তোর মন পাড়ায় পর্ব-২১

0
7

#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব২১
#ইস্পিতা_রহমান
“নেকুরানী,ফুপিকে ডাক এখন,বল বিড়াল এসেছে,হুলো বিড়াল! ”

বাকি ওষুধ না খাইয়েই রায়াত দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।তা দেখে অর্কভ স্মিত হাসলো পরক্ষণেই কি মনে হলো বেলকনিতে গেলো।যেহেতু রায়াত ও অর্কভের ঘর পাশাপাশি তাই বেলকনিও পাশাপাশি। এর ঘরের বেলকনির দিয়ে ওর ঘরে যাওয়া যায়।অর্কভ করলোও তাই।ছোট্ট দেয়াল টপকে রায়াতের বেলকনিতে গিয়ে নামলো।বেলকনিতে কিছু একটা পরার শব্দে রায়াত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। অর্কভ ভাইয়ের রুমে থেকে এসে বিছানায়। অসে হাপাচ্ছিলো ও।ঢোক গিলে এক-পা দু-পা করে বেলকনির দরজার দিকে এগুচ্ছিলো।তখনি দরজা ঢেলে ভেতরে প্রবেশ করে অর্কভ। ভালো করে না দেখেই রায়াত চোর ভেবে জোড়ে চিৎকার দিলো আর অমনি অর্কভ গিয়ে ওর মুখে হাত দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো ওকে। ওকে দেখে রায়াতের চোখ ছানাবড়া।রায়াতের চিৎকার শুনে সকলে দৌড়ে এলো।ওর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আঞ্জুমান আরা বলল,

–রায়াত,কি হলো?

অর্কভ এখনো মুখ চেপে ধরে রেখেছে রায়াতের।ওরা দুজনি দরজার দিকে তাকালো।অত:পর আবার নিজেদের দিকে।উম উম করে বোঝাচ্ছে ওর মুখ ছেড়ে দিতে।অর্কভ ওর মুখ ছেড়ে দিলো কিন্তু দেয়ালে চেপে ধরেই রইলো।।রায়াত জোরে শ্বাস টেনে নিলো।বাইরে থেকে দজা ধাক্কিয়ে বলেই চলেছে,

–কি রে রায়াত কি হলো?দরজা খোল।

–কিছু না ফুঁপি,,বি বি বিড়াল।

আঞ্জুমান আরা সাদেকুর রহমান আবার ভাবনায় পরে গেলো।বিড়াল কই থেকে আসলো এ বাড়িতে।নিশ্চয় কেউ বাড়ির আসে পাশে বিড়াল পোষা শুরু করেছে।আর সেই বিড়ালই ওদের বাড়িতে এসে জ্বালাচ্ছে।আঞ্জুমান আরা রায়াতকে জানালা দরজা বন্ধ করে দিতে বলল যাতে বিড়াল আর ঘরে প্রবেশ করতে না পারে।কিন্তু সে তো আর জানে না হুলো বিড়ালটা ঘরের মধ্যেই রয়েছে।রায়াতের দাদিমা লাঠি ভর দিয়ে ঠক ঠক করতে করতে এগিয়ে এলেন।আঞ্জুমান আরাকে সুধালেন কি হয়েছে?আঞ্জুমান আরা বলল রায়াতের ঘরে বিড়াল ঢুকে পরেছিলো।দাদিমা মুচকি হেসে বললেন,

–বিড়াল গেছে নাকি আছে রুমে,দেখেছিস?

–নাহ।মেয়েটা শুয়ে পরেছে।আর দরজা খুলতে না বলি।

–হুলো বিড়ালটা ভেতরে থাকলে সমস্যা হবে।

–উফফ, মা।ও বিড়াল তাড়িয়ে দিয়েছে হয়তো।চলোতো ঘুমাবে তুমি।

নিজের মা কে উনার কক্ষে দিয়ে আসতে নিয়ে গেলো আঞ্জুমান আরা।এদিকে দাদিমা আবার বলল,

–হুলো বিড়ালটা ঘরে,আমার তো ঘুম হবে না।না জানি নাতনীটাকে আঁচর-টাচর দিয়ে বসে।

বলেই ফিক করে হেসে দিলো।উনার হাসা দেখে আঞ্জুমান আরা বলল,উফফ মা,তোমার হাসি পাচ্ছে।আসলেই মেয়েটাকে যদি আঁচর টাচর দিয়ে বসে তখন তো ১৪টা ইনজেকশন দিতে হবে।

–হো,আজ রাতেই ইঞ্জেকশন পুষ করে না দেয় দেখিস।

–কি বলো মা তুমি এসব।মাথা টাতা কি একেবারে গেলো নাকি তোমার?চলো রায়াতের ঘরে যেতে হবে। বিড়ালটা আসলেই তাড়াতে পেরেছে নাকি দেখি।

আবার আঞ্জুমান আরা এসে রায়াতের ঘরের দরজা ধাক্কিয়ে বলল খুলে দিতে।অর্কভ এখনো ওকে দেয়ালে চেপে ধরেই ছিলো।রায়াত অসহায়ের মতো অর্কভের দিকে তাকালো।ফুপু দরজা খুলে দিতে বলছে।অর্কভ ওকে ছেড়েদিলো।পর্দার আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো।রায়াত দরজা খুলে দিতেই আঞ্জুমান আরা ও দাদিমা ঢুকলো ঘরে।কোথায় বিড়াল,বা বিড়াল তারিয়েছে কিনা জানতে চাইলো।রায়াত ইততস্ত করে বলল তাড়িয়ে দিয়েছে।আঞ্জুমান আরা বেলকনির দরজা খোলা দেখলো।বলল,

–দরজা খোলা রাখিস বলেই তো বিড়াল চলে আসে।

আটকিয়ে দিতে গেলো উনি।দাদিমা রায়াতের কাঁধে কাঁধ দিয়ে আলতো করে ধাক্কা মেরে ফিসফিসিয়ে বলল,হুলো বিড়ালটা কি বেলকনি দিয়ে এসেছে ঘরে?বিড়ালকে এতো প্রশ্রয় দিও না দিদিভাই।১৪টা ইঞ্জেকশন নেয়া লাগবে।

বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো দাদিমার দিকে রায়াত।দাদিমা মুচকি হেসে বলল,আজকে রাতেই ইঞ্জেকশন পুষ না হয়ে যায়।

ভ্রু কুঁচকে নিলো রায়াত।কি সব কথাবাত্রা বলে দাদিমা,মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতেছে না।ঠোঁট টিপে হাসলো দাদিমা।পর্দার নিচে এক জোড়া পা দেখেছে সে।আর সে পায়ে অর্কভ দাদুভাইয়ের স্যান্ডেল।বুঝতে তো তার আগেই বাকি ছিলো না কোন বিড়াল ঘরে ঢুকেছে এখন তো পাক্কা প্রমাণ পেয়েছে।তাই আঞ্জুমান আরাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

–চল তো। আমার ঘুম ধরেছে।বিড়ালকে বিড়ালের কাজ করতে দে।

–কি বলো মা এসব।দেখছোনা মেয়েটা ভয় পেয়েছে।

–ও প্রথম প্রথম সবাই ভয় পাই।পরে ঠিক হয়ে যায়।তুই চল।হুলো বিড়াল তার বউকে যা খুশি করুক

শেষের কথাটুকু আস্তেই বলল দাদিমা।আঞ্জুমান আরাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো উনি।যাওয়ার আগে শুধু রায়াতকে বলল,

–বেশি চিৎকার চেঁচামেচি করিস না।কিছু সময় মুখ বুঝে সহ্যও করতে হয়।বিড়াল ঘরে আসলেই ভয় পাওয়া লাগে?দামড়ি মেয়ে।

বলেই চোখ টিপলি।রায়াত দরজা লাগানোর আগে দাদিমাকে মুখ ভেংচি দিলো।দরজা লাগানোর সাথে সাথে অর্কভ বেড়িয়ে এসে আবার ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল,

–নানিমা কি বলে গেলো শুনেছিস তো?

–ক ক কি বলল?

–ইঞ্জেকশন পুশ করতে।আর সেটা চুপচাপ তোকে সহ্যকরে নিতে বলল।

–বয়ে গেছে ইনজেকশন নিতে।

–নিবি না?

–না।

–ওকে তাহলে প্রপোজ কর।

–জি না।

–করবি না তো?

–নাহ।

–ওকে।যায় জারাকে কল করি গিয়ে ও আমায় প্রপোজ করতে চেয়েছে।

বলেই অর্কভ রায়াতকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে পা বাড়ালো।অমনি রায়াত অর্কভের টিশার্ট ধরে নিজের দিকে এক টান মারে।অর্কভ আবার রায়াতের মুখোমুখি।অর্কভ বলল,

–কি হলো?

–কোথাও যাবেন না।

–থেকে যেতে বলছিস তোর রুমে?

–নাহ।

–তাহলে?

–কাউকে কল করবেন না।

–কিন্তু আমার তো বউ দরকার।জারাকে কল না করলে ওর প্রপোজ শুনবো কিভাবে?

–জানে মেরে দিবো কিন্তু।

–কাকে?আমাকে নাকি জারাকে?

—নিজেকে।

অর্কভ রায়াতের ঠোঁটে আঙুল দেয়।রায়াতের চোখ দিয়ে শ্রাবণের বর্ষণ শুরু হলো।মাথাটা নিচু করে নিলো।রায়াত অর্কভকে ধাক্কা মেরে বলল,যান, ওই জারা ফারার প্রপোজই শুনেন গিয়ে।আমি কে?জারা তো আপনার প্রেমিকা। ওরই প্রপোজ একসেপ্ট করেন গিয়ে।

–এই পাগলী এই,কাঁদিস কেনো?

–কাঁদতে বয়ে গেছে আমার।চোখে কি জেনো পরছে।

–কোনটা কান্না আর কোনটা চোখে কিছু পরা,বোঝার মতো ক্ষমতা আমার আছে।

–আমি কাঁদলে আপনার কি?

–আমারি তো অনেক কিছু রে।

–কিচ্ছু না।জানি আমি।তা না হলে নয় বছর বাড়ি ছাড়া থাকতেন না।

–কেনো রে?মিস করেছিস আমাকে?

নাক টেনে রায়াত বলল,মোটেও না।

–আমি বাড়ি থাকলে কি হতো জানিস?

–কী?

—এতোদিনে তুই চারপাঁচটা বাচ্চার মা হয়ে যাইতি।

–যাহ,
রায়াত লজ্জা পেয়ে অর্কভ ভাইকে ঠেলে জানালার ধারে গিয়ে নত হয়ে দাঁড়ায়।অর্কভ এগিয়ে এসে রায়াতকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে, দু হাতের আজলায় ওর মুখটা নিয়ে বলল,

–আমি তোকে ইফতা বলে ডাকি কেনো বল তো?

–কেনো?

–“ই” অক্ষরটা স্বরবর্ণের।আমার নামের অক্ষরও স্বর বর্ণের।পাশাপাশি দুটো বর্ণ।অ,ই এর মাঝে আছে “আ”।আর এই “আ” আমাদের বেবি।

আবার লাজেরা এসে ভীর জমালো রায়াতের রাঙা গালে। আবার চোখ নামিয়ে নেয় অর্কভের থেকে।যখন চোখ তুলে তাকালো, অর্কভ ভাই চোখের সামনে নেই।নিচে তাকাতেই দেখলো ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।রায়াত অবাক হলো।অর্কভ রায়াতের ডান হাতটা দু-হাত দিয়ে ধরে প্রপোজ করলো,

–বউ হবি?

আশ্চার্জানিত হয়ে রায়াত বলল,কিহ!

–আমার জীবনসাথী,আমার অর্ধাঙ্গিনী,আমার মায়ের ছেলের বউ হবি?

রায়াতের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।কোনকিছু ভাবলোই না।মাথা উপর নিচ করে হ্যা সম্মতি জানালো।অর্কভ রায়াতের হাতের উল্টোপিঠে চুমু খেলো।এরপর উঠে দাঁড়িয়ে আবার ওর দুগাল ধরে কপালের সাথে কপাল ঠেকালো।রায়াতের এখনো চোখে জল।অর্কভ বলল,

–খুব খুব খুউব ভালোবাসবো দেখিস।আর কোন অভিযোগ রাখতে দিবো না।কোন অভিমান জমতে দিবো না।এই নয়টা বছর শুধু আজকের এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছি।শুধু তোকে আপন করে পাবো বলে।এতোটা বছর দূরে থেকে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলেছি।নানাভাইয়ের শেষ ইচ্ছে আমি পালন করবো ইফতা।

রায়াত জেনো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।ওউ তো এমন একটা দিনই চেয়েছিলো, অর্কভ ভাই ওকে ভালোবাসবে।ওকে বউ হিসেবে মেনে নিবে।খুশিতে রায়াত ফুঁপিয়ে উঠলো।অর্কভ ওর কপাল থেকে মাথা সরিয়ে ওর মুখের দিকে তাকালো।

–এই পাগলি!আবার কাঁদিস কেনো?আমিই তো তোকে প্রপোজ করলাম।

রায়াত তবুও কেঁদেই চলেছে।নাক টেনে টেনে কাঁদছে।তা দেখে অর্কভ ঠোঁট টিপে হাসলো।পাগলি এতোটাই খুশি হয়েছে যে কেঁদে বন্যা বইয়ে দিচ্ছে।অর্কভ ওর বাহু ধরে আলগোছে ওকে বুকে টেনে নিলো।রায়াত পারলে জেনো অর্কভের বুকের মধ্যে ঢুকে পরে।একদম মুরগীর বাচ্চার মতো চুপটি করে রইলো।নাহ,জানা নেই কতক্ষণ ঠিক ওভাবে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছিলো রায়াতকে।তবে এবার ঘরে যাওয়া প্রয়োজন।অর্কভ মৃদু স্বরে বলল,

–ঘুমিয়ে গেলি নাকি?

–উঁহু।

–তাহলে আর কতক্ষণ এভাবে?

–যতক্ষণ ইচ্ছে।ছাড়বেন না আমায়।

–এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে?বিছানায় যায় অন্তত।

অমনি রায়াত মাথা তুলে তাকায়।বিছানায় যাবে মানে?বিছানায় গিয়ে কি হবে?রায়াত অর্কভকে ছেড়ে সরে গেলো।আর বলল,

–নিজের রুমে যান।আমার ঘরে একদম থাকার ধান্দা করবেন না।

যদিও অর্কভ থাকবে না।রায়াতের এই কথাটা শুনে ওকে জ্বালাতে চাইলো।তাই বলল,

–যায় না আজ রাতে থেকে প্লিজ।

–নাহ,একদম না।ক ক কেনো থাকবেন শুনি?

–বউয়ের কাছে সবাই কেনো থাকে?

–ভালো হবে না কিন্তু যান।

–থাকি না ইফতা আজ।

— না, না।

–থাকলে সমস্যা কি?আর কতকাল বউ ছাড়া থাকবো?

–ততদিন থাকবেন,যতদিন ফুপু,আব্বু-আম্মু আমাদের এক সাথে থাকার অনুমতি না দেয়।

–ঠিক আছে তাহলে এখানে একটা চুমু দে।

বলেই ঝুঁকে গালটা এগিয়ে দিলো অর্কভ।রায়াত জেনো তাজ্জববনে গেলো।অর্কভ আবার বলল,

–কি হলো দে?

–উমম,পারবো না আমি।

কথাটা বলেই অন্যদিকে ঘুরে গেলো রায়াত।অর্কভ বুঝলো,ইফতা আবার লজ্জা পেয়েছে।তাই চুমু দিলো না।অর্কভ ঝোকা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ওর কাঁধটা ধরে নিজের দিকে ঘুরালো অর্কভ।রায়াতের ডান গালে ও নিয়ে চুমু বসিয়ে দিলো।রায়াত খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলো।কিছু সময় ওভাবেই রইলো।যখন চোখ খুললো।তখন সামনে আর কাউকে দেখলো না।পুরো ঘরময় নজর বুলালো।অর্কভ ভাই কথাও নেই।তার মানে নিজের ঘরে চলে গেছে।গালের যেখানে অর্কভের ঠোঁট ছুঁইয়েছে সেখানে হাত বুলালো রায়াত।অত:পর খুশিতে আটখানা হয়ে বিছানার উপর লাফ দিয়ে উপর হয়ে শুয়ে পরলো।ঘাড় তুলে কিছু একটা ভেবে হেসে দিয়ে আবার বিছানায় মুখ লুকালো।

–+++–++–

গোসল সেরে অর্কভ কোমড়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে নিজের রুমের দিকে গেলো। জলচৌকিতে বসে সুপারি কাটছে দাদিমা।তার নজরে সবটা পরেছে।বাড়ির কড়িডোরে জলচৌকি পাতা।সেখানে বসে শকুনীর ন্যায় তীক্ষ্ম নজর দিয়ে রয়েছে।আঞ্জুমান আরা ও রমেনা বেগম রান্নার কাজে ব্যস্ত।সাদেকুর রহমান গেছ বাজার করতে।রায়াত হাই তুলতে তুলতে এগিয়ে আসছে।হাতে টুথব্রাশ।গন্তব্য ওয়াশরুমে যাবে।পরনে একসেট গেঞ্জি আর প্যান্ট।চুলগুলো আওলাঝাওলা উচু করে ঠোঁট ক্লিপ দিয়ে বাঁধা।জলচৌকিতে দাদিমাকে বসে দেখে এসেই জড়িয়ে ধরতে চাইলো,

–দাদমায়ায়ায়ায়া।

–এই এক ধরবা না ধরবা কয়ে দিলাম দিদিভাই।

–কেন ধরবো না?রোজই তো ধরি।আজ কেনো ধরতে দিবা না বুড়ি।

–অরভ নানুভাই গোসল দিয়ে আসলো।তুই গোসল দেস নাই?

–তোমার অরভ নানুভাই গোসল দিছে তো আমি কেনো দিবো?তোমার অরভ ভাই ডিউটিতে জয়েন করবে আজ থেকে জানোনা?তাই তো সকাল সকাল গোসল দিয়ে রেডি হচ্ছে দেখো গিয়ে।সরো তো আগে আমার ঘুম কাটাতে দাও।

বলেই চিৎপাত হয়ে শুয়ে পরলো রায়াত।মাথাটা রাখলো দাদিমার উরুর উপর।দাদিমা ওর বাহুর উপর হাত চাপড়ে বলল,

–আগে গোসল দিয়ে আইসো দিদিভাই।এভাবে বেশিক্ষণ থাকতে নাই।

–ধ্যাত দাদিমা।রোজই তো এভাবে তোমার পায়ের উপর মাথা দিয়ে শুয়।জানো না,রোজ তোমার কোলের উপর মাথা দিয়ে শুলে আমার ঘুম ঘুম ভাব ছোটে না।

–অবুজের মতো কথা কস কেন?রোজ কি আজকের দিনের মতো?

রায়াত মাথা তুলে দাদিমার দিকে বিস্ময়ের নজরে তাকালো।সুধালো,

–কি বলো তো আজ?ইদ নাকি শবেবরাত?

–শবেবরাত না,বাসররাত।

–মানে?কার?

–কাল যে বিলাই ঢুকেছিলো তোর রুমে।বাসররাত না করে কি সে বেরিয়েছিলো হু?

ইউনিফর্ম পরে অর্কভ সবে বেড়িয়েছে।নানিমার কথায় নিমেষেই ওর বেশম লেগে কেশে উঠলো।রায়াত ও দাদিমা সেদিকে তাকালো।অর্কবকে দেখে রায়ায় বিস্তৃত হাসলো।অর্কভ চোখ রাঙালো।রায়াতের হাসি চুপসে গেলো।এই তো গতরাতেও কত পিরিতের কথা বলল।আর সকাল হতে না হতেই চোখরাঙানি।গাল ফুলিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো রায়াত।দাদিমা আবার বলল,

–আপিস যাও নাতজামাই?

ভ্রুকুঞ্চিত করে রায়াত ও অর্কভ দুজনেই দাদিমার দিকে তাকালো।অর্কভ তো বলেই উঠলো,

–ওয়াট নাতজামাই নানিমা?তুমি না আমায় অরভ নানাভাই বলে ডাকো।

–রাতে দুজন ঢলাঢলি করবা আর আমি নাতজামাই ডাকলেই ওয়াট ফুয়াট কি?এখন থেকে তো আমি নাতজামাই বলেই ডাকুম।

অর্কভও জলচৌকির উপর নানিমার কাছে এসে বসলো।ঠাট্টা করে বলল,

–কার সাথে ঢলাঢলি করলাম আমি আবার?তোমার সাথে নয়তো?

–হো,বউ থুয়ে তুই আমার সাথে ঢলাঢলি করতেই তো আসবি।রাতে যে রায়াতের ঘরে হুলো বিড়াল গিয়েছিলো তা আমি নিজ চক্ষে দেখছি।

রায়াত ও অর্কভ দুজনই চোখ বড় বড় করে দুজনার দিকে তাকালো।রায়াত বলল,

–দ দ দ দেখেছো মানে?বিড়ালইতো এসেছিলো।কালো বিড়াল।

–হইয়,বিড়াল তো স্যান্ডেল পরে।তাও আবার অরভ নানাভাইয়ের স্যান্ডেল।

–আ আ আ আমি ব্রাশ করতে গেলাম।

বলেই উঠে চলে গেলো রায়াত।অর্কভ নানিমাকে বলল,

–চোখের চশমার পাওয়ার বাড়াও।কি বলতে,কি দেখো।

অর্কভও উঠে চলে গেলো ডাইনিং এর দিকে।দাদিমা হাসতে লাগলো।ধরা পরে দুজনায় চোরের মতো পালালো।

রায়াত পড়তে ছিলো।এখনো একটা পরীক্ষা বাকি।দুইদিন ছুটি ছিলো।তার মধ্যে আজ দ্বিতীয়দিন।আবার আগামীকাল পরীক্ষা।মোটামুটি সারাটাদিনই পড়ার মধ্যেই থাকবে।পরীক্ষার আগের দিন তো একটু বেশি বেশিই পড়তে হবে। কিছু ফল কেটে আঞ্জুমান আরা রায়াতের রুমে ঢুকলো।খোলা বইয়ের টেবিকের পাশে রাখলো ফলগুলো।রায়াত আনমনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে আর কলম কামড়াচ্ছে।কলম চিবুনো একটা বদ অভ্যাস ওর।আঞ্জুমান আরা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ওকে পর্যবেক্ষণ করলো।ওর চেয়ারের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আঞ্জুমান আরা।রায়াত খেয়ালই করে নি।এতোটায় অর্কভ ভাইয়ের ধ্যানে মগ্ন।পর্যবেক্ষণ শেষ হলেই রায়াতের কাঁধে হাত রাখলো আঞ্জুমান আরা।কাঁধে কারোর স্পর্শ টের পেয়ে রায়াত অবচেতন মনে বলে উঠলো,

–আহ,অর্কভ ভাই যখন তখন ঘরে আসবেন না..

বলেই তাকাতেই ফুপুকে দেখে এক ঝাটকায় চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।তুতলিয়ে বলল,

–ফু ফু ফুপুমনি তুমি!

–কেনো?অন্য কাউকে আশা করেছিলি?

–নাহ,মানে…

—গতকাল রাতে অর্কভ তোর ঘরে এসেছিলো?কবে থেকে চলছে এসব?

গম্ভীর স্বরে আঞ্জুমান আরা প্রশ্ন করলো।রায়াত জেনো ঘাবড়ে গেলো।ফুপু তো কখনো ওর সাথে এভাবে গম্ভীর স্বরে কথা বলে না।আজ এভাবে কথা বলছে কেনো?আঞ্জুমান আরা আবার বলল,

–সত্যিটা বল রায়াত।

–না মানে আসলে ফুপুমনি..

–তোরা যখন একসাথে থাকতেই চাস তাহলে এভাবে লুকিয়েচুরিয়ে কেনো?

–অর্কভ ভাই কাল রাতে আমার ঘরে এসেছিলো কিন্তু বিশ্বাস করো থাকে নি।চলে গিয়েছিলো।

–হু বুঝলাম।

কাঁদোকাঁদো হয়ে রায়াত বলল,তুমি কি আমায় ভুল বুঝতেছো ফুপুমনি?

গম্ভীর মুখটা এবার হাসি হাসি করে আঞ্জুমান আরা বলল,না রে পাগলী।তোদের তো বিয়েই হয়েছে।এক সাথে থাকতেই পারিস।তবে ভাইজানকে বলি,ছেলের বউকে এবার আমার ঘরে নিয়ে আসি।অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হোক।সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হোক।সবাই এবার জানুক আমার অর্কভের বউ তুই।

–একটু সময় লাগবে ফুপুমনি।

–কিসের সময়।

–বা রে,একেবারে সরাসরি বিয়েতে বসবো।প্রেম করবো না নাকি?

–ওরে দুষ্টু রে।বরের সাথে আবার প্রেম!

বলেই আঞ্জুমান আরা রায়াতকে জরিয়ে ধরলেন।

চলবে….