#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব ৩
#ইস্পিতা_রহমান
“শুনো,তোমরা আমাকে উনাকে হ্যাসবেন্ড মানতে একদম বলবা না।উনাকে আমি ফুপাতো ভাই হিসবেই মানবো।সেই কোন ছোট বেলাই বিয়ে হয়েছে।যা আমি ভুলেই গেছি।সেই বয়সে হ্যাসবেন্ড কাকে বলবে বুঝতামই না।সো এখন এসব আমি মানতে পারবো না।প্লিজ তোমরাও এসব ভুলে যাও।উনাকে ফুপুর ছেলে হিসেবে মেনে নাও।জামাই না।”
কথাটা বলেই হন হন করে চলে গেলো রায়াত।দূর থেকে অর্কব সবই শুনলো।তবে তার মুখে কোন হেলদোল নেই।
“ও আঞ্জুমান, কি বলে এই মেয়েটা?বিয়ে তো বিয়েই।এখন যখন তোর ছেলে মানে দাদুভাই ফিরে আসছে এখন কিসের সমস্যা বল।কত শখ করে ওর দাদা ওকে বিয়ে দিয়েছিলো।”
আনোয়ার বেগম মেয়ে আঞ্জুমানকে এই কথা বলল।রাতের দিকে আনোয়ারা বেগম নাতনী রায়াতকে নিজের রুমে ডেকে বোঝাচ্ছিলো জেনো সেজেগুজে থাকে।অর্কভকে জেনো সেবাযত্ন করে তবেই ও অর্কভের মন পাবে।এই কথা শুনেই চেতে গিয়ে রায়াত ওই কথাগুলো বলে উঠে যায়।তখনি রুমে আঞ্জুমান ঢুকছিলো সে নিজেও রায়াতের এই কথা শুনেছে।আঞ্জুমানকে দেখে আনোয়ারা ওই কথাটা বলে।একে একে রায়াতের বাবা সাফেকুর রহমান ও মা রমেনা বেগমকে ডেকে পাঠায় আনোয়ারা বেগম।তারা রুমে আসলে আনোয়ারা বেগম সাদেকুর রহমানকে বলে–
–শুনো,দাদুভাই যখন ফিরেই আসছে তখন তুমি দাদুভাইকে বলো আমাদের রায়াতকে মেনে নিতে।
সাদেকুর রহমান কাঠকাঠ গলায় বলে দেয়,দেখো মা,আমার মেয়ে এখন বড় হয়েছে।সে যেটা চাইবে সেটাই হবে।এসবের জন্য আমি না রায়াতকে জোর করবো।না অর্কভকে।এ নিজে অনেক বড় একটা সিনক্রিয়েট হয়েছিলো নয় বছর আগে।আমি চাই না আর হোক।ওরা দুজন যদি চাই ওরা এক হবে।তাহলে হবে।তা না হলে ওরা আলাদা কাউকে যদি পছন্দ করে বিয়ে করতে চাই তবে তাই হবে।সেই ছোট বেলার একটা ইন্সিডেন্ট এর জন্য আমি ওদের জীবনটা নষ্ট করবো না
এসব নিয়ে বাড়ির কেউ একটা কথাও বলবে না।সবাইকে বলে গেলাম
বলেই সাদেকুর রহমান মায়ের রুম থেকে উঠে যায়।ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতেই অর্কভকে দেখতে পাই।ওর কাঁধে হাত রেখে বলে– কি ভাগ্নে,কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?
–জি না মামা
।
–হুম রাত হয়ে গেছে,শুয়ে পরো গিয়ে।
–আম্মুর সাথে কথা ছিলো আর কি তাই..
–হুম যাও রুমের ভেতরেই আছে।
সাদেকুর রহমান চলে যায় সোজা নিজের মেয়ের রুমে।টেবিলে বই খুলে বসে ছিলো রায়াত।পেছন থেকে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে,
–মামণি,তুমি একদম প্যারা নিও না।তুমি যেভাবে চাও তাই হবে।
রায়াত বাবার দিকে তাকিয়ে বলে– কোন বিষয়ে আব্বু?
সাদেকুর রহমান বিছানার উপর বসে বলে– এই যে অর্কভ আসছে।তুমি হয়তো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছো।কোনটা করা উচিত, না উচিত ভাবছো।আমি বলবো এতো বছরে যখন সব মুছে গেছে তখন তুমি তোমার মতই চলো।আমরা মানে আমি কখনো তোমায় জোর করে কিছু চাপিয়ে দিবো না।
–দেখো আব্বু,আমার কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই।আমি আগেও যেমন উনাকে ফুপুর ছেলে হিসেবে মেনেছি এখনো তাই করবো।দাদু মারা যাওয়ার সময় কি হয়েছে না হয়েছে এতো বছরে আমি সব ভুলেই গেছি।অথচ ওই বুড়িটা(দাদিকে)সব সময় পেছনে লেগে আছে জামাই জামাই করে।
সাদেকুর রহমান হেসে দিয়ে বলে– জানোই তো আগেরকার মানুষ।তবে দেখো আমরা বা তোমার ফুপিও কিন্তু এসব নিয়ে কখনো কোন কথা বলবে না।নিশ্চিত থেকো।
–জি আব্বু।
সকালে নাস্তা খাওয়ার জন্য রায়াত ডাইনিং আসে।একটু পর অর্কভও আসে।ইউনিফর্ম পরে একেবারে রেডি হয়েই এসেছে অর্কভ।রায়াতও ভার্সিটি যাবে তাই একেবারে রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়েই এসেছে।আঞ্জুমান আরা ছেলের পাশে দাড়িয়েই দেখে শুনে খেতে দিচ্ছে অর্কভকে।তা দেখে রায়াতের জ্বলন হচ্ছে।এতদিন রায়াতের পাশে দাঁড়িয়ে মাছ বেছে দিয়ে পরম যত্ন করে খাওয়াতো আর আজ ছেলে এসেছে বলে তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।রেগে রায়াত বলে উঠে,
–ফুপি,তুমি কিন্তু আজ পাল্টি খেলে।
আঞ্জুমান আরা ভ্রুকুচকে বলে– আমি তো এখনো কিছুই খাই নি রে।তোদের খাওয়া হলে তবে তোর মায়ের সাথে খাবো।
–আমি কি সেই খাওয়ার কথা বলেছি?
–তাহলে?
–ধুর,তুমি বুঝোই না।যাও তোমার সাথে কথায় নাই।
এমন সময় অর্কভ বলে– মা,পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছো?
আঞ্জুমান আরা নাক দিয়ে বেশ কয় একবার টেনে টেনে শুকে বলে কই না তো?
–চোখের সামনে কেউ জ্বলছে তুমি দেখছো না?
–কই না তো।
–উফফ,মা তুমিও না।
অর্কভ রায়াতের দিকে হাত বাড়িয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলে– ওই যে ওর মনের ভেতর জ্বলন হচ্ছে দেখছো না।সেই পোড়ার গন্ধই তো বের হচ্ছে।ছোট বেলা থেকেই আমার মায়ের হাতে খাওয়া দেখতে পারে না।হিংসুটে।
আঞ্জুমান আরা এবার বুঝতে পারে ছেলে কি বলছে।রায়াত রাগে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলছে।আঞ্জুমান আরা ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে– আমার রায়াত মা এতো রেগে যাচ্ছে কেনো হু?
–ফুপি,তুমি কিন্তু এতোদিন আমাকে খাইয়ে দিয়েছো।আর এখন তোমার ছেলে এসেছে বলে আমাকে ভুলে গেলে।আর কি বলল আমাই,আমি হিংসুটে? তোমার ছেলে যে একটা স্বার্থপর। এসেই তোমাকে কেড়ে নিয়েছে আমার থেকে।
–এই তুই কি বললি?আমি স্বার্থপর তুই হিংসুটে তাই তোর হিংসে হচ্ছে।
আঞ্জুমান আরা দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলে– চুপ করবি তোরা।সেই ছোটবেলার মত দুজন ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস।আচ্ছা বাবা আমি দুজনকেই খাইয়ে দিবো।
–খাবো না আমি,,
বলেই রায়াত টেবিল থেকে উঠে যেতে নিলেই অর্কভ বলে উঠে,
–ভার্সিটি যাবি তো?চল তোকে পৌছে দি।
রায়াত পেছনে ঘুরে বলে– লাগবে না।
–এখনো ভেবে দেখ,ওই ছেলেগুলোকে কিন্তু কাল থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে।
–তো কি?আমি কি ভয় পাই নাকি ওদের?
আঞ্জুমান আরা তখন বলে উঠে,কোন ছেলে রে?আর তোদের কি আগেও দেখা হয়েছে?
অর্কভ তখন সব খুলে বলে মা কে।তা শুনে আঞ্জুমান আরা বলে– না না তোর একা যাওয়া লাগবে না রায়াত।তুই বরং অর্কভের সাথেই যা।আর এখন সোজা চেয়ারে বস।খাইয়ে দিয়।
–বললাম না আমি খাবো না।তুমি তোমার ছেলেকে নিয়েই থাকো।আমাকে ত ভুলেই গেছো।
এমন সময় রমেনা বেগম এসে রায়াতের কান ধরে বলে– ফুপির সাথে কিভাবে কথা বলা হচ্ছে?যা খেতে বস।শুধু না খেয়ে থাকা পেয়েছে।দিন দিন শুটকি মাছ হচ্ছে সে খেয়াল আছে।
–উঁহু আম্মু ছাড়ো লাগছে।
অর্কভ তখন বলে,জিও মামিমা জিও।ঠিক ছোটবেলার মতইই দেখছি এখনো ওকে টাইট দাও।
রায়াত রাগি চোখে অর্কভের দিকে তাকিয়ে সোজা গিয়ে চেয়ারে বসে।
চলবে…