গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:-#রাইমা।#পর্ব :-৩৮
🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀
“তুই ঈশান কে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিস মেহু??” রাগান্বিত স্বরে বলে মুগ্ধ।
” হ্যাঁ পাঠিয়েছি”
” কেনো??”
” মুক্তি পেতে।”
” সব কিছু এতোই সহজ??”
” সব কিছু অতো কঠিনও নয়।”
” আর তোর বাচ্চাটা?? তার কি হবে??”
” সে তার মায়ের কাছেই বড়ো হবে।”
” একজন বাচ্চার জন্য তার মায়ের ভালোবাসার সাথে সাথে বাবার স্নেহ ও সমান পরিমাণে দরকার।”
” যে বাবা জন্মানোর আগেই সন্তান কে অস্বীকার করে সেই বাবার দরকার জীবনেও লাগে না।”
” বাচ্চামো করছিস তুই মেহু, ভবিষ্যৎ ভাবছিস না……”
” আমার জীবনের এইটুকু সিদ্ধান্ত কি আমি নিতে পারবো না আপাই?? এই অধিকারটাও কি আমার নেই??”
” ছেলেটা মরে যাবে মেহু তোকে ছাড়া। এই তো একমাস পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলো,এখনো সে সুস্থ নয়। এর মধ্যে কি এই সবের খুব দরকার ছিলো??”
” হাসপাতাল?? কে হাসপাতালে ভর্তি ছিলো?? কার কথা বলছো তুমি আপাই??”
” ঈশান। আমরা চলে আসার পর ঈশান নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তোকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে চিন্তায়, আত্মগ্লানি ও অপরাধ বোধে তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে সে। খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিয়েছে, অবস্থা খুব করুণ। ইভান অনেক কষ্টে ঈশান কে সামলাচ্ছে। পায়ে চলার ক্ষমতা টুকুনিও ঈশানের শরীরে নেই মেহু।”
” তুমি আমাকে আগে বলোনি কেনো??”
” আজ কে ওই আম্মু কে বাজারের দোকান থেকে কল করেছিলাম। সেই বললো সবটা। আ…… আর……আরেকটা কথাও আছে।”
” কি???”
” ভ…ভাইয়া আর বেঁচে নেই।”
বহু কষ্টে নিজের কান্না আটকে কথাটা বলে মুগ্ধ। যতই দোষী হোক না কেন আরফিন তো তার আপন বড়ো ভাই।সেই বড়ো ভাইয়ের মৃত্যুর খবর একমাস পর সে জানতে পারছে। ভেতরটা যেনো কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে তার। ভাইয়াটাকে শেষ দেখাটাও সে দেখতে পেল না।
মুগ্ধের কথা শুনে অন্তরটা যেনো কেঁপে ওঠে মেহুর। এটা কি শুনলো সে?? ঠিক শুনলো?? আরফিন ভাইয়া আর বেঁচে নেই?? ধপ করে বিছানায় বসে পরে মেহু। চারপাশ কেমন শূন্য শূন্য লাগছে তার। ভাগ্যে পরিণাম হিসাবে বিচ্ছেদ থাকলেও একসময় তো ওই মানুষটাকেই নিজের প্রাণের চাইতেও বেশী ভালোবেসে ছিলো মেহু।আজ হয়তো মনে কোনো ভালোবাসা নেই,কিন্তু একটা স্মৃতি জড়িত আবেগ, সেটা তো থাকবেই।
মেহু কে ওইভাবে বসে পড়তে দেখে ওর কাছে এগিয়ে আসে মুগ্ধ।
” সাবধানে মেহু। ঠিক আছিস? কি হয়েছে মেহু? কথা বল।”
” আরফিন ভাইয়া………”
ডুকরে কেঁদে ওঠে মেহু। মেহু কে কাঁদতে দেখে নিজেকে আর শক্ত করে ধরে রাখতে পারে না মুগ্ধ,বোন কে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দেয় সে।
এক জরুরি দরকারে ওদের কাছে আসছিলো সাজিদ। দরজার কাছে এসে পৌঁছাতেই ভেতর থেকে এমন কান্নার আওয়াজ পেয়ে ভয় পেয়ে যায় সে। তড়িঘড়ি করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে।
” কি হয়েছে মুগ্ধতা?? এভাবে কাঁদছো কেনো??”
সাজিদের কথায় মুখ তুলে তাকায় মুগ্ধ। চোঁখের জল মুছে নিজেকে সামলানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে।
” কি হয়েছে?? তোমরা দুজনে এভাবে কাঁদছো কেনো?? শরীর খারাপ নাকি??”
” কি….কিছু না।আপনি এই সময়??”
” একটা সিরিয়াস খবর আছে।”
” কি??”
” ঈশান কে আবার হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছে। অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।”
” মানে???”
” আমার মনে হয় মেহেকের একবার যাওয়া উচিত।”
ওরা মেহেকের দিকে তাকায়। মেহেকের শরীরটা কেমন আনচান আনচান করছে। এই অবস্থায় এতো স্ট্রেস সে নিতে পরছে না।
” এই অবস্থায় অতোটা জার্নি করতে পারবে ও???”
” আমি পারবো আপাই। আমি যাবো। আমাকে নিয়ে চলো।”
” সাজিদ ভাইয়া আপনি তাহলে মেহু কে নিয়ে রওনা দিন।”
” আর তুমি মুগ্ধ??”
” পরে ঠিক যাবো। এদিকে তো হঠাৎ সব ফেলে যাওয়া যাবে না। আপনারা আর দেরী করবেন না।”
” আচ্ছা।সাবধানে থেকো।”
সাজিদ মেহু কে নিয়ে রওনা দেয় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
______________
” ডক্টর আমার ছেলের কি অবস্থা??” উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন বুশরা বেগম।
” এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।আমরা আমাদের পুরোটা দিয়ে চেষ্টা করছি কিন্তু..”
” কিন্তু কি??”
” কিন্তু মনে হচ্ছে হয়তো পেশেন্ট নিজেই বাঁচতে চাইছে না।”
ইভান তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের কলার চেপে ধরে বলে ওঠে, ” লিসীন ডক্টর আমার ভাই কে আমি সুস্থ দেখতে চাই। তার জন্য যত টাকা লাগে লাগুক বাট আই ওয়ান্ট টু সি হিম ফিট এন্ড ফাইন। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড??”
” উই উইল গিভ আওয়ার বেস্ট মিস্টার ইভান।”
ডাক্তার কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে সরে পরে সেখান থেকে।
হঠাৎ এক নারীর তীব্র চিৎকারে চমকে পিছনে ফিরে তাকায় চৌধুরী বাড়ির সবাই। দেখে স্ট্রেচারে করে সেই মেয়ে কে নিয়ে এগিয়ে আসছে দুই জন হাসপাতালের স্টাফ। ইভানের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পায় যে মেয়েটি আর কেউ নয় তাদেরই বাড়ির ছোটো বউ মেহেক।
গাড়ী করে আসার সময় শারীরিক ও মানসিক চাপ সহ্য করতে পারেনি মেহুর শরীর। গাড়িতেই হঠাৎ জল ভেঙে যায় তার। প্রচণ্ড প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করছে সে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ওটি তে নিয়ে যাওয়া হয়।বাইরে সবাই চিন্তিত কোথা থেকে কি হলো কেউ বুঝতে পারছে না।
” মেহেক এখানে এলো কথা থেকে??”
” আমি বলছি মিস্টার ইভান।” সাজিদ এগিয়ে এসে বলে।
” আপনি??”
” আমি সাজিদ। মুগ্ধতা আমাকে চেনে।”
” মুগ্ধ?? আপনি আমার মুগ্ধ কে কি করে চেনেন??”
” আগে আমার ফ্যামিলি ওদের পাড়ায় থাকতো। আমার মনে হয় এখন মুগ্ধতা আমাকে কি করে চিনলো এইটার থেকেও বেশি ইম্পর্টেন্ট মেহেকের সম্পর্কে জানাটা।………… মেহেক এখানে মোটেও ফিরতে চাইনি।ফিরেছে শুধু ঈশানের কথা শুনে।”
” এতোদিন কোথায় ছিলো সে?? এদিকে আমার ছেলেরা ওই দুই বোনের জন্য শেষ হয়ে যাচ্ছে আর অন্যদিকে তারা তো দিব্যি সুখেই আছে।” বুশরা বেগম চিৎকার করে বলে ওঠেন।
উত্তরে মুচকি হাসে সাজিদ। তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে ওঠে,” একটু ভুল বললেন ম্যাডাম, সুখে আপনার বৌমারা ও ছিলো না। না নিজের স্বামীদের কাছে আর না নিজের স্বামীদের থেকে দূরে।………… আপনারা হয়তো জানেন না মেহেকের বাচ্চাটা খুবই দূর্বল। তারপর আবার আট মাসে পরার আগেই জল ভেঙে গেছে। মানে বেবি প্রি ম্যাচিউর হবে। ডক্টর তাকে অনেক সাবধানে থাকতে বলেছিলো তবুও এই অবস্থা তে সে এতোটা পথ জার্নি করে এসেছে শুধু মাত্র আপনার ছেলের জন্য,তার স্বামীর জন্য। মেয়েরা বড়োই অদ্ভুত জানেন তো, এরা স্বামীর ওপর অভিমান করে দূরে সরে যেতে পারলেও সেই স্বামীরই কোনো কষ্টের কথা শুনলে তারাই পাগলপ্রায় হয়ে ওঠে।”
তাদের কথার মাঝখানে ওটি থেকে এক ডাক্তার বেরিয়ে আসে।
” পেশেন্টের কি অবস্থা ডাক্তার??” ইভান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।
” সিচুয়েশন খুবই ক্রিটিক্যাল। মা ও বেবির মধ্যে একজন কেই বাঁচানো সম্ভব।”
ডক্টরের কথা শুনে ধপ করে পাশের চেয়ারে বসে পরেন বুশরা বেগম।
” প্লীজ একটু তাড়াতাড়ি ডিসিসন নিন। আপনারা কাকে বাঁচাতে চাইছেন।”
” মিঃ ইভান আপনার ভাইয়ের জ্ঞান ফিরেছে।” পাশ থেকে একজন নার্স এসে জানায় তাদের কে।
ইভান এগিয়ে যায় নিজের ভাইয়ের কেবিনের দিকে। ভিতরে গিয়ে দেখে চোঁখ পিট পিট করে তাকাচ্ছে ঈশান।
” মেহেক ফিরে এসেছে ঈশান।”
ইভানের কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায় ঈশানের।মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে তার। হঠাৎ করে বাঁচার ইচ্ছাটা যেন আবার জেগে ওঠে তার মধ্যে।দূর্বল শরীর নিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করে সে।কিন্তু ব্যার্থ হয়।মুখের অক্সিজেন মাস্কটা সরিয়ে ফিস ফিস করে কথা বলার চেষ্টা করে সে।
” কো……কোথায়?? মেহেক কই??”
” ওর ডেলিভারি হবে। ওটি তে আছে।”
” ড…. ডেলিভারি?? এ….এখন??”
” জল ভেঙে গেছে গাড়িতে আসতে গিয়ে। কিন্তু ইমিডিয়েট তোকে একটা ডিসিসন নিতে হবে ঈশান।”
” কি??”
” ডাক্তার বলছে মা আর বেবির মধ্যে একজন কেই বাঁচানো যাবে।তুই কাকে চাস ভাই??”
ইভানের কথা শুনে যেনো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায় ঈশানের।এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত কি করে নেবে সে??বউ এর বাচ্চা দুজনাই যে তার বড্ড প্রিয়। তাদের মধ্যে একজন কে কি করে বেছে নেবে সে??
” সব আমার জন্য হয়েছে ভাইয়া। আজ আমার জন্যই মেহেক আর আমার সন্তানের এই অবস্থা। কেমন বাবা আমি বলতে পারো?? যে কিনা নিজের সন্তান কেই অস্বীকার করে।আমার বাচ্চাটা যদি আজ আমায় ছেড়ে চলে যায় ভাইয়া তাহলে আমি কি করে নিজেকে ক্ষমা করবো?? মেহেক আর আমার সন্তান দুজনকেই আমার কাছে এনে দাও না ভাইয়া। আমি বড্ড আগলে রাখবো তাদের।” হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে ঈশান।
” দেখুন আপনার প্লীজ তাড়াতাড়ি বলুন আপনারা কাকে বাঁচাতে চান?? মা না বেবি??”
” আপনি আমার স্ত্রী কে বাঁচান ডক্টর। আর….যদি সম্ভব হয় তাহলে আমার বাচ্চাটা কেও।”
” দুজন কে বাঁচানো সম্ভব নয়। তবুও আমরা আমাদের বেষ্টটা দিয়ে চেষ্টা করবো।”
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা
গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা #পর্ব :-৩৯
🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমণাদের জন্য🥀
চারিদিকে প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। ব্রজ্র বিদ্যুৎ সহ ভারী ভয়াবহ চারিদিকের পরিবেশ। রাতের খাবারের জন্য কিছু সামগ্রী কিনতে একটু বাজারে গিয়েছিলো মুগ্ধ। হঠাৎ যে আকাশ কালো করে মেঘ করে আসবে তা তার বোধগম্য হয়নি। একেবারে বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে মুগ্ধ। বাড়ি তে ঢুকে আগে সব জানলা দরজা বন্ধ করতে ছুটে সে।
হঠাৎ এক বলিষ্ঠ হাত তার ভেজা কোমড় জড়িয়ে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নেয় মুগ্ধ কে। ভয়ে জমে বরফে পরিণত হয় সে। পিছনের ব্যাক্তিটি মুগ্ধের বাম কাঁধে ঠোঁট ছোঁয়ায়। ইষৎ কেঁপে ওঠে মুগ্ধ। চিৎকার করতে গিয়েও যেনো তার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোয় না।
Main aa likkhoon tu aa jaaye
Main baith likkhoon tu aa baithe
Mere shaane par sar rakhe tu
Main neend kahoon tu so jaaye
Chal aa ek aesi nazm kahoon
Jo lafz kahoon vo ho jaaye
Main dil likhoon tu dil thaame
Main gum likhoon vo kho jaaye
Main aah bharun tu haaye kare
Bechain likhoon bechain ho tu
Phir bechaini ka be kaatoon
Tujhe chain zara sa ho jaaye
Abhi ain likhoon tu soche mujhe
Phir sheen likhoon teri neend udey
Jab qaaf likhoon tujhe kuch kuch ho
Main ishq likhoon tujhe ho jaaye.
গানটিকে সায়েরির ছন্দে বলে ওঠে সেই ব্যাক্তিটি।
মুগ্ধের চোখের কোণায় জল জমে ওঠে ব্যক্তিটির আওয়াজ শুনে। উফফ আজ প্রায় ছয় মাস পর সেই পরিচিত আওয়াজ,সেই পরিচিত স্পর্শ, পরিচিত ঘ্রাণ।আবেশে চোখ বুজে আসে তার। দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ।
” হোয়াট ডিড ইউ থিঙ্ক মাই Snowflake, তুমি লুকিয়ে থাকবে আর আমি তোমাকে খুঁজেও পাবো না?? দি ইভান চৌধুরী তোমায় খুঁজে বের করতে পারবে না,তুমি ভাবলে কি করে বেইব??”
মুগ্ধ ফট করে চোঁখ খুলে তাকায়। ইভানের কথায় মেরুদন্ড বেয়ে এক শীতল স্রোত বয়ে যায় তার।নিজেকে ইভানের বাহুডোর থেকে ছড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে সে। যতো বেশি সে দূরে আসার চেষ্টা করে ততো বেশি ইভান তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। হঠাৎ মুগ্ধের পেটে ইভানের হাত স্পর্শ পেতেই চমকে ওঠে ইভান। মুগ্ধের পেটটা এরকম ফোলা কেনো?? মুগ্ধ কে তৎক্ষণাৎ নিজের দিকে ঘুরিয়ে পেটে হাত রাখে ইভান। পেটের ভেতরের প্রাণটা কে অনুভব করে সে।
” আমার সন্তান তোমার পেটে কেমন আছে মুগ্ধ? তুমি প্রেগনেন্ট ছিলে কথাটা একবারো আমায় জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না তুমি? আমার বাচ্চাটার যদি কোনো অসুবিধা হতো?? ও ঠিক আছে তো??”
ইভান আনন্দে দিশাহারা হয়ে গেছে। সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে মুগ্ধের পেটে কান লাগিয়ে বাচ্চার হার্টবিট শোনার চেষ্টা করছে আবার পেটে মুখ লাগিয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলছে। নিজের বাচ্চা হওয়ার কথা শুনে যেনো ইভান নিজেও একটা বাঁচা হয়ে গেছে।
মুগ্ধ হা করে তাকিয়ে দেখছে ইভান কে।তার চিনতে বড়ো অসুবিধা হচ্ছে,এই সেই রাগী,জেদি সাইকো ইভান কিনা? এতো বড়ো একজন বত্রিশ বছরের পুরুষ কিনা এমন বাচ্চা সুলভ আবেগী আচরণ করছে!!
” সব গুছিয়ে নাও মুগ্ধ, আগামীকাল সকালেই আমরা বাড়ি যাবো।”
” আমি যাবো না।”
” আই এম নট আস্কিং ইউ আই এম টেলিং ইউ। আমরা তিন জন কালকে আমাদের বাড়ি যাচ্ছি।”
” আমি বললাম তো আমি আপনার সাথে যাবো না। আর যাবোই বা কেন?? আমি তো আপনার কেও লাগি না।”
” তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী মুগ্ধ।”
” স্ত্রী?? কিসের স্ত্রী?? স্ত্রীর মনে করলে মন বুঝতেন নিজের স্ত্রীর। সবসময় রাগ জেদ আর তেজ দেখাতেন না।”
” আমি তোমার মন বুঝি না?? মানছি একটু রাগ জেদ আমার বরাবরই বেশী,কিন্তু তাই বলে কি আমি তোমায় ভালোবাসি না মুগ্ধ??”
” ভালোবাসি মূখে বললেই হয় না ইভান। ভালোবাসলে সন্মান করতেও জানতে হয়।যেটা আপনি আমায় দেননি।”
” তোমাকে আমি আমার স্ত্রী হিসাবে সন্মান করি না??”
” কোথায় করেন?? আমি বলেছিলাম আমি ইশা আপুর সেবার দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না,কারণ তাকে দেখলে আমার নির্মল ভাইয়ার কথা মনে পড়ে আমার কষ্ট হয়। আপনি আমার সেই অনুভূতি টাকে সন্মান করেছিলেন?? আমার ডিসিসনটাকে সন্মান করেছিলেন??…… এতো মাথা গরম রগচটা মানুষের সাথে আমি থাকতে পারবো না।”
” তুমি থাকতে পারবে কি পারবে না সেটা আমি জানতে চাইনা মুগ্ধ। থাকতে তো তোমাকে আমার সাথেই হবে।”
” আপনি কোনোদিনই পরিবর্তীত হওয়ার নন ইভান। আমি যাবো না আপনার সাথে। আমি চাইনা আমার সন্তান আপনার মতো একটা সাইকো তৈরী হোক।”
” ওহ্ রিয়েলি বেইব?? আমার বাচ্চা আমার থেকেও বেশী পরিমাণ সাইকো হবে।আর এখন এসব ছাড়ো এতক্ষণ ধরে ভিজে কাপড়ে থাকলে আমার বউ আর বেবির ঠান্ডা লেগে যাবে। আগে চেঞ্জ করে এসো।”
ইভান অতি স্বাভাবিক ভাবে কথাটা বলে বাথরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।সেদিকে হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ।
ইভান বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে মুগ্ধ বিছানায় শুয়ে আছে।সে চুপটি করে সেদিকে এগিয়ে যায়।মুগ্ধের পাশে শুয়ে তাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরায় ইভান। বাম হাত মুগ্ধের পেটের উপর রেখে ডান হাতে মুগ্ধের চুলে বিলি কেটে দিতে থাকে সে।
” আম সরি মুগ্ধ, আমি বুঝতে পারিনি আমার বলা কথা তে তুমি এতোটা কষ্ট পাবে। আমি তো শুধু চেয়েছিলাম যে তুমি আর ইশা একে অপরের সাথে মিলে মিশে যাও,তোমাদের মধ্যে যেনো কোনো ভুল বোঝাবুঝি না থাকে। কিন্তু তার জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে আসার সাহস পাও কি করে?? একবারো তুমি ভাবলে না যে তোমাকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে??আমাদের বেবির কথাটাও তুমি একবারো ভাবলে না?? যদি কোনো প্রবলেম হতো?? কি হতো ভেবেছো মুগ্ধ??”
ইভানের কথায় চোঁখ তুলে তাকায় মুগ্ধ। ইভান তার প্রাণ প্রেয়সীর কপালে অধর ছোঁয়ায়। আবেশে চোখ বুজে আসে মুগ্ধের।
” আমি তোমায় ভালোবাসি মুগ্ধ,খুব খুব ভালোবাসি, নিজের থেকেও বেশি। বুঝ হবার পর যখন জানতে পারি যে আমার জন্মদাত্রী মা আমায় মেরে ফেলতে চেয়েছিলো, আমার বাবা কে সে স্বার্থপরের মতো ছেড়ে দিয়ে চলে গেছিলো তখন থেকেই আমার ভালবাসার প্রতি বিশ্বাস ছিলো না মুগ্ধ। আমি জানতাম ভালোবাসা সময়ের সাথে সাথে কমে যায়।তুমি আমার নেশা মুগ্ধ যা কোনোদিনও কাটার নয়। আর আমি আমার এই নেশা কে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসি।”
ইভান মুগ্ধের ওষ্ঠে নিজের অধর জোড়া মিলিত করে। পান করতে থাকে সে তার স্ত্রীর অধর সুধা। ভালোবাসার স্পর্শে ধীরে ধীরে দুটি মনের সকল অভিমানের প্রাচীর গলে যায়।
___________
আজ দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর সুস্থ সন্তান ও স্ত্রী কে নিয়ে বাড়ি ফিরছে ঈশান। চৌধুরী ম্যানসন আজ যেনো আবার আনন্দের সাজে সেজে উঠেছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরি হচ্ছে আজ বাড়িতে। বহু রান্নার তোড়জোড় চলছে। মেয়ে, জামাই, আত্মীয়, কুটুমে গোটা বাড়ি রমরম করছে। ইশাও ছেলে কে নিয়ে গতকাল কে এসে পৌঁছিয়েছে।
গোটা এক মাস ধরে হাসপাতালে অনেক যুদ্ধ করেছে এইবাড়ির ছোট্ট সদস্য, ঈশান আর মেহেকের মেয়ে ‘ আয়না’। সেদিন মেহুর সাথে সাথে তার বাচ্চা কে বাঁচাতে পারলেও,বাচ্চাটি ছিলো বহুত দূর্বল।তাই এক মাস তাকে হাসপাতালেই রাখতে হয়েছিলো। মেয়ে কে হাসপাতালে রেখে বাড়ি আসতে মেহু চাইনি। স্ত্রী সন্তান কে কাছে পেয়ে ঈশান ও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে।
বাড়ির দরজায় এসে পৌঁছাতেই মাথার ওপর ফুল বর্ষণ হয় ছোট্ট আয়নার। খিল খিলিয়ে হেঁসে ওঠে সে।সবাই খুব খুব আদর করে আয়না কে। সেদিকে ঠোঁট ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে ইসহাক। সবার ছোটো বাচ্চাটির প্রতি এতো এতো ভালোবাসা দেখে ভারী অবাক হচ্ছে সে।
” ধুর!!একটা বাচ্চাই তো রে বাবা সবাই মিলে এতো ওলে বাবালে কতো কিউট ওলে বাবালে কিউটের ডিব্বা করার কি আছে বুঝিনা।আমিও তো ছোটো আমার দিকে তো কেও তাকিয়েও দেখছে না, আমাকে কি তাহলে আর কেও ভালোবাসবে না??এই পুঁচকেটা কেমন কিউট দেখতে দেখি তো,যে সবাই মিলে এতো কিউট কিউট করছে।”
ইসহাক এগিয়ে গিয়ে ছোট্ট আয়না কে কোলে নেওয়ার আবদার করে। আয়নার দিকে তাকাতেই চোঁখ জোড়া যেন স্থির হয়ে যায় ইসহাকের। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, ” ছোট্ট পরী ”
” বাহ্ খুব ভালো নাম তো নাতিবাবু। তা তোমার বুঝি ওকে দেখে ছোট্ট পরী মনে হয়েছে??”
ইসহাক এখনো এক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে। আয়নার তুলতুলে গাল গুলো আঙুলে করে ছুঁয়ে দিতে তার খুবই মজা লাগছে। সে নিজেও খিল খিল করে হেসে উঠছে বারে বারে। বাচ্চাদের এই কান্ড দেখে বুশরা বেগম কিছু চিন্তা করেন।
” চৌধুরী সাহেব আমি একটা কথা ভেবেছি।” বুশরা বেগম বলেন।
” কি কথা বউ জান??”
” আমার ইচ্ছাই বলুন আর আবদার বলুন রাখতে কিন্তু সবাই কে হবেই।”
” কি আবদার মম তুমি বোলো না আমরা অবশ্যই রাখবো।” ঈশান বলে।
” আবদারটা হচ্ছে আমি চাই আমার নাতিবাবুর সাথে তার ছোট্ট পরীর বিয়ে হোক।”
বুশরা বেগমের কথায় চমকে ওঠে সবাই।
“কি?? এসব কি বলছো মম ওরা তো এখন ছোটো???” ইশা বলে ওঠে।
“এখন বিয়ে দিতে কে বলেছে তোদের?? ওরা বড়ো হোক, নতিবাবু প্রতিষ্ঠিত হোক তারপর বিয়ে। এখন শুধু নিজেদের মধ্যে কথা দিয়ে রাখলেই হবে।”
” বউ জান তুমি অন্যায় আবদার করছো। আচ্ছা ভাবতো যদি ওরা বড়ো হয়ে অন্য কাওকে ভালোবাসে?? তখন কি হবে??”
” তখনকার ব্যাপার আলাদা। কিন্তু যদি অন্য কাউকে ভাল না বাসে তাহলে ওদের দুজনের বিয়ে দিতেই হবে ব্যাস্।”
” মা আমার মেয়েটা তো ছোটো……” আমতা আমতা করে বলে ওঠে মেহু।
মেহু কে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠেন বুশরা বেগম” কিন্তু মেয়ে তো একদিন বড়ো হবে ছোটো বউমা। আর আমার নাতিবাবুর থেকে ভালো ছেলে তুমি তার জন্য কোত্থাও খুঁজে পাবে না।”
ইশা আর ঈশান একে অপরের দিকে তাকায়। মায়ের এই আবদারের কি উত্তর দেবে সেটা তারা দুজনেই বুঝে উঠতে পারছে না।সেই সময় একটা কথা ভেসে ওঠে,
” তুমি যেমন চাইছো তেমনই হবে মম। ইসহাকের সাথেই আমাদের আয়নার বিয়ে হবে।”
#চলবে
#লেখিকা_রাইমা