তোমার নেশায় মুগ্ধ পর্ব-২৪+২৫

0
68

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা । #পর্ব:- ২৪

🥀 কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য 🥀

” আমি তো বলছি আমি আপনাকে আমি যাবো না কোনো ক্লাবে। অদ্ভুত তো একই কথা বারবার বলতে হবে??” রাগে গজ গজ করছে মুগ্ধ।
” আচ্ছা বেইব ঈশান এতো করে বলছে ,কত আশা নিয়ে ও আমাদের জন্য প্ল্যান করেছে কি করে না করি?? চলো বেশিক্ষণ থাকতে হবে না।না গেলে ও খারাপ মনে করবে।” ইভান বলে।
” এতো নাইট ক্লাব যাবো যাবো করছেন কেনো?আবার কোনো মেয়ে কেনার ইচ্ছা করছে নাকি??”

মুগ্ধের কথায় চোঁখ মুখ শক্ত হয়ে আসে ইভানের। মুগ্ধের কোমড় খামচে ধরে সে। ক্ষিপ্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে মুগ্ধের ঠোঁট জোড়া। কামড় দিতে থাকে সে। অনেক্ষণ যাবৎ ঠোঁটের ওপরে অত্যাচার করে নিস্তার পায় মুগ্ধ।

” অত্যধিক বাড় বেড়েছো মুগ্ধ বেইব। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক যাচ্ছি।”

মুগ্ধের ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে।

” বলেছিলাম এমন কিছু করোনা যাতে আমার ভেতরের সাইকোটা জেগে ওঠে। জাগিয়ে দিলে তো, এবার তোমাকেই ভুগতে হবে।”

কথা শেষ হতেই ইভান মুগ্ধের হাত বেঁধে দেয়। ইভান একটানে মুগ্ধের শাড়ীর কুচি খুলে ফেলে। একে একে সব কাপর খুলে নিতে থাকে সে মুগ্ধের গা থেকে। এক প্রকার জোর করেই সে মুগ্ধ কে একটা পিঙ্ক কালারের গাউন পড়িয়ে দেয়।

“পারফেক্ট!!!”মুগ্ধের উপর থেকে নিচে পর্যন্ত চোঁখ বুলিয়ে বলে ইভান।
” আপনি এক নম্বরের একটা অসভ্য।”
” সেটা তুমি আজকে জানলে বেইব?? লেটস গো নাও, অলরেডি উই আর গেটিং লেট।”




ক্লাবে চারিদিকে লাউড মিউজিক বাজছে। ইভান আর ঈশান ড্রিংক করায় ব্যস্ত, আর মুগ্ধ ও মেহেক জুস খেতে।

” হ্যাঁ রে মেহু কি ঠিক করলি?? ঈশান কে কি একটা সুযোগ দিবি?”
” বুঝতে পারছি না আপাই। এই দুই সপ্তাহ উনি অনেক বার ক্ষমা চেয়েছেন। এমন কি আমার যখন মাথা ব্যাথা করছিলো সারা রাত ধরে না ঘুমিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে গেছেন। আমার কি ভালো লাগে কি খারাপ লাগে সবটা খেয়াল করেছেন।”
” তোকে আর মেরেছে নাকি??”
” না গো আপাই। এমন কি তারপর থেকে আর জোড় আমার কাছেও আসেননি।”
” কি মনে হয় তোর?? সত্যিই পাল্টেছে??”
” জানি না আমি। তবে ভাবছি একটা সুযোগ দিয়েই দেখি কি বলো??”
” দেখ মেহু এই বিয়ে থেকে যে তুই বেরোতে পারবি না সেটা আমি জানি কারণ আমাদের শশুড় বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার যায়গা নাই। আমাদের এমনই কপাল খারাপ আমাদের আম্মু আব্বুরাও আমাদের বুঝবে না, আমাদের পাশে দাঁড়াবে না। ইভান কে প্রথমে এই কারণে বিয়ে করলেও এখন আমি এটা অন্তত বলতে পারি যে ইভান আর যাই হোক আমাকে ভালবাসেন।”
” আর তুমি আপাই??”
” আমি প্রেমে পড়েছি মেহু, ওনার কেয়ার করার প্রেমে পড়েছি,ওনার রাগের প্রেমে পড়েছি ; আমি প্রেমে পড়েছি ওনার কথা বলার,আমি প্রেমে পড়েছি ওনার পথ চলার, প্রেমে পড়েছিওনার যত্নের, প্রেমে পড়েছি ওনার ভালোবাসার। প্রচণ্ড ভাবে ওনার প্রেমে পড়েছি। মুখ থুবড়ে পড়েছি।”
” কি হলো আপাই বলো??”

মেহুর ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মুগ্ধ। ওহ্ এতক্ষণ ধরে সে তাহলে কথা গুলো মনে মনে বলেছে, যাক বাবা মেহু শুনতে পাইনি। মনে মনে স্বস্তি পাই মুগ্ধ।

” একটা সুযোগ দিয়েই দেখ মেহু। হয়তো ঈশান সত্যিই তোকে ভালবাসে।”
_______________

অনেক্ষণ ধরে ক্যাফের বাইরে বসে আছে আরফিন। পরনের নীল রঙের শার্টটা ঘামে হাল্কা ভিজে গেছে। একটা কাজের খোঁজে এসেছিলো সে এখানে,কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই ইয়নার সাথে তার দেখা হয়ে যায়। জানতে পারে এই কাফেটা ইভানদেরই। বাইরে দাঁড়াতে বলে তাকে ইয়ানা কিছুক্ষণ পরে ডাকবে বলে। প্রায় কুড়ি মিনিট হতে চললো এখনো ভেতর থেকে ডাক পড়ছে না তার।

” ইয়ানা ম্যাডাম আপনাকে ডেকেছে” ক্যাফের এক ওয়েটার এসে আরফিনকে ডাকে।ভিতরে ঢুকে ইয়ানার কেবিনে নক করে সে।

” আসবো??”
“আসুন। বসুন। আপনার এখানে আসার কারণ জানতে পারি??”
” আমি যে এখানে একটা কাজ খুঁজতে এসেছি সেটা তো তোমার জানা……”
” আপনি কোন পোস্টের জন্য এপ্লাই করেছেন আপনি জানেন??”
” সুইপার।”
” আরফিন তালুকদার যে কিনা কোনোদিন নিজের হাতে একটা গ্লাস জল গড়িয়ে খাইনি সে কিনা করবে সুইপারের কাজ?? আদেও কি করতে পারবেন??”
” প্রয়োজনে মানুষকে অনেক কিছুই করতে হয়।”
” আমাদের এখানে একজন সুইপারের মাইনে মাসে ৮০০০ টাকা। আপনার কি তাতে হয়ে যাবে??”
” এখন আমার যা অবস্থা আমার কাছে ৫০০০ টাকাও অনেক।”
” আপনাকে আজ থেকে আমাদের ক্যাফের ম্যানেজার পদে এপয়েন্ট করা হলো। কাল থেকে জয়েন করবেন।”

ইয়ানা সাইন করে আরফিনের দিকে এপয়েন্ট লেটার এগিয়ে দেয়।

” আমাকে কি দয়া করলে এটা??”
“আপনার এরকম মনে হওয়ার কারণ??”
” এই যে সুইপারের বদলে ম্যানেজার পদে এপোয়েন্ট করলেন??”
” আপনাকে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী পোস্ট দেওয়া হয়েছে আরফিন। আপনি তালুকদার বাড়ির ছেলে। আপনাকে ওরা বাড়ি থেকে বের করলেও সম্পত্তি থেকে বাতিল করেনি। আপনার কাঙ্খিত পোস্টটি আপনার যোগ্যতার নয়।”

আরফিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইয়ানার দিকে।

” আপনার কাল থেকে জয়েনিং। মনে রাখবেন।আর এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি আপনি যদি যেতে চান তাহলে আমরা একসাথেই যেতে পারি??”
” হুমম”

ইয়ানা ও আরফিন বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
____________

আজ বাড়ি ফিরে আসছে মুগ্ধ – ইভানরা। সকাল থেকেই চৌধুরী ম্যানসনে বিশাল আয়োজন চলছে রান্নার।

” চৌধুরী সাহেব আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।” বুশরা বেগম বলেন।
” বলো বউ জান।” ইশতিয়াক সাহেব উত্তর দেন।
” ফাজলামি করেন না। শুনুন আমার বান্ধবী মনে আছে?? ঝুমুর?? ওর ছেলের জন্য আমাদের ইনায়া কে চেয়েছে সে। কাল সন্ধ্যায় দেখতে আসবে বলছে। কি বলেন??”
” ঝুমুর মানে কি……”
” হ্যাঁ মানে ওই আপনি ঠিকই ধরেছেন।”
” তুমি জানো বুশরা তুমি কি বলছো??”
” হ্যাঁ জানি।”
” তারপরেও কি করে বলছো ওই ঘরে মেয়ে দিতে??”
” কারণ ছেলে ভালোয়ার তাছাড়াও আমার বান্ধবীর উপর আমার বিশ্বাস আছে।”
” ঝুমুর কার খালাত বোন জেনেও তুমি বিয়ের কথা বলছো বুশরা??”
” আরে বাবা ঝুমু ওর খালাত বোন তো তাতে আমার মেয়ের কি??”
” আমাদের মেয়ের কোনো ব্যাপার না, তবে তুমি মেয়ের বিয়েতে ওকে সহ্য করতে পারলে হয়।”
” সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না আপনি আজ আমার বেটার সাথে কথা বলবেন এই ব্যাপারে। ”
” ঠিক আছে।” ( গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)
_____________

সন্ধ্যা বেলায়,

রুমের ব্যালকনিতে বসে স্মোক করছে ইভান। গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। ভেনিসে শেষ রাত্রি তে যা হলো তারপর থেকে মুগ্ধ আর ইভানের সাথে কোনো কথা বলেনি। কি করে বোঝায় মুগ্ধ কে যে সে নির্দোষ??

“চ্যাম্প আসছি??”

বাবার আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকায় ইভান।

” ওহ্ ড্যাড এসো এসো।” সিগারেট নেভায় ইভান।
” বিজি নাকি??”
” না না। বলো না কি বলবে??”
” তোমার মম ইনায়ার জন্য একটা ছেলে দেখেছে।”
” ওয়াও এটা তো ভালো কথা”
” হুম বাট ছেলেটা হলো ঝুমুরের ছেলে।”
” ঝুমুর বলতে কি………”
” হুমম সেই। তুমি ঠিকই ধরেছো। আমি তো বুঝতে পারছি না যে তোমার মম কি করে ম্যানেজ করবে।”
” ছেলে কেমন ড্যাড??”
” ছেলে তো ভালো কিন্তু………”
” ছেলে যখন ভালো কোনো কিন্তু কেনো?? কবে দেখতে আসবে ওরা??”
” আগামীকাল বলছে ”
” হ্যাঁ বলে দাও ড্যাড। আমাদের ইনায়ার খুশির আগে অন্য কোনো কিছু ম্যাটার করে না।”

ইশতিয়াক সাহেব দরজার দিকে যেতে যেতে পিছনে ফিরে দাঁড়ান। বলেন,” অতীত কি সবার সামনে আসতেই হবে চ্যাম্প??”

” দেয়ার আর নো আদার অপশনস ড্যাড। অতীত কে তো সামনে আসতেই হবে। নিজের পাপের ফল নিজেকে পেতেই হয়।”

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা। #পর্ব :-২৫

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

বিয়ের সাজে সেজে উঠেছে চৌধুরী ম্যানসন।চারিদিকে বিভিন্ন রঙ–বেরঙের আলোকসজ্জা।আজ ইনায়ার হলুদ সন্ধ্যা। কিছুক্ষণ পরেই অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে। বাড়ির বড় বউ হিসাবে মুগ্ধের উপর কাজের দায়িত্ব পড়েছে অনেক। বাগানে দাঁড়িয়ে স্টেজের দিকটা অতিথি আপ্যায়ন করছে মুগ্ধ।

” কেমন আছো মুগ্ধ??”

হঠাৎ পরিচিত অনাকাঙ্খিত আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকায় মুগ্ধ।

” আরে তানহা আপু আসুন আসুন। ইয়ানা আপুরা রুমে আছে রেডী হচ্ছে।”
” আমি তো তোমার সাথেই কথা বলতে এলাম।”
” আমার সাথে?? বলুন।”
” আসলে আম ভেরী সরি মুগ্ধ। তোমরা হানিমুনে গেছিলে আর সেই সময় এমন একটা ব্লান্ডার হলো যে …….”
” যা হয়েছে হয়েগেছে সেটা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।”

মুগ্ধ চলে যেতে নিলে তানহা তার হাত ধরে আটকায়।

” দাঁড়াও মুগ্ধ। লেট মি এক্সপ্লেইন………”
” কি এক্সপ্লেইন করবেন আপনি?? বলুন। আপনার প্রথম সন্তান ইসরাত নাহয় আপনার আর আপনার প্রাক্তন প্রেমিক তুহিনের সন্তান। ইসরাত যখন আপনার পেটে ছিলো তখন আপনি ইভান কে বিয়ে করেন। সেই বিয়েতে আপনাদের দুজনার মধ্যে শারী*রিক সম্পর্ক হয়নি। তাহলে আপনার দ্বিতীয় সন্তান ইসরাক হলো কি করে?? হিসাব অনুযায়ী দেখতে গেলে ইসরাকের জন্ম আপনাদের ডিভোর্সের কয়েকমাস আগে হয়েছে। তাহলে ওর বায়োলজিক্যাল বাবা কে??……… ইসরাত ও ইসরাক কেনো ইভান কে পাপা বলবে?? ইসরাক না হয় ছোটো কিন্তু ইসরাত তো একটু বড়ো হয়েছে, তাহলে এখনো তাকে কেনো জানাননি যে ইভান তার আসল পাপা নয়?? নাকি তুহিন নামে আদতে কেউ নেয়ই ইসরাত আপনার ও ইভানের নোংরা পাপের ফল।”

ঠাসঠাস

আসে পাশের সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। বুশরা বেগম এগিয়ে আসেন ওদের দিকে।

” কি হয়েছে তানহা?? তুমি মুগ্ধ কে চর মারলে কেনো??” বুশরা বেগম বলেন।
” সেটা ওকে জিজ্ঞেস করুন আন্টি। ওর সাহস কি করে হয় আমার ছেলে মেয়েদের পাপের ফল বলার??”
” আচ্ছা তোমরা দুজন ভেতরে চলো। এখানে গেষ্টরা আছে সিনক্রিয়েট করো না।”
” থাক আন্টি। আপনি আপনার ছেলের প্রাক্তন ওয়াইফের সাথে কথা বলুন। আমার মতো বহিরাগত মানুষের সাথে কথা বলার দরকার নেই।”

মুগ্ধ হন হন করে চলে যায় সেখান থেকে।
_______________

” মুগ্ধ লুক এট মি বেইব। তোমার শাড়ীর সাথে এই পাঞ্জাবীটা মানাবে? কি বলো??” ইভান পাঞ্জাবী বাছতে বাছতে বলে।
” আপনি খামোখা আমার সাথে কেনো জামা মিলিয়ে পড়বেন?? আপনি বরঞ্চ আপনার বাচ্চার মায়ের সাথে জামা মিলিয়ে পড়ুন।”
” কতবার বলবো মুগ্ধ যে আমার কোনো বাচ্চা নেই।”
” একবারে ফালতু কথা বলবেন না ইভান। নইলে ওই বাচ্চাগুলো কেনো আপনাকে পাপা পাপা বলবে??”
” কেও পাপা বললেই কি তার জন্মদাতা বাবা হওয়া হয় মুগ্ধ??”
” তাহলে ওদের আসল বাবার নাম কি বলুন আমায়? নাকি সত্যিই ওরা আপনার আর তানহার মজা মারার ফল?”
” মুগ্ধওওওও”

ইভান মুগ্ধ কে চর মারতে গিয়েও হাত থেমে যায় ইভানের।(গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)

” আপনি আমায় চর মারতে গেলেন ইভান?? তানহা আপুদের জন্য?? থামলেন কেনো মারুন।”
” মাথা খারাপ করি না মুগ্ধ। আজকে আমার বোনের গায়ে হলুদ। আমি আমার মুড অফ করতে চাইনা। তুমি আমার চোখের সামনে থেকে যাও এখন।”

মুগ্ধ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ইভানের দিকে। এই মানুষটাকে সে কিনা সবে ভালোবাসতে আরম্ভ করেছিলো যে মানুষটা অন্যের জন্য তার গায়ে হাত তুলতেও পিছু পা হলো না। কষ্ট গুলো গলায় আটকে জেতে থাকে মুগ্ধের। কোনরকমে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে সে। বেড়িয়ে যায় রুম থেকে ।
_______________

হলুদ রঙের লেহেঙ্গা তে আজ দারুণ সুন্দর দেখাচ্ছে ইনায়া কে। কিন্তু এই সম্পূর্ণতার মধ্যেও যেনো কিছু অপূর্ণতা রয়ে গেছে। মুখে কোনো হাসি নেই ইনায়ার।

” কি রে তুই এখনো মুখটাকে অমন মূর্যায়াসা ফুলের মতো করে রাখবি?? অনিক ভাইয়া কত্ত ভালো ছেলে তোকে অনেক ভালো রাখবে রে ইনায়া। আজ তোর গায়ে হলুদ কাল তোর বিয়ে, এবার তো একটু হাস।” ইয়ানা বলে।
” ভালো লাগছে না ছোট আপু।” ইনায়া বলে।
” কেনো লাগছে না শুনি?? ওই রেহানের জন্য?? তুই জানিস ও কেমন ছেলে তারপরেও ওকে নিয়ে কি করে এত আবেগী হতে পারিস ইনায়া??”
” ঠিক যে ভাবে তুমি সব জেনেও আরফিন তালুকদার কে ভালবাসতে পারো সেভাবেই।”
” ইনায়া!!!!!”

ঠক ঠক

” আসতে পারি??”

দরজায় কড়াঘাত দুই বোনের কথার মাঝে বাঘ্যাত ঘটায়।

” আরে আরফিন আপনি?? আসুন আসুন। কি কিছু বলবেন??” ইয়ানা বলে।
” না আসলে আমার তো এখন তেমন একটা সামর্থ্য নেই, যেটুকু পেরেছি…… আমার তরফ থেকে এই ছোট্ট উপহার এই বিয়ের কনের জন্য।”

আরফিন একটা ছোট কানের দুল এগিয়ে দেয় ওদের দিকে।

” খুব সুন্দর হয়েছে। দেখ ইনায়া ”
” আমাকে মনে হয় মম ডাকছে। তোরা কথা বল আমি আসছি”

ইনায়া চলে যায়।

” আমার মনে হয় হয়তো গিফট্ টা ওনার পছন্দ হয়নি……”
” না না তেমন কিছু না। ওসব বাদ দেন। আগে বলুন আপনি…… ( আরফীনকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে আরফিনের চোখের সামনে তুরি মারে ইয়ানা) এই যে হ্যালো মিস্টার আরফিন তালুকদার আপনি বোধয় ভুলে যাছেন যে আপনার চোখ যাকে খুঁজছে সে আমার ভাইয়ার স্ত্রী। নিজের নজর সংযত করুন ”

আরফিন লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়। আমতা আমতা করে ওঠে,” না মানে আসলে………”

আরফিন কে আমতা আমতা করতে দেখে হো হো করে হেঁসে ওঠে ইয়ানা।

” হায় হায় আরফিন আপনি তো সিরিয়াসলি মজা বোঝেন না। আমি মজা করছিলাম। আরে ভাই আমি জানি যে আপনার মনে মেহেক ভাবী কে নিয়ে কিছু নেই। আর মেহেক ভাবীরও মনে আপনার জন্য আর কোনো ফিলিংস নেই। ইভেন ওরা দুজনে তো বেবি প্ল্যান ও করছে।”
” কি!!!???”
” হ্যাঁ ভাইয়া বলছিলো তো ”
” আ….আমি একবার আসছি”
” আরে শুনুন কোথায় যাচ্ছেন?? কো……”

আরফিন সেখান থেকে চলে যায়। মেহু কে খুঁজতে খুঁজতে সে একটা ঘরে চলে আসে। কিছুক্ষণ পর দেওয়ালে ছবি দেখে বুঝতে পারে যে এটা ঈশানদেরই রুম। বাইরের পায়ের আওয়াজ শুনে সোফার পিছনে লুকিয়ে যায় সে।

ঈশান মেহু কে কোলে তুলে রুমে নিয়ে আসে।

” কি করছেন ঈশান ছাড়ুন। কেউ দেখে ফেললে কি হবে বলুন তো??”
” দেখলে দেখবে। আমি কি অন্যের বউ কে কোলে নিয়েছি নাকি?? তোমাকে অতো ভাবতে হবে না। চুপটি করে বসে থাকো এখানে।”
” কতো কাজ আছে বলুন তো? আমার কি এখানে বসে থাকলে চলে??”
” তুমি কি এ বাড়ির কাজের লোক নাকি কাজ করার জন্য অন্যরা আছে। নিজের পায়ের দিকে দেখেছো কতটা কেটে গেছে??”
” ও কিচ্ছু না। আমি উঠলাম।”
” এই মেয়ে বসো বলছি”

মেহু উঠতে নিলে ঈশান ওকে ধরে বসিয়ে দেয়। নিজে বসে মেহুর সামনে হাঁটু গেঁড়ে।আসতে করে মেহুর বাম পা টা নিজের থাইয়ের উপর নেয় সে। মলম লাগিয়ে দিতে থাকে সে। মলম লাগানোর পর আলতো করে অধর ছোঁয়ায় তার স্ত্রীর পায়ে। ঈশানের এহেন কান্ডে লজ্জায় চোখ বুজে আসে মেহুর। মেহু কে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে মুচকি হাসে ঈশান। ধীরে ধীরে তার পায়ের পাতা থেকে উপর অধর স্পর্শ আঁকায় অগ্রসর হয় সে। লজ্জা ও আবেশে চোখ বুজে আসে মেহুর। উন্মুক্ত পেটে ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই চমকে চোঁখ খোলে সে। ঈশান মাথা তুলে পাশে এসে বসে মেহুর।

মেহুর ঠোঁটে নিজের বৃদ্ধা আঙুলটি স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে,” মেহেক আই লাভ ইউ”।

ধীরে ধীরে ঈশান মেহুর ঠোঁটের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকে। মেহুর কেনো জানি না গোটা শরীর অবশ হয়ে আসতে থাকে। ঈশান পরম আবেশে বুকে জড়িয়ে নেয় তার স্ত্রীকে। পান করতে থাকে তার অধর সুধা। আজ যেন নিজেদের মধ্যে সব দূরত্ব মিটিয়ে দুটি মন দুটি শরীর এক হতে ব্যাস্ত।

এতক্ষণ ধরে এসব কিছু আলমারির আড়াল থেকে সব দেখে,এখন আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তিটাও পাচ্ছে না আরফিন। তার মেহুপরী তাহলে সত্যিই আর তাকে ভালোবাসে না। অবশেষে কি তাহলে ভুলেই গেলো তাকে?? আর ভাবতে পারছে না সে কিছুই। চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে। রুমের মধ্যে থেকে নর-নারীর গোপন মুহূর্তের সুখমিশ্রিত আওয়াজ কানে এসে পৌঁছাতেই ভেতরটা যেনো দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে আরফিনের। সেদিকে চোঁখ তুলে তাকানোর সাহস আর নেই তার। আজ তার সব শেষ। কি করবে ভেবে না পেয়ে দেখে আলমারির পাশেই একটা জানলা আছে তাতে কোনো রড নেই। সেই জানলা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায় আরফিন তৎক্ষণাৎ।

দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সোজা হাঁটতে থাকে আরফিন। মনে পরতে থাকে তার ও তার মেহুপরীর একসাথে কাটানো মধুর স্মৃতি গুলো।লোকে বলে প্রথম ভালোবাসা নাকি মৃত্যুর আগ মুহুর্ত অব্দি মনে থাকে, তাহলে কি করে পারলো মেহুপরী এতো তাড়াতাড়ি তার ভালোবাসা ভুলে যেতে??? স্বেচ্ছায় অন্যকে নিজের শরীর ছুঁতে দিতে কি ভাবে পারলো সে?? একবারো কি তার মুখটা মেহুর সামনে ভেসে উঠলো না??

” আরে আরফিন আপনি এখানে আমি আপনাকে কখন থেকে খুঁজে যাচ্ছি। আসলে……”

মাঝ পথে ইয়ানা কে দেখে থমকে দাঁড়ায় সে। ইয়ানার কথায় কোনো কান নেই ।মাথায় খালি তার কিছুক্ষণ আগের কথা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে।আরফিনের দৃষ্টি যায় ইয়ানার ঠোঁটের দিকে। হঠাৎ আঁকড়ে ধরে ইয়ানার ওষ্ঠদ্বয় নিজের ঠোঁটের ভিতর সে। ইয়ানা কিছু বুঝে উঠতে পারে না,আরফিনের এহেন আচরণের কারণ।
__________

” বেটা বেটা মুগ্ধতা কোথায়?? দেখেছো??”

মমের আওয়াজে হাতের সিগারেট ফেলে পিছনে ঘোরে ইভান।

” কেনো মম? ও তো নিচেই থাকবে। কোথায় আর যাবে??”
” কোত্থাও নেই গোটা বাড়ি খোঁজা হয়ে গেছে। সবাই জিজ্ঞেস করছে বড়ো বউ কথায়। আমি ভাবলাম হয়তো তুমি জানো কোথায় গেছে।”
“কোথায় আর যাবে??”
” তানহার চর মারার জন্য আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে…….”
” হোয়াট!!!!???? তানহা মুগ্ধ কে চর মেরেছে???”

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা