তোর শহরে রেখেছি পা পর্ব-১৫

0
356

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

দেখতে দেখতে কেটে গেছে আরো কয়েকদিন। আরহাম আর আরুহি মিলে ঠিক করেছে খুব তাড়াতাড়িই আফরিনের পরিবারের সাথে কথা বলবে। আবার কি মনে করে যেনো বলছে না। আফরিন সেদিনের পর থেকে আরহামের সাথে কথা হয় নি। কারন ওরা একে অপরকে পছন্দ করলেও ফোনে কথা বলে না। দুজনেই অপেক্ষা করছে হালাল সম্পর্কের মাধ্যমে একে অপরের কাছে আসতে। আফরিন আর আরুহি কলেজ ক্যাম্পাস এ হাঁটছে হুট করে একটা দৃশ্য দেখে আফরিন থেমে গেল।তা দেখে আরুহি বলল,

“কিরে আফরিন থেমে গেলি কেন?”

তখন আফরিন বলল,,

“দ্যাখ আরুহি কলেজের গেটের কাছে একটা লোক ভিক্ষা করছে আর তার পাশে দিয়েই একজন অসুস্থ লোক কে স্ট্রেচারে করে আনছে। আর তার পাশেই অ্যাম্বুলেন্সে একটা লাশ উঠানো হচ্ছে এই দৃশ্য দেখে মনের ভেতর কয়েকটা প্রশ্ন তৈরি হলো। পৃথিবীতে যদি ধনী থাকতো,গরিব না থাকতো। আর কেউ যদি অসুস্থ না হতো। আর মানুষের মৃত্যু যদি কখনো না হতো।”

তখন আরুহি বলল,,,

তোকে একটা গল্প বলি শোন। এটা আমাদের মুসা (আঃ) এর একটা কাহিনী আশা করছি এটা শোনার পর তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি। একদিন মুসা (আঃ) আল্লাহ কে জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহ যদি চারটি জিনিস হতো আর চারটি জিনিস না হতো তাহলে খুব ভালো হতো।

১.যদি জীবন হতো, মৃত্যু না হতো!
২. যদি জান্নাত হতো, জাহান্নাম না হতো!
৩. যদি ধনী হতো,গরিব না হতো!
৪. যদি সুস্থতা হতো , অসুস্থতা না হতো!

তখন গায়েব থেকে আওয়াজ আসলো,,হে মুসা,,
“যদি মৃত্যু না থাকতো তাহলে আমার সাথে বান্দার সাক্ষাৎ হতো না…. যদি জাহান্নাম না থাকতো তাহলে আমার আজাবের ভয় কে করতো …..যদি গরিব না থাকতো তাহলে আমার বান্দা আমার শুকরিয়া আদায় করতো না।…..আর যদি অসুস্থ না থাকতো তবে আমার বান্দা আমায় স্বরন করতো না। আল্লাহ আকবর….

আল্লাহ তায়ালা সবকিছুই আমাদের জন্য পূরিপূর্ন ভাবে তৈরি করেছেন। তিনি দয়ালু সর্বশক্তিমান! তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী। এখন বুঝতে পেরেছিস।”

“হুম বুঝতে পেরেছি এভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য জাযাকাল্লাহ খইরান।”

“শুকরিয়া।”

“এখন চল যাই। আরেকটা ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। ”

“হুম চল।”

ওরা ক্লাসে চলে গেল। এভাবেই আরো কয়েকটা দিন চলে গেল। এ কয়েক দিনে আরহাম কিছু জিনিস খুঁজেছে কিন্তু পায় নি। হয়তো আগেই তারা আবার সাবধান হয়ে গেছে। সেদিনের পর আরহাম লোক দুটো কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল তারাও কিছু জানে না। তারাও কোনদিন তাদের বসকে দেখতে পায় নি। তাই ওদের থেকে কোন হদিস পায় নি। এটা নিয়ে ওরা সবাই খুব চিন্তিত তবে। রবিন কেও ওরা থার্ড ডিগ্রি দিয়েছিল ওর কাছ থেকেও কিছু জানা যায় নি। যেহেতু ওদের কাছে থেকে কিছু জানা যায়নি তাই ওরা জানা সত্ত্বেও কোন এ্যাকশন নিতে পারবে না। ওটা আইন বিরোধী হবে। যাতে আইনবিরোধী কোন কাজ করতে না হয় তাই জন্যই তো ওরা এই পেশা বেছে নিয়েছে। তার কয়েক দিন পরেই ওরা ঠিক করলো আফরিন এর জন্য খুব তাড়াতাড়িই যাবে ও বাড়িতে। আরহাম আর আরুহি জানিয়েছে সামনে শুক্রবার যাবে কথা বলতে।

দেখতে দেখতে শুক্রবার চলে এলো। আজানের ধ্বনি কানে আসতেই চোখ খুললো আরুহি। ঘুম থেকে উঠার দোয়া পাঠ করে বিছানা ছাড়লো। ওয়াশরুম থেকে উযু করে ফজরের সালাত আদায় করে নিল।

“ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সালাত, দুনিয়া ও তার মাঝে যা কিছু আছে তারচেয়ে উত্তম।”

—জামে তিরমিজি-৪১৬!

ভাইয়ের জন্য দোয়া করলো। যাতে সবকিছুই সহজ ভাবে হয়ে যায়। সবার জন্য মন থেকে দোয়া করে জায়নামাজ এ বসে কিছুক্ষন বসে তজবিহ পরলো। তারপর বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো সূর্যদ্বয় দেখলো। নিচে আসতেই দেখলো আরহাম বসে আছে। ও গিয়েই বলল,,,

“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।’

“কি হয়েছে তোমাকে একটু চিন্তিত লাগছে!”

“কিছু না আজকে আফরিন দের বাড়িতে যাবো একটু নার্ভাস লাগছে। সব কিছু সহজ ভাবে হয়ে যাবে তো?”

“আরে ভাইয়া তুমি এত নার্ভাস হচ্ছ কেন সব ঠিকই হবে। তাছাড়া এই বিয়ের সব কিছু মিস্টার নিশান দেখছে। দেখবে সব ঠিকই হবে। সেখানে গিয়ে তোমাকে যা জিজ্ঞেস করা হবে তুমি শুধু মন থেকে উত্তর দেবে। যা তুমি পারবে তাই বলবে বাড়িয়ে বলার দরকার নেই। আজকাল যুগে বিয়ের কথাবার্তা বলতে গেলেই দেখা যায় পাত্রপাত্রীর অভিভাবক পাত্রপাত্রীকে নিয়ে এমন কথা বলে যা সত্য নয়। সব কিছু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে। আমরা তা করবো না। যদিও সবাই তোমাকে চেনে তবুও তো তোমার ভেতর টা তারা জানেনা। তাই সৎ থেকেই সব বলবে। ইনশাআল্লাহ সব ভালো হবে।”

“আমি জানতাম আমার বোন এরকমই কিছু বলবে। আর আমার যার সাথে এবং যাদের সাথে সম্পর্ক হবে তাদের কাছে আমি সৎ হয়েই থাকবো। ”

“হুম আমরা তো জুম্মার নামাজের পর যাবো তাই না।”

“হুম কেন?”

“তাহলে মসজিদ থেকে জিলাপি নিয়ে এসো। তবে জিলাপির চক্করে জুতা রেখে এসো না আবার।”

বলেই আরুহি হাসতে লাগলো। ওর হাসি দেখে আরহাম ও হাসলো। আরহাম বুঝতে পারল ওর টেনশন কমাতেই ও এরকম বলল।

____________________

আবরার দের বাড়িতে সবাই আজ ব্যস্ত । আজ আফরিন কে দেখতে আসবে। যদিও তারা পুরোনো কিন্তু তারা আজ নতুন রুপে আসছে। তাই তাদের আপ্যায়নে যেন কোন ত্রুটি না থাকে। আজ আবরার খুব খুশি সে আর রিয়াদ বাজারে গিয়ে আজ বাজার করেছে। আজ আবরার এর খুশি দেখে সবাই খুশী। নাহিয়ান খান ছেলের খুশি মুখ দেখে খুশি তবুও মনে মনে তিনি কিছু একটা ভাবছে। নাদিয়া গেল আফরিনের রুমে আফরিন ও আজ একটু নার্ভাস। নাদিয়া গিয়ে বলল,,

“কিগো ননদিনী আজ তো তোমার খুশির দিন। তাহলে মুখটা এমন লটকিয়ে দেখেছো কেন?”

তখন আফরিন বলল,,

“ভাবি জানি না। কিন্তু অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। না মানে উনি তো আমাদের বাড়িতে কতোবার এসেছে। কিন্তু আজ তো অন্য উদ্দেশ্যে আসছে তাই কেমন যেনো লাগছে।”

“এরকম অনুভুতি সব মেয়েরাই ফেস করে বুঝলে। আজ একরকম অনুভূতি হবে। বিয়ের দিন অন্যরকম অনুভূতি হবে। তুমি চিন্তা করো না তো সব ঠিকই হবে।”

“ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হবে।”

“আজ কি পরবে শাড়ি না গ্ৰাউন?”

“শাড়ি পরে হিজাব পরবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। ওরা আসুক তারপর আমি পরিয়ে দেব।”

“তুমি কিন্তু আজ আমার সাথে সাথে থাকবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। তোমার সাথেই থাকবো।”

_____________________

জুম্মার নামাজের পর আরুহি আর আরহাম আসলো খান বাড়িতে। আবরার আর রিয়াদ বাইরে ওদের রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আরহাম গাড়ি থেকে নামলো। ওর পরনে আজ সুন্দর হালকা কাজ করা সাদা রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা রঙের পায়জামা। উজ্জ্বল শ্যামবর্ন গায়ে শুভ্র রঙটা দারুন মানিয়েছে। মাশাআল্লাহ। তারপর নামলো আরুহি সে একটা সাদা গ্ৰাউন আর সাদা হিজাব পরেছে। তাকেও মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। দুজনের হাতেই কিছু জিনিস পত্র। আবরার আরুহিকে দেখে থমকে গেছে। হুশ আসতেই তাড়াতাড়ি দৃষ্টি সংযত করলো। আর ওদের দিকে এগিয়ে গেল। আবরার সালাম জানিয়ে রিয়াদ আর আবরার ওদের হাতে থাকা জিনিস পত্র গুলো নিল। আরহাম আর আরুহি ভেতরে ঢুকলো। নাহিয়ান খান আর বড়রা সকলে ড্রয়িংরুমে ছিল। ওদের দেখা তারা দাঁড়িয়ে পরলো। আরহাম গিয়ে সকল কে সালাম দিল।

“আসসালামু আলাইকুম!”

নাহিয়ান খান বললেন,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?”

“না আংকেল! আল্লাহর রহমতে সহি সালামতেই এসেছি।”

“তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো! তা কি খবর তোমাদের। কেমন আছো তোমরা?

“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আংকেল। আপনারা সকলে কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমরাও সকলে ভালো আছি।”

ওরা সোফায় বসলো। নাসরিন খান শরবত আরো কিছু ফল এনে দিল। সবাই মিলে সেগুলো খেলো। তারপর নাহিয়ান খান বললেন,, দুপুরের খাবারের পর বিয়ে কথা বলবেন। সকলে ড্রাইনিং টেবিলে বসে একসাথে খেল। এতকিছুর মাঝে আরুহি ওপরে যায় নি আফরিনের কাছে কারন সে জানে তার ভাই খুব নার্ভাস সে চলে গেলে সে আরো নার্ভাস হয়ে পরবে। তাই ভাইয়ের সাথে সাথেই রয়েছে। আরুহি খাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করল,,

“আফরিন খেয়েছে আন্টি?”

তখন নাসরিন খান বললেন,,,

“হ্যা নাদিয়া ওর খাবার রুমে দিয়ে এসেছে!”

“ওহ আচ্ছা।”

সকলে খাবার শেষ করে সোফায় বসলো। কিছুক্ষন পর আফরিন কে আনা হলো। আফরিন নীল রঙের শাড়ি পরেছে ফুল হাতা ব্লাউজ কিছু গয়না মাথায় নীল রঙের হিজাব। মুখে নেই কোন প্রসাধনি। ব্যস এতেই আফরিন কে অনেক সুন্দর লাগছে। আরহাম আজ প্রথম আফরিন কে শাড়িতে দেখলো। আফরিন এর হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেছে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আরহাম একটু দেখেই দৃষ্টি সরিয়ে আরুহির দিকে তাকালো। আরুহি মুচকি হাসি দিলো। আফরিন এসেই সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

আরুহি মুচকি হেসে সালামের উত্তর দিল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

আফরিন নাহিয়ান খানের পাশে বসলো। নাহিয়ান খান বললেন,,

“আমি আরহাম কে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। যদি সব প্রশ্নের উত্তর আমার মন মতো দিতে পারো তাহলে আমি এ বিয়েতে মত দেব।”

একথা শুনে সকলেই অবাক হলো। আবরার আর আফরিন তো বেশি কারন তিনি এতদিন প্রশ্নের কথা কিছুই বলে নি। আরুহি আরহাম এর হাতে হাত রেখে চোখ দিয়ে আশ্বাস দিল। আরহাম বলল,,

“হ্যা করতে পারেন। আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। কার হাতে আপনার মেয়েকে তুলে দিচ্ছেন সেটা তো আপনাকে দেখেই দিতে হবে। আমি আপনার মেয়ের যোগ্য কিনা সেটাও তো আপনাকে যাচাই করে নিতে হবে। আমি প্রস্তুত আপনি কি প্রশ্ন করবেন করুন।”

আরহাম এর কথা শুনে নাহিয়ান খান খুশি হলেন। তিনি বললেন,,,

“আমার পরিবার জয়েন ফ্যামিলি আমি সর্বদাই চেয়েছি আমার মেয়ের কোন জয়েন ফ্যামিলির কাছেই দিতে। যদিও আফরিন তোমাকে পছন্দ করেছে এতে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে তুমি একজন সি আই ডি অফিসার তুমি অফিস যাওয়ার পর আমার মেয়েটা কি একা সারাদিন বাড়িতেই থাকবে। তার যে কোন সমস্যা হবে না। তার নিরাপত্তার গ্যারান্টি কে দেবে।”

“একা থাকবে কেন? আরুহি আছে তো। আর আরুহি আর আফরিন একসাথে একি কলেজে পরে। এতদিন আরুহি যেমন নিজের খেয়াল রেখেছে আমাদের বিয়ের পর আরুহি আফরিনের খেয়াল রাখবে।”

“আরুহির বিয়ে হয়ে গেলে তারপর কি করবে?”

এ কথা শুনে আরহাম আরুহির দিকে তাকালো আরুহি চোখ দিয়ে বোঝালো এখন কি বলবে! আরহাম মুচকি হেসে বলল,,,

“যখন আমার বোনের বিয়ে হয়ে যাবে। আপনার মেয়ে যদি আমাদের বাড়িতে একা থাকতে না চায়‌। তখন আমি ওকে কলেজে ছেড়ে দেব। কলেজ করে ও আপনাদের বাড়িতে আসবে সারাদিন এখানে থাকবে। আমি বাড়ি যাবার সময় আবার বাড়ি নিয়ে যাবো। আর যেদিন ওর কলেজ বন্ধ থাকবে তখন আমি অফিস যাওয়ার সময় এখানে নামিয়ে দিয়ে যাবো। আবার নিয়ে যাবো। তবে আমার মনে হয় না এরকম করার প্রয়োজন হবে। কারন আপনার মেয়ে ততদিনে নিজের সংসার গুছিয়ে নেবে। তখন তার সংসার ছেড়ে সে কোথাও যেতে চাইবে না। আর যদি বলি নিরাপত্তার কথা তবে আমার মনে হয় আপনার মেয়ে হয়তো নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম। আর যদি সেটা না পারে তাহলে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সব কিছু শিখিয়ে দেব নিজ হাতে! একজন সি আই ডি অফিসার এর বউ হবে। তাই কিছু তো পারতেই হবে জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে । ”

আরহাম এর কথা শুনে সকলেই মুগ্ধ হলো। তখন নাহিয়ান খান বললেন,,

“তোমার কি মনে হয় একটা পরিবারের একটা বড় গার্ডিয়ানের দরকার নেই। আমার মেয়ে একা একাই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

“অবশ্যই দরকার আছে। তবে আমরা যেহেতু নিজেদের ভালো মন্দ নিজেরাই এতদিন মেইনটেইন করে এসেছি।যেহেতু আমাদের বাড়িতে সেরকম বড় কেউ গার্ডিয়ান নেই। আফরিন কেও সেরকম ভাবে তৈরি হতে হবে। সব থেকে বড় কথা আমি আর আরুহি দুজনে ডিসকাশন করে কোন সিদ্ধান্ত নিই। সেরকম ভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমরা দুজন মিলে ডিসকাস করে যেটা ভালো হবে সেটাই করবো। আর সর্বদা একে অপরের সিদ্ধান্ত কে সম্মান করবো।”

“এখন যদি বলি আমার তোমাদের বিয়েতে কোন মত নেই। তাহলে কি করবে?”

এ কথাটা শুনে আরহাম আর আফরিন এর বুকটা ধ্বক করে উঠলো। আরহাম কিছু একটা ভেবে বলল,,

“আসমান ও যমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাআলা সকল কিছুর তাকদির নির্ধারণ করেছেন।

~তিরমিজিঃ২১৫৯,

যদি আমাদের বিয়েটা না হয় তাহলে বুঝবো আফরিন আমার তকদির এ কখনো ছিল না। ”

আরহাম এর সব কথা শুনে নাহিয়ান খান তৃপ্ত হলেন। তিনি সর্বদা এরকম ছেলেই চেয়েছিলেন আফরিনের জন্য। তিনি ওদের সম্পর্ক নিয়ে খুব খুশি। আরহাম কে তিনি আগে থেকেই পছন্দ করতেন। তিনি জানতেন আরহাম এরকমই কিছু বলবে তবুও সিওর হওয়ার জন্য এসব করলেন। তিনি আফরিনের সামনেই প্রশ্ন গুলো করলো যাতে আফরিন বুঝতে পারে কেমন ছেলের সাথে তার জীবন শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি বললেন,,

“আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। এখন তোমরা বলো আমার মেয়ের সম্পর্কে জানার জন্য কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারো।”

তখন আরহাম বলল,,

“আপনার মেয়েকে আমি আগে থেকেই পছন্দ করি। তার সম্পর্কে জানার জন্য অনেক সময় পাবো যদি আমাদের বিয়েটা হয়‌। তখন কোন সমস্যা হলে দুজনে মানিয়ে নেব। ”

“আমি রাজি তোমাদের বিয়েতে!”

হুট করে এরকম কথায় আফরিন ওর বাবার নিকে তাকালো। আরহাম ও নাহিয়ান খান এর দিকে তাকালো। বাকি সবাই নাহিয়ান খানের কথা শুনে খুশি হলো। তা দেখে নাহিয়ান খান হেসে বলল,,

“আমি আগে থেকেই আরহাম কে পছন্দ করতাম। এই প্রশ্ন গুলো তো ফর্মালিটির জন্য করলাম। আমি তোমাদের বিয়েতে রাজি। এখন তোমরা বলো কবে ডেট ফিক্সড করবে। আমি চাই খুব তাড়াতাড়ি আমার মেয়ের হাত আরহামের হাতে দিতে। তা ছেলের বোন আপনার কি আমাদের মেয়েকে পছন্দ হয়েছে।”

তখন আরুহি একটু কেশে বলল,,

“আপনাদের মেয়েকে আমি কিছু প্রশ্ন করতে চাই। যদি আপনার মেয়ে আমার মন মতো উত্তর দিতে পারে তাহলে আমি এই বিয়েতে মত দেব। ”

এ কথা শুনে আবরার বলল,,

“জি কি জিজ্ঞেস করবেন করেন হাজার হোক আপনি ছেলের বোন।”

“হুম করছি তো মিস আফরিন আপনি রান্না করতে পারেন?”

তখন আফরিন বলল,,

“জি পারি তবে অল্প তবে শিখিয়ে দিলে সব করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। শুনেছি আপনি খুব ভালো রান্না করতে পারেন। তাই যতদিন পর্যন্ত আপনার বিয়ে না হচ্ছে ততদিন আমাকে ট্রেনিং দিবেন আপনি।”

“আরে ভাই সবাই আমার বিয়ে নিয়ে কেন পরলো। আংকেল ও বিয়ের কথা বলল আবার এখন আফরিন ও বলছে আরে আমার বিয়ে দেরি আছে। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছি না। যদিও বিয়েশাদী তাড়াতাড়িই হয়ে যাওয়া ভালো। তবে আমি তাড়াতাড়ি এটা চাচ্ছি না। আচ্ছা আমার টপিক বাদ। তো সেকেন্ড প্রশ্ন আপনাদের দুজনের ঝগড়া হলে কি করবেন?’

“ঝগড়া করার পর যখন মাথা ঠান্ডা হবে তখন ভাববো আসলে ঝগড়ার এখানে কার দোষ টা বেশি। তার দোষ বেশি হবে তাকে অপর জনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তারপর মিটমাট করে নেওয়া হবে।”

“ওহ আচ্ছা আমি ভাবলাম আপনি বলবেন ঝগড়া হলে আপনি আমার রুমে এসে থাকবেন।”

“একসাথে থাকতে গেলে মনমালিন্য হতেই পারে। তাই বলে সেটাকে গভীর হতে দেওয়া যাবে না। নাহলে সম্পর্ক নষ্ট বা তিক্ততা এসে পরবে । যেভাবে তাড়াতাড়ি মিটমাট করা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তার থেকে দূরে থাকলে সেটা কখনোই পসিবল হবে না। ”

“আচ্ছা বুঝলাম। আপাতত আমার কথা শেষ আমি এ বিয়েতে রাজি। এখন আপনারা বর কনে চাইলে আলাদা ভাবে কথা বলতে পারেন।”

সকলে আফরিন এর কথা শুনে অবাক। আফরিন বাচ্চামো করলেও আজ ম্যাচুরিটির সাথে কথা বললো। তখন আরহাম বলল ,,

“আমার দরকার নেই। আমি উনাকে যতটুকু দেখেছি ততটুকুতেই বুঝতে পেরেছি উনি কেমন। তবে উনি চাইলে কথা বলতেই পারি। ”

তখন আফরিন বলল,,

“আমারও তেমন কিছু বলার নেই। যতটুকু ওনাকে দেখেছি সেটুকুতেই বুঝতে পেরেছি উনি কেমন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আরুহিরা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বিকেলের দিকে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল । ওদের বিয়ে ঠিক এক মাস পরে হবে। নাহিয়ান খান খুব ধুমধাম করে একমাত্র বিয়ের আয়োজন করতে চেয়েছিলেন। এতে অবশ্য আরুহি আর আরহাম বাধা দেয় নি। তবে ওরা বলেছে ওদের সাধ্য মতো রিসিপশন এর অনুষ্ঠান করবে। এতে বড় বড় বিজনেস ম্যান হয়তো থাকবে না। কিন্তু আত্মীয় স্বজন সবাই থাকবে। ওরা তো আর নাহিয়ান খানদের মতো এত বড় লোক নয়। এতে নাহিয়ান খান কিছুই বলে নি। বলেছে আরহাম রা যেভাবে চায় সেভাবেই হবে। হলুদের অনুষ্ঠান হবে না। শুধু বিয়ে আর বৌভাত হবে। বিয়েটা নাহিয়ান খানের বাড়িতে হবে। আর বৌভাত আরহাম দের বাড়িতে। আরহাম আর আরুহি বেরিয়ে কবরস্থানে গেল ওদের মা বাবার কবর জিয়ারত করলো। তারপর একটা পার্কে বসলো। আরহাম আর আরুহি চুপ করে বসে আছে একটা বেঞ্চে। হুট করে আরহাম বলল,,

“আজ মা বাবা থাকলে খুব খুশি হতো তাই না বোনু!”

তখন আরুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“হুম খুব খুশি হতো। মা বলতো, মা নিজের হাতে তার ছেলেমেয়েকে বিয়ের দিন সাজাবে। মা তো আর নেই আমি তোমাকে সাজিয়ে দেব ভাইয়া।”

আরহাম অসহায় দৃষ্টিতে আরুহির দিকে তাকালো। আরুহির চোখ ছলছল করছে। তা দেখে আরহাম এর বুকটা ধক করে উঠলো। ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“চল বাড়ি যাই। দাদুভাই কে জানাতে হবে বিয়ের কথা। উনি তো আমাদের গুরুজন আর বলতে গেলে আমাদের অভিভাবক। নানাভাই আর নানিজান ও তো বেঁচে নেই। আত্মীয় বলতে দাদুভাই ভালোবাবা আর আমার কিছু বন্ধু আর অফিসের কলিগ। এই হলো আমাদের আত্মীয় তোর ও তেমন কোন বন্ধু নেই। একমাত্র বন্ধু আফরিন সে তো তোর ভাবিই হবে।”

“হুম। আত্মীয়ই তো এই কয়েকজন কিন্তু তুমি তো নেহমাত শেখের ফ্যামিলি কে বাদ দিয়ে দিয়েছো। তারাই তো আমাদের কাছের আত্মীয়। তাদের কেও বলতে হবে।”

“আরু কতোদিন আর তাদের সহ্য করতে হবে।”

“যতদিন না সব কিছু সামনে আসছে। আর তারা কিছু ভুল না করছে। তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে খুব শিগগিরই কিছু একটা হবে। আরে এসব বাদ দাও তুমি তোমার বিয়ের দিকে নজর দাও। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

আরহাম কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,,

“আচ্ছা আরু আমি বেস্ট হাজবেন্ড হতে পারবো তো?”

“যে একজন বেস্ট ছেলে হতে পেরেছে বেস্ট ভাই হতে পেরেছে সে বেস্ট হাজবেন্ড ও হতে পারবে। আর ভবিষ্যতে বেস্ট বাবাও হতে পারবে।”

“না আমার মাঝে মাঝে ভয় হয় আফরিন কে সুখী করতে পারবো তো।”

“পারবে ভাইয়া এত টেনশন নিও না তো!”তবে কি জানো তো ভাইয়া সব মেয়ে গয়না গাটি চায় না। কিছু মেয়ে প্রিয়জনের কাছ থেকে একটু সময় একটু কেয়ার একটু ভালোবাসা চায়। আফরিন এদের মধ্যেই একজন। ও বড়লোক হলেও ওর ভেতর আমি কোন অহংকার দেখি নি। আবার নরমাল ড্রেস পরতে দেখেছি সবসময় যেখানে সবাই দামী ড্রেস পরে কলেজে আসে। ওকে দেখে যতটুকু বুঝেছি ও তোমার বা আমাদের সাথে ভালোভাবেই মানিয়ে নিতে পারবে। তোমার যে প্রফেশন তাতে ওকে সময় দেওয়া একটু টাফ হয়ে যাবে তবে যেটুকু পারো সেটুকু সময় ওকে দেওয়ার চেষ্টা করবে। দেখবে তাতেই ও খুশি হয়ে যাবে।”সব থেকে বড় কথা,,

বিপরীত মানুষটা যদি সঠিক হয়, তাহলে ভালোবাসা আসলেই সুন্দর! আর তোমার বিপরীত মানুষ টা সঠিক। ইনশাআল্লাহ রব তোমার জীবন কে সহজ করে দিবেন।”
হে আমাদের রব! আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন এবং আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন 🖤
____________[সুরা কাহাফ~১০]✅

আরহাম তখন বলল,,

“আমিন বোনু আমিন!
“তোর মতো বোন যেনো ঘরে ঘরে হয়।”

“হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। এখন চলেন বাড়ি যাই।”

__________________

দেখতে দেখতে বিয়ে এসে পরলো। আর মাত্র পাঁচদিন আছে আরহাম এর বিয়ের। আনোয়ার খান কে যখন আরহামের বিয়ের কথা বলা হয়। তখন তিনি বলেন তার নাতির বিয়ে সে অনেক ধুমধাম করে দেবে। কিন্তু আরহাম আর আরুহি সেটা নাকচ করে দেয়। আরহাম আর আরুহি সবাইকে নিয়ে সাত দিন আগেই আসতে বলেছে। সেদিন আরুহির কথা না মানলেও নাতির বিয়ে উপলক্ষে তিনি সাতদিন আগেই চলে এসেছে। শুধু আহমাদ খান আর তার স্ত্রী হলুদের দিন আসবে। রুপা রুপার হাজবেন্ড ও এসেছে। আরহাম আর আরুহি আজিম খানকেও বলেছে সাতদিন আগে আসতে কারন সবকিছু তাকেই দেখতে হবে। আরহাম এর বাবা মায়ের সকল দায়িত্ব তাদের পালন করতে হবে। তাই আজিম আহমেদ তার স্ত্রীকে নিয়ে হাজির। আনোয়ার খানদের সাথে রুহানি ও এসেছে। কারন আরুহি বারবার করে বলে দিয়েছে রুহানি যেনো আসে। রুহানি ইতস্তত করছিল কারন আরহামই তার ভাই রবিন কে ধরেছে। তবুও এসেছে নানার সাথে। নেহমাত শেখ আর আখি খান বিয়ের দিন আসবে বলেছে। ওরাও আর কিছু বলে নি‌। আজ আরহাম আরুহি রুপা আর রুহানি যাবে বিয়ের শপিং করতে। ওখানে থেকে আবরার আফরিন রিয়াদ নাদিয়া আর পাখি আসবে। আরুহিরা শপিং মলে গিয়েই দেখতে পেল আবরার রা অপেক্ষা করছে। ওরা ওদের সাথে কুশল বিনিময় করে। আর শপিং করতে লাগলো। আরুহি আরহাম কে দেখে দেখে সব কিনে দিল। আফরিনের বিয়ের লেহেঙ্গা আফরিন কে পছন্দ করতে দেওয়া হলো। কিন্তু আফরিন বলল আরহাম যেটা পছন্দ করবে সেটাই পরবে। আরুহি আরহাম কে একটা মেরুন রঙের পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিয়েছিল।তাই মিলিয়ে আরহাম আফরিনের জন্য মেরুন রঙের লেহেঙ্গা পছন্দ করলো। সাথে ম্যাচিং হিজাব। আবরার আরুহির জন্য একটা গ্ৰাউন পছন্দ করলো। কিন্তু কিভাবে দেবে ভাবতে পারছে না। হুট করে আবরার আরুহি কে ডাক দিল।

“মিস আরুহি একটু এদিকে আসবেন!”

আরুহি আবরারের কাছে গিয়ে বলল,,,

“হ্যা মিস্টার নিশান বলুন?”

“আসলে আমি একটা পাঞ্জাবি কিনবো ভাবছিলাম কিন্তু পছন্দ করতে পারছি না। আপনার পছন্দ তো খুব ভালো আরহাম ভাইয়া কে পছন্দ করে দিলেন। তাই আপনি আমাকে একটু হেল্প করবেন?”

“হ্যা করাই যায়। চলুন!”

আরুহি আবরার কে একটা সাদা রঙের পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিল। তখন আবরার বলল,,

“মিস আমি যদি আপনাকে একটা গ্ৰাউন গিফ্ট করি আপনি কি নেবেন! আসলে আমার একটা গ্ৰাউন খুব পছন্দ হয়েছে তখন মনে হলো আপনাকে বেশ মানাবে তাই আমি ওটা কিনে নিয়েছি । আপনি প্লিজ নিবেন! ”

“তা আমাকে গিফট দেওয়ার কারন?”

“তেমন কোন কারন নেই তবে আপনি যেহেতু কারন চাইছেন তাহলে বলছি আপনি আমাকে অনেক সাহায্য করেন। যেমন এখন করলেন। সত্যি বলতে আপনার কথায় আমি শান্তি খুঁজে পাই। আপনার সাথে কথা বললে আমি অদ্ভুত শান্তি অনুভব করি। যখন আমি খুব ডিপ্রেসড থাকি তখন আপনার ভালো কথা গুলো মনে করে আমি শান্ত হয়ে যাই।যেগুলো আপনি আমাকে বলে শান্তনা দিতেন। এবার বলুন নিবেন ”

আবরার ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বলল,,

“আচ্ছা ঠিক আছে নিচ্ছি। ধন্যবাদ গিফট দেওয়ার জন্য।”

“মিস এটা আপনি বিয়ের দিন পরবেন!”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আরুহি আবরারের ওখান থেকে চলে গেল। তখন আবরার বলল,,

“প্রিয়সী আমিও তোমার জন্য শুভ্র রঙ পছন্দ করেছি। আর তুমি ও আমার জন্য শুভ্র রঙ পছন্দ করলে।
– মায়া তুমি যেমন স্নিগ্ধ এক অনুভূতি..! তেমনই খূব ভয়ংকর যন্ত্রণা ,মানুষ টা সঠিক হলে,প্রিয় মানুষের প্রতি মায়া কখনোই কমেনা..!

যেমন তুমি ঠিক তুমি ও আমার জীবনের সঠিক মানুষ।”

তখনি পেছন থেকে রিয়াদ আবরারের ঘাড়ে হাত রেখে বলল,,

“কিরে আবরার একা একা কি বিরবির করছিস?”

“তেমন কিছুই না। চল সবার শপিং শেষ এখন কিছু খেয়ে বাড়ি বাড়ি ফেরা যাক।”

“হুম ঠিক বলেছিস।”

ওরা সবাই মিলে একসাথে একটা রেস্টুরেন্টে গেল। আফরিন আর আরহাম কে আলাদা টেবিলে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওরা খাচ্ছে সাথে কথা বলছে আর হাসছে সেদিকে আবরার তাকিয়ে আছে। আহ কি সুন্দর হাসি দুজনের মুখে। তা দেখে আবরার মনে মনে বলল,,

“একদিন আমারও নিজস্ব একটা মানুষ হবে, আমাকে অনেক ভালোবাসবে, আগলে রাখবে। আমাকে হারানোর ভয় পাবে। সেদিন আমি হবো তার আকাশ সমান ভালোবাসা!

_____________________

বিয়ের আগের দিন রাতে ,,

মাহমুদ ভিলার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরুহি। বাড়িটাকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। লাইট জ্বলছে আরুহি সেটাই দেখছে। আজ ও ওর বাবা মাকে খুব মিস করছে। আরুহি তার ভাইয়ের বিয়ের সকল জিনিস দেখাশোনা করছে। তার একমাত্র ভাইয়ের বিয়েতে সেকোন ত্রুটি রাখতে চায় না। আরহাম আরুহি কে খুঁজছে খুঁজতে আরুহি কে বাড়ির সামনে দেখতে পেল। আরুহি অদ্ভুত দৃষ্টিতে বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে,,

“কিছু-কিছু যন্ত্রণার সমাধান থাকে না অভ্যাস হয়ে যায়, মেনে নিতেই হয়..!

তখন আরহাম ওর কাছে এসে মুচকি হেসে বলল,,

“মিস আরুহি মাহমুদ খান কি দেখছেন?”

আরুহি সেদিকে তাকিয়েই বলল,,

“ভাইয়া বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে তাইনা?”

“হুম খুব সুন্দর হয়েছে। সব কাজের দায়িত্বে যে আরুহি মাহমুদ খান ছিল। সুন্দর হতেই হবে।”

“মা বাবা কে খুব মিস করছি ভাইয়া।”

এ কথা শুনে আরহাম এর মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। আজ সেও খুব মা বাবাকে মিস করছে। আরহাম আরুহিকে বলল,,

“বোনু আইসক্রিম খাবি আজ দুইভাইবোন মিলে একসাথে আইসক্রিম খাবো। এরপর তো আর একা খেতে পারবো না আরেকজন কে সাথে নিয়ে খেতে হবে। তাই চলে আজ শেষ দুইজন একসাথে আইসক্রিম খাবো। এদিন আর আসবে না।”

আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

“হুম চলো এই রাতের বেলা আইসক্রিম খেতে মন্দ লাগবে না। কিন্তু বাড়ি ভর্তি মানুষ এদের রেখে যাবো কিভাবে?”

“মনে কর এখানে আমি আর তুই ছাড়া কেউ নেই। বাড়িতে অনেক লোক আছে শিহাব, ভালোবাবা সব সামলে নেবে।চল তো ?”

“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বরং ভালোবাবাকে একটা মেসেজ করে দাও। যাতে চিন্তা না করে।”

“হুম দিচ্ছি চল!”

ওরা দুভাইবোন হাঁটতে লাগলো।

_________________

আবরার আফরিনের বিয়ের সকল তদারকি করছে। হঠাৎ আফরিন কে দেখলো ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছে। আবরার পেছনে গিয়ে বলল,,

“নিশু!”

“ভাইয়া মেয়েদের জীবনটা এমন কেন বলতো ! কাল তোমাদের সবাইকে ছেড়ে অন্য একটা পরিবেশে যেতে হবে।”

এটা শুনে আবরার বুঝতে পারল কেন আফরিন এখানে দাঁড়িয়ে আছে।আবরারারের ও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছুই করার নেই।

“এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। তাই আমাদের এটা মানতেই হবে। ”

“হুম!”

“তবে আমি জানি আমার বোন সে পরিবেশে গিয়ে নিজেকে সহজেই মানিয়ে নিতে পারবে। তার আরহাম ভাইয়ার মতো একজন জীবনসঙ্গী থাকবে। আরুহির মতো একটা ননদ থাকবে তার আবার কিসের চিন্তা। দেখবি সহজ হবে। মন খারাপ করিস না। কাল সুন্দর একটা দিন তোর কাছে। কাল নতুন রুপে নতুন ভাবে অন্য একজনের সাথে নতুন জীবন শুরু করতে চলেছিস। আর একটা কথা মনে রাখবি,,

জীবনের সব চেয়ে বড় গিফট হলো – নিজেকে বুঝার মতো একটা বিশ্বস্ত মানুষ পাওয়া। যার কাছে সব আবেগ, অনুভূতি, অভিযোগ, নিঃসন্দেহে জমা রাখা যায় ! যা সবার ভাগ্যে জোটে না!

তবে তোর ভাগ্যে আরহাম ভাইয়ার মতো একজন মানুষ হয়েছে। তার কাছে তোর সকল জিনিস জমা রাখতে পারবি। যে তোকে বোঝে সেটা তার চোখ দেখলেই বোঝা যায়।

~চলবে,,