গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা। #পর্ব:- ৩৬
রিং রিং
” হ্যালো”
” ইয়ানা বলছো??”
” আরফিন??”
” হুম। একটু কথা ছিল………”
” তোমার মত মানুষের সাথে কোনো কথা নেই আমার।”
” প্লীজ ইয়ানা একটা বার আমার কথাটা শোনো…….”
” বললাম তো আমার সাথে তোমার কোনো কথা নেই।……”
” আম……”
ইয়ানা ফোনটা কেটে দেয়। পিছন ফিরে ইশা কে দেখে থমকে দাঁড়ায় সে।
” আপু তুমি??”
” আরফিন তোকে ফোন কেনো করেছিলো ইয়ানা??”
” না মানে….”
” কি লুকাছিস ইয়ানা?? আর তুই বা সেদিন তালুকদার বাড়ি থেকে এলি কেন??”
“আপু আসলে……”
” কি আসলে??”
“আসলে আমি……আমি”
” কি আমি বল??”
“আমি আরফিন কে বিয়ে করেছি”
” মানে?? তুই কি বলছিস তোর কোনো ধারণা আছে ইয়ানা??”
” হ্যাঁ আপু। আমি ঠিকই বলছি।”
ঠাসঠাস
” তোর একবারো লজ্জা করলো না সব জেনে শুনে ওই আরফিন কে বিয়ে করতে??কেনো করেছিস বল??”
” আমি চেয়েছিলাম ভালোবাসার মানুষ ধোঁকা দিলে কেমন লাগে সেটা ওকে বোঝাতে।”
” আর ইভান ঈশান?? ওরা তোকে বিয়ে করতে দিলো??”
” বিগ ব্রো আর ভাইয়া আমাকে অনেক বার বুঝিয়েছিলো বিয়েটা না করার জন্য। কিন্তু আমি আমার জেদ থেকে সরে আসিনিবলেছিলাম আমার কথা না শুনলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। শেষমেশ ওরা আমার জেদ মানতে বাধ্য হয়েছিলো।……তালুকদার বাড়ি না গেলে ওদের বিজনেস সিক্রেট গুলো কি করে লিক করতাম বলো?? ওদের সবাইকে কি করে পথে বসাতাম??”
” আর তুই?? একবারো নিজের কথাটা তুই ভাববি না?? হ্যাঁ রে বিয়ে যখন হয়েছে তাহলে কি……তোর আর আরফিনের মধ্যে……ফিজিক্যাল….”
” কি.……সব বলছো আপু??”
” মুখ লুকাচ্ছিস কেনো?? তাহলে কি সত্যি তোদের মধ্যে……”
ইয়ানার নীরবতায় নিজের উওর পেয়ে যায় ইশা। মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়ে বিছানায়।
” তুই কি বলছিস তুই জানিস?? কেনো করলি এমন??”
” আমি আটকাতে চেয়েছিলাম আপু কিন্তু আরফিন শোনেনি। আমি ভেবেছিলাম কয়েক মাসেরই ব্যাপার কোনো অসুবিধা দেখিয়ে ওনার থেকে দূরে থাকবো আর প্রতিশোধ নিয়ে ফিরে চলে আসবো।আমি বুঝতে পারিনি যে আরফিন আমার অনুরোধ রাখবে না।”
” তোর বুদ্ধি দেখে আমি মূর্ছা যাচ্ছি।এতো বড়ো ভুল কেও করে??”
” তুমিও তো ভুল করেছিলে আপু, নির্মল ভাইয়ার বদলে আরফিন কে ভালোবাসাটা তোমার ভুল ছিলো না বলো??”
” আমার ব্যাপার টা আলাদা ইয়ানা। আমি নির্মল কে কোনোদিনও সেই নজরে দেখিনি। আমি প্রথম থেকে শুধু মাত্র আরফিন কেই ভালবেসেছিলাম। নির্মল আমার কাছে ভালো বন্ধু ও জুনিয়র ছাড়া আর কিচ্ছু নয়। নির্মল বরাবর একটু চুপচাপ স্বভাবের,ও যে আমায় ভালোবাসে সেটা আমি কোনোদিনও বুঝতে পারিনি। আরফিনের মিষ্টি কথায়, যত্নে আমি ওকে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। বয়সের ব্যবধান আমাদের মনে কোনো দাগ কাটতে পারেনি। আমি আরফিন কে বিশ্বাস করতাম। কিন্তু ও যে আমাকে এইভাবে ঠকাবে সেটা আমার স্বপ্নেও ভাবিনি আমি।”
” মানে কি বলতে চাইছো??”
” আমি যে ভুল করেছি সেটা না জেনে করেছি,সেই ভুলের জন্য গায়ে আগুন দিয়ে নিজেকে শেষ পর্যন্ত করতে গেছি।কিন্তু তুই তো জানতিস যে আরফিন কেমন তারপরেও তুই কেনো ওকে বিয়ে করতে গেলি??”
ইয়ানা চুপ করে থাকে। ইশার প্রশ্নের উত্তর হয়তো ইয়ানা জানে। ইয়ানা কে চুপ থাকতে দেখে মনে সংশয় আসে ইশার।
“তুই আরফিন কে ভালবাসিস ইয়ানা??”
আপু কথায় চোঁখ বড়ো বড়ো হয়ে যায় ইয়ানার কি উওর দেবে সে?
” কি হলো উওর দে, ভালবাসিস তুই ওকে??”
” ন……ন……না মোটেও না।”
” তাহলে উওর দিতে এতো সময় কেনো লাগলো??”
” জানি না আপু। আমার মাথাটা বড্ড ধরেছে। আমি একটু ঘুমাবো।”
ইয়ানা চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে। ইয়ানার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে আসে ইশা।
____________
” কোথাও কোনো খোঁজ পেলি ঈশান??”
নিজের রুমে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ড্রিংক করছিলো ঈশান। একহাতে তার জ্বলন্ত সিগারেটটা আশট্রেতে গুঁজে দিয়ে সামনে তাকায় সে।
উস্কো খুস্কো চুল,লাল চোখ যেনো অনেক্ষণ ধরে অশ্রুপাত করেছে। ভাইয়ের এইরূপ দেখে চমকে ওঠে ইভান।
” আমার বাচ্চাটার কি হবে ভাইয়া?? আমার মেহেকের কি হবে?? এই অবস্থায় ও কোথায় চলে গেলো ভাইয়া?? আমার ভুলের শাস্তি ও নিজেকে দিচ্ছে কেনো বলতে পারো??”
হাউ মাউ করে কাঁদছে ঈশান। আজ হয়তো ঈশান কে দেখলে যে কেউ ভাববে যে একজন পুরুষ মানুষ হয়ে কি করে এভাবে কাঁদতে পারে?
” শান্ত হ ঈশান কারোর কিচ্ছু হবে না।আমি ঠিক ওদের খুঁজে বের করবো। তুই শান্ত হ ভাই।” ভাইয়ের মাথায় বুলিয়ে বলে ইভান। তার নিজেরও বার বার ভেতরটা কেঁপে উঠছে। চোঁখ দিয়ে জল বেরোতে চাচ্ছে,কিন্তু এই সময় যদি সে ভেঙে পরে তাহলে তার পরিবার কে কেও সামলাতে পারবে না।
।
।
।
।
দেখতে দেখতে আজ প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেছে তবুও মুগ্ধ আর মেহুর কোনো খোঁজ মেলেনি। চৌধুরী ম্যানসনের আবহাওয়া আগের থেকে এখন অনেক পরিবর্তীত।
ঈশান স্ত্রীর চিন্তায় খাওয়াদাওয়া সব ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাকে হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছে। অন্য দিকে ইভানও পাগল প্রায়।এমন কোনো জায়গা সে বাকি রাখেনি যেখানে মুগ্ধ কে খুঁজতে বাকি আছে। মুগ্ধ কে ছাড়া এক মুহুর্ত শ্বাস নেওয়াও যেনো তার জন্য দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
ইশা ছেলে কে নিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছে। সে চাইনা তার ছেলে কখনো তার অতীত সম্পর্কে জানুক,তাই তার এই সিদ্ধান্ত।
আরফিন নিজের অতীতে করা কার্যে বড়োই অনুতপ্ত। হাজারোবার ইভান আর ইশার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে সে,কিন্তু তাকে ইভান ক্ষমা করেনি। নিজের লোকডের দিয়ে এমন মার খাওয়া করায় যে আধ মরা করে ছাড়ে আরফিন কে। বর্তমানে নিজের পায়ে চলার ক্ষমতা সারাজীবনের জন্য হারিয়ে হুইলচেয়ারই একমাএ সঙ্গী তার। এখন তার বাস বস্তি এলাকায়। তালুকদারদের ভরাডুবির পর আর তাদের যৌথ পরিবার নেই। যে যার মতো করে কোনোরকমে দিন যাপন করছে। ইশতিয়াক সাহেব কে তার কোনো ছেলেই নিজের সঙ্গে নেননি বর্তমানে তার ভিক্ষা করেই জিব যায়। পাপের ফল হয়তো এটাকেই বলে।
হামিদুল সাহেব স্ত্রীর সঙ্গে গ্রামে থাকেন এখন। আরফিনের সাথে তিনি সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।তাই আরফিন কে এখন বস্তিতেই কোনোরকমে দিন যাপন করতে হয়। ওষুধ কেনার টাকাটাও তার কাছে নেই। বস্তির বাচ্চা দের পড়িয়ে যা পাই তাতে খালি দুবেলা কোনোরকমে পেতে ভাত জোটে। যে ছেলে আগে দুই হাতে টাকা উড়াতো সেই ছেলে যে এইভাবে জীবন কাটাব তা হয়তো কোনদিন কেউ ভাবেনি।
আজ দুই মাস হলো ইয়ানা আর আরফিনের ডিভোর্স হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে বস্তিতে এসে দূর থেকে দেখে আরফিন কে ইয়ানা। কেনো এমন করে তার কোনো ব্যাখ্যা হয়তো ইয়ানার কাছে নেই। ভালোবাসা হয়তো এটাকেই বলে যেখানে শত ভুলের পরেও কেউ ভালোবাসার মানুষটার ক্ষতি চাইতে পারে না।
” কই যাবেন আপা??”
আরফিনের ঘরের পিছনের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছিলো ইয়ানা। পিছন থেকে অপরিচিত ডাকে চমকে ওঠে সে।
” কি আপা বল্লেন না কই যাবেন?? কারে খুজতাসেন??”
” কা…কাও কে না ভাইয়া। আসলে….”
“কাউরে না বললেই হইবো?? প্রতি সপ্তাহে এহানে আপনি আইসা আমাগো আরফিন মাস্টারের ঘরের ভিতর উঁকি ঝুঁকি মারেন ক্যান??কি ভাবছিলেন আমরা কেও বুঝবো না??”
বাইরে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে হুইল চেয়ার ঠেলে জানলার কাছে এগিয়ে আসে আরফিন।
“কি হয়েছে জব্বার মিয়া?? বাইরে এতো হল্লা কিসের??”
” এই দেখেন মাস্টার এই মাইয়া আপনার ঘরের ভিতর উঁকি ঝুঁকি মারতাছিলো ”
” কে তাকে নিয়ে আসেন ভিতরে।”
জব্বার মিয়া ইয়ানা কে নিয়ে ভিতরে আসেন। ইয়ানা কে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় আরফিন। আজ কতো দিন পর সেই চোখ সেই মুখ দেখছে সে। এই মুখের এতো মায়া কেনো আগে তার চোখে ধরা পড়েনি??কেনো তার জীবনটা এতো জটিল হলো?? হিংসা যে কি পরিমাণ ক্ষতিকর তা আজ হারে হারে টের পাচ্ছে সে। কিন্তু আফসোস, আফসোস করেও আজ আর কোনো কিচ্ছুই ঠিক হওয়ার নয়।(গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)
_____________
পাহাড়ের বুকে ছোট্ট একটি গ্রাম। মিষ্টি রোদ আর শীতল বাতাস যেনো প্রকৃতির সৌন্দর্য কে আরও বৃদ্ধি করেছে। গ্রামে জনসংখ্যা বলতে গেলে খুবই কম।
গ্রামেরই একটা বাড়ীতে এক বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছে দুই বোন মুগ্ধ ও মেহু। মেহুর এখন পাঁচ মাস পড়েছে আর মুগ্ধের চার মাস চলছে। নিজে গর্ভবতী হয়েও বোনের যত্নে কোনো ত্রুটি রাখছে না মুগ্ধ।
“আর কত খাওয়াবে আপাই, পেট এবার ফেটে যাবে তো।”
” চুপ কর তো। এই সময় ভালো ভালো না খেলে হবে?? ডাক্তার কি বলেছে মনে আছে?? বাচ্চা দুর্বল আছে,ভালো খবর খেতে হবে।”
” ডাক্তার না ছাই। ও তো আসে খালি তোমায় দেখতে।”
” আবার ফালতু কথা বলছিস তুই?? তোকে না বলেছি এসব বলবি না। আজ সাজিদ ভাইয়া ছিলেন বলেই সেদিন অতো রাতে আমরা সেফলি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম। কোথায় যাবো কি খাবো সেই চিন্তা করতে হয়নি।”
” সে অতো সাহায্য কেনো করেছে তা কি আর আমি জানি না?? তোমার মনে নেই সাজিদ ভাইয়া কেমন পাগল ছিলো তোমার জন্য?? আমাদের পাড়ার প্রায় সবাই জানতো সাজিদ ভাইয়া তালুকদার দের বড়ো নাতনির জন্য পাগল হয়েছে।” খিল খিল করে হেসে ওঠে মেহু।
বোনকে এমন করে হাসতে দেখে প্রশান্তির হাসি হাসে মুগ্ধ।এই হাসি যেনো কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো তার ছোট্ট বোনটার জীবন থেকে।
” কোথায় হারালে আপাই??”
বোনের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ে মুগ্ধের।
” কোথায় আর হারাবো??”
” কেনো সাজিদ ভাইয়ার ভাবনায়??”
” মার খাবি মেহু।ফাজলামি হচ্ছে আমার সাথে??”
” বাহ্ রে ফাজলামি কিসের?? উনি তো আজও তোমায় পছন্দ করেন।একটা সুযোগ দিয়েই দেখো না।”
” মেহু!! কি বলছিস মাথার ঠিক আছে?? তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি……”
” বিবাহিত?? যে সম্পর্ক কে ফেলে এসেছো তার জন্য কেনো নিজের বাকি জীবনটা নষ্ট করবে আপাই?? ওই চৌধুরী বাড়ির কোনো ছেলেই ভালো না।”
” একটু ভুল বললি তুই মেহু। ইভান ভালবাসতে জানেন, হতে পারে ওনার ভালোবাসার পদ্ধতি বাকিদের থেকে আলাদা কিন্তু ওনার মতো করে আমাকে কেও কোনোদিনও ভালবাসতে পারবে না।আমাকে কষ্ট দিয়ে উনি নিজের শরীর ক্ষতবিক্ষত করেছেন। গোটা গায়ে আঘাত করেছেন নিজের। যে আমার দিকে কুনজর দিয়েছে তার জীবন তিনি এক প্রকার কেড়ে নিয়েছেন। আমি ওনার অস্তিত্বে মিশে আছি। আমি বিনা উনি নিঃস্ব, মুগ্ধ বিনা ইভান চৌধুরী নিঃস্ব।”
” এতো ভালোবাসো যখন কেনো তাকে ছেড়ে এলে আপাই??”
” বোঝাতে যে ওনারই স্ত্রী আমি ওনার সমান রাগ জেদ আমারো আছে। অনিচ্ছাকৃত হলেও উনি আমায় যে কষ্ট দিয়েছিলেন সেই কষ্টে তাকেও পোড়াতে আমার তাকে ছেড়ে আসাটা দরকার ছিলো।”
” তোমার মনে হয় ইভান চৌধুরী তোমায় খুঁজবে আপাই?? একটা টাইম পর তো সেও হাল ছেড়ে দেবে তখন কি হবে??”
” ইভান চৌধুরীর শরীরে যতোদিন প্রাণ থাকবে ততদিন সে তার প্রাণ প্রেয়সী কে ব্যাকুল হয়ে খুঁজবে। বক্ষ মাঝে আমায় না চেপে ধরা অব্দি ওনার শান্তি হবে না মেহু।”
” এতো টাই সিওর কি করে তুমি আপাই??”
” আমার স্বামী কে আমি চিনবো না?? সেটা কি কখনও হতে পারে??”
” ভিতরে আসতে পারি ম্যাডাম??”
হঠাৎ এক পুরুষালী কণ্ঠে পিছন ফিরে তাকায় ওরা। ব্যাক্তি টিকে দেখে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে দুজনার।
শব্দ সংখ্যা:- ১৫১০
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা
গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:-#রাইমা।#পর্ব :-৩৭
🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀
“এই অভাগা কে দেখতে আসার কারণ জানতে পারি?? প্রক্তনের জন্য মন কাঁদছিলো বুঝি?”
” বলতে পারেন শেষ দেখাটা দেখতে এসেছি।”
“শেষ দেখা??”
” সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে আমার বিয়ে।”
” ওহ্……. অভিনন্দন, তোমার আগামী জীবন সুখময় হোক।”
” সে তো হবেই। আমার হবু স্বামী আর যাইহোক আপনার মতো ঠকবাজ ও চরিত্রহীন নয়।”
” তাহলে এই চরিত্রহীন কে কেনো সপ্তাহে অন্তত একবার দেখতে আসো ইয়ানা? কেনো এই ঠকবাজ কে ওষুধ পাঠাও??”
” দয়া দয়া করি আপনার ওপর।”
” আমি তো চাইনি তোমার দয়া। তাহলে কেনো??”
আরফিনের কথায় উত্তর হিসাবে নীরবতায কেই বেছে নেয় ইয়ানা।
” একবারো কি ক্ষমা করা যায় না আমায়?? সব ভুলে নতুন করে শুরু …….”
” ভুলের ক্ষমা হয়, অন্যায়ের নয়। আর সেখানে আপনি তো পাপ করেছেন,ক্ষমার আশা করছেন কি করে??”
“কথাটা কি মন থেকে বলছো তুমি ইয়ানা??”
” হ্যাঁ বলছি মন থেকে।”
” অস্বীকার করতে পারবে যে তুমি আমায় ভালবাসো না??”
” বা……বাসিনা।”
” অন্য কাউকে বিয়ে করার সময় আমার মুখটা কি একবারের জন্যও তোমার চোখের সামনে ভেসে উঠবে না??”
“এই দেখাটা আমাদের শেষ দেখা। আর কোনদিন হয়তো আর সামনাসামনি দেখা হবে না………”
কথা গুলো বলতে গিয়ে গলা কেঁপে ওঠে ইয়ানার। মাঝে মধ্যে নিজের জন্য বড্ড ঘৃণা হয় ইয়ানার। কেনো সে দূর্বল হয়ে পড়লো আরফিনের জন্য?? সে তার আপুর সাথে কি করেছে সেটা জেনেও কি করে ভালোবাসতে পারলো সে আরফিন কে?? কিন্তু কথা তে আছে না, কাউকে ভালোবাসা আমাদের হাতে থাকে না কিন্তু সেই ভালোবাসা থেকে দূরে সরে আসা আমাদের হাতে থাকে। সেটাই করবে ইয়ানা। আবেগে ভেসে দিন দুনিয়া ভোলার বয়স সে অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছে। আরফিনের কথায় হুশ ফেরে ইয়ানার।
” নিজেকে শেষ করা কি খুব কষ্ট সাধ্য??”
” সেটা তাদের কে জিজ্ঞেস করুন যারা আপনার জন্য নিজেকে শেষ করেছে।”
ইয়ানা সেখান থেকে হন হন করে চলে যায়। তার যাওয়ার দিকে ব্যাথিত চোঁখে তাকিয়ে থাকে আরফিন।
_____________
“ভিতরে আসতে পারি ম্যাডাম??”
হঠাৎ এক পুরুষালী কণ্ঠে পিছন ফিরে তাকায় ওরা। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে দুজনার।
” আর সাজিদ ভাইয়া আসুন আসুন। আপাই আপনার কথায় বলছিলো।”
ইয়ানা চোঁখ টিপ দেয় মুগ্ধ কে। মুগ্ধ চোখ রাঙাই উত্তরে।
” আমার কথা?? তাহলে তো আজ আমার বড়ো সৌভাগ্যের দিন। কি বলো মুগ্ধতা??” সাজিদ বলে।
” অ্যা?? না মানে ওই…… আপনি ওর কথায় কান দেবেন না তো সাজিদ ভাইয়া।”
” তা কান না দিলে কি চলে গো?এখন শরীর কেমন আছে মেহেক??”
” আগের থেকে বেটার ভাইয়া।”
” আর আমার সুপার ম্যান কি করছে??”
” আপনার সুপার ম্যান আমার পেটে এখন ঘুমাচ্ছে।”
” নেক্সট উইকে ছয় মাসে পরবে,তোমাকে কিন্তু খুব সাবধানে থাকতে হবে এখন থেকে।”
” আর হ্যাঁ সাজিদ ভাইয়া মেহু কিচ্ছু খেতে চাইছে না, না খেলে কি করে কি হবে বলো তো?” মুগ্ধ বলে।
” না মেহেক ভালো খাবার খেতে হবে, একেই আমার সুপার ম্যান কিন্তু একটু দূর্বল আছে।এইসময় অনিয়ম করা একেবারে উচিত নয়। ভালো খাবে আর ভালো থাকবে।”
” ভালো থাকা থেকে মনে পড়লো ভাইয়া আপনাকে যে কাজটা বলেছিলাম সেটা হয়েছে??” মেহু বলে।
” হ্যাঁ অর্ধেকটা হয়ছে।”
” বাকি টা??”
” বাকিটাও তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।”
ওদের কথায় অবাক হয়ে ভুরু কুঁচকে আসে মুগ্ধের।
” কি কাজের কথা বলছিস তোরা??”
” শুভ কাজ। সময় হলে সবার আগে তোমায় জানাবো আপাই।”
” আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি এখন চলি। আর মুগ্ধতা তুমিও সাবধানে থাকবে। ভুলে যাবে না তুমিও কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা।আর হ্যাঁ এখানের আশে পাশের কয়েকজন তোমার বানানো সোয়েটার গুলো খুব পছন্দ করেছে। বলেছে আরোও কয়েকটা তারা কিনবে।”
” সত্যি বলছেন সাজিদ ভাইয়া??”
” মিথ্যা বলে লাভ??তুমি বানিও তারপর আমি তাদের বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসবো।এখন চলি, চেম্বারে যেতে হবে অনেক কাজ আছে।”
সাজিদ সেখান থেকে চলে যায়।দুই বোন ব্যাস্ত হয়ে পড়ে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে।
।
।
।
।
সময়ের প্রবাহে আরো এক মাস অতিবাহিত হয়।আজ ইয়ানার বিয়ে। খুবই ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে চৌধুরী ম্যানসনে। ঈশান কে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে এলেও এখনো সে সম্পূর্ণ সুস্থ না। বাড়ির এই অবস্থা তে কারোরই এই মুহুর্তেই বিয়ের আয়োজন করার ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু বুশরা বেগমের জোড়াজুড়ি তে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ইশতিয়াক সাহেব ঘরোয়া ভাবে হলেও মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছেন। বুশরা বেগম যথেষ্ট বিচক্ষণ একজন মানুষ। আরফিনের প্রতি মেয়ের ক্রমবর্ধমান আবেগ তার চোঁখ এড়ায়নি। দ্বিতীয় বার মেয়ে কে কোনো প্রকার বোকামী তিনি করতে দেবেন না।
” বউ জান মেয়ের বিয়ে তো হয়ে গেল।এবার তো চিন্তা মুক্ত।” ইশতিয়াক সাহেব বলেন।
” কোথায় আর চিন্তা মুক্ত হতে পারলাম চৌধুরী সাহেব? দুই মেয়ের না হয় বিয়ে হয়ে গেলো,বড়ো মেয়েও নিজের জীবন বাচ্চা কে নিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে।কিন্তু আমার ছেলেরা?? দুই ছেলের জীবন তো উথাল পাথাল হয়ে রয়েছে। ওদের জীবনে সুখ ফিরে না আসা না আসা অব্দি আমার মন শান্তি পাবে না চৌধুরী সাহেব।”
” ওরা যা করেছে তারই ফল পাচ্ছে। তবে আমার বিশ্বাস মুগ্ধ ইভানের জীবনে আবার ফিরবে।”
” আর মেহেক??”
টুং টুং টুং টুং
তাদের কথার মাঝেই দরজায় কলিং বেল বেজে ওঠে। কাজের খালা গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
” কে এসেছে আপা??” বুশরা বেগম বলেন।
” কেও আসেনাই ভাবী।ওই একহান চিঠি আইসে।”
” চিঠি?? কার চিঠি??”
বুশরা বেগম খাম খুলে দেখেন। যা দেখে তার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। ধপ করে বসে পড়ে সোফায়
” কিসের চিঠি??”
“ডি …ডিভোর্স লেটার।”
” মানে?? কে পাঠিয়েছে??”
” মেহেক।”
(গল্পের আসল লেখিকা রাইমা)
____________
দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় চাল ডাল কিনতে হুইল চেয়ার ঠেলে বাজারে এসেছে আরফিন। দোকান থেকে বেরিয়ে আসতেই রাস্তার ওপারে একটা আইসক্রিমের দোকানের দিকে চোখ যায় তার।
দেখে এক কাপল হাসতে হাসতে গল্প করছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। হয়তো বা তারা স্বামী স্ত্রী নতুবা প্রেমিক প্রেমিকা। ভালোবাসা দেখতেও কতো সুন্দর। বড্ড আফসোস হচ্ছে আরফিনের,আজ যদি সে ইশার সাথে অন্যায় না করতো তাহলে বর্তমানের ছবি অনেকটা আলাদা হতো। নির্মল হয়তো ইশার সাথে সুখে থাকতো, একজন মা কে ছেলে হারা হতো না, মেহুর সাথে তার ভালোবাসা হয়তো পূর্ণতা পেতো, বা হয়তো ইয়ানার সাথে তার একটা ছোট্ট সংসার হতো, যে যার জীবনে বড্ড সুখী হতো। ‘সুখী’ ইদানিং আরফিনের বড়ো ইচ্ছা যায় সুখী হতে। ইয়ানা কে নিয়ে সুখে সংসার করতে বড্ড বেশী ইচ্ছা যায় তার।
আপন খেয়ালে অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তা পার হচ্ছে সে।মনে তার বড্ড আফসোস।আজ হয়তো ওদের জায়গায় সে ও ইয়ানা থাকতে পারতো। জীবনের সমীকরণ গুলো হয়তো আজ অন্য রকমও হতে পারতো।একটা হিংসার বশে করা ভুলের জন্য এতো গুলো মানুষ এত গুলো জীবন আজ বিক্ষিপ্ত।
উল্টো দিক থেকে একটা ট্রাক সজোড়ে পিশে দিয়ে যায় এক জীবনের কাছে হেরে যাওয়া নিঃসঙ্গ দোষী কে। শেষ হয় প্রতিশোধের খেলা ও এক পাপীর জীবন।
ধীরে ধীরে চারিদিকে লোক জড়ো হতে থাকে। কেউ এম্বুলেন্স ডাকছে তো কেউ পুলিশে ফোন করেছে। আবার অনেকে মোবাইল এ ভিডিও করছে। ভাগ্যের কি পরিহাস, একদিকে ইয়ানা ও মেহেকের নতুন জীবন হলো শুরু আরেকদিকে আরফিনের জীবন হলো সাড়া।
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা