তোর মন পাড়ায় পর্ব-২০

0
6

#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব২০
#ইস্পিতা_রহমান

“এতোটাই ভালোবাসিস,তবে সংসার করতে অমত কেনো?”

পুরুষালি ভরাট কন্ঠস্বরে,অর্কভ ভাইয়ের হাতের আজলায় থেকে মুখ তুলে তাকালো রায়াত।লোচনদ্বয়ে অশ্রুবারি।লেপ্টে গেছে কাজল। হতবিহ্বল অক্ষিপটে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে, পাখির ডানা ঝাপটানোর মতো করে আঁখিপল্লভ ঝাপটালো।অর্কভ ভাইয়ের ঠোঁটে ঝুলে আছে ক্ষীণ হাসি।রায়াতের কপালে ভাজ পরলো।অর্কভ ভাই অসুস্থ।তার পক্ষে হাত-পা,মুখ নাড়ানো,ও হাসিও দেয়া সম্ভব না।তবুও অর্কভ ভাইয়ের মুখে হাসি,ঠোঁট প্রশস্ত। রায়াত বিস্ময়ে ঘাড় ঘুরিয়ে মা,ফুপু,বাবা,দাদিমা,রিশাদ ভাইয়ের দিকে তাকালো একবার। ওদের বিবর্ণ পাংশুটে মুখটা নেই আর।কিছুই না বুঝে রায়াত আবার অর্কভের মুখের দিকে তাকালো।অর্কভ বলল,

–সুস্থ থাকতে ঝগড়া-মারামারি,চুল ছেঁড়াছেঁড়ি করতি।আর আজ কেঁদে বান ভাসিয়ে দিলি।রায়াত তুই অভিনয়ে সেরা রেহ্।

কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালো অর্কভ।যা দেখে অবিশ্বাসী নজরে চেয়ে রইলো রায়াত।অর্কভ হেঁটে একটু সামনে গিয়ে আবার পেছনে ফিরলো।আহম্মকের মতো রায়াত উঠে দাঁড়ালো।এ কি দেখছে ও।অর্কভ বলল,

–কিরে,অবাক হচ্ছিস?

রায়াতের মুখ দিয়ে জেনো কথা বেরোচ্ছে না।নির্বিকার হয়ে শুধু চেয়েই রইলো।প্যারালাইজড হওয়া অর্কভ ভাই উঠে দাঁড়ালো,হাটলো,কথাও বলছে।তবে এতোক্ষণ যে সবাই অর্কভ ভাইকে হুইলচেয়ারে আনলো।তার এহেন অবস্থায় সবার মনের অবস্থাও ভালো না।কি হচ্ছে ওর সাথে?ভ্রম নাকি?অর্কভ ভাই তো সুস্থ।যদিও ও তো সেটাই চাই।তবুও প্রথমেই ওর সাথে এমন করলো কেনো সবাই?”সবাই”কথাটা ভাবতেই ও পরিবারের সকলের দিকে আবার একবার তাকালো।সবাই মিটি মিটি করে হাসছে।ও বুঝলো,সবাই নাটক করেছে ওর সাথে।ওর ইমোশন নিয়ে সবাই খেলেছে।অর্কভ ভাই সুস্থ হয়েই ফিরলো।অথচ সবাই ওকে বোকা বানালো।রাগে,ক্ষোভে রায়াত বলল,

–তোমরা সবাই জানতে তাই না?সবাই মিলে আমার সাথে এমন নাটক করলে?

অর্কভ এগিয়ে এসে রায়াতের সামনে ঝুঁকে চোখ বুজে বোঝালো একদম ঠিক। রায়াত ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।ফোঁসফোঁস করে শ্বাস ফেলে আবার সবার দিকে তাকালো।চেঁচিয়ে বলল,

–তোমাদের কারোর সাথে আমার কোন কথা নাই তোমরা সবাই আমাকে বোকা বানালে।

বলেই দৌড়ে অর্কভের ঘর হতে বেরিয়ে গেলো।আঞ্জুমান আরা বেশ কয়েকবার ডাকলো ওকে। কিন্তু ও নিজের কক্ষে গিয়ে দুয়ার লাগালো।সবাই জেনো হতভম্ব হয়ে গেলো।আঞ্জুমান আরা অর্কভের কাছে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

–বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো অর্কভ।তোর কথা আমাদের শোনায় উচিত হয় নি।এখন যা,গিয়ে রাগ ভাঙা ওর।অর্কভ মামা ও মামির দিকে তাকালো।ওরাও চোখের ইশারায় বোঝালো রায়াতের কাছে যেতে।অর্কভও দৌড়ে বের হয়ে গেলো ওর ঘর থেকে।রায়াতের দরজার ধাক্কিয়ে ডাকলো,

–ইফতা দরজা খোল।খোল না বউ থুক্কু বোন ধ্যাত..বউ,,,নাহ বইন,,,কি বলবো ছাই?এই ইফতা দরজা খোল।আচ্ছা সরি।তোর ইমোশন নিয়ে এভাবে খেলা উচিত হয় নি আমার।দরজাটা খোল।আচ্ছা নে আজ আমি কান ধরবো।খোল না দরজাটা।

বেশকিছুক্ষণ ধরে ঠিক এবাবেই আদুরে গলায় রায়াতকে ডাকার পর ও দরজা খুললো।গাল ফুলিয়ে,চোখ রাঙিয়ে তাকালো।অর্কভ স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল,

–দরজা না খুলে এতো জিদ কেনো?

নাক টেনে রায়াত ভেজা স্বরে বলল,এতো দরজা ধাক্কাতে হবে কেনো?বললাম না কোন কথা নাই আপনার সাথে।যান এখান থেকে।

মশকরার স্বরে অর্কভ বলল,জান?জান বললি তুই আমায়!

–ম ম মোটেও না।

–সর,ভেতরে যাবো।

–না একদম আসবেন না।

–ভেতরে না এলে প্রপোজ করবি কিভাবে?

রায়াত লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলো।তখন মনের সব কথা কনফেস করেছে অর্কভ ভাইয়ের সামনে ইশসসস,কি লজ্জা! এখন মনে হচ্ছে মাটির দু-ভাগ হলে,ও টুপ করে ভেতরে ঢুকে পরতো।

রায়াতকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে দুয়ার দিলো অর্কভ।লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়েই নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো রায়াত।অর্কভ এসে ওর চিবুকে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে দুহাতের আঁজলায় মুখটা নিলো।রায়াত চোখ তুলে অর্কভের মুখের দিকে তাকালো।অর্কভের মুখে বাঁকা হাসি।তা দেখে গা পিত্তি জ্বলে গেলো ওর।একটু আগে ওকে বোকা বানালো আর এখন লজ্জা দিয়ে আবার হাসছে।রায়াত রাগ দেখিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বুকে হাত গুঁজে অন্যদিকে ঘুরে রইলো।বেকার বেকার ওর অভিমান করা দেখে অর্কভ মৃদু হাসলো।বলল,

–মুখ ঘুরিয়ে নিলি ইফতা?আমার কি তবে পাত্রী দেখতে যেতে হবে নাকি?

পাত্রী দেখতে যেতে হবে মানে?রায়াত বুঝলো না বিষয়টা।সামনে দিকে ঘুরে চোখ ছোট ছোট করে অর্কভের দিকে তাকিয়ে বলল,

–কিসের পাত্রী দেখতে যেতে হবে?

–তুই তো সংসার করতে চাস না আমার সাথে।বিয়ে তো করতে হবে একটা তাই না?কত দিন আর বউ ছাড়া থাকবো?

এই কথা শুনে রায়াত অর্কভের কলার চেপে ধরে বাঘিনী রুপ ধারন করে বলল,

–কি বললেন আরেকবার বলেন।

নিজের কলারের দিকে একবার দেখে অর্কভ বলল,বউ ছাড়া বহু কষ্টে আছি।বিয়ে করতে হবে আমার।

কলার ধরে রেখেই রায়াত বলল,কাকে বিয়ে করবেন?ওই জারা না পারা ওকে?

–তুই তো সংসার করতে চাস না।তাহলে তো আমার ওকেই বিয়ে করা লাগবে।

–এক্কেবারে জানে মে*রে দিবো।

–মরেই তো গেছিলাম তোর আসিকের মাইর
হাতে।কেমন ছেলের সাথে প্রেম করিস যে তোকে প্রেমিকাকে সম্মান করে না।জোরজবরদস্তি করে।

রায়াত অর্কভের কলার ছেড়ে দিলো।মিনমিনিয়ে বলল,সায়ানের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই অর্কভ ভাই।ওটা আপনাকে জ্বালাতে ঘুরেছি ওর সাথে।

–আমাকে জ্বলাতে গিয়ে তো আমাকে মেরেই ফেলছিলি।সায়ানের হাতে তো মরতে বসেছিলাম।

রায়াত অর্কভের মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,উঁহু,আর এমন অলুক্ষণি কথা বলবেন না।

–তাহলে না ওর বাসায় কেনো গিয়েছিলি?

–ও আমাকে ওর বাবা-মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে গিয়েছিলো।

–সম্পর্ক নেই,তাহলে কেনো যেতে হবে ওর বাবা-মায়ের সাথে পরিচয় হতে?

–জিদের বসে গিয়েছিলাম।

–কার উপর জিদ দেখাস হূ?করবি না তো সংসার আমার সাথে তাহলে কেনো গেলি?

–জানিনা আমি।আমি শুধু জানি,আমার শুধু জিদ চেপেছিলো তাই গিয়েছিলাম।

–তুই জানিস সায়ানের বাবা মা কে?

–না।ওতো জেনে আমার কি?

–এইটাই বড় ভুল।যদি আগে থেকে জানতিস সায়ানের বাবা শামসুল জম্মাদার।তাহলে অন্তত সেদিনের ভুলটা করতিস না

অবাক হয়ে রায়াত অর্কভের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।কি বলছেন আপনি অর্কভ ভাই?

–হ্যা ঠিকি বলছি।যে শামসুল জম্মাদারের আমাদের গ্রানপা এর দোকানটার উপর নজর।দোকানে এসে মামাকে সেদিন যে শামসুল জম্মাদার শাসিয়ে ছিলো।দোকান তার কাছে বেছে দেয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিচ্ছিলো।যাকে আমি জেলে পুরেছিলাম।তোর কি মনে হয়,সায়ান তোকে এমনি এমনি জোরজবরদস্তি করছিলো।ওদের ওরা মামার দোকানটা নিয়ে নিতে পারলে সেখানে শপিংমল দিবে।মামার দোকানের দুইপাশে ওদের জমি কিনেছে।মাঝে মামার জমির জন্য ওদের শপিংমল বানানো বাঁধা পরছে।সায়ান তোর সাথে এতোদিন সম্পর্ক করেছে যাতে তোকে বিয়ে করতে পারলে ওই জমি মামার থেকে নিয়ে নিতে পারবে।কিন্তু তুই যখন ওকে বলেছিস তোর বিয়ে ছোটবেলায় আমার সাথে হয়েছিলো।তখন সায়ান ভীত হয় যে ভবিষ্যৎতে ওর সাথে তোর বিয়ে নাও হতে পারে।আর তাই ওইরকম এক জঘন্য কাজ করতে চেয়েছিলো যাতে বাধ্য হয়ে তোর ওকে বিয়ে করতে হয়।এখন বল,আমি যদি ঠিক সময়ে না পৌঁছাতাম তখন কি হতো?আমার মানে স্বামীর হক তো অন্যজনে দিয়ে বসতে ছিলি।নিশ্চয় ভাবছিস ও তো বিয়ে করতই।হ্যা বিয়ে করতো।কিন্তু জমি পাওয়া হয়ে গেলে তোকে ছুড়ে ফেলতেও দুইবার ভাবতো না।ওর মতো মেয়েবাজ ছেলে টিস্যুর মতো মেয়ে পালটায় বুঝলি।সব প্রমান আমার কাছে আছে।অচিরেই তোকে দেখাতাম।কিন্তু তার আগেই তো কান্ড করে বসলি। বাড়ির লোক জানে?

রায়াত মাথা দুলালো।বোঝালো না।অর্কভ আবার বলল,আমার কথা না বাড়ি এসেই বলে দিয়েছিলি।নিজের আসিকের কুকৃর্তির কথা এসে কেন বলিস নি?সরম লেগেছে?আচ্ছা সায়ানের আঘাতে যদি আমি আজ মরে যেতাম তুই সায়ানকে তবুও বিয়ে করতি তাই না?তোর মতো গাধী মেয়ে এই কাজ করতো তা আমি জানি।তোকে বাবুসোনা বলে এমন ভুলভাল বোঝাতো সায়ান।আমি নিশ্চিত তুই ওকে বিয়ে করে ফেলতি।গাধী একটা।গাধী না হলে সায়ানের খালি বাসায় যায় কেউ।

রায়াত কাঁদোকাঁদো হয়ে অর্কবের দিকে তাকায়।বলে,আপনার কি মনে হয়?যে ছেলে আমার সাথে অসভ্যতামি করবে,তাকে আমি বিয়ে করতাম?

–আমাকে মে*রে ফেললে হয়তো করতিস।

কেঁদেই ফেললো রায়াত।শাসানের স্বরে বলল,খবরদার আর এক বার মরার কথা বলেছেন তো…

অর্কভ একটু ঝুঁকে বলল,কি করবি?তুইও তোর আসিকের মতো মারবি আমায়?মেরে ফেলবি?

রায়াত নিজের কান ধরে বলে,সরি অর্কভ ভাই।আমার জন্য আপনার…। এই যে আমি কান ধরছি অর্কভ ভাই।আর কোনদিন এমন বোকামি করবো না।

–উঁহু।আজ শুধু কান ধরে তো হবে না।

–তাহলে?ওই লাঠিটা আনবো তাহলে?

–উঁহু।

–যা বলবো তাই করবি?

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রায়াত বলল,নাহ একদম না।শেষে ওই দিনের মতো আপনি চুমু খেতে বলবেন।

–আরে পাগলি আজ বাড়িতে আছি।আজ ওসব কিছু বলবো না।

–তাহলে?

–প্রপোজ করবি আমায়।

–কিহ!আমি পারবো না।

–তখন না কেঁদে কেঁদে নাকের জল,চোখের জল এক করে বললি, আপনাকে প্রপোজ করা হলোনা অর্কভ ভাই।আপনি তো উত্তর দিতে পারবেন না।এখন কর।দেখ উত্তর দিতে পারি কিনা।

–উঙুঁ,, আমি পারবো না।

–পারবি নাকি বাইরে গিয়ে সবাইকে বলে দিবো তুই সায়ানের বাড়ি আকাম-কুকাম করতে গিয়েছিলি।

–কিহ!মিথ্যুক।আমি…. আমি আকাম-কুকাম করতে গিয়েছিলাম?

–তা নয়তো কি?আসিক বলল তার বাড়ি যেতে আর তুই ড্যাংড্যাং করে চলে গেলি।কি উদ্দেশ্যে হু?

–ভালো হচ্ছে না কিন্তু অর্কভ ভাই?

–ভালোর গুষ্টি কিলায়।প্রপোজ কর জলদি।এতোক্ষণ ঘরে দুয়ার দিয়ে আছি শেষে বাইরে থেকে মামা-মামি,আম্মু, নানিমা সবাই ভাববে আমরা বুঝি এখনি বাসর-টাসর সেরে ফেলছি।

–উমম,অর্কভ ভাই!

মুখ ভেসিয়ে অর্রভও বলল,অর্কভ ভাই।এতো ভাই ভাই না করে প্রপোজ কর।আর শুধু প্রপোজই করবি না,হাটু মুড়ে বসে প্রপোজ করবি।

–উঙুঁ। প্রপোজাল ছেলেদের থেকে আসে।আমি কেনো প্রপোজ করবো?

–কারন আমি হ্যান্ডসাম,টলার,ড্যাসিং এ্যান্ড হট।তাই তুই প্রপোজ করবি।

–আমি কম কিসে হু?

–বয়সে কম।

–কিহ!

–তুই আমার বয়স থেকে তোর বয়স কম তাই তুই প্রপোজ করবি।

–এইটা কোন কারন হলো?

–এইটাই মেইন কারন।এই কারনে বিবাহিত হয়েও আজ নয়টা বছর বউ ছাড়া থেকেছি।তুই বুঝিস, বউ ছাড়া থাকার কষ্ট।প্রতিটা রাত বউয়ের ভাবনা ভেবে কোলবালিশ জড়িয়ে শুতে হয়েছে।স্বপ্নে বউকে নিয়ে আদর সোহাগ করতে করতে ভোরে দেখি প্যান্ট ভিজে গেছে।

–ছিঃপ্যান্ট ভরে বিছনায় হিসু করে দিতেন!

নাক সিচকে বলল রায়াত। চোখ রাঙিয়ে অর্কভ বলল,তোর মাথা।যে ভিটামিন গুলো তোকে দেয়ার কথা সেগুলো বউয়ের অভাবে আপনা-আপনিই গড়িয়ে পরছে।

–কোন ভিটামিন?

–তোর মাথা বললামই তো।প্রপোজ কর।

তখনি দরজার ধাক্কালো বাইরে থেকে।রায়াত দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।অর্কভ বুঝলো,সুযোগ পেয়ে রায়াত পালালো তো তবে এই কাজ তো ও করিই ছাড়বে। রায়াতের মুখে থেকে আই লাভ ইউ শুনবেই ও।বুকের ভেতর ভালোবাসা পুষে রেখেছে অথচ মুখ ফুটে বলবে না।আঞ্জুমান আরা ঘরে ঢুকে অর্কভকে বলল,

–পালালো কেনো ও?মেরেছিস নাকি বকেছিস ওকে?রাগ ভাঙাতে পাঠালাম আর তুই…।সুস্থ হয়েই আবার মেয়েটার পিছে লেগেছিস।অনেক নাটক করেছিস খাবি চল।তোর মামা,রিশাদ ডাইনিং অপেক্ষা করছে।রায়াত তোর জন্য গাজরের হালুয়া বানিয়েছে।

সকলেই একসাথে খেতে বসেছে।রায়াত অর্কভের সামনাসামনি চেয়ারে বসেছে।ওর পাশে দাদিমা।আর অর্কবের পাশে রিশাদ।সাদেকুর রহমান খেয়ে খেতে অর্কভকে জিজ্ঞেস করলো কবে থেকে আবার থানায় জয়েন করবে।কার জন্য বা কি কারনে,কে ওকে আঘাত করেছে,তাদের কবে জেলে ভরবে।এই কথা শুনে রায়াতের বেষম লেগে যায়।রমেনা বেগম দ্রুত মেয়ের মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো।আঞ্জুমান আরা পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।আর সাদেকুর রহমানকে নিষদ করল খাওয়ার সময় কথা না বলতে।অর্কভ খাচ্ছে আর আড়চোখে রায়াতের দিকে তাকাচ্ছে।রায়াতও চোখে চোখ পরলেই সরিয়ে নিচ্ছে।অর্কভ বাঁকা হাসলো।সামনাসামনি বরাবর রায়াতের পায়ের উপর পা রাখলো।আঁৎকে উঠলো রায়াত।ইততস্ত হয়ে এদিক-ওদিক সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে অর্কভ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালো।অর্কভের নজর খাবারের দিকে।ও এমনভাবে খাচ্ছে জেনো কিছুই হয় নি বা জানে না।কিন্তু ডাইনিংএর নিচে ঠিকি পা চলছে ওর।রায়াতের প্লাজুর নিচ দিয়ে প্রায় হাঁটু অবধি পা বুলিয়ে দিলো অর্কভ।রায়াত খিঁচে দাঁত আটকে আছে।না পারছে কাউকে বলছে না পারছে অর্কভ ভাইকে বারণ করতে।অর্কভ একবার রায়াতের দিকে তাকাতেই রায়াত চোখের ইশারায় বলল,কি হচ্ছে।অর্কভ ঠোঁট উল্টে বোঝানো কি জানি।অথচ মনে মনে ঠিকি হাসছে।অনেক্ষণ অর্কভ ভাইয়ের এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে রায়াত নেকু ভাবে ডেকে উঠলো,

–ফুঁপি…

আঞ্জুমান আরা রায়াতের দিকে তাকিয়ে বলল কি হয়েছে?

রায়াত লজ্জায় বলতে পারলো না তোমার ছেলে দুষ্টামি করছে।শুধু বলল,বিড়াল।

সবাই তখন বিড়াল খোজায় ব্যস্ত।কই বিড়াল?রায়াত তখন রাগি মুখে অর্কভের দিকে তাকালো।অর্কভের মুখে মুচকি হাসি।হঠাৎ রিশাসের চোখ গেলো ওদের দুজনের দিকে।বুঝলো ওদের দুজনের মধ্যেই কিছু চলছে।ওদের চোখের ভাষা বুঝে ডাইনিংর নিচে তাকালো।ব্যাস যা বোজার বুঝা হয়ে গেছে।তখন ও সবাইকে বলল,

–অন্য বিড়াল খুঁজে লাভ নেই।হুলো বেড়াল বাড়িতে পুষছেন সেই বেড়ালই আঁচর দিয়েছে হয়তো।

সবাই ওর কথার মানে বুঝলো না।ওরা আবার কোন বিড়াল পুষছে?ওদের বাড়িতে কোন পোষা বিড়াল তো না।পা ঝুলিয়ে বসে খেতে খেতে দাদিমা পা একটু টানটান করার জন্য সামনের দিকে ছড়িয়ে দিলো।অর্কভ পা আবার দিলো রায়াতের পায়ের দিকে।পা দিয়ে সুড়সুড়ি দিলো।এবার দাদিমা চেঁচিয়ে বলল,

–এ বিড়াল পেয়েছি রে বিড়াল।হুলো বেড়াল এবার আমি পেয়েছি।

অর্কভও এবার বেসম খেলো।আর অমনি পা সরিয়ে নিয়ে দাদিমার দিকে তাকালো।দাদিমা মশকরা করে বলল,ছ্যামরা কচি বউ থুইয়ে বুড়ি বেডির দিকে বিড়ালের নজর দ্যাস।

রায়াত চোখ ঘুড়িয়ে দাদিমার দিকে তাকালো।রিশাদ মুচকি মুচকি হাসছে।এদিকে আঞ্জুমান আরা,রমেনা বেগম ও সাদেকুর রহমান মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে কি হয়েছে ভেবে।

—++–

আঞ্জুমান আরায় জোর করে রায়াতকে পাঠিয়ে দিলো অর্কভকে রাতের ওষুধ গুলো খাইয়ে দিয়ে আসতে।রায়াত যেতে চাই নি কারন ও জানে গেলেই অর্কভ ভাই ধরবে।কারন দুপুরে ও পালিয়েছিলো।রায়াত পানির বোতল নিয়ে কাছুমাছু হয়ে অর্কভের রুমে ঢুকলো।মাথার সাদা ব্যান্ডিজ টা এখনো আছে অর্কভের সেটাই ওস্তাদি করে নিজে নিজে খোলার চেষ্টা করছিলো অর্কভ।রায়াতকে দেখে বিছানায় পা ঝুলিয়ে মেঝেতে ঠেকিয়ে বসলো।রায়াত এসে প্রেসক্রিপশনটা দেখে ওষুধ ঠিক করছে।আর অর্কভ খুটে খুটে রায়াতকে দেখতে লাগলো।ওর সেই ছোট্ট ইফতা কত বড় হয়ে গেছে।সেই এগারো বছর বয়সী,বলতে গেলে কিশোরী এক মেয়ে।আজ ও যৌবনা।জেনো সদ্য ফোটা পদ্ম।রায়াত ওষুধ নিয়ে অর্কভের দিকে ঘুরতেই দেখলো মোহনীয় দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে অর্কভ।গলা পরিষ্কার করার মতো করে শব্দ করলো।অর্কভ ধাতস্থ হলো।রায়াত ওষুদ দিলো।অর্কভ হাত পেতে নিলো পানির বোতল এগিয়ে দিলো রায়াত।ওষুধ খেয়ে অর্কভ কেমন ঘোরলাগা স্বরে বলল

–তুই কবে এতো বড় হয়ে গেলি রে ইফতা?

–কবে আবার,যেদিন বিয়ে আঠালো হলো সেইদিন।

–তবে তো আমার আরো দুই বছর আগে আসার উচিত ছিলো।

–কেনো?

–তবে দুই বছর আগেই উপোষ ভাঙতো আমার।

–কেনো আপনি না খেয়ে থাকতেন?

–মাথা মোটা।আমার ভার্জিনিটি নষ্ট হতো।

না বুঝেই রায়াত বলল ওওও।পরক্ষনেই বলে উঠলো কিহ!

–দু বছর আগেই তুইও ভার্জিনিটি হারাতি।

তুতলিয়ে রায়াত বলল,আ আ আমি গেলাম।

–বাকি ওষুধ দিলি না?

রায়াত ততক্ষণে ভৌঁ দৌড়।তা দেখে হাসলো অর্কভ।বিরবিড়িয়ে বলল,পাগলি একটা।

চলবে..