তোর মন পাড়ায় পর্ব-১৬+১৭

0
7

#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব১৬
#ইস্পিতা_রহমান
পড়ার টেবিলে,মুখের সামনে খোলা বই,কলম চিবুচ্ছে আনমনে।ভাবনায় অর্কভ ভাইয়ের কাঁধের সেই তিলটা সন্ধ্যায় যেটা শার্টের কলার নামাতেই ওর চোখে পড়েছিলো।উসস,ছেলে মানুষের তিলও এতো সুন্দর হয়!আগে তো কখনো খেয়াল করে নি রায়াত।সেই ছোটবেলা থেকেই তো অর্কভ ভাইকে দেখে আসছে ও।মাইশা বলার পর থেকেই ওই ছোট্ট তিলটা দেখতে মরিয়া ও।আচ্ছা,সত্যিই কি অর্কভ ভাই খালি গায়ে শোয়?অবশ্য ছেলে মানুষরা তো বেশির ভাগই খালি গায়ে শোয়।যদি অর্কভ ভাইও খালি গায়ে শোয়।তবে তো তিলটা আবার দেখতে পাবে ও।এই ভাবনায় রায়াত পড়ার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়। নিজের ঘর থেকে বেরোয়।অর্কভের ঘরের দরজাটা একটু ফাকা করে উঁকি দেয় ভেতরে।হ্যা ড্রিম লাইট জ্বালানো। আলগোছে দরজাটা খুলে ভেতরে যায়। পা টিপে টিপে বিছানার কাছে যায়।এইতো অর্কভ ভাই অতোল ঘুমে।সেন্ডো গেঞ্জি গায়ে।কিন্তু বাম দিকে ঘুরে শোয়া তাই বাম কাঁধটা তো দেখা যাচ্ছে না।তিলটাও তো দেখা যাচ্ছে না।কি করবে এখন?আইডিয়া!একগোছা চুল দিয়ে কানে সুড়সুড়ি দিলো।অমনি নড়েচড়ে অর্কভ ডান দিকে ঘুরলো।ব্যাস ফর্সা কাঁধে ছোট্ট তিলটা উজ্জ্বলিত হলো।হাত দিয়ে ছুঁবে,কি ছুঁবে না ভাবনার মাঝেই কাঁপাকাঁপা হাতে আলতো করে ছুঁইয়ে দিলো তিলটা।এরপর ফটাফট দুই চারটা ছবি তুলে পা বাড়ালো বের হয়ে যাওয়ার জন্য।তখনি হাতে পড়লো টান।চোখজোড়া বড়বড় হয়ে জ্বলে উঠলো রায়াতের।লাইট জ্বলে উঠলো।ভীরু ভীরু নয়নে,কাঁপাকাঁপা আঁখিপল্লভে ঘুরে তাকালো পেছনে।অর্কভ ওর হাত ধরে আছে।

–এতো সহজ,আমায় ফাঁকি দেয়া?পুলিশি নজর আমার।কী করতে এসেছিলি আমার ঘরে?

–আ আ আ আব আ আ দ দেখতে এসেছিলাম আপার কিছু লাগবে কিনা?রাত জেগে ফাইল টাইল দেখছেন কিনা।যদি কফি লাগে।আসলে আমিও তো রাত জেগে পড়তে ছিলাম।ঘুম যাতে না ধরে তাই কফি বানাতে যাচ্ছিলাম।এই জন্য ভাবলাম আপনি…

–তুই জানিস না মধ্যরাতে,একটা সোমত্ত ছেলের ঘরে একটা সোমত্ত মেয়ের আসতে নেই।

–আ আমি কি এতো কিছু ভেবে না মানে…

–ডাকবো আম্মুকে?মামা-মামি,নানিমাকে?

রায়াত হাত মোচড়ামুচড়ি শুরু করলো।এ কোন ফাঁদে আটকা পড়লো?আব্বু-আম্মুকে যদি সত্যিই ডাক দেয় তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।মানসম্মান মাঠে মাঠে চলে যাবে।আর যদি জানে অর্কভ ভাইয়েত তিলের ছবি তুলেছে তাইলে তো সব গেছে।অর্কভ উঠে বসলো।এখনো শক্ত করে রায়াতের হাত ধরে আছে।রায়াত অনুরোধের স্বরে বলল,

–হাতটা ছাড়েন না অর্কভ ভাই।

–সন্ধ্যাবেলা খুব তো আমার আম্মুর কাছে বানিয়ে বানিয়ে,সত্য-মিথ্যা লাগিয়ে গার্লফ্রেন্ড এর গল্প বানালি।এখন যদি আমি আম্মু,মামা,মামিকে ডেকে বলি তাদের মেয়ে লুকিয়ে আমার ঘরে এসেছে কেমন মজা হবে বল?

ন্যাকাকান্নার মতো করে কেঁদে রায়াত বলল,উঙুঁ অর্কভ ভাই ছেড়ে দেন।আর কখনো ফুপুর কাছে কিছু মিথ্যা-সত্যি লাগাবো না।এবারের মতো ছেড়ে দেন।প্লিজ কাউকে ডাইকেন না।

–হু।তবে একটা শর্ত আছে।

–কি শর্ত বলেন?যা বলবেন তাই করবো।চপ,বড়া,নুডুলস যা বলবেন সব রান্না করে খাওয়াবো।

–উঁহু,এগুলো না অন্য কিছু খাবো।

–হ্যা বলেন কি বানিয়ে দিতে হবে?

–যা চাইবো তাই দিবি?
–হু।
–পাল্টি খাবি না তো পরে?
–না।
–তোকে বিশ্বাস নাই।

–সত্যি বলছি যা চাইবেন তাই খাওয়াবো।

অর্কভ নিজের ফোন বের করে ভিডিও অন করে সেই ভিডিওর সামনে রায়াতকে বলতে বলল।রায়াত অর্কভের বলা মতো কথাগুলো বলল।অত:পর অর্কভ ওর হাত ছেড়ে দিলো দৌড়ে পালালো রায়াত।অর্কভ বাঁকা হেসে পিঠের তিলের উপর হাত বুলালো
—++-
ভার্সিটির ক্লাস করার সময় ফোনে টুং করে মেসেজ এলো রায়াতের।সকলের অগোচরে ফোনটা বের করে দেখলো অর্কভ ভাই মেসেজ দিয়েছে।চুপিসারে মেসেজ ওপেন করলো।অর্কভ লিখেছে ক্লাস শেষে রিসাদের ওষুধের দোকানে আসতে।হুট করে রায়াতের মাথায় এলো গতকাল রাতের কথা।তখনি মনে হলো ওর তবে কি অর্কভ ভাই আজকেও ওকে শাস্তি দিবে?

রিসাদের দোকানে সেই কখন থেকে ওয়েট করতেছে রায়াত।অর্কভের আসার নামই নেই।বিরক্ত হয়ে রায়াত উঠে দাঁড়িয়ে রিশাদকে বলল ও চলে যাবে।তখনি অর্কভের বাইক এসে থামলো রিশাদের দোকানের সামনে।ভেতরে আসতেই রিশাদ বলল,

–বাইক কার?

–কিনে ফেললাম আজ।তাই তো আসতে দেরি হলো।

–দারুণ হয়েছে দোস্ত।

–হুম হতেই হবে।তোর ভাবিকে নিয়ে পাশাপাশি চেপে বসে ঘুরতে হবে না।

বলেই রায়াতের দিকে তাকালো অর্কভ।রায়াত নাকের পাটাদুটো ছাট করে দাঁড়িয়ে আছে।ভাবিকে নিয়ে ঘুরবে?ওই বাইকে যে মেয়ে উঠবে তার পাছায় আগুন ধরিয়ে দিবে রায়াত।মনে মনে ভেবে নিলো ও।অর্কভ ওর সামনে তুড়ি বাজালো।সম্ভিৎ ফিরলো রায়াতের।বলল,

–আমাকে এতোক্ষণ বসিয়ে রেখে এই বালের বাইক কিনতে ছিলেন?

–কেন পছন্দ হয় নি তোর?

পছন্দ আর হয় নি?সেই সেই হয়েছে বাইকটা।কিন্তু মুখে প্রকাশ করলো না।শুধু বলল না।অর্কভও ভাব নিয়ে বলল,তোর পছন্দ দেখতে চাই কে।আমার বউয়ের হলেই হবে।

–কি জন্য ডেকেছেন বলেন।

রেগে রায়াত বলল।অর্কভ বলল,গতকাল রাতের কথা মনে আছে?

অমনি রায়াতের মুখটা শুকিয়ে গেলো।অর্কভ বলল,আমার বাইকটাকে বালের বাইক বলার জন্য আর গতকাল রাতে আমার ঘরে ঢোকার জন্য আজকে তোর শাস্তি হলো,…

কাঁদোকাঁদোভাবে রায়াত বলল,আজও কান ধরতে হবে?

অর্কভ নিজের গাল এগিয়ে দিয়ে বলে,এখানে একটা চুমু খা।

বিস্ময়ে চোখ বড় বড় তাকায় রায়াত।সেই সাথে রিশাদও।অর্কভ ভাবলেশহীনভাবেই গাল বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়।রায়াত নাখোশ করে দিয়ে বলে,

–কক্ষনো না।

অর্কভ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে ঠিক আছে,মা-কে,মামা-মামিকে সব বলে দিবো তুই গতকাল রাতে আমার রুমে এসেছিলি।

ভাব নিয়ে রায়াত বলে,হুহ্ কোন প্রমান আছে নাকি?
অর্কভ তখন ফোনটা বের করে একটা ভিডিও দেখায়।সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রায়াত অর্কভের পিঠের তিলের উপর চুমু খেলো।লজ্জায় রায়াত খিঁচে চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে ঘুরে।অর্কভ বাঁকা হেসে বলে,পুলিশের চোখ ফাঁকি দেয়া এতো সোজা না।তাই যা বলছি তাই কর।না হলে ভিডিওটা বাড়িএ সবাইকে দেখাবো,তুই কিভাবে আমার বিউটি স্টটের ভার্জিনিটি নষ্ট করেছিস।অত:পর উপাই না পেয়ে রায়াত কাঁদোকাঁদোভাবে ধীরেধীরে এগিয়ে যায় অর্কভের দিকে।অর্কভ ঝুঁকে নিচু হয়ে গাল এগিয়ে দেয়।রায়াত টুপ করে চুমু খেয়ে এক দৌড় দিয়ে রিশাদের দোকান থেকে বেড়িয়ে যায়।অর্কভ গালে হাত বুলিয়ে বলে,ভাগ্যিস ফোনের ক্যামেরা আগে থেকে সেট করে রেখেছিলাম।

চলবে…

#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব১৭
#ইস্পিতা_রহমান
লাল টুকটুকে একটা থ্রিপিচ পরে সেজেগুজে রায়াত ড্রয়িংরুমে ওর আব্বুর জন্য অপেক্ষা করছে।রায়াত বিরক্ত হয়ে হয়ে ফুপুকে বলল ওর আব্বু এতো দেরি করছে কেন।মা-কে জোরে ডেকে আব্বুকে কল দিতে বলল দ্রুত আসার জন্য।অফিস থেকে ফিরে বাড়িতে ঢুকলো অর্কভ।রায়াতকে ওভাবে সেজেগুজে দেখে আঞ্জুমান আরাকে জিজ্ঞেস করলো ও কোথায় যাচ্ছে নাকি। বিয়ের বাড়ি যাচ্ছে রায়াত।ওরা বিয়ের আগের দিনই যেতে বলেছে সবাইকে।বাড়ির কাজ ফেলে তো আর বড়রা যেতে পারে না তাই রায়াতকে পাঠাচ্ছে।ও বাড়ি থেকে বার বার কল দিচ্ছে রায়াতকে জেনো আগেই পাঠিয়ে দেয়। বিয়ে বাড়ি,মেয়েটা আগে গিয়ে একটু মজা টজা করুক।এ কথা শুনে অর্কভ ওর মা-কে বলল,

–ওকে একা পাঠানো কি ঠিক হচ্ছে?

পাশে থেকে তখন নানিমা বলে উঠলো,তাইলে তুইও যা ওর লগে।

রমেনা বেগম ও ঘর থেকে এসে বলল,রায়াত,তোর আব্বুকে কল দিয়েছিলাম। দোকানে কাস্টমারদের চাপ বেশি তাই তোর আব্বু আসতে পারছে না।

এই কথা শুনে আঞ্জুমান আরাও অর্কভকে রায়াতের সাথে বিয়ে বাড়িতে যেতে বলল।কারন অর্কভ থাকলে রায়াতকে আর একা থাকতে হবে না।কি ভেবে অর্কভও রাজি হয়ে গেলো।

অর্কভের বাইকের পেছনে গুটিসুটি মেরে বসে আছে রায়াত।দুপুরের চুমু খাওয়ার কথাটা মনে আসতেই লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে চাই। ফুরফুরে হাওয়া চুলগুলো উড়ছে ওর।অর্কভ বাইকের গ্লাসে আড়চোখে দেখছে রায়াতকে।বার বার চুল ঠিক করছে।অত:পর রাগানোর জন্য বলল,
–ন্যাড়া হলেই পারিস।দেখতে মন্দ লাগতো না।

–আপনার বউকে ন্যাড়া করায়েন।

–হুম।সব জায়গায়ই আমি নিজ হাতে ন্যাড়া করে দিবো।

অর্কভের মুখে দুষ্টু হাসি।সেও লুকিং গ্লাসে রায়াতের দিকেই তাকিয়ে আছে।রায়াতের ওর দিকে তাকানো দেখে ভ্রু নাচালো অর্কভ।রায়াত রেগে বলল,

–আপনি এতোটা অসভ্য জানতাম না।

–তোর থেকে কমই।তুই তো আমার হাফ ইজ্জত মেরে দিছিস,আমার কোমড়ের তোয়ালে খুলে।চুমু খেয়ে আমার তিলটার ভার্জিনিটি নষ্ট করেছিস।যেটা আমার বউয়ের হক ছিলো।

–আ আ আমি কিছু দেখি নি।

–আমিও কিছু দেখি নি।

–মানে?

–মানে ছোটবেলায় আমি অনেক কিছুই দেখেছি তোর।বড় হয়ে না হয় তুই আমাকে দেখলি।শোধবোধ।

–কিসের শোধবোধ?

–ছোটবেলায় তুই এক সেটহয়ে দৌড়ে যখন আসতি।আমিই তো নিয়ে গিয়ে আবার তোকে প্যান্ট -ট্যন্ট পরিয়ে কাঁধে তুলে নিয়ে পাড়ায় ঘুরতে বেরিয়েছি।তখন কি আর জানতাম তুই বড় হয়ে এভাবে শোধ তুলবি।

–আ আ আমি কিছু দেখি নি বললাম না।

–তাহলে তুতলাচ্ছিস কেনো?
–এ এমনি।
–তাই নাহ…
বলেই ব্রেক কষলো অর্কভ।অমনি রায়াতের বুক গিয়ে অর্কভের পিঠে ঠেকলো।খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলো রায়াত।দ্রুত সরে গেলো।ঠোঁট টিপে হাসলো অর্কভ।এরপর কিছুদূর গিয়ে আবার একই কাজ করলো অর্কভ।রায়াত এবার রেগে বলল,

–কি হচ্ছে কি অর্কভ ভাই।আপনি…

–আমি কি?

–ব্রেক কষছেন কেনো?

–দেখছিস না,জায়গায় জায়গায় রাস্তায় ভাঙা।

–তাহলে গাড়ি থামান।

–কেনো?

–থামায়ায়ান।

অর্কভ বাইক থামালো।রায়াত নেমে সামনে দাঁড়িয়ে অর্কভকে বলল নেমে আসতে।ভ্রকুচকে অর্কভ বলল কেনো?

রায়াত বলল,আমি বাইক চালাবো।

–তুই বাইক চালাতে পারিস?

–না।

–তাহলে?

–আমি সামনে বসে চালাবো আপনি পেছন থেকে শিখিয়ে দেবেন।তবুও আমি আমি পেছনে বসবো না।

–কেনো রে পেছনে বসলে কি?

—বার বার আপনার পিঠের সাথে…

–কি?

–জানিনা।নামেন।আমি চালাবো।

–ওকে।

অর্কভ বাইক থেকে নামলো।রায়াত সামনে বসলো।অর্কভ পেছনে বসে রায়াতের কোমরে হাত রাখলো।অমনি রায়াত লাফিয়ে উঠে সরে গিয়ে বলল,

–আহ,কোমড়ে হাত রাখেন কেনো?

–এমা,যদি পরে যায়।তাই তো তোকে ধরে বসলাম।

–ও আচ্ছা আচ্ছা।

আবার অর্কভ ঠোঁট টিপে হাসলো।রায়াত বাইক স্টার্ট করলো।চালানো শুরু করলো।অর্কভ ওকে শিখিয়ে দিলো কিভাবে কি করতে হবে।শুধু তাই নয় নিজে রায়াতের হাতে হাত রেখে ব্রেকে ভালো করে ধরে ধরে চালালো।রায়াত পুরোপুরি এখন অর্কভের বুকের লেপ্টে।রায়াতের খোলা চুলগুলো উড়ে অর্কভের মুখে আছড়ে পরছে।ওর ঘাড়ের কাছে মুখ গুঁজে অর্কভ বুক ভরে চুলে ঘ্রাণ নিলো।বাইক চালানোর এডভেঞ্চারটা দারুণ উপভোগ করছে রায়াত।কিন্তু যখন অনুভব করলো ও পুরপুরি অর্কভ ভাইয়ের দখলে।ও অর্কভ ভাইয়ের মুখটা ওর ঘাড়ের কাছে তখন একটু অস্বস্তি হলো বাইক থামিয়ে দিলো।আর চুপটি করে এবার অর্কভের পেছনেই বসলো।—+–++-
বিয়ে বাড়িতে এসেছে,কই একটু মজা-মাস্তি,নাচা-গান করবে।কিন্তু এই অর্কভ ভাইয়ে জন্য কিচ্ছু করতে পারলো না রায়াত।কিছু করতে গেলেই অর্কভের চোখ রাঙানি দেখতে হচ্ছে।গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে সবাই কত নাচ গান করছে।আর রায়াত এক কোণে বসে বসে দেখছে।বিয়ে বাড়ি,অনেক ছেলে পেলে। রায়াতকে তো চোখে চোখে রাখতেই হতো।এই জন্যই তো অর্কভ এসেছে।অর্কভ এখানে এসে কিছু স্কুলবন্ধু পেয়ে গেছে।তাদের সাথে খোশগল্পে আছে।অথচ রায়াতকে নজরে ঠিকি রেখেছে।

বিয়েরদিন গেইট ধরার সময় বরের সাথের ফ্রেন্ডস সার্কেলরা গেট ধরা মেয়েগুলোর সাথে ঠাট্টা ও মশকরা করেছে।রায়াত গেইট ধরতে যাওয়া মেয়েগুলোর সাথে আছে। দূর থেকে অর্কভ দেখলো।রায়াত হেসে হেসে বরের সাথে আসা ছেলেগুলোর সাথে গেইটে হাসি ঠাট্টা করছে।টাকা নিয়ে তর্কাতর্কি করছে।চোয়াল শক্ত হয়ে এলো অর্কভের।গিয়ে রায়াতকে টানতে টানতে নিয়ে এলো সেখান থেকে।রুমে এসে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,

–পরপুরুষের সাথে মসকরা করা হচ্ছে!আর একবার যদি দেখেছি এই রুমের বাইরে বেড়িয়েছিস তাইলে তোর খবর আছে।সেদিন একশবার কান ধরিয়েছিলাম আজ উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখবো।

কাঁদোকাঁদো হয়ে রায়াত বলল,লাগছে অর্কভ ভাই।

-লাগুক।তুই কোন সাহসে গেইটে ধরতে গেছিস।ওতোগুলো ছেলেদের মাঝে নিজেকে শো আপ করতে গিয়েছিলি।

–আমি কিছু দেখাতে যায় নি।নীলা আপুই আমাকে নিয়ে গেছে তাই গেছি।আর আপনি আমাকে এভাবে বলছেন কোন সাহসে।এখানে তো দেখলাম আপনার গার্লফ্রেন্ড জারা নামের ওই মেয়েটাও এসেছে।গতকাল গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে আমাকে নড়তে পর্যন্ত দেন নি কিন্তু আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা জারার সাথে কথা বললেন দেখলাম।

গম্ভীর স্বরে অর্কভ বলল,কি বললি তুই??

–এখানে জারা আছে আপনি আগে থেকে জানতেন তাই না? তাই তো আপনি ফুপুর এক কথায় এখানে আসতে রাজি হয়েছেন।

–বেশি বুঝিস তুই। একটা দিবো…

রায়াত আবার কাঁদোকাঁদো ভাবে বলল,আমি ফুপুকে সব বলে দিবো।আপনি এখানে কেনো এসেছেন।ওই জারা আছে এখানে তাই আপনি এসেছেন এখানে।তা সকলের চোখে ধুলো দিয়ে সারারাত ধরে বুঝি দুজনা প্রেমালাপ,, না না রঙ্গলীলা করেছেন।

–ইফতায়ায়ায়ায়া…

চোখ রাঙিয়ে অর্কভ বলল।রায়াত কেঁদে দিলো এবার।বলল,নিজে প্রেমিকার সাথে ঠিকি প্রমলীলা করেছে।আর আমি কিছুই করলাম না অথচ আমাকে বকছেন।ফুপু আসুক আগে।সব বলে দিবো আমি।আর তার বউমাকেও দেখি দেবো।

যথারীতি রায়াতের ফ্যামিলির সবাই এলো অনুষ্ঠানে।রায়াত মুখটা গোমড়া করে বসে আছে দেখে আঞ্জুমান আরা জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?রায়াত তখন বলল,

–তোমার হারামি ছেলেটা কাল থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে।আমার বরং আজই আসার উচিত ছিলো।

–কেনো রে কি করেছে অর্কভ?

–বিয়ে বাড়িতে একদিন আগে এসেছি একটু মজা করবো।কিন্তু তোমার ছেলে আমাকে মজা করতে তো দেয়ই নি।কথায় কথায় চোখ রাঙিয়েছে।এইটা করা যাবে না।ওটা করা যাবে না।
—+++-
রিশাদের দোকানে বসে অর্কভ রাগে গজরাচ্ছে।রায়াতের জন্য মা ওকে বকেছে।বিয়ে বাড়ির সব কথা শুনে রিশাদ বলল,রায়াত অন্য ছেলেদের সাথে কথা বললে তোর সমস্যা কি?তুই তো আর ওকে বউ মানিস না।
অর্কভ বলল,কে বলছে মানিনা?
ভ্রু কুঁচকে রিসাদ বলল,মানিসই না তো।না হলে ওভাবে রেগেমেগে নানাবাড়ি ছারতি।

–যখন আমাদের বিয়ে হয়,তখন আমি ১৯ বছরের একটা তাগড়া যুবক।আমার মাঝে সকল চাহিদা,আকাঙ্ক্ষা বিদ্যামান তখন।ওই ১৮/১৯ বছর বয়সের ছেলেদের মধ্যে সেই নিষিদ্ধ চাহিদাগুলো বেশি চাওয়ার থাকে কিন্তু সে সময় একটা ছেলে সদ্য যৌবনে পা দেয়।তার মধ্যে তখন নারী সঙ্গ চাওয়াটা বেড়ে যায়।যে কোন নারীর স্পর্শ পেতে সে ব্যাকুল হয়ে উঠে।যার ফলে অনেকে ভুল করে বসে সে সময়।আর ওই বয়সে যদি তার বউ থাকে তাহলে তো কথায় নাই।নিজের সকল ভালোবাসা তার মধ্যে ঢেকে দিতে কোন বাঁধা থাকে না।ইফতার বয়স কম ছিলো তখন।আমার সে অদম্য বাসনাগুলোকে আমি কয়দিন নিজের মধ্যে চেপে রাখতাম।ওইটুকু মেয়ে আমাকে সহ্য করতে পারতো?আমার সদ্য পা দেয়া যৌবনের অনলে ও পুড়ে অঙ্গার হয়ে যেতো রে। একদম বাচ্চা মেয়ে ও তখন।পিড়িয়ড পর্যন্ত হয় নি।একটা মেয়ে বারো তেরো বা তারও পর বয়ঃসন্ধিতে পা দেয়।হয়তো আরো দু-তিন বছর পর ওর যৌবনা হতো।ততদিনে কি আমি নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারতাম?হয়তো একদিন,দুদিন নিজেকে কন্ট্রোল করতাম।ওই ১১বছর বয়সেই যদি আমি ওকে কিছু করে ফেলতাম।তাহলে ওইটুকু বয়সে আমার প্রতি ওর মনে একটা বিরুপ প্রভাব পরতো।আমাকে সারাজীবন ভয় ও ঘৃণা করতো।আমাকে সারাজীবন ভয় ও ঘৃণা করতো।কখনো ভালোবাসতো না।আবার ধর আমি নিজেকে দু-তিন বছর ধরে রাখলাম।তারপর ও যখন বয়ঃসন্ধিতে পা দিলো আর তখন ও যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো।বয়স কম,মাতৃকালিন ঝুঁকি সামলাতে পারত না। সংসার,বাচ্চা সামলাতে সামলাতে ক্যারিয়ার গড়তে পারত না।আমার জন্য ওর লাইফ নষ্ট হয়ে যেতো।এসব ভেবেই আমি সেদিন বেড়িয়ে গিয়েছিলাম ও বাড়ি থেকে।কারন আমি যদি বা আমার আসে-পাশে ও থাকলে আমি নিজেক কন্ট্রোল করতে পারতাম না।কিন্তু আমি যদি দূরে থাকি তবে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো।আমি কোন বিয়ে মানিনা বলে চল যা নি।আমি ওর ভালোর জন্য,আমাদের দুজনের ভালোর জন্য দূরে সরে ছিলাম।নানুভাই যেই ভরসায় আমার হাতে ওকে তুলে দিয়েছিলো।সেই ভরসার মর্যাদা রাখার জন্যই আমায় ক্যারিয়ার গড়তে হয়েছে।আজ সময় এসেছে,নানুভাইয়ের ভরসার মর্যাদা রাখা ও নিজের স্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার মতো সমর্থ আমার হয়েছে।দেনমোহর শোধ দেয়ার মতো রোজগার করেছি।এখন ওর দায়িত্ব ও ওকে ছুঁতে আমার কোন বাঁধা নেই।যে ভরসায় আমার হাতে ওর হাত নানাজান দিয়ে গিয়েছে তার জন্য আমি নিজেকে প্রস্তুত করে ফিরে এসেছি।ও আমার অধিকার,আমার ভালোবাসা।এখন ওর সব দায়িত্ব আমার কাঁধে।

–উমম,এই কথা!তাহলে বাসরের আয়োজন করতে হবে দেখছি।

–ধ্যাত।তুইও না।আগে আমার তো ইফতার মনের খবর জানতে হবে বল।আমার মতো ওউ চাই কিনা আমাকে।

–স্বামী হোস তুই ওর।আর ও তোকে চাইবে না তাই কখনো হয়?

–স্বামী হলেও,স্বামীর অধিকার তো আমি জোর করে ফলাতে পারি না।ওর মনেও তো আমার জন্য ভালোবাসা তৈরি হবে।তবেই তো আমায় আপন করে নিবে ও।

–সে হয়ে যাবে।আল্লাহ কালাম পরে তোদের বিয়ে হয়েছে।আল্লাহও তরফ থেকেই রহমত নেমে আসবে দেখিস।

–আর তো ধৈর্যে কুলাই না রে রিশাদ।বউ থেকেও এতোদিন বউ ছাড়া থেকেছি।কি যে কষ্ট রে ভাই….

কথাটা বলেই দুজনেই হাসলো।রিশাদ মশকরা করে বলল,দোস্ত তোর বাসর ঘরে আমার দোকান থেকে তোর জন্য প্যাকেট ফ্রি।

–ওরে শালা তুই খালি ওই প্যাকেট দিয়েই দাওয়াত খাওয়ার ধান্দা করছিস।তা তো চলবে না।

–আচ্ছা যা তোর জন্য,সারাজীবনের জন্য ফ্রি করে দিলাম।

আবার দুই বন্ধু হেসে উঠলো।বিয়ে বাড়ি থেকে পরিবারের সবাই ফিরলো। অর্কভের দোকানের সামনে দিয়েই গাড়ি যাচ্ছে।রায়াত আড় চোখে দোকানের দিকে তাকালো।অর্কভ রিশাদ হাসছে।রিশাদের নজর রাস্তার বরাবর। তখনি রায়াতকে দেখলো এদিকে তাকাতে।গাড়িটা পার হয়ে গেলেই রিশাদ অর্কভকে বলল,

–আমার মনে হয় রায়াতও তোকে পছন্দ করে।

–হঠাৎ এমনটা মনে হলো কেনো তোর?

–দেখ,সেইদিন ও লুকিয়ে তোর ঘরে ঢুকে তোর তিলটার উপর চুমু খেয়েছে।আবার তোকে জারার পাশে সহ্য করতে পারে না।এসব কিসের লক্ষণ বল?

–কিন্তু ওই সায়ান নামের ছেলেটা যে কালো বিড়ালের মতো পথ কেটে আছে আমাদের মাঝে।

–হুম।ভাবনার বিষয়।

—++—-

বিয়ে বাড়ি থেকে আসার দুদিন পর,রাতে খাবার টেবিলে সকলেই আছে।আঞ্জুমান আরা খেতে খেতে ভাই সাদেকুর রহমানকে বললেন,
–আমাদের এবার রায়াতকে নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত।এভাবে তো মেয়েটার জীবন চলতে পারে না।

সাদেকুর রহমান জবাব দিলেন,ভাবি না আর বল?মেয়েটাকে নিয়েই আমার যত চিন্তা।

–জীবনে একটা এক্সিডেন্টে হয়ে গেছে যখন,তখন তা সুধরে নিয়ে নতুন ভাবে এগিয়ে চলা উচিত।বিয়ের দিন রবিউল ভাই আর ভাবি যা বললেন,তা কথা ফেলে দেয়ার মতো না কিন্তু।অবশ্যই আমাদের ভাবা উচিত।

রায়াতের মা রমেনা বেগম এবার বললেন, তো কি করা উচিত বলে তোমার মনে হয় বুবু?

–আমি মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।রায়াতের জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে দিতে চাই।রবিউল ভাই যখন চাইছে রায়াতকে তাদের ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে ।আমাদের উচিত রাজি হয়ে যাওয়া।রুদ্রও রায়াতকে পছন্দ করে।নিজে থেকে বাবা-মাকে বলেছে ও রায়াতকে বিয়ে করতে চাই।যে ছেলে এই সত্যিটা জানার পরও বিয়ে করতে চাই নিঃসন্দেহ সে ভালো ছেলে।এবার অন্তত তোমরা ভাবো।

অর্কভের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। ও নিজের খাওয়াতে মনোযোগী । তবে সব কথায় সে মনোযোগ দিয়ে শুনছে।রায়াতেরও একই প্রতিক্রিয়া।এবার রায়াতের দাদিমা বলে উঠলো,

–ছেমড়ি এখনো বিবাহিতা।আরেক বেডার লগে বিয়ে কেমনে হইবো?

আঞ্জুমান আরা এবার বলল,সেটাও আমি ভেবে নিয়েছি।রায়াত আর অর্কভের বিয়ে তো আইনিভাবে হয় নি।তাই আইনি কোন কাগজপত্রও নেই।শুধু ধর্ম মোতাবেক বিয়ে হয়েছে।তাই আইনিভাবে ডিভোর্সেরও কোন প্রয়োজন নেই।অর্কভ মুখে তিন তালাক বলে দিলেই তালাক হয়ে যাবে।আর রায়াতকে আমরা আবার বিয়ে দিতে পারবো।

অর্কভের খাওয়া থেমে যায়।ওর আম্মু কি পাগল টাগল হলো নাকি?এসব কি বলে? আঞ্জুমান আরা অর্কভের দিকে তাকিয়ে বলে,

–অর্কভ?

–জি আম্মু।

–আমি কি বলেছি এতোক্ষণ সেটা নিশ্চয় শুনেছো?
–হুম।

–তাহলে কোন এক সময় আমাদের ও রবিউল ভাইয়ের সামনে তুমি রায়াতকে তালাক দিবে।

–আমার সময় লাগবে আম্মু।

—কিসের সময়।তুমি এই বিয়েটা মানোনা।তাই সেদিন পালিয়ে গিয়েছিলে।এতোটা বছর শুধু শুধু মেয়েটা বিবাহিতা তকমা নিয়ে ঘুরেছে অথচ স্বামীর সংসার পাই নাই।ওরও তো একটা ভবিষ্যৎ আছে।সুখে সংসার করার অধিকার আছে।তুমি তালাক দিলে নিজেও মুক্ত হবে,রায়াতও।

–আমাকে একটু ভাবতে দাও।

কথাটা বলেই উঠে চলে গেলো অর্কভ।

দুদিন পর অর্কভকে নানুর ঘরে ডাকা হয়।কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানার জন্য।অর্কভ সোজাসাপটা বলে সে তালাক দিবে না।তা শুনে আঞ্জুমান আরা কিছুটা ক্ষেপে যান।বলে,

–তোমার জিদই কি সবসময় সবাইকে মেনে নিতে হবে।এই মেয়েটার কি কোন ভবিষ্যৎ নেই,বিয়ে করে সংসার করার।

–আমি তো ফিরেই এসেছি।আমার সাথে সংসার করলে সমস্যা কি?

অর্কভের কথায় বিস্ময়ে সকলে ওর দিকে তাকায়।রায়াতও মাথা তুলে তাকায়।অর্কভ নির্বিকার।আঞ্জুমান আরা অবিশ্বাসী সরে বলে,

–আর ইউ কিডিং উইথ আস অর্কভ?

—নো।আ’ম সিরিয়াস। বিয়ে মানুষের কয়বার হয়?আমাদের বিয়ে যখন হয়েই গেছে।তখন রায়াতের সাথে সংসার করতে আমার কোন আপত্তি নেই।

–কিন্তু আমার আপত্তি আছে।

পাশে থেকে রায়াত বলে উঠলো।সকলে ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে।রায়াত বলল,

–কি ভেবেছেনটা কি আপনি অর্কভ ভাই?আমি খেলার পুতুল।দাদাভাই চাইলো ছোট বেলায় আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলো।আপনি মানলেন না।নিজের ইচ্ছেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন।আবার আপনি চাইছেন তাই এখন আমায় আপনার সাথে সংসার করতে হবে?সব সময় কি পুরুষ মানুষেরই চাওয়া প্রাধান্য পাবে?আমাদের কি কোন মূল্য নেই?

–তোর বাবাও কিন্তু একজন পুরুষ।তার চাওয়াতে তুই বিয়ে করতে রাজি হতে পারিস কেমনে তাহলে?

–তিনি আমায় খাইয়েছে,পরিয়েছে,সর্বপুরি আমায় জন্মদাতা তিনি।তার কথা শুনবো না বলছেন?

–সে তোকে খাইয়েছে পরিয়েছে ঠিক আছে।ভবিষ্যতে আমিও তোর সকল দায়িত্ব নিতে চাই।তবে আমার কথা কেনো শুনবি না?বিয়ের পর বাবা নয়,স্বামীই একটা মেয়ের অভিভাবক।আর আমিই তোর বর্তমান অভিভাবক।

–আমার অভিভাবক আমার আব্বু।আপনি কেউ নন।

দৃঢ়তার সাথে কথাটা বলেই রায়াত চলে গেলো।অর্কভও কোন কথা না বলে ক্রোধান্বিত হয়ে চলে গেলো।রায়াত দরজা বন্ধ করে দিয়ে সেখানেই বসে পরলো।দুহাটু জড়িয়ে ধরে কাঁদলো।১১বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিলো ঠিক।কিন্তু তাই বলে,বিয়ে কি জিনিস ও বুঝে না?বুঝে তো।এভাবে বয়সসন্ধি কালে মনে মনে ভালোবাসলো অর্কভ ভাইকে।চেয়ে থাকতো পথপানে অর্কভ ভাই ফিরে আসবে ওর কাছে।বান্ধবিরা প্রেমে মশগুল,রায়াত তখন অর্কভ ভাইয়ের ধ্যানে মশগুল।কত ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দিতো,তখন রায়াত নিজেকে বুঝিয়েছে ও বিবাহিতা,ওর স্বামী আছে।পরিবারের সকলে যে বলতো অর্কভ ভাই পড়াশুনার করতে দূরে আছে।কিছুদিন পরে ওর কাছে ফিরে আসবে।অর্কভ ভাইয়ের ছবি দেখেই ওর শরীর মন জুড়ে প্রেমের হাওয়া বইতো।ধীরে ধীরে মাস,বছর গেলো।কিন্তু অর্কভ ফিরলো না।আঠারো বছর বয়স পার করলো,রায়াতও বুঝতে শিখলো।অর্কভ ভাই,ওর স্বামী আর হয়তো ফিরে আসবে না।তাকে সবাই মিথ্যে বুঝিয়ে রেখেছে।ও তো পরিপূর্ণ যৌবনা।তবুও অর্কভ ভাই যখন আসে নি।মানে আর কখনো আসবেও না।রায়াতের সেই এগারো বছর বয়স থেকে জমিয়ে রাখা ভালোবাসাগুলো নিজের বুকেই মাটি চাপা দিলো।এবার না হয় জীবনে নতুন কাউকে আনা যাক।ভার্সিটিতে সায়ান ভাই আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে সে রায়াতকে পছন্দ করে ভালোবাসে।সায়ানের মতো হ্যান্ডসাম ছেলেকে কেই বা না পছন্দ করবে।রায়াতও কিছুটা সারা দিলো।এভাবেই দুজনার বন্ধুত্ব।কেউ কাউকে এখনো মুখে বলে নি ভালোবাসি।কিন্তু ফ্রেন্ডস সার্কেল সকলে জানে রায়াত ও সায়ান রিলেশনশীপে আছে।
রায়াত চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালো।বুকের পাঁজর ভেঙে যাচ্ছে।যখন থেকে বুঝতে শিখেছে ভালোবাসা কি।তখন থেকে অর্কভ ভাইকেই ভালোবেসেছে।কারন অর্কভ ভাই তার স্বামী।অন্য পুরুষকে ভালোবাসা ওর পাপ।কিন্তু এখন?এখন অর্কভ ভাইয়ের দায়ে পরে বিয়ে মেনে নেয়াটা রায়াত মানতে পারছে না।হয়তো ওদের বিয়ে না হলে অর্কভ নিজের পছন্দ মতো কেউকে বিয়ে করে সংসার করতো।শুধু ওকে বিয়ে করেছিলো বলেই হয়তো সেই দায় ঠেকাতেই আজ বলল তালাক দিবে না,বিয়ে যখন করেই ফেলেছে তাই সংসার করবে।

ফোনটা নিয়ে সায়ানকে কল দিলো রায়াত।ওর লাইফের চরম সত্যটা ওকে জানাতে চাই।সেটা জানার পর যদি সায়ান ওকে গ্রহণ করে তবে রায়াত ওকেই বিয়ে করবে।

চলবে…..