গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা। #পর্ব :-২৮
🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀
অন্ধকার ঘরে এক কোণে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে মুগ্ধ। মুখে জলের ছিটা পরতেই আস্তে আস্তে পিট পিট করে চোঁখ খুলে তাকায় মুগ্ধ। দেখে কিছু দূরেই বসে আছে তুর্য। তূর্য এগিয়ে এসে মুগ্ধের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে। চোয়াল খামচে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করে,
” ওহ্ অবশেষে জ্ঞ্যান ফিরেছে তাহলে??”
” ছাড় আমায় জানোয়ার। একবারে ছুবি না আমায়।কেনো আমাকে নিয়ে এসেছিস এখানে?”
” বাব্বাহ তেজ আছে ভালোই দেখছি। তা মুগ্ধ জিজ্ঞেস করছ যখন বলেই দিই,আমি এখানে তোমাকে তুলে নিয়ে এসেছি তোমায় বিয়ে করবো বলে।”
” মানে??? কি বাঁজা বকছিস?? যেতে দে আমায়।”
“যেতে দেওয়ার জন্য তো নিয়ে আসিনি মুগ্ধ।”
” আমি অলরেডি বিবাহিত। তোমার ইচ্ছা কোনোদিনই পূরণ হওয়ার নয়।”
“হবে হবে আমার ইচ্ছায় পূর্ণ হবে। তোকে মেরে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে ইভানের কাছে থেকে তোকে ডিভোর্স দেওয়াবো। তারপর তোকে বিয়ে করে আমি ফ্রান্স নিয়ে যাবো। তখন কেও আর আমাদের আলাদা করতে পারবে না। আমার ভালোবাসা কে তুই মূল্য দিতিস না তাই না?? আমার আগেও তোর কাছে ওই তিহান ছিলো। কোথায় গেলো?? মেরে দেওয়া করালাম তো।”
” মানে??? তিহানকে মেরে দেওয়া করালে মানে??”
” তোর মনে আছে ফ্রান্সে আমি তোকে যখন প্রোপোজ করেছিলাম তখন তুই কি বলেছিলি?? বলেছিলি যে তুই আমাকে ওই নজরে দেখিস না। আমি একটা সুযোগ চেয়েছিলাম তুই সেটাও দিসনি। কেনো?? কারণ তখন তুই তিহানের প্রেমে মত্ত। আমার মাথায় জেদ চেপে যায়। তোর সাহস কি করে হয় আমায় রিজেক্ট করার?? নাইট ক্লাবে যখন ইভান টাকার পরিবর্তে একরাতের জন্য তোকে চাইলো তখন আমি হাতে চাঁদ পেয়ে গেলাম। সুযোগ ছিলো তোকে জব্দ করার। আমি জানতাম যে ওই রাতের পর তোর মানসিক অবস্থা বিধ্বস্ত হয়ে যাবে।আরে ইভানের প্রস্তাবে আরফিন তো প্রথমে না না করছিলো, কিন্তু এই আমি ওকে ইনফ্লুয়েন্স করি। ভেবেছিলাম এক রাত ফুর্তি মেরে ইভান তোকে ছেড়ে দেবে, আর তুইও সতিত্ব হারানোর কষ্টে আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাবি। কিন্তু সবই আমার কপাল। ইভান সেই রাতের পর তোর জন্য যেনো পাগল হয়ে গেলো। ইভান যে কি পরিমাণ সাইকো সেটা আমার তত দিনে জানা হয়ে গেছে। অন্যদিকে তোর মনেও তখন তিহানের জন্য ফিলিংস ছিলো কিছুটা হলেও।…….……..……. তখন আমি ফন্দি আটলাম। নানাজানের কাছে আমার বন্ধুর ভাই হিসাবে তিহানের ছবি দেখায়। তোর জন্য সমন্ধ নিয়ে যেতে বলি। নানাজান আমার কথা শুনে তাই করেন। আর আমি যেটা প্ল্যান করেছিলাম শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো,তিহান কে ইভান মেরে ফেলে কবুল বলার আগেই।”
” এগুলো সব তোমার প্ল্যান ছিলো???”
” উহু উহু একটু ভুল করছিস। আমি শুধু ইনফ্লুয়েন্স করেছি তোর ভাইয়া কে ফোর্স করিনি তোকে বেচে দেওয়ার জন্য। ওটা তোর ভাইয়ারই সিদ্ধান্ত।আর ইভানের তোর প্রতি সাইকোগিরি কে আমি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছি।”
” ছিঃ তুর্য ভাইয়া ছিঃ তুমি যে এতোটা নীচে নামতে পারো,আমি ভাবতেই পারছিনা। প্লীজ আমায় যেতে দাও।ছেড়ে দাও আমায় বলছি।”
” এই মেয়ে এতো চিৎকার করছিস কেন?? আরে ওই ইভান চৌধুরীর থেকে বেশী ভালোবাসবো তোকে।”
” আমার চাইনা তোমার ভালবাসা” চিৎকার করে মুগ্ধ।
উত্তরে তুর্য খামচে ধরে মুগ্ধের চুলের মুঠি।
” আহ্ লাগছে।”
” এটুকুতেই ব্যাথা পেলে হবে সোনা?? আমাকে রিজেক্ট করার শাস্তি হিসাবে তোকে তো তিলে তিলে ব্যথা পেতে হবে। আমি…….”
সোওওওও করে একটা তির মুগ্ধের কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তিরের ছোঁয়ায় মুগ্ধের ডান কানের দুলটাও দুলে ওঠে। তির সোজা গিয়ে লাগে তুর্যের বাম চোঁখে। সঙ্গে সঙ্গে চোঁখ দিয়ে গল গল করে রক্ত বেরিয়ে আসে। চোখের সামনে এরকম ভয়ানক দৃশ্য দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় মুগ্ধ। হাতে করে বাম চোখ চেপে ধরে মাটিতেই ছটফট করে কাতরাতে থাকে তূর্য।
দড়াম করে দরজা খুলে যাওয়ায় সামনে তাকায় মুগ্ধ। সামনে দাঁড়ানো অ্যাশ কালারের সুট পরিহিত পুরুষটি মুখ চোখের সামনে পরিষ্কার হতেই চোঁখ খুশিতে চিকচিক করে ওঠে মুগ্ধের।
“ইভান” বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠে সে। এগিয়ে যায় স্বামীর কাছে, স্বামীর বুকে নিরাপদ আশ্রয় পেতে। কিন্তু মাঝ পথেই ইভান তাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়।
” অয়ন এই কুত্তার বাচ্চা তুর্যটাকে নিয়ে যা আমাদের পুরোনো কারখানায়। ওর ওপর স্পেশাল ট্রিটমেন্ট চালু করতে বল ওদের।”
ইভান এগিয়ে গিয়ে তুর্যের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে।
” বড্ড বেশী ভুল করে ফেলেছিস তুর্য। বড্ডো বেশি ভুল। আমার বক্ষ পিঁজরার দিকে হাত বাড়িয়েছিস, তোর এই হাত আমি….”
ঢুশ ঢুশ
পর পর দুটি গুলির শব্দে কান চেপে ধরে মুগ্ধ। তুর্যের আর্তনাদ কানে আসতেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায় সে। দেখে ইভানের বন্দুক দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তুর্যের ডান হাতের তালুতে গুলি করেছে সে। হাতটা এমন একেবারে থেতলে গেছে, যে তাকানো যাচ্ছে না।ইভানের লোকেরা তুর্য কে নিয়ে চলে যায়।
ইভান মুগ্ধের কাছে এগিয়ে আসে। নিজের বন্দুক দিয়ে মুগ্ধের গালে স্লাইড করে ,থুতনি উঁচু করে তুলে বলে,” আমার থেকে যে তোমায় দূরে করার চেষ্টা করবে,তাকে আমি চিরতরে এই দুনিয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেবো Snowflake। তোমার ফুফু কে বলো তার ছেলে বাড়িতে ফিরবে ঠিকই কিন্তু নিজের পায়ে না।”
ইভান হন হন করে বেরিয়ে যায়। সেদিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ। তাহলে কি ইভান তূর্য ভাইয়াকে প্রানেই মেরে দেবে??
“চলুন ম্যাডাম। স্যার আপনার জন্য ওয়েট করছে।”
অয়নের কথায় ভাবনায় ছেদ পড়ে মুগ্ধের। রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশে।
______________
সকালে চোখের উপর সূর্যের আলো পরতেই চোখ মেলে তাকায় আরফিন। রুমের বারান্দায় গিয়ে তার চোঁখ আটকে যায়। গোলাপী শাড়িতে ইয়ানা কে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে। গোলাপী রঙটা যেনো ইয়ানা ফর্সা শরীরের সাথে মিশে যাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠে ইয়ানা পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় আরফিন। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ইয়ানার ভেজা চুলে নাক ডুবাই আরফিন।
হঠাৎ স্পর্শ করায় চমকে ওঠে ইয়ানা। থতমত খেয়ে পিছনে ঘুরতে গেলে আটকে দেয় আরফিন। চুল থেকে নেমে আসে ইয়ানা গলায়।
” আ….আপনি উঠে পড়েছেন আরফিন?”
“হুম”
” ড….. ডাকলেন না কেনো আমাকে??”
” ডাকলে কি করতে?? কালকের রাতের মতো সুখ দিতে বুঝি? হুম?”
ইয়ানা অসস্তিতে কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে।
” ধুৎ এতো কাঁপা কাঁপি করছো কেনো? চুপচাপ দাঁড়াতে পারছো না?”
” স.. সকাল সকাল এসব না করলেই নয়?? আম্মু এসেছিলো একবার ডাকতে। এবার নিচে না না গেলে দাদাজান হয়তো রাগ করবে।”
” আম্মু এসেছিলো??” মুখ তুলে জিজ্ঞেস করে আরফিন।
” হুমম”
” তো সেটা তো আগে বলবে না তুমি?? আমাকে পাঁচ মিনিট দাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তারপর একসাথে নীচে যাবো।”
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে আসে আরফিন।
” আপনি কি এখনো মেহেককে ভালবাসেন??”
ইয়ানার কথায় চমকে তাকায় আরফিন। কি বলছে এসব ইয়ানা?? তারমানে ও জানে মেহেক আর ওর ব্যাপারে?…..ভাবতে থাকে আরফিন। হ্যাঁ হতে পারে সে মেহেককে সে ভালোবাসতো কিন্তু সেটা ওর অতীত। মেহেক আর কোনোদিনই ওর হওয়ার নয়। তাই মেহেকের জন্য ইয়ানার মতো সুন্দরী, রুপ–যৌবনের অধিকারী কে হাতছাড়া করা বা চটিয়ে ফেলার কোনো মানেই হয় না। আর তাছাড়াও ইয়ানার বাবার সাহায্যে যদি নিজেদের ব্যবসার হেল্প করতে পারে তাহলে নিজেও সে দাদাজানের কাছেও ভালো ও যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রকাশ হতে পারবে। ভেবেচিন্তে উত্তর দেয় সে।
” হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো ইয়ানা??”
” না আসলে আপনি তো এখনও পর্যন্ত একবারও বললেন না যে আমাকে ভালবাসেন অথচ গত রাত্রে……”
” তুমি আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইয়ানা। আর আমার জীবনে অতীতের কোনো স্থান নেই।….…. আর আমি মনে করি আমার জন্য তোমার থেকে ভালো স্ত্রী অন্য কেউই হতে পারবে না।”
” ওহ্ শুধু আমি আপনার যোগ্য বলেই বিয়ে করলেন?? ভালবাসেন না আমায়।”
উত্তরে মুচকি হেসে আরফিন জড়িয়ে ধরে ইয়ানা কে। কপালে একটা গভীর চুম্বন এঁকে দেয় তার ।হাতের অছিলায় ইয়ানার মুখ নিয়ে বলে,
” তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী ইয়ানা। তোমাকে ভালো না বেশিই থাকা যায়?? আমি তোমায় সত্যিই যে কবে ভালবেসে ফেলেছি সেটা আমি বুঝতেই পারিনি। আই লাভ ইউ ইয়ানা আই লাভ ইউ।.…. এবার নিচে চলো। সবাই ওয়েট করছে।”
______________
বাড়িতে এসে থেকে ইভান মুগ্ধের সাথে কোনো কথায় বলেনি। মুগ্ধ বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। আপাই না পেয়ে অবশেষে পথ আগলে ধরে ইভানের।
” আপনি কেনো এমন করছেন ইভান?? কি করেছি আমি??”
” রাস্তা ছাড়ো মুগ্ধ।”
” আগে আমার উত্তর দিন।”
” বললাম রাস্তা ছাড়ো।”
” আমিও বললাম আগে আমার উত্তর দিন।”
” সবসময় তুমি জেদ করে যাবে সেটা তো হয়না”
” এই জেদ আমি আপনার কাছে থেকেই শিখেছি। ওই কথায় আছে না সঙ্গ দোষে শিলাও ভাসে, ওটাই হয়েছে আমার সাথে।”
” ফাজলামি হচ্ছে?? আজ আমার বোনেদের রিসেপশন,আমার কাজ আছে। রাস্তা ছাড়ো।”
” বললাম তো ছাড়বো না। আগে আমার উত্তর দিন।এসে থেকে ইগনোর করছেন কেনো?”
ইভান আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। মুগ্ধের চোয়াল খামচে ধরে ঠেলতে ঠেলতে দেওয়ালে ঠেসে চেপে ধরে ইভান।
” যত ভাবছি যে না বাড়ি ভর্তি মেহমান,কোনো ঝামেলা করবো না।তোমার তর সইছে না তাই না বেইব?? ”
” ল…. লাগছে ইভান ছাড়ুন।”
ইভান উত্তরে মুগ্ধের ঠোঁট কামড়ে ধরে। মুগ্ধ ধাক্কাতে থাকে ইভান কে। কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ কে ছেড়ে সরে আসে ইভান। মুগ্ধ আয়নার সামনে গিয়ে দেখে তার ঠোঁট ফেটে রক্ত পরছে। মাথায় রাগ চড়ে বসে তার। ইভানের সামনে গিয়ে ইভানের কলার ধরে কাছে টেনে নিয়ে আসে, ইভান কে অবাক করে দিয়ে নিজে থেকেই কামড়ে ধরে ইভানের ঠোঁট। দাঁতে করে পিষে দিতে থাকে ইভানের ইষৎ গোলাপী ঠোঁট জোড়া।
অনেক্ষণ যাবৎ স্বামীর ঠোঁটের ওপরে অত্যাচার চালানোর পর স্বামীকে ছেড়ে হাঁপাতে থাকে মুগ্ধ। ইভান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মুগ্ধের দিকে। ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখে তার ঠোঁটের অবস্থাও মুগ্ধ নিজের ঠোঁটের মতন করে ছেড়েছে।
” আর ইউ ক্রেজি মুগ্ধ?? এটা কি ছিলো??”
” টিট ফর ট্যাট ছিলো মিঃ ইভান চৌধুরী। আর এবার থেকে এটাই হবে। আমাকে কামড়ালে আমিও আপনাকে কামড়াবো।আমার চর মারলে আমিও আপনাকে মারবো। সাইকোগিরি কি একা আপনিই পারেন?? আপনি যদি ইভান চৌধুরী হন তাহলে আমিও ইভান চৌধুরীর স্ত্রী। এটা ভুলে যাবেন না।”
ইভান অবাক হয়ে দেখতে থাকে মুগ্ধের নতুন রূপ। (গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)
_______________
” কোথায় যাচ্ছেন চৌধুরী সাহেব??” বুশরা বেগম বলেন।
” বউজান আমি একটু আসছি।” ইশতিয়াক সাহেব বলেন।
” মেয়ের কাছে যাচ্ছেন সেটা কি বলে যাওয়া যায় না চৌধুরী সাহেব?? ঈশা কি আমার মেয়ে নয়??? আমাকে কি সঙ্গে নেওয়া যায় না??”
” তুমি যাবে সঙ্গে??”
” কেনো ঈশা কি খালি আপনারই মেয়ে আমার নয়?? সেই কোন ছোটতে যখন এক দিন বয়স ইভান ও ইশার আপনি ছোট্টো যমজ বাচ্চা দুটি ভিকে আমার কোলে দিয়ে বলেছিলেন, বুশরা এই নাও আমাদের প্রথম সন্তান-সন্ততি। সেদিন ওদের দুই যমজ ভাইবোনকে কোলে নিয়ে আমার মনে হয়েছিল যেনো সেদিন আমার সংসার পূর্ণ হলো। তারপরে আমার গর্ভে ঈশান, ইয়ানা ও ইনায়া আসে। কিন্তু পেটে না ধরলেও আমার প্রথম প্রথম সন্তান সর্বদা ঈশা ও ইভানই ছিলো আছে o থাকবে।”
” তোমাকে আমার জন্য অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে বলো??”
” আপনি আমাকে ইভান আর ঈশার মতো সন্তানের মা বানিয়েছেন। ওরা আমাকে আমার পেটের ছেলে মেয়েদের থেকেও বেশি ভালবাসে। এর থেকে বড় পাওয়া জীবনে আর কি হতে পারে??”
” আচ্ছা বুশরা ঈশার ব্যাপারে মুগ্ধতারবকিছু জানে নাকি?”
” না। তবে ইভান মুগ্ধ কে বলেছে যে ঈশা মারা গেছে অনেক বছর আগে।”
” আমার মেয়েটা তো মারাই গেছে , বেচে আছে শুধু তার শরীরটা।”
” এমনভাবে কেনো বলছেন আপনি?? আমাদের ঈশা একদিন ঠিক কোমা থেকে বেরিয়ে আসবে। ওর ভাইয়েরা ওর জন্যই এতো কিছু করছে। ঈশা নিজের চোখে দেখবে নিজের পাপীদের শাস্তি পেতে।”
(শব্দ সংখ্যা ১৬৬৫)
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা
গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা। #পর্ব :-২৯
🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀
কমিউনিটি সেন্টার লোক সমাগমে ভর্তি। দুইবোনের রিসেপশন একই কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে। প্রস্তাবটা ইভানই দিয়েছিলো। ইয়ানা আর ইনায়া কে আজ ব্লু আর গোল্ডেন কালারের লেহেঙ্গাতে অপরূপ সুন্দর দেখাচ্ছে। একটা স্টেজেই পাশাপাশি বসে আছে দুই বোন। একে একে সব মেহমান আসছে। তৌসিফ ও আরফিন ব্যস্ত অতিথি আপ্যায়নে।
” বাসর রাত কেমন গেলো ছোট আপু??” ইনায়া বলে।
” টন্ট মারছিস??” ইয়ানা জিজ্ঞেস করে।
” আরে না না আমি তো জাস্ট ইয়ার্কি মারছিলাম।”
” ইয়ার্কিটা আজকাল একটু বেশিই মারছিস না তুই??”
” রাগ করছো কেনো?? আচ্ছা এসব বাদ দাও আমি ভাবছি অন্য কথা।”
” কি কথা??”
” এই কথা যে আজ যদি বড়ো আপু এখানে থাকতো তাহলে কি হতো?? মানে আনন্দ পেতো না কষ্ট….”
ইনায়ার কথায় চোঁখ ছল ছল করে ওঠে ইয়ানার। নিজেকে সামলে বলে,
” তুই যে আমার নিজের বোন সেটা ভাবতেও আমার লজ্জা লাগছে রে ইনায়া। সবটা না জেনে কেনো বলছিস এভাবে??”
” কেনো বলবো না?? যদি তুমি মেহেকের এক্স কে বিয়ে করতে পারো,তাহলে কেনো রেহান ভাইয়া কে বিয়ে করতে পারবো না?? কারণ সে মুগ্ধ ভাবী কে পছন্দ করতো, তাই??”
” ইনায়া!!! তুই জানিস তুই কি বলছিস?? কেউ শুনতে পেলে কি হবে ভাবতে পারিস?? তৌসিফ এতো ভালো একটা ছেলে,আর তুই কিনা ও থাকতে ওই রেহা কে নিয়ে আফসোস করছিস?? তোর কপাল অনেক ভালো যে তৌসিফের মতোন ছেলেকে সিমি হিসাবে পেয়েছিস।”
” ওহ্ আবার তৌসিফ ও?? তোমার ব্যাপারটা কি বলোতো ছোটো আপু??বোনেদের ভালোবাসার মানুষদের ওপর তোমার এতো নজর কেনো??”
” ইনায়া!!!!!!”
ঠাসঠাস
” ছিঃ ইনায়া ছিঃ। তুই আমার মায়ের পেটের বোন হয়ে এমন বলতে পারলি??”
আশে পাশের সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। এখন বিয়ের বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে গেছে। মুগ্ধ স্টেজের দিকে এগিয়ে আসে।
” ইয়ানা আপু কি করছো কি?? সব মেহমানরা তাকিয়ে আছে হা করে।”মুগ্ধ বলে।
” আমি বাড়ি যাবো ভাবী আপনি একটু আরফিন কে ডেকে দিন।” ইয়ানা বলে।
“আমিও বাড়ি যাবো। তৌসিফ কোথায় ভাবী??” ইনায়া বলে।
” আপনারা দুজনে একটু শান্ত হন আপু। এখানে আপনাদের শশুড় বাড়ির সবাই আছে, কি বলবে বলুনতো?? আর তাছাড়াও আজ তো আপনাদের রিসেপশন অনেক বড়ো দিন। আজকের দিনটা কে এইভাবে নষ্ট করবেন না প্লিজ।”
” দেখুন ভাবী আপনি আমাদের বিগ ব্রোর ওয়াইফ বলে আপনাকে সন্মান করি, তবে তার মানে এই নয় যে আপনি আমাদের পারিবারিক পার্সোনাল ব্যাপার গুলো তে কথা বলবেন।”
” মুখ সামলে ইনায়া । ভুলে যাস না যে যার সাথে কথা বলছিস সে তোর সম্পর্কে বড়ো ভাবী হচ্ছে।”
ইভানের কথায় ওরা সবাই চুপ করে যায়।
” চুপচাপ দুজনে নিজের জায়গায় বসে থাকবি। কোনো কথা বলবি না একে অপরের সাথে। এতো জন গেষ্ট আছে। বাচ্চাদের মতো করছিস তোরা।কোনো সিনক্রিয়েট কিন্তু আমি বরদাস্ত করবো না।”
” সরি বিগ ব্রো।” ইয়ানা ও ইনায়া বলে।
দুই বোন গিয়ে নিজেদের জায়গায় বসে যায়।
।
।
।
মেহমান কমে আসতেই মুগ্ধ কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেরিয়ে যেতে যায়। মুগ্ধ কে বেরোতে দেখে মেহু অবাক হয়। ” আপাই এখন কোথায় যাচ্ছে।”
” কোথায় যাচ্ছো আপাই??”
মেহুর হঠাৎ ডাকাই চমকে ওঠে মুগ্ধ।
” বাপরে মেহু ভয় পেয়ে গেছি। এভাবে কেও ডাকে??”
” সে সব তো বুঝলাম। কিন্তু তুমি এইভাবে যাচ্ছোটা কোথায়??”
” কেও দেখলে এখন যেতে দেবে না,তাই লুকিয়ে যাচ্ছি।”
” কিন্তু কোথায়??”
” নির্মল ভাইয়ার বাড়ি। আজ কি তোর মনে নেই??”
” আ….আজ আবার কি??”
” আজ নির্মল ভাইয়ার মৃত্যুবার্ষকী। তুই সত্যিই ভুলে গেছিস মেহু??”
“ন……না মানে আসলে………”
” এক সময় এই নির্মল ভাইয়ার জন্য কত শত পাগলামী করেছিস বলতো?? আর আজ কিনা সেই মানুষটারই মৃত্যুবার্ষিকী ভুলে গেলি??”
” সেটা না আসলে কাজের চাপে….”
” বাদ দে এসব। তুই তো জানিসই আমি প্রতি বছরই নির্মল ভাইয়ার বাড়ি যায় আজকের দিনে।আমি আসছি পরে কথা হবে।”
” দাঁড়াও আপাই আমিও যাবো। অনেক দিন হয়ে গেল চাচা চাচীর সাথেও দেখা হয় না।”
” চল।”
_________________
ইশতিয়াক সাহেব এক সাইডে বসে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আছেন। বুশরা বেগম তার পাশে এসে বসেন।
” কি দেখছেন মেয়েদের দিকে চৌধুরী সাহেব??”
” দেখতাসি আমার মাইয়া গুলা কিরম বড়ো হইয়া গেসে। বিয়া হইয়া গেসে। আর কয়েক বসর পর দেখন লাগবো যে ওদেরও ছোটো ছোটো বাচ্চা কাচ্চা হইবো। এর লগেই লোকে কয় মাইয়া মানুষের বয়সের বার খুবই তাড়াতাড়ি হওন যায়।”
” আপনি আবার এই ভাষায় কথা বলছেন??”
” কি করমু কও বউজান? ছোটো থাইকা এই ভাষাতেই কথা কইসি। এহন ব্যবসার কামে দেশ বিদেশ ঘুরন লাগে তাই এই ভাষায় কথা কইতে পারি না। তার লগে কি আর এই ভাষার প্রতি ভালোবাসা কমে গো?? সুখ পাবার লগে এই ভাষাতেই কথা কওন লাগে।”
” সত্যিই বলুন চৌধুরী সাহেব আমরা আগে কি অবস্থায় ছিলাম আর এখন বলতে নেই কতো উন্নতি হয়ছে।”
” সবই আল্লাহর দান বুঝলে বউজান।”
” হুম তা তো অবশ্যই। আর হ্যাঁ ইশার ডাক্তার কল করেছিলো।”
” কি বলছেন??”
” গুড নিউজ আছে। ইশার ইমপ্রুভমেন্ট হচ্ছে। ও কোমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।”
” কবে??”
” সেটা বলেনি তবে বলেছে হতে পারে তাড়াতাড়িই হলো।”
” তুমি সত্যি বলছো বুশরা??” ইশতিয়াক সাহেব বৌয়ের হাত ধরে বলেন।
” হ্যাঁ চৌধুরী সাহেব। আমাদের বড়ো মেয়ে খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবে।”।
ইশতিয়াক সাহেব বৌয়ের হাতে চুম্বন করেন।
দূর থেকে একজন এই দৃশ্য দেখে তাকিয়ে। তার বুক ফেটে যেন এক আফসোসের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। এতো বছর পর মানুষটাকে দেখে প্রথমে খুব অবাক হলেও এখন সেই ব্যক্তিটি যেনো বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে নিজের চোঁখ সরাতে। বুশরা বেগম চলে যেতেই সাহস নিয়ে এগিয়ে যান সেদিকে।
সামনে থেকে নীল শাড়ী পরিহিতা মাঝ বয়সী মহিলাটি কে আসতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান ইশতিয়াক সাহেব। একপলকে তাকিয়ে থাকেন সেদিকে। আজও সেই খোলা লম্বা চুল, টানা টানা চোখ, ফর্সা মুখে গোলাপী লিপস্টিক সব একই রকম লাগছে ইশতিয়াক সাহেবের কাছে। যেনো কিচ্ছু বদলায়নি এতো বছরে শুধু বদলেছে সম্পর্কের সমীকরণ।
” কেমন আছো তুমি ইশতিয়াক??”
সামনের মানুষটির কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসেন ইশতিয়াক সাহেব।
“ভ….ভালো।”
” জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন আছি??”
” কেমন আছো হুমাইরা??”
” হুমাইরা??? তুমি তো আগে হুমু বলতে??”
” আমার হুমু তো সেই বত্রিশ বছর আগেই হারিয়ে গেছে। আজ সে আমার কাছে মৃত।”
” এখনো অভিমান করে আছো??”
” অভিমান নিজের লোকের ওপর করা হয়, আর তুমি আমার নিজের কোনোদিনও ছিলে না।”
” আমি সেদিন মজবুর ছিলাম। তোমার সাথে সম্পর্ক না ভাঙলে আব্বাজান আমাকে আম্মাজানের সাথে কোনোদিনও দেখা করতে দিতো না, আমার সাথে সম্পর্ক রাখতো না। আমি পারিনি ইশতিয়াক পারিনি আম্মা আব্বার বিরূদ্ধে গিয়ে তোমার হাত ধরে সেদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে।”
তাচ্ছিল্য হাসেন ইশতিয়াক সাহেব,” এখনই বা কি সম্পর্ক তোমার সাথে রেখেছে ওরা?? আসল কথা কি জানো হুমাইরা? তুমিও তোমার বাড়ীর লোকেদের মতনই নিজের স্বার্থ আগে দেখেছো। নিজের স্বার্থের জন্য নিজের গর্ভে ধারণ করা সন্তানদেরও তুমি মেরে ফেলার কথায় মত দিতে পিছু পা হও নাই।”
” আমার আর কিই বা করার ছিলো বলো?? বিয়ের আগে যদি কোনো মেয়ে প্রেগনেন্ট হয়ে যায় তাহলে তারজন্যে সেটা কতো বড়ো লজ্জার বিষয় তুমি জানো??”
” হয়তো আমার থেকে ভালো এই বিষয়ে কেউ জানে না।…….….. আমি তোমায় বিয়ে করতে চেয়েছিলাম হুমাইরা। তোমার আব্বা আমি গরীব ঘরের ছেলে বলে আমাকে মেয়ের হাত দেননি। তোমাদের বাড়ীতে বরাবরের টাকায় আগে প্রাধান্য পায়। তোমার আব্বা আমার সাথে তোমার বিয়েও দিলো না আমার তোমার গর্ভে থাকা আমার সন্তানদের মেরে ফেলতে চেয়েছে। আর তুমি সেই শিশুদের বাঁচানোর জন্য কিচ্ছু প্রতিবাদ করোনি। কিচ্ছু না। কেনো হুমাইরা?? কেনো?? মা হয়ে কি করে নিজের গর্ভেই নিজের বাচ্চা মেরে ফেলতে চেয়েছিলে?? যখন দেখলে শারীরিক অসুবিধার কারণে এবরশন করা গেলো না, তখন জন্ম নেয়ার পর তাদের মেরে ফেলতে বলতে তোমার বুকে বাধে নি??”
” আমি ওদের মেরে ফেলতে বলিনি। অনাথ আশ্রমে রেখে আসার কথা বলেছিলাম।মেজো ভাইজান শোনেননি। সে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। আব্বাজান আদেশ করেছিলো বাচ্চা দুটিকে মেরে ফেলার।”
” যে লোকটা তোমার সন্তানদের মেরে ফেলতে চাই,তুমি তাদের সম্বোধন করে কথা বলছো হুমাইরা?? ছিঃ তুমি মা নামে কলঙ্ক। …………. একবারো ভেবেছো সেদিন যদি তোমার বড়ো ভাইজান আমাকে ফোন করে খবর না দিতো, যদি আমি খবর পেয়ে সময় মতো তোমার বাড়ি না পৌঁছাতাম, তাহলে আজ আমার ছেলে-মেয়ে দুটো পৃথিবী তে বেচে থাকতো না। তোমরা ওদের মেরে দিতে।”
” এভাবে বলো না ইশতিয়াক। আমি আর নিতে পারছি না।” হু হু করে কাঁদতে থাকে হুমাইরা বেগম।
” এই চোখের জলের নাটক বন্ধ করো হুমাইরা।আমি তোমায় সহ্য করতে পারছি না।”
” একটা বার আমার সন্তানদের দেখতে দাও ইশতিয়াক। কেমন দেখতে হয়েছে একবার দেখি।”
” তোমার সন্তান??? সেদিন যাদেরকে আমি তোমাদের বাড়ি থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছিলাম তারা আমার আর বুশরার সন্তান।”
” জন্ম তো আমি দিয়েছি।”
” ওইটাই তো ওদের আফসোস। যে কেনো ওরা তোমার মতো মহিলার পেটে জন্ম নিয়েছে।”
” ওরা জানে সবটা??কি নাম ওদের??”
” যে তোমার মুখ ও দেখতে চাই না তাদের নাম জেনে কি করবে হুমু?? ……সরি হুমাইরা।”(গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)
” ফুফু ফুফু ” আরফিন ছুটতে ছুটতে হুমাইরা বেগমের কাছে আসে।
” কি কি হয়েছে??” চোখের জল মুছে উওর দেয় হুমাইরা বেগম।
” তুর্য…… বাইরে….”
” কি হয়েছে তুর্যের?? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে হুমাইরা বেগম।
” তু….তুমি এক্ষুনি চলো বাইরে”
(শব্দ সংখ্যা –১৩৭১)
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা