তোর মন পাড়ায় পর্ব-০৪

0
6

#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব৪
#ইস্পিতা_রহমান

অর্কভের গাড়ি থেকে নিজের ডিপার্টমেন্ট এর সামনে নামলো রায়াত।নেমেই হাঁটা শুরু করলো ও।অর্কভকে একটা ধন্যবাদও দিলো না।পেছন থেকে অর্কভই ওকে ডেকে বলে–

–ওই দাড়া!

পেছনে ফিরে রায়াত বলে– কী?

–কোন ম্যানারই জানিস না নাহ?থানার উল্টোদিকে এসে তোকে নামিয়ে দিয়ে গেলাম ধন্যবাদটুকু দিলি না।

রায়াত এগিয়ে এসে বলে– আমি কি বলেছি আমাকে পৌঁছে দিতে।আপনি নিজেকে আমার ড্রাইভার ভেবে আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেলেন।এতে ধন্যবাদ দেয়ার কি আছে?

–কি বললি তুই,আমি তোর ড্রাইভার?

–জি সেটাই বললাম।

–আর জীবনে যদি তোকে ভার্সিটিতে এনেছি তো আমার নাম অর্কভ না।

–ওরে তাতে আমার সমুদ্র-সাগর-নদী বয়ে গেলো রে।

–বজ্জাত..

কথাটা বলেই অর্কভ গাড়ি ঘোরালো।রায়াত ওখানেই দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে অর্কভের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।অর্কভ সাইড মিরোরে তা দেখে সামনের দিকে মন দিলো।রায়াত পেছনে ঘুরে ডিপার্টমেন্ট ঢুকতেই দোতলার সিড়ি বেয়ে ওর বন্ধুবান্ধবিরা নেমে এসে ওকে ঘিরে ধরে বলে,

–কিরে কাল নাটক করে আজ তুই ওই হ্যান্ডসাম পুলিশটাকে পটিয়ে নিয়েছিস?তুই আমাদের বান্ধবি,নাকি শত্রু?

–ওই শয়তান লোককে পটাতে আমার বয়ে গেছে।ভাল্লাগছেনা সর ক্লাসে যাবো।

রায়াত হাঁটা ধরলে বান্ধবিগুলা সব ওকে চেপে ধরে বলে– কোথায় পালাচ্ছো চান্দু?আগে বল ওই হ্যান্ডসাম পুলিশ,কি জেনো নাম বলেছিলো কাল..
রায়াত ফট করে বলে ফেলে অর্কভ।বান্ধবিগুলা একেওপরের দিকে তাকিয়ে বলে– উমম, নামও মনে আছে।এবার বল অর্কভ হ্যান্ডসাম তোকে নামিয়ে দিয়ে গেলো কেনো?

–দেখ,মাইশা,নুড়ি,জেরা করা বন্ধ কর আর ক্লাসে চল।

–না না না।আগে বল।

–উফফ,উনি আমার ফুপাতো ভা…. না মানে আঞ্জু ফুপুর ছেলে।

–কিহ,রিয়েলি!ও ও রায়াত আমাদের সেটিং করে দে না।

–ছিঃ তোদের রুচির কি অভাব।এমন একটা বাজে লোককে পছন্দ।দেখতেই সুন্দর হলে কি সুন্দর হয় মানুষ।একদম বাজে ছেলে বুঝলি।চল।

–কিহ।তুই মিথ্যা বলছিস তুই নিজেই মনে হয় ক্রাশ খেয়েছস তাই

–শোন আমার না তোদের মত এতো বাজে রুচি না।
“রায়াত”

নামটা শুনে তিন বান্ধবি শান্ত হয়ে গেলো।নুড়ি মাইশাকে টোকা দিয়ে বলে– সে এসে গেছে।রায়াত চোখ গরম করে ওদের দিকে তাকায়।মাইশা তখন বলে– যান আপনার সে এসে গেছে।কখন থেকে বেচারি অপেক্ষা করছে তোর।

–চুপ কর।মারবো একটা।

রায়াত বলেই পেছনে ফিরে তাকায়।দেখে সায়ান হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।

রায়াতের মুখে হাসি ফুটে উঠে।সায়ান এগিয়ে এসে বলে– সেই কখন থেকে তোমার অপেক্ষা করছি এখন আসার সময় হলো?

–আসছি তো একটু আগেই।এই যে এদের সাথে কথা বলছিলাম।

মাইশা বলে উঠে,সায়ান ভাই,আমরা কিন্তু ওকে আটকে রাখি নি।তবে তাই বলে ভাইবেন না যেতেও দেবো।আপনারা কথা বলেন।আমরা কিন্তু ক্লাসে অপেক্ষা করবো।একদম ওকে নিয়ে উধাও হয়ে যাবেন না।

–আরে তোমাদের যেতে হবে না।চলো সবাই ক্যান্টিনে যায়।চা খেয়ে একটু আড্ডা দেয়া যাক।
নুড়ি তখন বলে উঠে…কাবাবের হাড্ডি ভাববেন না তো?

–নাহ।চলো।

হাসিমুখে সবাই সায়ানের সাথে ক্যান্টিনে চলে যায়।এদিকে রায়াতকে নামিয়ে দিয়ে সোজা চলে যায় ছোটবেলার বন্ধুর রিসাদের বাড়িতে।নয় বছর আগে যখন অর্কভ এখানে থাকতো।তখন রিসাদ তার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে কত কিছু পাল্টে গেছে।টিনে বাড়িতে আজ পাকা দালান উঠেছে।বাড়ির সামনে ফুটবলের মাঠের মত সেই উঠান আর নেই।নেই ধানের খড়ের গাদা।গোয়াল ভরা গরু।বাড়ি মধ্যে যাওয়ার আগে এদিক ওদিক তাকিয়ে সব দেখতে ছিলো অর্কভ।কতটা চেঞ্জ হয়ে গেছে।ভাবে তার বন্ধুটাও কি তবে চেঞ্জ হয়ে গেছে?এতো বছর পর তাকে কি চিনবে?নাকি এতো বছরে তার সাথে কোন যোগাযোগ করে নি বলে তাকে ভুলে গেছে।হঠাৎই পেছন থেকে কেউ বলে উঠে,

–সকাল সকাল আমাদের বাড়িতে পুলিশ!

পেছনে ফিরে তাকায় অর্কভ।একটা বৃদ্ধলোক তার দিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে আছে।অর্কভ ভালো করে চেয়ে দেখে সে আর কেউ না উনিই রিসাদের বাবা।অর্কভ গিয়ে গম্ভীর গলায় বলে–

–আপনার ছেলে রিসাদ আছে?ওর নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে।ওকে ধরতে এসেছি আমি। ডেকে দিন।

–কেনো?আমার ছেলে কি করেছে?ভয় পেয়ে বৃদ্ধ লোকটি বলে।

অর্কভ ভাবে নাহ,বৃদ্ধ বয়সে তাকে আর ভয় দেখাবে না।তাই বলে–

–চাচা আমাকে চিনেছেন না?আমি অর্কভ,রিসাদের বন্ধু।

বৃদ্ধ লোকটি চশমাটা ঠিক করে ভালো করে তাকিয়ে দেখে বলে,

–ইরফান শিকদারের নাতী, সেই ছোট্টটি অর্কভ?
অর্কভের চোখ জ্বল জ্বল করে উঠে বলে– হ্যা চাচা।রিশাদ আছে?কোথায় ও চাচা?

–দাঁড়াও দাঁড়াও ডেকে দিচ্ছি।

বৃদ্ধলোকটি রিসাদকে ডেকে দেয়।রিসাদ এসে অর্কভের সামনে দাঁড়াতেই কিছু বোঝার অর্কভ গিয়ে বলে– মিস্টার রিসাদ,আপনার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে।এক্ষুনি আমার সাথে থানায় যেতে হবে।রিসাদজেনো হতভম্ব হয়ে যায়।সে কি করেছে যে পুলিশ তাকে ধরবে।রিসাদ ওর দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।অর্কভ বুঝতে পারে তাকে হয়তো রিসাদ চিনতে পারে নি।তাই বলে উঠে,

–চলুন আমার সাথে থানায়।

–কেনো যাবো?আমি কি করেছি?

–বন্ধু হয়ে বন্ধুকে চিনতে পারেন নি তাই।
ভ্রুকুচকে রিসাদ বলে– বন্ধু!

অর্কভ এক গাল হেসে বলে,কি রে পাগলা,এখনো চিনে উঠতে পারিস নি?আমি অর্কভ।তোর বেস্টফ্রেন্ড অর্কভ।ভুলে গেছিস আমাকে?
রিসাদের চোখে মুখে খুশিতে চকচক করে উঠে বলে– অর্কভ!

অর্কভ,রিসাদকে জোরিয়ে ধরে।রিসাদও জাপটে ধরে বলে–আমার জানের জিগারের দোস্ত তুই।তোকে কি ভোলা যায়!

অর্কভের গাড়িতে করে দুজনেই যাচ্ছে।হঠাৎ রিসাদই বলে উঠে এতো বছর পর কেনো আবার ফিরে এলো এই শহর।অর্কভ বলে ওর পোস্টিং এখানে হয়েছে তাই।কিন্তু রিসাদ উল্টা চেপে ধরে বলে– শুধুই কি পোস্টিং এর জন্য ছেড়ে চলে যাওয়া শহরে এসেছিস?

অর্কভ একটা তপ্তশ্বাস ফেলে বলে– অন্যায়,ভুল গুলো শুধরে নিতে এসেছি।যাওয়ার আগে তো তোকে সব বলেই গিয়েছিলাম।এই শহর ছাড়ার পেছনে আমার আসল কারন।

–হুম তা তো আমি কিছুটা জানিই।তবে কি চাইলে সব ঠিক করা যায় বল?তোর শোকে তোর নানাজান মারা গেলো।

–জানি তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না।কিন্তু কিছুটা তো…

আর কিছু বলল না অর্কভ।বন্ধুকে তার গন্তব্যে পৌছে দিয়ে নিজে থানায় চলে গেলো।

চলবে…