তোমার নেশায় মুগ্ধ পর্ব-২২+২৩

0
66

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা। #পর্ব:- ২২

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

” এটা কি করে সম্ভব? একটু আগেই তো এখানে……” অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে যায় মুগ্ধ।
” দেখলে তো বেইব, আমি বলেছিলাম এখানে কিচ্ছুই ছিলো না।”
” তাহলে কি আমি মিথ্যা বলেছি??”
” আরে না মিথ্যা না বলো, হালুসিনেট করেছো হয়তো মুগ্ধ।”
” আপনার কি আমাকে পাগল মনে হয় ইভান??”

” সুস্থ্যতার কোন প্রুফটা তুমি দিচ্ছো মুগ্ধতা??”
বুশরা বেগম ও ইশতিয়াক সাহেব দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন।

” আপনারা কেনো আমাকে বিশ্বাস করছেন না?? এখানে সত্যিই ওই আপুটা ছিলো……”
” এতো রাতে এখানে তোমরা কি করছো??…… বেটা এনি প্রব্লেম??” বুশরা বেগম বলেন।
” না মম ওই জাস্ট মুগ্ধ বলছে এখানে নাকি ওর চেনা কোনো আপুকে নাকি ও দেখেছে………” ইভান কপাল চুলকে উওর দেয়।
ইশতিয়াক সাহেব মাঝ পথে ইভানকে থামিয়ে দেয়,” আই থিঙ্ক চ্যাম্প,তোমার উচিৎ মুগ্ধতা মা কে নিয়ে কয়েকদিনের জন্য দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসা।”
” ঠিক বলেছেন চৌধুরী সাহেব।বেটা তোমরা বরঞ্চ কয়েকদিনের জন্য ঘুরে এসো।আর তোমাদের হানিমুনটাও তো হয়নি।আপনি ওদের টিকিটের ব্যবস্থা করুন চৌধুরী সাহেব।”
” আমি যাব না কোথাও। আপনাদের ইছা আপনারা যান।”

মুগ্ধ হন হন করে বেরিয়ে যায়।
_____________

সূর্য উদয় হওয়ার সাথে সাথে মানব জীবনেও নতুন অধ্যায় শুরু হয়। সকালবেলা আপন মনে রান্না ঘরে নিজের দৈনন্দিন জীবনের কাজে ব্যাস্ত।

” মেহু কি করছিস??তোকে না বলেছি সকালে আমাকেও ডাকবি। একা একা কেনো সবটা করিস বলতো??”

মুগ্ধের কথায় মেহু কোনো সাড়া দেয় না। সে আপন ধ্যানে মগ্ন। মুগ্ধ এবার মেহুর কাঁধে হাত দিয়ে ডাকে।

” কিরে তোকে কখন থেকে ডাকছি তো? কোথায় মন তোর??”
” ও…. ও আপাই তুমি কখন এলে??”
” কি চিন্তা করছিস তুই??”
” কি কিছু না। কোথায়??”
” তাকা আমার দিকে মেহু। কি হয়েছে?? ঈশান আবার কিছু করেছেন?? তোকে কি আবার মেরেছে??”
” আরে ধুর ছাই। কি যে বলো না তুমি আপাই। অমন কিছুই না। আমার কথা ছাড়ো, তুমি বলো শুনলাম তোমরা হানিমুনে যাচ্ছো?? কোথায় গো??”
” কথা ঘুরাছিস বনু??কি হয়েছে আমায় বল।”
” আপাই উনি কালকে আবার বলেছেন যে আমি নাকি কোনো পাপের ফল পাচ্ছি। আমি কিছুতেই মনে করতে পারছি না যে কি কি এমন করেছি আমি??”
“কালকে আরেকটা ঘটনা ঘটেছে জানিস তো।”
“কি ঘটনা??”
“চিলে কোঠার ঘরে আমি একজন মহিলাকে দেখেছি তার গোটা শরীর পোড়া ছিলো। মুখটা ঠিক মতো দেখতে পাইনি তবে দেখে অনেকটা………”

“তোমাকে ভাইয়া ডাকছে মেহেক। রুমে যেতে বলেছে, এক্ষুনি।” ইয়ানার ডাকে মুগ্ধের কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মেহুকে বাধ্য হয়ে মুগ্ধের পুরো কথা না শুনে চলে যেতে হয়। মেহুর চলে যেতেই ইয়ানা মুগ্ধের কাছে আসে।

” অতি বার বেড়ো না ঝড়ে পড়ে যাবে। কথাটা শুনেছ ভাবী?? বিগ ব্রো তোমাকে বিয়ে করেছে তোমার কেয়ার করে বলে তুমি যদি ভেবে থাকো তোমার ঔদ্ধত্যপণা গুলো বিগ ব্রো মেনে নেবে, তাহলে ভুল ভাবছো। নিজের লিমিটে থাকো। ওটাই তোমার জন্য মঙ্গল।” ইয়ানা চলে যেতে নেয়। পিছন থেকে মুগ্ধের কথায় থমকে দাঁড়ায়।
” এই বাড়িতে যে রহস্য লুকানো আছে টা সব আমি খুঁজে বার করবো ইয়ানা আপু। এটা আমি তোমার বিগ ব্রো কে চ্যালেঞ্জ করেছি। আমরা দুই বোন যে কোনো ভুল করিনি সেটা আমি প্রুফ করে দেবো। আরেকটা কথা মনে রাখবে কালকে চিলে কোঠার ঘরে কেউ যে ছিল এই বিষয়ে তো আমি সিওর। তবে সেই মানুষটা যদি হঠাৎ করে কোথায় গেলো আমি ঠিক খুঁজে বের করবো।”

ইয়ানা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
________________

” আপনি আমায় ডেকেছিলেন??” মেহু বলে।
” হ্যাঁ। লাগেজ গুছিয়ে নাও,আমরা কালকে রাতে ভাইয়াদের সাথেই ভেনিস যাচ্ছি। রাত নয় টার ফ্লাইট রেডী থাকবে।”
” আমরা কেনো?? এটা ওদের হানিমুন।আর তাছাড়াও আমি যাবো না।”
” আই এম নট আস্কিং ইউ, আই এম টেলিং ইউ। যে আমরাও আগামীকাল যাচ্ছি।”

ঈশান হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে মেহু।

” কোনোদিনই কি আমি একটা সুস্থ জীবন পাবো না?? কারোর কাছে কি আমি ফার্স্ট পাইওরিটি কোনোদিনও হবো না??”
____________

সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় চারিদিকে নিজের রংবেরঙের আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আকাশে মেঘের সাথে সূর্যের আভা মিশে যেনো এক অন্যরকমের মাদকাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উৎপন্ন করেছে। যা দেখলে মনে হয় দেখেই যায়।

ক্যাফেতে বসে আধা ঘণ্টা যাবৎ অপেক্ষা করছে মুগ্ধ। যার আসার কথা তার আসার নাম গন্ধ নেই। আদেও আসবে তো সে? এই চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে মুগ্ধ। হঠাৎ কাঙ্খিত মানুষটাকে আসতেদেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মুগ্ধ।

” অনেক অনেক ধন্যবাদ তানহা আপু এখানে আসার জন্য।আমি ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না।”
” তুমি ডাকবে ডাকবে আর আমি আসবো না তা কি কখনও হয় মুগ্ধতা?? হঠাৎ আমাকে ফোন দিয়ে ডাকার কোনো কারণ আছে কি?নাকি এমনিই মন গেলো যে স্বামীর প্রাক্তন ওয়াইফের সাথে গল্প করার??কোনটা হুম? এই এক সেকেন্ড তুমি আবার আমাকে নিয়ে জেলাস নয় তো??”

তানহার কথায় মুচকি হাসে মুগ্ধ। তানহার এই ধরনের কথা মুগ্ধের কাছে এখন আর নতুন নয়। সে একদিন কথা বলেই বুঝেছে যে তানহা এখনো ইভানকে মন থেকে অনেক চাই। শুধু মাত্র বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে নিজের হেলায় হওয়া মানুষটাকে কখনো সে বলতে পারেনি যে তাকে সে অনেক ভালবাসে।

” আমার স্বামী আমার আগে অন্য কাউকে বিয়ে করলেও সেটা একটা নাম মাত্র বিয়ে ছাড়া আর কিছুই নয়। তার সাথে আমার স্বামীর কোনো স্বামী–স্ত্রীর মতো সম্পর্ক ছিলো না। ইভেন তাকে আমার স্বামী কখনওই ভালওবাসেনি। তাহলে তাকে নিয়ে আমি কেনো জেলাস হবো বেকার বেকার?? আর তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে ইভানের জীবনে ফার্স্ট ও লাস্ট নারীটি যে আমি সেটা আমার অজানা নয়। আমি এখানে আপনাকে ডেকেছি কারণ আমার কিছু জানার ছিলো”

মুগ্ধতার বলা কথায় চোঁখ মুখ শক্ত হয়ে আছে তানহার।

” কি জানতে চাও তুমি??”
” ইভান আর ইয়ানা আপুরা কেমন ভাই বোন??”
“মা…. মানে??”
” আপনি কিছু জানেন না, সেটা মোটেও বলবেন না তানহা আপু। আমি ইনায়া আর ইয়ানা আপুদের বলতে শুনেছি নিজের পেটের ছেলে মেয়েকে ভালবাসে না ওদের মম কিন্তু বিগ ব্রো আর বড়ো আপুর প্রতি পিরিত বিশাল… এরকমই কিছু। আচ্ছা ইভানের আরো কোনো বোন আছে?? আর নিজের পেটের বলতে?? ইভান আর সেই বড়ো আপু কি ওদের মমের পেটের সন্তান নয়??”

” ইভান তোমাকে এই নিয়ে কিছু বলেনি?? আমাকে তো প্রথম থেকেই সব বলেছিলো। তাহলে আর তুমি ওর জীবনের ফার্স্ট এন্ড লাস্ট নারীটি কি করে হলে বলোতো মুগ্ধতা?? না মানে তোমার অতো বড়াই করে বলাটাই তো সার হলো তাই না??” তাচ্ছিল্য হেঁসে উওর দেয় তানহা।
” এটা আমার প্রশ্নের উওর নয়……”
” তোমার উওর দিতে আমি বাধ্যও নয়।”

তানহা উঠে চলে যেতে নেয়। হঠাৎ থেমে পিছন ফিরে বলে তানহা।

” শুধু একটা কথায় বলবো মুগ্ধ অনেক সময় আমাদের রক্তের সম্পর্কের থেকেও আমাদের মনের সম্পর্ক গুলো বেশী নিজের হয়ে থাকে। শুধু ইভান নয়, তোমারও রক্তের সম্পর্কের একজন আছে যে কিনা তোমাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে তোমাকে বেচতেও পিছু পা হয়নি।”
” কি বলতে চাইছেন আপনি??”
” জিজ্ঞেস করো তোমার ভাইয়াকে ফ্রান্সে নাইট ক্লাবে জুয়ায় হেরে গিয়ে তোমায় ইভানের কাছে কতো টাকার বিনিময়ে বেঁচেছিল?”

তানহা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়। পিছনে ফেলে যায় হতবিহ্বল মুগ্ধ কে।
___________

“তুমি আমাকে কতো টাকায় ইভানের কাছে বেঁচেছিলে ভাইয়া??”

বোনের কথায় চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও থমকে গেছে আরফিন। হাত থেকে পড়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় কাপটি।

” কি হলো উওর দাও।”
” কি কি সব বলছিস তুই বনু?? আমি??”
” ফ্রান্সে কতো টাকা হেরেছিলে জুয়ায়??”
” কি সব বলছিস তুই??”
” লজ্জা লাগলো না?? আমি কি কোনো পণ্য যে তুমি আমায় বিক্রি করে দিলে??”
” আমার কথাটা একবার শোন বোন আমার। আমি নিরূপায় ছিলাম। টাকা না দিতে পারলে ওরা আমাদের পুলিশে দিতো….”
” তো যেতে জেলে। তার জন্যে নিজের বোনকে বেঁচতে তোমার বিবেকে বাঁধলো না ভাইয়া? কোন অধিকারে তুমি আমার সাথে অমন করলে?”
” আমায় ক্ষমা করে দে বোন।আমার ভুল হয়ে গেছিলো।”
” ক্ষমা?? হাসালে ভাইয়া। ………… আজ প্রথমবার আমার মনে হচ্ছে যে তোমার সাথে মেহুর বিয়ে না হয়ে খুব ভালো হয়েছে। যে জুয়ায় হেরে নিজের রক্তের বোনকে বেচে দিতে পারে সে যে কখনো জুয়ার নেশায় নিজের বউকে বেচে দেবে না তার কি গ্যারান্টি আছে??”
” মুগ্ধওওওও”
” গলাবাজিটাই পারবে ভাইয়া। আমাদের বংশে পুরুষেরা খালি গলাবাজিটাই তো পারে।”
” কি বলছিস তোর মাথায় আছে?? বংশ তুলছিস তোর সাহস তো কম নয়!!”
” আর তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে অমন করার??”
” বললাম তো ভুল হয়ে গেছে। আর তাছাড়াও এখন তো তোরা স্বামী-স্ত্রী। কি এসে যায় তোকে বেচে দেওয়াতে?? ইভান তো এখন তোর স্বামীই।”
” ছিঃ তুমি আমার মায়ের পেটের ভাই বলতে ঘেন্না।”
” তোর মাথার ঠিক নেই । এখন যা এই রুম থেকে।”
” বাহ্ বাহ্ দারুন। আমার বাড়ীতে দাঁড়িয়ে আমাকেই বেরিয়ে যেতে বলছো??……… তুমি চলে যাও ভাইয়া। এ…. এবাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাও।”
” মানে??”
” বেরিয়ে যাও বাড়ি থেকে।……… বেড়িয়ে যাও বেরিয়ে যাও বেরিয়ে যাও।”

মুগ্ধ একই কথা বলতে বলতে ঘরের সব কিছু ভাঙচুর করতে থাকে। আওয়াজে সবাই গেষ্ট রুমে এসে হাজির হয়।

” থামো মুগ্ধ।কি হয়েছে?? এমন করছো কেনো??”
মুগ্ধ কে এই অবস্থা তে দেখে ইভান মুগ্ধ কে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার জন্য।

” ভাইয়া কে এবাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলুন। বেরিয়ে যেতে বলুন।”
” তুমি শান্ত হও মুগ্ধ। সব হবে তুমি আগে শান্ত হও।”
” ও কি ভেবেছে ইভান?? আমি কোনো জিনিস?? কি করে কি করে আমাকে ও বে……”

ইভান হাত দিয়ে মুগ্ধের মুখ বন্ধ করে।
” চুপ করো তুমি।চুপ। সবাই আছে মুগ্ধ।থামো। আরফিন তুই চলে যা ।”
” মানে?? আমি কোথায় যাবো??” আরফিন বলে।
” মুগ্ধ যখন তোকে বলেছে চলে যেতে তুই এবাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। আমি তোর সাথে পরে যোগাযোগ করবো।”

ইভান মুগ্ধ কে কোলে করে তুলে নিয়ে চলে যায়।
__________

” ভাইয়া কে চলে যেতে বলুন ইভান। চলে যেতে বলুন।”
” শান্ত হও মুগ্ধ। চলে যেতে বলেছি আমি। চলে যাবে ও।”

মুগ্ধ হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে। ইভান বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে মুগ্ধ কে।

” আমার সাথে এমন কেনো করেছিলেন ইভান?? কেনো করেছিলেন এমন?? ভাইয়া আমায় বেচে দিলো আর আপনি আমায় কিনে নিলেন ইভান?? আপনিই বা কি করে পারলেন এমন করতে?? বলুন??”

” আমি মজবুর ছিলাম মুগ্ধ। তার পিছনে কারন ছিলো। আমি তোমায় এখন বলতে পারবো না তবে এটা জেনে রাখো তোমার ক্ষতি করার আমার কোনো ইচ্ছা ছিলো না মুগ্ধ।”
” আজ তানহা আপু আমাকে না বললে তো আমি কোনোদিনই জানতে পারতাম না যে আমাকে পণ্যের মতো কেনা বেচা হয়েছে, আমার শরীরটা নিয়ে ব্যবসা হয়েছে…….”
” মুগ্ধওওওওওও। আজ যা বললে বললে আর কোনোদিন যদি আমি তোমার মুখে এই কথা শুনি তাহলে আমার থেকে খারাপ কেও হবে না। ইভান চৌধুরী কতোটা খারাপ হতে পারে তোমার ধারণা নেই।”
” আমি ডিভোর্স নেবো। আপনি আমাকে ডিভোর্স……”

ঠাসঠাস

মুগ্ধের বলতে দেরী হলেও গালে চর পড়তে দেরী হয়নি। মুগ্ধ গালে হাত দিয়ে কাঁদতে থাকে।ইভান এগিয়ে এসে মুগ্ধ কোমড় চেপে ধরে তাকে নিজের সম্মুখে দাড় করাই।নিজের প্রাণ প্রেয়সীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে।

” এই ইভান চৌধুরীর নেশা তুমি মুগ্ধ। তোমাতে আমি আসক্ত। ভালো ভাবে কয়েকদিন ধরে কথা বলছি মানে এই নয় তোমার সব কথা আমি মেনে নেব। আমাকে বিয়ে করাটা তোমার ডিসিশন হলেও ছেড়ে যাওয়ার কোনো অপশন তোমায় ইভান চৌধুরী দেইনি। তুমি চাও আর না চাও, তোমার ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছকৃত তোমাকে সারাজীবন থাকতে তো আমার সাথেই হবে। আমার ভেতরের সাইকোটা কে জাগিয়ো না মুগ্ধ। তোমার জন্য সেটা সুখ বয়ে আনবে না।”

ইভান মুগ্ধ কে বিছানা ফেলে দেয়। ব্যালকনি তে গিয়ে সিগারেট ধরায় ইভান।গায়ের শার্ট খুলে পাশে বিন ব্যাগের ওপর রাখে ইভান। রাগে কানের পাটা তার গরম হয়ে আছে। গলার রগ ফুলে উঠেছে তার। রাগে ফুঁসতে থাকে সে।

” যদি ভাবতাম তোমায় ভো*গ করবো, কারোর ক্ষমতা ছিলো না ইভান চৌধুরী কে আটকায়।…… তুলে নিয়ে এসে ভো*গ করে ছুঁড়ে ফেলে দিতাম রাস্তায়,কেও জানতেও পারতো না। এতো যত্ন করে বিয়ে করে বাড়ীতে বউ করে রাখতাম না।………… ডিভোর্স চাই ওনার। তোমার ঐ ফর্সা গাল আমি থাবড়ে লাল করে দেবো অভদ্র মেয়ে কোথাকার।”

” এতোই যখন ভালোবাসেন তাহলে আপনার ব্যাপারে আমি কেনো সব জানি না?? আপনি আপনার প্রাক্তন কে সব বলতে পারেন কিন্তু আমাকে না। তাহলে আমি কেনো থাকবো আপনার কাছে??” ফুঁফাতে ফুঁফাতে বলে মুগ্ধ।
” কি জানে তানহা আমার ব্যাপারে?? কি বলেছে ও তোমায়??”
” এই যে আপনি আর ইয়ানা আপুরা কেমন ভাইবোন সেটা তানহা আপু জানে আমি জানি না।”
” কেমন ভাইবোন মানে?? ইয়ানারা আমার বোন।”
” তাহলে ইয়ানা আপু বলেছে কেনো যে আপনার মম নিজের পেটের সন্তানদের থেকে বেশি বড়ো আপু আর বিগ ব্রো কে ভালবাসে??”

” ঈশান, ইয়ানা আর ইনায়া আমার ড্যাড আর মমের সন্তান। আর আমি আর আমার আপু ড্যাড ও তার আগের বউয়ের সন্তান। আপু আর বেঁচে নেই। কয়েক বছর আগে সে একটা ঘটনায় মারা গেছে।এতে আবার বলার কি আছে বলতে পারো??”

( শব্দ সংখ্যা – ১৯১২)

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব :-২৩

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

ভেনিস উত্তর-পূর্ব ইতালিতে ভেনেটো অঞ্চলে অবস্থিত। শহরটি 118টি ছোট দ্বীপের একটি গ্রুপে অবস্থিত যা খাল দ্বারা বিভক্ত এবং 438টি সেতু দ্বারা সংযুক্ত। ভেনিসের ঐতিহাসিক কেন্দ্রটি ছয়টি জেলায় বিভক্ত, বা সেস্তিয়েরি, যার নাম দেওয়া হয়েছে ক্যানারেজিও, কাস্তেলো, ডরসোদুরো, সান মার্কো, সান পোলো এবং সান্তা ক্রোস।

সান মার্কো তে একটি ফাইভ স্টার হোটেলে আজ দুপুরে এসে পৌঁছায় ইভান-মুগ্ধ ও ঈশান-মেহেক। অতোটা লং জার্নি করার জন্য আজকে আর তারা ঘুরতে বেরোয়নি। চারিদিকে সুন্দর ভাবে সাজানো বিদেশী ধাঁচের হোটেল রুমটিকে মুগ্ধের খুবই পছন্দ হয়েছে।

বিকেলে একটা লম্বা ঘুমের পর ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করেছে মুগ্ধ। ইভান ঘুম থেকে উঠে মুগ্ধ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। মুগ্ধের খোলা চুলে নাক ডুবিয়ে লম্বা শ্বাস নেয় সে। মুগ্ধের চুলে মাতাল করা সুবাস বার বার পাগল প্রায় করে তুলেছে ইভানকে। ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস পরতেই গোটা শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে মুগ্ধর। কেঁপে ওঠে সে।

” আ……আপনি এমন থেকে থেকে হুট হাট করে জড়িয়ে ধরেন কেনো বলুন তো??” কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মুগ্ধ।
” তোমার কাঁপা কাঁপি দেখবো বলে”
“মানে? এটা কোনো কথা হলো?”
” ইউ নো Snowflake❄️ তোমার এই কাঁপাকাঁপি দেখলে মন চাই কি করতে??”
” কি??”
” আমার মন চাই তোমায় আদর করি বেইব। তোমার নরম ঠোঁটের গরম সুধা পান করি।”
” ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি সব কথা শুনে কান ঝা ঝা করে গেলো। আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না??”
” তো আটকে দাও আমার মুখ বেইব। মুখ আটকানোর জিনিস তো তোমার কাছেই আছে।”
” কি?? কোথায়??”
” কেনো তোমার নাকের এক ইঞ্চি নিচে যেটা আছে সেটা দিয়ে মুখ বন্ধ করাও বেইব কাম অন।”
” ধ্যাৎ নির্লজ্জ কোথাকার।”

মুগ্ধ চলে যেতে নিলেই ইভান ওকে টেনে জড়িয়ে ধরে। ঘাড়ে পাশের চুল সরিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ায় নিজের প্রাণ প্রেয়সীর গলায়। আবেশে চোখ বুজে আসে মুগ্ধের। নেশাক্ত কণ্ঠে বলে ওঠে ইভান,
” সব সময় পালাই পালাই করো কেনো Snowflake?? আমাকে বুঝি ভালবাসতে ইচ্ছা করে না?? হুম??”
” জানি না।”
” তোমার ঠোঁট জোড়া এতো সুন্দর কেনো জান?? দেখলেই খালি মন চাই সবসময় খালি চুমু খাই। হোয়াই আর ইউ সো হ*ট জান??”

স্ত্রীর নিঃশ্বাস ভারী হওয়ার শব্দে মুচকি হাসি হাসে ইভান।কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যায় তাকে। স্ত্রীর কপালে গভীর চুম্বন এঁকে দেয় সে।একে একে নিজের ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিতে থাকে সে নিজের প্রাণ প্রেয়সী কে। চোঁখ বন্ধ করে স্বামীর ভালোবাসার পরশ গোটা শরীরে অনুভব করছে মুগ্ধ। ধীরে ধীরে একে অপরে হারিয়ে যায় তারা। আকাশের উজ্জ্বল পূর্ণিমার চাঁদ সাক্ষী রয়ে যায় তাদের মিলনের।



ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা, এখনো বউকে ভালোবেসে মন ভরেনি ইভানের। নিজের প্রাণ প্রেয়সী তে মগ্ন সে।

” ইভান বলছি কি এবার ছাড়ুন।”
” কেনো বেইব?? ডোন্ট ইউ লাইক ইট?? অর, আরনট ইউ এনজোয়িং ইট??”

ইভানের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে যায় মুগ্ধ। উফ এই লোকটা বড্ড ঠোঁট কাটা। খালি থেকে থেকে আমায় লজ্জা দেয়।

” তুমি যদি চাও আমরা অন্য ভাবে করি……”
“না, আমার আসলে খিদে পেয়েছে……”
” তো আমায় খাও। আমার তো তোমাকে খেয়েই পেট ভরে গেছে। খাবার খাওয়ার তো কোনো প্রয়োজন দেখছি না আমি।”

মুগ্ধ পড়েছে বিশাল ফ্যাসাদে এই লোকটাকে এবার এবার কি করে বোঝাবে যে তার সত্যিই খুব খিদে পেয়েছে? আর এই লোকেরও বটে, আদর করে নাকি খাবার খেতে মন যায় না। কেনো বাপু তোর কি পেট বলে কিছু নেই?? খিদে টিদে পায় না নাকি তোর?? সে তোর না হয় পাইনা আমার তো পাই। আদর করে গেলেই কি আর পেট ভরবে??

মুগ্ধের কাচু মাচু মুখ খানা দেখে সশব্দে হেসে ফেলে ইভান। বিছানা থেকে উঠে রিসেপশনে কল করে নিজের ও মুগ্ধের পছন্দের খাবার অর্ডার করে দেয় সে।

” আপনি হাসছেন কেন??”
” এই দেখে হাসছি যে আমার বউটা কতোটা বাচ্চা। ইয়ার্কি বোঝেই না একেবারে।”
” তা এই বাচ্চা মেয়েকে কেনো বিয়ে করলেন??”
” এই বাচ্চা মেয়েটাই তো আমাকে বিয়ে করতে চাইলো তাই ভাবলাম করেইনি নইলে যদি আবার কান্নাকাটি করে একেই যা চিঁচকাদুনে!!!”
” একেবারে বাঁজা বকবেন না বলে দিলাম।”

মুগ্ধ বাথরুমের দিকে চলে যেতে নেয়।

” কোথায় যাচ্ছো বেইব??”
” স্নান করতে??”
” কি হবে স্নান করে?? একেবারে নাহয় কালকের সকালেই করো। এমনিতেই তো কিছুক্ষণ পরই………”

ঠক ঠক ঠক ঠক

দরজা ধক্কানোর আওয়াজে ওরা চমকে ওঠে।এই ভাবে তো হোটেলে কেও দরজা ধাক্কাইনা।কি ব্যাপার??ইভান গায়ে তাড়াতাড়ি শার্ট জড়িয়ে নিয়ে আগে গিয়ে দরজা খোলে।

” আ……আপনার ভাই কোথায় আছে জানেন ভাইয়া??”

মেহেক কে দরজার বাইরে চিন্তিত ভাবে দাঁড়াতে দেখে অবাক হয় ইভান।

” কোথায় মানে?? ওর সাথে তো তুমি ছিলে!!!” ইভান বলে।
” সেই সন্ধায় আমাকে রুমে রেখে ঈশান না জানি কোথায় গেলো? আমি জানি না।”
” তো সেটা আগে বলোনি কেনো?? অদ্ভুত মেয়ে তো তুমি!!”

ইভান হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পিছু পিছু মুগ্ধরাও যায়।

অনেক্ষণ ধরে আশে পাশে অনেক খুঁজেও ঈশান কে খুঁজে পেলোনা ওরা।

” একটা কোনো কমন সেন্স নেই যে না আগে থাকতে বলি।” ইভান বলে।
” আপনি এভাবে মেহু কে বলছেন কেনো ইভান?? ও কি করে জানবে যে আপনার ভাই কোথায় যাচ্ছে?? সে কি আমার বোনকে কিছু বলে যায় নাকি??” মুগ্ধ বলে ।
” আর তোমার বোন কি একবারো জানতে চেয়েছে যে তার হাজবেন্ড কোথায় যাচ্ছে?? সারাক্ষণ তো খালি আরফিন ভাইয়া আর আরফিন ভাইয়া করে মরে যাচ্ছে।”

ইভানের কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ। এটা কিভাবে কথা বলছে ইভান মেহুর সাথে?? নিজে তো সব জেনেই ওদের বিয়েটা দিয়ে ছিলো তাহলে এখন এভাবে কথা শোনানোর মানে কি??(গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)

ঈশানকে অনেক খুঁজে না পেয়ে শেষে ওরা হোটেলে ফিরে আসে। কাল সকাল না হওয়া অব্দি কিচ্ছুই করা যাচ্ছে না। রুমে যেতে পা বাড়াতেই নিজেদের রুমের ভেতর থেকে গানের আওয়াজ পাই মেহু। অবাক হয় সে। সে তো বাইরে তাহলে রুমের ভেতর কে?? দরজার কাছে দরজা খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় ওদের তিন জনার। এ সামনে কি দেখছে ওরা??

গোটা রুমে চারিদিকে ফুল দিয়ে সাজানো । দরজা থেকে বিছানা অব্দি গোলাপের পাঁপড়ি ছড়িয়ে রাস্তা করা রুমে ভেতো পা রাখতেই মেহুর ওপর গোলাপের পাঁপড়ি পরে ওপর থেকে। চারিদিকে টুনি লাইট গুলো জ্বলে ওঠে।

Kabhi kabhi main khud se hoon yeh puchhta
Main tere qaabil bhi hoon kya
Itna toh mujhe hai maaloom
Milke tujhe behtar main insaan ban gaya
Thoda thoda tujh se seekha
Pyaar karne ka tareeka
Dil ke khuda ki mujh pe inaayat hai tu
I love you….

Dil ka yeh kya raaz hai
Jaane kya kar gaye
Jaise andhero mein tum chandani bhar gaye
Kare chaand taaron ko mashoor itna kyun
Kambakht inse bhi khoobsoorat hai tu

I Love you oo…

গিটার হাতে গান গাইতে গাইতে মেহুর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে ঈশান। গান শেষ করে মেহুর হাতে চুমু খাই সে।

” মেহেক আজ পর্যন্ত আমি তোমার সাথে যা যা করেছি ভুল করেছি। আমি স্বীকার করেছি। আমি জানি আমি ক্ষমা চাইলেও সেটা কম, কিন্তু বিশ্বাস করো মেহেক আমি সত্যিই অনুতপ্ত নিজের করা কাজে।আমার অন্যায় হয়ে গেছে। আমি তোমাকে ভালবাসি মেহেক, খুব খুব ভালোবাসি।আমি যে কবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলি আমি নিজেই জানি না। সেদিন যখন তুমি আমাকে ওই কথাটা বললে যে আমিও নিজের স্বার্থে বউকে বেচে দিতে পারি সেদিন আমি সারা রাত অনেক কষ্ট হচ্ছিলো আমার মেহেক। আমি অতোটা খারাপ নয় মেহেক । একটা সুযোগ দাও না মেহেক আমি সম্পূর্ণ চেষ্টা করবো যাতে আমাদের মধ্যে একটা স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরী হয়। একটা সুযোগ দাও।”

চারিদিকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই।

” ভাবী আপনি একটু মেহেককে বোঝান না আমাকে কি একটা বড় ক্ষমা করা যায় না?? আমরা কি একটা নতুন সুচনা করতে পারি না??”
” মেহু এটা সম্পূর্ণ তোর ডিসিশন। তুই যদি চাস ঈশানের সাথে থাকতে তাহলে থাকবি নইলে নয়। আমার এখানে কিছুই বলার নেই। ইভান আমি আমাদের রুমে যাচ্ছি।”

মুগ্ধের ও ইভান চলে যায় নিজেদের রুমে।
___________

” তাহলে কি আপনি সত্যিই এখানে থাকবেন??”
হঠাৎ আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকায় আরফিন।
“ও ইয়ানা যে । কিছু বলবে??”
” হ্যাঁ কথা তো বলতেই এসেছিলাম,কিন্তু আপনি তো ভিতরেই আসতে বলছেন না।”
” আপনাদেরই সার্ভেন্ট কোয়ার্টার আপনাকে আবার কোথাও আসার জন্য পারমিশন নিতে হবে নাকি?”
” হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক। তবুও একটা প্রাইভেসি বলে তো কথা আছে আপনার, তাই না??”
” আমার মত পরগাছার আবার প্রাইভেসি!!!” তাচ্ছিল্য হাসে আরফিন।
” পরগাছা বলছেন কেনো?? আপনি যদি চান তাহলে নিজেও কিছু করে দেখাতে পারেন। আফটার অল আপনার মধ্যেও কিছু ট্যালেন্ট অবশ্যই আছে নিশ্চই।”
” আর তোমার এটা মনে হচ্ছে কেনো??”
” কারণ আপনাকে দেখে মনে হয় যে আপনি অনেক ট্যালেন্টেড। আপনার মধ্যে ট্যালেন্ট আছে।একটা এডভাইস দিতে পারি।”
” দাও।”
” অতীত ভুলে জীবনে এগোন। আটলিস্ট ট্রাই করুন।”

ইয়ানা চলে যায়। আরফিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার পানে।

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা