গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা।#পর্ব :-২৬
🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀
গোটা চৌধুরী ম্যানসন তন্য তন্য করে খুঁজেও কোথাও মুগ্ধ কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই চিন্তিত। ইভান বার বার কল করছে মুগ্ধ কে,কিন্তু ফোন সুইচ অফ।
” কোথায় গেলো বলোতো মেয়েটা??” ইশতিয়াক সাহেব চিন্তিত স্বরে বলেন।
” আমি বুঝিনা বাপু এই মেয়ের কোনো ব্যাপার। দেখলি যে আজকে বাড়িতে এতো বড় একটা অনুষ্ঠান তবুও তোকে আজকেই পালাতে হলো?? এই সব কিছু সে ইচ্ছে করে করেছে আমার মেয়ের অনুষ্ঠানটা নষ্ট করার জন্য ওই মেয়ে আজ পালিয়েছে।”
” বুশরা!!!! মুগ্ধতা ওমন মেয়ে নই যে অন্যের খারাপ চাইবে।……… ইভান ফোনে পেলে মুগ্ধতা কে??”
” নো ড্যাড। এখনো সুইচ অফ।”
সামনে এগিয়ে এসে ইভানের কাঁধে হাত রেখে তানহা বলে,” আই থিঙ্ক ও হয়তো অন্য কারোর সাথে সুযোগ বুঝে……”
বাকি কথা শেষ করতে পারেনি তানহা তার আগেই ইভান তার গলা চেপে ধরে।
” তোর সাহস কি করে হয় আমার মুগ্ধের গায়ে হাত তোলার?? হাউ ডেয়ার ইউ তানহা??”
” অ্যাখ…. ক্ষ্য ”
” আমার ওয়াইফ, ইভান চৌধুরীর ওয়াইফ কে চর মারার তুই কে?বল?”
সবাই ইভানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।
” বেটা ছাড়ো তানহাকে ও মরে যাবে, ছাড়ো বেটা” বুশরা বেগম বলেন।
” বিগ ব্রো ছাড়ো কি করছো যদি একটা কিছু হয়ে যায়? ছাড়ো বিগ ব্রো” ইনায়া বলে।
সবার বলার পর অবশেষে ইভান তানহা কে ছেড়ে সরে আসে।
“আমার মুগ্ধের ব্যাপারে একটা খারাপ কথা টোলারেট করবো না আমি। রিমেমবার দ্যাট তানহা।”
” তুই ওই মুগ্ধের জন্য আমায় মারলি ইভান??”
উত্তরে ইভান চোয়াল খামচে ধরে তানহার।
” দি ইভান চৌধুরীর জন্য খালি একটা মেয়েই ইমপোর্টেন্স রাখে, আর সেটা হলো তার প্রাণ প্রেয়সী মুগ্ধ।……… তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড বলে প্রাণে বাঁচলি, অন্য কেউ হলে তার হাত আমি কেটে ফেলতাম।”
ইভান তানহাকে ছুঁড়ে মেঝে তে ফেলে দেয়। হন হন করে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।
_______________
অনেক্ষণ যাবৎ ইয়ানার ঠোঁট নিংড়ানোর পর হুশ ফিরতেই ওকে ছেড়ে সরে আসে আরফিন। জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে সে। আরফিন সরে যেতেই হুশ ফিরে আসে ইয়ানার। ক্ষণিকের জন্য সেও আবেগে ভেসে গেছিলো। হুশ ফিরে পেতেই আমতা আমতা করে বলে ওঠে,” আ… আম… আসলে……”
” উইল ইউ ম্যারি মি ইয়ানা??”
আরফিনের কথায় আকাশ থেকে পড়ে ইয়ানা। কি হলো, আরফিন কি চাইছে বুঝে উঠতে পারে না সে।কয়েক সেকেন্ডেই নিজেকে সামলে উওর দেয়, ” ইয়েস। ইয়েস আই উইল ম্যারি ইউ আরফিন।”
আরফিন ইয়ানার হাত নিজের হাতে নিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে পা বাড়ায়।
________________
অনেক্ষণ ধরে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে মুগ্ধ। আশে পাশে কেউ নেই। তখন রাগের মাথায় একা জেদ করে বেরিয়ে এলেও এখন বেশ ভয় করছে মুগ্ধতার। রাতের শহরে একটা একা মেয়ে কতোটা সেফ সেটা তো বলে বোঝানোর নয়। অন্ধকারের সাথে নির্জনতা মিশে এক গা ছমছমে পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। পাশ দিয়ে পেরিয়ে যাওয়া সো সো গাড়ির আওয়াজে ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে মুগ্ধ।
হঠাৎ একটা সাদা গাড়ি এসে মুগ্ধের পাশে ব্রেক কষে দাঁড়ায়। এক বছর তিরিশের যুবক গাড়ির জানলার কাঁচ নামিয়ে মাথা বের করে তাকায়। মানুষটিকে দেখে চোঁখ বড়ো বড়ো হয়ে যায় মুগ্ধতার।মুখ দিয়ে বিড় বিড় করে বলে ওঠে,” তূর্য ভাইয়া।”
” এখানে কি করছো মুগ্ধ? তোমার স্বামী কোথায়?”
” আসলে……”
” এতো রাতে একা এখানে থাকা মোটেও সেফ নয়। তুমি এসো গাড়িতে ওঠো। এড্রেস বলো আমি তোমার বাড়িতে নামিয়ে দিচ্ছি ।”
” নাআআআআ। আমি ওখানে যাবো না।”
” ও… ওকে ফাইন। ওখানে না যাও, আমার সাথে আমাদের বাড়ি তো যেতেই পারো।”
” কিন্তু ওখানে তো”
“আম্মু আব্বুও আছে বাড়িতে। তুমিও সত্যিই মুগ্ধ পারো বটে!! তোমার মনে হয় বাড়িতে আমি একা থাকলে সেখানে তোমায় নিয়ে যেতাম?? কোনো হোটেলে তোমার রাখার ব্যবস্থা করতাম, তাই না?? এবার তো আর আমার বাড়ী যেতে কোনো অসুবিধা নেই?? উঠে এসো।”
মুগ্ধ ইতস্তত করে শেষমেশ গাড়িতে ওঠে। গাড়ি চলতে থাকে তূর্যদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
____________
আরফিন ও ইয়ানা কে হাত ধরে নীচে নামতে দেখে ভুরু কুঁচকে আসে বুশরা বেগম ও ইশতিয়াক সাহেবের। আরফিন ও ইয়ানা গিয়ে ইশতিয়াক সাহেবের সামনে দাঁড়ায়।
” ড্যাড আমি আর আরফিন একে অপরকে বিয়ে করতে চাই।”
ঠাস
” তোমার কথা শুনে আমি অবাক যাচ্ছি ইয়ানা। তুমি কিনা এই আরফিন কে বিয়ে করতে চাও??” বুশরা বেগম বলেন।
” তুমি আমায় মারলে মম??” ইয়ানা বলে।
” তোমার মম কে আজ তোমার গায়ে হাত তুলতে তুমিই বাধ্য করেছো ইয়ানা। তুমি কি বলছো তোমার সেই বিষয়ে জ্ঞান আছে??” ইশতিয়াক সাহেব বলেন।
” আমি সবটা বুঝেই বলছি ড্যাড। বিগ ব্রো কে জিজ্ঞেস করো।”
” আল্লাহ্ গো!!! আমি পাগল হয়ে যাবো। পাগল হয়ে যাবো কোনোদিন। আপনার এই ছেলে – মেয়েদের জ্বলনে পাগল হয়ে যাবো আপনি দেখে নিয়েন চৌধুরী সাহেব।” বুশরা বেগম মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে সোফায় বয়ে হা – হুতাশ করতে থাকেন।
” আহা হা বুশরা শান্ত হও শান্ত হও। ইভান কে আসতে দাও আগে।আমি ওর সাথে কথা বলবো।” ইশতিয়াক সাহেব পাশে বসে বউকে সামলাতে থাকেন।
” এই ছেলে এই কি যেনো নাম?? হ্যাঁ আরফিন, তোমার সাহস হয় কি করে আমার মেয়ের মাথা খাওয়ার?? তোমাদের বাড়ির ছেলে মেয়েরা কি আমার ফ্যামিলির সবার জীবন নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই পারে না??” বলেন বুশরা বেগম।
” আপনারা আমায় ভুল ভাবছেন আঙ্কেল আন্টি। আমি সত্যিই মন থেকে চাই ইয়ানা কে বিয়ে করতে। আমি ওকে সুখে রাখবো।” আরফিন হাত জড়ো করে বলে।
ঠাসঠাস
ঈশান এসে সপাটে আরফিন কে চর মারে। এতক্ষণ ধরে পিছনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো শুনছিল ঈশান ও মেহু। নীচে নেমে বুশরা বেগম কে ওইভাবে হা হুতাশ করতে দেখে খানিক অবাক হয় ওরা। পরিস্থিতি বুঝতে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে সব শোনে। মেহুর যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না।
” আমার বোন কে বিয়ে করার কি মুরোদ আছে তোর?? করিস তো আমাদেরই একটা ক্যাফেতে ম্যানেজারের কাজ। খাওয়াবি কি তুই আমার বোনকে??”
” আমি যা পাই……”
” তুই যা পাস সেটা আমার বোনের একদিনের হাত খরচা। তাও যদি তোকে তালুকদার বাড়ির ছেলে হিসাবে তোর দাদাজান আবার গ্রহণ করতো।”
” আমি আজই দাদাজানের সাথে কথা বলবো……”
” তোর ওই বুড়ো দাদাজান তোকে ফিরিয়ে নেবে বলে তোর মনে হয়??”
” চেষ্টা করতে কি আসে?? দরকার পড়লে দাদাজানের হাতে পায়ে পড়বো।ইয়ানার জন্য আমি এটুকু করতেই পারি।”
আরফিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে যায়। যাওয়ার আগে একবার চোখ আটকায় ঈশানের বুকের বাম পাশটায়। লাল হয়ে থাকা দাগটা চোখে পরতেই বুকের মাঝে আবার সেই জ্বালা পোড়া অনুভব হয় তার।এই দাগটাই যেনো তাকে বলে দিচ্ছে যে কিছুক্ষণ আগে তার মেহপরী স্বামীর সোহাগে অনেক সুখ অনুভব করেছে, এতোটাই সুখ অনুভব করেছে যে নিজেও তার স্বামী কে আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছে।
চোখের কোনা আবার জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তার। হাতের মুঠো শক্ত করে বেরিয়ে যায় চৌধুরী ম্যানসন থেকে তালুকদার বাড়ির উদ্দশ্যে।
_____________
পরের দিন সকালে সূর্যের আলো চোঁখে পড়তেই ঘুম ভাঙ্গে মুগ্ধের। কোথায় আছে বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে সে। কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হতেই মনে পড়ে গতকালের ঘটনা। এদিক ওদিক হাতড়ে নিজের ফোন খুঁজতে থাকে সে। দেখে সাইড টেবিলে চার্জে আছে। হাতে নিয়ে ফোন ও করতেই দেখতে পাই প্রায় হারাজটা কল ও ম্যাসেজ। আম্মুর নম্বর থেকে একটা কল দেখে যেই ঘুরিয়ে কল করতে যাবে, তখনই দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে তুর্য।
” এই যে ম্যাডাম উঠে পড়েছেন দেখছি।ঘুমোতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো??”
মাথা নেড়ে না বলে মুগ্ধ।
” দেখো মুগ্ধ তোমার সাথে কে দেখা করতে এসেছে।”
দরজা দিয়ে এক মাঝ বয়সী মহিলা ঘরে প্রবেশ করতেই মুগ্ধ ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে।
” ফুফুমনী। কেমন আছো তুমি??”
” আমি ভালো আছি। আমার মা টা কেমন আছে??” মুগ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে হুমাইরা বেগম,মুগ্ধের ফুফুমণি।
” আমি ভালো আছি। কবে এলে তোমরা??”
” চার দিন আগে এসেছি রে। আমার ছোটো জা ঝুমুর কে মনে আছে তোর??”
” হ্যাঁ, ওই ঝুমুর ফুফু?? উনি তো তোমাদের খালাত বোনও হচ্ছেন, তাই না??”
” হ্যাঁ হ্যাঁ ওই। আম্মাজানের চাচাতো বোনের মেয়ে ঝুমুর। সম্পর্কে আমাদের খালাত বোন। আর ওর বিয়ে হয়েছে আমার ছোটো দেওরের সাথে। তো ওই ঝুমুরের ছেলে তৌসিফের বিয়ে আজকে। ওর বিয়ে উপলক্ষেই আসা।”
” আচ্ছা আচ্ছা এবার বুঝেছি।”
” তুই ভালো আছিস তো মুগ্ধ মা?? অনেক ইচ্ছা ছিলো তোকে নিজের ছেলের বউ রূপে দেখার। কিন্তু আফসোস ভাগ্য সহায় ছিলো না। হ্যাঁ রে ওই কি নাম? ইভান ইভান চৌধুরী তোকে ভালবাসে তো?? মানে তুই সুখে আছিস তো রে??”
” সুখে কি কেও থাকে ফুফু?? নিজেকে সুখী করে নিতে হয়। আ….আমাকে এখানে কিছুদিন থাকতে দেবে ফুফুমণি??”
” কিছুদিন কেনো তোর যতদিন ইচ্ছা তুই থাক। কিন্তু একটা কথা জানবি স্বামী স্ত্রীর অশান্তি দিন পেরোলে বাড়ে বৈকি কমে না। তাই যতটা পারবি তাড়াতাড়ি ঝামেলা মিটিয়ে নিবি। বুঝলি? আচ্ছা এসব বাদ দে। এই শাড়ীটা পরে রেডী হ্ তাড়াতাড়ি বরযাত্রী কিছুক্ষণ পরেই বেরোবে।”
” আমি যাবো না ফুফুমণি। তোমরা যাও।”
” আচ্ছা তাহলে আমিও থাকছি তোর সাথে।”
” না না”
” বেশী বকিস না তো। তুই রেস্ট নে। আমরা চললাম। চল তূর্য।”
তূর্য ও হুমাইরা বেগম চলে যান।
_______________
” বিয়ের আয়োজন শুরু করো মম-ড্যাড। আজ তোমাদের একটা নয় দু-দুটো মেয়ের বিয়ে।”
ইভানের বলা কথাটা সকাল বেলায় ডাইনিং টেবিলে এক প্রকার বোম ফাটায়।
” মানে ?? কি বলছো বেটা??”বুশরা বেগম বলেন।
” হ্যাঁ চ্যাম্প,কি বলছো তুমি?? দুই মেয়ের বিয়ে মানে?? আর মুগ্ধতাই বা কোথায়?? খুঁজে পেলে ওকে?? সারারাত ছিলে কোথায় তুমি??”
” ড্যাড ড্যাড রিল্যাক্স। মুগ্ধতার ব্যাপারে এখন না ভেবে তোমাদের উচিত ইয়ানা ও ইনায়ার বিয়ের ব্যাপারে ভাবা। ঘন্টা খানেক পর দুজনেরই বরযাত্রী চলে আসবে। ওদিকটা এখন আমাদের দেখার দরকার।” ইভান চলে যেতে নেয়।
” দাঁড়াও বেটা। ইয়ানার বিয়ে মানে?? কার সাথে??”
” আরফিনের সাথে মম। আরফিন কে ওর দাদাজান নিজের পরিবারে গ্রহণ করেছে। এবং ওকে নিজেদের বিজনেসের নতুন এমডি হিসাবে ঘোষণা করেছে। আমার মনে হয় এবার এর তোমাদের আপত্তির কারণ নেই।”
” আমাদের আপত্তি যে ওর ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাটাস নিয়ে নয় বরঞ্চ ওকে নিয়ে সেটা তোমার অজানা তো নয়??”
” তোমরা আমায় ট্রাস্ট করো তো মম?? ড্যাড??”
” হুম”
” দেন বিলিভ মি আমি যা করছি সব বুঝে শুনেই করছি। তোমরা বিয়ের প্রস্তুতি করো। ”
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা
গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা। #পর্ব :- ২৭
🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀
বিয়ের অর্থ হচ্ছে নিজের অধিকারের অর্ধেক করে নেওয়া ও কর্তব্যকে দ্বিগুণ করা।আজ দুপুরে বিবাহের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে ইনায়া–তৌসিফ ও ইয়ানা–আরফিন। দুই বোন নিজেদের শশুড়বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে ঘণ্টাখানেক আগে। তালুকদার বাড়ির সকলে এসেছিলো বিয়ে করিয়ে নতুন বউ বাড়ি নিয়ে যেতে। নিজেদের রুমে বুশরা বেগম ও ইশতিয়াক সাহেব বসে আছে। একসাথে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে আজ বাড়িটা যেনো বড্ড বেশী ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
” বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তাই না চৌধুরী সাহেব??”বুশরা বেগম বলেন।
” তা যা বলেছো বউজান” ইশতিয়াক সাহেব বলেন।
” কি ব্যাপার চৌধুরী সাহেব? আপনাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো??”
” চিন্তিত হবো না বলছো?? ইনায়ার জন্য নাহয় তোমার বান্ধবী ঝুমুর আছে। নতুন পরিবারে সে ইনায়া কে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে, কিন্তু ইয়ানা?? ও কি করে তালুকদার বাড়িতে থাকবে?? কি করে মানিয়ে নেবে ওখানে??”
” সেটা আপনার দুই সুপুত্রই জানে। ইয়ানার বিয়ে আরফিনের সাথে দেওয়ার জন্য তো ইভান-ঈশান কেউই বাঁধা দেইনি, বরঞ্চ সহমত প্রকাশ করেছে।”
” আমি তো বুঝতে পারছি না বুশরা, আমাদের ছেলেরা কি এমন দেখলো ওই আরফিনের মধ্যে?”
” ছেলেদের নাম নিয়েন না আমার সামনে চৌধুরী সাহেব। আমার মন যাচ্ছে দুটোকে ধরে ঠাস ঠাস দুটো চর মারি। নেহাতই বড়ো হয়ে গেছে, বিয়ে হয়ে গেছে তাই পারছি না।”
” আরেকটা জিনিস খেয়াল করেছো?? মুগ্ধতা কে নিয়ে চ্যাম্প কিন্তু কোনো কিছুই আর বললো না।”
” এই দেখুন চৌধুরী সাহেব একখান কথা বলি, আপনার দুই গুনধর পুত্রের মনে যে কি চলে সেটা আপনার ছেলেরাই ভালো জানে।এক বাড়ির বউ সারারাত বাড়ি ফিরলো না, কোথায় আছে?কিছু হলো কিনা? সেই নিয়ে বাড়ির বড়ো ছেলে তথা তার বরের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আরেকদিকে বাড়ির ছোটো ছেলে কিনা নিজেরই বউয়ের প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে নিজের বোনের বিয়েতে আনন্দ করছে। বুঝিনা বাপু এরা কি আদেও আমার সন্তান?? আমি এদেরকে মানুষ করেছি??”
” ড্যাড আসতে পারি??”
ইভানের কথায় পিছন ঘুরে তাকায় ওনারা।
” এসো”
” কি হলো মম?? এতো রেগে আছো কেন??”
” রেগে না থাকার মতোন কোন কাজটা করেছো তুমি??”বুশরা বেগম বলেন।
” সত্যিই চ্যাম্প আজ একটা কথা আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে তুমি ইয়ানার বিয়েটা আরফিনের সাথে দিয়ে অনেক বড়ো ভুল করলে। নিজের বোনের দিকটা একবারো ভাবলে না? ওর জীবনটাকি হবে?” ইশতিয়াক সাহেব বলেন।
” ড্যাড আমার কাছে আপু আর ইয়ানা-ইনায়া আলাদা যে নয় সেটা তোমরা জানো। ভাইয়া হয়ে আমার বোনেদের ক্ষতি হবে এমন কোনো কাজ আমি করবো না,সেই বিশ্বাসটা কি তোমরা আমায় করো না??”
” ব্যপার টা বিশ্বাস অবিশ্বাসের নয় চ্যাম্প। তালুকদার বাড়ির সবাই কেমন সেটা তোমার অজানা নয়। আর আরফিন যে…….”
” ট্রাস্ট মি ড্যাড। ইয়ানার কোনো প্রবলেম ওখানে হবে না। তোমাদের ছেলের উপর একটু ভরসা রাখো। প্লিজ।”
“ঠিক আছে রাখলাম ভরসা। আই হোপ যে তুমি আমাদের ভরসা ভাঙবে না।”
” লাভ ইউ ড্যাড।”
ড্যাড কে জড়িয়ে ধরে ইভান।
_________________
” কেনো করলে এমন আরফিন ভাইয়া??”
” আজ আমার বাসর রাত। আর আপনি এতো রাতে আমায় ফোন করেছেন সেটা কেও জানতে পারলে কি হবে ভাবতে পারছেন ছোটো ভাবী??”
“হেঁয়ালি করছো তুমি আমার সাথে??”
“আরে আপনি হলেন আমার একমাত্র বউয়ের দুইমাত্র বড়ো ভাইয়ের মধ্যে ছোটো জনের স্ত্রী। আমার স্ত্রীর ছোটো ভাবী।”
আরফিনের বলা কথা গুলো মেহুর কানে বড্ড বাজতে থাকে।
” কেনো করলে এই বিয়েটা তুমি?? কিসের জন্য??”
” আপনি যদি স্বামীর সোহাগে নিজেকে বিলীন করতে পারেন,তাহলে আমার বিয়ে করাতে এতো আপত্তি কিসের ?? ছো…টো…. ভা…বি।”
” ওহ্ বুঝলাম এই বিয়েটা তুমি রেষারেষি করেই করেছো।আজও পাল্টালে না বলো আরফিন ভাইয়া?? আগেও নির্মল ভাইয়ার সাথে তুমি রেষারেষি করতে নির্মল ভাইয়া পড়াশোনায় তোমার থেকে ভালো বলে, আর এখন আমার সাথে।”
” ওহ্ এখনো ছোটবেলার ভালোবাসা মনে আছে দেখছি!! কি ব্যাপার ছোটো ভাবী? বড় ভালবকরে আদর সোহাগ দিচ্ছে না নাকি যে পুরোনো ছোটবেলার ভালোবাসার কথা মনে পড়ছে??”
আরফিনের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায় মেহু। আরফিন ভাইয়া এতোটা নোংরা কথা বলতে পারলো?? ওর মুখে বাঁধলো না??
” ছিঃ আরফিন ভাইয়া ছিঃ। তোমার মানষিকতা এতোটা নীচ?? এই কথাগুলো তোমার মুখে আটকালো না??”
” ওহ্ আমি বললাম বলে নোংরা? আর আপনি যে এতো রাতে নিজের ননদের বর কে ফোন করেছেন, তাকে বাসর ঘরে যেতে দেরী করাচ্ছেন এগুলো?? এগুলো বুঝি খুব ভালো??”
কথা শেষ করেই আরফিন ফোনটা কেটে দেয়।
।
।
।
একা ঘরে ফুলসজ্জিত বিছানায় অপেক্ষা করছে ইয়ানা। অনেক্ষন ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়ার পর অবশেষে দেখা মেলে তার কাঙ্খিত পুরুষটির। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে তার। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে স্বামী কে সালাম করে সে। আরফিন বুকে জড়িয়ে নেয় ইয়ানা কে।
” অনেক্ষণ অপেক্ষা করলাম বুঝি??” আরফিন বলে।
“বাসর রাতে যে একটু তাড়াতড়ি বউয়ের কাছে আসতে হয় আপনি জানেন না বুঝি??”
” সত্যিই খেয়াল ছিলো না, আসলে প্রথমবার বিয়ে করলাম তো।”
” এক্সকিউজ মি তাহলে কি আপনার আরোও বিয়ে করার ইচ্ছা আছে নাকি?? না মানে থাকলে বলে ফেলুন, সেই মেয়ের সাথে আপনাকেও দুটো ঝাটার বারি মারবো যাতে মাথা থেকে আবার বিয়ে করার ভূতটা নেমে যায়।”
ইয়ানার কথায় হো হো করে হেঁসে ওঠে আরফিন। বিছানায় গিয়ে বসে।
” সত্যি বাবা তুমিও না!! আমি তো মজা করছিলাম।”
” ও তাহলে আমিও মজা করছিলাম।”
” ঠিক আছে এদিকে এসো।”
” মানে??”
” মানে কি?? আজ আমাদের বাসর রাত তো, আজকে তো আমাদের কাছাকাছিই আসারই কথা। তাই না??”
আরফিনের কথায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ইয়ানা। আরফিন উঠে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ইয়ানা কে। ইয়ানার গলায় নাক ঘষতে থাকে সে।
ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে ওঠে,” না আসলে আমি ভাবছিলাম আমাদের একে অপরকে একটু টাইম দেওয়া……. হয়তো……. উচিইইইত।”
” কিসের টাইম?? আমরা তো স্বামী-স্ত্রী……”
” না মানে আরফিন আসলে আমাদের সম্পর্কটা কে আরেকটু স্ট্রং করতে একটু সময় তো দরকার বলো??”
” ফিসি*কাল ইন্টি*মেসি ছাড়া কি কোনো সম্পর্ক স্ট্রং হয় ইয়ানা?? আর তুমি না করছো কেনো?? ডোন্ট ইউ লাভ মি??”
” ইয়েস। আই ডু। কিন্তু….”
” কোনো কিন্তু না। লেটস এনজয় আওয়ার ফার্স্ট নাইট ”
আরফিনের স্পর্শ ধীরে ধীরে আরোও গভীর হতে থাকে। ইয়ানার গলা থেকে কাঁধে নেমে আসে আরফিনের ঠোঁট জোড়া।আরফিন প্রতিটা স্পর্শে যেনো অস্বস্তি জেঁকে বসতে থাকে ইয়ানার প্রতিটা অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে। আজকের রাতে শরীর ছুঁতে দিতে চাইনি সে।ভেবেছিল কিছুদিন অন্তত নিজেকে প্রস্তুত করার সময় নেবে। কিন্তু সেগুরে বালি।
আরফিন ইয়ানার শাড়ীর আঁচলটা বুকের উপর থেকে ফেলে দেয়। কাঁধে চুম্বনরত অবস্থায় সামনের আয়নাতে দেখতে থাকে ইয়ানার ফর্সা অর্ধ*নগ্ন শরীর। লাল শাড়িতে ফর্সা শরীর যেন পাগল করে দিচ্ছে আরফিন কে।
” উফফ ইয়ানা যে এতো হ*ট সেটা তো আগে জানা ছিলো না। ইয়ানা যে এত রুপ যৌবনের অধিকারীনি সেটা আগে জানলে হয়তো আরো আগেই…..…। ভেরি সরি ইয়ানা। আমি জানি ইউ নিড সাম টাইম বাট আই ক্যান্ট ওয়েট । আই নিড ইউ রাইট নাও ইন মাই বেড। তোমাকে এই রূপে দেখে আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা।” মনে মনে কথা গুলো বলে আরফিন।
ধীরে ধীরে ইয়ানার সাথে আরোও ঘনিষ্ঠ হতে থাকে সে। কোলে তুলে নিয়ে যায় বিছানায়। মেতে ওঠে নিজ স্ত্রীর উন্মুক্ত শরীরে। জিম
_________________
পরের দিন সন্ধ্যা বেলায়,
” মুগ্ধ তাড়াতাড়ি নিচে চলো আম্মু তোমায় ডাকছে।”
নক না করেই হন হন করে মুগ্ধের রুমে ঢুকে যায় তুর্য। তুবা এক্ষুনি ওর কাছে শাড়ি পরতে আসবে তাই আর দরজা লাগায়নি মুগ্ধ। চেপে ঠেসিয়ে দিয়েছিলো দরজাটা। চেঞ্জ করে সবে শাড়ীটা পরতে আরম্ভ করেছিলো সে। এমতবস্থায় হুট করে যে তূর্য বিনা অনুমতিতে রুমে ঢুকে যাবে সেটা মোটেও তার মাথা তেও আসেনি। ঝট করে পিছন ঘুরে পাশে জানালার পর্দা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে মুগ্ধ। মুগ্ধ কে ওই অবস্থায় দেখে থতমত খেয়ে পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে পড়ে তূর্য।
” আপনার মধ্যে কোনো কমন সেন্স নেই?? এটা কোন ধরনের অসভ্যতা?? একটা মেয়ের রুমে ঢুকতে গেলে যে নক করতে হয়,সেটা জানেন না আপনি তূর্য ভাইয়া??”
” আ…. আম সো সরি মুগ্ধ। আমার একেবারেই খেয়াল ছিলো না। আম রিয়েলি ভেরি সরি মুগ্ধ।”
” এতো বড় ভুল আপনার হয় কি করে?? যান এখান থেকে।”
” সে না হয় যাবো, কিন্তু তার আগে আরেকবার যদি দেখাতে……”
” মানে?? কি বলছেন এসব আপনি তূর্য ভাইয়া??”
” কে তোর ভাইয়া??তোর মা আমাকে পেটে ধরেছিলো নাকি??”
” এ আপনি কিভাবে কথা বলছেন তুর্য ভাইয়া?? প্লীজ যান এখন থেকে, নইলে আমি চিৎকার করতে বাধ্য হবো।”
এক পা এক পা করে মুগ্ধের দিকে এগোতে থাকে তুর্য।
” আপনি এদিকে আসছেন কেনো??”
” সেটা জানতেই পারবে”
মুগ্ধ পাশ কাটিয়ে পালিয়ে যেতে নিলেই ওকে ধরে নেই তুর্য। কাঁধে মধ্যে একটা ইনজেকশন পুশ করতেই কিছুক্ষণ পর তুর্যের নেতিয়ে পড়ে মুগ্ধ।
_____________
” হ্যালো মিঃ ইভান??”
” হুম বলো। কোনো ইম্পর্টেন্ট ইনফরমেশন??”
” এদিকে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। মিঃ তুর্য একটা বড় বস্তা নিয়ে কিছুক্ষণ আগেই নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো নিজের প্রাইভেট কারে করে।……. আমার মনে হয় ওই বস্তাতে মিসেস মুগ্ধই আছেন। কারণ এদিকে ওনার রুমে উনি মিসিং।”
” থ্যাঙ্ক ইউ ফর দা ইনফরমেশন তুবা।”
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা