#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৬
চারদিন পর উষ্ণ চৌধুরী আজ বাড়ি ফিরেছে। বাড়িতে ঢুকতেই বসার ঘরে মা, বাবা আর ভাইকে দেখেও বিন্দুমাত্র ভ্রু*ক্ষেপ করল না। বেপরোয়া ভ*ঙ্গি*তে সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। তিলোত্তমা বেগম রে*গে চেঁচিয়ে উঠলেন। উষ্ণ থমকে দাঁড়াল। তিলোত্তমা বেগম ধ**ম*কের সুরে বলে উঠলেন, “তুমি এমনটা কেন করলে? এভাবে আমাদের মান সম্মান ন*ষ্ট অধিকার কে দিলো তোমায়? তোমার জন্য কতো গুলো মানুষের সামনে আমাদের মাথা নি*চু হয়েছে জানো! কথা কেন বলছো না? আনসার মি! উষ্ণ! ইরিশার সাথে এমনটা করার এতো বড় স্প*র্ধা তুমি কোথায় পেলে? ”
তিলোত্তমা বেগমের চেঁ*চা*মে*চিতে সকলে তট*স্থ। একমাত্র উষ্ণ চৌধুরীর উপর কোনো রকম প্রভাব পড়ল না। নি*র্লি*প্ত ভ*ঙ্গি*তে সমস্ত কথা শুনেও কোনো জবাব দেবার প্রয়াস করল না। ঊষাণ চৌধুরী অধীর আগ্রহে বসে আছে এরপর কি হয় সেটা জানার জন্য। এরকম ঝগ*ড়া*ঝাঁ*টি দেখতে তার ভালোই লাগে। জাওয়াদ চৌধুরী বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন, “থামো তিলোত্তমা!”
“তুমি আমায় থামতে বলছো? তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করছো না? কতো বড় কাজ করে এলো বলো।”
জাওয়াদ চৌধুরী বি*র*ক্ত হয়ে উঠলেন। এসব ঝামেলা তার একদম পছন্দ না। বাড়ির সকল স্টা*ফ আড়ি পেতে তাদের কথাবার্তা শুনছে। কি একটা অবস্থা। জাওয়াদ এবার ভারী গলায় শুধালেন, “তুমি এটা কেন করলে উষ্ণ?”
বাবার দিকে ফিরে তাকাল উষ্ণ চৌধুরী। জাওয়াদ চৌধুরী চোখ মুখ কুঁচকে ফেললেন। উষ্ণ মৃদু হেসে বলল, “কারণ আমি ইরিশা কে বিয়ে করতে চাইনি!”
“সেটা তো তুমি আমাদের আগে জানাতে পারাতে?”
“তোমরা জিজ্ঞেস করলে কখন? আমার থেকে জানতে চেয়েছো কখনো? দেশে আসার পরই বলে ফেললে, ইরিশার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছি। আমায় জিজ্ঞেস করেছিলে আমি কি চাই?”
তিলোত্তমা বেগম রা*গা*ন্বিত স্বরে বলে উঠলেন, “তাই বলে এভাবে তুমি প্র*তি*শো*ধ নিলে? তুমি কি ভাবো উষ্ণ, আমরা সবাই বোকা। ইরিশার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হবার পরই অফিসের দায়িত্ব তুমি পেয়েছো। তোমার বাবা তোমাকে কোম্পানির সিইও বানিয়েছেন। এখন সব হাতে পাবার পর মন বদলে গেলো।”
“বিয়ে ঠিক হবার জন্য পায়নি? এসব আমার অধিকার। এ বাড়ির ছেলে আমি!”
“এ বাড়ির ছেলে বাড়ির মান সম্মান নিয়ে খেলছে। এমন ছেলে না থাকলেই বা কি হতো।”
জাওয়াদ চৌধুরী এবার উঁচু স্বরে বলে উঠলেন, “চুপ করো তোমরা!”
তিলোত্তমা রা*গে ফুঁসছে। তার বড় চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে এখুনি বেরিয়ে আসবে। উষ্ণ তার দিকে ফিরে কিঞ্চিত হাসল। জাওয়াদ চৌধুরী নিজেকে সামলে উঠে বললেন, “নিজের ঘরে যাও উষ্ণ!”
“তুমি ওকে এভাবে যেতে বলছো? কিছু জিজ্ঞেস করবে না!”
“কেন করবে? আপনাকে বিয়ে করে আসার দাদার কথা কি বাবা শুনেছিল? তিনিও দাদার অবাধ্য হয়েই আপনাকে বিয়ে করেছে!”
“উষ্ণ!”
হাত তুললেন তিলোত্তমা বেগম। উষ্ণ চৌধুরী দৃ*ষ্টি একটুর জন্যেও নড়বড়ে হলো না। পিছনে স্বামীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি থেমে গেলেন। হাত নামিয়ে ফেললেন। জাওয়াদ চৌধুরী এবার হুং*কার দিয়ে উঠলেন।
“তোমাদের সাহস কি করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার বাড়িতে এমন অ*স*ভ্য আচরণ করার!”
তিলোত্তমা বেগম একটু বেশিই উ*ত্তে*জিত হয়ে গেছিলেন। নিজেকে শান্ত করার সর্বস্ব চে*ষ্টা করলেন। উষ্ণ ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, “সরি ড্যাড!”
“নিজের ঘরে যাও উষ্ণ!”
উষ্ণ সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই যাচ্ছিল। সিঁড়ির এদিকে দাঁড়িয়ে ঊষাণ চৌধুরী মিনমিন স্বরে শুধাল, “এতোদিন কোথায় ছিলে ভাইয়া?”
“আমার বউয়ের বাড়িতে!”
উষ্ণের জবাবে ঊষাণ হতবাক হয়ে গেল। তিলোত্তমা বেগম আর জাওয়াদ চৌধুরী চমকে উঠলেন। উষ্ণ কারো তোয়াক্কা না করে নিজের ঘরে চলে গেল। ঊষাণ একবার মায়ের আরেকবার বাবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। ব্রো কে এমন প্রশ্ন করা তার উচিত হয়নি। নিঃশব্দে সেখান থেকে চলে গেলো সে। তিলোত্তমা বেগম হেসে উঠলেন। ঈ*ষৎ পরি*হাস করে বললেন, “শুনলে তোমার ছেলে কি বলল?”
“মাথা ঠান্ডা কর তিলোত্তমা!”
“এখনো তুমি আমায় বলবে। তোমার ছেলেকে কিছু বলবে না তো। বলার দরকার নেই। থাকো তুমি তোমার ছেলেকে নিয়ে।” রে*গে হম্বিতম্বি করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তিলোত্তমা। জাওয়াদ চৌধুরী উত্তেজিত হলেন না। বরং নিজেকে শান্ত করলেন। তিলোত্তমা রা*গা*রা*গি করে বাপের বাড়ি যাওয়ার বিষয়টা আজ নতুন কিছু না। তিনি ভাবছেন উষ্ণের কথা। উষ্ণ এই কয়েকদিন ছিলো কোথায়? তার এমন উ*দ্ভট কথাবার্তার কারণ কি? ছেলেকে নিয়ে একটু বে*কা*য়দায় পড়ে গেছেন তিনি। ছেলে তার মতোই হয়েছে। কিংবা তার চেয়েও একধাপ এগিয়ে। দীর্ঘ বছর মা বাবা থেকে দূরে ছিল বলেই হয়তো এমন হয়ে গেছে। উষ্ণ কে নিয়ে তার চিন্তা হচ্ছে ভীষণ। কে জানে এই ছেলে আবার কি করে বসে।
.
পরদিন অফিসে উষ্ণ চৌধুরী কে নিয়ে কানাঘু*ষো চলছে। “স্যার বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে!” “ইশ কি বি*চ্ছি*রি কাণ্ড!” “বর বুঝি আবার বিয়ের আসর থেকে পালায়?” “আচ্ছা, মেয়ের কোনো দো*ষ ছিলো নাকি?” হতেও পারে, বড়লোকের মনের কথা আমরা কোথায় বুঝবো, তাদের টাকা আছে। টাকা দিয়ে মান সম্মান কেনা যায়! “আমি তো শুনলাম স্যারকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল!” “এমা তাই নাকি? স্যারের গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি রে আবার?” “থাকতেও পারে!”
এমন সব আলোচনার মুখোমুখি হচ্ছে তনয়া। তার সামনেই এসকল আলোচনা হচ্ছে। আজ ম্যানেজার স্যার ও তাদের সাথে সামিল। তন্ময় এসব শুনে তনয়াকে শুধাল, “সত্যি স্যারের বিয়েটা হয়নি?”
“এসব জেনে আমরা কি করব। চুপ কর তো।”
“তাও ঠিক। কিন্তু ওদের দেখ কতো উৎসাহ!”
“ঘর ভাঙ*ছে কার আর গান গাইছে কারা।”
“মানুষ কতো আজাইরা থাকে বল।”
“আর কতো আজাইরা থাকলে আমরা এসব শুনি বল!”
অসহায় ভঙ্গি*তে ফিরে তাকাল তনয়া। তন্ময় হেসে উঠল। ওদিকে শরীফ ছুটতে ছুটতে এসে বলল, “এই এই স্যার আসছে!”
আলোচনা সভা দ্রুত ভে*ঙে গেল। যাক, একটু শান্তি পাওয়া গেলো। সকলে এবার ছোটাছুটি করছে। শেহনেওয়াজ উষ্ণ চৌধুরী বিরাট ভাবসাব নিয়ে অফিসে ঢুকল। তাঁর পিছন পিছন তার সেক্রেটারি। তার কপালে ব্যান্ডেজ। এর সাথে কি হয়েছিল আবার? মানুষের জোট দেখতে পেয়ে উষ্ণ চৌধুরী থেমে গেলো। তাদের দিকে ফিরে চোখের সানগ্লাস খুলে শুধাল, “ব্যাপার কি? সবাই একসাথে!”
ম্যানেজার সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, “কিছু না স্যার।”
“কথাবার্তা হচ্ছিল নাকি? এখনকার বিগ নিউজ তো আমার বিয়ে নিয়ে। সেটা নিয়েই কথা হচ্ছিল বুঝি।”
“না স্যার। কি বলছেন?”
“অসুবিধা নেই। বলুন। এই দেশই এমন জায়গা যেখানে মানুষের ব*দ*নাম রটালে তার প্র*তি*পত্তি বেড়ে যায়। এখন হেডলাইনই দেখুন। সব জায়গায় এখন শেহনেওয়াজ কোম্পানির গুনগুন চলছে। মিঃ তন্ময়, আমাদের নতুন প্রোডাক্টের মার্কেটিং আজ থেকেই শুরু দিন। নতুন প্রোডাক্ট আমরা কালকেই লঞ্চ করব। ঠিক আছে ম্যানেজার সাহেব!”
ম্যানেজার সাহেব মাথা দুলালেন। উষ্ণ চৌধুরী সানগ্লাস আবারো চোখে পড়ে নিল। সেকেন্ডের জন্য চোখাচোখি হলো তনয়ার সাথে। মুচকি হেসে নিজের কেবিনে চলে গেলো। সকলে এবার কাজে লেগে পড়ল। যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠল। স্যার তো বলেই দিয়েছে। তনয়া দুই হাত বাহুতে গুঁজে মন দিয়ে ভাবছে, এই ভাদাইম্যার ব্রেইন তো অনেক সা*র্প। ঠিক জানে কখন কিভাবে বিজনেস করতে হয়!
লাঞ্চের আগ মুহুর্তে। সবাই কাজে ব্যস্ত। কেউ কেউ ঘড়ির দিকেও তাকাচ্ছে। উষ্ণ কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এলো। তার হাতের ফাইলটি নিয়ে সোজা গেলো জ্যোতির কাছে। সবাই তখন তার দিকে উঁকি ঝুঁকি মা*র*ছে। স্যারের গায়ে ব্লেজার নেই এখন। সাদা শার্টে স্যারকে তো অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে। দু একটা মেয়ে থাকবেই এমন বাড়িয়ে বলার জন্য। তনয়া এসব কানে নিলো না। উষ্ণ নিজের কেবিনের দিকেই যাচ্ছে। তনয়া ও উঠে দাঁড়াল ম্যানেজারের কাছে যাবার জন্য। তৎক্ষণাৎ উড়ে এসে হাজির হলো ইরিশা জামান। তার উঁচু জুতোর ঠকঠক শব্দে সবাই অতি উৎসাহী হয়ে এদিকে ফিরে তাকাল। সামনাসামনি দুজন! উষ্ণ চৌধুরী আর ইরিশা জামান! ইরিশা জামানের রূপের প্রশংসা করছে সকলে। কি লাগছে তাকে দেখতে! ফ্যাশনেবল পোশাক, ব্যান্ডের ব্যাগ, পারফিউমের ঘ্রাণ সকলকে সম্মোহিত করছে। উষ্ণ নির্মল কণ্ঠে বলল, “তুমি এখানে?” ইরিশা হেসে এগিয়ে গেলো। তার পিছনে দাঁড়িয়ে তার গার্ড। দূরে তনয়া দাঁড়িয়ে তাদের দেখছে। তনয়ার মতো আরো উৎসুক কিছু চাহনি জড়ো হয়েছে। কথাবার্তা কি চলছে তা শোনা যাচ্ছে না তবুও তাদের কৌতুহলের কমতি নেই। আমচকা ইরিশা জামানের নরম তুলতুলে হাতের চ*ড় এসে পড়ল উষ্ণর গালে। অ*নাকাঙ্ক্ষি*ত ঘটনায় একেকজন স্তব্ধ হয়ে গেল। তনয়ার হাত থেকে ফাইলটা পড়ে গেল। তাঁর সারা শরীর ঝি*ম মে*রে গেছে। এখানে উপস্থিত এতো গুলো লোকের সামনে ইরিশা জামান উষ্ণ স্যারের গালে চ*ড় মা*র*ল! পরিস্থিতি কেমন নিস্তব্ধ, নিঝুম! যারা হাটছিলো তারাও থেমে গেল। কি অদ্ভুত নিরবতা! ইরিশা জামান ঠকঠক জুতোর শব্দ ফেলে চলে গেল। তনয়ার হতবাক নয়নে স্যার কে দেখছে। উষ্ণ এদিক ফিরে চাইতেই সকলে নিজের কাজে মন দিল। চোখাচোখি হলো তনয়ার সাথে। তাদের এই দুই প্রান্তের মাঝে বিশাল এক দূরত্ব! অথচ এদের মাঝে তনয়াকে আলাদ করে দেখতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না উষ্ণর। জেএস তখন পিছন এসে দাঁড়াল তাঁর। অতঃপর…
#চলবে
#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৭
উষ্ণের কেবিনে ঢোকা মাত্র তনয়া শুধালো, “আপনি কেনো তাকে কিছু বললেন না? ইরিশা জামান এভাবে সবার সামনে আপনাকে চড় মেরে দিল?”
“কি করতে পারতাম?”
“তাকে আটকাতে পারতেন!”
“তোমার কি মনে হয়? যদি আমি জানতাম ও আমায় চড় মা রবে তাহলে কি আমি ওর সামনে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতাম চড় খাওয়ার জন্য!”
“তবুও? এভাবে সবার সামনে…”
“ছেলে হয়ে মেয়ের কাছে চড় খাবার বিষয়টা অতো বড় না। আমি মারলে এতোক্ষণে তুলকালাম লেগে যেতো। সে তো সম্ভব না। বাদ দাও!”
“এতো সহজে বাদ দিয়ে দিবেন?”
“কেন দিবো না? চড় মেরে ভুল কিছু করেছে? আমি তাকে বিয়ের আসরে একা ফেলে চলে এসেছি। এতো গুলো মানুষের সামনে যখন সে অপমানিত হয়েছে আমারও তো সেই হক আছে তাই না?”
হেসে উঠল উষ্ণ চৌধুরী। তনয়া চুপসে গেল। ইরিশা জামানের রাগ, এখানে এসে চড় মারা এতো বড়ও অন্যায় ছিলো না যতখানি অন্যায় উষ্ণ স্যার করেছেন। তার বিয়ের কনেকে বিয়ের আসরে অস্বীকার করেছে। তিরস্কার করে ফেলে এসেছে। দোষ তো উষ্ণ স্যারের। তবুও সে কেন তার হয়ে কথা বলছে? দৃষ্টি নামিয়ে এসব কথাই ভাবছিলো সে। হঠাৎ মুখটা তুলতেই চমকে উঠল। ভয়ে পিছিয়ে গেল। উষ্ণের মুখটা তার একদম কাছাকাছি ছিলো। উষ্ণ চৌধুরী খানিকটা ঝুঁকে তার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। শুধালো, “তোমার খারাপ লাগছে?”
“না!”
“হ্যাঁ, আমারও লাগছে না। চড় খেতে খেতে এখন সয়ে গেছে।”
“মানে?”
উষ্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াল। নিজের টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, “হুটহাট চড় খাওয়া এখন আমার স্বভাব হয়ে গেছে তনয়া। ছোটবেলায় এমন অনেক চড় খেয়েছি। আমার সৎ মা কিছু থেকে কিছু হলেই আমায় চড় মারতেন। তার থেকেই অভ্যাস হয়ে গেছে।”
তনয়া অবাক দৃষ্টিতে ফিরে তাকাল। উষ্ণ তার দিকে ফিরে বলল, “একবার আমায় খুব কসিয়ে চড় মেরেছিলেন। কি করেছিলাম মনে নেই? কিন্তু এতোটুকু মনে আছে, চড় খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেছিলাম। বাবা এসে তুললেন। এরপর বিদেশে পাঠিয়ে দিলেন। ব্যস আমিও তাদের থেকে দূরে সরে গেলাম। তাতে কি? একবার অভ্যাস হয়ে গেলে ভুলে ফেলা কঠিন, তাই না বলো?”
কথাগুলো সহজ ছিলো না। অথচ উষ্ণ স্যার কতোটা অকপটে কথাগুলো বলে ফেলল। তনয়ার খারাপ লাগল। ভীষণ রকমের খারাপ! সে জানত না স্যারের সৎ মা আছে। এসব কথার প্রতিত্তোরে তার কি বলা উচিত সেটাও বুঝতে পারছে না। স্যারের বাম দিকের গাল লাল হতে শুরু করেছে। স্যারের প্রতি এতো খারাপ লাগা কাজ করছে কেন? অসুস্থ হয়ে তার কাছে ছিলো বলে? সে যত্ন করেছিলো তাই কি? হতে পারে! মায়া হচ্ছে। উষ্ণ নরম গলায় শুধাল, “কি হলো তনয়া? তোমার কি খারাপ লাগছে?”
তনয়া হকচকিয়ে উঠল। হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল কেবল। জবাব কি দিবে? আচমকা শব্দ হলো। জেএস রুমে ঢুকল। তনয়া দাঁড়িয়ে রইল না। বেরিয়ে এলো। সোজা চলে গেলো ক্যান্টিনের দিকে। মেয়েদের মন একটু বেশিই নরম। কেউ একটিবার ভালো করে কথা বললে সে মনে জায়গা করে নেয়। উষ্ণের কষ্টের কথাগুলো সে যেন বুঝতে পারছে না। স্যারের আপন মা নেই এদিকে তার তো মা’ই নেই। এই কারণেই বোধহয় কথাগুলো এমনভাবে আঘাত করল তাকে!
তন্ময় অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলো। তনয়া কে আসতে দেখেই এগিয়ে এসে শুধাল, “কি হলো? কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?”
“ওই ছিলাম। ওখানে কি হচ্ছে?”
“একটু আগের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বক্তব্য রাখছেন।”
“এগুলো কোনো ধরণের আলোচনা।”
“এখন তো এটাই হট টপিক।”
“উফ কথা বলিস না।”
“এতো আপসেট কেন তুই।”
“এমনই। স্যার একটা মেয়ের কাছে চ*ড় খেলো আর তারা এভাবে ঘোষণা করছে। লজ্জা শরম নেই বিন্দুমাত্র!
তনয়া এসে টেবিলে বসে পড়ল। তন্ময় তার সামনে বসে বলল, “স্যারের কি দোষ নেই? তিনি যা করেছেন তা কি ঠিক বল।”
“তবুও! আমরা তো আর জানি না স্যারের লাইফে কি চলছে। নিশ্চিত এমন কিছু ছিল।” বলেই পানির বোতল বের করে পানি খেতে লাগল তনয়া। তন্ময় মাথা দুলিয়ে বলল, “হ্যাঁ, থাকতেই পারে। হয়তো গার্লফ্রেন্ড নয়ত বা ভালোবাসার মানুষ!”
তনয়া ঘাবড়ে উঠল। তন্ময় হাসছে। তার চোখ মুখ ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। তন্ময়ের হাসি মিলিয়ে গেল। শুধাল, “কি ভাবছিস?”
“কিছু না। ক্ষিদে পেয়েছে, চল খেয়ে নিই!”
.
.
.
.
.
কেবল একটা চড় মেরে ইরিশা জামানের রাগ বিন্দুমাত্র কমেনি। আরো দু একটা চড় দিলে যেন শান্তি পেতো। ভালো লাগছে না। সবকিছুতেই অশান্তি লাগছে। নিজের ঘরে এসে জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ইরহান হাসান। কম বয়সী ছেলেটি নতুন নতুন কাজে জয়েন করেছে। তাকে এখানে আনাই হয়েছে ম্যামের চারপাশে ঘোরাঘুরি করার জন্য। নিজের দম্ভের কারণে আজ অবধি কখনো কোনো মেয়ের পিছনে ঘুরঘুর করেনি। টাকার জন্য আজ তাকে করতে হবে। ম্যামের সুরক্ষার জন্য তাকে এখানে পাঠানো হয়েছে একটা এজেন্সির মাধ্যমে। টুকটাক সবই শিখেছি সাথে বন্দু*ক চালানোও। ম্যামের বাবা একটা ছোট লাইসেন্স করা পি*স্তল ও দিয়েছে সাথে রাখার জন্য। কে জানে কখন দরকার পড়ে। স্যার বাসায় নেই, ফোন করা হয়েছে এসে পড়বে। তার মেয়ে যা পাগলামি করছে স্যারকে এখন আসতে হবে উড়ে উড়ে নাহলে রাগ ঠেকানো সম্ভব না।
বড়লোকের মেয়েদের রাগ থাকে নাকের ডগায়। সবার সামনে এতো বড়লোক ছেলেকে চ*ড় মেরে ও তার রাগ কমেনি। ইরহান হাসান ভাবছে ছেলেটা কিভাবে চুপ করে থাকলো। সে থাকলে কি পারতো? না কখনো না। তবে ছেলেটা কিছু না করেই ভালো করেছে নাহলে নিজের খেল দেখিয়ে দিত। চিনে না তো তাকে। তৃপ্তির হাসি হাসল সে। মূহুর্তের মধ্যেই ঘরের দিক থেকে আসা ফুলদানি এসে পড়ল পায়ের কাছে। লাফিয়ে উঠল সে। ভাগ্যিস দূরে ছিল। নাহলে এখুনি তার মাথাটা যেত। তাদের এই পীড়াপীড়িতে নিজের জান দিতে যাবে কোন দরকারে। নিজের জীবনের দাম তার কাছে একটু বেশিই বটে। ম্যাম ডাকছে। চেঁচিয়ে নাম ধরে ডাকছে। ইচ্ছে করছে গিয়ে একটা ধমক দিতে। এই মেয়ের চেয়ে কম করে হলেও ৩ বছর বড় সে। অসভ্যের মতো নাম ধরে ডাকছে। বড়লোকের ছেলেমেয়েদের আসলেই ভদ্রতা শেখানো হয়না। এদের শিখানো হয় কিভাবে অ্যাল*কোহল এক ঢোকে গিলে হজম করে ফেলবে।
রোবটের মতো হেঁটে ঘরে প্রবেশ করল ইরহান হাসান। সা*পের মতো ফেনা তুলে এখনো ফুঁস*ছে ইরিশা জামান। ছু*রির মতো ধারালো কণ্ঠে বলল, “একটা কাজ করতে পারবে?”
পারুক আর না পারুক তাকে “জি” বলতেই হবে। এজেন্সিতে এসবই শিখানো হয়। সেও জোর গলায় বলল, “জি ম্যাম।”
ইরিশা তার দিকে ফিরে গড়গড় করে বলে দিল কাজের কথা। “আজ থেকে এই মুহূর্তে থেকে নজর রাখবে শেহনেওয়াজ উষ্ণ চৌধুরীর উপর। যেভাবে পারো আমায় জানাও মেয়েটা কে? আমি টু হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিউর এখানে কোনো না কোনো মেয়ে আছেই।”
“মানে গার্লফ্রেন্ড!”
“গার্লফ্রেন্ড মাই ফুট। কোন বি*চ আছে খুঁজে বের করব। শেষ করে দিবো তাকে। ইরিশা জামানকে অস্বীকার! খেলনা নাকি আমি? তার জায়গা তাকে দেখিয়ে দিবো। খোঁজ লাগাও। গত কয়েকদিন ধরে উষ্ণ কোথায় ছিলো? কার সাথে ছিলো? মেয়েটা কে? সবকিছু! আন্ডারস্ট্যান্ড?”
“জি ম্যাম!”
“কাজটা ঠিক করে করতে পারলে তুমিও কিন্তু পুরস্কার পাবে। তোমাকে খুশি করার দায়িত্ব আমার। শুধু মেয়েটাকে খুঁজে এনে দাও!”
সাক্ষাৎ যেন রক্ত*চোষা রাক্ষসী। মেয়েদের এভাবে এভাবে রা*ক্ষুসী বলে নাকি। কিভাবে বলছে দেখো। মেয়েটাকে কি মে,রে ফেলবে। মারুক গে! তার কি? পুরস্কার হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা পেলেই সে খুশি। কে ম”রলো কে বাঁচলো তা দেখে তার কি লাভ? এছাড়াও পিস্ত*ল টা একবারও ট্রাই করে দেখা হয়নি। এ কাজ ও নিশ্চিত তাকেই করতে হবে। মনের মধ্যে অস্ফুট উদ্দীপনা টের পাচ্ছে সে। তাকে এখনই কাজে লেগে পড়তে হবে!
#চলবে