তোর মন পাড়ায় পর্ব-১৯

0
6

#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব১৯
#ইস্পিতা_রহমান
হাসপাতালের কড়িডোরে সেই তখন থেকে বসে আছে রায়াত।আঞ্জুমান আরা,সাদেকুর রহমান সহ কেউ বলে ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারে নি।পরে সাদেকুর রহমান আঞ্জুমান আরাকে বলল,

–ও যখন যেতে চাইছে না তখন থাক।

অপারেশন থিয়েটারের সামনে রায়াতের পাশেই বসে আছে আঞ্জুমান আরা।উনার কাঁধের রায়াত মাথা রেখে বসে আছে।সাদেকুর রহমান কড়িডোরে ওদের সামনেই পায়চারি করছে। আঞ্জুমান আরা তাকে বলল,ওভাবে থাকলে তো ওউ অসুস্থ হয়ে পরবে ভাই।দেখছো না ওর হালও তো কেমন বেহাল।কি হলো এইটুকু সময়ের মধ্যে কে জানে।কিছু তো বলছেও না রায়াত।
রিশাদও আঞ্জুমান আরার সাথে এক মত।তাই ওউ সাদেকুর রহমানকে বলল রায়াতকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে।রায়াত কিছুতেই বাড়ি যেতে চাইলো না।আঞ্জুমান আরা ও সাদেকুর রহমান জোর করে রিশাদের সাথে ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।অপারেশন শেষে এক ঝলক অর্কভ ভাইকে দেখে চলে গেলো।

বাড়িতে ঢুকেই রমেনা বেগম মেয়েকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।হাজার হলেও মেয়ের স্বামী অর্কভ।ওর যদি কিছু হয়ে যেতো। তবে তো এই অল্প বয়সে মেয়েটা বিধবা হতো।রায়াতও কাঁদলো।দাদিমা এসে ওদের স্বান্তনা দিলো।কিন্তু তিনিও মনে মনে ব্যথিত ও শঙ্কিত।

রাতটা নির্ঘুম কাটলো রায়াতের।অর্কভ ভাই হাসপাতালের বেডে।আর ও বাড়িতে কিভাবে আরামে ঘুমাবে?ফুপুটাও না,জোর করে ওকে কেনো যে পাঠিয়ে দিলো।সাদেকুর রহমান ও আঞ্জুমান আরা দুজনই হাসপাতালে আজ থাকবেন।অর্কভ ভাইয়ের এখনো জ্ঞান ফিরে নি।ডাক্তার বলে ভোরের আগে জ্ঞান ফিরলে ভালো,না ফিরলে কোমায় চলে যাবে।মাথায় আঘাত বলে কথা।রায়াত ওর মায়ের কোলের উপর মাথা রেখেই শুয়েছিলো।তাই উঠে বসে মা-কে বলল ওর আব্বুকে কল করে জানতে অর্কভ ভাইয়ের জ্ঞান ফিরেছে কিনা।রমেনা বেগম ফোন করে জানলো এখনো জ্ঞান ফিরে নি অর্কভের।রায়াত উঠে গিয়ে ওজু করে এসে জায়নামাজ নিয়ে বসে তাহাজ্জুদ পড়তে দাঁড়িয়ে গেলো।রমেনা বেগম শ্বাশুড়ির পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

–দেখছেন আম্মা,মেয়েটা মুখে যা-ই বলুক।ভেতর ভেতর অর্কভের জন্য ওর আলাদা টান আছে।

–হো।সওয়ামি হয়।আল্লাহ কালাম পড়ে কবুল বলছে।টান তো থাকবোই।

ঘন্টা চারেক হলো জায়নামাজে বসে মোনাজাত করেই চলেছে। ফরজের আজান দিবে একটু পর।রমেনা বেগম তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুললেন।হাতে তার ফোন।রায়াতের পাশে এসে লেছ খেয়ে বসে প্রচন্ড আবেক দিয়ে বলল,

–ও রায়াত,আল্লাহ তোর মোনাজাত,তোর দোয়া কবুল করেছে।অর্কভের জ্ঞান ফিরেছে।

খুশিতে ঝরঝর করে কেঁদে দিলো রায়াত।রমেনা বেগম মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন।বললেন,তোমার আব্বু ফোন করেছিলো।চোখ খুলেছে অর্কভ।সুস্থ আছে এখন।কিন্তু…

মায়ের বুকে থেকে মাথা তুলে বিস্মিয়ে রায়াত বলল,কিন্তু কি আম্মু?

–কিছু না।সব ঠিক আছে।এবার তুই যা তো।একটু ঘুমিয়ে নে।সারারাত তো চোখের পাতা এক করিস নি।

–ঘুম আসবে না আমার আম্মু।

রমেনা বেগম একটি শাসনের স্বরেই বলল,নিজেও অসুখ বাধাবে নাকি?চলো ঘুমাবে এখন একটু।

অসহায়ের মতো মুখ করব রায়াত বলল,সত্যিই আমার ঘুম আসবে না আম্মু।

রমেনা বেগম আদুরে গলায় বলল-চল,আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

মেয়েকে ধরে তুলে নিয়ে জোর করে বিছানায় নিয়ে গেলো।হাসপাতাল থেকে এসে থেকে কিছু খাই নি।জোর করে এক গ্লাস গরম দুধ খাইয়ে বিছানায় নিয়ে এলো।মায়ের কোলের উপর মাথা রেখে রায়াত শুলো।রমেনা বেগম পরম যত্নে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
–++—
প্রায় পনেরোদিন পর অর্কভকে হাসপাতাল থেকে আজ বাড়ি নিয়ে আসবে।রায়াত খুব এক্সাইটেড। সকাল থেকে অর্কভ ভাইয়ের ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তাজা ফুল এনে ফুলদানি রাখলো।অর্কভের পছন্দের গাজরের হালুয়া বানানো নিজ হাতে।খুশি জেনো ধরছে না ওর।অর্কভ ভাই ঘরের দুয়ারে পা রাখলেই ফুলের পাপড়ির বর্ষণ করবে।নিজের হাতে বানানো গাজরের হালুয়া মুখের সামনে ধরবে।হাসপাতাল থেকে ফিরে হালুয়া দেখে নিশ্চয় খুশি হবে অর্কভ ভাই।ছোটবেলায় দুজনা এই হালুয়া খাওয়া নিয়ে কত মারামারি করেছে।যদিও রায়াতের পছন্দের খাবার না। শুধু অর্কভ ভাইয়ের পছন্দের বলেই অর্কভ ভাইয়ের সাথে এ ভাগাভাগি নিয়ে মারামারি করতো।ওর মা রান্না করেছে তাই রায়াত বেশি নিবেই।এদিকে অর্কভের পছন্দের খাবার তাই অর্কভও ভাগ ছাড়বে না।জিদ দেখিয়ে রায়াত ভাগে বেশি নিতো ঠিকি।কিন্তু শেষ পর্যায়ে অর্কভ রায়াতের থেকে কেড়ে নিয়ে সব খেয়ে নিতো।তখন রায়াত হাত-পা ছুড়ে কাঁদত।অর্কভ ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেতো।এসব ভেবেই ফিক করে হাসলো রায়াত।আজ এসব কিছুই করবে না রায়াত।আজ বাটি ধরে পুরোটায় অর্কভ ভাইকে দিয়ে দিবে।মেয়ের খুশি দেখে রমেনা বেগম ও দাদিমা আড়ালে চোখের জল মুখলেন।

রায়াত আজ নূপুর পরলো।অর্কভ ভাই যখন আসবে।দৌড়ে সে অর্কভ ভাইয়ের কাছে যাবে।দূর থেকেই ওর নূপুরধ্বনি শুনে নিশ্চয় অর্কভ ভাইয়ের বুকে ঢেউ উঠবে।আজ এই পনেরো দিন ওকে কেউ হাসপাতালে অর্কভ ভাইয়ের কাছে নিয়েই যায় নি।আব্বুকে,রিশাদ ভাইকে কত করে বলেছে ওকে নিয়ে যেতে কিন্তু ওরা কেউ নিয়ে যায় নি।উল্টো বলেছে এতো লোকের ভীড় করা যাবে না হাসপাতালে।আম্মু গিয়ে দেখে এসেছে কই তখন তো কেউ এ কথা বলে নি।শুধু ওর বেলাতেই এমন রিস্ট্রিকশন।অবশ্য এর কারনও আছে।এর মধ্যে ওর ভার্সিটির এক্সাম শুরু হয়ে যায়।রায়াত রায়াত তো ভেবেছিলো এবার এক্সামই দিবে না।অর্কভ ভাইয়ের এমন অবস্থা।এর মাঝে কি পড়ায় মন বসে?কিন্তু ওই যে ফুপু,সে বার বার ওখান থেকে ফোন করে বলে দিয়েছে রায়াত এক্সাম জেনো ভালো করে দেয়। শুধু তাই নয়,রিশাদ ভাই বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাবে।তাই এসেছিলো ওদের বাড়িতে।সাথে এক গাদা ওষুধ।ওদের বাইরে থেকে কোন ওষুধ কেনা লাগে নি।নিজের বন্ধুর জন্য সব ওষুধ নিজের দোকান থেকে দিয়েছে রিশাদ।এমন বন্ধু পাওয়াও ভাগ্যের ব্যপার।খাবার নিতে এসে রায়াত রিশাদের কাছে বায়না ধরলো ও আজ হাসপাতালে যাবেই।একদিনও ওকে হাসপাতলে যেতে দেয়া হয় না।রিশাদ তখন ওকে এক্সামটা ভালোমতো দিতে বলল।এক্সাম শেষ হলে ও নিজে নিয়ে যাবে।তবুও রায়াত কথা শুনলো না।অনুরোধ করতেই থাকলো একবার ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।তখন রিশাদ রায়াতকে অর্কভের বলা সেই কথাগুলো বলল।যে এক মাত্র রায়াতের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবেই এতোটাদিন অর্কভ দূরে সরে ছিলো।রায়াতের পড়াশোনায় যাতে ক্ষতি না হোক এই ভেবে এতোটা দিন অর্কভ দূরে ছিলো।এখন তো অর্কভ ফিরেই এসেছে তাহলে রায়াত কেনো পরীক্ষাটা দেবে না।যার ভালো জন্য অর্কভ নিজেকে এতোদিন সংযত করে রেখেছিলো।নিজের ক্যারিয়ার গড়েছে।আজ হাসপাতালে আছে বলে কি রায়াত ভালোভাবে পড়াশুনা করবে না?পরীক্ষা দিবে না?

রায়াত রিশাদের কথাগুলো বুঝল।ওর অর্কভ ভাই শুধু ওর ভালোর জন্য এতোদিন দূরে সরে ছিলো তার মানে।যতই খারাপ লাগুক।তবে রায়াত অর্কভ ভাইয়ের জন্য হলেও ভালো করে পরীক্ষাটা দিবে।একদিন পরীক্ষা দিয়ে মন মানলো না।সোজা একাই হাসপাতালে চলে গেলো।আঞ্জুমান আরা ওকে দেখে ভরকে গেলো। অর্কভ তখন ঘুমে।আঞ্জুমান আরা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রায়াতকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। পনেরো দিনে এই একবারই অর্কভকে দেখেছে রায়াত।আর আজ তো বাড়ি ফিরেই আসবে।গটগট পায়ে যখন বাড়ির ভেতর প্রবেশ করবে রায়াত তো ফুলের বর্ষণ করবে সাথে আজ একটা সারপ্রাইজ দেবে।রায়াত সুন্দর মতো সেজে নিলো আজ একটু।কেনো জানেনা আজ অর্কভ ভাইয়ের সামনে নিজেকে নতুনভাবে প্রেজেন করতে ইচ্ছে করছে।অর্কভ ভাই ওর জন্য এতোটা বছর অপেক্ষা করেছে তাহলে ও নিজে থেকে অর্কভ ভাইকে প্রপোজ করবে।আর সেই খুশিতেই আজ সাজছে।একটু চোখে কাজল নিলো,ঠোঁটে হালকা রঞ্জন করলো।

গাড়ির শব্দে বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো রায়াতের।ইশ,আগে তো এমন হয় নি।এমন লজ্জাও লাগে নি।তবে আজ কেনো অর্কভ ভাইয়ের আসায় এমন ধুকপুকুনি হচ্ছে?এমন লজ্জায় লাল কেনো হচ্ছে?তবে কি আজ প্রপোজ করবে বলেই এমনটা হচ্ছে।আচ্ছা,প্রপোজ করলে অর্কভ ভাই কেমন রিয়েক্ট দিবে?ভীষণ খুশি হবে?নাকি মাথায় একটা গাট্টি মারবে?বলবে,পাকনামি কই থেকে শিখেছিস।উসস,ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে দু হাতের আঁজলে মুখটা ঢাকলো।দরজা কলিং বেল বাজতেই রায়াত উঠে দাড়ালো।ফুলের ডালা নিয়ে দৌড় লাগালো সদর দরজার দিকে।রমেনা বেগমের দরজার কাছে যাওয়ার আগে রায়াত তাকে পার করে চলে গেলো দরজা খুলতে।রমেনা বেগম দাঁড়িয়ে পরলেন।মুখটা মলিন করে রায়াতের দাদিমার দিকে তাকালেন তিনি।দুজনেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো।প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়ে দরজা খুললো রায়াত।ফুপু ও আব্বু দাঁড়িয়ে।কিন্তু অর্কভ ভাই কই।পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে উচু হয়ে ওদের পেছনে দিকে উঁকি মারলো রায়াত।ব্যাকুল হয়ে বলল,

–অর্কভ ভাই কই?

দু-জনেরই মুখটা শুকনো।রায়াত আবার এদিক ওদিক তাকালো।সুধালো,অর্কভ ভাই কোথায়?নিশ্চয় ওর সাথে মজা করবে বলে অর্কভ ভাই গাড়ি থেকে নামে নি।রায়াত ফুপু এ আব্বুর দাঁড়ানোর মাঝে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।তখনি থমকে গেলো ওর পদযুগল।সেই সাথে অক্ষিদ্বয়ও।হাত হতে খসে পরলো ফুলের ডালি।ছড়িয়ে গেলো মেঝেতে।সেই ফুলের উপর দিয়ে হুইলচেয়ারে নিয়ে এগিয়ে আসছে রিশাদ।নাহ,অর্কভ ভাই ফুলের কার্পেটে হেঁটে নয়,হুইলচেয়ারে করে ভেতরে আসছে।মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো রায়াতের।পরে যেতে নিলেই সাদেকুর রহমান ওকে ধরে আগলে নিলো।সম্ভিৎ ফিরে রায়াত চিৎকার করে ওর আব্বুকে বলল,

–এইটা কি দেখছি আমি আব্বু?অর্কভ ভাই….অর্কভ ভাই…
আঞ্জুমান আরা এগিয়ে গেলো রায়াতের কাছে।তার দুচোখ ভরা জল।এক মাত্র ছেলের এই মৃতর মতো অবস্থা।জানে বেঁচে ফিরেছে তো,কিন্তু পুরপুরি অচল হয়ে।মাথায় আঘাতের ফলে নার্ভে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে প্যারালাইজড হয়ে হয়ে গেছে অর্কভ।হাত পা কিছুই নাড়তে পারে না।সাথে হারিয়েছে কথা বলার শক্তি।ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে শুধু।অর্কভের এই অবস্থা দেখে রায়াত নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না।টলকে পরে যেতে নিলো।সাদেকুর রহমান মেয়েকে ধরে নিলেন।

–++–+–

হুইলচেয়ারে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।দৃষ্টিও স্তব্ধ। রায়াত আলগোছে দরজাটা খুলে অর্কভের রুমে গেলো।অর্কভে হুইলচেয়ারে সামনে হাটু মুড়ে বসলো।সিক্ত গলায় বলল,

–অর্কভ ভাই,কথা বলবেন না আমার সাথে?এতোটা অভিমান করেছেন আমার উপর?সেদিন বলেছিলাম আপনার সাথে সংসার করবো না।তাই আমার সাথে কথা বলায় বন্ধ করে দিলেন?মুখের কথাটায় শুনলেন শুধু।মনের কথা জানলেন না।আজ যে আপনায় প্রপোজ করতে চেয়ছিলাম।বলতে চেয়েছিলাম হৃদয়ে লুকোনো কথাগুলো।না,না ভাইবেন না যে আপনি এমন হয়ে আছেন বলে আমি আমার মনের ব্যক্ত কথাগুলো বলবো না আর।যাকে ভালোবাসা যায় তার অক্ষমতায়ও তাকে ভালোবাসা যায়।সত্যিকারের ভালোবাসা খারাপ পরিস্থিতেও কখনো ছেড়ে যায় না।আমিও ছেড়ে যাবো না অর্কভ ভাই।আগে আপনার হাতটা ধরতে পারি নি ঠিক আছে।এইযে আজ এখন আপনার হাতটা ধরলাম।মরনের আগ পর্যন্ত ছাড়বো না।আমি,হ্যা আমিই আপনাকে সুস্থ করে তুলবো অর্কভ ভাই।দিন-রাত এক করে দিয়ে আপনার সেবাযত্ন করবো।কিন্তু অর্কভ ভাই,এই যে আজ আমি আপনাকে প্রপোজ করতে চেয়েছিলাম,আপনার মুখ থেকেও তো ভালোবাসি কথাটা শুনতে চেয়েছিলাম।ও অর্কভ ভাই,বলেন না একবার ভালোবাসি।বলুন না অর্কভ ভাই।ও অর্কভ ভাই।

রায়াত দুহাগের আজলার অর্কভের গাল নিয়ে আদুরে স্বরে কথাগুলো বলতো রায়াত।এবার অর্কভের হাতটা নিজের গালে ছুঁইয়ে বলল,

–আপনার এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী।আমাকে মারেন অর্কভ ভাই।শাস্তি দিন অর্কভ ভাই।

চেঁচিয়ে ফুপুকে ডাকলো রায়াত। আম্মু-আব্বু ও দাদিমাকে ডাকলো।রাতাতের ডাক শুনে ওরা অর্কভের রুমে এলো।রায়াত ফুপুর কাছে গিয়ে বলল,
–ফুপুমনি,তোমার ছেলেকে বলো,আমাকে শাস্তি দিতে।আমি একটা অন্যায় করেছি।তোমার ছেলে আমাকে কেনো শাস্তি দিচ্ছে না কেনো ফুপু?

আঞ্জুমান আরাকে ছেড়ে আবার রায়াত অর্কভের কাছে গেলো।হুইলচেয়ারে সামনে আবার হাটু মুড়ে বসে বলল,

–এই অর্কভ ভাই,আমি তো বিরাট বড় অন্যায় করেছি।আজ আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন না কেনো?সেদিন না কানে ধরালেন আমায়?আজ ধরবো কানে?

রায়াত উঠে গিয়ে সামনে কান ধরে দাঁড়ালো।আর বলল,অর্কভ ভাই,দেখন আমি কান ধরেছি।সেইদিন একশবার কান ধরতে বলেছিলেন আমি একশ পুরো করতে পারি নি।আজ করবো।

রায়াত কান ধরে উঠবোস করতে লাগলো।আবার বারবার বলতে লাগলো, এই দেখেন আমি কান ধরছি।উঠবোসও করছি।আমি রোজ কান ধরে উটবোস করবো।ও অর্কভ ভাই কথা বলেন না?

রায়াত দৌড়ে গিয়ে একটা বেত নিয়ে আসলো। ছোটবেলার ওকে পড়ানোর সময় ওই বেত দিয়েই মারতো।অংক করতে না পারলে ওই বেত দিয়ে কতবার হাতের উপর,ও পিঠের উপর মাইর দিয়েছে। সেই বেতটা এনে অর্কভের হাতে ধরিয়ে দিলো।মেঝেতে পরে গেলো লাঠিটা।হাতে তো কোন শক্তি নেই, ধরবে কিভাবে?রায়াত হু হু করে কেঁদে উঠলো।চিৎকার করে বলল,

–ধরছেন না কেনো লাঠিটা?মারেন আমায়।দেখেন আমি পড়তে বসে নি।আমার কিন্তু এখনো একটা পরীক্ষা বাকি আছে। আমি পড়তে বসে নি দেখেন।মারেন আমায়।ছোট বেলায় না আমি পড়তে না বসলে এই বেত দিয়ে মারতেন।এখন কেনো মারছেন না।

রায়াতের আত্মনাতে আকাশ-বাতাস ভাড়ি হয়ে এলো।তবুও অর্কভ জেনো এক চুলও নরলো না।কোন রিয়েক্ট করলো না।আঞ্জুমান আরা,রমেনা বেগম,ও দাদিমা রায়াতের আস্ফালন শুনে কেঁদে দিলেন।অর্কভের সামনে বসে ওর কোলের উপরে ওরই হাতের মুখ চেপে ধরে কাঁদছে রায়াত।

“এতোটাই ভালোবাসি,তবে সংসার করতে অমত কিসের?”

চলবে….