। উফফ!!! আরফিনের মনে হচ্ছে যেন কতো যুগ পর নিজের মেহুপরীকে। এই মেয়ে এতো নিষ্পাপ দেখতে কেনো?? মন যায় সারাদিন সামনে বসিয়ে দেখেই যায়। তবুও যেন আশ মেটে না। আবেগাপ্লুত হয়ে এগিয়ে আসে ওরা দুজন দুজনার দিকে। জড়িয়ে ধরে একে অপরকে।
এ যেনো এক বহু প্রতীক্ষার ফল। ভালোবাসার মানুষের বুকে যে কি পরিমান শান্তি আছে টা শুধুমাএ যারা ভালবেসেছে তারাই জানে।আরফিন আর মেহু এমুহূর্তে স্থান কাল পাত্র নির্বিশেষে একে অপরের মধ্যে দুদণ্ড মানসিক শান্তি খোজাই মগ্ন। দুজনার চোখের জল ছুঁয়ে যাচ্ছে দুজনার শরীর।
” ফ্রান্সে আপাইয়ের সেই পানিতে নেশার দ্রব্য তুমি মিশিয়ে চলে আরফিন ভাইয়া??”
মেহুর কথায় চমকে চোখ খোলে আরফিন। গোটা শরীরে যেন শীতল স্রোত বয়ে গেলো তার। মেহুর থেকে সরে আসে আরফিন।
” ত……তোকে কে বলল??”
” কথাটা কি ঠিক??”
আরফিন নিজের চোখ লুকাতে ব্যাস্ত।
” তোমার নীরবতাকে কি তাহলে আমি হ্যাঁ ধরে নেবো??”
” আসলে……”
” ছিঃ আরফিন ভাইয়া ছিঃ। কি করে পারলে তুমি বড় ভাই হয়ে নিজের বোনের সাথে অমন করতে?? লজ্জা লাগলো না অন্যের কাছে টাকার বিনিময়ে বোন কে বেচতে??”
” মেহুপরী……”
” একেবারে নাম নেবে না আমার,তোমার ঐ নোংরা মুখে। কেনো করেছিলে অমন? কি হলো বলো?”
” ফ্রান্সে ওই নাইট ক্লাবে জুয়ায় হেরে গিয়ে আমাদের অনেক টাকার ঋণ হয়ে গেছিলো প্রায় পঞ্চাশ লাখ। আমি আর তুর্য ওখান থেকে বেরিয়েও আসতে পারছিলাম না যে তুর্য অন্য কাওকে ম্যানেজ করে টাকাতো শোধ করবে। তখন ইভান এসে আমাকে একটা অফার দেয়,যে ও আমাদের সব টাকা শোধ করবে বদলে ওই রাতের জন্য মুগ্ধতা কে ওর চাই। ব্যাস্।”
মাথা নীচু করে একদমে সবটা বলে আরফিন।(গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)
” আমার কাছে আর আপাই ছিল না বিশ্বাস কর মেহু। আমি বাধ্য………”
” কোনটা বাধ্য হয়ে?? জুয়া খেলাটা?? নাকি নিজের বোনের জীবন নষ্ট করাটা??……… আমি তো ভাবতেই পারছিনা যে তুমি যে কিনা আমাদের দুই বোনকে অন্য ছেলের সাথে কথা পর্যন্ত বলতে দিতে না, সেই তুমি কিনা নিজের বোনকে একরাতের জন্য একটা অচেনা মানুষের কাছে বেচে দিলে???………… আপাই কে পঞ্চাশ লক্ষে বেচে ছিলে, অর্নি হলে আমাকে কত টাকায় বেচতে আরফিন তালুকদার??”
” মেহুউউউউ ”
” ছিঃ আমি তোমাকে ভালবেসে ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে। ঈশান বলার সময় আমি ভেবে ছিলাম হয়তো ও ইচ্ছা করে তোমার নামে মিথ্যা বলছে। কিন্তু এখন তো দেখছি তোমার থেকে ঈশান অনেক ভালো অন্তত নিজের বোনকে তো অন্যের কাছে বেচে দেয় না।”
মেহু কাঁদতে কাঁদতে গেষ্ট রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়।সে খেয়ালও করে না যে একজোড়া চোখ সেই দৃশ্য দেখে পৈশাচিক হাসি হাসছে।
______________
” তোমার কফি চৌধুরী সাহেব।”
বুশরা বেগমের কথায় বই থেকে মুখ তুলে চায় ইশতিয়াক চৌধুরী। বুশরা বেগম কফি দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে ইশতিয়াক চৌধুরী স্ত্রীর হাত ধরে আটকান।তাকে নিজের পাশে বসান।
” চলে যাচ্ছ যে বউ জান?? এখন আর বুঝি আমাকে মনে লাগে না?? না হতেই পারে, বুড়ো হইছি তো……”
” আমার কাছে তুমি চির নতুন চৌধুরী সাহেব। আমি হয়তো তোমার সাথে তেত্রিশটা বছর সংসার করে, তোমার পাঁচ সন্তানের মা হয়েও আজও আমি তোমার মনের মানুষ হতে পারলাম না। এই আফসোস আমার সারাজীবনের।”
” কে বলেছে বউ জান তুমি আমার মনের মানুষ নয়?? তুমিই তো আমার সব।”
” তাহলে এখনো সে কেমন দেখতে ছিলো মনে আছে কি করে তোমার??”
” আসলে নীচে যখন মুগ্ধতা মা কে দেখলাম তখন ক্ষণিকের জন্য মনে হলো আমার সামনে হয়তো সেই পঁয়ত্রিশ বছর আগেকার অষ্টাদশী যুবতী হুমু দাঁড়িয়ে আছে।…… আচ্ছা তুমিই বলো দুজনা অদ্ভুত ভাবে দেখতে কি রকম একই পারা।”
” ওই জন্যেই তো ওই মেয়েকে আমার সহ্য হয় না।”
” কেনো?? মুখের মিল থাকলেও তো ওরা মানুষ আলাদা বুশরা। আর তাছাড়াও তোমার বড়ো ছেলে ইভানের স্ত্রী মুগ্ধতা মা। এবাড়ির বড়ো বউ।”
” তোমার ছেলেরা যে কেনো তালুকদার বাড়ির মেয়েদেরকেই বিয়ে করলো আমি বুঝিনা বাপু। তানহা এতো ভালো মেয়ে ইভানকে কতো ভালবাসে তবুও ছেলে আমার কথা শুনলে তো? সে তো তার মুগ্ধের নেশায় মুগ্ধ।”
বৌয়ের কথায় হেসে ওঠে ইশতিয়াক চৌধুরী।
” বিশ্বাস করো বউ জান তোমাকে না একদম ওই হিটলার শাশুড়ী গুলোর মত লাগছে দেখতে।”
” সবসময় ফাজলামি করবে না চৌধুরী সাহেব। আমি আমার ছেলে মেয়েদের অনেক ভালোবাসি এমন কি ছেলের বৌদেরও ভালোবাসি। কিন্তু ওই তালুকদার বাড়ির মেয়েদের আমার সহ্য হয় না। আর কেনো হয়না তা তোমার অজানা নয়।”
_______________
চিলে কোঠার ঘরের ভেতর থেকে আলো বেরিয়ে আসছে। আর খুবই ক্ষীণ আওয়াজে সোনা যাচ্ছে এক নারীর স্বর। খুব মনোযোগ না দিয়ে শুনলে শোনা যাবে না।
।
।
।
সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে মুগ্ধ। একটা নম্বরে বারবার ফোন করছে সে।
রিং রিং রিং রিং
” হ্যালো কে??”
” আমি মুগ্ধতা। আজ একবার দেখা করা যাবে।”
” কেনো কিছু হয়েছে??”
” না। তবে কিছু জরুরি কথা ছিলো। আপনার কাজের চাপ না থাকলে আজ সন্ধায় ক্যাফে তে মিট করি?? আপনাকে আমি লোকেশন সেন্ড করে দিচ্ছি।”
” ঠিক আছে। তবে তুমি আসছ আমার sathe dekha করতে সেটা যেনো কেও না জানে।”
” হুমম ”
ফোন কেটে দিয়ে ওপর পাশের মানুষটিকে এড্রেস পাঠায় সে। নিজের রুমের দিকে আসতে নিতেই ছাদের সিঁড়িতে চোঁখ যায় তার। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় চিলেকোঠার দিকে।
” এই আলো টা ওই ঘর থেকে আসছে কেনো??কে গোঙাচ্ছে এভাবে ? এবাড়িতে তো কারোর এখানে আসার কথা নয়? তাহলে এই ঘরে আছেটা কে??”
মনে সাহস নিয়ে চিলেকোঠার ঘরের দরজা ঠেলে মুগ্ধ। একটু ঠেলতেই খুলে যায় পুরোটা। কিন্তু সামনে যা দেখে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না মুগ্ধ। ভয়ে হাতে থাকা ফোনটা মেঝেতে পরে যায়।ভয়ে চোখ বুজে আসে মুগ্ধের। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে শুধু দুটি শব্দ।
” প্লীজ নাআআআ”
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা
গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :-২১
🥀 কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য 🥀
ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকে আঘাত পেলে মনে হয় যেন পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সব থেকে বেশী কঠিন। মেহুর মনের অবস্থাও আজ সেরকমই। রুমের বারান্দার দরজায় মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহু। চোখের জল যেনো আজ বাঁধ মানছে না তার।
কি করে পারলো তার আরফিন ভাইয়া এরকম করতে? একবারো মনে বাঁধলো না? হঠাৎ ঘাড়ে ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ পেতেই চমকে ওঠে সে। গোটা শরীরে যেন কম্পন খেলে যায় তার। পিছনে দাঁড়ানো মানুষটার থেকে সরে আসার চেষ্টা করতেই বলিষ্ঠ বাহুদ্বয় তাকে আঁকড়ে ধরে।
” ঈশান আজকে না। প্লীজ ছাড়ুন।”
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে মেহু, কিন্তু কোনো লাভ হয়না। যতই সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ততোই ঈশান মেহুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে থাকে। ধীরে ধীরে মেহুর ঘাড় থেকে গলায় নেমে আসে ঈশানের ওষ্ঠদ্বয়। অস্বস্তিতে অন্য দিকে মুখ ঘুরায় মেহু।
মেহুকে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে দেখে ভুরু কুঁচকে আসে ঈশানের। মুখ ঘুরানোর কি আছে? এতোটাই কি অসহ্যকর ও মেহুর কাছে?? স্ত্রীর গলায় আলতো করে কামড় দেয় ঈশান।
” আহ্!!”
” অন্যদিকে মুখ ঘুরাচ্ছো কেনো বউ সোনা?? ভাতার কে দেখার পর বুঝি বরের আদর আর মনে ধরছে না??”
ঘৃণায় বুঁজে আসা চোখ ফট করে খুলে তাকায় মেহু। মুখ ঘুরিয়ে ঈশানের চোখে চোখ রাখে।
” একদিন কি ওইসব না করলে চলে না আপনার??”
” ওই একদিন গতকালকেই হয়ে গেছে।”
” এতই যখন শরী*রের চাহিদা আপনার আমাকে জোড় না করে প*তিতা পল্লীতে যান না আপনি। সেখানে স্বেচ্ছায় কেও আপনার সঙ্গ দেবে।”
মেহুর বলা কথায় অবাক হয় ঈশান। মেহুকে ছেড়ে সরে আসে।
” নিজের স্বামীকে প*তিতা পল্লীতে যেতে বলতে তোমার বাঁধলো না মেহেক??”
” না বাঁধলো না। যে স্বামী শরীর ছাড়া আর কিছুই বোঝে না, বৌয়ের গায়ে কথায় কথায় হাত তোলে সেই মানুষ আর যায় হোক স্বামী হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।”
” তাহলে কে রাখে যোগ্যতা?? তোমার ঐ আরফিন?? যে কিনা নিজের প্রয়োজনে নিজেরই বোনকে বেচে দেয়??”
” বার বার এক কথা বলবেন না। আপনারা সবাই একই রকম। আরফিন ভাইয়া যেমন নিজের বোনকে বেচতে পারে, তেমন আপনিও নিজের প্রয়োজনে নিজের বউকে বেচতে পিছু পা হবেন না।”
মেহুর কথায় ঈশান রেগে গিয়ে চোয়াল খামচে ধরে মেহুর।
” খুব সাহস বেড়ে গেছে তাই না?? নিজেকে বিশাল কিছু মনে করো তুমি?? আজ আরফিনের জন্য কষ্ট পাচ্ছো, তুমি কিরকম মানুষ ভুলে যাচ্ছো?? অতীতে কি করেছো মনে নেই??”
” কি…. কি করেছি আমি??”
” জানো না বুঝি?? ন্যাকা সাজছ?? মনে করো মনে করো মনে করা প্র্যাকটিস করো”
ঈশান মেহুকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ঈশানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মেহু একটা কথায় ভাবতে থাকে কি এমন করেছে ও যার কথা ঈশান বার বার বলে?? কি এমন পাপ করেছে ও???
_______________
চিলেকোঠার ঘরের ভেতরের দৃশ্য দেখে দরজার কাছেই থমকে গেছে মুগ্ধ। ভেতরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না তার। মনে সাহস নিয়ে সামনে এগোয় সে। দেখে সামনের বেডে একজন শুয়ে আছে। গোটা শরীর তার একটা বিশেষ ধরনের চাদরে ঢাকা, মানুষটি মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। মানুষটির আরেকটু কাছে এগিয়ে যেতেই শুনতে পাই যেনো সে হালকা স্বরে গোঙাচ্ছে। গলার নীচে লাল দাগ চোঁখে পড়তেই আতংকে ওঠে মুগ্ধ। অজানা ভয় ছেঁকে ধরে তাকে।কাঁপা কাঁপা হাতে বেডে শোয়া মানুষটির গায়ের ওপরের চাদরটি সরাই। চমকে পাঁচ পা পিছিয়ে যায় সে।
দেখে সেই মানুষটার শরীরটা পুরোটাই লাল চাকা চাকা দাগ। দেখে মনে হচ্ছে যেন পুড়ে গেছে পুরোটাই। এতোটাই বীভৎস দেখতে লাগছে যে কেও দেখলেই তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতে বাধ্য।পিছতে গিয়ে একটা তুলে পা লেগে মাটিতে পরে যায় মুগ্ধ। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সে কোনোদিনও ভাবেওনি যে এই মানুষটাকে কোনোদিনও এই অবস্থায় দেখতে হবে। চির চেনা মুখটাও যেনো আজ চেনা দায় হয়ে উঠেছে।
আচ্ছা এই মানুষটা এখানে চৌধুরী ম্যানসনে কেনো??ইভানের কেও হয় কি?? কোনোরকমে নিজেকে সামলায় মুগ্ধ। এখানে এইভাবে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। কেউ দেখে নিলে সমস্যা হবে। বাড়ির সবাই যখন এই ঘরটাকে ওদের দুইবোনের আড়ালে রাখতে চেয়েছে, তারমানে তারা কেও চাইনা এই চিলেকোঠার ঘরে মেহু বা মুগ্ধ আসুক।
” মুগ্ধওওওওওওও”
ইভানের চিৎকারে নিজের ভাবনা থেকে বেরোয় মুগ্ধ।তাদের বেড রুম থেকে ইভান ডাকছে তাকে। আর এখানে থাকা ঠিক হবে না। খাটে শুয়ে থাকা মানুষটার দিকে এগিয়ে যায় মুগ্ধ। তার গায়ের ওপরের চাদর টা আগের মতো ঢাকা দিতে দিতে মানুষটার মুখের দিকে তাকায় মুগ্ধ। আরেকবার চোখের কোনা ভরে ওঠে তার। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে সব আগের মতো করে চিলেকোঠা থেকে বেরিয়ে আসে সে।
_____________
ইভান হাতের ঘড়ি সাইড টেবিলে খুলে রাখছে। হঠাৎ ধাক্কা অনুভূত হতেই অবাক হয় ইভান। কে জিজ্ঞেস করার আগেই তার নাকে চির চেনা চুলের সুবাস এসে পৌঁছায়।
উফফ!!!কি শ্যাম্পু ইউজ করে মেয়েটা?? এতো মাতাল করা সুগন্ধ ছাড়ে কেনো?? সারাদিন মন চাই চুলে নক ডুবিয়ে বসে থাকি।
নাক টানার আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গে ইভানের। পিছনে ফিরে হাতের অছিলায় নিজের প্রাণ প্রেয়সীর মুখ খানি।
” হোয়াই আর ইউ ক্রায়িং SNOWFLAKE?? কেও তোমায় কিছু বলেছে??”
” একটা আবদার করবো রাখবেন ইভান??”
” মুগ্ধ কোনো কিছু চাইবে আর ইভান সেটা দেবে না এতো বড় বুকের পাটা ইভান চৌধুরীর নেই মুগ্ধ। টেল মি বেইব, হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট??”
” একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন আমাকে??”
ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে বলে ওঠে মুগ্ধ।
মুগ্ধের কথায় অবাক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় ইভান। দুই হাত ছড়িয়ে দিতেই ইভান কে জাপটে ধরে মুগ্ধ। এতক্ষণ ধরে যে কান্না গুলো গলায় আটকে ছিলো তা যেনো একটু ভালোবাসার পরশ পেতেই সব এক সাথে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
ইভানের শার্টটা চোখের জ্বলে ভিজে যাচ্ছে, তবুও মুগ্ধের থামার কোনো নাম ইভান দেখছে না। এই মেয়েটা মাথার তার আবার কেটে গেলো নাকি??
” মুগ্ধ বেইব কি হয়েছে সোনা?? এমন কাঁদছো কেনো??”
” আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে ইভান। কেনো সবসময় ভালো মানুষদের সাথেই এমন হয়??”
” কি হয়??”
” ভালোমানুষটাই কষ্ট পায়। আর যে খারাপ স বিন্দাস থাকে।”
উত্তরে ইভান বিশ্বাসের হাসি হাসে, স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,” সব কিছুরই একটা সঠিক সময় থাকে মুগ্ধ। একটা জিনিস মনে রাখবে আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেননা।”
” আমার না বুকের ভেতরে অনেক কষ্ট হচ্ছে ইভান। আমি কাওকে বলতে পারছি না।”
” এই মুগ্ধ তাকাও আমার দিকে। কি হয়েছে?? এমন করছো কেনো তুমি?? কি হয়েছে??”
ইভান সোফায় বসাই ওকে।
” মুগ্ধ কি হয়ে আমাকে বলো জান ”
” আমি যখন স্কুলে পড়ি,ওই ক্লাস এইটে হবে। তখন আমাদের পাড়ার নির্মল ভাইয়া একটা মেয়ের জন্য অনেক পাগল ছিলো। ভাইয়ার বাঁচমেট ছিলো সে। ছোটো থেকেই আমাদের বাড়িতেই নির্মল ভাইয়া বেশী সময় থাকতো। ভাইয়ার সাথে আড্ডা মারতো। ওরা দুজনে বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিল। দুটো পরিবারের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্কও ছিলো। নির্মল ভাইয়া যে মেয়েটিকে ভালোবাসতো সে মেয়েটি দেখতে আগুন সুন্দরী ছিলো জানেন। যেমন দুধে আলতা গায়ের রং তেমনই টানা টানা চোখ। যে একবার দেখবে তার চোখ ফেরানো দায়। ভাইয়াদের ভার্সিটি তেই মাস্টার্সে পড়তো আপুটা। তখন ভাইয়া ও নির্মল ভাইয়া অনার্স ফাইনাল ইয়ার। আপুটা সিনিয়র থাকলেও নির্মল ভাইয়ার ভালবাসায় কোনো কমতি ছিলো। নির্মল ভাইয়া ওই আপুটার কাছে পড়া জানতে যেতো মাঝে মাঝে তাকে দেখার জন্য। এই ভাবেই একদিন আপুটার সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একদিন আপুটাকে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে আসে নির্মল ভাইয়া। আসলে আম্মু কে বলার পর আম্মুই দাওয়াত দিয়েছিলো আপুটাকে। আম্মু-আব্বু বরাবরই নির্মল ভাইয়াকে খুব স্নেহ করতো। নিজেদের সন্তানের মতোই ভালোবাসতো নির্মল ভাইয়া কে। সেই বার আমরা প্রথমবার আপুটাকে দেখি। যেমন সুন্দর দেখতে তেমনই সুন্দর তার ব্যবহার। সেই থেকে আমরা নির্মল ভাইয়াকে খ্যাপাতাম ওই আপুর নাম নিয়ে। তারপর……”
” তারপর??”
” তারপর হঠাৎ কি হলো জানি না একদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে শুনলাম নির্মল ভাইয়া নাকি সুই*সাইড করেছে। সে আর বেঁচে নেই। জানেন ইভান আমার কাছে ভাইয়া আর নির্মল ভাইয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিলো না। ওরা দুজনেই আমাকে একইরকম ভাবে ছোটো বোনের মতো কেয়ার করতো। আমার কাছে নির্মল ভাইয়াও আমার আরেক ভাইয়া ছিলো। তার এইভাবে মৃত্যুতে আমি অনেক ভেঙে পড়ি। আমি আজও জানি না কেন নির্মল ভাইয়া নিজেকে শেষ করেছিলো। গরীব মা বাবার একমাএ ছেলে হয়েও কেনো সে নিজেকে ওভাবে শেষ করলো??”
” তোমার সেই আপুটার খোঁজ পেয়েছিলে?? হয়তো প্রেম ঘটিত কোনো কারণে………”
” জানি না। আমি তখন মাত্র তেরো বছরের কিশোরী ছিলাম। অতো কিছু মাথায় আসেনি।”
” আজ এই কথা গুলো কেন মনে পড়লো তোমার মুগ্ধ??”
” আজ অনেক দিন পর আমি সেই আপুটার খোঁজ পেয়েছি ইভান।”
” কোথায় সে??”
” আপনাদের চিলে কোঠার ঘরে।”
মুগ্ধের কথায় ইভান হতবম্ব হয়ে যায়। তারমানে তারমানে মুগ্ধ চিলে কোঠার ঘরে গেছিলো?? কি দেখেছে সে?? কিছু বুঝতে পারেনি তো?? সব কিছু জেনে গেলো নাকি??
” কোথায় হারালেন ইভান? আপুটা আপনাদের বাড়ীতে কেনো থাকে? সে কি আপনাদের কেউ হয়??”
মুগ্ধের কথায় ঘামতে শুরু করেছে ইভান। এবার কি বলবে?? কি উত্তর দেবে সে??
” কো….কোন আপু?? কার কথা বলছো তুমি মুগ্ধ?? আমাদের চিলে কোঠার ঘরে কেও থাকে না। আর এত বড়ো বাড়ী থাকতে কেও ওই চিলে কোঠার ঘরে কেন থাকবে বলোতো??”
” সেটাই তো আমার কথা ইভান। কেনো ওই ঘরে সেই মানুষটা ছিলো??”
” আরে নেইরে বাবা কেও ওখানে।”
” ঠিক আছে তাহলে চলুন আপনাকে দেখাচ্ছি।”
মুগ্ধ ইভানের হাত ধরে চিলে কোঠার ঘরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। ঘরের বাইরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে যা দেখে সেটা দেখে মুগ্ধ অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে যায়। গোটা ঘর ফাঁকা। কোথাও কিছু নেই। এমনকি এখন দেখলে কেউ বলবেও না যে এখানেই কিছুক্ষণ আগে একজন বিছানায় শুয়ে ছিলো। দেখে মনে হচ্ছে যেন বহুদিন ধরে ঘরটা পরিত্যক্ত পরে রয়েছে।
” এটা কি করে সম্ভব? একটু আগেই তো এখানে……”
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা