#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৬১
দুজনকে একসঙ্গে অফিসে আসতে দেখে গুনগুন রব উঠল। তনয়া বুঝতে পারল, আজ অফিসের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সে। সবাই তাকে উঁকি মেরে তাকে দেখছে। চেনা পরিচিত সকলে এসে কথা বলছে। ম্যানেজার সাহেব, জ্যোতি, শরীফ এরা তো এসেই চিরুনি তল্লাশি শুরু করল।
“তোদের বিয়ে কি করে হলো তনয়া? কি আশ্চর্য তোরা কাউকে বললি না কেন?
“তাড়াহুড়োয় সময় পায়নি আসলে। বলাই হয়নি।
জ্যোতি এসে চিমটি মে*রে বলে, “তোরা কি প্রেম করেছিস? সত্যি করে বল!”
তনয়া হাসে। কিভাবে বোঝায় এদের। ওদের মাঝে কখনো তো প্রেমই ছিল না, ছিল না ভালোবাসা। তবুও কিভাবে জানি একসঙ্গে মিশে গেল। কেউ কেউ এসে কনগ্রাচুলেশন করল। তনয়া এদের প্রত্যেকের হাস্যোজ্জ্বল মুখগুলো দেখছে। জানে আড়ালে এই ক*টুক্তি করে করে ভরিয়ে ফেলব। মানুষ কটু*ক্তির দাস, অন্যের সমা*লোচনা না করে এরা থাকতে পারে না। এতো টুকু মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই তনয়া এখানে এসেছে। ভেবেই নিয়েছে এদের কারো কথায় সে কোনো ক*ষ্ট পাবে না। কোনো আলোচনায় মাথা ঘা*মাবে না। কখনোই না!
আশ্চর্য ভাবে অফিসে আসার পর থেকে উষ্ণ স্যারের কেবিন থেকে একবারও ডাক পড়েনি। তনয়ার অ*স্বস্তি হচ্ছে। উষ্ণ স্যার কি তাকে একদম ভুলে গেলো। লাঞ্চের এখনো অনেক সময় বাকি। তবুও তার মন চাইছে স্যারের সাথে দেখা করতে। স্যার না ডাকলে সবার সামনে যেতেও পারছে না। লজ্জা লাগছে! যখন এসব ভাবছিলো তখনি তনয়ার ডাক পড়ল স্যারের কেবিন থেকে। তনয়া দ্রুত দাঁড়িয়ে গেল। এক মুহুর্ত নষ্ট না করে স্যারের কেবিনে চলে গেল দ্রুত। ওরা নিশ্চিত এখন হাসাহাসি করছে।
উষ্ণ দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তনয়া দরজার সামনে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উষ্ণ বলে উঠলো,
“দাঁড়িয়ে আছো কেন? কাছে আসো। এতোক্ষণ তো আসার জন্য ছটফট করছিলে, এখন কি হলো?”
তনয়া যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। বিহ্বল তার অবয়ব। লোকটা কিভাবে বুঝল তাকে দেখার জন্য সে ছটফট করছে। উষ্ণ স্যারের ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি আভাস দিল অন্যকিছুর। সব বাঁধা অতিক্রম করে তনয়া ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। একটু জোরেই জড়িয়ে ধরেছিলো। উষ্ণ একপ্রকার ধাক্কা খেয়েই এক পা পিছিয়ে গেল। ঠোঁট চেপে হেসে তাকে আগলে নিল আরো। তনয়া তার বুকের মধ্যে মিশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। অন্যরকম আনন্দ হচ্ছে তার। এই আনন্দ মুখে বলে বোঝানো যায় না। কেবল চোখে দেখে বুঝে নিতে হয়। উষ্ণ তাই করল, তার আঁখি জোড়ায় চোখ ডুবিয়ে পরীক্ষা করে নিল। আলতো করে ভালোবাসা বসিয়ে দিল ঠোঁটের উপর। তনয়া ছিটকে দূরে সরে গিয়ে বলল,
“কি হচ্ছে? অফিস এটা।”
“প্রথমে জড়িয়ে ধরেছিলো কে শুনি।”
তনয়া ঠোঁট চেপে ধরল। এতোটা উতলা হওয়া তার উচিত হয়নি। কাচুমাচু স্বরে বলল,
“ডেকেছিলেন কেন?
উষ্ণ তাকে উপর থেকে নিচ অবধি যাচাই করল। এতক্ষণে বহুবার দেখছে তবু মন ভরেনি।এখনো ভরছে না। আসমানি রঙের সেলোয়ার কামিজে তনয়া কে অপূর্ব লাগছে। তার মধ্যে গলার মাঝে ঝুলছে সাদা রঙের পাতলা জর্জেটের উড়না। সব মিলিয়ে তাকে মেঘ কন্যা লাগছে। উষ্ণের নীলম্বরীর মতো একদম!
উষ্ণ একটা ফোন তনয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নাও।”
তনয়া ফোনটা তুলে নিল। নতুন ফোন! উষ্ণ তার গালে হাতটা রেখে বলল, “হ্যাঁ নতুন ফোন। দিবো দিব করে দেওয়া হলো না। নাও এবার।”
“এতো দামী ফোন কেন? এখন ওরা কতো কি বলবে জানেন?”
“সে তো এভাবেও বলবে। বসের বউ তুমি, তোমাকে হাতে রাখবে না আর কাকে রাখবে!”
বলেই দু হাতে কোমর জড়িয়ে ধরল তার। তখনি রুমের মধ্যে নক করা ছাড়াই ঢুকে পড়ে জেএস। তারা দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে গেল। তনয়া কোনো কথা ছাড়াই ফোন হাতে ছুটে বেরিয়ে গেল। উষ্ণ চোয়াল শক্ত করে জেএসের দিকে তাকাল। শা লা ঢোকার আগে অনুমতির কথা ভুলে গেল কিভাবে? এমন ব্যাডটাইমিং হয় কারো!
অফিসে সবার সাথে কথাবার্তা বলে ইরিশার মৃ*ত্যু খবর পেলো সে। ইরিশার সাথে সেদিনের পর আর তো দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু তার মৃ*ত্যু খবর পেয়ে দুঃখ পেলো সে। মেয়েটা এভাবে মা*রা গেল! ইশ, কি যন্ত্রণাটাই না পেলো। তনয়া অবাক হয়। তার এক্সি*ডেন্টের ব্যাপারে কেউই জানে না, কাউকে বলেনি সে কিভাবে সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছিলো। উষ্ণ স্যার তো সেই বিষয়ে কখনোই জিজ্ঞেস করেনি। কি তুচ্ছ মানুষের জীবন। সেদিন কাউকে মারা*র চেষ্টা করছিলো অথচ আজ নিজেই মা*রা গেল। কেউ কি জানত এরকম কখনো হতে পারে? কখনো কি টের পেয়েছিল এরকম কিছু হবে?
অফিসের তার নতুন ফোন দেখে সবাই অনেক কথা শুনাল। রসের কথা যাকে বলে। টিটকিরি মা*রার উপরই তো থাকল। তনয়া কেবল তাদের কথা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করিয়ে দিল। কি আর কথা বাড়াবে। ক্যান্টিনে চায়ের আড্ডায় কথা উঠে গেল,
“হ্যাঁ রে আমরা তো ভেবেছিলাম তুই তন্ময়ের সাথে প্রেম করছিলি। দেখলি জ্যোতি যা আমরা দেখি আর ভাবি তা কিন্তু সত্যি নয়। জল তো অন্যদিকে গড়িয়ে যাচ্ছিল!”
বহুদিন পর আজ তন্ময়ের কথা মনে পড়ল। মুখটা মলিন হয়ে উঠল। জ্যোতি সেই মেয়েটাকে চুপ করতে বলছে। তনয়া হাতড়াচ্ছে নতুন ফোনের দিকে। ইশ, তন্ময়ের নাম্বার টা আবারো হারিয়ে ফেলেছে। কে জানে? কি করছে ও? নিশ্চিত সব ঠিক আছে। হ্যাঁ ঠিকই থাকবে। তনয়া তুই আর ওসব বিষয়ে ভাববি না। মনকে বুঝাল, তন্ময় কে নিয়ে ভাবার সময় আর নেই। আর ভাবতে নেই তার ব্যাপারে। তন্ময়ের সাথে জীবনের সকল যোগাযোগ চুকি*য়ে ফেলেছে সে। সেই পথে আর পা বাড়ানোর কোনো দরকার নেই। পুরনো ফোনের মতো স্মৃতিগুলোও এখন পুরনো। ওসব ভেবে আর লাভ নেই। যা গেছে তো গেছেই!
উষ্ণ আর তনয়া অফিস থেকে বেরুলো একসঙ্গে। সামনের সিটে গাড়ি ড্রাইভ করছে জেএস। পিছনের সিটে বসা তনয়া আর উষ্ণ। তনয়া দূরত্ব রেখে জানালার কাছে গিয়ে বসেছে। উষ্ণ তার চুলগুলো কানে গুঁজে দিতেই হতচকিয়ে উঠল সে। তনয়া ভীত চোখজোড়া নজরে এতেই উষ্ণ বলে,
“কি হয়েছে? ভ*য় লাগছে? শরীর খারাপ নাকি?”
তনয়া মাথা দুলিয়ে না করল। উষ্ণ শুধাল, তবে?
তনয়া দুই হাতে নিজে যেচে তার বুকের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে চোখ বুঝল। মস্তিষ্কে হঠাৎ করেই পুরনো স্মৃতি গুলো অদ্ভুত ভাবে নাড়া দিয়ে উঠেছে। তন্ময় কে মনে পড়ছে। এটা ঠিক না,ঠিক না মনকে বোঝাচ্ছে। কিন্তু এই অনুভূতি ভালোবাসার অনুভূতি তো নয়! তন্ময়ের বাবার কি অবস্থা? মায়ের কি হাল এসব জানতে ইচ্ছে করছে? নতুন শহরে তন্ময় সব গুছিয়ে নিয়েছে তো।
তনয়ার মন খারাপ আঁচ করতে পেরেই উষ্ণ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “কেউ কিছু বলেছে তোমায়?”
তনয়ার হাঁসফাঁস লাগছে। ইচ্ছে করছে উষ্ণ স্যারকে সবটা বলে দিতে। মনের কথাগুলো বলে দিলে কি খুব খারাপ হবে। না! মনকে বুঝাল। যেখানে ভালোবাসার পরিমাণ বেশি সেখানে অভিমানের বোঝা আকাশসম। উষ্ণ স্যার এভাবেই তন্ময় কে সহ্য করতে পারেন না। আর এছাড়াও তনয়া তো কথা দিয়েছিল তন্ময় কে নিয়ে কিছু ভাববে না তবে! কথার খেলাপ তো সে করতে পারে না। চোখ বন্ধ করে নিয়ে লম্বা শ্বাস নিল। উষ্ণের গায়ে মাখা সমস্ত সুবাস তার নাকে এসে হানা দিচ্ছে। উষ্ণ স্যারের হৃদয়ের বিপ বিপ শোনা যাচ্ছে। তনয়ার অস্থিরতা ক*মে যাচ্ছে। সকল কিছু ঝাপসা লাগছে। বাইরের শোরগোলের শব্দ কেমন খাপছাড়া লাগছে। অদ্ভুত রকম শান্তির অনুভব করছে। মনকে এতোক্ষণে বুঝতে পারল সে। তন্ময়ের চিন্তা না, তার একটা আশ্রয়ের দরকার ছিল। দরকার ছিল শান্ত মনন একটি পরিবেশ, হৃদয় কে শান্ত করার চাবি কাঠি। এই তো সে পেয়ে গেছে। সকল ভাবনাচিন্তার মূর্ছা দিয়ে লেপ্টে রইল বুকের মধ্যে। চোখ বুজে পারি জমাল ঘুমের রাজ্যে।
উষ্ণ ঠোঁট দুটো চেপে ধরেছে। তনয়ার কেশের মাতাল করা সুবাস তাকে মাতাল করে তুলছে। সামনে জেএস না থাকলে আজ হয়তো এখানেই কিছু একটা ঘটে যেত। মনের ভাবকে সংযত করল। সামনের মিররে জেএসের চাহনি দেখে লজ্জা পেলো সে। মুচকি হেসে চোখ বাইরে সরাল। তনয়াকে আগলে নিল সযত্নে!
————-
তন্ময় তখন শহরের বাইরে। তনয়ার সাথে তার কয়েক মাইলের দূরত্ব! এই দূরত্ব মিটানো কঠিন কোনো ব্যাপার নয় তবে কাছে যাওয়াটাই কঠিন ব্যাপার। নিজের দুর্ভা*গ্যের কথা মনে পড়লে হাসি পায় তার। ভালোবাসা পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে। ভালোবাসা আগলে রাখতে গিয়েই আজ সে সর্বহারা, কাঙ্গাল, নিঃস্ব! নিজের বলতে এই দেহ ব্যতীত আর কিছুই নেই। কিছুদিন আগেই নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তনয়া আর উষ্ণ স্যারের বিয়ের খবরটা। সেও জেনেছিল। এবার একটু হলেও নিশ্চিত হওয়া গেল। তনয়া আর উষ্ণ স্যারের বিয়ের ব্যাপারটা গো*পন ছিল বলে মনে মনে বেশ হাঁসফাঁস করছিলো সে। কেন এতো গোপনীয়তা! বড়লোকেরা এসব গোপন সম্পর্কের আড়ালে থাকে কুৎ*সিত ভাবনা। তনয়ার ভাগ্যে আবার তেমন কিছু হবে না তো! তনয়াকে বলতে ইচ্ছে হয়েছিল কিন্তু লজ্জায় বলতে পারেনি। সেও তো দুঃখ ব্যতীত ওই মুখপুরীকে আর কিছু দিতে পারেনি। এই কথা বললে মেয়েটা নিশ্চিত গলা ফাটিয়ে হাসত। বলত, তুই যা দুঃখ দিয়েছিস এর কাছে এটা এমন আর বিশাল কি তন্ময়?” তাই তো, তনয়াকে দুঃখ ছাড়া আর কি দিতে পেরেছিল সে। কিন্তু আজ তনয়া সুখী। তার এই সুখের দিনেই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তাকে। অফিসে শরীফের সাথে সবসময় কথা হয় তন্ময়ের। তনয়ার এক্সিডে*ন্টের কথাও জানতে পেরেছিল সে। আজ নাকি অফিসে এসেছে। সুস্থ এখন! এক্সি*ডেন্টের কথা শুনে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলো কিন্তু কল ঢুকেনি। উষ্ণ কে কল করার সাহস হয়নি। তাই এইখানেই দ*গ্ধ হৃদয় নিয়ে মুখ বুজে ছিল সে।
তনয়া এখন সুখী, মনের মানুষ পেয়েছে, ঘর হয়েছে, সংসার হয়েছে। মেয়েটা সবসময় একটা সংসার চাইতো। নিজের সংসার! নিজের হাতে সাজানো সংসার! পেয়েছে! এই জেনেই তন্ময় খুশি। সর্বদা দোয়া করে মেয়েটা যেন এভাবেই সুখী হয়, কোনো দুঃখ যেন তাকে ছুইতে না পারে। বিশেষ করে তার মতো দুঃখ!
#চলমান
#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৬২
রাতের খাবার বের করে গরম করছে তনয়া। খালা এসে দুপুরেই সব রান্নাবান্না করে যান। এক বেলার রান্না আরকি। দুপুরে তারা বেশিরভাগ সময়ই বাইরে খাওয়া দাওয়া করে। সকালে তাড়াহুড়োয় দুজনে নাস্তা সেরে নেয়। মাঝে মাঝে তনয়া জলদি উঠে আবার সুন্দর করে পরোটা বানায়। তবে সবসময় সম্ভব হয় না। উষ্ণ এই নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। আসলে খাবার নিয়ে তার কোনো অভিযোগ হয় না। তার সামনে যা দেওয়া হবে সে সেটাও খেয়ে নেবে। তনয়া এই জন্য অবাক হয়। করলা ভাজি ওর পছন্দ না, ভাজিও করতে পারে না। যেভাবেই করুক না কেন? তিতকুটে ভাবটা যেতেই চায় না। তবুও একবার বানিয়েছিলো। নিজের পাতে ভাজি নিয়ে একটুও খেতে পারেনি। অথচ উষ্ণ চুপচাপ খেয়ে নিয়েছে। একটুও অভিযোগ করেনি, জিজ্ঞেস ও করেনি করলা এতো তিতে লাগছে কেন? আমি আর খাবো না! এমন কিছু। তনয়া আশা করেছিলো। জিজ্ঞেস ও করেছিল, খেতে কেমন হয়েছে?”
উষ্ণ তার দিকে ফিরে কিঞ্চিত হেসে জবাব দিল, “ভালো!”
“তিতে লাগছে না?”
“করলা খেতে তো তিতেই লাগবে তাই না।”
“না, ঠিক করে রান্না করলে লাগে না। মৌ রান্না করে খুব সুন্দর করে। তখন তিতে লাগে না। আমি করলেই তিতে লাগে। আপনার খেতে ইচ্ছে না করলে খাবেন না। আমি ও তো খাচ্ছি না। জোর করে খাওয়ার কোনো মানে হয় না!”
“তোমায় কে বলল আমি জোর করে খাচ্ছি, আমি তো খাচ্ছি ভালোবাসে!”
তনয়া আঙুল দিয়ে ভাতের প্লেটে নাড়াচাড়া করে জবাব দিল, “ইশ, তিতে করলা খাচ্ছে ভালোবাসে।”
“তোমার এতো কষ্ট লাগলে একটা উপায় বলে দিচ্ছি। খাবার শেষ করে আমার কোলে বসে আমায় দু মিনিট ধরে চুমু খাবে। তাহলেই হবে, ওই ঠোঁটের চেয়ে মিষ্টি কোনো স্বাদ আমায় তিতে ভাবটা ভুলিয়ে দিতে পারবে না!”
তনয়া নিশ্চুপ হয়ে গেল। কেবল কিছুক্ষণ লোকটার দিকে পলক ঝাঁকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। উষ্ণের ঠোঁটে তখনো দুষ্টু মিষ্টি হাসি। সে বলে উঠলো, “রাতের জন্য একটু করলা ভাজি বাঁচিয়ে রেখো তাহলে!”
তনয়া গোলগোল চোখ করে তাকাতেই উষ্ণ চোখ টিপ দিল। কি হাই লেভেলের অ*সভ্য লোক। তার*ছিড়া, মাথা*ছিড়া, ভাদাইম্যা লোক! ও কথা মনে পড়তেই আনমনেই হেসে উঠল তনয়া। আচমকা কোমরে ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে উঠে পিছন ফিরল। সামনে উষ্ণ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। উষ্ণ দাঁত একপাটি বের করে শক্ত করে চেপে ধরে বলল, “কি? ভ*য় পেলে নাকি?”
“উফ কাজের সময় বিরক্ত করবেন না তো।”
“তো কখন করব? সারাদিন তো ব্যস্তই থাকো। অফিসে তুমি আমার এতো কাছে থাকা সত্বেও হাতের নাগালে পাই না। এখন ঘরেও কি পাবো না?”
তনয়া বুঝল বেচারার কষ্ট। পরনে তার কালো রঙের টি শার্ট। পাতলা টি শার্ট! এই গরমে পরে আরাম আছে। সাথে সাদা রঙের প্যান্ট। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পাতলা টি শার্ট পরে ভুল করেছে। আরামের চেয়ে অ*স্বস্তি হচ্ছে বেশি। লোকটা এমন করে ঝাপ্টে ধরে আছে যে শুড়শুড়ি লাগছে। তনয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ছোটাছুটি করছে উষ্ণ ছাড়ছে না। বরং আরো শক্ত করে চেপে ধরেছে। তনয়া হার মেনে বলে উঠলো,
“কি চাই আপনার?”
উষ্ণ ফিসফিসিয়ে জবাব দিল, “একটু ভালোবাসার ছোঁয়া!”
তনয়া হাত দুটো তার গলায় জড়িয়ে ধরল। লোকটা গোসল সেরে এসেছে। চুলের পানি ঘাড় বেয়ে পড়ে টি শার্ট ভিজে গেছে। কালো রঙের টি শার্ট হওয়ায় এতোক্ষণ সে খেয়াল করতে পারেনি। এবার ছুঁয়ে দেখে বুঝতে পারল। আশ্চর্য ভাবে তাদের দুজনের পরনে কালো রঙের টি শার্ট আর ক্রিম রঙের প্যান্ট। উষ্ণ ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে চুলে মাথা ঝাঁকিয়ে উঠল। তনয়া চোখ মুখ বন্ধ করে নিল। পানির ছিটে ফোটা এসে আচড়ে পড়ছে তার মুখাবয়বে। উষ্ণ হেসে বলল,
“হারিয়ে গেছিলে। ফিরে আনলাম।”
“অসভ্য*তামি করছেন।”
“না এখনো শুরু করিনি। তুমি পারমিশন দিলে এখনি করব।”
তনয়া ঠোঁট কামড়ে হেসে তার পিঠে চ*ড় মারল। উষ্ণ বলে উঠল, “মে*রেছো, এবার ভালোবেসে শোধবোধ করে দাও দেখি।”
“উফ, আপনি তো নাছোড়বান্দা!”
উষ্ণের দৃষ্টি তখনো তনয়ার গোলাপি নরম মসৃণ ওষ্ঠজোড়ার দিকে। কোনো কথা ছাড়াই ছুঁতে গেল ওমনি তনয়া দূরে পালিয়ে গেল। নিজেকে আটকে রাখা একটু কষ্টক*র হয়ে যাচ্ছে যেন। উষ্ণ শুকনো ঢোক গিলে আচমকা তার গলার কাছে চুমু খেয়ে বসল। উষ্ণ স্যারের উষ্ণ ছোঁয়ায় বরাবরের মতোই কেঁপে উঠল তনয়া। নিজেকে ধাতস্থ করে বলল, “কি করছেন কি?”
“ভ*য় কেন পাচ্ছো? এ বাসায় তুমি আমি ছাড়া আর কে আছে?”
তনয়ার নেত্রপল্লব মেঝের দর্শন করে জবাব দেয়, “আপনি ছাড়া আর কার কাছে লজ্জিত হই আমি। আমার সবচেয়ে বড় লজ্জার কারণই তো আপনি!”
“এই লজ্জা নিয়ে কতোদিন থাকবে?”
“সারাজীবন!”
উষ্ণ ফের তার কাছে এগিয়ে এসে। এবার একটু প্রিপারেশন নিয়ে নিল। একহাতে তনয়ার ঘাড় ধরে রাখল। এবার যেন আর পালাতে না পারে। তনয়া ঠোঁট দুটো চেপে দাঁড়িয়ে আছে। উষ্ণ এগিয়ে আসছে। কাছে এসে কেবল ছুঁয়ে দেখা বাকি। তনয়া তৎক্ষণাৎ বলে উঠল, “কি জানি পুড়*ছে!”
“পুড়*ছে মানে?”
দুজনে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল, তরকারি পু*ড়ে যাচ্ছে। উষ্ণ তনয়াকে ছেড়ে দিল। তনয়া ছুটে গিয়ে চুলোর আঁচ নিভিয়ে তরকারি পাতিল নিয়ে বেসিসের নিচে রেখে পানি ছেড়ে দিল। হতাশা ভরা চাহনি নিয়ে ফিরে তাকাল উষ্ণের দিকে। উষ্ণ কাচুমাচু হয়ে মাথা চুলকাচ্ছে। কেবল মাত্র তার কারণেই এতোখানি তরকারি পু*ড়ে ছাই হয়ে গেল। তনয়ার নিজেকেও আহম্মক মনে হচ্ছে। এতোক্ষণ ধরে তরকারি পুড়*ল অথচ সে আঁচই করতে পারল না। কেন? উষ্ণ স্যার সাথে ছিল বলে। তিনি সাথে থাকলে বুঝি তনয়ার সকল ইন্দ্রিয় ছুটিতে চলে যায়। কারো কাজ করতে ইচ্ছে করে না। সবাই একদম যেন উষ্ণের হাতে ফেলে নিয়ে নিস্তার হয়ে যায়। কি আশ্চর্য! অবাক না হয়ে পারল না সে। উষ্ণ ফ্রিজের দিকে চেয়ে বলল, ডিম ভেজে খাই তাহলে!
#চলমান