#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব ২ (ক)
#ইস্পিতা_রহমান
নিজের রুমে শুয়ে শুয়েই সব শুনছিলো ইরফান শিকদার।অর্কভের চলে যাওয়াকে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।ভাবছে তার নাতনীটার জীবন বুঝি সে নিজের হাতে নষ্ট করে দিলো।হুট করে এ সিদ্ধান নেয়া তার উচিত হয় নি।এমনিতেই তিনি অসুস্থ তার উপর আজকের এই কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন।সবাই ছুটে যান উনার কাছে।ইরফান শিকদার একে একে সবার কাছে ক্ষমা চাই।শেষে ছোট্ট নাতনীটির কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে বলে,
–দিদিভাই,তোর ভালো করতে গিয়ে হয়তো আরো খারাপ করে বসলাম।আমাকে ক্ষমা করে দিস।পারলে নিজের স্বামীকে ভুল,সঠিক বুঝিয়ে দিস।আর আগলে রাখিস।
কথাটা বলেই উনি শেষ নিঃশ্বাস নেয়।রায়াতের ওইটুকু মনে দাদুর এসব কোন কথায় বোঝে না।কেনো তার দাদু তার কাছে ক্ষমা চাইলো এই প্রশ্ন বার বার ওর ছোট্ট মনে মাছের কাঁটার ন্যায় প্রশ্ন হয়ে বিধে রয়েছে।
সবাই কেঁদে উঠে।আঞ্জুমান আরা ভাবে তার বাবার মৃত্যুর জন্য তার ছেলেই দায়ী।অর্কভ যদি ওভাবে চলে না যেতো তবে তার বাবা এতোটা অসুস্থও হয়ে পড়তোনা আর তাদের ছেড়ে যেতো না।
সেই ঘটনার পর থেকে আঞ্জুমান আরা আর ছেলের কোন খোঁজখবর নেয় নি।ভাবে বাপ-দাদার কাছে আছে।তো থাকুক।ওর জন্য সে নিজের বাবাকে হারিয়েছে।
++—- বর্তমান —-++++
ভার্সিটিতে ঝামেলা লাগার জন্য পুলিশ এসেছে।কিছু বহিরাগত ছেলে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে মেয়েদের টিজ করছিলো।রায়াত সেটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেই ঝামেলায় জড়িয়ে যায়।পুলিশের গাড়ি এসে ভার্সিটিতে থামলো।গাড়ি থেকে সদ্য জয়েন করা এক হ্যান্ডসাম অফিসার নামলো।সবাই সেই হ্যান্ডসাম পুলিশের দিকে তাকিয়ে আছে।রায়াতও জেনো হা করে তাকিয়ে আছে।রায়াতের পাশে থেকে ওর বান্ধবি মাইশা বলে উঠে,দোস্ত,এই মাল থানায় আছে জানলে তো আমিই আসামী হয়ে কবেই জেলে যেতাম রে।
রায়াত কুনই দিয়ে গুতো মেরে বলে– চুপ কর।দেখছিস না এদিকে আসছে।
পুলিশ আসা দেখে প্রিন্সিপাল এগিয়ে এসে তার সাথে হ্যান্ডসেক করলো।এরপর তাকে এগিয়ে এনে বলে,
–দেখুন স্যার,এই ছেলেগুলো বাইরে থেকে এসে ভার্সিটির মধ্যে মেয়েদের উতক্ত করছে।কিছু বলতে গেলেই বেয়াদবি আচরণ করছে।রায়াত এদিকে এগিয়ে এসো।বলো তোমাদের সাথে ওরা কেমন বিহ্যাব করেছে।
–জি স্যার।
বলেই রায়াত সামনে এগিয়ে আসে।পুলিশ অফিসার ও রায়াতের চোখাচোখি হয়।অফিসার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত রায়াতকে এক নজরে দেখে বলল,
–ওকে মিস,রায়াত বলুন কি কি করেছে ওরা? ওহ সরি।মিস নাকি মিসেস?
–মিস রায়াতই বলুন।
ভ্রুকুচকে অফিসারটি বলে শিউর।
রায়াত তখন সব খুলে বলে ছেলেগুলো কিভাবে মেয়েদের হেনস্থা করেছে।অফিসার কনস্টবলকে বলে ওদের এরেস্ট করতে।তারপর প্রিন্সিপাল এর কাছে গিয়ে আবার হ্যান্ডসেক করে বলে–
–আজ প্রথম আপনাদের এখানকার থানায় জয়েন করলাম।আর আজ প্রথমই এমন বকাটেদের ধরতে এলাম।কথা দিচ্ছি,আমি থাকতে এই এলাকার আর কোন বখাটেদের অস্থিত্ব থাকবে না।
মাইশা আবার রায়াতের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে– দোস্ত কথা বলার ধরণটাও তো জোশ।উফফ আজই নাকি জয়েন করছে।আমি তো রোজ থানায় একটা করে কমপ্লেন নিয়ে যাবো।
–উফফ, চুপ করবি।কি কি বলছে মনোযোগ দিয়ে শোন।
অফিসার বেশ কিছু উপদেশ মুলক কথা বলে চলে গেলো।সবাই যে যার যার মত চলে গেলে রায়াত ঠাই দাঁড়িয়ে কি সব ভাবছে।তখন নুড়ি ওকে ধাক্কা দিয়ে বলে– কি রে কি হলো?ক্রাশ খেয়ে কি তুই স্তব্ধ হয়ে গেলি।ঘোরের মধ্যে রায়াত শুধু বলে–
–নেইমপ্লেটে কি নাম ছিলো রে অফিসারের?
মাইশা বলে উঠে- এ.ভি। কেনো রে?
–নাহ কিছু না এমনি।
মাইশা তখন বলে,চেহারার মত নামটাও কিউট।চল ক্যান্টিনে যায়।ক্ষুধা লেগেছে।
তিন বান্ধবি মিলে আড্ডা দিচ্ছে ক্যান্টিনে।মাইশা বলে,এ ভি এর প্রেমে পরে গেছি রে কেউ আমাকে প্রেমের জলে থেকে টেনে তোল।
নীলিমা তখন বলে উঠে, কি এটিচিউট ছিলো ওই অফিসার এ.ভি এর দেখেছিস?কোন মেয়ের দিকে ফিরেও তাকায় নি।পাত্তা দিলে তো প্রেম করবি।
মাইশা তখন বলে,পাত্তা দিলে মানে?কি বলতে চাইছিস কি নিলু?ওই এভি কে ,জাস্ট দুইদিনে প্রেমে পড়বে আমাদের রায়াতের।
–তাই নাকি?তো করে দেখা?
অকপট জবাব নীলিমার।
মাইশা তখন বলে,নিলু,তুই কিন্তু হেরে যাবি।তুই ভালো করেই জানিস রায়াতের প্রেমে পুরা ক্যাম্পাস আর মহল্লার ছেলেরা ডুবে আছে।
নীলিমা বলে,সবাইকে এক ভাবিস না।
রায়াত বলে,,ছাড় না মাইশু পাখি।
–কেন ছাড়বো।তুই ওই এ ভি এর সাথে প্রেম করেই দেখাবি।ব্যাস আমার শেষ কথা।
–আ আ আমাকে তোদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে টানছিস কেন তোরা বল?
মাইশা ও নিলীমা এক সাথে বলে,কারন তুইই পারবি এক এটিচিউটওয়ালা এ ভি এর এটিচিউট ভেঙে চুরমার করতে।ক্যাম্পাসে যত এটিচিউট ওয়ালা ছেলে আছে সবাই তোর কাছে বিলাই।আর ওই অফিসার ক্যাম্পাসের বাইরে বলে তার এটিচিউট ভাঙবো না?
–ওকে চল।রায়াত বলল।
মাইশা বলে,কোথায়?
–থানায়।শালার এটিচিউট ভেঙে গুরিয়ে দিয়ে আসি।
থানা থেকে বেড়িয়ে বান্ধবিদের থেকে বিদায় নিয়ে রিকশা করে বাড়ির যাচ্ছে রায়াত।এক মনে ভেবে যাচ্ছে,চেহারাটা অনেক মিল,নামও মিলে যাচ্ছে।তবে কি এই সে?না না উনি সে হতে যাবে কেনো?এক নাম তো অনেকেরই আছে।সে যদি হতো তবে এখানে আসলে সর্বপ্রথমআমাদের বাড়িতেই উঠতো।এখানে তো আর থাকার জায়গা নেই।আর সে বা কেনোই আসবে।যে ক্ষোভ নিয়ে চলে গেছে দাদার কাছে।নানার বাড়ির চৌকাঠ অন্ততপক্ষে আর পেরোবে না।শুধু শুধু আমি টেনশন করছি।
বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে গেট খুলে প্রবেশ করতেই প্রথমেই সেই পুলিশের গাড়িটি দেখতে পেলো রায়াত।মুহূর্তে মনে পড়ে গেলো থানায় যে আকাম করে এলো তার জন্য কি কমপ্লেইন করতে আসছে তার বাবার কাছে।শুকনো ঢোক গিলে মাইশাকে কল দেয়।ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই রায়াত ভয়ার্ত স্বরে বলে,
–অফিসার অর্কভ আবছার ভুঁইয়ার গাড়ি আমার বাড়ির সামনে।
–কিহ!কেনো?
–মনে হয় বাবার কাছে কমপ্লেইন করতে আসছে।এখন কি হবে?
–তুই তো শ্যাষ রায়াত।শালা এ ভি সত্যি সত্যি কমপ্লেইন করতে চলে গেলো।শালা তো সেই মাল একটা।
–এখন আমি কি করবো?
–তা জানিনা।আমি বাড়ি থেকে পালাবো।কারন একটু পর নিশ্চয় আমারবাড়িতে আসবে।
রায়াত ফোন রাখে।থানায় উল্টাপাল্টা কাজের কথাগুলো মনে পরে।
চলবে..
#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব২(খ)
#ইস্পিতা_রহমান
থানার ভেতরে প্রবেশ করতে প্রথমেই এ ভি এর সাথে দেখা হয়ে যায় তিন বান্ধবির।এ ভি তখন বেরোতে ছিলো।ওদের দেখে এ ভি সুধায় ওরা এখানে কেনো?রায়াত পিলারে হাত রেখে ঘুরে ভাব নিয়ে দাঁড়ায়।মাইশা রায়াতকে দেখিয়ে বলে,আসলে স্যার ওর বুকে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে।
এ ভি একবার রায়াতকে দেখে মাইশাকে বলে,উনার বুকে ব্যথা,তো এখানে কি?এইটা তো থানা। হাসপাতালটা পূর্বদিকের রোডে অবস্থিত।
নীলিমা বলে,কিন্তু ওর মন তো আনচান করছে। মনের অবস্থা খুউব খারাপ।
এ ভি কিছু ভেবে বলে,আই থিংক মানসিক প্রবলেম।পাবনা যেতে পারেন।ব্যবস্থা করে দিবো?চেনা জানা লোক আছে।
বোকার মতো মাইশা বলে,আপনার ফোন নাম্বারটা পেলে ও এমনিই ভালো হয়ে যাবে
ভ্রুকুঞ্চিত করে এ ভি বলে–কিভাবে?
নীলিমা তখন মাইশার বোকামি ঢাকতে বলে,আসলে স্যার যদি এর পর কেউ ডিস্টার্ব করে তখন আপনাকে কল করতে পারবে তাই।
–ওও।কনস্টেবল এর নাম্বার নিয়ে যান।ওকে কল করলেই হবে।
কথাটা বলেই এ ভি কনস্টেবল জব্বারকে ডাকে।
মাইশা রায়াতকে কুনই দিয়ে গুঁতো মেরে ফিসফিসিয়ে বলে,দেখছিস কত্ত বড় অপমান।শালা বড্ড খারুজ মাল মনে হচ্ছে।
রায়াত এবার সামনে ঘুরে এ ভি কে বলে,বোঝেন না একটা মেয়ের চোখের ভাষা।তার মনে কেনো উথালপাতাল ঝড় উঠে।কেনো বুকটা আনচান করে।
এ ভি একটু ঝুঁকে বলে,কেনো?
পাশে থেকে মাইশা বলে উঠে,প্রেমে পড়লে।
এভি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শব্দ করে গলা পরিষ্কার করে বলে,মনে হচ্ছে এসব বিষয়ে পি এইচ ডি করা আপনাদের।
নীলিমা বলে,না না স্যার।আসলে আপনাকে দেখার পর থেকেই ওর বুকের মধ্যে তোরপার শুরু হয়েছে।
—মেয়ে মানুষ ফ্লাট করে জানা ছিলো না।আজ দেখলাম।এখন মনে হচ্ছে যে ছেলেগুলোকে ধরে নিয়ে আসলাম ওরা ঠিক কথায় বলছে।তোমরায় ওদের আগে আগ বাড়িয়ে জ্বালাতন করতে গিয়েছিলে।
থানার সেলের মধ্যে থেকে ছেলেগুলো বলে উঠে,হ্যা হ্যা স্যার বুঝেছেন এবার।ওরাই আমাদের আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছিলো যখন আমরা ওদের কথার পিঠে কথা বলে সাই দিয়েছি তখন ওরা আমাদের সাথে ঝামেলা লাগায় বলে আমরা নাকি ওদের টিচ করেছি।
–হু।এই মেয়ে এই তোমার নাম কি?
রায়াতের উদ্দেশ্যে বলে এ ভি।
রায়াত থতমত খেয়ে যায়।তবুও সবার সামনে নিজে স্বাভাবিক দেখায়।বলে,রায়াত ইফতা।
কানে হাত দিয়ে না শোনা ভান করে একটু ঝুঁকে এ ভি করে,কি কি?ইফতারি?
রায়াত চমকে তাকায় এ ভি এর দিকে।ইফতা নাম কে ইফতারি বলে অর্কভ ভাই ওকে ভেঙাতো।কখনো রায়াত বা ইফতা বলতো না।এ ভি এর মুখে এই কথা শুনে ওর অর্কভের কথা মনে পড়ে গেলো।এ ভি এবার তিনজনকেও বলে,এই তোমাদের বাবা-মা রা জানে তোমরা ভার্সিটিতে এসব করো?ছেলেদের টিজ করো,তাদের থেকে ফোন নাম্বার চাও।
মাইশা হুট করে বলে উঠে, না না স্যার সবার থেকে তো নাম্বার চাই না।শুধু আপনার থেকেই চেয়েছি।কারন আমাদের বান্ধবি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
কুনই দিয়ে এক গুঁতো মেরে দেয় রায়াত মাইশাকে চুপ করার জন্য।
মাইশার কথা শুনে এ ভি বেষম লেগে যায়।জব্বার এক গ্লাস পানি এনে দেয়।পানি খেয়ে এ ভি বলে,
–ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো,তোমার বান্ধবির কাছে যে এক নজর দেখাতেই ও আমার প্রেমে পড়ে গেলো?হাউ সিলি।
শুনো মেয়ে,তোমাদের বলছি,এই অর্কভ আবছার ভুঁইয়ার কাছে ভালোবাসা এতোটা মূল্যহীন না যে যাকে তাকে আই মিন অপাত্রের হাতে দান করে।ধমকে অর্কভ আবার বলে,যাও বাড়ি যাও।ফার্দার যদি থানার আসে পাশে তোমাদের দেখেছি না।তাহলে সব কটা কে লকাবে পুরবো।মা বাবা পড়াশুনা করাতে ভার্সিটিতে পাঠিয়েছে আর মেয়েরা দেখো প্রেম বিলায়ে বেরাচ্ছে।
অর্কভের কাছে অপমান হয়ে তিন বান্ধবি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে থানা থেকে বের হয়।আগে কখনো কোন ছেলে ওদের এভাবে বলে নি।বরং ছেলেগুলা কে কিছু না বলতেই উল্টা ওদের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে অনেকে।আর ওরা নাকে দড়ি দিয়ে সবগুলারে নাকানিচোবানি খাইয়েছে।
একটা বড় শ্বাস টেনে রায়াত বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়।থানা থেকে যদি কেউ কমপ্লেইন করতেই আসে বাবার কাছে তবে সেও মিথ্যা সত্যি বলে বাবাকে বুঝিয়ে দেবে ওই অর্কভই মিথ্যা বলছে।সকালে যে ছেলেগুলকে ধরে থানায় পুরেছে তাদের থেকে ঘুষ খেয়ে এখন ওর নামে মিথ্যা বলছে।মনে মনে এসব বুদ্ধি এটে নেয় রায়াত।
ধীরে ধীরে বাড়ির সদর দরজার দিকে এগুচ্ছে রায়াত।সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই থমকে দাঁড়ায়।ড্রেয়িংরুমেই সেই অফিসার টি দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ঘিরে আছে পরিবারে সবাই। রায়াতের ফুপু আঞ্জুমানের চোখে জল।এতো বছর পর ছেলেকে পেয়ে তিনি অশ্রুশিক্ত।দাদি,বাবা মা ভাই সবার মুখে জেনো খুশির ঝলক।রায়াতের পা জেনো আর চলছেই না।তার মানে সে যা ভেবেছিলো তাই।এই এস আই টিই তার ফুপুর ছেলে অর্কভ আবছার।সদর দরজার রায়াতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রায়াতের মা রমেনা বেগম বলে– কিরে তুই ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
রমেনা বেগমের কথায় সকলে দরজার দিকে তাকায়।অর্কভ ঘাড় ঘুরিয়ে রায়াতের দিকে তকায়।
আঞ্জুমান আরা হেসে বলে– দেখ রায়াত দেখে কে এসেছে।আমার ছেলে ফিরে আসছে দেখ।
রায়াতের দাদি আনোয়ারা বেগম বলে– দিদি ভাই দেখো,আমার দাদুভাই,আমার নাতজামাই ফিইরা আইছে।
এই কথা শুনে সকলের মুখের হাসি বিলিন হয়ে যায়।রায়াতের বুকের মাঝে জেনো উথালপাতাল ঝড় উঠে যায়।
মনে মনে ভাবে দিব্বি দিব্বি তো ভালো ছিলো। এর মধ্যে এ লোকের আগমনের দরকার কি ছিলো।
আনোযারা বেগম আবার বলে– কিরে দিদিভাই ভেতরে আই।নাতজামায়ের জন্য শরবত টরবত কর।
তখন সাফেকুর রহমান বলে– আহ মা।তুমি এসব পুরোনো কথা কেনো তুলছো আবার।দেখছো ছেলেটা কতদিন পর ওর মায়ের কাছে ফিরে আসছে।তুমি কি আবার চাও ও বুবুর কাছে থেকে চলে যাক।রায়াত মা,যাও তোমার রুমে যাও।ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও গিয়ে।
রায়াত মাথা ঝাকিয়ে হ্যা সম্মোধন করে ভেতরে চলে যায়।
অর্কভ ওর মামাকে বলে– এখন থেকে আমি এখানেই থাকবো।আপনার কোন অসুবিধা নেই তো মামা?
–না না অসুবিধা হবে কেনো?তোমার জন্য তো তোমার ঘরটা পড়েই আছে।এতোদিন স্বযন্তে বুবু তোমার ঘরটা সাজিয়েগুছিয়ে রেখেছে।তা কবে চাকরিতে জয়েন করলে?
–আজই ঢাকা থেকে এসে এখানকার থানায় জয়েন করলাম।তারপর ভার্সি……না মানে তারপর এখানে এলাম।
চলবে….
#তোর_মন_পাড়ায়
ইদের বিশেষ পর্ব
#ইস্পিতা_রহমান
“অর্কভ ভাই,ইদ বোনাস দিন।”
ইদের নামাজ পড়ে এসে সবে পাঞ্জাবি খুললো অর্কভ।গায়ে সাদা সেন্ডো গেঞ্জি।পাঞ্জাবিটা রেখেই রায়াতের কথা শুনে পেছনে ফিরে তাকালো অর্কভ।ইদের নতুন ড্রেস পরে সেজেগুজে পাঙ্কু মেরে দাঁড়িয়ে আছে রায়াত।অর্কভ রায়াতের আপাদমস্তক দেখলো।সরু দৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অর্কভ বলল,
–কি রে এতো সেজেছিও যে,তোকে দেখতে একদম কুরবানির গরুর মতো লাগছে।
কথাটা বলেই পেছনে ফিরে লুঙ্গিটা নিয়ে পরার জন্য উদ্যত হয়।অর্কভের কথা রায়াত কিছুটা রেগে গিয়ে বলে,
–আমার সাজ আপনাকে দেখতে হবে না।আগে সালামি দেন।
অর্কভ আবার রায়াতের দিকে ঘুরে বলে,সালামি দিবো যে,সালাম করেছিস?
রায়াত মুখে সালাম দেয়।অর্কভ বাঁকা হেসে বলে,পা হাত দিয়ে সালাম কর।
–এহ,বললেই হলো।পায়ে হাত দিয়ে সালামের কোন নিয়ম নেই।
–তাহলে তোকে সালামি দিবো না।যা ফোট।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রায়াত অর্কভের ঘরে থেকে বেরিয়ে সোজা রান্নাঘরে যায়।আঞ্জুমান আরা ও রমেনা বেগম রান্নার কাজে ব্যাস্ত।রায়াত ফুপিকে বলে,
–জোর করে আমাকে তোমার ছেলের ঘরে ঢুকিয়ে দিলে সালামি আনতে।তোমার ছেলে সালামি তো দিলোই না উল্টা তাড়াই দিলো।কঞ্জুসের বাচ্চ কঞ্জুস।
–কে কঞ্জুস
ভরাট গলায় পেছন থেকে অর্কভ বলে উঠলো।তিনজনই অর্কভের গলা পেয়ে পেছনে ঘুরে।
–আপনি
বলেই রায়াত, অর্কভকে মুখ ভেংচি দিয়ে রানাঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।অর্কভ রায়াতের হাত ধরে ধরে।রায়াত ঘাড় ঘুরিয়ে অর্কভের দিকে তাকায়।অর্কভ এক ঝাটকা টানে রায়াতকে সামনে দাড় করায়।এরপর রায়াতের হাতটা উচু করে ধরে পকেট থেকে টাকা বের করে এর হাতের তালুরে দিয়ে বলে,
–আমার প্রথম মাসের স্যালারি।সবটা তোর, ইদ বোনাস।
অবাক হয়ে রায়াত অর্কভের দিকে তাকায়।আঞ্জুমান আরা ও রমেনা বেগমও অবাক হয়।তবে কিছুটা আঞ্জুমান আরা খুশি হয়।রায়াত টাকাগুলোর মধ্যে থেকে একটা হাজার টাকার নোট বের করে নিয়ে বলে,
–জাস্ট এইটা হলেই চলবে।এতোটা প্রয়োজন নেই।
পাশে থেকে আঞ্জুমান আরা বলে,রায়াত,এই সুযোগ আর কখনো পাবি না।দিচ্ছে যখন নিয়ে নে।
–নাহ।উনার প্রথম স্যালারি। কেনো নিবো আমি!
–কারন আমি তোকে দিয়েছি তাই নিবি।
–কিন্তু আপনার প্রথম স্যালারি এইটা।
–আর সেই জন্যই এইটা খুব স্পেশাল তাই তো তোকে ইদ বোনাস দিলাম।।
অর্কভ আরেকটা শপিং ব্যাগ রায়াতের দিকে এগিয়ে দিয়ে দেয়।
–এইটা তোর ইদের গিফট।
–কি এইটা?
–ড্রেস।
আঞ্জুমান আরা এগিয়ে এসে রায়াতের কাঁধে হাত রেখে বলে,মনে আছে তোর রায়াত,ছোট বেলায় তুই বলতিস অর্কভ ভাই,তুমি চাকরি করলে আমাকে ইদ বোনাস দিবে,ইদে ড্রেস কিনে দিবে।আজ তোর সেই আবদার পূরণ করেছে আমার ছেলে।
–ছোট বেলায় এসব বলতাম বুঝি।
রায়ায় ওর ফুপুর দিকে তাকায়।
রমেনা বেগম তখন বলে,,হু বলতিস তো।কত ইদে যে তোকে কাঁধে করে নিয়ে সারা পাড়া ঘুরেছে অর্কভ।চরকি কিনে দিয়েছে।তুই ওর কাঁধে বসে তুই ওর চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে একদম দিতিস।
রায়াত লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে।
অর্কভ স্মিত হেসে বলে,সেই যে একবার তোমাদের না বলে,ওকে কাঁধে বসিয়ে ইদগা মাঠে নিয়ে গিয়েছিলাম।তোমরা খুঁজে খুঁজে হয়রান।ফিরে আসার পর মা আমাকে পিটুনি দিয়েছিলো।
আঞ্জুমান আরা রায়াতকে বলে অর্কভের দেয়া ড্রেসটা পরে আসতে।অর্কভ চলে যায়। বলে এখন চললাম,মামা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। জি
বাড়ির সামনে,কোমড়ে গামছা বেঁধে, স্যান্ডো গেঞ্জি পরে বসে বসে চা*প্পড় দিয়ে, মাংস কা*টছে অর্কভ।সাথে আছে সাদেকুর রহমান।রায়াত পা টিপে টিপে গিয়ে অর্কবের পাশে গিয়ে বসে বলে,
–পুলিশ আজ ফুলিস হয়ে কষায়গিরি করছে।গরু কাটতে গিয়ে সে নিজেই গরু হয়েছে।
চাপ্পড় তুলে অর্কভ বলে,তবে রে,
রায়াত উঠে ভৌ দৌড় দেয়।
এই পর্ব অন্য কোন পর্বের সাথে মিল খুজবেন না।এইটা জাস্ট এমনি আজ লিখলাম।