তোর মন পাড়ায় পর্ব-০৭

0
6

#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব৮
#ইস্পিতা_রহমান
“এই দাড়া, কই যাচ্ছিস”

অর্কভের কথায় থেমে যায় রায়াত।চোখ মুখ বিরক্তিকরভাবে বন্ধ করে ভাবে,নিশ্চয় আবার কাল রাতের মত বলবে সায়ানের সাথে আমার কতদিনের সম্পর্ক। উফফ।বেটা,সায়ানের সাথে আমার কতদিনের সম্পর্ক তা জেনে তুই কি করবি? তুই তোর মত থাক না।আমার বিষয়ে নাক গলাতে কে বলছে।বড় একটা শ্বাস ফেলে রায়াত আবার এগুতে থাকে।অর্কভ পাঞ্চিং ব্যাগে ঘুষি মারা থামিয়ে আবার বলে উঠে,
–কি হলো কথা কানে যায় নি?
রায়াত এবার পাশে তাকিয়ে বলে,কাঁধে ব্যাগ দেখে বুঝতে পারছে না ভার্সিটি যাচ্ছি।
অর্কভ রায়াতের দিকে এগুতে এগুতে বলে,এতো সকালে যাচ্ছিস কেন?প্রেমিক বুঝি সকাল সকাল ফোন করে রঙ্গলীলা করার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে?
রায়াতের মেজাজ চড়ে গেলো।গলা খেঁকিয়ে বলে,আপনি করলে সেটা প্রেম না আর আমি করলে রঙ্গলীলা?
ভ্রুকুচকে অর্কভ বলে,আমি!
–ফোনে সারাক্ষণ বেবি,সোনা বাবু বলে কার সাথে কথা বলেন।মনে করেছেন আমি কিছু জানিনা।
অর্কভ পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে বলে,ওহ তুই খেয়ালও করেছিস?
–তা কেনো করবো না।আমার পাশের রুমই তো আপনার রুম।বেলকনিটাও লাগোয়া।বেলকনিতে বসে ফিস ফিস করে রাতে কথা বলেন তা বুঝি আমি জানিনা।
-চোরের মত ফিস ফিস করে কথা আমি বলি না বুঝলি।স্বাভাবিকভাবেই কথা বলি বিধায় শুনতে পেয়েছিস।ওয়েট কর, আমি ফ্রেশ হয়ে এসে তোকে পৌঁছে দিচ্ছি।
–লাগবে না।ধন্যবাদ
কথাটা বলেই রায়াত বেরিয়ে যেতে পা বাড়ায় তখনি অর্কভ শক্ত করে রায়াতের হাত চেপে ধরে নিজের মা কে ডাকতে থাকে।আঃ শব্দ করে রায়াত অর্কভকে তার হাত ছেড়ে দিতে বলে।অর্কভ রায়াতের কথা কানে না তুলে মা কে ডাকতেই থাকে।অর্কভের ডাক শুনে আঞ্জুমান আরা আসলে অর্কব বলে,
–এতো সকালে ভার্সিটি গিয়ে কার,না কার সাথে প্রেম করে এসব তোমরা দেখো না?
আঞ্জুমান আরা বলে,এতো সকাল আর কই।আটটা বাজে এখন।কলেজ যেতে যেতেই তো ওর ক্লাসের টাইম হয়ে যাবে।
অর্কভ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই তাই।তখন কথা ঘুরিয়ে আবার বলে,একটা বিবাহিত মেয়ে হয়ে ও প্রেম টেম করে সেটাও তো তোমরা কিছু বলো না।
তখন বাজার করে বাড়িতে ঢুকতে ঢুকয়ে সাদেকুর রহমান বলে উঠে,
–আমার মেয়েকে আমি এমন শিক্ষা দিয় নি যে আমার মুখে চুন কালি দেয়ার মত কোন কাজ করবে বুঝলে অর্কভ?
কথাটা বলেই অর্কভের হাতের দিকে তাকায়।অর্কভ ফট করে রায়াতের হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,
–জ্বি মামা।কিন্তু…
–তুমিই ওকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে এসো।রায়াত মা,
–জি আব্বু।
— অর্কভ তোমাকে পৌছে দিয়ে আসবে।রাস্তাঘাটের ব্যাপার একা একা যেও না।
–কিন্তু আব্বু আমি তো একাই যেতাম আগেও।
–আজ থেকে আর একা যাবে না।
কথাটা বলেই সাদেকুর রহমান বাড়ির ভেতরে চলে গেলে আঞ্জুমান আরা অর্কভকে বলে,তুই যে ওকে বিবাহিত বলছিস,তা ও বিবাহিত হলো কার দৌলতে হু?বর কে ওর বল?
অর্কভ এবার মুখের ভঙ্গি পাল্টে বলে,ওর মত মেয়ের বর, হুস।।
কথাটা বলে অর্কভও বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।রায়াত গিয়ে ড্রেয়িংরুমে সোফায় বসে পড়লো।কিছুক্ষণ বাদে অর্কভ রেডি ড্রেয়িংরুমে আসে।কর্কশ স্বরে বলে,
–উঠ,চল।
রাগ দেখিয়ে রায়াত উঠে দাঁড়িয়ে অর্কভের পেছন পেছন গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।রায়াতের কলেজের সামনে এসে গাড়ি থামায়।রায়াত নামতেই দূর থেকে সায়ান ওকে দেখে হাই দেয়।তখন অর্কভ বলে উঠে,
–বাবা,তোর আসিক আগে থেকে এসেই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
রায়াত কিছু বলল না।অর্কভের দিকে তাকিয়ে শুধু একটা বাঁকা হাসি দিলো।তা দেখে অর্কভ চোয়াল শক্ত করে শক্ত করে হাতের মুঠো করে।রায়াত সায়ানরা যেখানে আছে ওদিকে যায়।
সন্ধ্যার পর অর্কভ বন্ধুর দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে ।কথায় কথায় রিসাদ বলে উঠে,
–তা দোস্ত,এবার কি ভাবলি?
অর্কভ ভ্রুকুচকে বলে,কোন বিষয়ে?
–বিয়ে-সাদির ব্যাপারে।ওই সাদিয়ার কিন্তু এখনো বিয়ে হয় নি।চাইলে চান্স নিতে পারিস।
–কোন সাদিয়া রে?
–ওমা ভুলে গেলি?স্কুলে থাকতে ক্লাসে সব চেয়ে সুন্দরি মেয়েটা।যাকে তুই খুউব পছন্দকরতি।
–ধুস।বিবাহিত পুরুষের আবার কিসের বিয়ে।
–কিন্তু তুই তো সেই বিয়ে মানিস না।
–মানি আর না মানি,কিন্তু বিয়ে তো হয়েছিলো আমার।একটা ত দাগ রয়েই গেলো না আমার ক্যারেক্টারে?
–তাহলে তুই কি ভাবতেছিস,রায়াতকে কি মেনে নিবি?
–উমম,এত কিছু ভাবি নাই রে দোস্ত।তবে যে সময়টা ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো ও তো হাফ প্যান্ট পরা একটা পিচ্চি ছিলো।এতোটাই পিচ্চি ছিলো যে একটা পরিপূর্ণ মেয়ে হতে হলে,মেয়েলি যে একটা পরিবর্তন,
অর্কভ বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলে,বুজতে পারছিস তো আমি কি বলতে চাইছি?
–হু বল।
–মানে ওর ওই বয়সে পিরিয়ডসই শুরু হয় নি।তাহলে বুঝ এমন এক পিচ্চি মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিছে।আমি ১৯বছরের রক যুবক সেটা কিভাবে মেনে নিবো?একটা ১৯বছরের একটা যুবক,যার কিন্তু সকল চাহিদা,সকল কিছু বোঝার ক্ষমতা কিন্তু হয়ে গেছে।কোন আক্কেলে নানুভাই আমাকে ওইটুকু মেয়ের সাথে বিয়ে দিলো।এই ভেবে আমার প্রচন্ড ক্ষোভ জন্মালো নানুর উপর।রাগে দুঃখে আমি তাই বাড়ি ছেরে চলে গিয়েছিলাম।তবে এইটাও কারন না আরো একটা কারন আছে।
–কি কারন।
–আজ না অন্যকোনদিন বলবো তোকে।আগে তার মনের হতিস পেয়ে নিয়।হৃদয়ের হদিস না পেলে লক্ষের দিকে এগুবো কি করে।

–এখন তো রায়াত চির যৌবনে পা দিয়েছে।এখন তাহলে তো আর কোন সমস্যা নেই।
–আই ডোন্ট নো।
–জানিস না যখন তখন সেইদিন অন্য একটা ছেলের সাথে ওকে দেখে ওইভাবে পার্কে থেকে টানতে টানতে নিয়ে গেলি কেনো?
–এইটাও জানিনা।তবে ওকে অন্য ছেলের সাথে দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।হাউ ডিয়ার শী।বিবাহিত হয়ে অন্য ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করে।
–তোদের যে বিয়ে হয়েছে,এইটা গোটা কয়েক লোক ব্যাতিত এই দিন দুনিয়ার কেউ জানে না।সো সবাই জানে ও অবিবাহিত একটা মেয়ে বুঝলি।ছেলেদের লাইন ওর পিছে বুঝলি।
–সব কটার ঠ্যাং ভেঙে দেবো আমি।
–কেনো?তুই তো বিয়ে মানিস না।মামাতো বোন ভাবিস ওকে।তাহলে?
–কারন আছে।
–কি কারন?
–বললাম না সব বলবো তোকে।সময় আসুক।

চলবে….