#তোর_রঙে_হবো_রঙিন
#লেখনীতে_মেহেরীন
#পর্ব – ০৪
সেই কাঙ্খিত দিনটি অবশেষে চলেই এসেছে, আজ আলিশা ও জায়ানের বিয়ে। সকাল থেকেই মেয়ের বাড়িতে যেন উৎসবের ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে। সকালে ঘুম ভাঙতেই আলিশার ঘরজুড়ে ব্যস্ততা। আজ যে ওর বিয়ে! আলিশা কিছুক্ষণের জন্য বোঝে না—এটা স্বপ্ন, না সত্যি। পরিবারের কারোরই যেন এক মুহূর্তের ফুরসত নেই! কাজের লোকদের তদারকি করছেন, অতিথিদের যত্ন নিচ্ছেন, সেই ফাঁকে আলিশার ঘরেও মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছেন যে ওর কিছু লাগবে কিনা। ওদিকে… জায়ানদের বাসায় অতো চাপ, ওদের পক্ষের আত্মীয়স্বজনও কম তাই বাসায় অতো কোলাহলও নেই। বসার ঘরে পরিবারের সকলকে নিয়ে বসেছেন এনায়েত সাহেব, ছোটো ছেলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন…
‘ জায়ান, এতদিন যা খুশি করেছিস কিন্তু আজ থেকে তোর কাঁধে আরেকজনের দায়িত্ত্ব আসতে যাচ্ছে। তোর কর্মকাণ্ডের প্রভাব কিন্তু তার পরেও পড়বে তাই আজকের পর থেকে আশা করি যা করবি ভেবেচিন্তে করবি ‘
জায়ান যেনো তার বাবার কথা কানে তুললো না, তখন কাবেরী বেগম আশ্বাস দিয়ে বললেন…
‘ ওসব আর তোমার বলতে হবেনা, বিয়ের পর হাজার অবাধ্য ছেলেটাও দায়িত্ত্ববান হয়ে যায়’
এনায়েত সাহেব আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই হুট করে জায়ান অন্য প্রসঙ্গ তুলে বসলো!
‘ সেসব তো বুঝলাম বাবা কিন্তু তোমার বড় ছেলে থাকতে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো, সমাজ কি বলবে? তুমি তো আবার সমাজের খুব পরোয়া করো। এবার কি হলো?’
এনায়েত সাহেব ভেবেছিলেন আজকের দিনে অন্তত মেজাজ গরম করবেন না কিন্তু তার ছোটো ছেলের জন্যে কি আর উনি শান্তিতে থাকতে পারবেন? পাশ থেকে সায়ন বলে উঠলো…
‘ বিয়ে আজ তোর, আজকের দিনে অন্তত থাম!’
‘ ভুল কি বলছি? দেখ, এতো আত্মীয় স্বজন আসবে। এখন তারা যদি জানে তোর আগে আমার বিয়ে হচ্ছে আর যদি রিউমার ছড়ায় তোর কোনো বড়সড় প্রবলেম আছে তাহলে কোন মেয়ের বাবা তোর মেয়ে দেবে? তোর পারফেক্ট ইমেজের তখন বারোটা বেজে যাবে ‘
কথাগুলো বলেই হাসলো জায়ান, কাবেরী বেগম ইশারায় ওকে থামতে বলছেন। এনায়েত সাহেব তো বরাবরের ন্যায় বিরক্ত আর সায়নের এ ধরনের কথা শুনে রাগ হলো…
‘ জায়ান, এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে ‘
জায়ান আর কিছু বললো না, এখানকার সবার মুড নষ্ট করে দিয়ে ও হাসতে হাসতে উঠে চলে গেলো। বাবা ও ভাইকে বিরক্ত করতে ছেলেটার বেশ মজা লাগে। ও যেতেই এনায়েত সাহেব একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন…
‘ ইউজলেস… হোপলস একটা! আমার তো মনে হচ্ছে এর সাথে বিয়ে হলে ওই মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আমার ছেলে হয়ে ও এমন কিভাবে হলো মাঝে মাঝে ভেবে পাইনা ‘
কাবেরী বেগম স্বামীকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন, আজকের দিনে মেজাজ গরম করলে কি চলবে? সময় ঘনিয়ে আসছে, পার্লার থেকে বিয়ের ভেন্যুর দিকে যাত্রা করেছে আলিশা। জায়ানের পছন্দ করা বেনারসিতেই সেজেছে বধূবেশে আজ, সকলেই ওর সাজের বেশ প্রশংসা করেছে কিন্তু ওর মনটা যেন ঝড়পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে। ওদিকে…জায়ান তৈরি হচ্ছিলো নিজের ঘরে, পাঞ্জাবির বোতাম খুলে আবার লাগাচ্ছে, বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। বন্ধু তাফসির ঠাট্টা করে বলে…
‘ এ ভাই, কাঁপছিস নাকি তুই?’
বন্ধুর কথা শুনে জায়ান জোরে হেসে ফেললেও গলাটা শুকিয়ে এসেছে, বিয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে বুঝি সকল বর – কণের মনেই এমন অনুভূতি জাগে! পার্লার থেকে ভ্যেনু পৌঁছে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছিলো আলিশা। আত্মীয়রা অনেকেই এসে এখানে দেখা করে গেছে, সাজের প্রশংসাও করেছে কিন্তু এই বাহ্যিক সৌন্দর্যের নিচে আলিশা শুনতে পাচ্ছে নিজের মনের ভিতরের কাঁপন। হাতের মেহেদির রেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে সে আপনমনে বলে উঠে…
‘এটা কি আমি সত্যিই করছি? কাউকে না ভালোবেসেই বিয়ে করে ফেলছি?’
তার বুকের ভিতর অদ্ভুত এক খালি শূন্যতা। আর সাথে অনেকটা নার্ভাসনেস কাজ করছে। এই সম্পর্ক কি শুধুই দায়িত্ব হয়ে রয়ে যাবে? নাকি সময়ের সঙ্গে নতুন কিছু অনুভব হবে? একটু পরে ওর সঙ্গে দেখা করতে এলো ওর পরিবারের সবাই। মেয়েকে বধূবেশে দেখে জিনিয়া বেগমের চোখদুটো ভরে উঠলো, আলিশার বাবা ওয়াসিফ সাহেবও আবেগী হয়ে পড়লেন। মা বাবাকে এভাবে দেখে আলিশার মনটা খারাপ হয়ে গেলো, উভয়কেই প্রাণভরে জড়িয়ে ধরলো মেয়েটা। পাশে আদিল শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বোনকে বিদায় দিতে কষ্ট হবে বটে তবুও সবার মুখেই আজ হাসি। মেয়েটা যে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে। কিছু সময় পরেই পাত্রপক্ষ এসে পৌঁছায়। গেটের যাবতীয কার্যক্রম শেষে বরকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হয়। মেঘনা সোজা বাড়ি থেকে বিয়ের ভেনুতে এসেছে, মেইন গেট দিয়ে যখন ও ঢুকছিল তখনই সায়নের চোখ পড়ে। মেয়েটা আজ খয়েরী রঙের একটা শাড়ি পরেছে। লম্বা চুলগুলো একপাশে আনা, এতবছরে প্রথমবারের মতো মেঘনাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে সায়ন বিমোহিত হয়ে গেলো। মেঘনা সায়নকে দেখেই দ্রুত এগিয়ে এসে বললো…
‘ সরি স্যার, আসতে কিছুটা দেরি হয়ে গেলো। আসলে রাস্তায় অনেক জ্যাম পড়ে গেছিলো। বিয়ে পড়ানো তো এখনও শুরু হয়নি তাইনা?’
সায়ন যেনো শুনতেই পেলনা কথাটা, সে অপলক দৃষ্টিতে মেঘনাকে দেখতে ব্যস্ত। বসের চাহনী দেখে মেঘনা একবার নিজের দিকে তাকালো…
‘ দেখতে ভালো লাগছেনা?’
সায়ন থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে বললো…
‘ অন্যরকম লাগছে ‘
‘ প্রশংসা করলেন না বিদ্রুপ করলেন ঠিক বুঝলাম না ‘
‘ ভেতরে চলুন, বিয়ে শুরু হবে একটু পরেই ‘
মেঘনার মনে হলো সায়ন যেনো এড়িয়ে যেতে চাইছে, মেঘনাও আর কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলো। কণেকে এখনও আনা হয়নি, স্টেজে বরের ফটোশ্যুট চলছে। গ্রুপের প্রথম বন্ধুর বিয়েতে জায়ানের বন্ধুরা বেশ মজা করছে। সেই ফাঁকে আদিল এসে জায়ানের পাশে বসে বললো…
‘আজ আমাদের বাসার সবচেয়ে দামী জিনিসটা তুমি নিয়ে যাবে। আমার বোন এমনিতেই অনেক চোখের জল ফেলেছে এরপর তুমিও ওকে কাঁদালে কিন্তু পস্তাবে’
ছোটোবোনের প্রতি ভাইয়ের এতটা ভালোবাসা বুঝে জায়ানের ভালোই লাগলো, ও হঠাৎ হেসে বলল…
‘তোমার বোন যদি আমাকে কাঁদায়, তখন তুমি কার পক্ষে থাকবে?’
জায়ানের এমন প্রশ্নে ভরকে গেল আদিল, কিন্তু ও কিছু বলার সুযোগ পেলো না কারণ বিয়ের সময় হয়ে এসেছে আর সবাই মেয়েকে আনার জন্যে তাড়া দিচ্ছে। আদিল উঠে গেলো। এবার কণের আগমনের পালা। শুভ্র সাদা পর্দা বেষ্টিত বালিরঙা গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে স্টেজের দিকে এগোচ্ছে আলিশা, স্টেজে জায়ান দাড়িয়ে আছে। দুজনেই একে অপরকে দেখছে। ঠিক সেই মুহূর্তে আলিশার যেনো মনে হচ্ছিলো এখানে আর কেউ উপস্থিত নেই, শুধু ও আর জায়ান ছাড়া। সে বড় অদ্ভুত এক অনুভূতি! স্টেজের কাছাকাছি আসতেই জায়ান হাত বাড়ালো, আলিশা ওর হাত ধরেই স্টেজে উঠলো। সকলে স্টেজের কাছাকাছি দাড়ালো, কাজী সাহেব এগিয়ে এসে বিয়ের রীতিনীতি শুরু করলেন। ‘কবুল’ শব্দটি একে একে উচ্চারিত হতেই যেন চারপাশ নিঃশব্দ হয়ে গেলো। তিনবার ‘কবুল’ বলার সময়, আলিশার চোখেমুখে যেনো এক মুহূর্তের জন্য অদ্ভুত এক প্রশান্তি খেলে গেলো। ‘বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে’ — এই ঘোষণা শোনার পর পুরো বাসা যেন গর্জে উঠলো করতালি ও উল্লাসে, জায়ান তাকালো নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর দিকে। সাক্ষর করার পর মেয়েটা চোখ নিচু করে আছে। চারপাশে হৈচৈ, করতালি আর উল্লাসের মাঝেও মেয়েটা যেন নিজের মধ্যে গুটিয়ে গেছে। বুকের গভীরে এক ধরনের চাপা অস্থিরতা, সবটা ঠিক হচ্ছে তো? এ সম্পর্কের শুরুতে যে ভালোবাসা নেই, শুধু দ্বিধা আর বাস্তবতা। সেই জায়গা থেকে নতুন এক জীবনে পা রাখা কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছে ওর কাছে। ঠিক সেই মুহূর্তে পাশে বসা জায়ানের হাতে খুব আলতো করে কাঁপতে থাকা ওর হাতটা ছুঁয়ে যায়। ঝট করে তাকায় আলিশা। চোখে চোখ পড়তেই জায়ান ফিসফিসিয়ে বলে…
‘ এতো টাকা খরচা করে মেকাপ করেছো, কান্নাকাটি করে এখনই সব ধুয়েমুছে ফেলার প্ল্যান করছো নাকি? এখনও আমাদের ফটোশ্যুট বাকি!’
জায়ানের কথা শুনে কপালে ভাঁজ পড়লো আলিশার, এতো সিরিয়াস একটা মুহূর্তে এসব কি বলছে?
‘ এভাবে কেনো দেখছো? মেকআপের খরচটা আমাদের বাসা থেকে দেওয়া হয়েছে, অফ কোর্স আই অ্যাম কনসার্ন অ্যাবাউট দিস ‘
জায়ান বেশ কেয়ারলেস ভাবেই কথাটা বললো যা শুনে আলিশা ভেবে পাচ্ছেনা কি বলবে, এমনিতেই হাজার ভাবনায় মাথার ভেতর গজগজ করছে সেখানে পাশে বসে থাকা ব্যক্তিটি এমন কথা বলছে! আলিশা মাথার ওড়নাটা টেনে ঠিক করে খানিকটা রেগেই বললো…
‘আপনাদের মেকআপের বিল গচ্চা যাবেনা, চিন্তা করবেন না ‘
আলিশা চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে বসলো, মেয়েটাকে একটু রাগতে দেখে বাঁকা হাসলো জায়ান। মনে মনে বললো…
‘ আমি জানি তুমি নার্ভাস, আমিও। ঠিক জানি না, আমরা কী করছি। ঠিক করছি না ভুল কিন্তু… লেটস সি!’
বিয়ে পড়ানো শেষে কাজী সাহেব নেমে যাওয়ার পরই ক্যামেরাম্যান হাজির ছবি তোলার জন্যে কিন্তু বর কনে কারোরই এদিকে দৃষ্টি নেই, দুজনেই অন্যমনস্ক দেখে আদিত্য ওদের উদ্দেশ্য করে বলে…
‘ এইযে আপনারা, এবার একটু হাসুন আর তুই জায়ান কি ভাব দেখাচ্ছিস? একটু তো হাস! তোর বউও কাঁদবে, তুইও কাঁদবি নাকি? তাহলে তো ক্যামেরাম্যানই একমাত্র খুশি থাকবে!’
এ কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে, আলিশাও মুখে হাত দিয়ে হাসে, যদিও চোখদুটো জলে চিকচিক করছে। আরচোখে ওকে দেখলো জায়ান। বর কনের ফটোশ্যুট ও অ্যাপায়ণ পর্ব চলছিলো সে সময় মেঘনা একপাশে দাড়িয়ে কথা বলছিল মেয়েপক্ষের কোনো এক আত্মীয়র সঙ্গে, সেসময় সায়ন কখন ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করেনি। মহিলাটি হুট করে বলে উঠলো…
‘ তোমাদের দুজনকেও দারুন মানিয়েছে ‘
পাশ থেকে এ কথা শুনে সায়ন যেনো মনে মনে একটু খুশি হলো, ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকালো মেঘনা। সায়নকে দেখেই থতমত খেলো। মহিলাটি ভুল বুঝছে! মেঘনা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো…
‘ না না অ্যান্টি! আমি ওনার সেক্রেটারি, উনি আমার বস আর আমার বস এখনও অবিবাহিত ‘
মহিলাটি নিজের ভুল বুঝে সরে এলেন ওখান থেকে, মেঘনাও ইতস্ততবোধ করে সরে এলো যেনো এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে চাইছে। বিয়ের সকল কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন শেষে শুরু হয় কনে বিদায়ের প্রস্তুতি। জিনিয়া বেগম আর ওয়াসিফ সাহেবের চোখ ভিজে আসে বারবার, অথচ তাঁরা হাসিমুখে মেয়েকে বিদায় জানান। ওয়াসিফ সাহেব এনায়েত সাহেবের সঙ্গে একটু কথা বললেন, আদিল বোনকে জড়িয়ে ধরলো এরপর মুখ শক্ত করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল…
‘ভালো রেখো ওকে। তোমার মতো করে নয়, ওর মতো করে।”
জায়ান মাথা নিচু করে হালকা মাথা ঝাঁকায়, এতক্ষণে এই প্রথমবার সে নিজেকে একজন বর হিসেবে অনুভব করছে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় আলিশা শেষবারের মতো পেছনে তাকিয়ে দেখে নিজের পরিবারকে। সকলের মুখ মলিন হয়ে আছে যা দেখে বুকের ভেতর কেমন ধাক্কা দেয়। আলিশা কিছু না বলে মাথা নোয়ায়। গাড়িতে উঠে বসে। গাড়িটা ধীরে ধীরে বিদায়ের আওয়াজ মুছে এগিয়ে চলে নতুন জীবনের দিকে…ঘড়িতে তখন রাত প্রায় সাড়ে নয়টা। ঘরভর্তি বিয়ের ফুলের গন্ধে একটা অদ্ভুত ভারী আবহ। নতুন বউ হিসেবে আলিশাকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে ঘটা করে। জায়ানের মা হাসিমুখে গৃহপ্রবেশ করিয়েছেন, চারপাশে আত্মীয়স্বজনের ব্যস্ততা এখন স্তিমিত। সবার বিদায়ের পর, বাসা নীরব। নতুন সাজানো ঘরে ঢুকে আলিশা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আজ থেকে সে বিবাহিতা! ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই ফোনটা বেজে ওঠে। অচেনা নাম্বার, সাত পাঁচ না ভেবে কল রিসিভ করতেই….
‘ আলিশা ‘
নিশানের গলা! নরম, পরিচিত। নিমিষেই আলিশা চমকে উঠলো, এ বাড়িতে আসার পর যেটুকু ভালো লাগছিলো সব যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো এই ঠক মানুষটার কণ্ঠস্বর শুনে! আলিশা কোনো কথা বললো না,
‘ আলিশা, আই অ্যাম সরি! তোমার সঙ্গে এতদিন ধরে কনট্র্যাক্ট করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারছিলাম না। আলিশা আমি..আমি এই বিয়েটা বাধ্য হয়ে…’
আলিশার শরীরটা কেঁপে ওঠে। এই লোকটা সেদিন একটাও বাড়তি কথা না বলে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিল, আজ সে কীসের সাফাই দিচ্ছে? আলিশা কোনো কথা বললো না, কল কেটে দিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করে। শরীরটা কাঁপছে। এতদিন নিজেকে শক্ত রাখার যে চেষ্টা সে করছিল, তা যেনো ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। নিশানের গলায় সেই পুরনো প্রতারণার স্মৃতি যেন আবারো মনে বি’ষ ছড়াল! জায়ান সবে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে, আলিশাকে কান্না করতে দেখে তার চোখে বিস্ময়, কিন্তু কোনো প্রশ্ন নেই। জায়ান এসে সামনে দাঁড়াতেই আলিশা চমকে ওঠে। চোখ মুছতে যায়, কিন্তু পারছে না!
চলবে…